মনের গহিনে পর্ব-১৬

0
377

#মনের_গহিনে (১৬)
Sarika Islam(mim)

আজ বেশ রাত করে ইয়াদ বাড়ি ফিরলো সোফার মধ্যে ফারাহ বসে বসে ঝিমুচ্ছে।ইয়াদের অপেক্ষায় এইখানেই বসে ছিল।সুহানা বেগম অপেক্ষা করতে চাইলে ফারাহ জোরপুর্বক পাঠিয়ে দেন।ইয়াদ বাড়িতে ঢুকে ফারাহকে ঝিমুতে দেখে সামনে এগিয়ে গেল।গায়ের ব্লেজার খুলে ফারাহকে কোলে তুলে নিল।

হঠাৎ ঘুমের মাঝে মনে হচ্ছে যেন আমি হাওয়ায় ভাসছি।দ্রতু চোখ মেলে তাকালাম ইয়াদ!ইয়াদ আমাকে কোলে তুলে নিয়েছে?ইয়াদকে দেখেই আপনা আপনি মুচকি হাসলাম।ইয়াদ আমার দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে এক ভ্রু উঠিয়ে বলল,
-হাসলে কিন্তু অনেক রূপসী লাগে তোমায়।

আমি অনেকটা লজ্জা পেলাম ইয়াদের কথায়।লজ্জায় তার বুকে মুখ গুজলাম।ইয়াদ হাল্কা হাসলো।রুমে এনে বিছানায় বসালো আমি উঠে দাড়ালাম।ইয়াদ শার্ট টাই খুলতে ব্যস্ত আমি ইয়াদের সামনে গিয়ে দাড়ালাম।আজ নীলাপুর বলা কথাগুলো কি জিজ্ঞেস করবো?নাকি?ভেবেই পাচ্ছি না ইয়াদ যদি ঠিক মনে করে তাহলে সেই আমাকে বলবে।এইভেবে আর কিছু বললাম না।ইয়াদ আমার দিকে তাকিয়ে দু ভ্রু উঠিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?আমি মাথা নাড়িয়ে কিছুনা বললাম।তাও তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছি।
হুট করে ইয়াদকে জড়িয়ে ধরলাম কেন যেন মন চাইছিলো।

ইয়াদকে ফারাহ এইভাবে আচমকা জড়িয়ে ধরায় ভড়কে গেল।ফারাহকে ইয়াদও জড়িয়ে ধরলো।এক গাল হেসে বলল,
-আজ এত ভালোবাসা আসছে আমার প্রতি?

ইয়াদের কথায় তার দিকে মুখ তুলে তাকালাম গলা জড়িয়েই বললাম,
-আপনার প্রতি আমার সব সময়ই ভালোবাসা আসে।
-কই আমি তো দেখিনা?

ভ্রু কুচকে বলল ইয়াদ।আমি ইয়াদকে ছেড়ে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে বললাম,
-আপনি দেখবেন ও না।এখন ফ্রেশ হন আমি খাবার লাগাই।

ইয়াদ ফ্রেশ হতে চলে গেল।

———–

সকালে,
ইয়াদ ড্রেসিংটেবিল এর সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে অফিসের জন্য।ফারাহ সামনে এসে হাজির ইয়াদের কাছে এসে হাত বাড়িয়ে বলল,
-আমি টাই বেধে দেই?

ইয়াদ নিজের হাত টাই থেকে সরিয়ে ফারাহকে দিল।ফারাহ ইয়াদের সামনে এসে সুন্দরভাবে টাই বাধছে আর ইয়াদ ফারাহর কোমর জড়িয়ে তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ফারাহ মোটেও টাই বাধতে পারে না পুরো পেচিয়ে ফেলেছে।ইয়াদ সেদিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো।ফারাহ মাসুম চেহারা করে ঠোঁট উলটে দাঁড়িয়ে আছে।
-টাই বাধতে পারো না কিন্তু বাধতে আসছো।
-পারি না শিখবো তারপর আপনাকে বেধে দিব।আমার অনেক শখ আমি আমার জামাইর টাই বেধে দিব।

ইয়াদ নিজের টাই নিজেই বাধলো।ফারাহ দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে গভির ভাবে পর্যবেক্ষণ করলো কাল যেন ভুল না হয়।ইয়াদ ফারাহ কাছে এসে ঠোঁটে আলতো ভাবে নিজের ঠোঁট ছোয়ালো।বাহিরে চলে গেল।হঠাৎ ছোট ছোয়ায় ফারাহ শকড হয়ে গেল।

সুহানা বেগম নিচে বসে নাস্তা করছেন আর স্বামীর সাথে কথা বলছেন।
-ভাবছি সোনিয়ার বিয়ে দেওয়া উচিত।

ইয়াদ টেবিলে বসে মায়ের কথা শুনে বলল,
-এত যলদি?
-এত যলদি কোথায়?তুমিও তো কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে করেছো দিব্যি সংসার করেই যাচ্ছো।

রাসেল শেখ সুহানা বেগমের দিকে তাকালেন।ইদানীং সুহানা বেগম মোটেও ভালো কথা বলছেন না বিয়েটা হওয়ার পর থেকে কেমন উস্ক মিজাজের হয়ে গেছেন।ইয়াদ আম্মার মিজাজের খবর জানেন তাই আর কথা বাড়ালেন না।
সোনিয়া খাবার টেবিলে এসে বসলো ফারাহও চলে এসেছে।সুহানা বেগম সোনিয়ার উদ্দেশ্য বলল,
-আজ একজন দেখতে আসবে তোকে।কলেজ যাওয়ার দরকার নেই।

সোনিয়া খাচ্ছিল আম্মার কথা শুনে গলায় খাবার আটকে গেল।কাশি শুরু হয়ে গেল ফারাহ দ্রুত পানি পান করালো।সোনিয়া ভীত ভীত চোখে আম্মার দিকে তাকিয়ে বলল,
-এত যলদি কি দরকার?
-বেশি কথা বলিস না যা বলেছি শুন।

কিছুটা ধমকের স্বরে বলল সোনিয়া আর কিছু বলতে পারলো না।খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে গেল।রাসেল শেখ মেয়ের চলে যাওয়া মোটেও নিতে পারলেন না।স্ত্রীর উদ্দেশ্য বললেন,
-এখন আমার মেয়ে ছোট আমি আরো পরে বিয়ের কথা ভাববো।
-ও শুধু তোমার না আমারো মেয়ে।

মাঝ দিয়ে ইয়াদ বলে উঠলো।
-আব্বা ঠিক বলেছেন সোনিয়ার বয়স হয়নি এখনো।এখন এইসব ভেবে ওর পড়ালেখা নষ্ট করো না।
-আমার মেয়ে আমি দেখে নিব।

বলে সুহানা বেগম স্থান ত্যাগ করলেন।
রাসেল শেখ ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-তুমি অফিস যাও আমি দেখে নিব।

ইয়াদ অফিসের চলে গেল।

————-

সোনিয়া মুখ গোমড়া করে রুমে বসে আছে আমি তার কামরায় গেলাম ওকে দেখতে।সোনিয়া কাদোকাদো মুখশ্রী নিয়ে আমার দিকে তাকালো।আমি সোনয়ার গায়ে হাত রাখতেই চোখ গড়িয়ে জল বেয়ে পরলো কান্না করে দিল পুরো।আমি এখন কিভাবে সামলাবো?বিছানায় বসালাম।
-বলে দিলে হয়না?
-আম্মু মানবে না।

সোনিয়া হেচকি তুলে বলল।আমি সোনিয়ার মাথায় হাত রেখে শান্তনা স্বরুপ বললাম,
-তাহলে এট লিস্ট ইয়াদকে বলে রাখি?

সোনিয়া মাথা ঝাকালো ইয়াদকেও বলা যাবে না।আমি পরে গেলাম মহা বিপদে নিজের জীবনের সমস্যা কম আরেক জনেরটা আবার ঘাড়ে জুড়ে বসেছে।

বিকেলে সুহানা বেগম মেয়ের কামরায় গেল কার সাথে যেন কথা বলছে।কান থেকে ফোন ছিনিয়ে নিল সোনিয়া ভয় পেয়ে গেল হঠাৎ কান থেকে ফোন নেওয়ায়। আম্মুকে দেখে হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেল।কাপাকাপা গলায় কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফোনের অপর পাশ থেকে কোন কথার আওয়াজ আসছে।সুহানা বেগম ফোনের স্ক্রিনে ‘লাভ’ নাম দেখে মেয়ের দিকে রাগান্বিত চোখে তাকালো।এক্ষুনি যেন তার চোখের আগুনে সোনিয়া ভস্ম হয়ে যাবে।রাগের মাথায় ফোন সজোরে মাটিতে ছুড়ে মারলো সাথে সাথেই ঝনঝন শব্দে ভেংগে গেল।

সোনিয়া কেপে উঠলো কান্না করে দিল।আগে না যত স্ট্রিক্ট ছিল সুহানা বেগম ইয়াদের বিয়ের পর আরো হয়ে গেছে।সোনিয়া আম্মাকে বেশ ভয় পায়।সুহানা বেগম মেয়ের গালে এক থাপ্পর বসিয়ে দিল।
-এইসব ভুলে যা আমি তোর বিয়ে ফিক্সড করে ফেলেছি।

সোনিয়া কাদোকাদো গলায় আস্তে করে সুহানা বেগমকে বলল,
-আমি বিয়ে করবো না।
-বেশি কথা যেন না শুনি আমি।

সুহানা বেগম হুমকি স্বরুপ বলে চলে গেলেন।সোনিয়া কান্না করতে করতে নিচে ধপ করে বসে পরলেন।আম্মা যেহেতু নারাজ কিছুতেই সে রাহুলকে পাবে না।কিন্তু তার রাহুল চাই আর কেউ না।

————-

কাল রাতে নীলা মায়ের কাছেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন।বিকেলের দিকে ঘুম থেকে উঠলেন চোখ ডলে আইস্তা করে বিছানা থেকে উঠলেন।নিশি বেগম রুমে এসে মেয়েকে জাগারত দেখে এগিয়ে এলেন।
-ঘুম হয়েছে?
-হুম।

আড়মোড়া ভেংগে নিচে নামলো।নিশি বেগম নীলার উদ্দেশ্য বললেন,
-খাবার দিব?ফ্রেশ হয়ে আসো।
-আচ্ছা।

নীলা ফ্রেশ হতে নিজের রুমে গেল।আজ অনেকদিন পর মায়ের কাছে ঘুমালো।অনেক আরামে ঘুম হয়েছে বিকেলে সজাগ হয়েছে সে।নিজের রুমে গিয়ে শাওয়ার নিল হাল্কা গোলাপি কালার থ্রিপিস পরলো।ডাইনিং টেবিলে বসলো খাবারের জন্য।নিশি বেগম সহ দাদীও খুব অবাক হলেন নীলার বিহেভিয়ারে।কাল থেকে কেমন অন্য অন্য আচরণ করছে এইটা আবার অন্য কোন প্লান নাতো?নাকি সত্যি নীলা পালটে গিয়েছে?নিশি বেগম চিন্তায় পরে গেলেন মেয়েকে নিয়ে।এইভাবেই নিজের শরির খুব কম সুস্থ থাকে তার উপর সারাক্ষন নীলার টেনশন মাথায় ঘুরঘুর করে বেড়ায়।

নিশি বেগম নীলাকে খাবার দিয়ে তার পাশে বসলো।নীলা বেশ আয়েশ করে খাচ্ছে।হুট করে নীলা খেতে খেতে আম্মার দিকে তাকিয়ে বলল,
-আম্মু আমি বিয়ে করবো।

নিশি বেগম নীলার এহেন কথা চমকে উঠলেন।নীলা উঠার পর থেকে একের পর এক চমক খেয়েই যাচ্ছেন শুধু।নিশি বেগম অবাক নয়নে নীলার দিকে তাকিয়ে রইলেন।নীলা মায়ের এমন অবাক চাহনি দেখে বললেন,
-খারাপ কিছু বলেছি?

নিশি বেগম এক চিলতে হাসি দিয়ে মাথা নাড়িয়ে না বলল।মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,
-তুই সত্যি বলছিস?
-হুম।

নিশি বেগম বেশ খুশি হলেন মেয়ের ডিসিশনে।

————-

রাতে,
সোনিয়া ফারাহর কামরায় আসলো।ফারাহ বসে বসে ফোন গুতাচ্ছিল।সোনিয়াকে দেখে উঠে বসে।
সোনিয়া কাদোকাদো ফেস করে আমার কাছে বসলো।আমি জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে?শুরু ওর কাহিনি বলায়।আমি জিজ্ঞেস করার অপেক্ষায় ছিল হয়তো।
-ভাবী আম্মু দেখে ফেলেছে রাহুলের সাথে কথা বলতে।আমার ফোনও ভেংগে দিয়েছে।

আমি সোনিয়ার কাধে হাত রেখে বললাম,
-তাহলে আন্টি যেভাবে চায় সেভাবেই না হয় বিয়ে করো?
-এইটা কখনোই সম্ভব না ভাবী।

কিছুক্ষন থেমে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-তোমার ফোনটা দিবে একটু?
-হ্যা নাও।

আমিও আর না করলাম না দিলাম।এইভাবেই বেচারি কত কষ্টের মধ্যে আছে।যদিও বলি ছেড়ে দাও কিন্তু ছাড়াতো আর যায় না এইটা শুধু যে ভালোবাসে সেই বুঝে।আর বাকি মানুষ তো শুধু শান্তনা দিতেই পারে।

সোনিয়া রাহুলের নাম্বারে মেসেজ করলো।প্রায় অনেক মেসেজ হলো তাদের আধ ঘন্টা পর্যন্ত ফারাহ সোনিয়ার পাশে বসে আছে চুপচাপ।রাহুলের সাথে ফোনেও কথা হয়েছে কান্না করে করে।রাহুল নাকি ব্যাপারটা ঠিক সামলে নিবে বলেছেন।
আমার দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল,
-ভাবী R দিয়ে সেভ করেছি।ও মেসেজ করলে আমায় ডাকিও।
-আচ্ছা।

এখন একটু খুশি হয়ে নিজের মনের মানুষের সাথে কথা বলে।হয়তো এইটাই আসল সুখ আমারো এই মুহুর্তে ইয়াদের কথা খুব মনে পরছে।ফোন অন করে দেখলাম প্রায় নয়টা আসছে না কেন আজ?একটু বেশিই দেরি হয়ে যাচ্ছে না?চিন্তায় পরে গেলাম।হঠাৎ নীলাপুর কথা মাথায় নাড়া দিল।নীলাপুর সাথে তো,,,,,,,,,,,,,,,

চলবে,,,
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।)