#বিবর্ণ_আলোকবর্ষ
#পর্বঃ১৪+১৫
#লেখিকাঃদিশা মনি
বর্ষ নামটা শুনে আলোর মনে অন্যরকম একটা অনুভূতির সৃষ্টি হয়। আলো ছবিটা ভালোভাবে দেখে না। সে শুধু চোখটা দেখে। কালো ফ্রেমের চশমার ভেতর কত সুন্দর মায়াবী দুইজোড়া চোখ। পরক্ষণেই আলো নিজের এসব ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।
জরিনা তাদের গেস্টরুমে পৌছে দিয়ে বলে,
‘ঘরটা ভালো করে পরিস্কার করে নিও। আর শোন আমি কিন্তু এই বাড়ির সিসিটিভি। কোন কিছু চুরি টুরি করে পালানোর কথা মাথাতেও আনবে না।’
জরিনার কথায় আলো খুব অপমানিত বোধ করে। আলো জরিনার মুখের উপর বলে দেয়,
‘আমরা কোন চোর নই। যদি কিছু চুরি করতে হয় তাহলে আপনার সন্দেহগুলো চুরি করব। কথায় বলে মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি। আপনাকে দেখে সেটা বোঝা যাচ্ছে। এই বাড়িটা যার তিনি আমাদের থাকতে দিলেন আর আপনি এমন ভাব করছেন যেন বাড়িটা আপনার।’
আলোর কথায় ক্ষে’পে যায় জরিনা।
‘শোন মেয়ে এই বাড়ির সবাই আমাকে পরিবারের সদস্য মনে করে। আমার সাথে লাগতে এসো না। নাহলে এই বাড়িতে টিকতে পারবে না। সুমনা ম্যামকে ভালো মানুষ পেয়ে খুব তো উড়ে এসে জুড়ে বসেছ।’
জরিনা আর না থেকে দ্রুত কদমে হেটে সেখান থেকে চলে যায়।
জরিনা যাওয়ার পর আলো জোনাকিকে বলে,
‘আপু চল না এখান থেকে যাই। এত অপমান আমার সহ্য হচ্ছে না। এই জরিনা ম’রিনার ব্যবহার খুব খারাপ।’
‘বাহ আলো তুই তো আবার আগের মতো হয়ে যাচ্ছিস! বিয়ের আগে যেমন বলতি এখন আবার ঠিক সেই আগের মতো কথা বলছিস। এই বাড়িটা সুমনা ম্যাডামের। তিনি যখন আমাদের থাকতে দিয়েছেন তখন অন্য কারো কথা গায়ে মাখার দরকার নেই।’
২৭.
‘ম্যাম ঐ মেয়েগুলোকে এই বাড়িতে থাকতে দেওয়া কি ঠিক হলো?’
জরিনার কথায় ভ্রু কুচকে তাকায় সুমনা।
‘কেন ভুল কি হয়েছে। ওরা অসহায় তাই আমি ওদের সাহায্য করেছি।’
‘আজকাল যা দিনকাল পড়েছে এখনকার দিনে আর কাউকে বিশ্বাস করা যায়না। মেয়েগুলোর কোন খা’রাপ উদ্দ্যশ্য থাকতে পারে।’
‘আমার ওদের খারাপ মনে হয়নি। তাছাড়া আমাদের বাড়িতে সবসময় গার্ডস থাকে। তুমি এসব নিয়ে বেশি ভেবো না। লাঞ্চের টাইম হয়ে গেছে, ঐ মেয়েগুলোকে ডেকে আনো। ওদের মুখ কেমন শুকনো শুকনো লাগছিল সারাদিন কিছু খায়নি বোধহয়।’
জরিনার খুব রাগ হচ্ছিল। বিশেষ করে আলো মেয়েটাকে তার একদম পছন্দ হয়নি। জরিনা আলো ও জোনাকিকে ডেকে আনে।
খেতে বসে জোনাকি খেলেও আলো কিছু খাচ্ছিল না। আলোকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে সুমনা বলে,
‘এই মেয়ে তুমি কিছু খাচ্ছোনা কেন? খাবার পছন্দ হয়নি?’
‘না আন্টি খাবার তো খুব ভালো হয়েছে।’
আলোকে আন্টি বলে ডাকতে দেখে জরিনা ভ্রু কুচকে তাকায়।
‘সরি ভুল করে আন্টি বলে ফেললাম।’
‘আন্টিই ডেকো৷ আর জোনাকি তুমিও আমায় আন্টি বলে ডাকবে। ম্যাডাম ডাকার কোন প্রয়োজন নেই। তোমরা যখন এই শহরে এসেছ তখন কি করবে ভেবে রেখেছ কিছু?’
জোনাকি উত্তর দেয়,
‘ভাবছি আমার বোনটাকে কোন ভালো ভার্সিটিতে ভর্তি করাবো। আর আমি কোন কাজ করব।’
‘তোমার শিক্ষাগত যোগ্যতা কি?’
‘ইন্টার পাস।’
‘তুমিও তো খুব একটা শিক্ষিত নও। তুমি আর পড়তে চাওনা?’
‘জি না। আমার পড়াশোনা ভালো লাগে না। আমি কিছু একটা করতে পেলেই হবে।’
‘ইন্টার পাস নিয়ে এখানে তো ভালো কোন কাজ পাবে না। আমি দেখছি কি করা যায়। আমার কোম্পানিতে কাজ করতে পারো চাইলে। আমার কোম্পানিতে কয়েকজন মেয়ে শ্রমিকের প্রয়োজন।বেতনও ভালো মাসে ২৫ হাজার।’
‘আপনার কিসের কোম্পানি?’
‘চানাচুরের কোম্পানি। ‘আরাম’ চানাচুর কোম্পানির মালিক সুমনা ম্যাম। এই কোম্পানিটা ওনার স্বামীর হাত ধরে দাড়িয়েছে। ওনার স্বামীর মৃত্যুর পর উনি আর ওনার ছেলে বর্ণ মিলে এই কোম্পানিটা চালাচ্ছেন।’
আলো খুব অবাক হয় জরিনার কথা শুনে। সুমনা এত ধনী অথচ তার মধ্যে কোন অহংকার নেই, জীবনধারণও বেশ সাধারণ মনে হয়। আলো জিজ্ঞেস করে,
‘এই বাড়ির কি দুটো ছেলে?’
‘হ্যা আমার দুই ছেলে। বর্ণ মাহমুদ এবং বর্ষ মাহমুদ। দুই ছেলে হয়েছে দুই রকম। বর্ণ প্রাণোচ্ছল, চঞ্চল, সবার সাথে ভালোভাবে মিশতে পারে৷ আর বর্ষ সিরিয়াস সবসময় গম্ভীর মুখ করে থাকে আর অনেকটা ইন্ট্রোভার্ট টাইপ।’
খাবার টেবিল জুড়ে শুনশান নীরবতা বিরাজমান। নীরবতা কা’টিয়ে সুমনা বলে,
‘জোনাকি কাল থেকে তুমি আমার কোম্পানিতে যোগদান করতে পারো। আমি দেখছি তোমার বোনকে কোন ভার্সিটিতে ভর্তি করানো যায় নাকি। কাগজ পত্র সব তোমাদের সাথে আছে তো?’
‘জ্বি আছে। আমি আসার সময় আলোর সব কাগজপত্র সাথে নিয়ে এসেছি।’
‘তাহলে ঠিক আছে। এখন যাও তোমরা নিজেদের রুমে। কোন কিছু প্রয়োজন হলে জরিনাকে বলবে। কিছুদিন নাহয় এখানে থাকো। তারপর একটু এখানকার পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারলে আর একটু স্ট্যাবলিশ হয়ে গেলে অন্য কোথাও গিয়ে থেকো।’
‘আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ জানাবো আমি বুঝতে পারছি না ম্যাডাম। আপনি না থাকলে আমাদের যে কি হতো।’
‘তোমাকে বলেছি না আমাকে আন্টি বলবে৷ কাল তুমি আমার যা উপকার করলে। কিছু প্রয়োজনে আমায় চট্টগ্রামে যেতে হয়েছিল। ঠিক ছিল বিমানে আসব। কিন্তু ফ্লাইট ক্যান্সেল হওয়ায় পরে বাধ্য হয়ে ট্রেনে উঠেছিলাম। আসলে আজ সকালে আমার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং ছিল। আর এই ফাইলগুলো খুব ইম্পর্ট্যান্ট। আমার ছেলে বর্ণই এসব দেখে। এখন ও দেশের বাইরে আছে। কাল হয়তো ফিরে আসবে। আচ্ছা তোমরা যাও। কিছু মনে করোনা আমি আবার একটু বেশি কথা বলি। সবাই তো এইজন্য আমাকে বাচাল বলে। হা হা হা।’
আলো সুমনার কথা শুনে বুঝতে পারে তিনি খুব খোলা মনের মানুষ। আলোর খুব ভালো লাগে তাকে।
২৮.
‘আলো উঠে পড় ফজরের নামাজের সময় হয়েছে।’
জোনাকির ডাকে উঠে পড়ে আলো। দুই বোন মিলে একসাথে ফজরের নামাজ আদায় করে নেয়। জোনাকি আলোকে বলে,
‘আজ তোকে ভার্সিটি যেতে হবে। সুমনা আন্টি বলেছেন তোকে ভার্সিটিতে ভর্তি করে দেবে। শোন আলো তোকে কিন্তু ভালো করে পড়তে হবে। তোকে নিয়ে আমার অনেক আশা।’
‘আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব আপু।’
সময় আরো কিছুটা এগিয়ে যায়। সকাল ৯ টা বাজতেই সুমনা আলোকে ডেকে পাঠান। আলো আসলে তিনি বলেন,
‘তুমি ড্রাইভারের সাথে চলে যাও। তোমাকে একটি ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়েছি। ভার্সিটিটা আমার বান্ধবীর তাই বেশি অসুবিধা হয়নি। শোন তোমায় মন দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। তোমার আপুর অনেক আশা তোমাকে নিয়ে।’
‘আপনি অনেক ভালো।’
‘এমন কথা বলে আমায় আর লজ্জা দিওনা মেয়ে। ভালো করে পড়াশোনা করে আমার মানটা রক্ষা করো। নাহলে আমার বান্ধবী পরে আবার আমাকে ক্ষেপাবে যে কেমন মেয়েকে ভর্তি করালাম।’
জরিনা ঠেস মে’রে বলে,
‘তুমি যেখানে পড়তে যাচ্ছো সেখানে তোমার শিক্ষক কে জানো তো? যার ভয়ে সবাই কাপে।’
‘মেয়েটাকে ভয় দেখিও না তো জরিনা। আলো তুমি যাও। ড্রাইভারকে বলে দিয়েছি উনি তোমায় পৌছে দেবে। জোনাকি গাড়িতে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’
আলো বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আলো চলে যাওয়ার পরই জরিনা কাউকে ফোন লাগায়। অপরপাশ থেকে ফোনটা রিসিভ করতেই জরিনা বলে,
‘তোমাকে কাল বলেছিলাম না সুমনা ম্যাম দুটো মেয়েকে এনে এই বাড়িতে তুলেছে। সেই মেয়েটাকে আজ আবার ভার্সিটিতেও দিয়েছে। তুমি যেই ভার্সিটির টিচার সেখানেই। তুমি তো চেনোই সুমনা ম্যামকে উনি কত সহজ সরল। তুমি মেয়েটাকে ভালো করে পরখ করে দেখবে। আমি একেবারে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি ওর মধ্যে কোন ঘাপলা আছেই।’
‘আচ্ছা আমি দেখছি।’
ওপাশ থেকে ফোনটা কে’টে দেয়। জরিনা পৈ’শা’চিক হাসি দিয়ে বলে,
‘আমাকে অপমান করার ফল তুমি পাবে আলো।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
#বিবর্ণ_আলোকবর্ষ
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃদিশা মনি
আলো জোনাকির সাথে গাড়িতে করে তার ভার্সিটির উদ্দ্যেশ্যে যাচ্ছিল। নতুন পরিবেশে কিভাবে মানিয়ে নেবে সেই নিয়ে অনেক ভয় হচ্ছে আলোর। জোনাকি আলোকে বলে,
‘এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই৷ গিয়ে দেখ সব ঠিক হবে। কত বন্ধু হবে তোর।’
‘হয়তোবা।’
ড্রাইভার মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামায়। আলো জিজ্ঞেস করে,
‘কি হলো এখানে গাড়ি থামালেন কেন?’
‘গাড়ির মনে হয় কোন সমস্যা হয়েছে। গাড়িটা ঠিক করতে সময় লাগবে। আপনাদের তো তাড়া আছে। আমি দেখছি কি করা যায়।’
ড্রাইভার একটি রিক্সা ডেকে আনেন। জোনাকি এবং আলো সেই রিক্সাতে উঠে পড়ে।
রিক্সায় কিছুদূর যাওয়ার পর জ্যামে তাদের গাড়ি আটকে যায়৷ আলো খুব বিরক্ত হয় এতে। ভার্সিটির সময় হয়ে আসছিল। রিক্সাওয়ালা বলেন,
‘এখানে ভিড় তো মনে হয় সহজে থামবে না। আপনারা ফুটপাত ধরে ১০ মিনিট এগিয়ে গেলেই ভার্সিটিতে পৌছে যাবেন।’
আলো আর জোনাকি রিক্সা থেকে নেমে যায়। ফুটপাত ধরে হাটতে থাকে। রাস্তার অপর পাশে যাওয়ার সময় আচমকা একটি গাড়ি আলোদের সামনে চলে আসে। অল্পর জন্য তারা বেচে যায়। আলো রেগেমেগে বলে,
‘চোখে দেখতে পারেন না। রাস্তায় এরকম উন্মা’দের মতো গাড়ি চালাচ্ছিলেন কেন? আপু তুমি ঠিক আছো তো?’
আলোর কথা শুনে গাড়ি থেকে নেমে আসে একজন যুবক। তার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে। কালো ফ্রেমের চশমাটা খুলে যুবক বলে,
‘রাস্তা পারাপারের নিয়ম না জানলে আসো কেন? যতসব গেয়ো ভূত।’
কথাটা শুনে আলো খুব রেগে যায়। যুবকটির দিকে না তাকিয়েই বলে,
‘আপনাদের মতো মানুষ যারা কাউকে সম্মান দিতে পারে না তাদের আর কি বলব। আমরা যদি আজ ম’রে যেতাম তাও আপনার কিছু যায় আসতো না। আমরা কোন ঝামেলা চাইনা আপনি চলে যান।’
যুবকটি এক হাজার টাকার একটি নোট ছু’ড়ে দিয়ে চলে যায়। আলো রা’গে ফুসতে থাকে।
‘তুই লোকটাকে দেখেছিস আপু? তোর পায়ে ব্যাথা লেগেছে জন্য আমি একটু দেখছিলাম তাই লোকটার দিকে খেয়াল করি নি। যদি দেখতে পেতাম তাহলে চেহারাটা মনে রেখে দিতাম। কোনদিন দেখা হলে,,,’
‘আচ্ছা বাদ দে। এই শহরে এত মানুষের মধ্যে ওনাকে আর কিভাবে খুজে পাবি। চল এখন।’
‘এই হাজার টাকার নোটটা আমি নিচ্ছি। যদি কোনদিন ওনার দেখা পাই তাহলে মুখের উপর ছু’ড়ে মা’রব। কি ভেবেছেন উনি টাকা আছে জন্য যা খুশি করবে।’
২৯.
আলো এখন ভার্সিটিতে নিজের ক্লাসে এসে বসেছে। জোনাকি তাকে পৌছে দিয়েই চলে গেছে। আলো সেখানে বসে আপনমনে কিছু ভাবছিল। আচমকা একটা মেয়ে এসে তার পাশে বসে। আলোর নজর যায় মেয়েটার দিকে। মেয়েটার পোশাকে আধুনিকতার ছোয়া। জিনস আর টপস পড়ে এসেছে।
মেয়েটা আলোর দিকে একবার অদ্ভুতভাবে তাকায়। আলো সাধারণ একটা সালোয়ার কামিজ পড়েছে।
মেয়েটি আলোকে ভালো করে পরখ করে বলে,
‘তোমার নাম কি? তোমাকে নতুন মনে হচ্ছে। তোমার ড্রেসসেন্স এত ব্যাকডেটেড কেন?’
আলোর খুব খারাপ লাগে মেয়েটির কথা শুনে।
‘আমার নাম আলো। হ্যা আমি নতুন। আমার শালীন পোশাক পড়তেই ভালো লাগে।’
আলোর র’গচটা উত্তরটা মেয়েটার ঠিক হজম হয়না। মেয়েটা বিড়বিড় করে বলে,
‘আমি রুহি বনানী। এই ভার্সিটির সবথেকে স্টাইলিশ আর আধুনিক মেয়ে। আমার সাথে ভালোভাবে কথা বলবে।’
আলো রুহির কথা ইগনোর করে। রুহির খুব মানে লাগে। এই ভার্সিটির সবাই তাকে মাথায় তুলে রাখে। অথচ এই মেয়েটা তাকে পাত্তাই দিচ্ছেনা।
রুহি এটেনশন পাওয়ার জন্য বলে,
‘তুমি তো এখানে নতুন তাই জানো না। আমাদের এখানে ইংলিশ লেকচারার কে জানো? একটু পরই তার ক্লাস। স্যারকে দেখে ক্রাশ খেয়ে যেতে পারো। সব মেয়েরাই তাকে দেখে ক্রাশ হয়। তবে আমি সিউর উনি আমারই হবেন।’
আলো নিরুত্তর। আলোকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে রুহির এবার খুব রাগ হয়৷ সে আলোর কানের কাছে গিয়ে চি’ৎকার করে বলে,
‘তুমি কি বোবা? কথা বলতে পারো না।’
‘আমি কথা বলতে পারি। অযথা কথা বলি না রুহি বনানী।’
রুহি এবার মনে মনে বলে,
‘এই মেয়েকে তো আমি,,,,আমাকে এটিটিউড দেখাচ্ছে তো। আমি দেখব এই মেয়ের এত এটিটিউড কোথায় থাকে।’
ধীরে ধীরে ক্লাসে সবাই আসতে থাকে। সবার শেষে হাফাতে হাফাতে একটি মেয়ে আসে। মেয়েটিকে দেখে রুহি মুখ বাকিয়ে বলে,
‘জানো আলো এই মেয়েটার নাম লতা। মেয়েটাকে দেখো একবার কি কালো। মেয়েটার গা থেকেও ঘামের দূর্গন্ধ আসে। প্রতিদিন এরকম লেইট করে আসে।’
এবার আর আলো চুপ থাকেনা।
‘কারো সম্পর্কে এরকম কথা বলা ঠিক নয়। সব মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। মানুষের বাহ্যিক রূপ দেখে মন তার মন মানসিকতা দেখে বিচার করা উচিৎ।’
রুহি বনানী চুপ হয়ে যায়। প্রথম প্রথম মেয়েটার উপর রাগ হলেও এখন কিরকমটা লাগছে। মেয়েটাকে তার খুবই ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। রুহি ভাবে, এই মেয়েটার সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে। মেয়েটাকে আমার অন্যরকম মনে হচ্ছে।
একটু পরই ইংলিশ লেকচারার ক্লাসে প্রবেশ করেন। তাকে দেখেই সব মেয়েরা পুরো ফিদা হয়ে যায়। টকটকে ফর্সা, কালো ফ্রেমের চশমার মধ্য দিয়ে সুন্দর চোখদুটো দেখে যে কেউই ক্রাশ খাবে। ক্লাসে প্রবেশ করেই সবার সাথে কুশল বিনিময় করেন তিনি। তার নজর যায় আলোর দিকেও। আলোকে দেখেই তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
‘আরে এটা তো সেই মেয়ে যে রাস্তায় আমার গাড়ির সামনে চলে এসেছিল। আমাকে কতকিছু বলল। মেয়েটা এই ভার্সিটিতে পড়ে। আগে তো দেখিনি। জরিনা খালা যেই মেয়েটার কথা বলল এটা কি সেই মেয়ে নাকি।’
আলো তাকায় তার চোখের দিকে। চোখদুটোর মধ্যেই যেন হারিয়ে যায়। মুখ ফুটে আনমনে বলে দেয়,
‘বর্ষ,,,’
৩০.
জোনাকি আলোকে ভার্সিটিতে রেখে এসে এখন নিজেও চলে এসেছে তার কার্যালয়ে। চানাচুরের কোম্পানিতে জানাচ্ছি প্যাকেটজাত করার কাজ দেওয়া হয়েছে জোনাকি সহ আরো নতুন কিছু মেয়েদের।
জোনাকি নিজের কাজই করছিল তখন কোম্পানির ম্যানেজার এসে বলে,
‘আজ আমাদের কোম্পানির মালিক নিজে আসছেন পরিদর্শন করতে। এতদিন তিনি কিছু কাজে বিদেশে ছিলেন এখন দেশে ফিরেই সোজা চলে আসবেন। তোমাদের জানিয়ে দিলাম যাতে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারো। ওনার সাথে ভালোভাবে কথা বলবে।’
সবাই বলে,
‘জ্বি স্যার’
১০ মিনিটের মধ্যেই ম্যানেজার এসে বলেন,
‘সবাই এদিকে দেখো স্যার নিজে এসেছেন সবকিছু দেখতে। উনি হলেন বর্ণ মাহমুদ। আরাম চানাচুর কোম্পানির মালিক।’
জোনাকি বর্ণ নামটা শুনেই কালকের কথা ভাবে। মালি বলছিল যে বর্ণ নাকি ফুলের ব্যাপারে খুব সৌখিন। বর্ণর দিকে তাকাতেই আলো আরো চমকে যায়। এটা তো সেই লোকটা যার গাড়ির সামনে সকালে তারা পড়েছিল। লোকটিকে দেখে জোনাকির খুব ভয় হয়। না জানি জোনাকিকে দেখে কিরকম প্রতিক্রিয়া করবেন তিনি।
বর্ণ চারপাশটা ভালো ভাবে দেখে। সবার সাথে কত সুন্দর করে কথা বলছিল সে। জোনাকি হতবাক হয়ে সব দেখতে থাকে। তার বিশ্বাসই হচ্ছিল না এই লোকটাই সকালে তাদের সাথে এত রুঢ় ব্যবহার করেছিল।
বর্ণর এবার নজর যায় জোনাকির দিকে। জোনাকি ভয়ে আঁটোসাটো হয়ে যায়। বর্ণ জোনাকির কাছে এসে বলে,
‘আপনার কি কোন সমস্যা হয়েছে? আপনার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে কোন বিষয়ে ভয় পেয়ে আছেন।’
‘আসলে,,, সকালের ঘটনা,,’
জোনাকি কথা শেষ করতে পারে না তার আগেই ম্যানেজার বলে,
‘স্যার চলুন আপনাকে কিছু ফাইল চেক করতে হবে।’
বর্ণ জোনাকির হাতে পানির বোতল দিয়ে বলে,
‘এটা খেয়ে নিন। এখানে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কোন সমস্যা হলে নিঃসংকোচে বলতে পারেন।’
জোনাকি শুধু হা করে তাকিয়ে থাকে। বর্ণ কত সুন্দর কথা বলে! এই লোকটা কিভাবে সকালের ঐ রাগী লোকটা হতে পারে!
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨