#আমার_একলা_আকাশ_তোমায়_জুড়ে
#১৬তম_পর্ব
সদরের ফাঁক দিয়ে দেখলো অর্জুন তার ব্যাগটা তুলছে গাড়িতে। অর্জুন পেছনে তাকাতেই অন্নার সাথে চোখাচোখি হলো। অন্নার চোখ অশ্রুসিক্ত। অর্জুনদার ঠোঁটখানা মৃদু নড়লো। অন্নার কি বুঝতে ভুল হলো! কেনো মনে হলো, অর্জুনদা যেনো তাকে বললো,
“অপেক্ষা করিস”
অন্না বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অর্জুনের দিকে। অর্জুন আজ দৃষ্টি সরালো না। তার কাতর দৃষ্টি দেখছে অন্না। সেই দৃষ্টিতে লুকিয়ে রয়েছে চাপা আর্তনাদ। অর্জুন কত সময় অন্নাকে দেখছে সেটা হয়তো তার অবচেতন মন ও জানে না। কাকলী দেবী অবন্তীকা দেবীর হাতটা ধরে ধীর স্বরে বললেন,
“বাড়ি দেখে রেখো বোন”
“দিদি হুট করে ঢাকায় যাওয়া! কিছু হয়েছে কি?”
কাকলী দেবী বিষন্নচিত্তে তাকালো অর্জুনের দিকে। দীপংকর বাবুর মুখখানাও শক্ত। তারপর বক্ষস্থলের চাপা দীর্ঘশ্বাসটি ছেড়ে ম্লান হেসে বললো,
“তোমার দাদার একটা কাজ আটকে গেছে। সকলের যেতে হবে। আর অর্জুনের কিছু চাকরির ইন্টারভিউ ও আছে”
“এদিকে হতো না তাই না?”
“না গো, ঢাকা যাওয়া ছাড়া উপায় নেই”
মিয়ে যাওয়া স্বরে বললেন কাকলী দেবী। অন্নার মনে অদ্ভুত উচাটন তৈরি হলো। তার হৃদয়খানা কাঁপছে। চিনচিনে তিক্ত ব্যথা ক্রমশ সমস্ত হৃদয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে। নিকষকৃষ্ণ ভয় ভেতরটাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। বিষাদসিন্ধুর ঢেউ দৃষ্টিকে ঝাপসা করে দিচ্ছে, কেনো যেনো মনে হচ্ছে সে আর অর্জুনদাকে দেখতে পাবে না। অর্জুনদা যেনো হারিয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে অজানা কোনো কালগহ্বরে। অর্জুন তখনো অন্নাকেই দেখছে। সেই দৃষ্টি আজ অন্যরকম ঠেকলো অন্নার কাছে। আজ সেই চাহনীতে প্রখরতা নেই, নিষ্ঠুরতা নেই; বরং একরাশ বেদনার ছাপ যেনো পরিলক্ষিত হলো। এরমাঝেই দীপংকর বাবু বললেন,
“দেরি হচ্ছে তো”
“হ্যা আসছি”
কাকলীদেবীর কথায় সম্বিত ফিরলো অর্জুনের। দৃষ্টি সরিয়ে গাল ফুলিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লো সে। তারপর উঠে পড়লো গাড়িতে। গাড়ি স্টার্ট দিলো মিনিট পাঁচেক বাদে। অন্না এক মূহুর্ত দেরি করলো না। ছুটে গেলো ছাদে। ছাদ থেকে দাঁড়িয়ে দেখলো অর্জুনদার বিদায়। অর্জুনদাদের গাড়ি চলে যাচ্ছে। একটা সময় সেটা মিলিয়ে গেলো হিমুলেনের সীমানার বাহিরে। অন্না ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। তার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো বিষাদসিন্ধুর নোনাজল। আনমনে শুধালো,
“কেনো অর্জুনদা? কেন?”
উত্তর পেলো না। কারণ উত্তরদাতা তখন লুকিং গ্লাসের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। যতক্ষণ কিশোরীর সেই উড়ন্ত লাল ওরনাটা দেখা গেলো যতসময় অর্জুন তাকিয়ে ছিলো। আচ্ছা ভাগ্যটা এতো নির্মম না হলেও তো হতো? কে ভেবেছিলো ছাব্বিশ বছরের যুবকের আয়ুসীমাটি এতোটা ছোট! তার তো এখন জীবনটাই পড়ে রয়েছে। জীবনের অমৃত তো এখনো পানও করে নি সে। কি অপরাধ ছিলো তার? কখনো সিগারেট ছোঁয় নি, মদ নামক জিনিসে ছিলো তীব্র ঘৃণা তাহলে কেনো তার জীবনটাই এতোটা ছোট হলো। বিধাতার এ কেমন বিচার। অর্জুনের জানা নেই, শুধু এটুকু জানে এই অনিশ্চিত জীবনে ওই ছোট কিশোরীকে সে জড়াবে না। মেয়েটি যে তাকে পাগলের মতো চায়। কিভাবে মিথ্যে আশা দিবে সে! কিভাবে! কিভাবে বলবে এই অনিশ্চিত জীবনের আয়ু মাত্র কয় মাস। তাও আছে কি না জানা নেই অর্জুনের। আচ্ছা, বিধাতার যদি তাকে নেওয়ার ই ইচ্ছে ছিলো তাহলে সেই ছোট বেলায় কেনো হয় নি! যখন তার হৃদপিন্ডে সমস্যা দেখা গিয়েছিলো। তখন কেনো প্রাণদান করেছিলেন! অর্জুন সিটে গা এলিয়ে দিলো। বা চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো শীতল অশ্রুরেখা। এখন মনে হচ্ছে ডাক্তার না দেখালেই হয়তো ভালো হতো। তাহলে এই বাঁচার আপ্রাণ চাহিদাটা মনে আসতো না। এখন মনে হচ্ছে কেউ যদি তাকে বলে তোমাকে নিঃস্ব হয়ে বাঁচতে হবে, তবে নিঃস্ব হওয়াটাই মেনে নিলো অর্জুন। আফসোস কেউ বললো না। পেছনের সিটে বসে থাকা কাকলীদেবী চোখ মুছলেন শাড়ির আঁচল দিয়ে। একমাত্র ছেলের মৃত্যু নিশ্চিত ব্যাপারখানা কিছুতেই মানতে পারছেন না। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে, বিশ্রী সেই কষ্ট। অর্জুন যখন পাঁচ বছর ছিলো তখন ই তার হার্টের ব্যামো ধরা পড়ে। তার হার্টে নাকি অসংখ্য রয়েছে। ফলে তার বুকে ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট হতো প্রায়। চেন্নাই তে যেয়ে তার ওপেনহার্ট ও করানো হয়। ছেলেকে এজন্য কখনো খেলাধুলা করতে দিতে না। তার শরীর নিতে পারবে না তাই। তার ঔষধ ও চলছিলো বেশ কবছর। মুঠো মুঠো ঔষধে ধীরে ধীরে দূর্বল হতে থাকে ছেলেটা। কিন্তু কথায় আছে মানুষ বুদ্ধি দিয়ে কম, অন্যের কথায় কাজ বেশি করে। কাকলী দেবী তার একবান্ধবীর কথা মতো এক বাবার শরনাপন্ন হন। তার কিছু টোটকায় অর্জুন ধীরে ধীরে ভালোই হতে থাকে। ফলে তার ঔষধ খাওয়াটাও কমতে থাকে। ভালোই তো ছিলো বেশ ক বছর। দিব্ব্যি তার জীবন কাটাচ্ছিলো। কিন্তু বিপদটা বাড়লো এই বছর দেড়েক। ঘন ঘন জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যাথা। রাত বিরাতে বুকে ব্যাথায় কাতর হয়ে উঠে। সেই ব্যাথা এতোটা তীক্ষ্ণ এবং অসহনীয় যে শ্যাম ছেলেটা লাল হয়ে উঠতো। দেবব্রতের বিয়ের দিন ও যখন জ্বর এলো তখন কাকলী দেবী এবং দীপংকরবাবুর ভয়টা বাড়লো। সেই ভয় তীব্র হলো যখন পরের সপ্তাহেই অন্নাকে পড়িয়ে বাড়ি ফিরতেই বুকে ব্যাথায় অস্থির হয়ে গিয়েছিলো অর্জুন। ঘন্টাখানেক সেই ব্যাথাতেই কাঁতর হয়ে ছিলো সে। ভাগ্যক্রমে সেই ব্যাথা কমে যায়। তাই তো শহরে গিয়ে তার সম্পূর্ণ শরীরের পরীক্ষা করতে নিয়ে গেলেন দীপংকর বাবু। অন্নার জন্মদিন সেই রিপোর্ট গুলো হাতে পায় অর্জুন। রিপোর্ট নিয়ে যখন ডা. সাজ্জাদকে দেখায় তখন রিপোর্ট দেখেই তার মুখ গম্ভীর হয়ে উঠে। অনেকক্ষণ রিপোর্ট উলটে পালটে ডা. সাজ্জাদ গম্ভীর স্বরে বলে,
“শেষ কবে তোমার জ্বর এসেছিলো অর্জুন?”
“এই তো আড়াই সপ্তাহ আগে”
“তোমার কি প্রায় ই বুকে ব্যাথা হয়?”
“প্রায় বলবো না তবে হয়”
“আচ্ছা, কখনো কি তোমার বুক চেপে ধরে এসেছে? দমবন্ধ হয়ে যাবার মতো?”
“হ্যা, একবার হয়েছিলো। ছোটাছুটির তো অভ্যাস নেই। একবার দৌড়াতে দৌড়াতে এমন হয়েছিলো। আমি অজ্ঞান ও হয়ে গিয়েছিলাম। পরে ক্লিনিকের তারা বললো আমার হিমোগ্লোবিন কম। তাই রক্ত দেওয়াও হয়েছিলো”
সাজ্জাদ সাহেব এবার তার চশমাটা নামিয়ে রাখলো। চোখের কোনজোড়া ডানহাত দিয়ে টেনে ধরলেন তিনি। তারপর ধীর স্বরে বললো,
“দেখো, আমি এখন যা বলবো তোমার হয়তো শুনতে খারাপ লাগবে৷ তোমার রাগ হবে, আমার উপর অনেক রাগ হবে। কিন্তু তোমাকে ধৈর্য্য ধরে আমার কথাগুলো শুনতে হবে। তুমি কি প্রস্তুত?”
“ভনীতা না করে আমাকে সব খুলে বলুন, রিপোর্ট কি ভালো নয়?”
সাজ্জাদের কথায় বুকে কামড় পড়ে অর্জুনের। তবুও নিজেকে স্থির রেখে সে কথাগুলো বলে তাকে। সাজ্জাদ তখন নরম গলায় বলে,
“তোমার রিপোর্ট ভালো নয় অর্জুন। বরং খুব খারাপ। তোমার হার্টে আমারো ব্লক দেখা গেছে। অথচ তোমার একবার ওপেন হার্ট সার্জারী হয়েছে। সেবারো এজন্যই তুমি অজ্ঞান হয়েছিলে। হ্যা, হিমোগ্লোবিন তোমার কম। তবে সেটা অজ্ঞান হবার কারণ নয়। ওরা ইসিজি বা ইকো করায় নি। ছোট ক্লিনিক ভালো চিকিৎসা আশা করছি না৷ তবে এখন আমার সামনে সে রিপোর্ট গুলো রয়েছে তা থেকে এটাই এজ্যুম করছি যে তোমার অবস্থা ভালো নয়। ভালো নয় বললে ভুল, খুব ই খারাপ”
“কি বলছেন আপনি? একবার তো আমার হার্টের অসুখ নিরাময় হয়েছে সেটা আবার কিভাবে হয়? আপনি আদৌও বুঝে বলছেন তো?”
অর্জুন অধৈর্য্য কন্ঠে কথাটা বললো। সাজ্জাদ শান্ত স্বরে তাকে বললো,
“শান্ত হও অর্জুন। এখন তোমার পক্ষে উত্তেজনা ঠিক নয়”
“আরে কিসের উত্তেজনা! আপনি কি বলছেন একবার ভেবেছেন? আর আমি যদি অসুস্থ ই হই তবে ঔষধ দিন আমায়৷ চিকিৎসার মাধ্যমে সব সম্ভব। আপনি প্রেসক্রিপশন লিখুন”
“সে আমি লিখবো কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না। কারণ সেই পজিশনে নেই তোমার শরীর”
“কি যা তা বলছেন! ডাক্তার হয়ে রোগীকে বলছেন সুস্থ হবার উপ্য নেই। কেমন ডাক্তার আপনি। এই আপনার যোগ্যতা?”
“অর্জুন ঠান্ডা হও”
“পারছি না। ডাক্তার আমার বয়স কত? ছাব্বিশ। আমার সামনে ভবিষ্যৎ পড়ে রয়েছে। আমার কত কিছু করা বাকি? আমার চাকরি করতে হবে? সফল হতে হবে। কত কাজ! কেউ যে আমার জন্য অপেক্ষাও করছে। আর আপনি বলছেন আমার ঔষধে কিছু হবে না। কি করবো তাহলে? আমার যে বাঁচতে হবে”
অর্জুন বিলাপ করলো বেশ কিছুক্ষণ। তখন সাজ্জাদ সাহেব ধীর স্বরে বললো,
“একটা উপায় আছে, তুমি ঢাকায় চলে যাও। ওখানে হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের ব্যাবস্থা আছে। আমার মনে হয়ে একটা ব্যাবস্থা হবে। আমি আশা ছাড়তে বলছি না। তবে খারাপের জন্য ও প্রস্তুত থাকা ভালো”
অর্জুনের সকল আশা গুলো এক এক করে গুড়িয়ে গেলো। চুরমার হলো তার আত্মবিশ্বাস। বেঁচে থাকার আকুল আবেদন তার ভেতরকে কাবু করে দিলো। ফলে অন্নার সাথে দেখা করতে যাওয়া হয়ে উঠে নি তার। ভেবেছিলো মেয়েটার সামনেও যাবে না। কিন্তু ভাগ্য! সেই মুখোমুখি হলোই। নিষ্ঠুর পাষন্ডের মতো তার হৃদয়টা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিলো অর্জুন। সেদিন খুব কেঁদেছিলো সে, ম’রে যাবার ভয়ে নয়! হেমনলিনীকে কষ্ট দেবার দরুন। সেটা যে মৃত্যু থেকেও অসহনীয় বেদনা।
******
অর্জুনের যাবার পর অন্নাটা যেনো প্রানহীন জীবন্ত লাশ হয়ে গেলো। হাসিখুশি, বাঁ’দর, বাঁচাল মেয়েটি হারিয়ে গেলো শীতের দমকা হাওয়ায়। তার বদলে যাকে দেকাহ গেলো সে চুপচাপ নিষ্প্রাণ অন্না। কথা বলে না, ছোটাছুটি করে না। ঘরেই থাকে। বই এ মুখ ডুবিয়ে রাখে। কিন্তু পড়া হয় না। পরীক্ষায় কোনমতে পাশ করেছে। সামনে তার ইন্টার পরীক্ষা অথচ সেদিকে তার খেয়াল নেই। চোখের নিচে কালি পড়ছে, ঘুম আসে না। অর্জুনদা বলেছিলো “অপেক্ষা করিস” কিন্তু সেটাও কি ভুল ছিলো। কে জানে! অন্না শুধু তাকিয়ে থাকে অর্জুনের বারান্দার দিকে। সেখানে তার অর্জুন দা বসে বই পড়তো। শিউলি গাছটা ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। মাঝে মাঝে চুরি হয় ফুল, পাতা ছিড়ে নিয়ে যায়। কিন্তু বাঁধা দেবার কেউ না। অন্না দাঁড়িয়ে নিস্প্রভ চোখে দেখে সেই গাছ। কত কত স্মৃতি! একদিন এই গাছের ফুল নিয়েই কত কাহিনী হয়েছিলো। অথচ মানুষটি ই নেই।
রাতে খাবার পর দেবব্রতের ঘরে কড়া নাড়লো অন্না। অন্নাকে দেখে দেব তাকে খাটে বসতে বললো। মেয়েটির হুট করে চুপচাপ হওয়া সবার নজরে পড়েছে। সবাই চিন্তিত ও বটে। দেব তাই তাকে শুধালো,
“কি রে বুড়ি! তুই আজ এখানে?”
“কিছু বলতে এসেছি দাদা”
“কি?”
“আমাকে একটু অর্জুনদার কাছে নিয়ে যাবি”
অন্নার আবদারে হতবিহ্বল দেব কৃষ্ণার পানে চায়। কৃষ্ণা তখন চুপ করে থাকে। দেব অবাক কন্ঠে শুধায়,
“অর্জুনের কাছে মানে?”
অন্না কিছুসময় চুপ করে থাকে, তারপর বললো,
“আমি যে ফেসে গেছি রে দাদা, নিজ জালে নিজেই ফেসে গেছি। অজান্তেই এমন জালে পা দিয়েছি এখন চোরাবালির মতো ডুবেই চলেছি। মানুষটাকে কত মাস দেখি না। আমি শেষবারের মতো তাকে একবার দেখবো। আমার আবদার টা রাখ। তুই কথা দিয়েছিলি, আমার আবদার রাখবি। যা চাইবো তাই দিবি। কথা রাখবি না দাদা?”
অন্নার কথা জড়িয়ে আসছে। কন্ঠ কাঁপছে। কৃষ্ণা এসে তার ঘাড়ে হাত দিতেই হু হু করে কেঁদে উঠলো সে। দেবব্রত অসহায় চাহনীতে বোনকে দেখছে। এই কি তার সেই বুড়ি? যে সারাঘর মাথায় করে ঘুরতো। তার ত্যাদরপনায় অস্থির ছিলো হিমুলেন?
******
অর্জুনের সম্মুখে দুজন ডাক্তার দাঁড়িয়ে আছে। তাদের হাতে বর্তমান রিপোর্ট। অর্জুন সাদা বিছানায় শুয়ে আছে। ফিনাইলের গন্ধ অসহ্য লাগে তবুও সেটাকে সহ্য করতে হচ্ছে তার। এই কমাস এখানেই চিকিৎসাধীন সে। ডাক্তারদের মুখ থমথমে। প্রায় এই রোগীকে নিয়ে তাদের মিটিং বসছে। কিন্তু ফলাফল শুণ্য। হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট ছাড়া তার শরীরের কোনো উন্নতি হবার উপায় নেই। কিন্তু হার্ট পাওয়া তো সে যে ব্যাপার নয়। এই কমাস ধরে হার্ট খুঁজেই যাচ্ছে তারা কিন্তু অর্জুনের উপযোগী হৃদপিন্ড পাচ্ছে না। অর্জুন ও অপেক্ষায় রয়েছে। রোগীকে তো বলা যায় না সে মারা যাবে। তাদের একজন বলেই উঠলো,
“দেখুন আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, কিন্তু ঈশ্বর সহায়ক না হলে কি করা যাবে বলুন”
“আমার বাঁচার কি উপায় নেই?”
“আছে, কিন্তু সেটাও যে দূর্লভ। অপেক্ষা করতে হবে যে”
অর্জুন দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর খোলা জানালার ফাঁকে নীলাম্বরের দিকে তাকিয়ে ধীর স্বরে বললো,
“”আমায় যে ফিরতে হবে। আমার হেমনলিনী যে আমার প্রতীক্ষায় রয়েছে। কত কাজ বাকি! তার চিঠির উত্তর দেওয়া বাকি! তার মান ভাঙ্গানো বাকি! আমার যে ফিরতেই হবে! হবেই”
রাতে তীব্র যন্ত্রণা উঠলো অর্জুনের। ব্যাথায় নীল হয়ে উঠলো সে। নার্সরা ছোটাছুটি শুরু করলো। সিপিআর দেওয়া হলো লাগাতর। ডাক্তার চলে আসলো। তখন ই একজন ডাক্তার বলে উঠলো,
“ওটি রেডি করো। হার্ট পাওয়া গেছে। এখন ই অপারেশন হবে……..
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি