#আষাঢ়ে_শ্রাবণের_বর্ষণ
#মাইশাতুল_মিহির
[পর্ব-৩৪]
গালে দুই হাত ঠেকিয়ে ঠোঁট উলটে মনমরা ভাবে বসে আছে দীবা। সামনে তার বিফ স্টেকের চার চারটে প্লেট। সব গুলো নাকি তাকে একা শেষ করতে হবে। কিন্তু এটা আদৌ তার একার পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু মহাশয়ের কঠোর নির্দেশ। হঠাৎ এই বিফ স্টেকের উপর ক্ষেপলো কেন লোকটা? আসলেই খাবারের উপর ক্ষেপেছে নাকি দীবার উপর? তাই এই খাবার দিয়ে তাকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করছে? পরিবেশটা নির্জন। রাত হওয়ার কারণে আশেপাশে মানুষজনের আনাগোনা একদম কম। নিরিবিলি, নির্জন একটা রেস্টুরেন্টের এক পাশে টেবিলে বসে আছে দুজন। আবরার প্রথমেই পর্দা টেনে দিয়েছে প্রাইভেসির জন্য। যদিও তার মুখে এখনো মাক্স পরা। দীবা এখানে আসার পর বুঝেছিল ডিনার ডেইট। কিন্তু তার ভাবনার বিপরীত হলো। কোনো ব্যাপারে দীবার উপর আবরার রেগে আছে প্রচুর। মলিন চোখ দুটো তুলে সামনে তাকাতেই আবরারের ভাবলেশহীন চেহারা নজরে আসলো তার। সে তাকাতেই আবরার আবারো চোখের ইশারায় খাওয়ার জন্য তাগিদ দিলো। হতাশ হলো দীবা। কাদুকাদু চেহারায় মাথা এপাশ থেকে ওপাশ নাড়িয়ে ‘ না ‘ বুঝালো। তাকে বারণ করতে দেখে আবরার দাঁতে দাঁত চিবিয়ে কিছুটা রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘কেন খাবে না? বিফ স্টেক তো তোমার অনেক প্রিয়। ডিনারে, লাঞ্চে ভালোই খেতে পারো। তাহলে এখন খাবে না কেন? এখানের সব গুলো তোমাকে একা শেষ করতে হবে। দেরি করলে চারটা প্লেটের বদলে পাঁচটা হবে।’
দীবার অবস্থা এবার কান্না করে দেবার মতো। রাগে, ক্ষোভে, অতি দুঃখে মৃদু আর্তনাদ করে বললো, ‘মানে কি ভাই? আমি কি এমন দোষ করেছি যে এভাবে শাস্তি দিচ্ছেন?’
আবরার অবাক হওয়ার ভান ধরে দীবার কথার প্রত্যুত্তর করলো, ‘শাস্তি দিচ্ছি কোথায়? হাসবেন্ড হয়ে কি তোমাকে খাবারের ট্রিট দিতে পারবো না? আশ্চর্য তো!’
দীবা চোখ ছোট ছোট করে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে চেয়ে বলল, ‘ট্রিট দিচ্ছিলেন? তাও এভাবে?’
আবরার নিশ্চুপ রইলো। নির্বিকার ভাবে দীবার দিকে প্রথমের ন্যায় তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রইলো। দীবা একটা প্লেটে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। তারপর বুকে দুই হাত গুঁজে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বলে উঠলো, ‘আমি খেতে পারবো না।’
নিরবে চোয়াল শক্ত করলো আবরার, ‘আমি বিফ স্টিক দিলে খাবে না অথচ রাজ দিলে দিব্যি পেট ভরে খেতে পারো। আবার কলেজ শেষে বাড়ি না ফিরে রাজের সাথেই রেস্টুরেন্টে বসে পাস্তা খেতে পারো। তাহলে এখন কেন পারবে না?’
স্তব্ধ হয়ে গেলো দীবা। চিবুক তার আপনা-আপনি ঝুলে গেছে। বিস্মিত চোখেমুখে তাকিয়ে রইলো আবরারের রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখটার দিকে। উনি জানলো কিভাবে? এই কারণেই কি এতো রেগে আছে?
‘আপনি জানেন কিভাবে?’
‘কেন আমার জানার কথা ছিলো না? লুকিয়ে সব হজম করতে চেয়েছিলে?’
‘আমি তো স্যারকে নোট দেখাতে গিয়েছিলাম। আর..’
দীবা কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই আবরার কণ্ঠস্বর দ্বিগুণ করে ধমকে উঠলো, ‘নোট দেখাতে গিয়ে খাবার খাচ্ছিলে তুমি? বোকা পেয়েছো আমাকে?’
মৃদু কেঁপে উঠলো দীবা। ভয়ার্ত চোখে তাকালো আবরারের দিকে। ধমক শুনে কান্না পাচ্ছে ভীষণ। আবরার তাকে সন্দেহ করছে? রাজ শুধু তার টিচার। এর বাহিরে রাজের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। শুধুমাত্র এক সাথে দেখে এভাবে সন্দেহ করলো? ভাবতেই ঠোঁট ভেঙ্গে আসছে তার। চোখ লাল হয়ে গেলো আপনমনে। দীবার এমতাবস্থা দেখে নিভলো আবরার। চোখ বন্ধ করে কয়েকবার নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো।শুকিয়ে যাওয়া উষ্ঠধয়ে জিভ বুলিয়ে বললো, ‘স্টপ ক্রায়িং দীবা। কান্না করার মতো কিছু বলি নি আমি।’
কান্না থামালো দীবা। মুখটা কালো করে ফেললো একদম। বিবর্ণ মুখে কাচুমুচু অবস্থায় বুকে দুই হাত গুঁজে অন্য দিকে তাকালো। মনে মনে বিরক্ত হয়ে কয়েকটা জঘন্য গালি শুনিয়ে দিলো আবরারকে। হচ্ছে টা কি ভাই? ধমক দিয়েও বলছে কান্না করার মতো কিছু করে নি। কান্না করবো না তো কি নাচবো?
‘তুমি জানো ওই ছেলের সাথে তোমার বিয়ের কথা হয়েছে। তবুও কিভাবে তুমি ওই লোজার টার সাথে মিশো?’
অবাক চোখেমুখে আবরারের দিকে তাকালো দীবা। কণ্ঠস্বরে বিস্ময় ফুটিয়ে বলে উঠলো, ‘পাগল আপনি? রোশ আঙ্কেল কখন আমার বিয়ের কথা বললো? এই পর্যন্ত কোনো শ্বশুরকে দেখেছেন ছেলের বউয়ের বিয়ের আলাপ করতে? আজগুবিকথা কই থেকে পান আপনি?’
আবরার প্রত্যুত্তরে কিছু বলতে যাবে তার আগেই দীবা আবারো বলে উঠলো, ‘আর শেষে কথাটা কি বললেন? স্যারের সাথে মিশতে যাবো কেন? ওনি আমাকে নোট বানাতে বলেছিলেন। ছুটির পর আমি নোট বানিয়ে ওনাকে দেখাতে গিয়েছিলাম কিন্তু তখন স্যার খেতে যাচ্ছিলেন। তাই সাথে আমাকেও..”
দীবার কথা সম্পূর্ণ হতে দেয় নি আবরার। তার আগেই বিদ্রোপ মাখা কন্ঠে তীক্ষ্ণ চোখে বলে উঠলো, ‘বাহ্, এমন টিচার পাওয়া সত্যি বিরল। স্টুডেন্টের ক্রিয়েট করা নোট দেখার জন্য রেস্টুরেন্টে যেতে হয়। কলেজে বুঝি লাইব্রেরি, অফিস ছিলো না? স্টুডেন্টের সাথে পারসোনালি টাইম স্পেন্ড করা কোন পর্যায়ে যায় দীবা?’
আবরারকে শেষের কথাটা দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলতে দেখে ভড়কে গেলো দীবা। নিজের ভুলটা ঠিক কোথায় তা অনায়াসে ধরে ফেললো। অপরাধীদের মতো করে তাকালো দীবা। ভুল স্বীকার করে শুধাল, ‘আমি কি জানতাম নাকি এমন কিছু হবে। স্যার বারবার বলেছিলো তাই বারণ করতে পারি নি। আচ্ছা সরি। আর এমন হবে না। প্লিজ রাগ করবেন না।’
দীবার সহজসরল স্বীকারুক্তি দেখে আরেকটু সুযোগ নিলো আবরার। এই উছিলায় কঠোর থ্রে:ট দিয়ে বসলো, ‘ফারদার রাজকে তোমার আশেপাশে দেখেছি কিংবা তোমাকে রাজের সাথে কথা বলতে দেখেছি তাহলে কিন্তু খুব বেশি খারাপ হবে দীবা। আমি ঠিক কি কি করতে পারি সেটা তোমার ধারণার বাহিরে।’
জানার আগ্রহের কারণে সরল মনে প্রশ্ন করে বসলো দীবা, ‘কি করবেন তাহলে?’
মারাক্তক ক্রোধান্তিত হলো আবরার, ‘থা:প্রা:তে থা:প্রা:তে চান্দের দেশে পাঠাবো বে’য়া’দব মেয়ে। চুপচাপ খাওয়া শেষ করো।’
গভীর অপমানে মুখ কালো করে ফেললো দীবা। অপ্রসন্ন চেহারায় একটা প্লেট টেনে সামনে আনলো। তারপর গালে এক হাত রেখে অপর হাতে কাটা চামচ দিয়ে প্লেটে টুংটাং শব্দ করতে লাগলো।
______________________
নিস্তব্ধ নিশিত। চারপাশ নিঝুম অন্ধকার। অর্ধগোলকাকৃতির চাঁদটা সুবিশাল অম্বরে ভাস্যমান। আশেপাশের ঝোপঝাড় থেকে ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের কর্কষ ডাক কানে আসছে। সে দিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই রিমির। সে আপনমনে অভ্রের বাম হাতের বাহু জড়িয়ে ধরে সুইমিংপুলে পা ডুবিয়ে বসে আছে। প্রায় আধঘণ্টা যাবত চুপচাপ একই জায়গায় একই ভঙ্গিতে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেলো অভ্র। কোমড় ব্যাথা হয়ে গেছে অলরেডি। কতোবার বলেছে ভিতরে চলো কিন্তু রিমি তার কথা শুনছেই না। সইতে পারলো না আর। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলেই উঠলো, ‘এবার অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে না রিমি?’
রিমি অভ্রের কথার সঙ্গে সঙ্গে মাথা উপর নিচ দুলালো। অত্যন্ত সিরিয়াস হয়ে বললো, ‘আসলেই অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে। আশেপাশের বান্ধুবি রা বিয়ে করে বাচ্চা-কাচ্চা স্কুলে ভর্তি করাচ্ছে। আর আমি এতো দিনে একটা জোরপূর্বক বয়ফ্রেন্ড যোগাড় করলাম। জীবন যুদ্ধে কে এগিয়ে গেলো তাহলে? বান্ধুবি নাকি আমি?’
রিমির এমন প্রত্যুত্তর শুনে তাজ্জব বনে গেলো অভ্র। হতভম্ব হয়ে রিমির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো। রিমি প্রথমের ন্যায় ভাবলেশহীন ভাবে পা দুটো পানিতে নাড়াচ্ছে। অভ্র নিজের হাত রিমির থেকে ছাড়িয়ে নিলো। মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটায় রাগান্বিত হলো রিমি। দাঁতে দাঁতে কিড়মিড় করে তাকালো অভ্রের দিকে। অভ্র মারাক্তক লেভেলের বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো, ‘আশ্চর্য মেয়ে তুমি। আমি বাড়ির ভিতরে যাবার কথা বলেছি। আমাকে এখানে বসিয়ে রেখেছো কতোক্ষণ ধরে? আমি তো তোমার মতো এতো আজাইরা ঘুরাঘুরি করি না। আমার অনেক কাজ জমে আছে। তুমি আসলে আসো নাহলে আমি রুমে যাচ্ছি।’
অভ্র উঠে দাঁড়াতে নিলেই রিমি তার হাত ধরে আটকে বললো, ‘আশ্চর্য লোক তো তুমি। গার্লফ্রেন্ডের থেকে কাজ বেশি বড় হয়ে গেছে তোমার?’
অভ্র ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে প্রশ্ন করলো, ‘কে বলেছে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড?’
রিমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। বাহিরের এক দমকা হাওয়ার কারণে রিমির উন্মুক্ত চুল গুলো উড়ে মুখের সামনে এসে পরলো। রিমি চুল গুলো মুখ থেকে সরিয়ে কোমড়ে দুই হাত রেখে কটমট করে বললো, ‘অবশ্যই আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড। কেন বিশ্বাস হয় না?’
অভ্র পকেটে দুই হাত গুঁজে সটান হয়ে দাঁড়ালো। তার এমন ভাব দেখে রিমির শরিরে রাগ তিরতির করে বেড়ে গেলো। রাগে গিজগিজ করতে করতে বলে উঠলো, ‘বউ পাবি না বলে দিলাম।’
গটগট পায়ে রাগে বিড়বিড় করতে করতে অভ্রকে হাজার টা গালি দিতে দিতে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো রিমি। সে যেতেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো অভ্র। মেয়েটা বড্ড অবুঝ। একদম ছেলেমানুষি। আর এই বাচ্চা মেয়েটাকেই তার ভালো লাগে।
____________________
রাতের ঘড়ির কাটা প্রায় সাড়ে এগারো টার ঘরে। শান্তি নিবাসের সবাই যার যার রুমে আপন কাজে ব্যস্ত। বোতলে পানি না থাকায় নিচে নামলো রিমি। রান্নাঘরে গিয়ে বোতল ভর্তি পানি নিলো। পরনে ঢিলেঢালা সাদা টিশার্ট। অতিরিক্ত ঢিলে হওয়ায় টিশার্ট টা টেনে কোমড়ের কাছে গিট্টু দিলো একটা। বোতল নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে সিঁড়ির কাছাকাছি যেতেই সদর দরজা খোলার শব্দ কানে আসলো। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো অনেক রাত। এই সময় কে আসলো? পিছু ফিরে তাকাতেই দীবার মনমরা চেহারা নজরে আসলো তার। দীবার পাশে আবরার পকেটে এক হাত গুঁজে নির্বিকার ভাবে মোবাইল টিপে হাঁটছে। ভ্রুঁ জোড়া আপনাআপনি কুঁচকে এলো রিমির। রাইমা আপুর কাছে জানতে পেরেছে আবরার দীবা এক সাথে আছে। তাহলে দুজন একা সময় কাটানোর পরেও দীবার মন খারাপ কেন? হলো টা কি? প্রাণপ্রিয় বান্ধুবির এমতাবস্থা দেখে মনটা আকুপাকু করে উঠলো রিমির। কারণ জানার জন্য দ্রুত পা চালিয়ে দীবার কাছে এসে এক হাতের বাহু ঝাঁকিয়ে বলে উঠলো, ‘কিরে? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে?’
প্রত্যুত্তর করলো না দীবা। মনমরা করে দাঁড়িয়ে রইলো। আবরার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে দীবার উদ্দেশ্যে বললো, ‘ঘুমানোর আগে আমার রুমে এসো।’
চলে গেলো আবরার। রিমি আবারো জানতে চাইলে দীবা রাগে দুঃখে বলে উঠলো, ‘তোর ভাই আস্তো একটা শ’য়’তা’ন।’
রিমি ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে বললো, ‘কেন তোর সাথে আবার কি শ’য়’তা’নি করলো?’
দীবা কাদুকাদু চেহারায় তাকালো রিমির দিকে। রুমে যেতে যেতে এক এক করে সব ঘটনা খুলে বললো। রিমি বেচারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছে সব শুনে। হাসবে নাকি কাঁদবে ভেবে সে নিজেও কানফিউজড।
______________________
বিছানার মাঝখানে বসে বিস্কুট খাচ্ছে আর দীবার কাজকারবার দেখছে রিমি। ঠিক কি বলা উচিত কিছুই বুঝে আসছে না তার। তাই নিরব থেকে শুধু কর্ণপাত করছে। তবে নুরাকেও বড্ড মিস করছে রিমি। এই মুহূর্তে নুরা উপস্থিত থাকলে দীবাকে আচ্ছা মতো পচানো যেতো। কিন্তু আফসোস নুরা ঘুমাচ্ছে আর সে এখানে একা। যদি ভুলেও উলটা-পালটা কিছু বলে ফেলে তাকে তাকে কেল্লাফতে করে ফেলবে এই মেয়ে। তাই নিরব থাকা শ্রেয়। দীবার থেকে সম্পূর্ণ ঘটনা শুনার অনেকক্ষণ পর মুখ খুললো রিমি, ‘ভাইয়ার রাগ করাটা স্বাভাবিক।’
আলমারি তে টিশার্ট খুঁজছিলো দীবা। রিমির কথা কর্ণপাত হতেই অবাক চোখে পিছু ফিরে তাকালো। এক হাত কোমড়ে রেখে আরেক হাত উঠিয়ে বলে উঠলো, ‘তাই বলে এতো গুলো খাবার আমাকে খাওয়াবে? অন্য ভাবে শাস্তি দিতে পারতো না? আর আমি কি এমন ভুল করেছি শুনি?’
‘তুমি জামাই থাকার পরেও স্যারের সাথে লাঞ্চ করেছো, বিফ স্টিক খেয়েছো এটা ভুল নয় কি?’
দীবা হতাশ হয়ে বললো, ‘আশ্চর্য রিমি। তুইও এভাবে বলছিস?’
রিমি বিস্কুট রেখে বিছানা থেকে নামলো। বোতলের ক্যাপ খুলে ঢকঢক করে পানি খেয়ে দীবার রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে যেতে শুধাল, ‘জেলাস জেলাস। আরব ভাই জেলাস বুঝছোস। হ্যাপি থাক এই ভেবে যে ভাই তোকে ভালোবাসে।’
রিমি কে বেড়িয়ে যেতে দেখে চেঁচিয়ে উঠলো দীবা, ‘রিমোটের বাচ্চা বিস্কুটের প্যাকেট কে নিয়ে যাবে? ওই ফকিন্নি।’
দীবার ডাকে পাত্তা দিলো না রিমি। গটগট পায়ে বেড়িয়ে গেলো দীবার রুম থেকে। বিরক্তিতে ফুঁশ করে একটা নিশ্বাস ছুড়লো দীবা। টিশার্ট হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে। বেশ কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এসে বিছানায় তাকাতেই বিস্মিত হয়ে গেলো দীবা। কারণ বিছানার উপর আয়েশী ভঙ্গিতে বসে আছে আবরার। তাকে এখানে বসে থাকতে দেখে হতভম্ব হয়ে দীবা প্রশ্ন করে উঠল,’এখানে কি আপনার?’
আবরার তীক্ষ্ণ চোখের দৃষ্টিতে দীবার দিকে তাকিয়ে আদেশ করলো, ‘লাইট অফ করে বিছানায় আসো। ঘুম পেয়েছে আমার।’
দীবা হাতে থাকা ভিজে টাওয়াল চেয়ারে মেলে দিতে দিতে বললো, ‘ঘুম পেলে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমান। আমার অনেক কাজ আছে। প্রচুর লিখতে হবে।’
আবরার চোয়াল শক্ত করে রুক্ষ কন্ঠে বলে উঠলো, ‘তুমি কি আবারো রাজের জন্য নোট করছো?’
দীবা বিরক্ত হলো বেশ। চেহারায় অপ্রসন্নতা ফুটিয়ে বললো, ‘আশ্চর্য ভাই আপনি। আমার নিজের পড়াশোনা নেই নাকি? কাল কলেজে গিয়ে স্যার দের হোমওয়ার্ক কি আপনি দেখাবেন?’
প্রত্যুত্তর করলো না আবরার। বিছানার হেডসাইডে হেলান দিয়ে বসে চুপচাপ দীবাকে দেখতে লাগলো। দীবা চেয়ার টেনে বসে খাতা বের করে লিখা শুরু করলো। মিনিটের কাটা চলতে লাগলো। ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে গেলো। অনেক ঘুম পেলো দীবার। চোখ দুটো ভার হয়ে এসেছে তার। লাল হয়ে আসা চোখ দুটো খোলে রাখার মতো শক্তি পাচ্ছে না। তবুও খাতায় কলম চালাচ্ছে।
বিছানা থেকে নেমে দীবার কাছে আসলো আবরার। পুরোটা সময় চুপচাপ দীবাকে দেখেছে সে। দীবার ঘুমুঘুমু চেহারা দেখে মুচকি হেসেছে। ঠোঁটে মৃদু হাসি রেখে দীবাকে কোলে তুলে নিলো আবরার। প্রচুর ঘুম পাওয়ার কারণে বাধা দিলো না দীবা। উলটো আবরারের গলা জড়িয়ে ধরলো ঘাড়ের কাছে মুখ এনে চোখ বন্ধ করলো। তার কান্ডে মৃদু হাসলো আবরার। বিছানায় ভালোভাবে শুইয়ে দিয়ে লাইট অফ করে দিলো। নিজেও বিছানায় এসে দীবাকে আগলে ধরে গভীর ঘুমে মশগুল হলো।
চলমান…