#পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা
#রেজওয়ানা_রমা
#পর্ব_১৫ ( অন্তিম পর্ব)
আমি নব বধূর সাজে সিদ্ধাত ভাইয়ার আসার অপেক্ষা করছি। বাড়ির সবার সাজ কমপ্লিট। নোভা আর ইতি তো আমার পাশ থেকে উঠছেই না আজকে। আমিও ওদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি হটাৎই বাইরে চেচামেচির আওয়াজ পেলাম বুঝলাম সিদ্ধাত ভাইয়া এসেছি। নোভা আর ইতি তো ছুটে চলে গেলো গেট ধরতে।
ওরা চলে যাওয়ায় আমি বেলকানি থেকে দেখছি সিদ্ধাত ভাইয়া গাড়ি থেকে নামছে। সাথে বড় বাবা, সিফাত ভাইয়া, বেলী আপু, কনা আপু, আপুদের হাসবেন্ড, আয়ান, আলিশা, অর্থ ভাইয়া, সবাই এসেছে। শুধু বড় মা ব্যতিত। কিন্তু সিদ্ধাত ভাইয়ার পাশে শাড়ি পরা মেয়ে টা কে? আগে কখনও দেখেছি বলে মনে হয় না। এভাবে সিদ্ধাত ভাইয়ার কাছাকাছি কি করছে?
মনের ভিতর আবারও সেই ভয় এসে জড়ো হলো। সিদ্ধাত ভাইয়া তখন সত্যি বলেছিলো তো? নাকি আমার সামনে অভিনয় করেছে। না সিদ্ধাত ভাইয়া এমন নয়। শুধু শুধু ভুল-ভাল ভেবে মুড নষ্ট করছি।
সিদ্ধাত ভাইয়ার গেট ধরেছে নোভরা সবাই।বেশ ঝগড়া চলছে দুই পক্ষের মধ্যে। ওদের ঝগড়া দেখে হাসি পেলো। এর পর সিদ্ধাত ভাইয়া সবাই কে থামিয়ে পকেট থেকে একটা টাকার ব্যান্ডেল বের করে দিয়ে দিলো। এর পর ভিতরে প্রবেশ করলো। আমি আর দেখতে পেলাম না কি হলো। রুমে বসে আছি একা একা।
☆☆ যোহরের নামাজ পড়ে সবাই চলে এসেছে। এখন বিয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পালা। ঈশা কে আনতে গেছে আমি তাকিয়ে আছি সিড়ির দিকে কখন আসবে আমার রানী। আমার ভালোবাসা, আমার পুরো পৃথিবী। সবাই ঈশার আসার অপেক্ষা করছে। সবার সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঈশা আসছে। পরনে বিয়ের লেহেঙ্গা, গোল্ড জুয়েলারি, মাথায় দোপাট্টা। স্বর্গ থেকে যেন রাজকন্যা নেমে এসেছে। এতো সুন্দর এতো সুন্দর যা বর্ণনার ভাষা আমার কাছে নেই। সবার নজর ঈশার দিকে। ভারী লেহেঙ্গা পরে হাটতে পারছে না। অনেক কষ্ট করে হাটছে বুঝতে পারছি। ঈশা কে এনে বসিয়ে দিলো। আমি বার বার তাকাচ্ছি। যতই দেখছি বেহায়া মন ততই দেখতে চায়। যেন একটা জীবন্ত পুতুল বসে আছে। মুকে মেকআপের প্রলেপ, ঠোঁটে গাঢ় মেরুন কালারের লিপস্টিক, নাকে নথ, কপালে টিকলি, মাথায় টায়রা, মুখ টা কি সুন্দর লাগছে। আমি তো পুরোই শেষ।
এবার পালা কবুল বলার। আমার কবুল বলতে এক সেকেন্ড এ দেরি হয় নি। সাথে সাথে বলে দিয়েছি। এবার ঈশা।
কাজী সাহেব: বলো মা, আলহামদুলিল্লাহ্ কবুল
ঈশা : ( নিশ্চুপে কেদেই যাচ্ছে)
কাজী সাহেব : বলো, আলহামদুলিল্লাহ্ কবুল
নোভা: এই ঈশা বল
ইতি: কাদছিস কেন ঈশা। কবুল বল
ফুপি: ঈশা মা। বলো সবাই অপেক্ষা করছে
ঈশার নিরবতা আমাকে ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে। ঈশা কি বলবে না? ঈশা কি মুহূর্তেই সব শেষ করে দেবে? আমার মনের ভিতরে ঝড় বইছে। সব তছনছ করে দিচ্ছে। ঈশা কেন এমন করছে। হটাৎই আমার বুকের ভিতরে যে ঝড় বইছে তা শান্ত করে দিয়ে ঈশা বলে,
ঈশা: আলহামদুলিল্লাহ্ কবুল
কাজী: আবার বলো আলহামদুলিল্লাহ্ কবুল
ঈশা : আলহামদুলিল্লাহ্ কবুল
কাজী: আবার বলো
ঈশা: আলহামদুলিল্লাহ্ কবুল
চোখ বন্ধ করে একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিলাম। আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো। অবশেষে আমার সব কষ্ট, অপেক্ষা, সকল পরিশ্রম স্বার্থক হলো। ঈশা আমার হলো। আমার ১১ বছরের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো। আমার গল্পের নাম শূন্যতা নয় পূর্ণতা। হ্যাঁ পূর্ণতা ঈশা কে পেয়ে পূর্ণতা পেলো এ ভালোবাসা। আলহামদুলিল্লাহ্।
◆◆বাসর ঘরে বসে সিদ্ধাত ভাইয়ার অপেক্ষা করছি এক বুক আশা, ভালোবাসা, আর এক আকাশ সমপরিমাণ লজ্জা নিয়ে । আমাদের গল্প টা পূর্ণতা পেলো। জয় হলো ভালোবাসার।
-আসবো ঈশা?
হঠাৎই কারো এমন কথায় তাকিয়ে দেখি সেই আপু টা।
-জ্বী আসুন।
– খুব মিষ্টি দেখতে তুমি ( আমার পাশে বসে আমার গালে হাত দিয়ে )
– ☺️। আপু আপনাকে তো চিনলাম না।
– আমি ভূমি। সিদ্ধাতের ফ্রেন্ড। আমারা এক সাথে বিএমএর ট্রেনিং করেছি।
– ওহ
ভূমি নাম টা শুনেই বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো। ভূমি সিফাত ভাইয়া গার্লফ্রেন্ড। কিন্তু সিদ্ধাত ভাইয়ার কাছাকাছি ছিল কেন? তখন দেখেছিলাম সিদ্ধাত ভাইয়া কাছাকাছি ঘুরছে। সিফাত ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড হলে সিদ্ধাত ভাইয়ার সাথে কি?
-খুব লাকি তুমি
– ( ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি। )
– তোমার কথা খুব শুনেছি
– কার কাছে?
– সিদ্ধাতের কাছে
-ওহ
– তো কেমন আছো তুমি?
– জি-জ্বী ভালো। আপনি? ( আমতা আমতা করে)
– ভালো থাকতে পারলাম কই। ভালো থাকার জিনিস তো তোমাকে দিলাম
-মানে?
-না কিছু না
– আপনি তো আমাদের ভাবী হচ্ছেন খুব দ্রুত।
– ভাবী? কিভাবে?
– কেন সিফাত ভাইয়ার সাথে আপনার বিয়ে হলে তো আপনি আমাদের ভাবী হবেন
– হাহাহা। সিফাতের সাথে কেন বিয়ে হবে? সিফাতের তো গার্লফ্রেন্ড আছে।
– ওহ
ভূমির কথায় আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো। চোখে অন্ধকার দেখছি। কি বলল এগুলো। বার বার কানে বাজছে। “সিফাতের সাথে কেন বিয়ে হবে? সিফাতের তো গার্লফ্রেন্ড আছে”। ” ভালো থাকতে পারলাম কই ভালো থাকার জিনিস তো তোমাকে দিলাম”। কথা গুলো কানে বাজছে। মাথা ঘুরছে। তাহলে সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে মিথ্যা বলল? আমি আবারও সিউর হতে জিজ্ঞাসা করলাম,
– আপনি সিফাত ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড না?
– ধুরু পাগলি। আমি কেন সিফাতের গার্লফ্রেন্ড হবো। সিফাতের সাথে তো সিদ্ধাতের মাধ্যমে পরিচয় আমার।
– তাহলে সিফাত ভাইয়া গার্লফ্রেন্ড কে?
– জানি না। তবে শুনেছি কলেজ লাইফ থেকে ওদের রিলেশনশিপ। এদের বন্ডিং টা খুবই ভালো
– আপু কিছু যদি মনে না করেন আপনার পরিচয় টা যদি একটু জানতে পারি?
– আমি ক্যাপটেন ভূমিকা রায়, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আছি এখন, আর তোমার কাছে আমার পরিচয় বলতে সিদ্ধাতের ফ্রেন্ড।
– আপনি হিন্দু ধর্মানুলম্বী?
– হ্যাঁ।
-ওও। আসলে আপু আমি আপনাকে আগে কখনও দেখি নাই তাই জিজ্ঞাসা করলাম কিছু মনে নিয়েন না প্লিজ
– আরে না না। তোমার সাথেও তো আমার পরিচয় হয় নি তাই পরিচিত হতে এলাম। এখন আসি বোন? সিদ্ধাতে সাথে ভালো থেকো। তোমাদের আগামী দিন গুলো সুন্দর হোক এই প্রার্থনা করি
ভূমি আপুর চোখে পানি টলমল করছে। আর উনি সেই পানি লুকাতে বিদায় নিচ্ছেন। ভূমি আপু চলে যাওয়ার মূহুর্তে আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
– আপনি কি সিদ্ধাত ভাইয়া কে ভালোবাসেন?
আমার এমন প্রশ্নে আপু টা দাঁড়িয়ে পড়ে। খুব গোপনে চোখের পানি মুছে হাসি মুখে উত্তর দেন,
– বন্ধুত্বের ভালোবাসা। এর বেশি কিছু নয়।
– আপনি কাদছেন কেন?
– সুখে।
– সিদ্ধাত ভাইয়া কি আপনাকে ভালোবাসে?
– এমন টা হলে তো আজ আমিও মুসলিম হতাম। ভূমিকা রায় নয় ভূমিকা চৌধুরী হতাম।
কথা টা বলেই এক প্রকার পালিয়ে যায় ভূমি আপু। সেদিকে আমি খেয়াল ও করি নি। ভূমি চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমি রুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম। মনের ভিতরে সেই ভয় টা ভয়াবহ রুপ নিয়ে সামনে এলো। আমার হাজারও রঙে রঙিন হয়ে উঠা আমার পৃথিবী চোখের পলকে ছাই হয়ে গেলো। মাথা ঘুরছে।
কেন মিথ্যা বললে আমায়? সত্যি টা তো বললেই পারতে। ভূমি সিফাত ভাইয়া গার্লফ্রেন্ড নয়। ভূমি সিদ্ধাত ভাইয়া কে ভালোবাসে। আর সেটা সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে বলে নি। সেদিনের মেসেজ গুলো সব সিদ্ধাত ভাইয়ার ছিল। সিফাত ভাইয়ার নয়। মানে আমি ভুল ভাবি নি। কিন্তু ভূমি আপু বলল না সিদ্ধাত ভাইয়া ভূমি আপু কে ভালোবাসে। আমি যে তাদের মেসেজ গুলো দেখেছি এটা তো জানে না। ভূমি আপু চাইলে বলতেই পারতো কিন্তু সিদ্ধাত ভাইয়া আমার কাছে ছোট হবে তাই বলে নি। আসলেই আপু টা সিদ্ধাত ভাইয়া কে অনেক ভালোবাসে। সিদ্ধাত আমাকে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছে। শুধু মাত্র আমাকে ভালো রাখতে। ভালোবেসে বিয়ে টা হয় নি। সবটা সামনে এলো এখন। বুঝতে পারলাম আমি আবারও ঠকেছি।
☆☆ওদিক পাশের ঘরে অর্থ, সিফাত, আর সিদ্ধাত। সিদ্ধাত কে মূলত বাসর ঘরে যেতে না দেওয়াই সিফাত আর অর্থের উদ্দেশ্য।
অর্থ : কি রে তোর তো আজকে খুশি সীমানাহীন। ( সিদ্ধাত কে উদ্দেশ্য করে)
সিফাত : তা আর বলতে? শালা আজকে হুদাই বিয়ে করলো। ও আগেই বিয়ে করে নিয়েছে চুপি চুপি। সব করা শেষ ওর
অর্থ: সিদ্ধাত তোর মতলব কি বল তো? দু নৌকায় পা দিয়ে চলবি নাকি। ভূমি ঈশা দুজন কেই চাই তোর?
সিদ্ধাত: আরে ধ্যাত। ভূমি কে চাইছে কে?
অর্থ : তাহলে ও কেন এসেছে?
সিদ্ধাত: ছ্যাকা খাওয়ার সখ হয়েছে তাই এসেছে।
অর্থ: তুই ইনভাইট কেন করলি
সিদ্ধাত: আরে ইনভাইট করি নাই। ওকে তো বলি ই নাই বিয়ে করছি। বেচারী কষ্ট পেতো।
অর্থ: তাহলে? ও নিজেই এসেছে?
সিদ্ধাত: হুম। এমনি তে তো ভূমি অনেক ভালো মেয়ে। তাই আর…..
সিফাত : এক্সকিউজ মি দোস্ত। ভূমি ফোন করেছে
অর্থ: ভূমি?
সিদ্ধাত: আরে ওর গার্লফ্রেন্ড।
সিফাত : আমি কথা বলে আসি
সিদ্ধাত: যা যা। আমিও যাই আমার বউ ও বসে আছে
অর্থ: ওই কাহিনী কি? ভূমি ওর গার্লফ্রেন্ড আবার তোকে লাভ করে
সিদ্ধাত: হাহাহা। তুই যে ভূমি কে চিনিস সেই ভূমি না। ওর গার্লফ্রেন্ডের নাম ও ভূমি। তুই যারে চিনিস সে তো হিন্দু। যে এখানে আছে। আর ওর গার্লফ্রেন্ড ও মুসলিম কানাডা তে আছে।
অর্থ: ওহ বুঝলাম।
সিদ্ধাত: ঈশা একা আছে আমি যাই
অর্থ: তোর না বাসর করা শেষ?
সিদ্ধাত: আরে বা*ল না। কিছুই করি নাই।
অর্থ : রাতে ছিলি না একসঙ্গে?
সিদ্ধাত: ছিলাম। তো?
অর্থ: তাহলে আজকে আর বাসর ঘরে কেন যাবি। তুই আজকে আমাদের সাথেই থাক।
সিদ্ধাত: হোপ। আমার বউ থাকতে আমি তোদের সাথে কেন থাকবো? আর কিচ্ছু হয় নি এতোদিন আজকে হবে। সর আমার টাইম ওয়েস্ট হচ্ছে। টাটা
বলেই চলে বেরিয়ে পড়লাম।
◆◆দুইটা চিরকুট লিখেছি। একটা আমার বাড়ির সবার জন্য, আর একটা আমার প্রতারক সিদ্ধাত ভাইয়ার জন্য। বাড়ির পিছন দরজা দিয়ে বাইরে চলে এলাম। আর যাই হোক একটা ঠকবাজের সাথে থাকা সম্ভব না। উদ্দেশ্যহীন ভাবে একা একা হেটে চলেছি। জানি না কোথায় যাবো কি করবো। হাইওয়ে তে গাড়ি চলছে অনবরত। আমি জেটে চলেছি অজানা পথের পথিক হয়ে। মাথা ঘুরছে।হটাৎ চোখে অন্ধকার দেখি, আমি পড়ে রই রাস্তার ওপর।
☆☆রুমে ঢুকে দেখলাম ঈশা কোথাও নেই। ফুলের বিছানার ওপর একটা চিঠি। তার ওপর একটা গোলাপ। তারাতাই চিঠি টা পড়ে দেখি চিঠিতে লেখা,
সিদ্ধাত ভাইয়া,
চিঠিটা যখন তুমি পড়বে তখন আমি তোমার কাছ থেকে অনেক দূরে। মেঘের দেওয়া আঘাত তো সয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু তুমিও মেঘের মত করলে? আমি কি ক্ষতি করেছি তোমার? কেন ঠকালে আমায়? নাকি করুণা করছিলে? আমাকে ভালোবাসার অভিনয় করছিলে? আমি তোমার সাথে নতুন জীবন শুরু করতে চেয়েছিলাম,পারলাম না। ভূমির সাথে কি সম্পর্ক সেটা জানতে বাকি নেই। ভূমি আপুকে তুমি বিয়ে করে নিও। আমি কখনও স্ত্রীর অধিকার নিয়ে তোমার সামনে আসবো না। শুধু শুধু সেদিন মিথ্যে বললে। সিফাত ভাইয়ার কেউ নয় ভূমি। ভূমি আপু তোমাকে ভালোবাসে। আপু তোমাকে ভালোবেসে মুসলিম হতে চেয়েছিল। কিন্তু সেটা আমার জন্য হয় নি। ক্ষমা করে দিও আমায়। তোমার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার শক্তি আমার নেই। তবে তুমি কি আমায় একটুও ভালোবাসো নি সিদ্ধাত ভাইয়া? একটু তো ভালো তুমিও বেসেছিলে না হলে শুধু মাত্র ঠকাতে এতো কিছু কেউ করে না। তবে আমার এই একটু ভালোবাসায় পোষাবে না। আমার সব টুকু ভালোবাসা চাই সিদ্ধাত ভাইয়া। কিন্তু পেলাম না। অভিযোগ জমিয়ে রাখতে নেই। ক্ষমা করে দিতে হয় নয়তো সরে যেতে হয় তাই নিজেই সরে গেলাম। এ কথা টা এখনো তোমায় বলা হয়নি যে, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি সিদ্ধাত ভাইয়া খুব খুব খুব ভালোবাসি। ভালো থেকো সিদ্ধাত ভাইয়া
ইতি,
তোমার করুণার পাত্রী ঈশা।
চিঠি পেয়ে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। পাগলের মত ফোন করে যাচ্ছি কিন্তু ফোন রিসিভ হয় না। পাগলী টা ভুল বুঝে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো। টেবিলের ওপরে আরও একটা চিঠি,
প্রিয় আব্বু-আম্মু,
তোমাদের সামনে দাঁড়াতে পারবো না। তোমারা আবারও আমাকে সিদ্ধাত ভাইয়ার কাছে যেতে বলবে। কিন্তু আমি যেতে পারবো না। তাই তোমাদের সবার কাছ থেকে দূরে যেতে চাই। তোমাদের কে খুব মিস করবো। লামু, মিতু, তৌহিদ,তৌফিক, নোভা, ইতি সবাই কে খুব মিস করবো। আর হয়তো কারো সাথে দেখা হবে না। তোমাদের কে আর কেউ জালাবে না। কেউ দুষ্টুমি করবে না। তোমাদের আর কাউ কে বকতে হবে না। ভালো থেকো তোমরাও
ইতি,
তোমাদের বাদর মেয়ে
চিঠি পড়ে বুঝেছি ওই বাড়িতেও ঈশা যায় নি। তাই খুজতে বেরিয়ে পড়লাম। সারা রাত কেটে যায় পেলাম না। বাড়ির কেউ সারারাত ঘুমায় নি। সবাই দুশ্চিন্তায় রয়েছে। ভূমির সাথে কথা বলে জানলাম তাদের ভিতরে কি কথা হয়েছিল। যা বুঝলাম এখানে ভূমির কোনো দোষ নেই। ঈশা ভুলে বুঝেছে। ও গুলিয়ে ফেলেছে দুই ভূমির মাঝে। ঈশা কে এখনো পাওয়া যায় নি। সকালে পুলিশ স্টেশন গেলাম সিফাত কে নিয়ে। একটা ডায়েরি করে এলাম।
সন্ধ্যায় ঈশা কে নিয়ে পুলিশ আসেন বাড়িতে। ঈশা কে দেখা মাত্র আম্মু ওকে জড়িয়ে ধরে কেদে দেয়। বাড়ির সবার চোখে পানি। কিন্তু আমি কাদি নি। আজ আমাদের রিসিপশন। ঈশা কে দেখে খুব হাসি পাচ্ছে। এতো অভিমান তোমার ঈশা? ফিরে যখন পেয়েছি তখন আর হারাতে দেবো না। সংসার আমাদের হবেই।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে ঈশা এখনো রেডি নয় তাই ওর রিসিপশনের ড্রেস, গহনা সহ সব নিয়ে এলাম, ঈশা কে গহনা পরিয়ে দিলাম নিজ হাতে।
আম্মু: কি করছিস সিদ্ধাত। পাগলামি বন্ধ কর
সিদ্ধাত: কেন আম্মু? ও সাজবে না? ওকে তো সাজাতে হবে। তাই না। আমাদের নতুন সংসার হবে। আম্মু ঈশা কে ফিরে পেয়েছি আর কিচ্ছু লাগবে না আম্মু।
সিফাত : সিদ্ধাত উঠ। ঈশার শেষ কাজ টুকু সম্পন্ন করতে হবে
সিদ্ধাত: হ্যাঁ করছি তো। ঈশা দেখ তোর জন্য আমি কাদছি না ঈশা। দেখ। এই ঈশা তাকা আমার দিকে। উঠবি না? দেখ আমি তোর পছন্দ করা সেই গাউন টা এনেছি তুই পরবি না? ঈশা কথা বল, কথা বল ঈশা, অন্য সময় তো মুখ বন্ধ করা যায় না আর এখন কথা বলতে বলছি শুনতে পাচ্ছিস না? কথা বল, কথা বল ঈশা? কথা বল……… ( জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়)
পরের দিন সন্ধায় আকাশ পানে তাকিয়ে আছে সিদ্ধাত। আনমনে কিছু হয়তো ভাবছে। তখনই সিফাতের আগমন ঘটে,
সিফাত : সিদ্ধাত
সিদ্ধাত: ইসস! ঈশা ঘুমিয়ে আছে। আস্তে কথা বল
সিফাত : ভাই নিজেকে সামলে নে। ঈশা আর নেই আমাদের মাঝে
সিদ্ধাত: কে বলেছে নেই। এই যে আছে আমার পাশে ঘুমিয়ে আছে দেখ।
সিফাত : আর কতক্ষন এই কবরস্থানে থাকবি? চল বাড়ি চল
সিদ্ধাত: ঈশা কে রেখে কোথাও যাবো না। আমি ঈশা কে কথা দিয়েছিলাম ওকে ছেড়ে যাবো না।
সিফাত : তাহলে কি তুই এখানেই থাকবি?
সিদ্ধাত: হ্যাঁ। ও ভুল বুঝে চলে গেলো। পাগলি টা। একদম বাচ্চাদের মত। তাই বলে কি আমিও ভুল বুঝে ওকে রেখে চলে যাবো? আমার ঈশা এখানে ঘুমাবে আর আমি? আরামে থাকবো?
সিফাত : না ঈশা বাড়ি ছেড়ে যেত, না এক্সিডেন্ট টা হত।
সিদ্ধাত: আসলে কি বল তো এটা আমার ভাগ্য। প্রথমে তো পেলাম না, পাওয়ার জন্য ১১ বছর অপেক্ষা করতে হলো, এর পর আবার ঈশা মেঘ কে ভালোবাসলো, এরপর ও যখন ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো বিয়ে টা হলো তখন ভাগ্য ওকে আমার কাছ থেকে আলাদা করে নিলো। আমার শালা কপাল টাই খারাপ। ঈশা কে পেয়েও হারালাম।
সিফাত : ভাগ্য কেউ বদলাতে পারে না ভাই। চল বাড়ি চল
সিদ্ধাত: ঈশা কে রেখে কোথাও যাবো না। তুই যা।
সিফাত কিছুক্ষন অপেক্ষা করে চায়। আর সিদ্ধাত ঈশার কবরের দিকে তাকিয়ে বলে,
– ঈশা এখনো রেগে আছো? আমার সাথে একটুও কথা বলবে না? ভারি অভিমান হয়েছে তাই না? একটা বার আমার কথা ভাবলে না? আমি কি বেচে আছি? না ঈশা আমি বেচেও মরে গিয়েছি সেদিনই।আমি সেদিন মিথ্যা বলি নি ঈশা, তবুও বিশ্বাস করলে না আমায়। আমার পৃথিবী অন্ধকার করে চলে গেলে। আমি যে তোমাকে পাওয়ার আশায় ১১ বছর অপেক্ষা করলাম। নিজেকে তোমার যোগ্য করে তুললাম। ঈশা আমি জিতেও হেরে গেলাম।
ঈশা তুমি বলেছিলে বিয়ের পর তুমি আমার সকালের নাস্তা বানিয়ে দেবে, কই তুমি তো তোমার কথা রাখলে না ঈশা। ঈশা আমি বিকেল টা তোমার জন্য রেখেছি। তোমায় নিয়ে ঘুরতে যাবো। আমি চাকরি ছেড়ে দেবো ঈশা। সারাদিন- রাত সব তোমার। আমি তোমার সাথে সকালের নাস্তা বানাবো। দুপুরের রান্না এক সাথে করবো ঈশা। ফিরে এসো। আমার পৃথিবী তোমাকে ছাড়া অর্থহীন। ঈশা এখন আর আমার বুকে মুখ গুজে ঘুমাবে না? তুমি তো বলেছিলে বিয়ের পর প্রতিদিন আমার বুকে ঘুমাবে তাহলে এখানে কেন ঘুমিয়ে আছো ঈশা? আমার বুক টা যে শূন্য পড়ে আছে। চারিদিকে হাহাকার।
ঈশা আমার অনেক গুলো বেবী চাই না।আমার তোমাকে চাই। তোমার সব ইচ্ছা পূরণ করবো। তুমি যা বলবে সব করবো শুধু ফিরে এসো। আমার হৃদয়ে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। ভুল বুঝে এতো দূরে গেলে যে আমি ছুতেও পারলাম না। কেন ঈশা? আমাকে ছেড়ে যাওয়া টা কি তোমার উচিত হলো? আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো ঠিকই তবে তোমাকে হারানোর শূন্যতা রয়েই গেলো। আমার গল্প টা তাহলে কিসের ঈশা?
আমার আর কাউ কে প্রয়োজন নেই দেখো আমি বিশাল বাড়ি, নরম বিছানা ছেড়ে তোমার পাশে ঘুমাই তোমাকে জড়িয়ে ধরে। আমার শুধু তোমাকে প্রয়োজন ঈশা। আর কিচ্ছু চাই না। আমি ভালো নেই ঈশা তোমাকে ছাড়া। আমিও যে তোমাকে খুব খুব ভালোবাসি। একটু খানি নয়।
কয়েক বছর পর,,,
আজ ঈশার কবরস্থানই আমার ঘর। আমার সংসার। আমি আজও পারি নি ঈশা কে ভুলে নতুন করে বাচতে। আজ লোকে আমাকে দেখিয়ে বলে, ” সিদ্ধাতের মত করে ভালোবাসতে শেখো”
ঈশা সবাই বুঝলো কিন্তু তুমি বুঝলে না। আজ পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছি তবুও তোমাকে ছেড়ে বাড়ি যাই নি। তোমার কাছেই রয়ে গেছি। কারণ আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না। যাই নি ঈশা। আমি কথা রেখেছি। আমাদের মাঝে কেউ আসে নি। শুধু তুমি আর আমি। আমাদের ভালোবাসা। আমার গল্পে শুধু তুমি আছো। তবে এই গল্পের নাম কি ঈশা? কি নাম দেবো আমি? #পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা? জানি না। তবে সিদ্ধাত তার ঈশা কে ভালোবাসে। ভীষন ভালোবাসে ঈশা।
।।সমাপ্ত।।