বিবর্ণ আলোকবর্ষ পর্ব-১৭

0
254

#বিবর্ণ_আলোকবর্ষ
#পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃদিশা মনি

আলো ভার্সিটি থেকে সোজা বাড়ি চলে আসল। বাড়িতে আসামাত্রই তার সাথে দেখা হলো বর্ণর। আলো বর্ণকে দেখে ভাবে ইনি বোধহয় বর্ষ। বর্ষর উপর যেহেতু তার রাগ ছিল তাই কোন কথা না বলে চলে যায়। বর্ণ হতবাক হয় আলোর ব্যবহারে। বলতে থাকে,
‘এই মেয়েটা আমাকে দেখে এভাবে চলে গেল কেন? চোখ দেখেই মনে হচ্ছিল আমার উপর রেগে আছে। মেয়েটা মনে হয় সকালে যাকে দেখলাম তার বোন হবে। মেয়েটার সাথে কি তাহলে বর্ষর কোন ঝামেলা হয়েছে।তাই হয়তোবা আমাকে বর্ষ ভেবে এরকম করল।এই ছেলেটার জন্য সবসময় আমাকে ফাঁসতে হয়।’

৩৩.
আলো জোনাকিকে আজকের সব ঘটনা বলে। সব শুনে জোনাকি বলে,
‘জানিস সুমনা আন্টির দুটো যমজ ছেলে আছে বর্ণ মাহমুদ আর বর্ষ মাহমুদ। তুই ভার্সিটিতে চশমা পড়া যেই লোককে দেখেছিস আর আজ সকালে যার গাড়ির সামনে আমরা পড়েছিলাম সে হলো বর্ষ। আর এখন যিনি বাড়িতে আছেন উনি বর্ণ। বর্ণ ওনার ভাইয়ের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা অনেক ভালো মনের মানুষ।’

জোনাকির কথা শুনে আলো মাথায় হাত দেয়।
‘তাহলে আমি ভুল মানুষকে রাগ দেখালাম।’

জরিনা আচমকা তাদের রুমে চলে আসে। আলো জরিনাকে আসতে দেখে চমকে যায়। জরিনা এসে বলে,
‘সুমনা ম্যাম তোমাদের নিচে ডাকছে। চলে আসো।’

জোনাকি ও আলো একসাথে যায়। সুমনা তাদের দেখে মৃদু হাসে। তাদের হাতের দিকে কিছু শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘এখানে তোমাদের জন্য নতুন জামাকাপড় আছে। তোমরা পড়ে নিও।’

জোনাকি ইতস্তত হয়ে বলে,
‘এসবের আবার কি দরকার ছিল আন্টি। আপনি আমাদের জন্য যা করেছেন সেটাই অনেক।’

‘দেখো জোনাকি আমি কিছুই করিনি। এসব তো আমার ছেলে বর্ণ এনেছে। বলল তোমাদের জন্য ওর তরফ থেকে উপহার।’

বর্ণ দিয়েছে এই কথাটাই জোনাকির জন্য যথেষ্ট ছিল। তার মনে অন্যরকম এক অনুভূতি বয়ে যায়। লোকটার হাসি মুখ আর সুন্দর ব্যবহারের কথা মনে পড়ে।

‘কি হলো নাও।’

সুমনার কথায় জোনাকির ঘোড় কা’টে। হাত বাড়িয়ে ব্যাগগুলো নেয়। আলো কিছু বুঝতে পারে না তার বোনের হঠাৎ এরকম মত বদলের কারণ। সিড়িতে দাড়িয়ে বর্ণ সব দেখছিল। জোনাকিকে উপহারগুলো নিতে দেখে তার মুখের হাসি আরো প্রসস্ত হয়। মনে মনে বলে,
‘আমি নিজে পছন্দ করে কিনেছি। আমার পছন্দ কখনো খারাপ হতে পারে না।’

কথাটা ভেবে জোনাকির দিকে তাকায় বর্ণ। মেয়েটাকে প্রথমবার দেখেই তার জন্য অনুভূতি তৈরি হয়েছে বর্ণর মনে। এটা ঠিক জোনাকি বেশি সুন্দরী নয়। দেখতে ফর্সা হলেও তার মুখের গঠন তেমন সুন্দর নয়। তবুও এই মেয়েটার প্রতি বর্ণর ভালো লাগার কারণ জোনাকির সরলতা। বর্ণ খুব করে চায় জোনাকির মনে নিজের জন্য স্থান তৈরি করতে।

জোনাকির চোখ যায় এবার বর্ণর দিকে। বর্ণকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জোনাকির ভীষণ লজ্জা লাগে। জোনাকি দ্রুত পায়ে হেটে গেস্ট হাউজে চলে যায়। জোনাকির এরকম ব্যবহারে বর্ণর হাসি পায়।

আলোরও চোখ যায় বর্ণর দিকে। বর্ণ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে আলোকে প্রশ্ন করে,
‘তোমার আপু এভাবে চলে গেল কেন? ড্রেসগুলো পছন্দ হয়নি?’

‘হয়েছে তো। আপু কেন গেল সেটা আমিও জানি না। যাইহোক সকালের ঘটনার জন্য দুঃখিত। আসলে আমি আপনাকে ভুল ভেবেছিলাম,,,,’

‘আমি জানি তো নিশ্চয়ই তুমি বর্ষর সাথে আমায় গুলিয়ে ফেলেছিলে। এটা নতুন কিছু নয়। আমরা তো যমজ ভাই ছোটবেলা থেকেই আমাদের কতজন গুলিয়ে ফেলে। কত সমস্যায় পড়তে হয়েছে ওর জন্য আমায়।’

বর্ণর কথা শুনে আলো বুঝতে পারে সেও সুমনার মতো ভালো মনের মানুষ।

‘তুই এই কথা বলছিস বর্ণ হাউ ফানি! তুই মনে করে কতবার যে স্কুলে আমায় মা’র খেতে হয়েছে সেটা ভুলে গেছিস। পড়াশোনায় কত ফাকিবাজ ছিলি তুই।’

কন্ঠস্বরটা কানে আসতেই আলোর চোখ যায় বর্ষর দিকে। আলো বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে ফেলে। আলো তড়িঘড়ি করে সেখান থেকে চলে যেতে নেয়। তখনই বর্ষ বলে,
‘এই মেয়ে দাড়াও।’

আলো বিরক্ত হয়ে থেমে যায়। সুমনা বলে,
‘কি হয়েছে রে বর্ষ। তুই মেয়েটাকে থামালি কেন?’

‘মম তুমি এই মেয়েটাকে আমার ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়েছ কেন? ওর কি যোগ্যতা আছে আমার ভার্সিটিতে পড়ার? একদিন আমি বাড়িতে ছিলাম না আর তার মধ্যেই এতকিছু হয়ে গেল।’

‘তোকে কতবার বলেছি না আমাকে মম বলবি না। সুন্দর করে আম্মু ডাকতে পারিস না। ভার্সিটি তোর নয় আমার বান্ধবীর। আর আলোর যোগ্যতা আছে কিনা সেটা তুই সময় হলে জানতে পারবি।’

বর্ষ আলোর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়। আলোর তো খুব রাগ হচ্ছিল। নিজেকে সামলানোর জন্য সে গেস্টরুমের দিকে হাটা দেয়।

৩৪.
আলো একটু বাগানের দিকে এসেছিল৷ উদ্দ্যেশ্য পড়ন্ত বিকেলে বাগানে হাটাহাটি করা। আচমকা নিজের পিছনে কারো উপস্থিতি অনুভব করে আলো। ভয়ে ভয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে বর্ষকে দেখে আলো ভড়কে যায়।

এই লোকটাকে দেখলেই আলোর মাথায় রাগ উঠে যায়। তাও যে এই লোকটা আলোর পিছনেই কেন বারবার চলে আসে আলোর কাছে সেটা বোধগম্য হয় না।

আলো চলে যেতে চাচ্ছিল তখন বর্ষ জিজ্ঞেস করে,
‘কি উদ্দ্যেশ্য তোমাদের? কেন এসেছ এই বাড়িতে?’

আলো দাড়াল। বর্ষর দিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধ হেসে বলল,
‘বাচার তাগিদের ঢাকায় পা রেখেছিলাম। আল্লাহর রহমতে আপনার মায়ের মতো এত ভালো মানুষের সাথে দেখা হয়ে গেল। তাই এই শহরে মাথা গোজার একটা ঠাই পেলাম।’

‘এসব নাটক আমার মা ভাইকে গিয়ে দেখাও আমায় দেখাতে আসবে না। তোমাদের মতো মেয়েদের আমার চেনা আছে। নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ পাঠিয়েছে আমাদের ক্ষ’তি করার জন্য।’

আলো খুব অপমানিত বোধ করে এমন কথায়।

‘আমাদের কোন খারাপ উদ্দ্যেশ্য নেই স্যার। আপনি চাইলে আমাদের সন্দেহ করতেই পারেন। জীবনে তো ভালোর চেয়ে খারাপ পরিস্থিতেই বেশি পড়েছি। এখন আপনি এই বাড়ি থেকে বের করে দিন। আমার জীবনে বিবর্ণ আলোকবর্ষ পারি দেওয়া তো এখনো বাকি আছে।’

চোখের জল মুছতে মুছতে চলে যায় আলো। বর্ষর সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।

‘আমি জানি সব এই মেয়েটার নাটক। করো করো আরো নাটক করো মেয়ে। তোমাদের এই নাটক আর বেশিদিন টিকবে না। খুব শীঘ্রই তোমাদের আসল উদ্দ্যেশ্য আমি খুঁজে বের করব।’

জরিনা আলোকে ক্রন্দনরত অবস্থায় বাড়িতে আসতে দেখে। বুঝে যায় নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। জরিনার স্বভাব হলো তিলকে তাল করা তাই সুমনাকে গিয়ে বলতে থাকে,
‘ম্যাম আপনি জানেন ঐ আলো মেয়েটা না একটু আগে কাদতে কাদতে বাড়িতে আসল। আমার আগেই মনে হয়েছিল ওদের মধ্যে কোন ঘাপলা আছে। সিরিয়ালে দেখেছিলাম এরকম মানুষের বাড়িতে আশ্রিত হয়ে থেকে পরে বাড়ির বউ হয়ে যায়। কি যেন সিরিয়ালটার নাম হ্যা ‘কে আপন কে পর’ আমার মনে হচ্ছে এই আলো মেয়েটাও সেই মতলবে আছে।’

‘তুমি আর বাজে কথা বলো না জরিনা। কোথায় মেয়েটা কি কারণে কাদছে সেটা খোজ নেবে তা না। আমি দেখছি মেয়েটার কি হলো।’

জরিনা মুখ বাকিয়ে বলে,
‘ঢং যত। একদিন এই মেয়ের কারণেই আপনাকে ভুগতে হবে মিলিয়ে নেবেন আমার কথা।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨