প্রেমরোগ পর্ব-৩০

0
728

#প্রেমরোগ-৩০
#তাসনিম_তামান্না

সময় আর স্রোত কখনো কারোর জন্য থেমে থাকে না। কিন্তু আজ কুয়াশার সময় কাটছে না। ওর কাছে মনে হচ্ছে সময় থমকে গেছে। তুষার আসার অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে। একা একা সবসময় কেমন উদাস হয়ে থাকে। কিছু ভালো লাগে না। এই তো তুষার যাওয়া সময় কুয়াশাকে সাবধানবাণী দিয়ে গেছে কতগুলো এমন কি গার্ডেনেও আসতে মানা করছে। তুষারের যে কুয়াশাকে ফেলে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না তা কুয়াশা বেশ করে বুঝতে পারলো। তুষার কে চি গেট পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এসো কুয়াশাকে জড়িয়ে ধরে ক পা লে শব্দ করে চু! মু খেয়ে হনহন করে চলে গেলো। আর একটিবার ও ফিরে তাকালো না। কুয়াশা তখন অনুভূতি শূন্যে তুলে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে তুষারের যাওয়ার দিকে। তুষার গাড়ি করে অদৃশ্য হয়ে গেছে তখনো কুয়াশা থম মে রে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষন পর নিজের জ্ঞান ফিরে পাই ফোনের ম্যাসেজ টোনে তুষারের ছোট বার্তা ‘এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেনো ভিতরে যাও’।
কুয়াশা অবাক হলো কিছুটা তুষার কীভাবে জানলো ও এখনো দাঁড়িয়ে আছে। ভাবতে ভাবতে তুষারের চু!মু দেওয়ার কথা মনে পড়লো। কপালে স্পর্শ করে মুচকি হাসলো। তারপর তুষারে রুমে বিছানায় গিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো। তুষারের ঘরে তুষার, তুষার ঘ্রাণ। মনে হচ্ছে এখানেই তো তুষার আছে।তুষারের সাথে কাটানো মুহুর্তের কথা ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে গেলো। ঘুম ভাঙ্গতেই তড়িঘড়ি করে ফোন নিয়ে দেখলো তুষার ফোন দিয়েছে কিনা। কিন্তু না তুষার ফোন দেয় নি। কুয়াশার মন খারাপ হলো। মনে করলো নিজে ফোন দিবে কিন্তু তুষার ব্যস্ত থাকতে পারে বলে আর ফোন দিলো না। কফি বানিয়ে খেতে খেতে বাসার সবার সাথে কথা বলল যাতে অশান্ত মনটা শান্ত করতে পারে। কিন্তু অশান্ত মন শান্ত হলো না উলটে বাড়লো মেঘার কথায় কি হবে মেয়েটার ভাগ্য কি মেয়ে নিবে মেঘা আর রিদের মিলন?
সারাটা দিন গেলো শুয়ে বসে ফোন চে পে। সময় কাটাতে আজ বেশ বেগ পেতে হয়েছে। কুয়াশার খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না কিন্তু পেটে ক্ষুদা না খেলেও হয় না রাতের খাবার খেয়ে ফোন হাতে নিলো তুষার কে ফোন দেওয়ার জন্য এবার টেনশন হচ্ছে লোকটা সেই যে গেলো একটা ফোন অব্দি দিলো না। রাগ অভিমান হলো। কিন্তু রাগ অভিমান দূরে ঠেলে ফোন দিলো তুষারের কাছে একবার বাজলো…
দুইবার বাজতেই ফোন ধরলো। তুষার ‘হ্যালো’ বলতেই। কুয়াশার মনের অস্থিরতা কমে গেলো কিছুটা। কুয়াশা শান্ত কন্ঠে বলল
” পৌঁছে গেছেন? ”
” হ্যাঁ অনেক আগেই কাজে বিজি ছিলাম তাই আর ফোন দিতে পারি নাই। ভাবলাম ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন দিবো কিন্তু এসে দেখলাম তুমি ফোন দিয়েছ। খেয়েছ? ”
” হ্যাঁ। আপনি? ”
তুষার বিছানায় আরাম করে শুয়ে হাত দিয়ে চুল ব্রাশ করে বলল
” হ্যাঁ। ভয় লাগছে না তো? ”
” উহুম। আপনি কবে ফিরবেন? ”
” কেনো আমাকে মিস করছ বুঝি? ”
কুয়াশা নিশ্চুপ। সে সত্যি তুষার কে মিস করছে। কিন্তু মিস করার কথা বললে তুষার কি মনে করবে? ভেবে চুপ রইলো। তুষার ঠোঁট চে পে শব্দহীন হাসলো। তুষার বলল
” আসলেই বউটা তার বরকে মিস করছে। ”
কুয়াশার রাগ, লজ্জা মিশ্রিত অনুভূতি হচ্ছে। তুষার যখন বুঝতেই পেরেছে তাহলে এভাবে বলে লজ্জা দেওয়ার মানে কি? কুয়াশা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল
” বলছি একবারও আমি আপনাকে মিস করছি? ”
” বলো নি কিন্তু নিরবতায় সম্মতির লক্ষ্মণ। আর আমার একটা বিশেষ ক্ষমতা আছে যানো? ”
কুয়াশা উৎসক হয়ে বলল
” কি ক্ষমতা ”
” তুমি না বলেও তোমার সব কথা বুঝে যায় ”
তুষারের কথা সত্যি। তবুও কুয়াশা বলল
” কচু! আন্দাজে ঢিল ছুঁড়েন। আমি বুঝি না মনে করেছেন। আমি এতোটাও বোকা নই। আমি সব জানি ”
” কি জানো? আমি একজনকে ভালোবাসি জানো? কিন্তু সে বুঝতে চায় না ”
কুয়াশার বুকের মধ্যে ধরাস করে উঠলো। তুষার কাউকে ভালোবাসে? কুয়াশা কাঁপা গলায় বলল
” আপনি কাকে ভালোবাসে? এই যে বললেন আপনার গার্লফ্রেন্ড নেই তাহলে ”
” ভালোবাসতে গার্লফ্রেন্ড লাগে না-কি? একটা বউ থাকলেই যথেষ্ট ”
তুষারের কথার মর্মার্থ বুঝতে কুয়াশা কয়েক সেকেন্ড লাগল। বুঝতে পেরেই লজ্জায় মিয়িয়ে গেলো। তুষার ইনডিরেক্টলি তাকে ভালোবাসি বলছে। ইশশ কি লজ্জা। অনুভূতিরা সাতরাঙা আকাশে ডানা মেলে উড়তে লাগলো এদিক থেকে ওদিক। কুয়াশা মিনমিন করে বলল
” কে বলেছে বুঝে না সে বুঝে ”
তুষার শব্দহীন মুখে হাসি লেপ্টে আছে বলল
” তাই তাহলে সে ও কি আমাকে ভালোবাসা? আমাকে মিস করছে ”
কুয়াশার হাসফাস করছে। শ্বাস নিতেও কেমন সাবধানতা অবলম্বন করতে হচ্ছে মনে হচ্ছে এই বুঝি তুষার সব বুঝে ফেললো। কুয়াশা আর একটা কথার বলতে পারলো না। খট করে ফোনটা কেটে দিলো। দুহাতে মুখ ঢেকে হেসে ফেলল। হ্যাঁ কুয়াশা এই ক’দিনে তুষারের জন্য সামথিং ফিল করে। তুষার আসার অপেক্ষায় থাকে সারাদিন তুষারে ক্লান্তি মাখা মুখ দেখলেও আবার কষ্ট হয়। এই যে তুষার দূরে আসলো। ও বড্ড কষ্ট হচ্ছে। নিজ মন, বাসার প্রতিটা কোণা কেমন শূন্য শূন্য লাগছে। কেমন নির্জীব। তুষার বেশিরভাগ সময় কুয়াশাকে খেপিয়ে দিয়ে ঝগড়া করতো। আগের কথা ভাবতেই কুয়াশা অজান্তেই হেসে ফেললো। চোখের কোনে অশ্রু জমলো গড়িয়ে পড়তে দিলো না মুছে ফেললো। সারাদিনের অস্থিরতা, মন খারাপ, অভিমান, রাগ সব দূর হয়ে গেলো। মনে ভালোলাগা ভালোবাসা একাকার হয়ে গেলো। হ্যাঁ কুয়াশা তুষার কে ভালোবাসে। কুয়াশা বিড়বিড় করে বলল
” শরৎকাল হলেও আজ আমার জন্য বসন্ত। প্রেম বসন্ত। ”
তুষার কুয়াশার লজ্জা পেয়ে ফোন কেটে দেওয়ায় হাসলো। বলল
” ম্যাডাম আমার প্রেমে ফেঁ সে গেছে। ”
ফোন হাতে নিয়ে ম্যাসেজ দিয়ে বলল
” ম্যাম আপনি কি লজ্জা পেয়েছেন? ”
কুয়াশা ম্যাসেজটা দেখে বলল ” অ স ভ্য সব সময় আমাকে অস্তিতে ফেলা। ”
কুয়াশা খুশি মনে কল্পনা জল্পনা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো। স্বপ্নে তুষার কুয়াশা কত কি দেখলো।
___________________________
মেঘা শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে ঘুম নেই দু-চোখে মাথায় হাজারো দুঃচিন্তা। কাল ছুটির দিন সকলে বাসায় থাকবে। মেঘা ভেবে নিয়েছে কাল ই সবাইকে তার আর রিদের ব্যাপারটা জানানোর পার্ফেক্ট দিন। কিন্তু জানানোর পর কি হবে মানবে তো? ওকে যদি ধরে বেঁধে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় তাহলে ও রিদকে ছাড়া থাকবে কিভাবে? একদম ম রে যাবে। কিছুতেই এমন কিছু হতে দেওয়া যাবে না। দরকার হলে বাসা থেকে চলে যাবে। কিন্তু এতোগুলো ভালোবাসার মানুষ গুলোকে ছাড়া কিভাবে কাটবে তার জীবনের মুহূর্ত? এই মানুষ গুলোকে ছাড়া মটেও তার জীবন চলবে না। কিন্তু রিদ ছাড়া নিজে অন্য কারোর বউ হিসেবে কল্পনা ও করতে পারবে না। যদি দুই দিক থেকে একজনকে বেচে নিতে হয় তখন কাকে বেচে নিবে? এসব হাজারো জল্পনা কল্পনা করে মাথা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। সিদ্ধান্তঃহীনতায় ভুগছে। অন্তপুর কষ্ট জর্জরিত হয়ে আছে। রিদ কয়েকবার ফোন দিয়েছে কিন্তু মেঘা ধরে নি ফোন ওফ করে রেখেছে। শেষ রাতের দিকে দুচোখের পাতা এক হয়েছে। তাও এক ঘন্টার জন্য।

চলবে ইনশাআল্লাহ