#পদ্ম_ফুলের_অভিমান(পর্ব 11)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম
হটাৎ পায়ের তলায় শুরশুরি পেয়ে ঘুম ভেঙে গেলো। টিপ টিপ করে চোখঁ খুলে দেখি আমি নিলয় ভাইয়ার রুমে শুয়ে আছি আর পায়ের কাছে নিলয় ভাইয়া বসে আছে। ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলাম কিছুক্ষণ তারপর হুস ফিরলো,
-মহারানির ঘুম ভাঙলো তাহলে
-ভাইয়া সকাল হয়ে গেছে,আমি এতোক্ষন ঘুমিয়েছি, আমাকে ডাকেন নি কেনো
নিলয় ভাইয়া কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠলেন।
আপনি এভাবে হাসছেন কেনো,,
আমি জানতাম তুমি শুধু পিচ্চি কিন্তু আজ বুঝলাম তোমার চেখেঁরো সমস্যা আছে,
কিইইহহ
ঘরিতে তাকিয়ে দেখো, সবে একটা বাজে। আর তুমি বলতেছো সকাল হয়ে গেছে,,
ইশশ তাই তো, এবার একটু ভালো করে নিলয় ভাইয়ার দিকে তাকালাম, শুধু একটা গেন্জি আর ট্রাউজার পরে আছে, চুল থেকে টপ টপ করে পানি পরছে, আর উনি তখন থেকে আমায় তুমি করে বলতেছে এই জিনিসটা আর কেমন যেনো লাগছে।
-কি গো এভাবে কি দেখতেছো
-Whaatt
-না মানে বউ তো তাই বললাম(ছোট ছোট করে) আচ্ছা ঠিক আছে আর বলবো না
-আমাকে ডাকেন নি কেনো
-তখন সবে মাত্র ঘুমিয়েছো, আর তোমার কোনো প্রয়োজন পরে নি তাই ডাকি নি
-তাহলে এখন কেনো ডাকলেন
-এখন ডাকলাম এজন্য যে এই বিয়ের শাড়ি তো খুলতে হবে,
বুঝলাম,এরপর উঠে ব্যাগ থেকে কালো রঙের একটা থ্রিপিস নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগোলাম। হটাৎ মনে হলো আমাকে ঘরে নিয়ে এসেছে কে,নিলয় ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করে দেখি,,
আচ্ছা আমাকে রুমে কে নিয়ে এসেছে,
কেনো আমি,তোমার বর থাকতে আর কে নিয়ে আসবে বলেই একটা হাবলা মার্কা হাঁসি দিলেন
আমি কি হেঁটে হেঁটে আসছি নাকি…
উনি ছোট ছোট চোখঁ করে বললেন, ঘুমের মানুষ হাটতে জানে জানতাম না তো,,
ধ্যাত,বললেই তো হয়,
আমি কোলে করে এনেছি,,
ছি ছি বাড়ির কেউ দেখে নি তো,
বাড়ির কেউ দেখবে না কেনো, সবার সামন দিয়েই তো এনেছি, কে দেখেছে আর কে দেখে নি তা তো জানি না(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
আমি তো মহা লজ্জায় পরে গেলাম, বাসর রাতে বউ গাড়িতে ঘুমিয়েছে আর বর তাকে কোলে করে সবার সামন দিয়ে রুমে নিয়ে এসেছে,
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে বিছানায় বসলাম। নিলয় ভাইয়া রুমে নেই তাই অনেকটা হালকা লাগতেছে সবকিছু, আমি এই বাড়িতে থাকতেও খুব বেশি একটা এই রুমে আসি নি। আমি আমার রুম,ফুপির রুম আর আমার বেলকোনি এইগুলোতেই বেশি ছিলাম, মাঝে মধ্যে নিলয় ভাইয়ার রুমে আসতাম কোনো কিছুর প্রয়োজনে, আজকে রুমটা বেশ ভালোই লাগছে, মৃদু পারফিউম এর গন্ধ নাকে আসতেছে, ক্লান্ত লাগতেছে খুব যেই আবারো একটু শুয়েছি তখনি নিলয় ভাইয়া রুমে আসছে,,
এই এই একটু ওঠো,
তারাতারি করে উঠে বসলাম,এতো জোরে বলার কি আছে,
না আবারো ঘুমাতে তাই জোরে বলা, দেখি ভালো হয়ে বসো,
আমি সোজা হয়ে বসতেই টাওয়াল দিয়ে চুলগুলো মুছে দিলেন তারপর ড্রেসিন থেকে একটা হেয়ার ড্রয়ার বের করে এনে আমার চুলগুলা শুকাতে লাগলেন,,
এই মধ্যেরাতে কজনের স্বামি এমন যত্ন করে বউয়ের চুল শুকাবে,এটা ভাবতেই ভালো লাগছে, আমি তো ভেজা চুল নিয়েই ঘুমিয়ে পরতাম। চুল শুকানো হয়ে গেলে তখন এনে রাখা নুডলস খাইয়ে দিতে লাগলেন।
খাইয়ে দিচ্ছে আর বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে, এইভাবে মুখের দিকে তাকালে কি শান্তিতে খাওয়া যায় নাকি, আমি বার বার কপালের চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিচ্ছি,
-চুলগুলোকে এতোটা শা*স্তি কেনো দিচ্ছো
-মা ‘মানে
-কপালে চুল আসলে দেখতে ভালো লাগে বউ
কথাটা কেমন ঘোর লাগা কন্ঠে বললেন নিলয় ভাইয়া ,তাই আমি কথা ঘোরানোর চেষ্টা করে বললাম
-নুডলস কে বানিয়েছে
-আমি
-আপনি রান্নাও জানেন নাকি
-জানি একটু একটু, তাছাড়া এখন কি রান্না জানতে হয় নাকি, ইউটিউব আছে তো
-আর খাবো না
-শেষ করতে হবে
-আপনি খেয়েছেন
-একবারো বলেছিলে
-নিজের কাছে লজ্জা পেয়ে গেলাম, আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর আমি খাচ্ছি,একবারো জিজ্ঞেস করিনি এটা একদম ঠিক হয় নি
তাই বললাম আমি আর খাবো না। আর আমি আপনাকে নুডলস করে এনে দিচ্ছি
-লাগবেনা বউ এতেই হয়ে যাবে, এই বলে আমার এটো করা নুডলস গুলোই খেলেন,
তুমি একটু বসে থাকো আমি এক্ষুনি আসছি,এই বলে প্লেট গুলো নিচে রেখে এসে আলমারি থেকে একটা ব্যাগ বের করলেন,, তারপর ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করে আমার সামনে নিয়ে আসলেন, আমি কিছু না বলে চুপচাপ বসে আছি,,
একে একে বক্স থেকে একটা আংটি আর একটা সুন্দর লকেট দেওয়া চেইন বের করে আমার সামনে ধরে বললেন, দেখোতো পছন্দ হয় কি না,
আমি হাতে নিয়ে বললাম অনেক সুন্দর তো, এগুলো কিসের,
-হীরের
-আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম, এগুলো হীরে কার জন্য
-কেনো আমার বউয়ের জন্য , তারপর আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে হাতে আর গলায় পরিয়ে দিলো, তারপর আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে আয়নায় আমাকে দেখতে লাগলো,
আমিও নিজের দিকে ভালো করে লক্ষ্য করলাম, কালো থ্রিপিসের সাথে গলায় এই হীরের চেইন যেনো সত্যি অন্যদিনের চেয়ে আমার সৌন্দর্য কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।
-পদ্ম ফুল
-হুমম
-খুব ভালোবাসি তোকে
-হুম
-আমি এটা বিশ্বাস করেছি যে সত্যি সত্যি যদি মন থেকে ভালোবাসা যায় তাহলে তাকে পাওয়া যায়
আর আমি সবসময় চেয়েছি আমার পদ্ম ফুল যেনো আমারি থাকে, আর আজ আমার চাওয়া পরিপূর্ণ, আমার পদ্ম ফুল এখন আমার হয়ে গেছে। আমার বিয়ে করা বউ।
বলেই একটা হাসিঁ দিলেন,
-আবারো বউ বউ করছে,,আর লজ্জা লাগছে তবুও আমি আর কিছু না বলে মাঝখানে একটা কোলবালিশ রেখে একপাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পরলাম।
-মাঝখানে এটা কেনো রাখলে
-যাতে আপনি এইপার্শে না আসতে পারেন
-উনি একটু হেসেঁ বললেন, আমি যদি চাই তাহলে ওটা কেনো তুমি যদি আমাদের মাঝে দেয়াল ও করে দাও তবুও যাবো তোমার কাছে, কিন্তু তোমার অনুমতি ছাড়া আমি যাবো না তোমার কাছে, তাই এটা দেওয়ার দরকার নেই আমি সোফায় ঘুমাচ্ছি এই বলে লাইট অফ করে দিলেন।
-আমি চুপচাপ শুয়ে পরলাম। একটু পর আবার কানের কাছে এসে ফিস ফিস করে বললিন গুড নাইট বউ
নাহ এনাকে নিয়ে তো আর পারি না,জোরে একটা নিশ্বাস ছেড়ে ঘুমিয়ে পরলাম।
খুব সকালে চোখেঁ সূর্যের আলো পরতেই ঘুম ভেঙে গেলো, ঘরিতে তাকিয়ে দেখি নয়টা বাজে। তারমানে খুব সকাল না অনেক দেরি হয়ে গেছে , রুমে নিলয় ভাইয়াও নেই। উফফ আল্লাহ কোনদিন না জানি এই এতো ঘুমের জন্য আমার কপালে ভাত না জোটে। ঘুমালে আমি মোটেও টের পাই না, কি থেকে কি হচ্ছে।
তারাতারি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম। এখানেও দেখি অনেক মানুষ, নিলয় ভাইয়ার চাচা চাচিরা সবাই এসেছে,আসা পাশেই বাড়ি তাই হয়তো সকাল সকাল সবাই এসেছে, এছাড়া পাশের বাসারো অনেকে এসেছে,
অভ্র ভাইয়ার চাচি এসে বললো, নতুন বউয়ের এতোক্ষনে ঘুম ভাঙলো কাল থেকে আছি বউকে দেখার জন্য বউয়ের ঘুম এ তো শেষ হয় না,,
কাল থেকে মানে কি, কাল এসেছে এনারা, তাহলে কি এনাদের সামনেই নিলয় ভাইয়া আমাকে কোলে করে নিয়ে গেছে নাকি, ইশশ কি লজ্জা ভাগ্যিস ঘুমিয়ে ছিলাম না হলে তো আরো লজ্জা লাগতো।
এর মধ্যে পাশে থেকে এক বয়স্ক মহিলা আরেকজনকে বলে উঠলো এখনকার মেয়েদের কি কাণ্ডজ্ঞান বলতে কিছু নেই নাকি রে, গোছল না করেই সবার সামনে এসেছে,
আমি কথাটা শুনে আর এক দফা অবাক, গোছল করতেই হবে নাকি। বাসর এ কিছু হোক না হোক গোছল করে বুঝিয়ে দিতে হবে দেখেন আমি বাসর করেছি। কিন্তু তারপর মনে হলো, এনারা তবুও আসতেই বলেছে গ্রামে হলে তো এতোক্ষনে মাইক দিয়ে বলা বাকী থাকতো। তাছাড়া আমিই বা কেমন, একটা ছেলেমানুষের সাথে এক রুমে থেকে গোছল না করেই সবার সামনে এসেছি, ইশশ পদ্ম সবসময় তোর ভূল না করলে হয় না,,
তখনি ফুপি এসে বললো, সে কি রে পদ্ম মা আজ থ্রিপিস পরেছিস কেনো, নতুন বউদের শাড়ি পরতে হয় যা গোছল করে এই শাড়িটা পরে নিচে আয়, এই বলে কাঁচা হলুদের মতো একটা শাড়ি আমার হাতে দিয়ে গেলো,,
আমি শাড়ি নিয়ে এক দৌড়ে রুমে আসলাম, ধ্যাত আমার গোছল না করে যাওয়া একদম উচিৎ হয় নি, আমার বা কি দোষ তারাতারি করে গেছি আমাকে কি কেউ মনে করে দিয়েছে নাকি,শাড়িটা বিছানায় রেখে গোছল করে শুধু পেটিকোট আর ব্লাউজ পরে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম। কারন এখন শাড়ি পরবো। রাতে না জানি ফোন কোথায় রেখেছি, ফোন খুঁজে নিয়ে ইউটিউব এ গিয়ে শাড়ি পরা দেখে অনেকটা সময় নিয়ে শাড়ি পরলাম,,এর মধ্যে দরজায় নিলয় ভাইয়া কমপক্ষে বিশ মিনিট ধরে দাড়িয়ে আছে, শাড়ি পরা হলে আগে দরজায় খুলে দিলাম,উনি ভেতরে এসে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলেন,,
-ফিসফিস করে বলে উঠলেন,এই ভেজা চুল,কাঁচা হলুদ শাড়ি মাতাল করা চাহনি, আমি কিভাবে ঠিক থাকবো পদ্ম ফুল,,
-কিছু বললেন ভাইয়া,
-কই না তো, আর এখন থেকে ভাইয়া ভাইয়া বলা বন্ধ করো বউ, কেমন যেনো পর পর লাগে
-ভেঙ্গচি দিয়ে চলে আসলাম, উনি পেছন থেকে বললেন চুল শুকিয়ে যাও
আমি গেলাম না,কারন আবারো চুল শুকালে ওনাদেরকে দেখাবো কিভাবে যে আমি গোছল করে এসেছি হি হি
নিচে যেতেই ফুপি ওনার রুমে নিয়ে গিয়ে একজোড়া চুড়ি, সবসময় পরার জন্য একগুলা কানের দুল পরিয়ে দিলেন। তারপর কপালে একটা চুমু দিয়ে যা যা বললেন, তাতে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না,,
চলবে,,