মনের গহিনে পর্ব-১৪

0
380

#মনের_গহিনে (১৪)
Sarika Islam(mim)

বিকেলে বাড়ি ফিরে আসলাম।সুহানা আন্টি সোফায় বসে গোমড়া মুখে বললেন,
-কোথায় ছিলে?

আমি নিচু স্বরে বললাম,
-আম্মুর কাছে গিয়েছিলাম।
-আমাদের বলাটা প্রয়োজন মনে করলে না?

আমি কোন উওর করলাম না।আসলে আমারিই ভুল তাদের বলিনি।তাই এখন যতই বকাঝকা করুক না কেন সেটা চুপচাপ শুনতে হবে।সুহানা আন্টি কিছুই বলল না আমাকে চুপচাপ নিজের কাজ করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।আমিও কোন কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে গেলাম।বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম।কেমন যেন বুকের মধ্যে চিনচিন করছে পুরো ফাকা ফাকা লাগছে নিজেকে।ইয়াদকে ছাড়ার মতো কথাটাও আমি এখন কল্পনা করতে পারিনা।নীলাপু কীভাবে আমাকে এইসব কথা বলল?নিজেই নিজেকে শক্ত করলাম নীলাপুর মুখাপেক্ষী হতে হলে আমাকে মন থেকে মজবুত হতে হবে এইভাবে ভেংগে পরলে মোটেও চলবে না।নীলাপু যা চায় মোটেও তা হতে দিব না।

সোনিয়া রুমে এসে ফারাহকে ডাক লাগালো।ফারাহ বারান্দা থেকে বেরিয়ে এলো।সোনিয়া ফারাহকে দেখে সামনে এসে বলল,
-কি হয়েছে ভাবী?এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?

আমি নিজেকে ঠিক করে একটা হাসি দিয়ে বললাম,
-আমি ঠিক আছি।কিছু লাগবে তোমার?

সোনিয়াও হেসে বলল,
-বলেছিলাম না তোমাকে নিয়ে কোথাও যাবো চলো?

আমার এখন মোটেও কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।এইভাবে ডিরেক্ট ওকে না বললেও মেয়েটা যদি কষ্ট পায়?খানিকটা হেসে বললাম,
-কাল গেলে হয়না?আজ একটু টায়ার্ড লাগছে।

সোনিয়ার মন খারাপ হয়ে গেল।ভেবেছিল ভাবীকে আজ সাথে করে বাহিরে নিয়ে যাবে কিন্তু হলো না।তাও ফারাহর অবস্থা দেখে বলল,
-আচ্ছা সমস্যা নেই।
-তুমি আবার মাইন্ড করো নিতো?

সোনিয়ার হাত ধরে বলল ফারাহ।সোনিয়া এক গাল হেসে মাথা ঝাকালো সে করেনি।

———–

নীলা বাড়ি ফিরলো কাধের ব্যাগটা সোফায় রেখে ধপ করে বসে পরলো।দাদী সাইডে বসা ছিল দাদী মুখ কুচকে নিলো নীলাকে দেখে।মেয়েটা দিন দিন ভারী বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে।আদব কায়দা বলতে কিচ্ছুই নেই মেয়েটার মধ্যে।দাদী অন্য দিকে ফিরে সুপারী ভাংগতে লাগলো।
নিশি বেগম রুম থেকে বের হয়েছে নীলাকে এইভাবে সোফায় বসে থাকতে দেখে সকালে ফারাহর বলা সব কথা মনে পরলো।মুহুর্তেই মাথায় রাগ চরে বসলো।নীলার কাছে গিয়ে সজোরে একটা চড় মারলো।নীলা চোখ বন্ধ করে মাথা এলিয়ে দিয়েছিল হঠাৎ গালে চড় পরায় ধরপরিয়ে উঠলো।নিশি বেগম চোখ গরম করে তাকিয়ে আছেন নীলার দিকে।দাদীও অবাক হয়ে গেল।নিশি বেগম রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
-লজ্জা শরম নেই তোর?বোনের জীবন শেষ করে দিবি?শেষ তো করেছিসি আর কতো?এইবার একটু থাম নীলা।

কান্না করতে লাগলো নিশি বেগম।তুর্য সবেমাত্র বাহির থেকে ঢুকলো আম্মাকে এইভাবে কান্না করতে দেখে জলদি করেই সামনে আসলো।আম্মাকে ধরে দার করালো।নীলা নির্বাক ব্যক্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে আম্মার সামনে।নিশি বেগম মারার জন্য নীলার সামনে এগিয়ে গেল তুর্য ধরে ফেলে।
-তুই আদো আমার মেয়ে আমার তো নিজের উপরিই ঘৃনা হয় তোর মতো মেয়েকে জন্ম দিয়েছি।ছিঃ নীলা তুই এমন আমি কখনো ভাবতেও পারিনি কখনো না।

কান্নার প্রভাব বেরে যাওয়ার কারনে শরির দুর্বল হয়ে ঢলে পরে যেতে নিলে তুর্য আম্মাকে ধরে নিজের কামরায় নিয়ে যায়।
নীলা এখনো সেখানেই ঠাই দাঁড়িয়ে আছে নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে নিরবে।তুর্য বাহিরে এসে বোনকে একিই ভাবে দেখে রেগে গেল।
-নীলাপু তুমি এমন টা করতে পারলে ফারাহর সাথে?ওতো তোমাকে প্রতিটি পদক্ষেপে সাহায্য করেছিল।সব সময় তোমার সাপোর্ট করেছে আর এখন তুমি ওর জীবন নষ্ট করতে উঠেপরে লেগেছো?ছিঃ!!

তুর্যও সেখান থেকে চলে গেল।দাদী নিরবে স্থান ত্যাগ করলো।নীলা ধপ করে মাটিতে বসে পরলো।আসলেই কি অনেকটা খারাপ করে ফেলেছে?ফারাহর জীবন নিয়ে একটু বেশিই হয়ে গেল?

————-

সন্ধ্যায় ইয়াদ ফিরলো হাতে একটা ব্যগ নিয়ে।ডাইনিং পেরিয়ে সিড়ি বেয়ে উঠতে নিলে পেছন থেকে ডাক পরে।
-ইয়াদ!!

ইয়াদ পেছন ফিরে তাকায়।আম্মাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একখানা হাসি দিয়ে সালাম দিল।সুহানা বেগম নাক মুখ কালো করে বলল,
-বাড়ি ফিরেই বউর কাছে চলে যাস মা বাবাকে তো ভুলেই গিয়েছিস??

ইয়াদ আম্মার কথায় তার কাছে এসে দাড়ালো।এক সাইড দিয়ে ধরে আহ্লাদী কন্ঠে বলল,
-তুমিই তো আমার সব তোমাকে কীভাবে ভুলি!

সুহানা বেগম কিছুটা অভিমানী কন্ঠে বলল,
-হুহ হয়েছে আর ঢং করতে হবে না।
-আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর তোমার সাথে কথা বলবো।

কপালে একটা চুমু খেয়ে উপরে উঠলো সুহানা বেগম কিঞ্চিৎ হাসলো।
ইয়াদ রুমে গিয়ে পুরো রুমে ফারাহকে খুজে পেল না।কপাল কুচকে এলো ফারাহ কোথায়?পুরো রুমে দেখলো ওয়াশ্রুমেও নেই তাহলে কোথায়?বারান্দা থেকে হাসির শব্দ আসছে বারান্দায় উকি মেরে দেখলো ফারাহ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে আর হাসছে।ইয়াদ পুনরায় রুমে ফিরে এলো টাই খুলতে খুলতে সেদিকে বারংবার তাকাচ্ছে।কিন্ত ফারাহ মগ্ন হয়ে আছে কথার মধ্যে ইয়াদ যে এসেছে সেদিকে খেয়ালই নেই।ইয়াদের কিছুটা রাগ হলো কার সাথে ফারাহ এত্ত হেসে হেসে কথা বলে?
নিজেকে সংযত করে ওয়াশ্রুমে ফ্রেশ হতে গেল।

ওয়াশ্রুমের দরজার আওয়াজে পিছে ফিরে তাকালাম।হয়তো ইয়াদ এসেছে ভেবে ফোন কাট করে রুমে আসলাম।বিছানার মধ্যে একটা ব্যাগ রাখা ভ্রু কুচকে সেদিকে এগিয়ে গেলাম।ব্যাগটা হাতে নিয়ে ওয়াশ্রুমের দিকে তাকালাম।ইয়াদ এনেছে আমার জন্য কিছু?আদো তাই?ভেবেই মুচকি হাসলাম।
ইয়াদ বেরিয়ে এলো ওয়াশ্রুম থেকে।ইয়াদকে দেখে আমি মুচকি হাসলাম।ইয়াদ আমার দিকে এগিয়ে এলো।
-তোমার জন্য।

আমি খুশি হয়ে ব্যাগে থাকা চকলেট গুলো বের করলাম কিটকেট এনেছে সব গুলো আমার প্রিয় চকলেট।বিছানায় বসে চকলেটে মশগুল তখন ইয়াদ হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো।
-কার সাথে এত কথা হচ্ছিল?

ভ্রু কুচকে বলল ইয়াদ ফারাহর দিকে তাকিয়ে।ফারাহ ইয়াদের দিকে তাকিয়ে হাল্কা হেসে চকলেটে কামড় বসিয়ে বলল,
-আমার ফ্রেন্ড ছিল রনি।

ইয়াদ ফারাহর মুখে রনি নাম শুনে ওহ বলে মুখ ঘুরালো।মুহুর্তেই ফারাহর দিকে আবার ফিরে তাকালো আবার জিজ্ঞেস করলো।
-কি নাম?
-রনি।

মুহুর্তেই ইয়াদের মুখের রঙ পালটে গেল।নীলার বলা কথা মস্তিষ্কে এসে বসলো আসলেই ফারাহর জিবনে রনি নামের কোন ব্যাক্তি আছে?এখন ফারাহর মুখে শুনে পুরো চমকিয়ে উঠলো নীলার বলা কথা এইভাবে সত্যি হবে ভাবতেও পারেনি।ইয়াদ কিছু না বলে সেখান থেকে উঠে নিচে গেল।ইয়াদের আচমকা উঠে যাওয়াটা ফারাহ মোটেও বুঝতে পারেনি।

ইয়াদ নিচে বাগানের ধারে বসলো সেখানের চেয়ার টেবিলে।চোখের চশমা খুলে রখলো দু হাত দিয়ে নাক মুখে হাত রাখলো।নীলার বলা কথা আর ফারাহর বলা রনির নাম শুনে কোন মতেই ভালো লাগছে না।ইয়াদ তো ফারাহকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে তাহলে এই ভাবনা?ফারাহর প্রতি তার বিশ্বাস কমিয়ে দিবে এই ভাবনা চিন্তা।যা সে মোটেও করতে চাইছে না।না চাওয়া সত্ত্বেও যেন বারংবার মাথায় ঝেকে বসছে কথাগুলো।
ইয়াদ আর কিছুই ভাবতে পারছে না মুখ ঢেকে বসে আছে।হঠাৎ কেউ ইয়াদের কাধে হাত রখলো মাথা তুলে তাকালো আব্বা এসেছেন।ইয়াদ সালাম দিল আব্বাকে সে বসলো ইয়াদের বরাবর চেয়ারে।

রাসেল শেখ ছেলের চিন্তিত মুখশ্রী দেখে বলল,
-কি হয়েছে ইয়াদ কোন সমস্যা?

ইয়াদ মাথা ঝাকালো কিছুই হয়নি।কিন্তু রাসেল শেখ যেন মানতে নারাজ।ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বলল,
-কিছু হয়েছে তোদের মাঝে?

ইয়াদ আব্বার দিকে তাকালো।মাথা ঝাকিয়ে পুনরায় না করলো।রাসেল শেখ ছেলের হাতের উপর হাত রেখে বলল,
– স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অনেক ঝামেলা অনেক মনমালিন্য হয়ে থাকে তার মানে এইনা তুমি সলভ করবে না কথা না বলে ঠিক করবে না।

ইয়াদ হচকচিয়ে গেল আব্বার কথায়।চশমা পরে কপালে জমে থাকা বিন্দু ঘাম মুছে বাবার হাতের উপর হাত রেখে হাল্কা স্বরে বলল,
-নাহ আব্বা তেমন কিছুই হয়নি।ঠিক আছি।

রাসেল শেখ হাল্কা হাসলেন ছেলের কান্ডে।নজর ফিরিয়ে বলল,
-বুঝেছি কিছু হয়নি। কিন্তু সবসময় কথাগুলো মনে রাখবে কোন প্রব্লেম হলে বা তোমার কোন সন্দেহ হলে তুমি ডিরেক্ট জিজ্ঞেস করবে তার আগোচোড়ে কোন পদক্ষেপ তোমার একা নেওয়া মোটেও উচিত নয়।তুমি অপর পক্ষের মতামতও শুনবে।
-জি বাবা।

———–

নীলা বিছানায় এপাশ অপাশ করছে।হুট করেই উঠে বসলো।ফারাহ মোটেও ভালো কাজ করেনি এইটা ইয়াদের বিষয় আম্মাকে বলা ওর মোটেও উচিত হয়নি।নীলা মনে মনে ফারাহকে শায়েস্তা করার চিন্তা ভাবনা করলো।

সকালে,
প্রতিদিনের থেকে আজ একটু জলদিই ঘুম থেকে উঠলো নীলা।নিশি বেগম আর দাদী ডাইনিং এ নাস্তা করছিলেন নিশি বেগমকে দেখে নীলা চোখ নামিয়ে বাহিরে যেতে নিলে নিশি বেগম আটকে দেয়।
-নীলা!!

আম্মার ডাকে নীলা ফিরে আসে।আম্মার দিকে তাকানোর সাহসটুকু হচ্ছে না নীলার।নিশি বেগম নীলার দিকে খাবার এগিয়ে দিল।
-ফারাহকে ওর হালতে থাকতে দিয়ে নিজের জীবনের ওপর ফোকাস করো।এইভাবে একজনের পিছে পরে লাভ নেই।ওকেও বরবাদ করবে সাথে নিজেও বরবাদ হবে।তার থেকে ভালো নিজের জীবন নিয়ে ভাবা।
-জি।

নিচু স্বরে বলল নীলা।নিশি বেগম মেয়ের জন্য নিজের পাশে চেয়ার টেনে বলল,
-বসো নাস্তা করো।এইভাবে যখন ইচ্ছে বাহিরে চলে যাও যখন ইচ্ছে ফিরো অভ্যস পাল্টাও।কাজ করো না হয় ঘরে বসে থাকো।জানো তো মানুষ অভ্যাসের দাশ।
-জি আম্মু।

নীলা চুপচাপ নাস্তা খেতে লাগলো।আম্মার সামনে কোন কথাই বলল না ইদানিং শরির ভালো যাচ্ছে না আম্মার।সব বুঝপরা ফারাহর সাথে হবে এইভেবে খাওয়ায় ধ্যায়ান দিল।

চলবে,,
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।)