#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির
[পর্ব-২৮] প্রথমাংশ
প্রথমত অসুস্থতা, দ্বিতীয়ত সবার সামনে এভাবে হাত ধরা। সব মিলিয়ে দীবা মহা বিরক্ত। তাই আবরারের হাত ধরাতে প্রসন্ন হওয়ার বদলে বিরক্ত হয়ে ছাড়িয়ে নিলো। অন্য কোনো সময় হলে দীবার এই কর্মকাণ্ডে রাগান্বিত হতো আবরার। কিন্তু আজ পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই রাগান্বিত হওয়ার বদলে বিষণ্ণবদন হলো তার মন। দীবার একদম কাছে এগিয়ে এসে দুই গালে হাত রাখলো। কপাল স্পর্শ করে বিচলিত কন্ঠে বললো, ‘তোমার শরির এতো গরম কেন? জ্বর এসেছে নাকি?’
মলিন চোখেমুখে আবরারের দিকে তাকালো দীবা। রাগ না দেখিয়ে দুর্বল হাতে আবরারের হাত দুটো নিজে থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো, ‘আমি বাড়ি যাবো। ভালো লাগছে না আমার।’
করুণ চোখে তাকালো আবরার। কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া দেখালো না। চুপচাপ গাড়ির কাছে এসে দরজা খুলে দিলে দীবা উঠে বসলো। ক্লান্ত চোখ দুটো বন্ধ করে সিটে হেলান দিলো। টিকে থাকার মতো শক্তি পাচ্ছে না আর। চোখ দুটো ভীষণ ব্যাথা করছে। জ্বর আসায় শীতে কুঁকড়ে উঠছে দীবা। আবরার খেয়াল করলো। নিজের গায়ের জ্যাকেট টা খুলে গাড়িতে বসলো।
‘দেখি এদিকে আসো।’ বলেই দীবাকে টেনে কাছে আনলো। জ্যাকেট টা যত্ন সহকারে দীবার গায়ে পরিয়ে দিলো। দীবা কোনো বাধা দিলো না। কথা বলার ইচ্ছেও নেই তার। তাই চুপচাপ আবরারের জ্যাকেট আঁকড়ে ধরে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো। আবরার এসি বন্ধ রাখলো। দীবার কমফোর্টেবলের কারণে লাইট অফ করে দিলো। দীবার ঘুমের ব্যাহাত যেন না ঘটে তাই খুব সাবধানতার সাথে গাড়িয়ে চালিয়ে শান্তি নিবাসে আসলো। গাড়ি থামিয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলো আবরার।
চারপাশ নিঝুম নিস্তর। রাস্তার পাশে সোডিয়ামের কৃতিম আলোতে আলোকিত রাস্তাঘাট। পাশের বাড়ির একটা কালো কুচকুচে কুকুর আছে। সেই কুকুরের আর্তনাদ এখান থেকেও শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। কুকুরের এই কর্কষ ধ্বনিতে বিরক্ত হলো আবরার। গাড়ির কাচ লাগিয়ে দিয়ে দীবার দিকে তাকালো। জ্বরের অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ফ্যাকাশে হয়ে আছে দীবার মায়াবী মুখশ্রী। দীবার মুখের দিকে তাকাতেই আবরারের বুকটা ধক করে উঠলো। বাম পাশে ব্যাথা অনুভব করলো সে। দীবার দিকে এগিয়ে এসে ঝুকে বসলো। তারপর দীবার গালে এক হাত রেখে আলতো ভাবে ডাকলো, ‘দীবা? ঘুমিয়ে গেছো? আমরা এসে পরেছি। দীবা?’
দীবা ক্লান্তিকর চোখ দুটো খুলে পিটপিট করে তাকালো। আবরার বুঝলো দীবার শরির দুর্বল। এভাবে ডেকে নিয়ে যাওয়া যাবে না। হেঁটে যাবার মতো শক্তি বোধহয় এই মেয়ের নেই। কিছুক্ষণ বসে থেকে ভাবলো আবরার। তারপর চোখ ঘুরিয়ে বাড়ির দিকে তাকালো। সবাই ঘুমিয়ে পরেছে? নাকি ড্রয়িংরুমে কেউ আছে? জানার জন্য রিমির নাম্বারে ডায়াল করলো। কয়েকবার রিং হবার পর কল রিসিভ করলো রিমি। আবরার বিলম্ব না করে প্রথমেই জিজ্ঞেস করে উঠলো, ‘সবাই কোথায়? ড্রয়িংরুমে কেউ আছে?’
আবরারের এমন প্রশ্ন শুনে কপাল কুঁচকালো রিমি। কন্ঠ শুনে বুঝলো ব্যাপার টা খুব সিরিয়াস কিছু। তাই মজা না নিয়ে ‘দেখছি’ বলে ড্রয়িংরুমে আসলো। জানালো কেউ নেই। সবাই যার যার রুমে।
‘তাহলে দরজা খোল।’ বলে লাইন কেটে দিলো আবরার। রিমি একদম বেক্কল বনে গেলো। আবরার মোবাইলটা পকেটে রেখে গাড়ি থেকে নামলো। দীবার পাশে এসে দরজা খুলে দীবাকে স্বযত্নে কোলে তুলে নিলো। দীবা জড়সড় হয়ে আবরারের কোলে ছোট বাচ্চাদের মতো নিশ্চুপ রইলো। এক হাতে আবরারের গলা জড়িয়ে ধরলো। স্মিতি হাসলো আবরার। দীবার কপালে প্রগাঢ় একটা চুমু একে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। রিমি দুজনকে এভাবে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো। অস্থির হয়ে আবরারের কাছে এসে বলতে লাগলো, ‘আরব ভাই? দীবার কি হয়েছে? ব্যাথা পেয়েছে নাকি? ভাইয়া? বলো না দীবার কি হয়েছে?’
সিঁড়ির কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো আবরার। খুবই শান্ত গলায় প্রত্যুত্তর করলো, ‘সকালে বৃষ্টি ভিজায় জ্বর এসেছে। তুই দীবার রুমে জলপট্টি, প্যারাসিটামল আর একটা থার্মোমিটার নিয়ে আয়।’
কথা মতো রিমি দ্রুত পা চালিয়ে যাবতীয় জিনিস আনতে গেলো। আবরার দীবার রুমে এসে তাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। শীতে কনকন করছে দীবা। গায়ে মোটা চাদড় জড়িয়ে দিলো আবরার। দীবার পরনে হিজাব রয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলো খুলবে না। পরোক্ষনে যখন দেখলো হিজাবে অনেক গুলো পিন, তখন বিরক্ত হলো কিছুটা। এখন এই পিন গুলো যদি ভুলবশত মাথায় ফুটে যায় তখন? তাই গভীরে মনোযোগের সাথে দীবার হিজাব খুলার চেষ্টা করতে লাগলো। মাথার উপরের দুইটা পিন খোলে হিজাব টান দেবার পরেও খুললো না। ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকালো আবরার। আরো পিন আছে? দীবার ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটিয়ে পিন খুঁজতে লাগলো। কিন্তু পিন আর খুঁজে পাচ্ছে না। তাই বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করতে লাগলো, ‘আল্লাহ জানে কোন চিপায় পিন ঢুকিয়ে রাখছে।’
তখুনি রুমে আসলো রিমি। তাকে দেখেই আবরার উঠে দাঁড়িয়ে বিরক্তিকর কন্ঠে বললো, ‘তোর বান্ধুবির হিজাবটা খুলে দে। মানে একটা ওড়নার জন্য এতো পিন লাগে? আশ্চর্য মেয়ে তোরা। ওড়নাটা খালি গায়ে পেঁচিয়ে ফেললেই হয়। সহজ কাজ না করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কাজ করা তোদের দ্বারাই সম্ভব।’
কথাটা বলেই বেড়িয়ে গেলো আবরার। তার কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলো রিমি। হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝে আসলো না। ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইলো শুধু। অতঃপর নিঃশব্দে হেসে ফেললো। চোখ ঘুরিয়ে দীবার ফ্যাকাশে চেহারার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো একটা। কাপড় বদলাতে এগিয়ে আসলো দীবার কাছে।
দীবার রুম থেকে বেড়িয়ে নিজের রুমে আসলো আবরার। মনটা একদম ভালো নেই তার। বারংবার দীবার ক্লান্তিকর মুখশ্রীর কথা মনে পরছে। সুস্থ মেয়েটা হঠাৎ অসুস্থ পরলো কেন? তপ্ত শ্বাস ফেললো একটা। চটজলদি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো। মোবাইল টা হাতে নিয়ে দ্রুত পায়ে দীবার রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। রুমে এসে দেখলো রিমি দীবার গ্রাউন বদলে টিশার্ট পরিয়ে দিয়েছে। স্বস্তি হলো আবরার। এতো বড়ো জুব্বা দেখে তারই কেমন অস্বস্তি লাগছিলো। তাকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই রিমি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আম্মুকে ডাকবো?’
আবরার বারণ করলো, ‘না! তুই চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পর। আমি দীবার খেয়াল রাখছি।’
রিমি বাধ্য মেয়ের মতো মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলো। তবে যাবার আগে বলে গেলো, ‘এখন একটা প্যারাসিটামল খাইয়ে দাও। রাতে জ্বর আসলে কপালে জলপট্টি দিও। আর যদি দেখো ঘামছে তাহলে কাথা সরিয়ে ফেলবে। দরকার লাগলে ডাক দিও।’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ যা! আমি জানি এইসব।’ কিছুটা ধমকের স্বরে বললো আবরার। রিমি বিরক্তিকর চোখেমুখে তাকিয়ে বললো, ‘আশ্চর্য! কাজের বেলা রিমি। আর কাজ শেষে ধমক। বাহ্ ভাই বাহ্। এমন করলে জীবনেও বউ পাবা না।’
কথাটা রাগের ছলে বলেই আহাম্মক হলো রিমি। বউ? ভাইয়ার তো বিয়ে হয়েই গেছে। নিজের কথায় নিজেরই হাসি পেলো। আবরার জবাবে বললো, ‘আমার জন্য তোর এই ভাবিটাই যথেষ্ট।’
জবাব শুনে মুচকি হাসলো রিমি। বিদায় দিয়ে চলে গেল সে। আবরার দরজা লাগিয়ে লাইট অফ করে দীবার কাছে বসলো। ড্রিম লাইটের মৃদু আলোতেই দীবাকে মেডিসিন খাইয়ে দিলো। অতঃপর আদরের বউটাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো।
চলমান.
#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির
[পর্ব-২৮] দ্বিতীয়াংশ
রাতের ঘড়ির কাটা তিনটার ঘরে। মিনিটের বোধহয় ত্রিশ-চল্লিশ! প্রকাণ্ড রকমের গরমের কারণে দীবার শরির ঝালাপালা করে উঠলো। দুর্বল হাতে গায়ের ভারি কাথাটা সরিয়ে দিলো। ধীর গতিতে উঠে বসলো বিছানায়। এতোক্ষণে জ্বর নেমেছে তাই ঘেমে একাকার দীবার শরির। উন্মুক্ত চুল গুলো খোঁপা করে নিলো। লাইটের আবছায়া আলোতে অস্পষ্ট ভাবে চারপাশ ভাস্যমান চোখে। বিছানার পাশে ছোট কর্নার টেবিলের দিকে চোখ গেলো তার। একটা বাটিতে জলপট্টি রাখা। চোখ ঘুরিয়ে নিজের পাশে তাকাতেই আবরারের ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে নজর গেলো তার। উলটো পাশ হয়ে ঘুমে বিভোর আবরার। তারমানে আবরারই তাকে জলপট্টি দিয়েছে? আনমনে ঠোঁটে স্মিতি হাসি ফুটে এলো দীবার। অতিরিক্ত ঘামার কারণে গায়ের টি-শার্টের অর্ধাংশ ভিজে আছে। কেমন অস্বস্তি লাগছে তার। তাই বিছানা থেকে নেমে একটা সাদা টিশার্ট হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো। যদিও হাঁটার মতো শক্তি গায়ে ছিলো না তবুও জোরপূর্বক গিয়েছে। এখন শরিরটা হালকা হালকা লাগছে। বিছানার কাছে আবরারের পাশে এসে দাঁড়ালো দীবা। খেয়াল করে দেখলো আবরার কিছুটা ঘেমে আছে। এসি আর ফ্যান দুটোই অফ! দীবা এসিটা অন করে আবরার যে পাশে শুয়ে আছে ঠিক সেই পাশে আবরারের দিকে মুখ করে শুয়ে পরলো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো আবরারকে। এই মানুষটা তার জীবনসঙ্গী! তার ভালোবাসা! সত্যি কি তাই? এক হাত তুলে আবরারের গালে রাখলো। কোমল হআতের স্পর্শ পেয়ে পিটপিট করে ঘুম জড়ানো চোখে তাকালো আবরার। দীবাকে বিছানার একদম কার্নিশে শুয়ে থাকতে দেখে এক হাতে দীবার কোমড় জড়িয়ে ধরে টেনে নিজের একদম কাছে আনলো। কপাল ছুঁয়ে দিয়ে বললো, ‘এখন জ্বর একটু কম। শরির কেমন লাগছে?’
দীবা প্রত্যুত্তর করলো না। চুপচাপ এক মনে তাকিয়ে রইলো আবরারের দিকে। আবরার মৃদু হেসে বললো, ‘খাওয়া দাওয়া করো না নাকি? এইটুকু জ্বরেই গলে পরে গেলে একদম। আল্লাহ! তোমার শরিরে শক্তি এতো কম? হেঁটে আসার মতো জোর শরিরে ছিলো না। নাকি সবটাই কোলে উঠার ধান্দা?’
শেষের কথাটা আবরার মজার ছলে ভ্রুঁ জোড়া যুগল নাচিয়ে বললো। দীবা স্মিতি হেসে আবরারের গালে আলতোভাবে চি’মটি কা’টলো। অল্প শব্দে হাসলো আবরার। দীবার কাছে একটু এগিয়ে নিবিড় হলো আরো। দীবার দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে কন্ঠস্বর মোলায়েম করে বললো, ‘বৃষ্টি ভিজলে জ্বর আসে তাহলে বৃষ্টি ভিজতে গেলে কেন?’
দীবা ভড়াট কন্ঠে উত্তর দিলো, ‘এমনি। ভালো লাগে তাই।’
আবরার কিছুটা রাগ মিশ্রিত কন্ঠে শাসনের ভঙ্গিতে বললো, ‘ভালো লাগে তাই? জ্বর যে আসলো? কষ্টটা কে করেছে শুনি?’
দীবা আবরারের চোখে চোখ রাখলো। কোমলায়ন কন্ঠে শুধাল, ‘বৃষ্টি ভেজার উছিলায় যদি আপনার ভালোবাসা পাই, তাহলে সেই বৃষ্টিতে আমি আরো হাজার বার ভিজতে চাই।’
ঠোঁট প্রসারিত করে মৃদু হাসলো আবরার। দীবার গালে নিজের নাক ঘেঁষে আহ্লাদিত কন্ঠে বললো, ‘আমি তো সারাজীবন ভালোবাসবো তোমায়। তাহলে? সারাজীবন বৃষ্টি ভিজতে পারবে?’
দীবা চোখ দুটো আবেশে বন্ধ করে ফেললো। কম্পিত কন্ঠে বললো, ‘আপনার ভালোবাসার বর্ষণে নাহয় ভিজলাম সারাজীবন।’
__________________
নিস্বব্ধ রাত্রী কাটিয়ে ভোরের আলো ফুটলো। সূর্যোদয় হলো পূর্ব আকাশে। ধরনী করলো আলোকিত। ঘড়ির কাটা ছয়ের ঘরে। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আবরার। সারারাত মিলিয়ে মাত্র কয়েক ঘন্টা ঘুমিয়েছে বোধহয়। এই ঘুম বেশিক্ষণ টিকলো না। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ঘুমের ব্যাহাত ঘটলো তার। কিছুটা বিরক্তিকর মুখে মাথা তুলে দরজার দিকে তাকালো। এতো সকালে কার আগমন ঘটলো? আবারো কড়া নাড়ার শব্দ আসলো। এবার অতিরিক্ত বিরক্ত হলো। শুয়ে থেকে উঠতে চাইলে দেখলো দীবা তার বুকে মাথা রেখে জড়সড়ভাবে ঘুমিয়ে আছে। কয়েকটা অবাধ্য উন্মুক্ত চুল মুখের উপর পরে আছে দীবার। আবরার যত্ন সহকারে চুল গুলো কানের পিছনে রাখলো। জ্বরের উত্তাপে ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া মুখখানি দেখে বুকটা চিনচিন করে উঠলো। শুকিয়ে যাওয়া উষ্ঠধয়ে প্রগাঢ় ভাবে কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে একটা চুমু খেলো। তারপর অতী সাবধানে দীবাকে নিজের থেকে সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ঘুম জড়ানো চোখেমুখে দরজা খোলে দিতেই রোহানাকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। ভাবান্তর আসলো না আবরারের মাঝে। নির্বিকার ভাবে তাকিয়ে রইলো শাশুড়ি মায়ের দিকে।
রোহানা এখানে আবরারকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো। দুজনের ঘুমের ব্যাঘাতের কারণ নিজে হবার কারণে লজ্জিত হলো কিছুটা। কিছু না বলে চলে যাবে বলে মনস্থির করলো। কিন্তু চোখ ঘুরিয়ে বিছানায় তাকাতেই দীবার শুকিয়ে যাওয়া ফ্যাকাশে মুখ নজরে আসলো তার। হঠাৎ কি হলো মেয়েটার? চিন্তিত হলো অনেক। রুমের ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে অস্থির কন্ঠে প্রশ্ন করতে লাগলো, ‘দীবার কি হয়েছে? ওকে এমন লাগছে কেন?’
আবরার ভাবলেশহীন ভাবে রুম থেকে যেতে যেতে উত্তর দিলো, ‘অস্থির হওয়ার কিছু নেই। রাতে জ্বর এসেছিলো। এখন ঠিক আছে।’
বলেই দীবার রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। রোহানা দীবার পাশে বসে রইলো। কর্ণার টেবিলের উপর জলপট্টি দেখে সব বুঝলো। রাতে তাহলে খুব বেশি জ্বর এসেছিলো মেয়েটার। জলপট্টি কি তবে আবরার দিয়েছে? মেয়ের প্রতি আবরার এই কেয়ারিং দেখে মনটা ভালো হলো তার। রোহানা বরাবরই সরল মনের মানুষ। কোনো প্রকার প্যা:চ, ঝামেলা, রাগারাগি তার মাঝে নেই। সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে পছন্দ করে খুব। নাহলে কয়েকমাস আগে আবরারের কর্মকাণ্ডে রাগান্বিত হতো প্রচুর। যদিও কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে ছিলো। বিয়ের উক্ত ঘটনার কারণে এই বাড়ি ছেড়ে রাউজান চলে যেতে চেয়েছিলো। নিশিতা, আয়েশা বুঝালো অনেক। তাই থেকে গেলো। দীর্ঘশ্বাস ফেললো নিরবে। চোখ ঘুরিয়ে মেয়ের দিকে তাকালো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ভাবতে লাগলো। দীবার এইসএসসির পরেই রাউজান চলে যাবে রোহানা। এখানে থাকার আরো একটা কারণ হচ্ছে দীবার পরিক্ষা। দীবার বাবা মা:রা যাবার পর রাউজান চলে যেতে চেয়েও পারে নি। কারণ রাউজান থেকে আগ্রাবাদ এসে ক্লাস করা, পরিক্ষা দেওয়া দুটোই কষ্টসাধ্য। তাই বাধ্য হয়ে পূর্বের ফ্ল্যাটেই একা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো রোহানা। কিন্তু রোশান নারাজ! তারা দুইজনের একা থাকা রিক্স হয়ে যেতে পারে ভেবে শান্তি নিবাসে আনার প্রস্তাব রাখে। রোহানা প্রথমে বারণ করলেও রোশানের পরিবারের জোরাজুরিতে এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে শান্তি নিবাসে চলে আসলো। কিন্তু এখানে আসার আগে জোর গলায় জানিয়ে দিয়েছিলো যে দীবার পরিক্ষার পরেই রাউজান চলে যাবে। এইসব ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো রোহানা।
চলমান..