মনের গহিনে পর্ব-১৮

0
398

#মনের_গহিনে (১৮)
Sarika Islam(mim)

গাড়িতে হেলান দেওয়া ইয়াদকে দেখে আমি খুশি হয়ে গেলাম।আমাদের দেখে এগিয়ে এলো।আম্মুও অবাক হয়ে গেলেন।ইয়াদ সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো।নীলাপুর দিকে তাকিয়ে তাকে কংগ্রেস জানালো।আমি তাদের দুইজনের রিয়েকশন দেখলাম ইয়াদ তো হাসি দিয়ে বলল কিন্তু নীলাপু কেমন করে যেন বলল।আমি নীলাপুকে মোটেও তোয়াক্কা করলাম না।

ইয়াদ নিশি বেগমের উদ্দেশ্যে বলল,
-আন্টি ফায়াহকে নিয়ে যাবো?

নিশি বেগম ফারাহর দিকে তাকিয়ে আবার ইয়াদের দিকে তাকালো।একটু হাসি দিয়ে বলল,
-আজ না গেলে হয়না?বাড়িতে প্রচুর কাজ আছে ফারাহকেও লাগবে।

আমি ইয়াদের দিকে তাকালাম।ইয়াদের মুখটা মলিন হয়ে গেল।আর আমার মনটা খুশি হয়ে গেল ইয়াদকে আপসেট দেখে।তার আমার জন্য খারাপ লাগে?আমার এই জিনিসটা ভালোলাগলো।কিন্তু নিজেরও খারাপ লাগলো ইয়াদকে ছাড়া থাকবো ভেবে।
ইয়াদ জোরপুর্বক হাসির রেখা টেনে বলল,
-আচ্ছা আন্টি।আমি যাই।
-কেন?তুমিও চলো বাসায়?
-নাহ আন্টি আরেকদিন।

ইয়াদ সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ির দরজা খুলল।আমার দিকে তাকালো এক পলক তারপর বসে পরলো।গাড়িটা যেই পর্যন্ত দেখা যায় আমি ততক্ষন তাকিয়ে ছিলাম।নীলাপু হুট করে আমার কাধে হাত রাখলো আমি তার দিকে তাকাতেই হাল্কা একটু হেসে বলল,
-চলে গেছে এখন চল?
-হুম।

আমিও হাল্কা হেসে চললাম তাদের সাথে।

————-

ইয়াদ বাড়িতে আসলো সুহানা বেগম সন্ধায় ছেলেকে বাড়িতে দেখে ভ্রু কুচকে বলল,
-তুই?
-কেন অন্য কাউকে আশা করেছিলে?

ইয়াদ ভিতরে ঢুকলো।দুর্বল লাগছে খুব শরিরটা।সোফায় গা এলিয়ে দিল সুহানা বেগম ছেলের জন্য এক গ্লাস পানি আনলো মুখের সামনে ধরে বলল,
-ধর পানিটা খেয়ে নে।

ইয়াদ পানির গ্লাসটা নিল।পানিতে মাত্র চুমুক দিল আর সুহানা বেগমের ঠেস মারা কথা শুরু।
-ঘরের বউ এখনো ঘরে নেই।কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে কে জানে!!

ইয়াদ আম্মার দিকে তাকিয়ে দুর্বল আখিজোরায় বলল,
-ফারাহ ওর আম্মার বাসায় থাকবে আজ গিয়েছিলাম।
-তোকে থাকতে বলল না?দেখেছিস কেমন তারা?

ইয়াদ বিরক্তি নজরে আম্মার দিকে তাকালো।কিছু না বলেই নিজের কামরায় গেল।আম্মা শুধু ঝামেলা করে সব কাজেই।ফারাহকে যেহেতু পছন্দ না সেহেতু ওর সম্পর্কে নাই কথা বলুক কিন্তু না তারতো বলতেই হবে।

———–

এক সপ্তাহ পর,
আজ দেখতে দেখতে নীলার বিয়ের দিন চলে আসলো।আজ নীলার বিয়ে সারা বাড়ি জুড়ে মেহমানে ভর্তি।তুর্যকে ডেকে নীলার সাথে পাঠালো পার্লারে।নিশি বেগম কেমন যেন করছে আবারো কি নীলা পালাবে?সে তুর্যকে বলল,
-নীলা যেই পর্যন্ত পার্লার থেকে না বের হয় বাহিরেই থাকবি।

কড়াভাবে আদেশ করলেন তুর্যও মায়ের কথায় মাথা দুলালো।কিন্তু নীলা তীক্ষ্ণ নজরে দেখলো আম্মাকে।সে একবার না হয় ভুল করেছে পর পর কি একিই ভুল করবে নাকি?
-আমার পালানোই থাকলে আমি বিয়ের জন্য রাজী হতাম না।

মুখ গোমড়া করে বলে বেরুলো।তখনি ফারাহ প্রবেশ করেছিল বাড়িতে সেইদিন থেকে চলে গিয়েছিল পরের দিন।আজ আসলো সাথে ইয়াদও।বাবাও নেই বাড়ির সব কাজ তো ইয়াদকেই সামলাতে হবে ঘরের ছেলে বলে কথা।ফারাহ আম্মার কাছে এসে বলল,
-কেন তুমি নীলাপুর সাথে এমনটা করো?
-আরে তুই জানিস না নীলা কি কি করতে পারে।

চিন্তিত স্বরে বলল।ইয়াদ সব কাজে হেল্প করলো ফারাহও।
অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে প্রায় নীলাপুও চলে এসেছে স্টেযে বসে আছে।আমাদের বাড়ির গার্ডেনেই এরেঞ্জমেন্ট করেছেন ছোট খাটো ভাবে।আমার এখনো শাড়ি পরা বাকি সব মেহমানও চলে এসেছেন।আর আমি একা একা মোটেও পরতে পারিনা।রুমে বসে আছি ব্লাউজ আর পেটিকোট পরে।হাল্কা পাতলা সেজেছি চুলগুলো খোপা করা আর লিপস্টিক আর লাইনার ব্যাস আমার সাজা শেষ।এখন সমস্যা হলো শাড়ি নিয়ে আম্মুও খুব ব্যাস্ত আমি কাকেই বা বলবো।
কেউ দরজায় নক করলো আমি ঘাবড়ে গেলাম এই টাইমে আবার কে হতে পারে?আমি ভিতর থেকেই আওয়াজ করলাম।
-কে?

অপর পাশ থেকে হাল্কা স্বরে আওয়াজ আসলো।
-ফারাহ আমি!!

গলার আওয়াজে যতটুকু বুঝলাম জিহাদ ভাইয়া আমার খালাতো ভাই।গলার আওয়াজ কিছুটা উচু করে বললাম,
-কি হয়েছে?
-আরে দরজা তো খুলো।

আমি দরজা হাল্কা ভাবে ফাকা করলাম যেন আমাকে মোটেও দেখা না যায় গায়ে শাড়ি জড়িয়ে।শুধু মুখটুকু বের করলাম।জিহাদ ভাই আমালে দেখে হাল্কা হাসলো।
-বাহ বেশ সুন্দর লাগছে তোমাকে।

আমিও হাল্কা হাসলাম।জিহাদ ভাইয়ার পেছনেই ইয়াদ এসে দাড়ালো।আমার ইয়াদকে দেখে চোখ বড়বড় হয়ে গেল।এখন ইয়াদ কি ভাব্বে আমাদের?ইয়াদ কেমন ভ্রু দুটো কুচকে জিহাদ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন।জিহাদ ভাইয়া তো দেখছেনও না আমার দিকে তাকিয়েই বলছেন,
-কি হলো তোমাকে তো দেখাই যাচ্ছে না।আরো একটু খুলো দরজা?আচ্ছা আমি ভিতরে আসছি।

আমি না না করলেও যেই না জিহাদ ভাইয়া এক কদম ফেলবেন ওমনিই ইয়াদ হাত রাখলেন জিহাদ ভাইয়ার কাধের মধ্যে।জিহাদ ভাইয়া পিছে ফিরে তাকালেন।এই মুহুর্তে হয়তো সে মোটেও ইয়াদকে আশা করেননি।হচকচিয়ে গেলেন।জোড়পুর্বক হাসির রেখা টেনে বললেন,
-আরে,,ইয়াদ,

ইয়াদ মুখ গোমড়া করে বললেন,
-হ্যা আমি।
-ওইযে ফারাহকে ডাকতে এসেছিলাম।

হাল্কা একটু হেসে বলে চলে গেলেন জিহাদ ভাই।আমি ইয়াদের দিকে তাকালাম কেমন করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।যেন মেরে বসবেন এখনি।আমি ইয়াদের দিকে ভীত নজরে তাকালাম যদিও আমার কোনই দোষ নেই তাও।ইয়াদ গম্ভির কন্ঠে বললেন।
-দরজা খুলো ভিতরে আসবো।

আমি হচকচিয়ে গেলাম ইয়াদের এইরুপ কথায়।সে ভিতরে এসে কি করবেন?তার কি কাজ?আমি কাপাকাপা স্বরে বললাম,
-আমি শাড়ি পরিনি তো এখনো।

ইয়াদ আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে কাকে যেন ফোন করলো।
-সোনিয়া ফারাহর কামরায় আসো।

সোনিয়াকে ফোন করেছেন যাক বাবা একটু তো হেল্প হবে।কিছুক্ষন পর সোনিয়া আসলেন আর সে এইখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন এক ফোটাও নড়লেন না।

শাড়ি পরে বের হলাম গার্ডেনে আসলাম আমি আর সোনিয়া।ইয়াদ সেখানেই ছিল সবাইকে আপ্পায়নে ব্যস্ত।সাদা একটা পাঞ্জাবি পরেছেন বেশ লাগছে আমি বিয়ের পরে হয়তো এই প্রথম তাকে পাঞ্জাবীতে দেখলাম।নাহয় তিনি অলয়েস ফরমাল লুকে থাকেন না হয় টিশার্টে।আজ পাঞ্জাবীতে দেখে যেন আমি পুরোই ফিদা হয়ে গেলাম।

স্টেজের উপর দাঁড়িয়ে থাকা ফারাহর দিকে তাকালো ইয়াদ।আকাশি রঙের শাড়িতে যেন কোন অপ্সরির থেকে কম কিছু লাগছে না।সদ্য আকাশ থেকে নেমে আসা এক পরি।ইয়াদ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারাহর দিকে।

————-

বিদায়ের পালা নীলাপুকে ধরে কান্না করে দিলাম।যত যাই হোক বোন সে আমার খারাপ তো অবশ্যই লাগবে।নীলাপুও একটু কান্না করলো।ইয়াদের দিকে আড়চোখে তাকালো ইয়াদ নজর ঘুড়িয়ে নিলেন।

পুরো বাড়ি খালি হয়ে গেল নিশি বেগম সোফায় বসলেন আজ বড় মেয়েটারও বিদায় হয়ে গেল।পুরো ঘর ফাকা ফাকা লাগছে এখন।সুহানা বেগমরা চলে গিয়েছেন বিদায়ের সাথে সাথেই।ফারাহ মায়ের কাছে একটু থাকলেন।ইয়াদও ছিল নিশি বেগম ফারাহর দিকে তাকিয়ে বললেন,
-আজ থেকে যা কাল চলে যাস।

আমি ইয়াদের দিকে তাকালাম আম্মার বলা কথায়।ইয়াদের কি রিয়েকশন থাকবে এই কথায়?আমি ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-থাকবো?

ইয়াদ আমার দিকে তাকিয়ে হাল্কা হেসে বললেন,
-হ্যা থাকো।

ঘরে জিহাদ ঘুরঘুর করছেন আজ নাকি তারা যাবেননা কাল যাবে।ইয়াদ জিহাদের দিকে তাকালেন।মোটেও জিহাদকে তার পছন্দ হয়নি।ফারাহর সাথে ঘষাঘষি অন্য কোন মানুষের এইটা সে মোটেও সহ্য করে নিবে না।ইয়াদ বিদায় নিয়ে যেতে নিলে নিশি বেগম বললেন,
-সেকি তুমিও তো থাকবে।

ইয়াদ যেন এইটারই আশা করছিলেন।হাল্কা হেসে মাথা নাড়ালেন হ্যা সে থাকবে।এইবার একটু শান্তি লাগবে সে ফারাহর পাশেই থাকতে পারবে।

হঠাৎ টুং করে একটা মেসেজ আসলো।ইয়াদের পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফোন বের করলো ফারাহর।আজ সারাদিন ব্যাস্ত থাকার কারনে ফারাহর ফোন ইয়াদের কাছেই ছিল।দিতেও ভুলে গিয়েছিল।ইয়াদ ফোন ফারাহকে দিবে ঠিক সেই মুহুর্তে স্ক্রিনে R দিয়ে সেভ করা নাম্বারে মেসেজ দেখলো।মুহুর্তেই রনির কথা মাথায় নাড়া দিল।ফারাহর দিকে একবার তাকালো।ফারাহ রনির সাথে এখনো কথা বলে?

স্ক্রিনের উপরে মেসেজ পরে ইয়াদের মাথা গরম হয়ে গেল মুহুর্তেই।চোয়াল শক্ত হয়ে গেল হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিল।ফারাহর দিকে রাগান্বিত আখিজোড়ায় তাকালো।

চলবে,
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।)