প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব-৪৩+৪৪+৪৫

0
385

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(৪৩)

রিদিকা হুডি,হাতমোজা আর মাস্ক মনে করে নিজের সাথে করে আনা ব্যাগে নিয়ে নিয়েছে,শরীর অনেক দূর্বল হয়ে গেছে তার,সামনের দাঁত সহিত প্রায় সব চুল উঠে গেছে।আদ্রিশ আদৃতের পিছন লোক লাগিয়েছিল,জানতে পেরেছে আদৃত আঁখিকে নিয়ে বর্তমানে এক জায়গায় যাচ্ছে, সেখানটার ঠিকানাও আদ্রিশ জানতে সক্ষম হয়েছে,বর্তমানে সেই উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছে আজ যাই হয়ে যাক আদ্রিশ আঁখিকে ছিনিয়ে নিয়ে আসবে আদৃতের কাছ থেকে মন স্থির করে নিয়েছে।
এদিকটায় আদৃত আঁখিকে নিয়ে সুন্দর সে গন্তব্যের দিকে এগোচ্ছে।

″আচ্ছা আঁখি রিদিকার বিরুদ্ধে কোনো স্টেপ নিলে না যে? তুমি আমায় সেদিন ইন্সপেক্টর জিসানকে কিছু বলতে দিলে না,আমার তোমাকে নিয়ে ভয় হচ্ছে রিদিকা তোমাকে না কিছু করে বসে।আর আমার যতটুকু মনে হয় রিদিকাই প্রমত্ত অঙ্গনা।″

″রিদিকাই প্রমত্ত অঙ্গনা আমি শিওর,কিন্তু তার কোনো প্রমাণ নেই আমাদের কাছে।আমি গতকাল ইন্সপেক্টর জিসানকে রিদিকা সম্পর্কে সবকিছু জানিয়েছি,আমিরুল আর নিলিমা কেসের জের ধরে ইন্সপেক্টর জিসান রিদিকার পরিবারের খোঁজে ওদের ঢাকায় থাকার স্থানে পৌঁছাতে পারলেও বরিশালে ওরা কোথায় থাকেন তা খোঁজে বের করতে পারেন নি।অতঃপর আমি সবকিছু জানালে উনি শিওর খবর পেতে বরিশাল যান রিদিকার বাড়িতে।আসলে উনারা বেশি বিভ্রান্তিতে ছিলেন কারণ রিদিকা আমিরুলের সাথে যশোরে তাহমিনা নামে ছিল,তার কারণ ছিল আমিরুল রিদিকাকে নিয়ে সেখানে থাকত সে খবর যাতে পরিচিত কেউ না পায় বা বুঝতে পারে,তাই ছদ্মনামে থাকছিল।তাছাড়া ওর পরিবার আর বেশ আত্নীয় স্বজন ওকে রিদু নামেই ডাকত,তাই আমিরুলের পরিবারের কাছ থেকেও ওর পুরো নাম জানতে পারেন নি ইন্সপেক্টর জিসান।″

″হুম,এই রিদিকা সত্যিই ভাবনার বাইরে,আদ্রিশের কপাল বলতে হবে।হা হা হা হা।কি ফেলে কি আনল!″

″এতো খুশি হবেন না,আপনি কি জানেন আপনি নিজের কপালে কি জুটিয়েছেন?হয়ত বা রিদিকা থেকেও ভয়ংকর কেউ আমি।″

″তুমি যতই ভয়ংকর হউ না কেন ভালোদের জন্য সবসময়ই কল্যানকর,আর আমার জন্য তো আমার জীবন।″

″সবকিছুতে রোমান্টিক ডায়লগ এনে ঢুকানো মিস হয় না?″

″সাথে এতো সুন্দরী রমণী থাকলে যে কেউ রোমান্টিক হতে বাধ্য হবে।দেখো না আমি তোমার প্রেমে আসত ঢেঁড়স থেকে গাজরে পরিণত হয়ে গেছি।″

″আপনিও না,হা হা হা।যাক নিরামিষতা অল্প কেটেছে আপনার।কমপক্ষে হাসাতে তো পারেন এখন আমায়।″

″মুক্ত ঝরানো সেই হাসি দেখার জন্য তো আমি জোকার হতেও রাজি।″

″হয়েছে আর কিছু হতে হবে না ড্রাইবিং এ মনোযোগ দিলেই হবে বর্তমানে।″
___________

আঁখিকে নিয়ে আদৃত পৌঁছালো বেশ বড় একটা সুইমিংপুল প্রান্তে,সুইমিংপুলের পানিতে ভাসমান অজস্র ফুল,মধ্যখানে ফুল দিয়েই বড় একটা হার্ট বানানো আর তার মধ্যে লিখা দৃতখি।পুলের চারপাশে অজস্র বেলুন ও ফুল সাথে মোমবাতিও শোভা পেয়েছে।আঁখি এবার বেশ উৎসুখ হয়ে জানতে চাইল।

″এই দৃতখি এর মানে?″

″আদৃত + আঁখি =দৃতখি।সুন্দর না।″

″অদ্ভুত,একদম আপনার মতো।″

কথাটা বলে আঁখি মোহিত দৃষ্টিতে তাকালো আদৃতের দিকে,কালো শার্টটা একদম তার গায়ের মাপ অনুযায়ী যা লেপ্টে আছে গা বরাবর,হাতের শক্ত পেশিগুলো জানান দিচ্ছে শার্টের ভিতর থেকেই,গালের সেই খোঁচা দাঁড়ি, সাথে তৃপ্তির সেই হাসিখানা,কপালে এসে লেপ্টে পরা চুল সবকিছুই আজ যেন আঁখিকে আবারও আরেকদফা আদৃতের প্রেমে ফেলছে।সেই ছয় বছর আগে আঁখি ঠিক এভাবেই তো এই সুদর্শন পুরুষের প্রেমে পরেছিল,আদৃতের সব দিক আঁখিকে তার প্রতি যেন টানত খুব করে, হঠাৎ আঁখির ধ্যানে বিঘ্ন ঘটাল আদৃত।

″এই যে ডা.সাহেবা,কি এমন দেখছেন?″

″দেখছি কেউ কিভাবে এতটা নিঁখুত ভালোবাসতে পারে।কেন সেদিন সানিয়া আর আদ্রিশের ধোকায় পরলাম,জীবনের ছয় টা বছর আপনার মতো মানুষের সান্নিধ্য হারালাম।″

″পিছনে ফিরে তাকিয় না সুখ,হারিয়ে ফিরে পাওয়ার অনুভুতিটাও যে আলাদা এক ভালোলাগার শিহরণ তৈরি করে মনে,আছি তো আজ থাকব সারাজীবন, কথা দিলাম। তা চলো তোমাকে কিছু দেখাই।″

অতঃপর আদৃত আঁখিকে নিয়ে পুলের অন্য এক প্রান্তের দিকে গেল।সেখানেও লাল পোলাপের পাঁপড়িতে বড় একটা হার্ট বানানো,আদৃত সেই হার্টের মধ্যেখানে আঁখিকে নিয়ে দাঁড় করাল।তারপর হুট করে তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসল,হাতে আদৃতের লাল তাজা গোলাপ।প্রেমময় স্বর ফোটিয়ে বলতে লাগল।

″আংটি তো আগেই পরিয়ে দিয়েছি সুখ,তবে মনের কথা সোজা ভাষায় আজও প্রকাশ করতে পারি নি,ভাবতে পারো লাল গোলাপের আশ্রয়ে এই অধমের ভালোবাসা প্রকাশের এটা ছোট্ট এক প্রচেষ্ঠা মাত্র।তুমি আমার কাছে এই লাল গোলাপের মতই সুখ,যাকে পেতে আগে তার কাঁটার বিষাদ গায়ে মাখতে হয়েছে।তবে অবশেষে তার সান্নিধ্য পেয়েছি।আমার জীবনে শুধু একটাই চাওয়া সুখ।সে চাওয়াটা শুধু তুমি,পাওয়াটাও তুমি হবে অটল বিশ্বাস যে আছে আমার আল্লাহ তায়ালার প্রতি।ভালোবাসি বড্ড তোমায়,হারিয়ে গেলে নিজেকেই হারিয়ে যাব।বলো না ভালোবাসো আমায়ও।″

″ভালোবাসি, আমার ডাক্তার সাহেবকে।″

″সত্যিই বাসো তো!″

″ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।″

″আঁখির তিন তিন বার দিয়ে উঠা স্বীকারুক্তিতে আদৃতের খুশিতে দ্বিগুণ আমেজ যোগ হলো।উঠে দাঁড়িয়ে আঁখিকে জড়িয়ে নিল নিজের বুকের সাথেল।আঁখিও জড়িয়ে ধরল আদৃতকে।কিছুক্ষণ পর আঁখি বেশ লজ্জা নিয়ে আদৃতকে ছাড়িয়ে নিল নিজের কাছ থেকে,অতঃপর লজ্জামিশ্রিত হাসিতে তাকে পাশ কাটিয়ে চারপাশ ভালো করে দেখতে লাগল।চারিদিকেই ফুল আর বেলুনের ছড়াছড়ি,কিছু কিছু জায়গা পরে পরেই লিখা,ভালোবাসি সুখপাখি।
ওয়েলকাম বেক টু মাই লাইফ হিটলার,দৃতখি, ভালোবাসি সুখ।আরও না জানি কতো কি।যা ফ্লোর থেকে নিয়ে আসপাশের দেয়ালগুলোতেও শোভা পেয়েছে,আঁখি একটা মোমবাতির পাশে দাঁড়িয়ে তার পাশে ফুলের পাপড়িতে লিখা দৃতখি শব্দটা বিমোহিত হয়ে দেখছিল ঠিক তখন আদৃত পিছন থেকে তার গলায় একটা ডায়মন্ডের নেকলেস পরিয়ে দেয়।অতঃপর আঁখিকে সেখানেই রাখা ফুলে সজ্জিত একটা আয়নার সামনে নিয়ে যায়,তার পিছনে দাঁড়িয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে।

″পছন্দ হয়েছে?″

″হুম,কিন্তু আমার কাছে সবকিছুর থেকে বেশি পছন্দের আপনি।″

আদৃত আলতো হেসে এবার একটা লাল গোলাপ আঁখির কানে গুঁজে দিয়ে গাইতে শুরু করে।

বকুলের মালা শুকাবে…
রেখে দিব তার সুরভী…
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে…
মুছো না কো আমারি ছবি…
আমি মিনতি করে গেলাম…

আদৃত আঁখির হাত ধরে তাকে নিয়ে গিয়ে পুলের পাশটায় বসালো,তার হাত ধরে থাকা অবস্থায় তার পাশে বসল,এদিকে গানটা গাইতে থাকল।

এই মন তোমাকে দিলাম…
এই প্রেম তোমাকে দিলাম।

এবার আঁখিও গাইলো।

তুমি চোখের আড়াল হও…
কাছে কি’বা দূরে রও,
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম।
এই প্রেম তোমাকে দিলাম।

তুমি চোখের আড়াল হও…
কাছে কি’বা দূরে রও,
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম।

দু’জন একে ওপরের দিকে তাকিয়ে গানটি গেয়ে গেল।যাতে ব্যক্ত করল দু’জন দু’জনাকে নিজেদের মনের প্রেমময় ভাব,গান শেষে বেশ লজ্জায় পরল দু’জনই,একে ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিল।

পুলের পানিতে পা ভিজেয়ে রেখেছে দু’জনই,বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা পালনের পর আঁখি আদৃতের কাঁধে মাথা রেখে চাঁদের প্রতি দৃষ্টি স্থির করল,আদৃত আঁখির হাত নিজের হাতে নিয়ে নিজেও চাঁদের প্রতি মনোনিবেশ করল।আজকের পূর্ণ চাঁদ,আঁখি আদৃতের জীবনের পূর্ণতার আভাস যেন দিয়ে যাচ্ছে।

″ভালোবাসি সুখ।″

″আমি ভালোবাসি আমার ডা.সাহেবকে।″

তখনই পিছন থেকে আদ্রিশের ঝাঁঝালো স্বর কানে এলো দু’জনের,আদ্রিশ আঁখি বলে চেঁচিয়ে উঠেছে,আদৃত আঁখি কিছু না বুঝে হতভম্ব হয়ে উঠে দাঁড়ালে আদ্রিশ আর তাদের ভাবার কোনো পথ না দিয়ে সোজা আদৃতের মুখে কিছু স্প্রে করলে আদৃত জ্ঞান হারিয়ে পরে গেল সাথে সাথেই।আদ্রিশ সে সুযোগে একটা ধারালো ছুরি নিয়ে আদৃতের উপর ঝাঁপিয়ে পরতে নিলে আঁখি তাকে এক ধাক্কাতে বেশ দূরে ছিটকে ফেলে।

″তোমার সাহস হলো কি করে আদ্রিশ আমার ডা.আদৃতের উপর এভাবে অ্যাটাক করার?উনার সাথে শক্তিতে পেরে উঠার সক্ষমতা তো নেই তোমার তাই উনাকে অজ্ঞান করেছ তাই না,তবে ভেব না আমি বেঁচে থাকতে উনার কিছু হতে দিব।″

″আঁখি তুমি এমনটা করো না আঁখি,কেন ওই আদৃতের প্রতি দরদ দেখাচ্ছ,তুমি তো শুধু আমার আঁঁখি,তুমি আমার সাথে চলো আমি আদৃতকে কিছুই করব না।″

″লজ্জা করল না তোমার ওই নোংরা মনে আবার আমাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবতে,অন্য নারীর শরীরে মন ভরে গেছে তো এখন এসেছ আবার আমার কাছে।″

″আঁঁখি ক্ষমা করে দাও,প্লিজ ফুলপরি,আর কখনও এমন হবে না,চলো না আমার সাথে প্লিজ।″

আদ্রিশ কেমন জানি অস্বাভাবিক আচরণ করছে,যেন মানসিক ভারসাম্যহীন কেউ,আঁখি এবার বেশ তাচ্ছিল্য সহিত বলল।

″এই পাগলামি তোমার ততদিন ঠিক ছিল যতদিন তুমি এক আমিতে আবদ্ধ ছিলে আদ্রিশ,তোমার এসব এখন দেখতে আমার ডং আর ন্যাকামো ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না,প্লিজ তুমি চলে যাও।″

″আমি তোমাকে না নিয়ে যাবো না।″

এই বলে আঁখির হাত ধরে তাকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে হাত বাড়াবে তখনই তার মাথায় প্রচন্ড জোরে একটা আঘাত করে পিছন থেকে কেউ একজন,সাথে সাথে আদ্রিশ জ্ঞান হারিয়ে লুটে পরে,আঁখি ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হুডিওয়ালা মাস্ক পরিহিত কাউকে,বুঝতে তার বাকি নেই কে সেই জন,হুডিওয়ালা জন এবার ছু*রি নিয়ে আদ্রিশের উপর প্রহার করতে নিলে আঁখি তাকে এক ঘুষিতে বেশ দূরে ফেলে দেয়,তেড়ে গিয়েই এক টান দিয়ে তার মুখের মাস্ক খুলে ফেলে,চুরের মতো তাকিয়ে থাকে রিদিকা তার দিকে,এবার আঁখি তাচ্ছিল্য হেসে বলল।

″আমি জানতাম রিদিকা তুই ই নকল প্রমত্ত অঙ্গনা,যে নিজের স্বার্থের গায়ে আঘাত দেওয়া লোকদের খু*ন করে বেড়ায়,যাকে বলো বদ্ধ উন্মাদ।″

″হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি পাগল,আমি প্রমত্ত অঙ্গনা,আমিই সবার খুন করেছি।ওই শিউলি,আব্দুল, মিশু,আমিরুল,নিলিমা,কলি,লিজান,ইয়াসমিন সবার খুন আমি করেছি আর এখন তোকেও মারব।তারপর আদ্রিশকে মারব,আমি সবাইকে মেরে ফেলব যারা আমার পথের কাঁটা হবে।

চলবে…

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(৪৪+৪৫)(ধামাকা)

″তারমানে তুই সবাইকে মেরেছিস?কিন্তু কেন রিদিকা?বুঝলাম তুই শিউলিকে মেরেছিস কারণ ও তোর আর আব্দুলের পথের কাঁটা ছিল,কিন্তু আব্দুলকে কেন মারলি?মিশু,আমিরুল,কলি,মিজান তাদের সাথে তোর কিসের শত্রুতা ছিল?ওদের কেন মারলি তুই?আর প্রমত্ত অঙ্গনা নামে কেন মারছিস সবাইকে?

″হ্যাঁ আমি মেরেছি ওদের,যারা আমার হতে পারে না তারা অন্য কারো কেন হবে?আব্দুল, ওকে আমি ভালোবেসেছিলাম,আমায় বলেছিল আমি শিউলি থেকেও বেশি সুন্দরী,আমাকে দেখলে ও চোখ ফেরাতে পারে না,ও আমার জন্য শিউলিকে ছেড়ে দিবে, এই বলে রাতের পর রাত কাটিয়েছে আমার সাথে,কিন্তু পরে কি করল,ধরা পরার পর আমাকে অগ্রাহ্য করে,ওই শিউলির জন্য উতলা হয়ে পরে,আমাকে এক মুহুর্তে ভুলে যায়,আমার পরিবারও আমার বিরুদ্ধে চলে গিয়ে ওই শিউলির প্রতি দরদ দেখাচ্ছিল।আমার সন্তান মেরে দিয়েছিল ওরা,তাই সেদিন ওই শিউলিকে মেরে ফেলি,সারা পরিবারকেও সেদিন মেরে ফেলতাম কিন্তু ওরা আমায় ধরে মানসিক হাসপাতালে দিয়ে আসে,ওখানে আমাকে বন্ধি করে নেওয়া হয়,না জানি কতো ধরনের ট্রিটমেন্ট করত আমার উপর,ঔষধ, আর পাগলদের চেঁচামেচি সবকিছু আমাকে আরও বিরক্ত করে তুলত,রোজ ওখান থেকে বেড়িয়ে আসার সহস্র রকম চেষ্টা করতাম কিন্তু পারতাম না,জানতাম আমি স্বাভাবিক আচরণ করলে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে আর আমি তাই করলাম,আমি এমনটা দেখালাম যে আমি একদম ভালো হয়ে গেছি,একটা মশা মা*রা*রও মনোভাব আমার মধ্যে আর নেই,আর দেখ না তা কাজ করে গেল।ওই পাগলের ডাক্তারেরা আমি শুধরে গেছি ভেবে আমায় ছেড়ে দিল,আমি বেড়িয়ে এলাম,বাবা মা আমায় অনেক আদর করে ঘরে তুলে নিল,আমি তাদের কাউকে মা*রি নি কারণ ওদের মা*র*লে সরাসরি আমি ফাসতাম তাছাড়া ওদের মা*র*লে আমার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা কেমনে হতো,ওদের বাঁচিয়ে রাখি আমি আমার স্বার্থে। কিন্তু আবদুলকে মে*রে দেই।তারপর কিছুই ভালো লাগত না,তোর কাছে এলে তোর দামী কাপড়–চোপড় পেতাম,তোর দামী গাড়িতে চড়তে পারতাম,ভালো খাবার খেতে পারতাম,তাই ছোটবেলা থেকেই তোর পাশে পাশে থাকার চেষ্টা করে যেতাম আমি,কিন্তু ওই আমার বুড়ো বাপ তা হতে দিত না,তখন আব্দুলের খু*নে*র তদন্ত চলছিল তাই নিজেকে বাঁচাতে আমার বুড়ো বাপের সাথে ঢাকা চলে আসি,এখানে আসার পর হঠাৎ একদিন আমিরুলের সাথে দেখা হয় একটা কাজের সন্ধানে গেলে,বাবাকে বলেছিলাম কাজ করব বলে ঢাকা এসেছি তাই কাজের সন্ধানে গিয়ে বাবার বিশ্বাস জয় করতে চেয়েছিলাম,ওখান থেকেই আমিরুলের সাথে পরিচয় হয় আর ওর ঠিকানা পাই আমি,ওকে পছন্দ হয় আমার,জানতে পারি ও আমার আত্নীয় নিলিমারই স্বামী, তাই অনেক করে একটা জব তাদের বাড়ির পাশের এনজিও তে নেই,নিলিমা বোকা ছিল,আমি এনজিওতে যাওয়া আসার সমস্যার কথা বললে বলল কয়েকদিন ওর ওখানে থেকে যেতে আর পরে স্যালারি পেলে বাসা ভাড়া করে চলে যেতে,আমার কাজ হয়ে গেল,আমি ঢুকে পরলাম নিলিমার ঘরে,অতঃপর আমিরুলকে আমার রুপের জালে ফাসালাম,আমিরুল আমাকে পেতে চাইলে আমি ওকে বিয়ের কথা বললাম,কারণ আব্দুল আমার সাথে যা করেছে আমি তা আবারও চাই নি আমার সাথে হোক,আমিরুল মেনে গেল কিন্তু নিলিমা সবটা জেনে গেল,আমাকে ঘর থেকে বের করে দিল নিলিমা,কিন্তু আমিরুল পা*গ*ল হলো আমার জন্য,লুকিয়ে বিয়ে করে যশোর চলে গেল আমাকে নিয়ে,আমরা অনেক সুখে ছিলাম সেখানে,আমার নাম পরিবর্তন করায় আরও নির্দ্বিধায় যাচ্ছিল দিন,কিন্তু মিশু বড্ড পেরেশান করত,আমিরুল যখন তখন ওর কাছে চলে যেত,আমিরুলের ভালোবাসা ও সময়ে আমার ভাগটা নিতে চেয়েছিল মিশু তাই ওকে মে*রে দিয়েছি আর তার লা*শে*র পাশে নাম লিখেছি প্রমত্ত অঙ্গনার,কারণ এমনি খু*ন করলে পুলিশ তদন্ত করে আমি অব্দি পৌঁছে যেত,কিন্তু প্রমত্ত অঙ্গনা সর্বকালের সফল খু*নি ছিল,যে কখনও কোনো প্রমাণ ছেড়ে যায় না,বরং পুলিশকে চ্যালেন্জ করে লা*শে*র পাশে তার নাম ছেড়ে যেত,অনেক আগ থেকেই তার বিষয়ে শুনতাম,নিউজ থেকে তার বিষয়ে যা যা শুনেছি সব কিছু আয়ত্ত করেছিলাম আমি,আর তার মতোই খু*ন করে তার নামেই চাপিয়ে দেই মিশুর খু*ন,যাতে পুলিশ আমাকে না খোঁজে প্রমত্ত অঙ্গনাকে খোঁজে।তারপর শান্তিতে থাকছিলাম কিন্তু সমস্যা হলো নিলিমাকে নিয়ে ও ওখানে চলে এসে সিন ক্রিয়েট করে,আমাকে বাজে বানাতে চায় সবার কাছে,তারপর নিলিমা কেস করলে আমি যখন আমিরুলকে বলি নিলিমাকে ছেড়ে দিতে তখন আমিরুল তা করা থেকে মানা করে দেয়,কারণ ওর ভাগের পুরো সম্পত্তি ওর বাবা মা নিলিমাকে দিয়ে দিয়েছিলেন,তাই ও তাকে ছাড়তে চায় নি,বরং তার কাছে ফিরে গিয়ে সবকিছু ঠিক করে দিতে চাইছিল,আমার কথা যেন আমিরুল তখন ভাবাই বন্ধ করে দিয়েছিল,ওর কাছেও আমি পুরাতন হয়ে গেছিলাম তাই ওকেও মে*রে ফেলি,তারপর নিলিমাকে মা*রি আর দোষ দেই আবারও প্রমত্ত অঙ্গনার নামে।অতঃপর বরিশাল এসে পাই আজিজকে,ওকেও ভালোলাগে,কিন্তু পরিবারে জানাই না ওর কথা,বাবা জানলে আজিজকে আমার বিষয়ে সব বলে দিত,তাই সুযোগ বুঝে একদিন পালিয়ে আসি তার সাথে,বাবাও ঢাকায় ছিল না,তোর সাথেও যোগাযোগ রাখতে পারতাম,ভালো কাটছিল আবার দিনগুলো,কিন্তু ওই আজিজ বেশ করে ঘরের বাইরে মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে ভালোবাসত,যা আমার পছন্দ ছিল না,তুই আমার আছিস আমার থাক,কেন অন্যদের সাথে কথাও বলবি।ওর আবার বেস্টফ্রেন্ড ইয়াসমিন ছাড়া হতো না,তাই ওই ইয়াসমিনকেও রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলি,কিন্তু ওর মৃত্যুতে শোকাহত হয় আজিজ,যা আমি মেনে নেই না,ও শুধু আমার ছিল তবে অন্যের কথা কেন ভাববে,তখন জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট,কিন্তু ওর বাচ্চা আমি রাখতে চাই নি যেখানে ওকেই মা*রা*র ধান্দা করছিলাম,তাই নিজে বাঁচতে ওকে সবার নজরে খারাপ করি এমনকি তোর নজরেও,তারপর সুযোগ বুঝে নিজেকে আঘাত করে তোকে ডাকি।ওকে ফাঁসিয়ে দেই।তুই ওকে জেলে দিয়ে দিস,যাতে ওকে প্রাণে মারতে পারি না আমি।তারপর তোর বাড়িতে আসি,আদ্রিশের তোর জন্য পাগলামি ওর প্রতি আমায় পাগল করেছিল,এমন প্রেমিক পুরুষ পায় ক’জন, তুই ছোটবেলা থেকেই সব সুখ,সব আভিজাত্য পেয়ে এসেছিলি,তোর জীবনে কখনও কিছুর কমতি হয় নি,যেমন ভালো পরিবার পেয়েছিলি তেমনই পা*গ*লে*র মতো ভালোবাসা প্রেমিক স্বামী,আমার হিংসে হতো বড্ড,লুকিয়ে লুকিয়ে তোদের কার্যকলাপ দেখতাম,তোর জায়গায় নিজেকে দেখার খুব ইচ্ছে হতো আমার।তারপর নিজের রূপের জাদু চালাতে শুরু করি আদ্রিশের উপর,প্রথম প্রথম ও আমার দিকে নজর দেয় না,ও তোর অন্ধ প্রেমিক ছিল,কিন্তু আমিও হার মানি নি,ওর সামনে এভাবে আসতাম যে অবশেষে ও আমার দিকে তাকাতে বাধ্য হলো,আমি ওর সামনে খুব নম্র ভদ্র সাজার অভিনয় করতাম,একদিন তুই হাসপাতালে ছিলি তখন তোর রুমে ঢুকে বসে ছিলাম আমি, যখন বুঝতে পারলাম আদ্রিশ আসছে তখন টান দিয়ে শাড়ি খুলে নিলাম শরীর থেকে,পেটিকোট আর ব্লাউজ পরা অবস্থায় পিছন মুড়ে দাঁড়িয়ে এমন ভাব করছিলাম যেন আমি তখন শাড়িটা পরছিলাম,ও তখন তুই মনে করে আঁখি বলে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিল,ওর স্পর্শ পা*গ*ল করে তুলেছিল আমাকে,কিন্তু ও আমাকে সেখানে দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়,আমার শরীরে তখন লোলুপ দৃষ্টিও যায় তার আন্দাজ করতে পারি আমি কিন্তু ও নিজেকে সংযত করে চলে যায়,সেদিনের পর থেকে আমি বুঝতে পারি ও আমার প্রতি দূর্বল হয়ে গেছে,একদিন ও আমাকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব দিয়ে বসে।তখন আমি ন্যাকা সেজে তোর কথা বলে মানা করে দিতে চাইলে ও বলে ও সব সামলে নিবে,তারপর আর কি ও তোর উপর আমাকে নিয়ে আসে।কিন্তু সবকিছুর পরে ওকে পেয়ে গেলেও ওর মনে তোর জায়গাটা নিতে পারি নি আমি,ওর মন থেকে তোকে ভুলিয়ে দেওয়ার সব রকম প্রচেষ্টা করতে থাকি,তখন মধ্যে থেকে কলি উড়ে এসে জোরে বসতে চেয়েছিল–অসহ্যকর,তাই ওকেও মে*রে দেই,আদ্রিশ শুধুই আমার, ওর ভাগ আমি কাউকে দিতে চাই নি,তারপর তোকে মারতে চাই,কিন্তু তুই যথেষ্ট শক্তিশালী ও চালাক,এছাড়াও তোর আশেপাশে প্রায় সময় গার্ড থাকত তাই তোকে মা*রা সহজ ছিল না আমার জন্য,তোকে আমি ভিতর থেকে দূর্বল করতে চেয়েছিলাম,তোর সম্মান ধুলোয় মিশাতে চেয়েছিলাম তাই তোদের ডিভোর্সের বিষটা আমিই রিপোর্টার লিজানকে দিয়ে ফাঁস করাই,যার পরিবর্তে তাকে টাকাও দেই।কিন্তু আমার কাজ হয়ে যাওয়ার পর আমি ওকে মে*রে ফেলি,কারণ আমি কোনো প্রমাণ বা সাক্ষী রাখতে চাই নি আমার বিরুদ্ধে।তাই ওকেও মারতে হয় আমায়,অতঃপর আদ্রিশের পরিবারকেও দূর করে দেই আমি ওর কাছ থেকে,আদ্রিশের সময়ে একান্ত নিজের ভাগ জমানোর জন্য রিয়াদকেও মারতে চাই কিন্তু তার আগে তাকে মে*রে ফেলে আসল প্রমত্ত অঙ্গনা,কিন্তু এসব কিছু করার পরও আমি আদ্রিশকে পেতে পারি না ,না জানি তুই কি জাদু করে রেখেছিস ওকে,মরে গেলেও তোর নাম ভুলবে না,সারারাত কাটাত আমার সাথে কিন্তু ঘুমের ঘরে নাম নিত তোর,যার শরীরে আমি রাজ করতে পারলেও মন তোর বশে ছিল।যা আমি মানতে পারব না কখনও,তাই ওকেও মা*র*ব ভেবে নিয়েছি,কিন্তু আজ তার আগে তুই মরবি,সেদিন রাতে আমার হাত থেকে বেঁচে গেলেও আজ বাঁচবি না।″

অতঃপর রিদিকা উঠে এসেই ছুরি দিয়ে আঁখির উপর প্রহার করতে নিলে আঁখি এক হাতে তাকে সজোরে আরেকটা ঘুষি দেয়,যাতে সে আবারও ছিটকে পরে।আঁখির অন্য হাতে ফোন ছিল যাতে রেকর্ডার ও অনেক আগেই অন করেছিল রিদিকার অগোচরে,তা ঝটফট বন্ধ করে ছোটে গেল নিজের ব্যাগের কাছে,ফোনটা হাতে নিয়ে না জানি কি সব টাইপিং করল তাড়াতাড়ি, তারপর ফোন ব্যাগে রেখে ব্যাগ থেকে একটা ইনজেকশন আর ওষুধ বের করল আঁখি। ওষুধটা ভেঙে ইনজেকশনে ভরে নিল,তখন রিদিকা আঁখির পিছন থেকে এসে ওর উপর আবার প্রহার করতে নিলে আঁখি সরে দাঁড়াল আর রিদিকা মুখ থুবড়ে পরল,আঁখি সাথে সাথে ছোটে গিয়ে রিদিকার ঘাড় বরাবর ইনজেকশনটা পুশ করে দিল।তারপর সজোরে হেঁসে উঠল।হকচকিয়ে বলল রিদিকা।

″তুই আমাকে কি পুশ করলি আঁখি?″

″নতুন কিছু রিদিকা,পুরাতনগুলোও কম লাগছিল আমার কাছে তোর জন্য,তাই নতুন কিছু দিলাম,ভালোই লাগছে তোকে বিনা চুল আর দাঁতে দেখতে,কতো ভালো লাগবে তাই না যখন নিজের দূরাবস্থা না সইতে পারবি না কাউকে কইতে।হা হা হা হা″

″কি বলতে চাইছিস আঁখি তুই?″

″বোকা রিদিকা,এখনও বুঝতে পারিস নি,আমি কে?″

″কে তুই?″

″আমি অপরাধীদের নাশ,প্রমত্ত অঙ্গনা।″

″ফাজলামো করিস না আঁখি,প্রমত্ত অঙ্গনা ১৩ বছর আগ থেকে খুন করছে,আর তখন তুই আর আমি দু’জনই ১২ বছরের কিশোরী ছিলাম।″

″হ্যাঁ কিশোরী ছিলাম, তবে বাচ্চা না।এতসময় তো তোর দূর্দান্ততা শুনালি,এখন না হয় আমার টা শুন,যা কখনও কেউ না শোনেছে আর হয় তো কখনও না শোনবে,তুই না হয় সেই ভাগ্যবান হয়ে গেলি, তবে শুন আমিই সেই প্রমত্ত অঙ্গনা যাকে সারা বাংলাদেশের পুলিশ খোঁজে বেড়াচ্ছে, গত ১৩ বছরে ৪৮ টা থানার ৪৮ জন ইন্সপেক্টরের হাতে প্রমত্ত অঙ্গনা কেস গেছে কিন্তু সবাই অসফল হয়েছে এবং কেস ছেড়ে দিয়েছে,প্রমত্ত অঙ্গনাই হয়ত প্রথম কোনো কেস যেটা একসাথে বিভিন্ন থানার দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে।″

″কিন্তু কিভাবে!কিসের অভাবে তুই মানুষের খু*ন করে বেড়াচ্ছিস?তুই তো সবার সাহায্য করিস,মানুষের ভালো চাস,আমি যতটুকু জানি নিজ স্বার্থে তুই কখনও কারো খু*ন করতে পারিস না,তবে কেন এতো খু*ন করছিস?″

″দেশের স্বার্থে, এতে বসবাস করা সকল অসহায়ের স্বার্থে। ওই সকল পীড়িতদের স্বার্থে যারা টাকা আর ক্ষমতার অভাবে সঠিক বিচার পায় না।আমি কখনও জানতাম অসহায়ত্ব কাকে বলে,পীড়া কি হয়।আমার বয়স তখন ১২,বরাবরই আমার বুদ্ধিমত্তা অনেক ভালো ছিল,আমাকে স্পেশাল চাইল্ড ট্যাগ দেওয়া হয়েছিল স্কুল থেকে, কারণ এমন বুদ্ধি আর যোগ্যতা সম্পন্ন লোক পৃথিবীতে খুবই বিরল,আমার বয়সের বাচ্চারা যতটুকু বুঝত আমি তাদের তুলনায় ৪ গুণ বেশি বোধশক্তি সম্পন্ন ছিলাম,তার উপর ভয়ংকর ছিল আমার রাগ,জেদ।বাবা আমার দেখাশোনার জন্য একজন আপুকে রেখেছিলেন,উনার সাথে সম্পর্ক আমার জন্মের পর থেকে।মাম্মাম বলেছিলেন আমার জন্মের পর উনি অনেক দূর্বল হয়ে পরেছিলেন তাই আনিকা আপুকে রাখা হয় আমার জন্য।মাম্মামের পর যদি কারো কোলে মাথা রেখে শান্তি পেতাম তবে সে ছিল আনিকা আপু,উনার কোনো সন্তান ছিল না,উনি আমাকে নিজের সন্তানের মতোই আদর করতেন,আমি উনার বাড়ি যাওয়ার জেদ প্রায় করতাম কিন্তু উনি নিয়ে যেতেন না এতে বাবা বকবেন ভেবে,উনার বাসা আমাদের বাড়ি থেকে বেশ দূর ছিল না,তাই একদিন লুকিয়ে উনার পিছু নেই,উনি ঘরে ঢুকে গেলে উনার পিছু আমিও ঢুকি উনাকে স্যারপ্রাইজ দিব ভেবে কিন্তু ঢুকতেই পাশের কক্ষের দিকে আমার দৃষ্টি যায়,দরজাটা বেশ উন্মুক্ত ছিল আর সেখানের বিছানায় ন**গ্ন শরীরে নোং*রা*মো*তে মত্ত ছিল দুই নর নারী,আমি তখন এসবের কিছুই জানতাম না আর না তো বুঝতাম,বিষয়টা আমার কাছে নতুন থাকলেও ভালো কিছু না বুঝতে পারি,চিৎকার করি মাম্মাম বলে আর চোখ ফিরিয়ে নেই,তখন তাদের রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে আসে আনিকা আপু,আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে বাইরে অনেক দূরে।আমাকে বলে।
″আঁখি মামুনি,তুমি যা দেখেছ তা তেমন কিছু না,ওসব তুমি মনে রেখ না কেমন,আপু তোমাকে অনেক পিঠা বানিয়ে খাওয়াবে,তুমি এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলো না দয়া করে।″
আমি তখন আনিকা আপুর চোখে জল স্পষ্ট দেখতে পাই,আর ওই পুরুষটার চেহারাও আমি স্পষ্ট দেখেছিলাম,ও আপুর স্বামী ছিল।কয়েকবার এসেছিল আমাদের বাড়িতে তখন দেখেছি।সেদিন আপু আমাকে অনেক বুঝিয়ে বাড়ি নিয়ে আসে,এদিকে আমার চোখের সামনে থেকে দৃশ্যটা সরছিল না,আমি যতটুকু জানতাম স্বামী স্ত্রী একে ওপরের সাথে থাকে।একই ঘরে থাকে,স্ত্রী ব্যতীত অন্য নারীর সাথে থাকা তো অবশ্য ভালো কিছু না,কেমন জানি অশান্তি সৃষ্টি হয় আমার মধ্যে, কাউকে বিষয়টা জানাব কি না তাও বুঝে উঠতে পারছিলাম না, পরদিন আমি আপুর শরীরে অনেক লালচে দাঁগ দেখতে পাই,আপুকে জিজ্ঞেস করলে বলে পরে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে কিন্তু তা মারের দাঁগ ছিল আমি বুঝতে পেরেছিলাম।বিষয়টা কেমন মাথায় চড়ে বসেছিল আমার।আপু বিষন্ন মনে থাকত প্রায় সারাদিনই যা আমাকে আরও অস্থির করে তুলেছিল।আপু আমাকে অনেক মিনতি করে বলেছিল কাউকে কিছু না বলতে।এদিকে রাতের ঘুম আমার হারাম হয়ে গেছিল।ছোট্ট সেই হৃদয়ে তোলপাড় হতে শুরু হয়েছিল। তারপর থেকে আমি আপুর পিছু নিয়ে প্রায়ই উনার বাড়ি যেতাম আর যখনই যেতাম তখনই দেখতে পেতাম আপুর স্বামী উনার সাথে বাজে ব্যবহার করছে।আপু আমাকে সেখানে যেতে মানা করত,একদিন সেই বাজে লোকটা আমাকে সেখানে দেখে বলে উঠে।″

″এই মালটা তোর থেকেও বেশি জোশ,একবার ছুঁয়ে দেখতে পারলে তো কাজ জমতো,কিন্তু কি করব বড়লোকের মাল,ছুঁতে গেলে হাত পোড়বে,একে দূর করে রাখিস নয়ত তুই তো জানিস আমায়,ভুল করে এ মালেও হাত দিতে পারি।″

″আপু সেদিন আমাকে নিয়ে চলে আসে,কথাগুলো আমার কানে বেজতে থাকে,এগুলো খুব বাজে আর খারাপ কথা ছিল তা বুঝতে পারি আমি,ভিতরের অস্থিরতা আরও বেড়ে যায় আমার।আবার একদিন লুকিয়ে গিয়ে তাদের জানালা দিয়ে দেখতে পাই অ*র্ধ*ন*গ্ন অবস্থায় আপুর স্বামি সাদাত আর ওই মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে,আপুর স্বামী আপুকে অনেক মারছে আর বলছে।″

″তুই আসার সময় পাস না,মজার টাইমে এসে বিরক্ত করিস।″

″এই বলে আপুকে অনেক মা*রে,আমি কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না।আমি ছোটে আটকাতে গেলে আপু তার স্বামীকে ছাড়িয়ে আমাকে নিয়ে বেড়িয়ে আসে।তারপর আমাকে বলে।″

″তুমি এখানে এসো মা মামুনি,ওটা রাক্ষস, তোমাকে মে*রে ফেলবে।″

″তুমি কেন ওই রাক্ষসের সাথে থাকো আপু,তুমি আমাদের ওখানে একেবারে চলে আসু,আমি বাবাকে বলে ওই শ*য়*তা*ন*টা*কে শাস্তি দেওয়াব।″

″না রে মামুনি,তা হয় না,ও ছাড়া আমার যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই,এটাই আমার নিয়তি।″

″কিছুই বুঝতে পারতাম না আমি,কি করব,কি না,হঠাৎ আবার একদিন স্কুল থেকে এসে দেখি আপু বাড়িতে নেই,আবার ছোটলাম উনার বাড়ির উদ্দেশ্যে,তখন উনার জানালার কাছে গিয়ে থমকে গেলাম।ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত আপুর লাশ,চোখদুটো যেন বেড়িয়ে আসার উপক্রম ছিল উনার,নিচের দু’জন বলাবলি করছিল।″

″সাদাত একে তো মে*রে দিলে,এবার আমাদের কি হবে?″

″যা হবে দেখা যাবে,একে বাড়ির পিছন পুঁতে দিব,কেউ টের পাবে না,এমনিতেই নাকে দম করে রেখেছিল,রাগের মাথায় মে*রে ফেলেছি,এবার বাঁচতে তো হবে আমাদের।″

″ওরা আপুর লা*শ নামাতে মগ্ন থাকলে আমি চিৎকার করে পাশের বাড়িতে যাই তারপর আশপাশের লোকগুলোকে জরো করি।সবাই ওদের হাতে নাতে ধরে থানায় দেয়।কিন্তু ওই মেয়ে লিসার বাবা নিজেই অসি ছিল যাতে কি না কি করে তাদের ছাড়িয়ে নেয়,যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ থাকলেও সেগুলো এক প্রকার অগ্রায্য করা হয়,আমি এ বিষয়ে বাবাকে বললে বাবা বলেন।″

″মা রে,আমি যথেষ্ট চেষ্টা করেছি ওদের সাজা হোক,কিন্তু কেসটা কোর্ট অব্দিই যায় নি,গেলে না হয় কিছু করা যেত,কিন্তু ওদের বিরুদ্ধে কোনো উপযুক্ত প্রমাণ নেই,কেউ ওদের খু*ন করতে দেখে নি,আর আজকাল কেউ এসব খু*ন খা*রা*বি*র ধান্দায় পরতে চায় না,সবাই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আগে ভাবে।″

″কিন্তু আমি তো দেখেছি বাবা।″

″তোর চোখের দেখায় কি হবে মা,উপযুক্ত প্রমাণ তো নেই।″

″হয়ত সেদিন আপুর জায়গায় আমি হলে আমার বাবা সেই জায়গায় সাদাতকে মেরে ফেলত,কারো ক্ষমতা হতো না সাদাতকে বাঁচিয়ে নেওয়ার,সাজাও হতো ওর,কারণ আমি বাবার নয়নের মনি,আমার বাবার প্রচুর ক্ষমতা কিন্তু আপুর কেউ ছিল না,সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম এই পৃথিবীতে আমার মতো সবাই সোনার চামচ মুখে নিয়ে আসে না,এই পৃথিবীতে স্বার্থপরদের সংখ্যা অনেক বেশি,আর পুলিশ ব্যবস্থা সম্পর্কেও আমার ভালো ধারণা হয়ে গিয়েছিল সেদিন।বেশি কিছু না হলেও এটা বুঝতে পেরেছিলাম,টাকা আর ক্ষমতাই আজকাল হয়ত সব,যেখানে ক্ষমতার জোরে সাদাত ফুর্তি করে বেড়াচ্ছিল সেখানে আনিকা আপু নির্মম হ*ত্যা*র স্বীকার হয়েও ন্যায় পেল না।আমার ঘুম যেন থেকে উদাও হয়েছিল,চোখ বন্ধ করলেই আপুর প্রাণহীন উন্মুক্ত চোখগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠত,ওগুলো আমাকে যেন বলত।″

″মামুনি,দেখলে তো আমার নিয়তি,ন্যায় পেলাম না,এটাই আমার নিয়তি,আমি অসহায়, আমি কখনও ন্যায় পাব না।″
ভাবনাটা আরও অস্থির করে তোলে আমায়,আপুর আসামি শান্তিতে বেঁচে আছে কথাটাই আমাকে পোড়াচ্ছিল।যে করেই হোক আমি সাদাতকে সাজা দিতে চেয়েছিলাম।আমি স্কুল থেকে আসার পথে একদিন সাদাতকে ওই মেয়ের সাথে মার্কেটে দেখি,আমার গাড়ির ড্রাইবার চাচাকে বলে পিছু নেওয়াই তাদের,একটা বাড়ির সামনে নামতে দেখি দু’জনকে।আরেকদিন নিজে সেই জায়গায় গিয়ে তার পাশের বাড়ি থেকে জানতে পারি ওরা দু’জন ওখানেই থাকে।মাথায় রক্ত চাপে আমার,প্রায় রাতে স্বপ্নে দেখতাম আপু আমায় বলছে।″

″আমি ভালো নেই মামুনি,ওই সাদাত সাজা না পেলে আমার আত্মা শান্তি পাবে না।আমার চিন্তা শক্তি যেন তখন লোপ পেয়েছিল,নিজের মনের শান্তি বলতেই মাথায় আসত সাদাতের মৃ*ত্যু, সেদিন বাবা মাম্মাম সবাই আমাদের এক আত্নীয়ের বাড়ি থাকতে গেছিলেন,আমাকে জোর করলেও আমি যাই নি,দাদু দিদুর সাথে বাড়িতে ছিলাম,রাত তখন ৩ টে,দিদুর পাশে শুয়ে ছিলাম আমি,খুব কৌশলে নেমে আসি বিছানা থেকে,কিচেন থেকে নেই সবথেকে দাঁড়ালো ছু*রি।বাড়িতে সিসিটিভি আছে জানতাম,এমনকি সাদাত যেখানে থাকত সেখানেও,আমি চেয়েছি আপু যেমন নিজের খু*নে*র ন্যায় পান নি,তেমন সাদাতও না পাক,তাই একটা ব্যাগে আমার হুডি আর মাস্ক, হাতমোজা নিয়ে নেই,আমি বরাবরই সাসপেন্স,থ্রিলার এসব মুভিই দেখাতাম,তাই আমার খেলার বিষয় হিসেবে ওমন ধরণের জিনিসই থাকত বেশিরভাগ,তাই সেদিন আমার জন্য সহজ হয়েছিল সব,আমি স্বাভাবিক ভাবে নিজের কক্ষের বারান্দার পাশে রাখা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামি,তারপর দেয়ালের পাশের বড় পেয়ারা গাছ দিয়ে দেয়ালের উপর চড়ে লাফ দিয়ে দেয়ালের ওপর পাশে যাই,দেয়ালের ওপারে গিয়ে হুডি আর মাস্কে নিজেকে ঢেকে নিই,বাবা আমাকে ওই বয়সেই অনেক ধরনের ট্রেনিং দিয়ে রেখেছিল,তাছাড়া আমি সেরা দৌঁড় প্রতিযোগী ছিলাম,তখন পায়ে হেঁটে প্রায় ১ ঘন্টার রাস্তা ২৫ মিনিটে দৌঁড়ে শেষ করে দিই আমি।সাদাতদের কক্ষের বেলকোনির দিকটা খোলা থাকায় সেখান দিয়ে অনেক কষ্ট স্বরুপ কক্ষে প্রবেশ করে যাই ,দু’জন তখন উন্মুক্ত শরীরে শুয়ে ছিল উপরে শুধু একটা চাদর রেখে।আমি তাদের পাশে এগিয়ে যাই আর তারা কিছু বুঝে উঠার আগেই নিসার গলায় ছু*রি রেখে সাদাতের গলায় শেষ করি,আমার হাতের টানটায় এতো জোর ছিল যে তারা চিৎকার করার আগেই প্রাণ বেড়িয়ে গিয়েছিল।ওদের উন্মুক্ত প্রাণহীন চোখ দেখে পেয়েছিলাম সেদিন মনে শান্তি,ওদের রক্ত আমার মাথায় চড়া রক্ত নামিয়েছিল।মনের বোঝা নেমে গিয়েছিল সেদিন,বুক ভরে নিশ্বাস নিয়েছিলাম।চলে আসতে নিব কিন্তু মন চাইছিল না,যে আইন ব্যবস্থা আপুকে ন্যায় দিতে পারে নি তাদের চ্যালেন্জ করতে মন চাইল।বাবা আমায় প্রায়ই প্রমত্ত অঙ্গনা বলে ডাকত।আমি একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম।″

″প্রমত্ত অঙ্গনা মানে কি বাবা?″

″এর মানে হলো পাগল মেয়ে/নারী।তুই যে সারাদিন পাগলামি করিস তাই আদর করে ডাকি।″

″বাবা আদর করে ডাকলেও এই নামের সত্তা আমার মধ্যে জীবিত ছিল সেদিন আমি জানতে পারি,তাই নিজের পরিচয় স্বরুপ সেখানে লিখে আসি″

প্রমত্ত অঙ্গনা,
ক্ষমতার জোরে অন্যায়কারীদের বেঁচে বেড়ানো মানায় না।

″অতঃপর যেভাবে গিয়েছিলাম সেভাবেই চলে আসি।সেদিনকের পর শান্তিতে ঘুম হয় আমার।আপুকে আর সপ্নে দেখি নি।পুলিশ এসে ওদের নগ্ন লা*শে*র পাশে এসব লেখা দেখে হতবম্ভ হয়,সিসিটিভি ফোঁটেজ থেকে ওরা হুডিওয়ালা মাস্ক পরা কেউ একজন ছাড়া আর কোনো রহস্যের সন্ধান পায় না।″

″তারপর ভালো যাচ্ছিল দিন,স্বাভাবিক চলছিলাম আমি,হঠাৎ আমারই ক্লাসমিটের বস্ত্রহীন লাশ পাওয়া যায় একটা খালের পাশে।ওকে ধর্ষণের অপরাধে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়ে গেলে তাড়াও ছাড়া পেয়ে যায় টাকার জোরে,ততদিনে এসব ধর্ষণ বিষয়ে অনেক কিছুই বুঝতে পারতাম,ও অনেক মেধাবী আর ভালো মেয়ে ছিল,ওর বাবা সাধারণ স্কুল শিক্ষক হলেও মেয়েকে ভালো স্কুলে পড়াচ্ছিলেন,তাকে নিয়ে অনেক সপ্ন ছিল উনার,এক মেয়েই ছিল,অনেক আদরের,যার মৃত্যু থেকেও বেশি কষ্ট দান করেছিল উনাকে তার খুনিদের সাজার ব্যবস্থা করতে না পারায়,মেয়ের এমন মৃ*ত্যু মেনে নিতে না পেরে উনি আত্নহত্যা করেন,কিন্তু খু*নি*রা উন্মুক্ত ফুর্তিতে ঘুরছিল,তাদের অল্প ক্ষণের তৃপ্তির জন্য ন*ষ্ট হলো দুটি তাজা প্রাণ,এরপর থেকে আমার ভিতরের সেই অশান্তি আবার জেগে যায়,বুঝতে পারি মনের শান্তি কিসে,লেগে পরি আবার সেই অভিযানে,খুব বিচক্ষণতা নিয়ে সবকিছু প্লেন করি,চারজনের সবার খোঁজ নেই,ঠিকানা বের করি,তারপর এক এক জন করে সুযোগ বুঝে সবাইকে মে*রে ফেলি আর আমি হয়ে উঠি এক সফল খুনি,আমার সকল যোগ্যতা আমি ওই আপরাধীদের তাদের আসল প্রাপ্তি পাওয়াতে লাগিয়ে দেই,তারপর থেকে যখনই এমন কিছু শোনতাম তখনই মনের শান্তির খোঁজে তাদের শেষ করে দিতাম যারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে,মানুষ হয়েও রাক্ষসের রূপ নেয়।এখন হয়ত ভাবছিস তোকে আর আদ্রিশকে কেন মারি নি,আরে তোদের এতো সহজে কেমনে মারতাম!যে প্রমত্ত অঙ্গনা অন্যদের জন্য ন্যায় করছিল সে নিজেই অন্যায়ের স্বীকার হলো,তাই তোদের সহজ মৃত্যু আমার কাছে অনেক ছোট মনে হচ্ছিল।আমি তোদের শাস্তি সম্পর্কে সে রাতেই ভেবে নিয়েছিলাম যে রাতে তোরা প্রথম মধুর ক্ষণ উদযাপন করছিলি।আমি যেদিন ঘর থেকে বেড়িয়ে আসি সেদিন ঘরে হিডেন ক্যামরা লাগিয়ে আসি,যাতে তোদের উপর নজর থাকে আমার সবসময়,তোর জন্য স্পেশাল ভাইরাস ক্রিয়েট করি আমি,বাবা চেয়েছিলেন আমি সাইনটিস্ট হই কিন্তু আমি ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম, তাই বাবা নিজের পছন্দ অনুযায়ী আমাকে বিজ্ঞান সম্পর্কে অনেক কিছুই আয়ত্ত করান,সাইনটিস্ট না হলেও আমি অনেক কিছুই জানি সে বিষয়ে।তোর শরীরে ভাইরাস আমিই দিয়েছি,আদ্রিশ তোর রুপে পাগল হয়েছিল,তোর ভদ্রতার নেকামোতে পাগল হয়েছিল তাই ওর সামনে তোকে নোং*রা আর বিচ্ছিরি প্রমাণ করলাম।এমনকি নকল প্রেগন্যান্সি রিপোর্টও আমিই দিয়েছি,যার ফলস্বরূপ তোদের সুখের সংসার ভেঙে গেল।এখন বল কেমন লাগল খেলা রিদিকা?″

″আমি তোকে ছাড়ব না আঁখি,আমি পুলিশকে, আদ্রিশকে, সবাইকে বলে দিব তুই সবকিছু করেছিস।″

″বলার অবস্থায় থাকলে তো রিদু পাখি,জানতে চাইবি না এই ইনজেকশনটা কিসের ছিল?আর মাত্র ৫-১০ সেকেন্ডের মধ্যেই তুই কথা বলার সক্ষমতা হারাবি,এমনকি হাত পায়েরও নড়াচড়া তেমন করতে পারবি না,শরীরে জোর থাকলেও হাঁটা চলায় একপ্রকার অক্ষম হবি তুই।দেখ তোর কপাল কতো ভালো, আজকে তোকে ওষুধটা দিব ভেবেছিলাম এখান থেকে গিয়ে কিন্তু ভুলবশত ওষুধটা এই ব্যাগেই রয়ে গেল,কিন্তু যেমনটাই হোক কাজে আসল।ইন্সপেক্টর জিসান এখনই এসে যাবেন,অনেক দিন ধরে আমাকে খোঁজছিল বেচারা যাক আমার দোষ নিজের ঘারে নিলি তুই,নিজেই স্বীকার করলি তুই প্রমত্ত অঙ্গনা যা স্বীকারোক্তি স্বরুপ সোজা গেল জিসানের কাছে,এখনই এসে তোকে নিয়ে যাবে,বাকি আমি আরও একটু মশলা লাগাব।আর তোর এমন অবস্থা যে আসল প্রমত্ত অঙ্গনা সম্পর্কে ওকে কিছু বলতেও পারবি না।″

রিদিকা এবার আঁখির দিকে রাগে তেড়ে আসতে নিলেও পারল না,এমনকি কিছু বলতেও পারল না।

″কি গা*লি দিবি আমায়?মারবি?চল তোর ইচ্ছে পূরণ করি।জিসান এসেই গেছে আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে।আয় তোকে তোর স্টাইলে ধরা খাওয়াই।″

কথাটা বলেই আঁখি সেখানে পরে টেনে নিজের উপর রিদিকাকে নিয়ে আসে,গলায় রিদিকার হাত চেপে ধরে এভাবে দেখা যাচ্ছে যেন রিদিকাই ধরে আছে,ওকে মারতে চাইছে,এদিকে রিদিকা কিছুই করতে পারছে না শুধু মাথা নাড়িয়ে মানা করছে আঁখিকে,আঁখি চিৎকার করছে।

″রিদিকা ছাড় আমায়,আমি তোর কি ক্ষতি করেছি?মা*রি*স না আমায়,ছাড়।কেউ বাঁচাও।″

তখনি জিসান সেখানে এসে উক্ত দৃশ্য দেখে গুলি চালায় রিদিকার পিঠে,রিদিকা সাথে সাথে পরে গিয়ে কাতরাতে শুরু করে।জিসান টেনে তুলে আঁখিকে।

″আপনি ঠিক আছেন ডা.আঁখি?″

″হুম।″

″কি হয়েছিল এখানে?″

″আমি আর ডাক্তার আদৃত এখানে একান্তে কিছু সময় পার করতে এসেছিলাম তখন হঠাৎ আদ্রিশ এসে ডাক্তার আদৃতকে অজ্ঞান করে আমাকে নিয়ে যেতে চায় আর তারপর রিদিকা এসে তাকে পিছন থেকে আঘাত করে,আর সবকিছু আমি জানতে চাইলে আমাকে সব বলে তারপর আমাকে মারতে চায়।″

″কন্সটেবলস রিদিকাকে নিয়ে চলো,ওকে আমাদের জীবিত চাই,আর ডা.আদৃত আর আদ্রিশকে উঠিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো।″

″আদ্রিশকে নিয়ে যান,ডা.আদৃতকে আমি দেখছি।″

রিদিকাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, রিদিকা অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আঁখির দিকে।আঁখি সবার আগোচরে তার দিয়ে তাকিয়ে তাকে উসকানিমূলক হাসি দিলো।

চলবে…