#মনের_গহিনে (১৩)
Sarika Islam(mim)
সকাল সাতটায় উঠে নাস্তা রেডি করতে গেলাম।কিছুক্ষন পর কলেজের জন্য বেরুতে হবে।নাস্তা বানিয়ে টেবিলে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রাখলাম।ইয়াদ এখনো উঠেনি ঘুমিয়ে আছেন খুব টায়ার্ড হয়তো।গভির ঘুমে আছন্ন ভিষণ শোরগোল এ ও যেন উনি উঠবেন না।উনার জন্য আলমারি থেকে শার্ট প্যান্ট সব কিছু গুছিয়ে নিচে নামলাম।সুহানা আন্টি অলরেডি উঠে গিয়েছেন আমাকে দেখেই কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি বললাম,
-টেবিলে নাস্তা তৈরি করে রেখেছি আন্টি এখন যাবো?
সুহানা আন্টি আর কিছুই বলতে পারলেন না ঘুমঘুম চোখে হাত দিয়ে ইশারা করলেন যেতে।আমিও হাল্কা হেসে বিদায় জানালাম।আজ সকাল সকাল মুডটা ভিষণ ভালো লাগছে।কাল ইয়াদের করা কাজে লজ্জা লজ্জা করছে মনে পরতেই।
বৃষ্টির সময় এই একটা জ্বালা সারা রাস্তা কাদায় ভরপুর থাকে।এক সাইড দিয়ে ভালোলাগাও থাকে আরেক সাইড দিয়ে খারাপও থাকে।বিরক্তি নিয়ে বাড়ির মেইন গেটের বাহিরে দাড়ালাম।একটা রিকশাও নেই এই বৃষ্টি হলে রিকশাওয়ালাদেরও দাম বেড়ে যায় তাদের খুজেই পাওয়া যায় না।একরাশ বিরক্তি নিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম হঠাৎ করেই আমার সামনে একটা রিকশা এসে থামলো।আর একটুর জন্য বেচে গেলাম গায়ে কাদার ছিটে লাগেনি।নিজের দিকে তাকিয়ে আবার উপরে তাকিয়ে রিকশাওয়ালাকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই রিকশার ভিতর থেকে নীলাপু বের হলো।আমি তাকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম
হাত ঘড়টার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সাড়ে সাতটা বাজে এত্ত জলদি নীলাপু উঠে?
হাতের ইশারায় নীলা ফারাহকে ভিতরে আসতে বলল ফারাহ উঠে পরলো।
নীলা ফারাহর কলেজ পার করে নিয়ে যাচ্ছে ফারাহ পেছনে ফেলে আসা কলেজ দেখে বলল,
-আমার কলেজ তো পেছনে রয়ে গেল।
-আজ কলেজ না অন্য কোথাও যাবি।
-কোথায়?
নীলা আর উওর করলো না।বেশ কিছুক্ষন পর একটা ক্যাফের সামনে এসে রিকশা থামলো।আমি ভ্রু কুচকে নামলাম এই সকাল সকাল ক্যাফের সামনে আসলাম কেন?বন্ধও তো ক্যাফেটা তাহলে?ক্যাফের পাশে একটু খোলা জায়গার মতো আছে সেইখানে আপু আমায় নিয়ে গেল।আমি মোটেও বুঝতে পারছি না সে করতে কি চাইছে??
————-
ঘড়িতে আটটার এলার্মে ইয়াদের ঘুম ভাংগলো।ঘুমঘুম চোখে আড়মোড়া দিল পাশ ফিরে ফারাহকে দেখতে না পেরে কপাল কুচকে এলো এত সকাল সকাল ফারাহ কোথায় গেল?উঠে ফ্রেশ হয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে সোফায় টাওয়াল রাখতেই দেখতে পেল ফারাহ সুন্দর করে এশ কালারের একটা শার্ট কালো ব্লেজার আর প্যান্ট সাজিয়ে রেখেছে।ইয়াদ মুচকি হাসলো ফারাহর কাজে।রেডি হতে লাগলো ড্রেসিংটেবিলে ওয়ালেট রাখা সব হাতের কাছেই রেখে গেছে।
রেডি হয়ে নিচে গেল খাবার টেবিলে বসে ফারাহকে ডাক লাগালো।সুহানা বেগম রান্নাঘর থেকে বের হয়ে বললেন,
-ফারাহ বাড়ি নেই।
বাড়ি নেই শুনে ইয়াদ তার আম্মার দিকে তাকালো।কেমন চোখ মুখ কালো করে বলছেন তার আম্মা।ইয়াদ ভ্রু কুচকে বলল,
-তাহলে কোথায়?
সুহানা বেগম তাচ্ছিল্য হাসলো ছেলের কথায়।
-ওমা স্ত্রী কোথায় তা জানিস না?কলেজ গিয়েছে বলেও যায়নি?দেখেছিস কেমন স্ত্রী পালিস তুই?
ইয়াদ কিছু বলল না খাবারে মন দিল।অযথা আম্মার সাথে কথা বাড়িয়ে কোন লাভ নেই অহেতুক কাজ এইসব।সোনিয়া কলেজের জন্য রেডি হয়ে সিড়ি বেয়ে নামছে।ইয়াদ সোনিয়াকে দেখে বলল,
-তুই এখনো বাড়িতে?কলেজ যাবি না?
-হুম ভাই এক্ষুনি আজ একটু লেট হয়ে গেল।
বলে তাড়া দেখিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলে আবার বেক করলো।
-ভাই আমাকে একটু ড্রপ করে দিবা?
-দাড়া শেষ করি।
নাস্তা শেষে ইয়াদ সোনিয়াকে ড্রপ করে দিল কলেজ।ইয়াদ চলে গেল নিজের অফিস।
———–
সাইডের একটা বেঞ্চিতে নীলা আর ফারাহ পাশাপাশি বসেছে।ফারাহ বলল,
-কি হয়েছে নীলাপু এইখানে এনেছ কেন?আমার কলেজ আছে।
নীলা ফারাহর দিকে তাকিয়ে সরাসরি বলল,
-দেখ ফারাহ আমার ঘুড়িয়ে পেচিয়ে কথা বলার অভ্যাস নেই।আমি ডিরেক্ট বলবো যা বলার।
-বলো তো কি হয়েছে?(ভ্রু কুচকে)
-ইয়াদকে আমায় দিয়ে দে।
এইটুকু বলে থামলো নীলাপু।আমি নরমালি তার কথা শুনছিলাম হঠাৎ এইরুপ কথায় অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম।মানে কি? কি বলে যাচ্ছে নীলাপু এইসব?আমি কিছুটা হেকলিয়ে বললাম,
-মা,,মানে,এইসব কি বলছো তুমি?
নীলা বিরক্তি হলো ফারাহর এমন কথা শুনে।বুকের মধ্যে হাত ভাজ করে সোজাভাবে দাঁড়িয়ে বলল,
-আমি সোজাভাবেই বলছি তুই কি বুঝতে পারছিস না?আমি ইয়াদকে চাই।ইয়াদ আমার তুই কেন মাঝদিয়ে আসলি ফারাহ?
শেষের কথাটা ফারাহর বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলল।
আমার চোখ দিয়ে টুপ করে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।আপু আমাকে একি অপবাদ দিচ্ছে?আমি তাদের মাঝে আসিনি সে আমাকে এনেছে?তাহলে পালিয়েছিল কেন ইয়াদকে যেহেতু চায়?এখন আবার কেন এসেছে আমাদের জীবনে?নানান প্রশ্ন মাথায় উকিঝুকি দিচ্ছে।নীলাপু এত্ত জোরে আমার বাহু দুটো চেপে ধরেছে হাড় গুলো যেন ভেংগে যাবে এক্ষুনি।আমি ব্যাথায় কুকড়ে উঠলাম।নীলাপুর থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম।
-আপু ছাড়ো আমার লাগছে।
নীলা ফারাহর ব্যথার্থ মুখশ্রী দেখে হাত ছেড়ে দিল।রাগের মাথায় ধরে ফেলেছিল ফারাহর এত মাসুম চেহারায় খুব বেশিই রাগ লাগে তার।নীলা ফারাহর দিকে আংগুল তুলে বলল,
-তুই ইয়াদকে ডিভোর্স দিবি।সব ব্যাবস্থা আমি করবো।
আমার আখিজোরা দিয়ে গলগল করে পানি পরছে।এই আমার সেই নীলাপু যাকে প্রতিটি পদক্ষেপে আমি সাহায্য করেছি?যাকে সব যায়গায় সব সিচুয়েশনে আমি বাচিয়েছি।যার জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছি?আজ কিনা সে আমার থেকে আমারি স্বামীকে চাইছে?এ আমি কখনোই হতে দিব না।ইয়াদকে আমি নীলাপুর হতে দিব না।
চোখের পানি মুছে নীলাপুর দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বললাম,
-আমি ইয়াদকে ডিভোর্স দিব না।
নীলা ফারাহর এইরুপ কথা মোটেও আশা করেনি।ভেবেছিল সব সময়ের মতো এইবারো মেনে নিবে।কিন্তু নীলাকে ভুল প্রমাণিত করে ফারাহ বলেছে।
————-
ইয়াদ অফিসের চেয়ারে বসে বসে ফোন নাড়ছে।ফারাহকে ফোন করবে?নাহ সে এখন ক্লাসে থাকতে পারে।কিন্তু মন সায় দিচ্ছে না মন বলছে একবার ফোন করেই দেখ।কিন্তু মাথা বলছে ওকে ক্লাস করতে দে।মন ও মস্তিষ্কের মধ্যে ফেসে গেছে ইয়াদ।
হঠাৎ ফোন আসলো চট করেই ফোনের দিকে তাকালো রাহাতের কল।ইয়াদ জিব কাটলো।সে রাহাতের কথা ভুলেই গিয়েছিল।ফোন রিসিভ করলেই বকাঝকা শুরু হবে ওর।ইয়াদ ভয়ে ভয়ে ফোন কানে দিল যা আন্দাজ করেছিল তাই।রাহাত ফোন ধরেই ঝারা শুরু।ইয়াদ রাহাতকে থামিয়ে বলল,
-আমি আসছি রাহাত।তোর সাথে জরুরি কথা আছে।
জরুরি কথা শুনে রাহাত থামলো।সে ইয়াদকে আসতে বলে ফোন কাটলো।ইয়াদ হাল্কা হাসলো ছেলেটা যতই রেগে থাকুক ইয়াদকে চিন্তায় দেখলে সেও বেশ চিন্তিত হয়ে উঠে।
ইয়াদ রাহাতের বাগিচায় পৌছালো ফুলের মাঝে একটা টেবিল সাথে চেয়ার সেখানে রাহাত আর ইয়াদ আড্ডা দেয়।রাহাত বসাই ছিল ইয়াদকে দেখে উঠে দাড়ালো।ইয়াদ চোখের চশমাটা একটু ঠেলে রাহাতকে জড়িয়ে ধরলো।রাহাত আর ইয়াদ বসলো।
-চা খাবি?আনবো?
ইয়াদ মাথা ঝাকালো সে খাবে।রাহাত উঠে চা আনতে গেল বাগিচার মধ্যেই সে থাকে ছোট্ট একটা কটেজ আছে সেখানে।ইয়াদ উঠে ফুলগুলো ধরে ধরে দেখতে লাগলো।কোন ফুল মাত্র ফুটন্ত আবার কোনটা ঝরে যাচ্ছে।আবার কোনটা কলি ফুটেছে।
এরিই মাঝে রাহাত দু কাপ চা নিয়ে আসলো।দুজনে বসে একত্রে চায়ের কাপে চুমুক দিল।ইয়াদ রাহাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
-তোর হাতের চা কিন্তু সবসময়ের মতো দারুন হয়েছে।
রাহাত মুচকি হাসলো।ইয়াদ মুহুর্তেই গম্ভির গলায় বলল,
-নীলার সাথে দেখা হয়েছিল।
রাহাত চায়ের কাপে দ্বিতীয় বার চুমুক দিতেই ইয়াদের কথায় আটকে গেল।অবাক নয়নে ইয়াদের দিকে তাকালো।হাত থেকে চায়ের কাপ টেবিলে রেখে বলল,
-আর তুই দেখাও করে নিলি?
-হুম।
রাহাত খেপে গেল মুহুর্তেই কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলল,
-মানে কি ইয়াদ?তুই কেন ওর সাথে আবার দেখা করেছিস?
ইয়াদ ওর অফিসের থেকে শুরু করে সব কাহিনি রাহাতকে বলল।রাহাত বরাবরই খুব বেশিই অবাক হলো।এতকিছু হয়ে গেল আর ইয়াদ তাকে একটা বার বলা প্রয়োজন মনে করেননি?রাহাত অভিমানী কন্ঠে বলল,
-এত কিছু ঘটে গেল আমাকে বললি ও না?এখন কি করবি?
-কিছু করার কি আছে?আমি ফারাহকে পুরোপুরি বিশ্বাস করি।
রাহাত খুশি হয়ে গেল।ইয়াদের পিঠে চাপর মেরে বলল,
-গুড।একটা রিলেশনে বিশ্বাস খুবিই গুরুত্বপূর্ণ হোক স্বামী স্ত্রীর বা ফ্রেন্ডশিপ এর।
ইয়াদ এক গাল হেসে মাঝা ঝাকালো।রাহাত ইয়াদকে ধমকানো স্বরে আংগুল তুলে বলল,
-আর যেন নীলার সাথে না দেখা করিস?
ইয়াদ না সুচক মাথা ঝাকালো সে আর দেখা করবে না।
-গুড বয়।
দুজনেই হেসে উঠলো।
————-
ফারাহ কাদোমাদো চোখ মুখ নিয়ে সেই বেঞ্চিতে বসে আছে যেটার মধ্যে এতক্ষন ধরে তারা কথপোকথন করছিল।ফারাহর মাথা যেন কাজিই করছে না পুরো স্তব্ধ হয়ে আছে।
ফারাহ সেখান থেকে উঠে নিশি বেগমের কাছে গেল নিজেদের বাড়িতে গেল।
নিশি বেগম রান্নাঘরে গিয়েছিল সকালের নাস্তা বানাতে কলিং বেলে চাপ পরতেই দরজা খুলতে গেল।ফারাহকে বিধস্ত অবস্থায় দেখে ভড়কে গেল।দ্রুত ওকে ভিতরে ঢুকালো।সোফায় বসিয়ে পানি দিল।
আম্মু আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে?কিভাবে হলো এই অবস্থা? ইয়াদের সাথে কিছু হয়েছে নাকি অন্য কিছু?নানান ধরনের প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।আর এইদিকে আমার মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের হচ্ছে না যেন আটকে গেছে কথাগুলো গলায়।আম্মুকে ঝাপ্টে ধরে কান্না করে দিলাম।এই যায়গা আমার আশ্রয়স্থল আমি এইখানেই নিরাপদ।আম্মু আমাকে আইস্তা আইস্তা ভাবে মাথায় হাত বুলাচ্ছে।
অনেকক্ষন কান্না করার পর কিছুটা থামলাম।হেচকি তুলতে লাগলাম।আম্মু আমার গালে হাত রেখে বলল,
-নাস্তা করেছিস?
আমি নাক টানতে টানতে না বললাম।আমি খাইনি।আম্মু উঠে রান্নাঘর থেকে নাস্তা আনলো।পাউরুটি আর জ্যাম।আম্মু পাউরুটিতে জ্যম মাখিয়ে দিয়ে মুখের সামনে ধরলো।আমার হেচকির প্রভাব এতক্ষনে কিছুটা কমেছে।মুখে দিয়ে এক বাইট খেয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
-আম্মু আজ নীলাপু আমার সাথে দেখা হয়েছিল।
নিশি বেগম অবাক হলো না।স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করলো।
-কেন?
-ইয়াদকে চায়।আমাকে ডিভোর্স দিতে বলেছে।
নিশি বেগম জানতো নীলা এমন কিছুটাই করবে।তাই তার ভাব ইদানিং আলাদা দেখাচ্ছিল।ছোট একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
-তুই কি বললি?
-আমি ডিরেক্ট না করে দিয়েছি মানে কি ডিভোর্স দিব?
নিশি বেগম মুচকি হাসলেন মেয়ের কথায়।মাথায় হাত রেখে বললেন।
-নীলাকে সব সময় তুই সাপোর্ট করতি দেখলিতো কতবড় ক্ষতি করলো ও তোর?
আমি হ্যা সুচক মাথা ঝাকালাম।
চলবে,,
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।)