#বিষ_করেছি_পান(৩২)
(কপি করা নিষেধ)
রমিজউদ্দিন চেঁচামেচি করে ঘর মাথায় তুলছে। পারছেনা কলিজার টুকরো ছেলের গালে সপাত সপাত থাপ্পড় লাগিয়ে দিতে। আর না পারছে নিজেকে কন্ট্রোল করতে। সাথে যোগ দেয় মা সোহাগী। আদরের ছেলের কান টেনে ধরে।
— বাপের মান ইজ্জত এই বয়সে আসি নষ্ট করলি? আশেপাশের মানুষ জানাজানি হয়ে গেলে এই মুখ দেখাবো কেমনে তোর আব্বায়? ছি ছি ছি ছি!
সোহাগ কাঁদো কাঁদো মুখ করে ফেলে। সোহাগীর হাত ধরে বলে,
— আম্মা তোমরেও তো আব্বায় তুলে এনে বিয়ে করছে তয় আমার দোষ কি?
রমিজউদ্দিন লাফিয়ে দুপা এগিয়ে আসে সোহাগের দিক। আঙুল তুলে বলে,
— তোমার আম্মারে আমি সোজা বিয়ে করে আমার বাড়িতে এনে তুলছি। বাপের বাড়ি ফেলে রাখিনাই।এখন কবে বিয়ে করছো সেইটা বলো।
— বাদলের মুখ থেকে তো সব শুনেই ফেলছো।
— তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।
— মাস ছয়েক আগে।
— কিহ? এতোমাস! বিয়ে করবি ভালো কথা। আমারে বললে কি আমি অমত করতাম? আমার একমাত্র পোলার বিয়া ধুমধাম করে দিতাম। আমার কি টাকা পয়সার অভাব যে ছেলের বউ পালনের মুরোদ নাই? এই বাড়ির বউ কোনদিন এতোমাস বাপের বাড়ি থাকেনাই। কাল ই তুমি গিয়ে বউমারে নিয়ে আসবা। আমি আমার বাড়ির বউ বাপের বাড়ি ফেলে রাখবোনা।
— এইটা সম্ভব না আব্বা।
— কেন সম্ভব না?
— আপনার পোলার বউয়ের সাথে আমার স্বাভাবিক বিয়ে হয়নাই।
— সেটাতো বুঝতেই পারছি। তোমার আম্মার লগেও আমার স্বাভাবিক বিয়ে হয়নাই। আমি তারে জোর করে বিয়ে করে আনছি।
— কিন্তু আব্বা আমি জোর করে বিয়া করিনাই বরং আপনের পোলার বউই আমারে জোর করে বিয়ে করছে।
— কি কও আব্বা?
সোহাগীর দুই গালে হাত। রমিজউদ্দিন ও অবাক হয়। তার এতো শক্ত সামর্থ্যবান পোলারে একটা পুচকে মেয়ে জোর করে বিয়ে করলো!
— সবটা খুলে কও আব্বা।
সোহাগ বাবা মাকে সবটা খুলে বলে। সব শুনে সোহাগী রমিজউদ্দিন এর মাথা ঢিপ ঢিপ করছে। রমিজউদ্দিন চুপচাপ কিছুক্ষন মৌন রইলেন। ভাবনার অতলে তলিয়ে গেলেন। অনেক ভেবে চিন্তে বললেন,
— আমি যাবো বউমার বাবার কাছে প্রস্তাব নিয়ে।
— আব্বা আপনি কি আমাকে পিরিতীর সাথে সংসার করতে বলতাছেন ? আমি কিছুতেই সংসারে ঢুকমুনা। আমার সংসার ভালো লাগেনা।
— চুপ করো হারামজাদা। সংসার করবী নাতো কি করবি? নাতি পুতির মুখ কি আমি আকাশের দিক মুখ করে থাকলেই দেখতে পারমু?
এক ধমকেই সোহাগ চুপসে যায়। সোহাগী রমিজউদ্দিন কে বলে,
— আমরা কাল ই প্রস্তাব নিয়ে যাবো। তুমি আয়োজন করো।
— আম্মা পিরিতি আমারে দু চোখে দেখতে পারেনা।
— চুপ থাকো। আমাদের মধ্যে কথা বলবানা। দেখতে পারবো কিভাবে? এতো এতো খারাপ কাজ করছো মেয়েটার সাথে তার পর কি আশা করো তোমারে মাথায় তুলে রাখবো? তোমার আব্বায় আমার জন্য পাগল আছিলো। কোনদিন আমারে একটা ফুলের আচর ও দেয়নাই। আর তুমি? বিয়ে করছো করছোই। কই ঘরে আনি ভালোবাসবা বুঝাবা বউয়ের মনে জায়গা করে নিবা, মেয়ে মানুষ ভালোবাসা পাইলেই সব ভুলে যায়। তা না তোমার বউয়ের সাথে গুন্ডাগিরি দেখাইতেই সময় যায়।
— আম্মা আমি বলে দিলাম সংসার আমি করমুনা। মেয়ে মানুষের প্যানপ্যানানি আমার একটুও ভালা লাগে না। আপনেরা প্রস্তাব নিয়ে যাবেন না।
রমিজউদ্দিন সোহাগের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
— আব্বা সংসার খারাপ জিনিস না। মেয়েমানুষ ও খারাপ না।
— তারজন্য ই তো আপনি মাঝে মাঝে বাড়ি থাকেন না।
— ঐটা ফ্যাশন আব্বা। স্পেশাল ব্রেক। টিফিন টাইম। না দিলে ক্ষুধায় এতো সাধের স্কুলের শেষ ক্লাস অব্দি শরীর ঠিক থাকবোনা।
— আমি সংসারে জড়ামুনা আব্বা।
— আব্বারে বিয়ে করছো। আর এসব কথা বলিওনা। তুমি কি করছো তা তুমি নিজেও বুঝতে পারতাছো না। ঘরের লক্ষী ঘরে আনো।
— কিন্তু আব্বা..
— আর একটাও কথা না। যা জট পাকাইছো সেইটা কিভাবে ম্যানেজ করমু সেই চিন্তায় বাচতেছিনা।
সোহাগী টুপ করে সোহাগের কপালে চুমু দিয়ে দেয়। মুচকি হাসে।
— আমার ফেলটু পোলার বউ এতো ব্রেইনী মাইয়া হবো আমি তো ভাবতেও পারতাছিনা। আব্বা দেখতে কেমন রে? ছবি আছে দেখা না। খুব সুন্দরী তাইনা? নয়তো আমার পোলা তো এমনি এমনি পাগল হবো না।
রমিজউদ্দিন বাঁধ সাধেন।
— আহ। সোহাগী। কালকা গিয়েই বউমারে দেখতে পারবা। এখন ভাবো গিয়ে কিভাবে বেয়াইরে রাজি করাবা।
দুইজনে পরামর্শ করতে থাকে। সোহাগ রেগে মেগে উঠে যেতে যেতে বলে,
— আব্বা আমার সংসার ভালো লাগে না।
রমিজউদ্দিন সোহাগী ছেলের কথায় তেমন কান দেয়না। সোহাগ রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে যায়। এই বাদল্লাইর জন্যে ই এসব হচ্ছে। একে কোনভাবেই সোহাগ ছাড়বেনা।
ছুটি আসছে থেকেই বারান্দায় গ্ৰীলের উপর বসে বসে কান্না করছে। রিতীর ও মন ভালো নেই। নিজের উপর খুব বিরক্ত সে। এই সোহাগের থেকে কি কোন কালেই মুক্তি মিলবেনা? মানুষটাকে দেখলেই মায়া লাগে। কাছে যেতে ইচ্ছে করে। মিস্টি গলাটা শুনতে ইচ্ছে করে। কিন্তু মুখ থেকে যে নোংরা নোংরা কথায় নিজের মন মানসিকতা প্রকাশ করে তাতে আর একমূহূর্ত মুখটাও দেখতে ইচ্ছে করেনা। এই সোহাগকে রিতী চায়না। কখনোই চায়না। ছুটির প্রতি অভিমান জম্মে। যাবার আগে একটা বার কি ও বলতে পারতো না? অবশ্য বললে রিতী কখনোই যেতো না। ছুটির জায়গায় ছুটি ঠিক। বোন দুলাভাইকে মিলিয়ে দেবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু ছুটি তোর দুলাভাইটা মানুষের বাচ্চা না। রিতী ছুটির কাছে গিয়ে দেখে ছুটি কাঁদছে। কেনো কাঁদছে? হুটহাট কাঁদার মেয়ে তো ছুটি না।
— ছুটি? এই ছুটি? কি হয়েছে? কাঁদছিস কেনো? ঐ শয়তানটা কিছু বলেছে?
— আমার আর ঝিমাকে আলাদা করে দিয়েছে?
— মানে?
— ঝিমা আর কোনদিন আমাকে ভালোবাসবে না। আমার বন্ধু হবেনা। আমাকে ভূল বুঝে চলে গেছে।
— কেনো?
— দুলাভাই আমার মনের কথা ঝিমাকে বলেদিয়েছে। এখন ঝিমা আমাকে ভুল বুঝে চলে গেছে।
— তুই তোর দুলাভাইকে আজকাল মনের কথাও বলতে শুরু করেছিস?
রিতী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে। ছুটি ঝাড়ি দিয়ে বলে,
— আরেনা। আমার চোখ মুখ দেখলেই নাকি সব বুঝে ফেলে। বাঁধন ভাইকে আমি লাভ করি এটা ঝিমাকে বলে দিয়েছে। ঝিমা অনেক কেঁদেছে।
রিতী বুঝতে পারে সোহাগ গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করেছে। হয়তো ছুটি নয়তো ঝিমা কিছু বলেছে! রিতী হাত উঁচিয়ে ধরে।
— ঝিমার সাথে আমি কথা বলছি। এবার তুই আয়। নিচে নাম। আমি ব্যপারটা দেখতেছি।
ছুটি রিতীর হাত ধরে লাফ দিয়ে নিচে নামে। নাক টেনে বলে,
— তাড়াতাড়ি যাও। ঝিমা যদি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় তাহলে আই প্রমিজ তোমার জামাইয়ের সাথে আমি কোনদিন কথা বলবোনা। একদম ক্ষমা করবো না।
— করিস না।
–কাকী ঝিমা কোথায়?
রিতীর ডাকে বীনা মাথা তুলে ডাকে। তরকারী কাটছিলো। হাতটা ধুয়ে বলে,
— ঘরেই আছে বোধহয়। আয়। বোস।
— ঝিমার কাছে এসেছি। যাই আমি।
রিতী ঝিমার রুমে এসে দেখে রুম অন্ধকার। লাইট অন করে দেয়। রুমে ঝিমা নেই। বারান্দার দরজার দিকে চোখ পড়তেই দেখে ঝিমা মুখ বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্ধকার ঘরে লাইট কে অন করলো দেখার জন্যে ই ঝিমা উকি দেয়। রিতী গিয়ে ঝিমার পাশে দাঁড়ায়। ঝিমা দোলনায় বসে আছে। চোখ মুখ একদম টইটম্বুর করে ফেলেছে। বুঝাই যাচ্ছে কেঁদেছে। রিতী হাতটা ধরে বলে,
— আয়তো।
— কোথায়?
— কি হয়েছে তোদের? চল ছুটির কাছে যাবি।
— যাবোনা আমি।
— মান অভিমান বাদ। চল। আয়।
— তুমি কিছু জানোনা আপু ও করেছে। যাবোনা আমি।
— জানি আমি।
— তুমি কিছুই জানোনা আপু। ছুটি ভাইয়াকে পছন্দ করে। কবে থেকে পছন্দ? কেনো করে? কতটুকু করে? আমি এতো কাছে থেকেও কিছু জানিনা।অথচ ও দিনের পর কষ্ট পেয়ে গেছে আমি কিছু জানিই না।
— কি হয়েছে? বড় গলায় চেচাচ্ছিস কেনো?
দরজায় বাঁধন দাঁড়িয়ে। ঝিমার গলা শুনে এসে দাঁড়ায়। বাঁধন কে দেখে ঝিমার যেনো আগুনে ঘি পড়লো। ঝনঝন করে রাগ ঝাড়লো।
— বাড়ির পাশে আরশিনগর থাকতে দূর দেশে আরশিকে না খুঁজলে আমি ঝিমা বড় গলা কেনো ছোট গলাতেও একটুও চেচাতাম না।
বাঁধন ধপাধপ এগিয়ে এলো। আশ্চর্য হলো। প্রশ্ন করলো,
— কি হয়েছে? এরকম করছিস কেনো?
— সরে যাও। সামনে আসবেনা আমার।
— ঝিমা? কি হয়েছে বল? বেয়াদবি করছিস কেনো?
— দূর হও সামনে থেকে।
— থাপ্পড় লাগাবো কিন্তু।
ঝিমা গাল বাড়িয়ে দেয়।
— দাও দেখি কত থাপ্পড় দিতে পারো। সব থাপ্পড় সহ্য করে নিবো। টু শব্দ অব্দি করবোনা।
— ঝিমা??
অবস্থা বেগতিক যাচ্ছে দেখে রিতী এবার আটকায়। বাঁধনকে বলে,
— বাঁধন ভাই ঝিমার একটু মন খারাপ। দুই বান্ধবীতে একটু মনভার হয়েছে। আমি ঠিক করে দিচ্ছি।
বাঁধন রিতির কথায় ঝিমার দিকে তাকায়। কিছু সেকেন্ড তাকিয়ে বলে,
— মনমালিন্য সব ঠিক করে নে।
বাধন চলে যায়। রিতী ঝিমার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। মাথায় হাত রেখে বলে,
— আমি সব জানি।
— হ্যা হ্যা। জনে জনে সবাই জানে। শুধু আমিই জানিনা। চোখ মুখ দেখলেই সবাই বুঝে যায়। শুধু আমিই বুঝিনা।
— কিজানি? কেনো বুঝিসনা!
— কিছুই বলেনি আমাকে। এই নাকি সব কথাই আমার সাথে শেয়ার করে।
— সত্যিই কি কিছু বলেনি? আমার তো মনে হয়না। ছুটি সবার কাছে পেট চেপে ধরে থাকলেও তোর কাছে এলে পারেনা। হয়তো তোকেও বলেছে তুই খেয়াল ই করিসনি।
ঝিমা অবাক চোখে রিতীর দিকে তাকায়। সে খেয়াল করেনি? বলেছে ছুটি? বৃহৎ ভাবনায় পড়ে যায় ঝিমা। ছুটি চলন বলন আচার আচরণ মুহূর্তে মুহূর্তে মাথায় রিকেপচার করে। শরীরের লোম ফুলে ফুলে উঠে। রিতী কে নরম সুরে বলে,
— এভাবে কেনো লুকালো আপু? আমি কি ওকে ভুল বুঝতাম?
— সেটা কি স্বাভাবিক নয়? বাঁধন তোর নিজের ভাই ঝিমা।
— আর ছুটি যে আমার কলিজা…
এই মুহূর্তে রিতী কি বলবে বুঝে উঠতে পারেনা। কিন্তু ঝিমাকে বুঝাতে হবে।
— শোন ঝিমা এটা নিতান্তই ছুটির ভ্রম ছাড়া কিছুই না। তুই এতো সিরিয়াস ভাবে না নিলেই পারিস। ছোট বয়স। বাঁধন ভাই আমাদের বড় ভাইয়ের মতো। সবাই যে ভাই ভাববে এটাও তো কোন কথা না। ছুটির ইচ্ছা হয়েছে ভাবেনি। তাই বলে বাঁধন ভাই আর ছুটি? এটাতো কোনভাবেই সম্ভব না। এটা তুইও বুঝিস আমিও বুঝি ছুটিও বুঝে। দেখবি কিছুদিনের মধ্যেই এই ভ্রম ছেড়ে যাবে। এখন উঠ সোনা। আমার বোনটাকে আর কষ্ট দিসনা।
ঝিমা ছুটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ছুটির মুখে হাসি নেই। গুটি গুটি পায়ে এসে ঝিমার হাত ধরে। মাথা নিচু করে বলে,
— সরি।
— ইটস ওকে। মনের ব্যপার তোর কি দোষ?
— তোকে না বলার জন্যে সরি।
— মনের ব্যপার তোর কি দোষ?
— কোন দোষ নেই?
— আকাশসম।
— রাগ করে থাকিস না।
— তুই কেনো আমার ভাবী হতে চাইলি না?
ঝিমার প্রশ্নে ছুটি আকাশ থেকে পড়ে। কি বলছে ও?
— তুই একবার আবদারটা করতি আমার কাছে? আমি কি না করতাম? বকতাম তোকে?
ছুটি শুকনো হাসে। দ্বিধায় বলে,
— মানাতো আমাকে? একটু বেশীই বেমানান হতো না?
— জানি। আমরা একটু বেশীই ছোট। আর তুই যে এতো ফিলিংস পোষে রেখেছিস তার বেলায়?
— মনের ব্যপার আমার কি দোষ?
— আমার কথা আমাকে ফেরাচ্ছিস?
— আমার সাথে রাগ করে থাকিস না প্লিজ। একটু কমা।
— কমালাম।
— বুঝবো কি করে?
— বুঝতে হবেনা।
— জড়িয়ে ধরে বল।
— বলবোনা।
— এই এই ঝিমা ঘুর না… একটু জড়িয়ে ধর না… তোর ভাই তো ধরবেনা। ভাইয়ের হয়ে তুই ধরনা দিতে..।
— খবরদার মাইনষের জামাইয়ের কথা বলবিনা।
— তাহলে জড়িয়ে ধরনা।
— ভাইয়াকে যত তাড়াতাড়ি পারিস ভূলে যাবি । নয়তো এইবার ই শেষ আর কোনদিন জড়িয়ে ধরবোনা।
চলবে।
#বিষ_করেছি_পান(৩৩)
(কপি করা নিষেধ)
ছুটির পেছনে সোহাগ। সোহাগকে দেখে ছুটি ইচ্ছে করেই রিকশায় উঠেনি। ঝিমাটাকে বাঁধন স্কুলে নামিয়ে দেবে। সোহাগ পেছন থেকে ডাকছে,
— ছুটি রাণি! এই ছুটি রাণি! আরে দাঁড়াও।
ছুটি আরো জোরে পা ফেলে। সোহাগের উপর যতটা রাগ ছিলো ততোটা রাগ নেই। ঝিমাকে যখন জড়িয়েছিলো তখনি রাগ কমে গেছে। কিঞ্চিৎ পরিমাণ এখনো তবে আছে। সেটাকেই মুঠোয় রেখে ছুটি রাগ দেখাচ্ছে। তবে একদিক থেকে ছুটি সোহাগের প্রতি তুষ্ট। যে কথাটি প্রাণের বান্ধবীকে বলতে না পারায় ভিতরে ভিতরে একটা অপরাধ বোধ কাজ করতো ইনসিকিউরিটি ফিল হতো আজ তা নেই। সোহাগ যেনো এই অপরাধবোধ থেকে ছুটিকে বাঁচিয়েছে। ভাবতেই ছুটির ঠোঁটের পাশে হালকা খুশি উঁকি দেয় । সোহাগ এবার ছুটিকে পেছনে ফেলে। ছুটির দু পা আগে আগে হাঁটতে থাকে। পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,
— ছুটি রাণীর এতো জেদ!
— ঠকবাজ দের সাথে আমি কথা বলিনা।
সোহাগ মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়। ছুটির কথায় একটুও রাগ হয়না। বরং ছুটির নাকের ডগায় রাগ তিড়িৎবিড়িৎ করছে। সোহাগ কলার ঝাঁকিয়ে বলে,
— তুমি কি আদৌ জানো ছুটি আমি তোমার কি হই ? তুমি তো বুদ্ধিমতি সব বুঝে নেবার কথা। এবার সম্মানটাতো দিতে পারো!
— দেবো না আমি সম্মান। আমাকে ঠকানো হয়েছে। কেনো আমাকে ব্যতিত এতোবড় একটা ঘটনা ঘটানো হয়েছে আমি জানতে চাই। আমি কি অমত ছিলাম? বরং আপনার হয়ে আমি মাঝে মাঝে কনভিন্স করার চেষ্টা করি। আপনি কি সেটা জানেন?
সোহাগ মুচকি হাসে। ছুটির মাথায় আলতো ছুঁয়ে দেয়।
— এরজন্যেই তো ভাবী বাংলাদেশের প্রত্যেকটা দুলাভাইয়ের তোমার মতো শালিকা হোক। ছুটি রাণি! দুলাভাই সরি।
— সরি মাই ফুট! সরি বললেই কি সব হয়ে যায় নাকি? এইযে আমাকে আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলো। গেইট ধরার টাকা, পিড়িতে দাঁড়ানোর টাকা,হাত ধোয়ানোর টাকা, গিট দেওয়ার টাকা এগুলো কে পুষিয়ে দিবে শুনি?
— দুলাভাই সব দিবে।
— দুলাভাইয়ের টাকাতো আর দিবে না। দিলে দুলাভাইয়ের বাবার টাকা দিবে।
সোহাগের মুখের উপর ঝামা ঘষে ছুটি আবার পা চালায়। সোহাগ ও আসে।
— আমার বাবার সব টাকা পয়সা আমারি। অন্য কোন অংশীদার নাই।
ছুটি উত্তর দেয় না। সোহাগ মানিব্যাগ বের করে যতগুলো নোট ছিলো ছুটির হাতে ধরিয়ে দেয়।
— তোমার সাথে কথা আছে। আসো বসে কথা বলি।
— দাঁড়িয়েই বলি।
— ইমপর্টেন্ট!
রেস্টুরেন্টে গিয়ে ছুটি চেয়ার টেনে বসে। সোহাগ ব্রেকফাস্ট অর্ডার করে। ছুটি নোট গুলো একটা একটা করে গুছিয়ে নেয়। নোট দেখেই মনটা ফুরফুরা। নাহ! দুলাভাইটা খারাপ না। মনে মনে অসংখ্যবার থ্যাংকু দিলেও মুখে সিরিয়াসনেসটা বজায় রাখে। নিজের এই গুনের জন্য ছুটি মাঝেমাঝে নিজেকে অনেক বড় অভিনেত্রী মনে করে। টাকা গুলো ব্যাগে রেখে বলে,
— আমি হলাম শালিকা। আমি দুলাভাইয়ের বাবার টাকা নিতেই পারি। কিন্তু আমার বোন তো তা নিবেনা। শ্বশুরের গতর খাটানোর টাকা নিয়ে নিজেকে ছোট করে দেবার কোন মানেই হয়না।
— আমি তোমার বোনকে টাকা দিতেও যাবোনা। এখন আসল কথায় আসি। একটা সর্বনাশ ঘটতে চলেছে।
— কী সর্বনাশ?
— আমার আব্বায় আম্মায় আজকে তোমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোন ভাবেই আটকাতে পারিনি। এবার তোমাকে কিছু করতে হবে।
— বিয়ে শাদীর ব্যপার! এখানে আমি কি করবো?
— তুমিই করবে। এই বিয়ে যেনো কিছুতেই না হয় সেটার দায়িত্ব নিবে।
— বাপরে! আমি ছোট মানুষ! আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা? আমি এসব ফর্দি মর্দি আটতে পারবোনা।
— হ্যা। কিভাবে পেত্নী সেজে আমাকে ভয় দেখাবে সেটা পারবে।
ছুটি এবার একটু ঢোক গিলে! মনে মনে দাতে জিহবা কাটে।বাপরে! জেনে গেছে! এত্তো পাওয়ার! আপুরে…. কিন্তু কিভাবে? সাত পাঁচ ভাবতে থাকে। ভাবতে ভাবতেই বলে,
— আমার বাবা কখনোই তোমাদের মেনে নিবে না। এবার কি হবে?
— আরে বাবা আমিতো সেটাই চাই মেনে না নিক।
— তাহলে আপনি আমার আপুকে কিভাবে বউ করে নিবেন?
— আমার তোমার আপুকে চাইনা।
— এটাকি আপুকে বলবো?
— যা ইচ্ছা করো।
— আ’ম কনফিউজড।
— জানিনা।
ছুটি রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়। স্কুলে পৌঁছতেই মাথা থেকে দুশ্চিন্তা দূর করে ফেলে। আগে বাসায় যাক তারপর ভাববে। কিন্তু বাসায় যেতে যেতেই দেখে যা ঘটার তা ইতোমধ্যে ঘটে গেছে।
রমিজউদ্দিন এবং সোহাগী গাড়ি ভর্তি উপহার নিয়ে এসেছেন রিতীর বাসায়। সাথে আছেন অত্র আসনের এমপি মহোদয়। হটাৎ করে নিজ বাড়িতে গণ্যমানের আগমন দেখে ছানোয়ার কি রেখে কি দিয়ে আপ্যায়ন করবে সেটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রুম্পা পাশের বাড়ির রতনের মাকে ডেকে নেয়। সাথে তাদের ছুটা বুয়া তো আছেই। রমিজউদ্দিন ছানোয়ার কে ব্যস্ত হতে না বলে। হাত ধরে পাশে বসায়। এমপি সাহেব কথাটা পাতেন।
‘ স্যার আপনি ব্যস্ত হবেন না। আমরা আজ বড় একটা আবদার নিয়ে আসছি আপনার বাড়িতে।’
বিচক্ষন ছানোয়ারের বুঝতে অসুবিধা হয়না। তার মুখে লটকে রয়েছে হাসি। বড় মেয়ে তার বড়ই সুকন্যা। আর কি চাই! হাত কচলে কচলে ছানোয়ার বলে,
‘ গরীবের ঘরে আপনার পায়ের ধুলো পড়েছে। এর থেকে সৌভাগ্যের আর কি হতে পারে?’
‘ হা হা। কই তোমার মেয়ে কই। ডাকো। শুনলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। দেখতে শুনতে জুড়ি নেই। ব্যবহার যেমন কথা বার্তা তেও তেমন।এমন মেয়ে আজকাল দিনে কোথায় পাবো?তাই খোঁজ পেয়ে চলে এলাম আমাদের ছেলের জন্য তোমার মেয়েটাকে চাইতে। তোমার কোন অমত আছে? ‘
ছানোয়ার হাতে আকাশের চাঁদ দেখতে পাচ্ছে। এমপি সাহেবের একটাই ছেলে। গত বছর পি এইচ ডি করে আসছে সুইজারল্যান্ড থেকে। ছানোয়ারের যে কি খুশি লাগছে!! প্রথমবার বাবা হওয়াতেও বোধহয় এতোটা খুশি হয়নি। গদ গদ হয়ে আচমকা এমপি সাহেবের হাত চেপে ধরে।
— ভাইজান ! আপনি আমার বড় ভাই! আপনার দয়া! আমার আপত্তি থাকার প্রশ্ন ই উঠেনা। এই সামান্য স্কুল শিক্ষকের মেয়ে এতো বড় ঘরে যাবে এতো আমার সৌভাগ্য। ছেলে তো আমি জানি। মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ।
এমপি সাহেব প্রসস্ত হাসেন। এবার সোহাগী মুখ খুলেন। ঠোঁটের কোণে হাসি লটকিয়ে বলেন,
— আমার একমাত্র ছেলে ছানোয়ার ভাই। এতো বিষয় সম্পত্তি সবই আমাদের পর তার ই হবে। সারাজীবন পায়ের উপর পা তুলে খেলেও শেষ হবেনা। মেয়েকে নিয়ে আপনার কোন চিন্তা নেই। আমার বউমাকে আমি সোনায় মুড়িয়ে নিয়ে যাবো।
সোহাগীর কথা শুনে ছানোয়ারের মুখটা থমথমে হয়ে যায়। তার অঙ্কের হিসাবের ফল মিলছে না। সোহাগী বেগমকে ছানোয়ার চেনেন না। তবে এমপি মহোদয়ের স্ত্রীকে চেনেন। তাকে চেনেন না এমন কেউ নেই। রমিজউদ্দিন কে শুধু মুখ চেনাটাই চেনেন। শুনেছেন তিনি অনেক বড়লোক। অঙ্কে বেশ গড়মিল বেঁধে যায়। এরা কি কোনভাবে আত্ত্বীয় ?
— ভাইজান!! ছেলে আপনার কে হয়?
— আমার বড়ভাই সমতুল্য এই রমিজউদ্দিন ভাইয়ের ছেলে। আমার ভাতিজা। সাদেকুর রহমান সোহাগ। সোহাগের জন্য আপনার মেয়েকে চাইতে এসেছি।
রুম্পা ও একটু আগে এসে দাঁড়িয়েছে ছানোয়ারের পেছনে। সোহাগ নামটা শোনা মাত্রই স্বামীর কাধের উপর শার্ট খামচে ধরে। ছানোয়ার ও সাথে সাথে রুম্পার দিকে তাকায়। দুজনের চোখেই অস্বাভাবিকতা খেলা করছে। রুম্পা ইশারায় মাথা এদিক ওদিক নাড়ায়। যার অর্থ – নাহ। ছানোয়ার সিউর হবার জন্য বলে,
— বখাটে সোহাগ?
শোনা মাত্রই রমিজউদ্দিন হেসে উঠে।
— আরে না বেয়াই সাব। ছেলে আমার এখানে ওখানে আড্ডা দেয়। তাই মানুষ বখাটে বলে। আদরের ডাক! বুঝলেন তো?
ছানোয়ারের শরীরে তিড়িৎ বিডিৎ করে রক্ত লাফাচ্ছে। কোনভাবেই নিজেকে আটকাতে পারছেনা। বখাটে নাকি আদরের ডাক! কেরেক্টারলেস একটা ছেলে। মূর্খ কথাকার।তার সাথে নাকি নিজের ফুলের মতো মেয়ে বিয়ে দিবে। সাত পাঁচ না ভেবেই ছানোয়ার মুখের উপর বলে দেয়
— আপনার ছেলে যতটুকু শুনেছি পড়াশোনা করেনি।
— আরে বেয়াই সাব! এতো পড়ালেখা করে হবেটা কি? ছেলে তো আর আমার চাকরি করতে যাবেনা। এতো টাকা পয়সা বসে খেয়েও তিন প্রজন্ম শেষ করতে পারবেনা সেখানে চাকরীর কি দরকার?
— কিছু মনে করবেন না ভাইসাব। শিক্ষার একটা মূল্য আছে। মূর্খ মানুষ কেবল ই মূর্খ। আপনার ছেলের চরিত্রের ঠিক ঠিকানা নেই। আমি যতটুকু সামর্থ্য পারি মেয়েকে বড় আদরে বড় করেছি। মেয়ে আমার কোন বানের জলে ভেসে আসেনি যে তাকে একটা মূর্খ দুশ্চরিত্র ছেলের সাথে বিয়ে দিতে হবে।
— বেয়াই সাহেব। কথাটা অনেক বড় বলে ফেলেছেন। আমরা আত্ত্বীয়তা গড়তে এসেছি। অপমানিত হতে নয়। বউমাকে আমার ছেলের বউ করেই নিয়ে যেতে চাই।
— আমি দুঃখিত। বার বার আমার মেয়েকে বউমা বলে অপমান করবেন না। আমার ফুলের মতো মেয়ে এই অপমান টুকু নেবার যোগ্য নয়।
রমিজউদ্দিন সোহাগী এর উত্তরে কিছু বলতে গিয়েও বলেনা। ছেলে তাদের আসার আগে পই পই করে বলে দিয়েছে যেনো ওদের বিয়ের কথাটা না বলা হয়। রিতী কোনভাবেই তার বাবা মাকে কষ্ট দিতে পারবেনা। আর তার বাবা মা কষ্ট পেলে সোহাগ কে মেনে নিবে না। লেখাপড়া জানা মেয়ে। তাদের অকর্মা ছেলেকে যেচে পড়ে বিয়ে করেছে। ঘরের লক্ষীর বিরুদ্ধে কোনভাবেই যাওয়া যাবেনা। ব্যপারটা গোপন রেখেই এগোতে হবে।
এমপি সাহেব ছানোয়ারকে বোঝানোর চেষ্টা করে। উল্টো ছানোয়ার সোহাগের প্রত্যেকটা বেয়াদবির কথা এমপি সাহেবের কাছে তুলে ধরে সোহাগের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে বসে। এমপি সাহেব একগুঁয়ে মানুষ। সে আরো ছানোয়ার কে বলে,
— তুমি যদি মেয়ে বিয়ে না দাও তাহলে এইযে তোমার মেয়েকে আটকে রেখেছিলো,বাড়ি বয়ে এসে গেছে এসব সব এলাকায় রটিয়ে দেওয়া হবে। মুখ নিয়ে বাইরে বেরোতে পারবেনা। সোহাগ বখাটে। তার পরিবারের কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হবে তোমার। সামান্য স্কুল শিক্ষক তুমি যেখানে তোমার সম্মানটুকুই সম্বল। হয় মেয়েকে বিয়ে দাও নাহলে সর্বস্ব হারাবে।
ছানোয়ার নিজের কথায় অনড়। এর থেকে মেয়েকে গলা টিপে হত্যা করবে কিন্তু ঐ বখাটের সাথে বিয়ে দিবে না। এক কথায় দু কথায় অনেক বড় ঝামেলা বেঁধে যায়। রমিজউদ্দিন হুমকি দিয়ে বাড়ি ছাড়ে। রাতের মধ্যে যদি উত্তর হ্যাঁ না আসে কাল মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাবে।
ব্যবস্থাও হয় সেভাবেই। ছানোয়ার ফোন তুলেনা। মেয়েকে বিয়ে দিবেনা জানায়। মোড়ের এক দোকানদারের থেকে গোপন সূত্রে খবর পায় আজ রাতটা শেষ হতেই বাড়ি থেকে রিতীকে অপহরণ করা হবে। এমপি মহোদয় এতে সায় আছে। আইন কোন ব্যবস্থা নিবেনা। ছুটি কিছুই বলেনা। বড়দের মাঝে চুপচাপ বসে আছে। তার সোহাগকে ফোন দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ফোন বাবার হাতে। সোহাগকে জানালে অবশ্যই একটা ব্যবস্থা করবে। আচ্ছা দুলাভাই কি জানে? মন থেকে উত্তর আসে– না। জানে না। সে তো নিজেই চায় না রিতীকে। কেনো চায়না? এইযে তার আপু দুলাভাই কে এতো ভালোবাসে!! এতো চায়!! নয় মুখে নাই বলে! মুখে বললেই কি চাওয়া হয়? ছুটি বুঝে রিতী কি চায়। কেনো দুলাভাই কি পারেনা আপুকে ভালোবাসতে? মেনে নিতে? এতো কষ্ট দেবার ই কি মানে আছে? মনে মনে আওড়ায়। ছুটির অভিমান হয়। অনেক বড় অভিমান। সে ঠিক করে দুলাভাইয়ের সাথে আর কথা বলবেনা। যে তার আপুকে ভালোবাসে না তার সাথে কোন কথা নেই।
প্রতিবেশী শুভাকাঙ্ক্ষী দের নিয়ে ছানোয়ার আলোচনায় বসেছে। নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে। কি করবে কি করবে? কোন উপায় পাচ্ছেনা ঠিকঠাক। রিতী ভয় পেয়ে গেছে। মায়ের বুকে চুপটি করে মাথা গুঁজে আছে। মাথায় নানা রকম চিন্তা। সোহাগের বাবা কি তাকে সত্যিই তুলে নিয়ে যাবে? তারপর রিতীর কি হবে? সোহাগের হাতে বলিদান হবে। তার সাগরেদদের খাদ্য হবে? ঠোঁট চেপে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে উঠছে রিতী। ছানোয়ার আলোচনা থেকে উঠে রিতীর কাছে যায়। রুম্পার বুক থেকে টেনে মেয়েকে নিজের বুকে চেপে ধরে। তমাল ওমনি রুম্পার কোলে উঠে বসে। ছুটি এসে বাবার আরেক বাহু ঘেঁষে বসে। ছানোয়ার থমথমে গলায় বলে,
— একটা কিছু হয়ে যাবে রুম্পা। কিভাবে বাঁচাবো মেয়েকে?
রুম্পা আঁচলে মুখ চেপে কেঁদে উঠে। রিতী মাথা তুলে তাকায়। দুই হাতে চোখ মুছে বলে,
— বাবা চলো আমরা দূরে কোথাও চলে যাই। যেখানে কেউ আমাদের ক্ষতি করতে পারবেনা।
ছানোয়ার ভাবতে ভাবতে বলে,
— তোকে ছাড়বে না মা। কিন্তু কোথায় যাবো আমরা?
ছুটি ধীরে সয়ে বলে,
— গ্ৰামে।
— গ্ৰামে?
— মফস্বলের সেই গ্ৰামটায়। আমাদের দাদু বাড়িতে।
চলবে,
লাবিবা তানহা এলিজা
#বিষ_করেছি_পান(৩৪)
(কপি করা নিষেধ)
সকাল বেলায় জানাজানি হয়ে গেছে কলোনীর ছানোয়ার স্যার তার পরিবার নিয়ে কলোনী ত্যাগ করেছেন। ছাদে দাঁড়িয়ে আশপাশ থেকে গুঞ্জন শুনছিলো বাঁধন। কিন্তু বুঝতে পারছিলোনা সঠিক ।নিচ থেকে কেউ একজন বড় গলায় বললেই বাঁধনের টনক নড়ে। বাঁধন দৌড়ে নিচে নামে। বীণাকে ডেকে জিজ্ঞেস করে,
— মা? ছানোয়ার কাকারা নাকি চলেগেছে শুনছি?
— হ্যা। ভোরেই চলে গেছে। মেয়ের জন্য বাড়ি ভিটা ত্যাগ করতে হলো এবার।
— কোথায় গিয়েছে?
— বলে যায়নি।কেউ খোঁজ জানেনা।
— কিন্তু কেনো?
বীণা সবটাই বাঁধনকে খোলে বলে। সব শুনে বাঁধন স্তব্দ হয়ে আছে। এতো দিন সে ভাবতো এক আর হয়েছে এক! তাইতো বলি! ছুটি এখনো ছোট! ছুটির পেছনে কেনো ঐ বখাটেটা ঘুরবে? কিন্তু ছুটি গেলো কোথায়?
বাঁধন শার্ট নিয়ে বাড়ির বাইরে চলে আসে। ছুটিদের বাড়িতে তালা ঝুলছে। গেইট টেনে বাঁধন ভেতরে ঢুকতেই ঝিমাকে দেখে। দরজার সামনে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। চোখ মুখ থমথম করছে। যে কোন মূহুর্তে ই আবরণ ভেঙে পড়তে পারে। হাতে পেচাচ্ছে বড় একটা খাতার কাগজ। মাঝখানের লেখা টুকু ছাড়া বাকিটা একটু একটু করে চিমটি কেটে কেটে ফেলে দিচ্ছে। বাঁধন গিয়ে ঝিমার সামনে দাঁড়ায়। সামনে অবয়বের উপস্থিতিতে ঝিমা মুখ তুলে তাকায়। চোখে টলমল করছে জল। এই বুঝি টুপ করে পড়বে। বোনের এই মুখখানা কতটা কষ্ট পেয়েছে তা প্রকাশ করে। বাঁধনের বুকের ভেতর খামচে ধরে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে দরজার উপর ঝিমার পাশে বসে পড়ে। একহাতে ঝিমার কাঁধ জড়িয়ে ধরে। হাত থেকে কাগজ টা নিতে গেলে ঝিমা হাত সরিয়ে দেয়। হাতের মুঠোয় কাগজটা কুচিমুচি করে ধরে। বাঁধন থেমে আবার হাত বাড়ায়।
— কি লেখা? দেখি?
— নাহ।
বাঁধন হাত সরিয়ে নেয়।
— ছুটি দিয়েছে?
— হু।
— কি লিখেছে?
— পার্সোনাল।
বাঁধন মৃদু হাসে। ছোট ছোট বাচ্চা কাচ্চার আবার পার্সোনাল!
— বেশী মন খারাপ করছে?
ঝিমা উত্তর দেয়না। আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এবার আর বাঁধনের ভালো ঠেকে না। ঝিমাকে বুকের সাথে চেপে ধরে শান্তনা দেয়।
— ছুটি ঠিক চলে আসবে তোর সাথে দেখা করার জন্য দেখিস। আর আমরা তো জানিও না কোথায় গেছে কত দিনের জন্য গেছে। যে তোকে নিয়ে যাবো। তাছাড়া ছুটি তোকে ছাড়া থাকতেই পারবেনা। ঠিক তোর সাথে দেখা করতে আসবে।
— আসলে তো সেই চলেই যাবে। থাকবেনাতো আর সারাজীবন আমার পাশে।
ঝিমার মনের অবস্থা বাঁধন বুঝতে পারে। ঝিমাকে তুলে ধরে বাড়িতে চলে আসে। নিজ রুমের দিকে যাবার সময় ঝিমা দাঁড়িয়ে পড়ে। কাতর চোখে তাকিয়ে বলে,
— ভাইয়া আমাকে যদি কেউ এমন ভাবে ভালোবাসতো যে আমি যা চাইবো যেকোন মূল্যে সে সেটা এনে দিবে তাহলে আমি হয়তো এটাই চাইতাম, এমনভাবে ছুটিকে চাইতাম যে একবারে আমার আপনজন করে।যতটা আপন হলে আর কক্ষনো দূরে যেতে পারবেনা।
বাঁধন থ ধরে বসে থাকে। ছুটির সেই চিঠিটা বাঁধনের হাতে। তাতে গোটা গোটা অক্ষরে কয়েকটা লাইন লেখা। এই চিঠির মিনিং কী? উত্তর খুঁজতে গিয়ে বাঁধন নির্বাক হয়ে আছে। চিঠিটা ঝিমাকে দেওয়া হলেও পুরোটাই বাঁধনের জন্য লেখা। বাঁধন কেনো ছুটির চিঠিতে স্থান পেলো? বাঁধন কি তবে ছুটির জীবনের কোন অংশ জুড়ে ছিলো? বাঁধন গলা বাড়িয়ে ঝিমাকে ডাকলো। ঝিমা সামনে এসে দাঁড়ায়। বাঁধন অপলক চোখে ঝিমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঝিমা বাঁধনকে ধাক্কা দিতেই হুস ফেরে।
— ভাইয়া? কি দেখছো ঐভাবে?
বাঁধন যেনো নিজেই কিছুটা লজ্জিত হয়। ফুস করে শ্বাস ছেড়ে জিজ্ঞেস করে,
— তোর বয়স কত?
— ষোলো। কেনো?
— টিনেজ!
— হুম। কেনো? ভাইয়া? কি হয়েছে?
— কিছুনা । যা। আচ্ছা শোন। ছুটি পরিক্ষা দিবে কই থেকে?
— আমি ছুটির খবর জানিনা।
— কেনো জানবিনা? কোন হিন্স? কোথায় যেতে পারে?
— তুমি কি ছুটির কাছে যাবে?
— না।এমনি।
মুখে যাই বলুক বাঁধন চুপি চুপি ঠিকই ছুটির খোঁজ করে। ছুটিকে খুঁজে পাওয়াই এখন তার অবসরে কাজ। সুমির সাথে এখন আর দেখা করতে যায়না। দায়িত্ত্বের টান টুকুও ফিকে হয়ে আসছে। এই চিঠির কি মানে সে জানতে চায়। যাকে এতো ছোট ছোট করে সে যে চোখের পলকেই বড় হয়ে গেছে বাঁধন আমলে নেয়নি। এইযে সেদিন চোখের সামনে ই ভূমিষ্ঠ হলো ছুটি। বাঁধন তখন হাই স্কুলের ছাত্র। ঘরে ছোট একটা পুতুল। পাশের বাসায় আরেকটা পুতুল। দুই পুতুলে কি মিল! গুটি গুটি পায়ে যখন হাঁটতে শেখে এক দৌড়ে দুটোই বাড়ির বাইরে চলে আসে। গেইটে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মোলাকাত হয় তাদের। বাঁধন স্কুল থেকে ফেরে এমন অনেক পেয়েছে দুটোকে একসাথে। সবার চোখের আড়ালে রাস্তায় বসে ধুলো নিয়ে খেলছে। বা এইযে ধুলোতে যাবে। বাঁধন দক্ষ হাতে দুজনেই বগলদাবা করে ধরে নিয়ে আসে। ঘাড়ে তুলে বাজার থেকে ঘুরে আসে। কোলে তুলে নিয়ে সামলায় দুটোকে। আর আজ কত বড় হয়ে গেছে দুজনে। নিজের বোনটা কষ্ট পাচ্ছে। পরের বোনটা সেই কষ্টের ভাগিদার করে গেছে।
রিতীর শহর ছাড়ার ব্যাপারটা সোহাগকে প্রচন্ড অবাক করেছে। তার বাবা মা যেই স্টেপ ই নেক না কেনো সোহাগের ধারণা রিতী বা তার পরিবার এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে। ছুটিটা নিশ্চয় কিছু একটা করবে। ছানোয়ার স্যার ভাঙবে তবু মচকাবেনা। কিন্তু কে জানতো এরকম একটা স্টেপ নিয়ে সোহাগকে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে যাবে? সোহাগ দমে গেছে। চুপচাপ হয়ে গেছে। প্রথম দিকে ঠিক থাকলেও আর পারছেনা। আজ কতটা দিন সে তার পিরিতি কে দেখে না। বুকের ভেতরটা ক্ষনে ক্ষনে হু হু করে উঠে। নিজের শরীর থেকে কোন অঙ্গ-পতঙ্গ যদি আলাদা করে রাখা হয় ঠিক যেমন কষ্ট হয় তার থেকেও যেনো এই ব্যথার গভীরতা অনেক। ভেতর থেকে ঘায়েল করে দেয়। এক প্রকার ঘর বন্দিই হয়ে পড়ে। ঢাবিতে গিয়েও রিতীকে খুঁজে এসেছে। রিতীর নাগাল পায়নি। রিতী কি পড়াশোনা ছেড়ে দিলো? ছুটিই বা কোথায়? ছানোয়ার ট্রান্সফার হয়েছে। কোথায় হয়েছে জানা যায়নি। বউ হারিয়ে সোহাগ সর্বশান্ত হয়ে গেছে। মদের বোতল,বিয়ার তার নিত্যদিনের সঙ্গী। এমনটা হবে কোনদিন ভাবতে পারেনি।
রমিজউদ্দিন নিজের উপর মহা বিরক্ত। ছেলের এমন ভাব সাব নিজের চোখে দেখে নিজেকেই দায়ী করছে। সোহাগীকে বললে সোহাগী গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরে। অভিযোগ করে রমিজউদ্দিন এর উপর
— আপনি আমার একমাত্র ধনটার সুখের জন্য কিছু করতে পারছেন না? এই আপনার ক্ষমতা? আমার মানিকের কিছু হোক। আমি সোহাগী আপনাকে ছাড়বোনা।
রমিজউদ্দিন অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয় সোহাগকে আবার বিয়ে দিবে। অনেক সুন্দরী মেয়েকে বউ করে আনবে। প্রস্তাবটা শুনেই সোহাগী আকাশ থেকে পড়ে। কি বলছে! বিয়ে মানে? এক বউকেই ঘরে তুলতে পারলো না আবার আরেকজন কে বউ করে ঘরে তুলবে? মগের মুল্লুক পেয়েছে নাকি? রাগে দুঃখে সোহাগের রুমের সামনে গিয়ে নক করে।
— এই সোহাগ দরজা খুল আব্বা।তোর আব্বায় তোর সর্বনাশ করতে চাইছে সেই খবর কি তুই রাখছোস? তাড়াতাড়ি দরজা খুল।
মায়ের চিৎকার চেঁচামেচি তে সোহাগ দরজা খুলে। সোহাগী টেনে হেঁচড়ে ঐ গন্ধ যুক্ত রুম থেকে ছেলেকে টেনে বের করে। কাজের মেয়েটাকে ডেকে বলে রুমটা পরিষ্কার করতে। সোহাগ ঢুলছে। মায়ের এভাবে ধরে রাখাতে যে ফ্লোরে পড়ে যাচ্ছে না।সোহাগী সোহাগের মুখে লেবুর শরবত করে এনে ধরে। গলাটা ভিজিয়ে দিয়ে হাতের চউলে নিয়ে পানি নিয়ে মাথায় ঢালে। সোফায় বসিয়ে দিয়ে মুখোমুখি বসে।
— আব্বা আমার দিকে তাকাও। শুনছো তোমার আব্বায়ে কি বলছে?
— কি বলছে?
— তোমারে আবার বিয়ে দিবো। পাত্রী নাকি দেখা শুরু করছে।এখন তুমি আমারে কও তোমার কি আবার বিয়ে করার ইচ্ছা আছে?
সোহাগ ঘাড় বাঁকিয়ে রমিজউদ্দিনকে দেখে। রমিজউদ্দিন ও উৎসুক চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলে কি বলে শুনতে চায়। তাই নিজেই বলে,
— আমি অনেক সুন্দরী শুশ্রী লেখাপড়া জানা মেয়ের সন্ধান পেয়েছি। তোমার জন্য তারে ঠিক করছি। তুমি দেখলে না করার চান্স পাবানা। সাথে সাথেই বিয়া করে ঘরে তুলতে চাইবা।
সোহাগ মায়ের দিক তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
— আমার সুন্দরী বউ আছে।
— কিন্তু আব্বা তোমার বউতো তোমারে ছাড়ি চলে গেছে।
— তোমরা তাড়াইছো। আমার বউ আমার শহরেই ছিলো তোমাদের সহ্য হয়নাই।আমি বারণ করা সত্ত্বেও আমার সুখ আমার জীবনরে কাইড়া নিছো।
— আমরা তো তোমার ভালোর জন্যই…
— তোমরা তাড়াইছো। খুঁজে আনার দায়িত্ব ও তোমাদের। আমি শান্তি পাইতাছিনা। আব্বা…?
— কও আব্বা।
— তোমার ছেলের বউরে খুঁজ লাগাও। যে কোন মূল্যে আমার তারে চাই।
— তারা আমার সাথে বেয়াদবি করছে আব্বা। বউমার আব্বায় তোমার আব্বারে দাম দেয়নাই। তোমারে এরকম দেখতে আমার ভালা লাগেনা। আর বউমা তোমারে মানি নিবোনা। তাই তোমারে আমি আরো সুন্দরী মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে চাই। তুমি তো আর বউমারে ভালোবাসো না!
শেষের কথাটা একটু টানিয়েই বলে রমিজউদ্দিন। সোহাগের ভ্রু কুঁচকে উপরে উঠে যায়।
— আমার বউ অনেক সুন্দর আব্বা। তারে যেভাবে তাড়াইছো সেইভাবেই আমার সামনে আনো।
— কিন্তু শোন…
— থামো তুমি।
সোহাগী থাকিয়ে দেয়।
— তুমি আমার বউমারে খুঁজে আনো। সে কয় আছে কি করছে আমি জানতে চাই। ছেলেরে বিয়া দেবার জন্য উঠে পড়ে লাগছো যে বউ চলে গেছে তারে না খুঁজে। বেইয়ারের দোষ দেও! কোন বাপে তার মেয়েরে বিয়া দিতে চাইবো তোমার ছেলের কাছে? ছেলে আমাদের কাছে সোনার টুকরা হলেও অন্য মানুষের কাছে না। বউমা কি ইচ্ছা করে গেছে? বাপে যেখানে যাবো সেখানেই তো নিয়ে যাবো। বাধ্য হয়ে গেছে।
— অতবড় মেয়েরে বাধ্য করবো কেডা?
— তো তোমার ছেলেরে বাধ্য করার চেষ্টা কেনো কর? বউমা আমার নিজ ইচ্ছায় আমার ছেলেরে বিয়া করছে। এখন আরেকটা বিয়া করাইলে বউমা যদি এসে কৈফিয়ত চায় তখন আমি কোন মুখ নিয়ে দাড়ামু? মেয়ে হয়ে আরেক মেয়ের সংসার তো আমি ভাংতে পারমুনা।
— তো কি করমু?
— লোক লাগাও।
রিতীর সাথে দেখা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সোহাগ। রিতী এখন রোকেয়া হলে থাকে জানতে পেরে সকাল সকাল ই সোহাগ ক্যাম্পাসে পা দিয়েছে। ডিপার্টমেন্টের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিতীর অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। এগারটা নাগাদ রিতীর দেখা মিলে। মেরুন রঙের এক বোরখা হিজাবে নিজেকে আবৃত করে রেখেছে। বের হয়ে থাকা ছোট্ট মুখমন্ডল খানি পদ্মের মতো ফুটে উঠেছে। মেয়েটা যেনো আরো সুন্দর হয়ে গেছে। এতো রূপ কেনো মেয়েটার? সারাজীবন তাকিয়ে দেখলেও যেনো চোখের তৃষ্ণা মিটবেনা। কিভাবে ছিলো এতো গুলো দিন সোহাগ পিরিতি ছাড়া? ক্লাসের সামনে আসতেই সোহাগকে চোখে পড়ে রিতীর। তৎক্ষণাৎ পা টেনে ধরে। থমকে দাঁড়ায়। হা হয়ে তাকায় সোহাগের দিকে। রিতীর সাহস নদীতে ভাটা পড়ে। বুক কেঁপে উঠে। নিজের স্থান অবলোকন করতেই আরো ভীত হয়ে উঠে। সোহাগ এখনো তার পিছু ছাড়েনি। ঠিক খুঁজে বের করেছে। এতোদিনের নরমাল লাইফ লিড করতে চাওয়া রিতীর জীবনে কি আবারো কাটা হয়ে দাঁড়াবে? রিতী সোহাগের চোখে চোখ রেখেই ধীরে ধীরে পিছিয়ে যায়। তাকে এখান থেকে যেতে হবে। উল্টো ঘুরে দৌড়ানোর প্রস্ততি নেবার আগেই সোহাগ যা করার করে দেয়। স্টুডেন্টসদের ভিড়ের মাঝেই ছুটে গিয়ে রিতীর বুকে মাথা ছেড়ে দেয়। দু হাতে নিজের সাথে রিতীর পিঠ চেপে ধরে। রিতী তাল সামলাতে না পেরে দু পা পিছিয়ে পিলারের সাথে নিজেকে ঠেকিয়ে ব্যালেন্স করে নেয়।
চলবে,
লাবিবা তানহা এলিজা ~