#প্রণয়
#পর্বঃ৩৬
#তানিশা সুলতানা
তানহা ওইভাবেই সূচকের পিঠের ওপর মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এক ঘন্টা পরে সূচক নিজের পড়া কম্পিলিট করে তানহার মাথাটা ধরে নিজের কোলের ওপর আনে। মুখের ওপর পরে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দেয় সূচক। ঠোঁট ফুলিয়ে কপাল কুঁচকে ঘুমচ্ছে তানহা। সূচক মুচকি হাসে।
এই মুখ টার দিকে তাকিয়েই সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবে অনায়াসে।
ঘুমের মধ্যেও বিরবির করছে মেয়েটা। আস্ত একটা মায়ার খনি।
তানহার কপালে খানিকক্ষণ সময় নিয়ে চুমু খায়।
কালকের কথা চিন্তা করে ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে সূচকের। কালকে কাকা কাকির মুখোমুখি হবে কিভাবে? কিরকম রিয়েক্ট করবে তারা? যদি উল্টা পাল্টা রিয়েক্ট করে। তাহলে কিভাবে সামলাবে সূচক? আলাদা হতে কখনোই পারবে না। ওনারা মেনে না নিলে তানহাকে নিয়ে বাড়ি ছাড়বে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সূচক। বালিশ ঠিক করে তানহাকে ঠিকভাবে শুয়িয়ে দেয়। তারপর দুজনের বই গুছিয়ে টেবিলের ওপর রেখে মশারি টাঙিয়ে তানহার পাশে শুয়ে পড়ে।
পিচ্চিটাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে।
ইদানীং সূচক জীম করা শুরু করেছে। জীম না করলে চলছিলো না। শরীরটাও কেমন মেচমেচে হয়ে যাচ্ছিলো। জীমের কত গুলো সরঞ্জামও কিনে নিয়েছে।
ছাঁদে রেখেছে সেগুলো।
ফজরের নামাজ আদায় করে জায়নামাজে বসেই তানহার মুখের দিকে তাকায় সূচক। কি নিষ্পাপ মুখটা। ঠোঁট উল্টে ঘুমচ্ছে।
শরীর খারাপ তাই নামাজের জন্য ডাকলো না সূচক। নাহলে ঘাড় ধরে উঠিয়ে নামাজ পড়াতো।
জায়নামাজ গুটিয়ে ছাঁদের উদ্দেশ্য রওনা হয় সূচক।
নয়টায় ঘুম ভেঙে যায় তানহার। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। সূচককে রুমে না দেখতে পেয়ে মন খারাপ হয়ে যায়। লোকটা কি চলে গেলো?
একবার বলে গেলে কি হতো?
মুখ ভার করে বিছানা থেকে নেমে পড়ে তানহা। এলোমেলো চুল গুলো খোঁপা করতে করতে রুম থেকে বের হয়।
সাথে সাথে চোখ পড়ে টেবিলের দিকে। সবাই খাচ্ছে। সূচকও খাচ্ছে।
তানহাকে দেখে সবাই কেমন করে যেনো তাকায়। একটু বিব্রত হয়ে যায় তানহা। সূচক ছাড়া বাকি সবাই তাকিয়ে আছে।
বৃষ্টিকে না দেখতে পেয়ে একটু খানি খুশি হয় তানহা। যাক আপদ বিদেয় হয়েছে।
“ঘুম ভাঙলো তাহলে???
সুর টেনে বলে ইরা। সাদিয়া বেগম চোখ পাকিয়ে তাকায় ইরার দিকে। ভাগ্যিস তমাল আগেই খেয়ে বেরিয়েছে। নাহলে লজ্জায় ম*রেই যেতো তানহা। ইভা মাথা নিচু করে খাচ্ছে। তোহা মিটমিট করে হাসছে।
” গাঁধার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? যা গোছল সেরে আয়।
সূচক তানহার দিকে তাকিয়ে একটা ধমক দিয়ে বলে। ব্যাস হয়ে গেলো। এখন সবাই কি ভাববে? গোছল করার কথা না বললে চলছিলো না?
সাদিয়া বেগম নিঃশব্দে কেটে পড়ে। তোহা আর ইরা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে।
তানহা চোখ মুখ খিঁচে এক দৌড়ে রুমে চলে যায়।
এই লোকটা আস্ত একটা বদের হাড্ডি।
🥀
আজকে তানহা বায়না ধরেছে সূচকের কোচিং দেখতে যাবে। স্কুল টাইম হওয়ার অনেক আগেই বেরিয়েছে তানহা আর তোহা। পায়ে হেঁটেই চলে যাবে। তোহা একটুখানি ভয় পাচ্ছে। সূচক যদি কিছু বলে? তানহা বারবার স্বান্তনা দিচ্ছে।
স্কুলের পূর্ব পাশে কলেজের সামনে সূচকের কোচিং সেন্টার। বেশ বড়সর একটা টিনের ঘর। ঘরের দরজার সামনে হলুদ রংয়ের একটা সাইন বোর্ড টাঙানো। তাতে সাদা কালি দিয়ে লেখা “SA কোচিং সেন্টার”
তানহা দুর থেকেই সূচকের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাঁটছে। চোখে চশমা পড়েছে লোকটা। সাদা শার্টের সাদা কালো জিন্স। শার্টের হাতা গুটিয়ে কনুই পর্যন্ত উঠিয়েছে। দুই হাত নারিয়ে স্টুডেন্টদের পড়া বোঝাচ্ছে। তার ফাঁকে ফাঁকে লম্বা চুল গুলো হাত দিয়ে পেছনে ঠেলছে।
এতো কিউট কেনো লোকটা?
সূচককে দেখতে দেখতে একদম কোচিং এর দরজার সামনে এসে পড়ে ওরা। দুই পাশে অনেক গুলো জানালা। সব গুলো জানালাই খোলা।
মেয়ো গুলো হা করে সূচকের দিকে তাকিয়ে আছে। পড়া গিলছে না সূচককে গিলছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। ছেলের সংখ্যা খুব কম৷। ইমন এক কোনায় বসে ফোন দেখছে।
হঠাৎ করে সূচকের চোখ পড়ে দরজার দিকে তানহা আর তোহার দিকে। তানহা হা করে তাকিয়ে আছে আর তোহা কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পড়া থামিয়ে দেয় সূচক। সবার নজর এখন ওদের দিকে। ইমন এক লাফে উঠে দাঁড়ায়।
তানহা এবার সবার দৃষ্টি বুঝতে পেরে বিব্রত হয়ে যায়।
“কি চাই?
সূচক বুকের কাছে দুই হাত গুঁজে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে শান্তি গলায় জিজ্ঞেস করে।
” ভাইয়া আমি আসতে চাই নি। তানহা জোর করে নিয়ে এসেছে।
তোহা আরও একটু কাচুমাচু হয়ে বলে। তানহা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। ওদের দেখে তো লোকটার খুশি হওয়ার কথা ছিলো।
“আমি টিচার। এটা আমার কাজের জায়গা। এখানে আমি শুধুমাত্র একজন টিচার। অন্য কিছু না।
এবারও সূচকের ঠান্ডা গলা। অপমানে গা রিরি করে ওঠে তানহার। তোহা সরি বলে হাঁটা শুরু করে দিয়েছে। তানহা কটমট চোখে তাকিয়ে আছে সূচকের দিকে।
” আপনাকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে হবে?
তানহার চোখে চোখ রেখে বলে সূচক। চোখে পানি টলমল করে ওঠে তানহার।
“আই জাস্ট হেইট ইউ
দাঁতে দাঁত চেপে বলে তানহা উল্টো রাস্তায় দৌড়ে চলে যায়। তোহা স্কুলের দিকে গেছে। আর তানহা অন্য দিকে। সূচক ইমনের দিকে তাকায়। ইমন পড়েছে দোটানায়।
এখন ও কোন দিকে যাবে?
সূচককের চাহনি বুঝে মনে মনে সূচককে বকতে বকতে বেরিয়ে যায় ইমন।
সূচক আবার পড়ানো শুরু করে।
তানহার কান্না থামছেই না। এভাবে কেনো বললো উনি? ভালোবাসা শেষ?
দৌড়ে যাচ্ছে আর বা হাতে চোখ মুছছে। এই রাস্তায়ই তানহার মামা বাড়ি। আজকে ও মামা বাড়ি যাবে। ওই বাড়িতে ফিরবে না। সূচকের মুখোমুখি তো একদমই হবে না। এই অপমান মেনে নেবে না একদম।
🥀
তোহা স্কুলের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। অপমানটা মেনে নিতে পারছে না। এভাবে কেনো বললো ভাইয়া?
” এই মেয়ে তোমার ভাবি কই?
ইমন দুই হাঁটুতে হাত দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে। তোহা ইমনের দিকে তাকায়।
“আজিব
কাঁদছো কেনো? তোমাদের বোঝা উচিৎ ছিলো। ওটা ওর কাজের জায়গা। সেখানে ভাই বোন বই সবই একই। আলাদা করে দেখার জায়গা না।
ইমন বিরক্ত হয়ে বলে। তোহা কোনো কথা না বলে চোখের পানি মুছতে মুছতে ভেতরে ঢুকে যায়।
ইমন সরু চোখে তাকিয়ে থাকে। এটলিস্ট বলে তো যেতে পারতো। তানহা কই?
বা নাম্বারটা তো দিতে পারতো। এখন কোথায় খুঁজবে ইমন?
তানহার মা সবে বের হচ্ছিলো বাড়ি যাওয়ার জন্য। তখনই হুরমুর করে বাড়িতে ঢুকে পড়ে তানহা। তাহার মা আর নানু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
তানহা গিয়ে সোজা নানুমনির কোলে মাথা রেখে পা গুটিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ে।
তমা বেগমও তাহার পাশে বসে।
” কি হয়েছে? তুই এই সময় এখানে? স্কুলে না থাকার কথা ছিলো তোর?
চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে।
“এখানে এসে কি তোমার খুব অসুবিধা করে ফেললাম?
বলো তাহলে চলে যাচ্ছি।
ফট করে মাথা তুলে উঠে দাঁড়িয়ে রাগে ফুসফুস করতে করতে বলে তানহা।
” তমু তুই চুপ করে থাক।
বোনু তুই আমার কাছে আয়।
সাহেলা বেগম বলে। তমা বেগম চুপচাপ হাতের ব্যাগ নামিয়ে একটু দুরে গিয়ে দাঁড়ায়। তানহা ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আবার নানুর কোলে মাথা রাখে।
“কি হইছে বোনু? কানছিস কেন?
তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে সাহেলা বেগম।
” আমি কয়েকদিন থাকতে চাই তোমার কাছে। রাখবে?
তানহা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে।
তমা বেগম গালে হাত দিয়ে বসে। এই মেয়ের হয়েছে কি?
“কেনো থাকতে দেবো না? থাকো না তুমি। তোমার মামা আর নানা তোমাকে দেখলে খুব খুশি হবে।
আজকে আবার তোমার সৈকত ভাই আসবে।
তমা বেগমরা দুই বোন এক ভাই। ভাই এখনো বিয়ে করে নি। সবার ছোট ভাই। বড় বোনের একটাই মাএ ছেলে। নাম সৈকত। মাস্টার্স পড়ছে।
” আর আমি?
তমা বেগম বলে।
“তুমিও থাকবে কয়েকদিন আমারই সাথে।
তানহা উঠে বসে বলে। সাহেলা বেগম এক গাল হাসে। কতোদিন পরে বাড়িটা আবার ভরে উঠবে।
চলবে
#প্রণয়
#পর্বঃ৩৭
#তানিশা সুলতানা
তানহা খুব মজায়ই আছে। সৈকতের সাথে খুব ভালো একটা সম্পর্ক ওর। ভাই হিসেবে একদম পারফেক্ট। মা*রা*মা*রি দৌড়াদৌড়ি লেগেই থাকে। সাথে খালামনিও এসেছে। এখন তো খুশির সীমা নেই। বাড়িটা আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে।
বিরিয়ানি রান্না করতে লেগে গেছে তমা বেগম আর সুমা বেগম। সৈকত, তানহা তাজ আর ওদের মামা তুহিন লুডু খেলছে। আর আলুর চপ খাচ্ছে।
তানহা যেহেতু জামাকাপড় আনে নি তাই তুহিন গিয়ে ওর জন্য জামাকাপড় কিনে এনেছে। ওদের সাথে উল্লাসে মেতে সূচকের কথা ভুলেই গেছে তানহা। তানহার নানা ওদের পাশে বসে খেলা দেখছে। আর নানু মেয়েদের সাথে রান্না করছে।
তুহিন সৈকতের থেকে তিন বছরের বড়। তার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু পাকাপোক্ত ভাবে ঠিক হয়েও হচ্ছে না। সে এখন কলেজের টিচার। সুমার বিয়ের বছরেই জন্ম হয়েছিলো তুহিন।
মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে সূচক। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। তানহা নানা বাড়ি যাওয়ার পরপরই তমা বেগম কল করে বলে দিয়েছে যে তানহা ওনার কাছে গেছে। যদিও সূচক জানতো এটাই হবে।
কিন্তু কথা হচ্ছে এখন তানহাকে আনবে কি করে? আর ওকে ছাড়া থাকবেই বা কি করে?
বাড়িতেই ফিরে নি আজ। দুপুরের খাবারটাও খাওয়া হয় নি।কোচিং এ বসে ছিলো সারাদিন।
এখন তিনটে বাজে। চারটায় এক ব্যাচ স্টুডেন্ট আছে৷ তাদের পড়ানো শেষ করে চলে যাবে তানহার কাছে। একটা রাতও থাকতে পারবে না ওকে ছাড়া। কোনো ভাবেই না।
ইমন খাবার নিয়ে আসে। সূচককে বসে থাকতে দেখে খাবার প্লেটে সার্ভ করে ভাত মাখিয়ে সূচকের মুখের সামনে ধরে। সূচক ঘাড় ঘুরিয়ে এক পলক তাকায় ইমনের দিকে। ইমন চোখের ইশারায় খেয়ে নিতে বলে। সূচকও কোনো কথা না বলে খেয়ে নেয়।
🥀
সন্ধার দিকে মামার জন্য মেয়ে দেখতে বের হয় তানহা সৈকত তুহিন আর সৈকতের বাবা। মেয়েকে আগেই দেখেছে সাহেলা বেগম আর ওনার স্বামী। ওনাদের ভারি পছন্দ হয়েছে। তাই এখন ছেলেকে পাঠাচ্ছে। এখনো ছেলে দেখেনি মেয়েকে।
মামা তানহাকে অনেক গুলো জামা এনে দিয়েছে। সেখান থেকে কালো রংয়ের গাউনটা পড়ে নেয় তানহা। সৈকতও কালো শার্ট পড়েছে।
“তুই আমার সাথে মেচিং করে পড়েছিস কেনো?
সৈকতের চোখের চশমা খুলে নিয়ে বলে তানহা।
“মেচিং কারে কয় আবার? এইডা কি ব্রিটিশদের ভাষা?
সৈকত তানহার থেকে নিজের চশমা নিয়ে চোখে পড়তে পড়তে বলে।
” শয়*তানের বা*চ্চা
তানহা সৈকতের চুল গুলো খামচে ধরে বলে।
“তোরা ঝগড়া না থামালে একটাকেও নিবো না আমি।
তুহিন চোখ পাকিয়ে বলে। ব্যাস দুজনেরই ঝগড়া থেমে যায়।
খুব বেশি দুরে না মেয়েদের বাড়ি। পায়ে হেঁটে গেলে দশ মিনিট লাগবে। ওরা সবাই পায়ে হেঁটেই যায়। একতালা একটা বাড়ি। খুবই ছোট বাড়িটা। কিন্তু খুব সুন্দর। বাড়ির চারপাশে নানারকমের ফুল গাছ দিয়ে ভরা।
সবাই ভেতরে যায়। সোফায় বসে। তানহা মামার পাশে বসে। সৈকত মামার আরেক পাশে। আর সৈকতের বাবা অন্য সোফায়।
সামনে টি-টেবিলের ওপরে শরবত রাখে একটা মহিলা। মনে হচ্ছে মেয়ের কাকি বা মামি হবে।
সৈকতের বাবা মেয়র বাবার সাথে অনেক কথা বলে। আর তানহা আর সৈকত তুহিনকে জ্বালিয়ে মে*রে*ছে।
অবশেষে মেয়েকে নিয়ে আসা হয়। মেয়ে দেখে তানহার মুখটা হা হয়ে যায়। এইতো সেই মেয়ে যার সাথে সৈকতকে দুই বার দেখেছিলো। এই মেয়ে এখানে আসলো কি করে?
তানহা দাঁড়িয়ে যায়। তুহিন তানহার হাত ধরে টান দিয়ে বসিয়ে দেয়। জোরে জোরে দুবার শ্বাস টেনে তানহা নিজেকে শান্ত করে। এভাবে সিনক্রিয়েট করার কোনো মানেই হয় না।
আলাদা কথা বলতে দেওয়া হয় ছেলে মেয়েকে।
তানহা সবার আগে উঠে মেয়েটার হাত ধরে আগে আগে চলে যায়। সৈকত আর তুহিন পিছনে পিছনে যায়।
” মামি তোমার নাম কি?
ছাঁদের শেষ সিঁড়িতে পা দিয়ে বলে তানহা।
“মারিয়া
মেয়েটা নিচু গলায় মাথা নিচু করে আরও একটু ঘোমটা টেনে বলে।
” তোমাকে আমি কয়েকবার সূচক ভাইয়ার সাথে দেখছি। কে হয় উনি তোমার?
তানহার কথায় ফট করে তানহার দিকে তাকায় মেয়েটা।
“ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
মুচকি হেসে বলে মারিয়া। তানহাও একটু হাসে।
” তোমার উনিকে দেখছি না যে? একা ছাড়লো তোমায়?
মারিয়া বলে।
“ছাড়ে নি। রেগে চলে এসেছি।
তানহা মন খারাপ করে বলে।
এরই মধ্যে সৈকত আর তুহিন চলে আসে। সৈকত তানহার হাত ধরে অন্য দিকে নিয়ে যায়। আর ওদের নিজেদের মধ্যে কথা বলার সুযোগ করে দেয়।
🥀🥀
অবশেষে মেয়ে দেখা শেষ করে একদম ডিনার সেরে বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে ওরা। দারুণ খাইয়েছে ওনারা। তানহার তো গলা ওবদি উঠে গেছে একদম। দুপুরে বিরিয়ানি আর রাতে গরুর মাংস পোলাও মুরগির মাংস দুই মিষ্টি ডিম রোস্ট আরও অনেক কিছুই ছিলো।
এতো খেয়ে এখন হাঁটতেই কষ্ট হচ্ছে তানহার। তুহিনের কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটছে।
বাড়ি ফিরেই কোনো রকমে শরীরটাকে টেনে টুনে নিজের জন্য বরাদ্দ করা রুমটাতে চলে যায় তানহা। কেউ আর সুইচ অন করে নাই। তাই রুমটা অন্ধকার। তানহাও আর আলো জ্বালায় না। বিছানায় ধাপ করে শুয়ে পড়ে।
” আহহহহহ” করে একটা শব্দ হয়। আর তানহার পিঠের নিচের শক্ত কিছুর অস্তিত্ব টের পেয়ে এক লাফে আবার উঠে বসে তানহা। সমস্ত ক্লান্ত চলে যায়।
“ইডিয়েট
চোখে দেখিস না?
সূচক দাঁতে দাঁত চেপে উঠে বসে বলে। তানহা বড়বড় চোখ করে তাকায়। এই লোকটা এখানে আসলো কিভাবে? আর আসলোই বা কেনো?
সূচক চরম বিরক্তি নিয়ে সুইট টিপে বাল্ব অন করে। তানহা বড়বড় চোখ করে তাকায় সূচকের দিকে। সূচক রেগে তাকিয়ে আছে।
” আআআপনি এখানে কেনো এসেছেন?
তানহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
সাথে সাথে তানহার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড়ে। থাপ্পড়টা বেশ জোরেই পড়ে। তানহার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে যেনো। দুই পা পিছিয়ে যায়। গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে তাকায় সূচকের দিকে। সূচকের চোখ মুখ এখনো শক্ত।
“সাহস কি করে হয়? আমাকে না বলে এখানে আসার?
তানহার গাল দুটো চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে সূচক। ব্যাথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে তানহা। দুই হাত দিয়ে সূচকের হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে তানহার।
হাত দুটো যেনো চোয়াল ভেদ করে মুখে ঢুকে যাচ্ছে।
” খুব শখ না অন্যদের সাথে ঢলাঢলি করার? মেরে পুঁতে রেখে দেবো তোকে আমি। স্টুপিট
চোয়াল শক্ত করে বলে সূচক। রীতিমতো রাগে কাঁপছে সূচক।
তানহার চোখের পানি গড়িয়ে সূচকের হাতে পড়তেই সূচক ছেড়ে দেয় তানহা। খানিকটা ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে দেয়। তানহা তাল সামলাতে না পেরে একদম খাটের সাইডে পড়ে যায়। খাটের কোনা লেগে যায় তানহার মাথায়। আবারও ব্যাথায় কুঁকিয়ে ওঠে তানহা। খুব শব্দ করে “আহহহ” বলে ওঠে।
সূচক এখনো হাতের মুঠ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। তানহা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে৷ কপালে হাত দিতেই তরল পদার্থের অস্তিত্ব টের পায়।
হাঁটু মুরে বসে পড়ে তানহা।
“কেনো এসেছিস?
সূচক ধাপ করে খাটে বসে প্রশ্ন করে।
তানহা৷ উওর দেয় না। মাথা তুলে তাকায়ও না।
” জিজ্ঞেস করছি আমি৷ কোনো এসেছিস?
চোয়াল শক্ত করে ধমক দিয়ে বলে সূচক। তানহা কেঁপে ওঠে। আরও একটু কাচুমাচু হয়ে বসে। ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে গেছে।
“আপনার কি? নানা বাড়িতেও আসতে পারবো না?
কাঁদতে কাঁদতে রিনরিনিয়ে বলে তানহা।
সূচক দাঁত কটমট করে উঠে দাঁড়ায়। ঠাস করে দরজা আটকে দেয়।
চলবে