অজানা অনুভূতি পর্ব-৪০+৪১+৪২+৪৩

0
259

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৪০
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

আদ্রিতা চিল্লাতে নিবে ঠিক সেই সময় লোকটা দৌঁড়ে এসে আদ্রিতার মুখে চাপ ধরলো, ঠেলে আদ্রিতাকে দেয়ালে ঘেঁষে দাড় করালো। এক হাত দিয়ে আদ্রিতার মুখ ধরে রেখেছে। অন্য হাত দিয়ে আদ্রিতার কোমড় জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আদ্রিতার চুল হতে টপটপ করে পানি পড়ছে। আদ্রিতাকে খুব আকর্ষণীয় লাগছে। লোকটি আস্তে আস্তে আদ্রিতার দিকে এগোচ্ছে। আদ্রিতার শ্বাস যেনো আটকে আসছে। এতো কাছে আজ পর্যন্ত কেউ আসে নি। তার উপর আদ্রিতা শুধু তাও*য়াল পড়া। লোকটির চেহারা বোঝা যাচ্ছে না। আদ্রিতার কাছে এই স্পর্শটি খুব চেনা লাগছে। আর এই অবস্থা ঠিক একইভাবে দাঁড়ানো একই রকম আদ্রিতার মনে হচ্ছে আদ্রিতার কাছে এ বিষয় গুলো আগে ও ঘটেছে। আদ্রিতা কোনোভাবে মনে করতে পারছে না। আদোও বিষয়গুলো কি তার সাথে হয়েছিলো? কেনো তার পরিচিত লাগছে। হঠাৎ আদ্রিতার প্রচুর মাথা ব্যথা শুরু করলো। আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ে যেতে নিলে সামনে থাকা লোকটি আঁকড়ে ধরলো। লোকটা হাসলো আদ্রিতাকে কোলে তুলে নিলো। বিছানায় শুয়ে দিলো। আদ্রিতার কপালে তার ঠোঁট স্পর্শ করলো। আদ্রিতার চুল গুলো আলতো করে মুছে দিলো। আদ্রিতার তাও*য়াল এর উপর দিয়েই আদ্রিতার সম্পূর্ণ শরীর একবার মুছিয়ে দিলো। লোকটি খাটে বসলো। টেনে আদ্রিতাকে উঠেয়ে তার কোলে বসিয়ে দিলো। তাও*য়াল এর উপর দিয়ে আদ্রিতার কোমল পে*টে স্পর্শ করলো। আদ্রিতার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর আদ্রিতাকে আবার শুয়ে দিলো। আদ্রিতার গায়ে কম্বল টেনে দিলো। তারপর বারান্দা দিয়ে নিচে নেমে গেলো। এদিকে আদ্রিতা জ্ঞানহীন অবস্থায় বিছানায় পড়ে রইলো।

*****

সাজ্জাদের বাসায় যাওয়ার জন্য সবাই রেডি।

আদ্রিতা কই রে?( আদ্রিতার মা)

আমি দেখছি ( মুন)

হ্যাঁ গিয়ে দেখ মেয়েটা গোসলে এতো সময় নেই আমার মনে হয় এখনো ও গোসলই করছে ( আদ্রিতার মা)

তুমি চিন্তা করো না আমি গিয়ে দেখছি ( মুন)

কথাটি বলে মুন উপরে চলে গেলো।

চিন্তা কি আর সাধে হয়। এইযে সবাই রেডি আর এই মেয়েটা এখন ও রেডি হলো না। ( আদ্রিতার মা)

থাক আজকের দিনে মেয়েটাকে বকাবকি করার কোনো দরকার নেই। ( আদ্রিতার খালামনি)

আদ্রিতার মা ও আর কিছু বললো না।

মুন আদ্রিতার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দরজায় অনবরত ধাক্কাচ্ছে

এই আদ্রিতা দরজা খুল ( মুন)

কিছুক্ষণ পর আদ্রিতার জ্ঞান ফিরে আসে। নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে দ্রুত আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো বিছানায় শুয়ে আছে। আর বাইরে মুন দরজা ধাক্কাচ্ছে। কোনোমতে বলে উঠলো,

আপু মাএ গোসল করে এসেছি একটু দাঁড়াও আসছি আমি ( আদ্রিতা)

আচ্ছা তাড়াতাড়ি কর নিচে সবাই অপেক্ষা করছে ( মুন)

আচ্ছা আপু ( আদ্রিতা)

মুন নিচে নেমে গেলো। আদ্রিতা তখনের বিষয় গুলো মনে করছে শুধু তাও*য়াল পরা অবস্থায় একটি লোক তাকে দেখলো কথাটি ভেবেই লজ্জায় কুঁকড়ে উঠছে আদ্রিতা। বিছানার একটি পাশে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে গেলো। খুব সুন্দর এক সেট ড্রেস রাখা আছে হলুদে পড়ার জন্য। আদ্রিতা ড্রেসটা হাতে নিলো সাথে সাথে একটি চিরকুট নিচে পড়ে গেলো। আদ্রিতা চিরকুটটি তুলে দেখলো সেখানে লেখা রয়েছে,

মায়াপরী, এই ড্রেসে তোমাকে একদম হলদে পাখি লাগবে।

মায়াপরী লেখাটা দেখে আদ্রিতা চমকে উঠলো। মায়াপরী কথাটি বলে ত তাকে মেসেজ দিয়েছিলো৷ আদ্রিতা দ্রুত তার ফোসটি হাতে নিলো। আদ্রিতা ঠিকই ভেবেছিলো। লোকটি আবার মেসেজ করেছে,

মায়াপরী তোমাকে আজকে কি যে লাগছিলো বলে বোঝাতে পারবো না। ইচ্ছে হচ্ছিলো টুপ করে গিলে ফেলি। যেই ড্রেসটি দিয়েছি সেটি তুমি হলুদে পড়বে। আর যদি না পড়েছো তাহলে কিন্তু আমি নিজের হাতে তোমাকে ড্রেস পড়িয়ে দিবো। আর এমনি ও তুমি আজকে যেই অবস্থায় আমার সামনে ছিলে চাইলেই তোমাকে আমি ড্রেস পড়িয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু বিয়ের আগে চাচ্ছি না কিছু করতে। তোমাকে এই অবস্থায় দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করা যে কতো কঠিন তা তোমাকে কিভাবে যে বোঝাবো। যায় হোক তাড়াতাড়ি ড্রেসটি পড়ে নেও তোমাকে দেখার অপেক্ষায় আছি আমি।

মেসেজটি পড়ে আদ্রিতার মাথা কাজ করছে না। কে এইভাবে ড্রেস দিয়ে গেলো? আর আমি হলুদের অনুষ্ঠানে যাবো সেটাই বা জানলো কি করে,?আদ্রিতা
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা গুলো ভাবছিল।একটু আগে কথা মনে করতে লজ্জায় কুঁকড়ে উঠলো। আচ্ছা সাজ্জাদ ছিলো কি? কারণ স্পর্শটি অনেক চেনা লাগছিলো। আদ্রিতার মনে হলো নিশ্চয়ই সাজ্জাদ এসেছিলো। আদ্রিতা সাজ্জাদকে কল দিলো,

আসসালামু আলাইকুম ( আদ্রিতা)

সাজ্জাদ সালামের জবাব নিলো। তারপর বললো,

কি আমাকে মিস করছিলে বুঝি? ( সাজ্জাদ)

একদমই না আপনি আমার কেউ হন না যে আপনাকে আমি মিস করবো। ( আদ্রিতা)

তাহলে কল কেনো করেছো? ( সাজ্জাদ)

আপনি একটু আগে আমার রুমে এসেছিলেন? ( আদ্রিতা)

আমি কেনো তোমার রুমে আসবো? তুমি আমার বউ নাকি যে তোমার রুমে আসবো? আর একটু পর আমার গায়ে হলুদ আমার কি এখন কোনো কাজ নেই যে আমি তোমার রুমে আসবো? (সাজ্জাদ)

তার মানে আপনি আসেন নি? ( আদ্রিতা)

না আসি নি। কিন্তু কেনো? কেউ কি তোমার রুমে এসেছিলো? ( সাজ্জাদ)

হুম না মানে কিছু না ( আদ্রিতা)

আদ্রিতা কথাটি বলে ফোন কেটে দিলো। তার মানে সাজ্জাদ না তাকে কি অন্য কেউ এই অবস্থায় দেখেছিলো? অন্যদিকে আদ্রিতা ফোন রেখে দিলে সাজ্জাদ হেঁসে উঠলো। আদ্রিতা কিছুই বুঝতে পারছে না আদ্রিতার সাথে কি হচ্ছে। তবু ও স্বস্তির শ্বাস ফেললো। আদ্রিতাকে এই অবস্থায় দেখে ও লোকটি উল্টাপাল্টা কিছু করে নি। আদ্রিতা আর দেড়ি না করে ড্রেসটি পড়ে নিলো। আসলে ও লোকটির চয়েস আছে বলতে হবে। একবার ভেবেছিলো ড্রেসটি পড়বে না। কিন্তু আদ্রিতা জানে এই ড্রেসটি না পড়লো হয়তো লোকটি আবার যদি বাসায় এসে পড়ে তাই ড্রেসটি পড়ে নিলো। হালকা একটু মেকআপ করলো। তারপর নিচে নেমে আসলো

হ্যাঁ রে এতোক্ষণ লাগে তোর? ( আদ্রিতার মা)

সরি সরি একটু লেইট হয়ে গেছে ( আদ্রিতা)

একটু লেইট? জানিস কতক্ষণ ধরে সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছিলো ( আদ্রিতার মা)

আচ্ছা আচ্ছা আর লেইট হবে না ( আদ্রিতা)

বোনের গায়ে হলুদেই এতো লেইট না জানি নিজের বিয়ের সময় কতো লেইট করে ( মুন)

কথাটি শুনে সবাই হেঁসে উঠলো। আদ্রিতার মা আদ্রিতাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে বললো,

আদ্রিতা এই ড্রেসটি কবে কিনলি?( আদ্রিতার মা)

আদ্রিতার মার কথা শুনে আদ্রিতা চমকে উঠলো। আমতা আমতা করে বললো,

কিছুদিন আগেই কিনেছি। কিন্তু তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। (আদ্রিতা)

ও আচ্ছা। ( আদ্রিতার মা)

আদ্রিতার খালু এসে বললো,

আর কতো দেড়ি বের হও সবাই।( আদ্রিতার খালু)

সবাই আস্তে আস্তে বেরিয়ে পড়লো। আদ্রিতা আর মুন বসে বসে গল্প করছে বাকিরা ও নিজের মতো গল্প করে যাচ্ছে। দু’টি গাড়ি বেরিয়েছে সাজ্জাদের বাসায় যাওয়ার জন্য।

**** ৩০ মিনিট পর ****

একে একে সবাই সাজ্জাদের বাসায় ডুকলো। আদ্রিতার বড় চাচা সাজ্জাদের বাবার সাথে কথা বলছে। বাকিরা প্রবেশ করার পর আদ্রিতা প্রবেশ করলো,

কেমন আছিছ মা?,( সাজ্জাদের মা)
আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি কেমন আছেন?(আদ্রিতা)

এমন সময় আদ্র বাইরে গেটে আসলো। আদ্রিতাকে দেখে এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলো। আদ্র মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো হলুদ ড্রেসে ও কি মানুষকে এতো সুন্দর লাগে? আদ্রর তাকানোতে আদ্রিতা কেমন জানি লাগছিলো। আদ্রিতা বলে উঠলো,

আন্টি আমি ভিতরে যাচ্ছি ( আদ্রিতা)

আরে মিস বকবক দাঁড়ান আপনার সাথে ত কথাই হলো না। ( আদ্র)

আদ্রিতা বিরক্ত হলো কিন্তু সেসময় দেখলো সাজ্জাদ এদিকে ফোনে কথা বলতে বলতে আসছে। তা দেখে আদ্রিতা মনে মনে বললো এইবার দেখবেন মিঃ সাজ্জাদ আদ্রিতার খেলা আমার সাথে নাটক করে আমার বোনকে বিয়ে করা। এখন দেখেন আপনার সামনে আমি কিভাবে অন্য ছেলেদের সাথে ঘুরি কথাটি বলে আদ্রিতা মুচকি হাসলো

আরে মিস বকবক কিছু বলছেন না যে? ( আদ্র)

হ্যাঁ বলুন কি বলবো ( আদ্রিতা)

আপনাকে কিন্তু আজ ভিশন সুন্দর লাগছে যে কোনো ছেলে দোখলে ক্রাশ খাবে ( আদ্র)

সাজ্জাদ ফোনে কথা বলতে বলতে আদ্রিতাকে ক্রস করে যাচ্ছিলো কিন্তু আদ্রর কথাটি শুনে সাজ্জাদ থমকে দাঁড়ালো। আদ্রিতার চোখের দিকে তাকালো। আদ্রিতা ও সাজ্জাদের দিকে তাকালো…….

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৪১
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

আদ্রিতা সাজ্জাদকে থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো। হেঁসে আদ্রর উদ্দেশ্য বললো,

তাই বুঝি আমাকে দেখলে কি যে কেউ ক্রাশ খাবে?( আদ্রিতা)

হুম আজকে আপনাকে যে সুন্দর লাগছে বলার বাইরে।( আদ্র)

তা আপনি ও বুঝি আমার উপর ক্রাশ খেয়েছেন?( আদ্রিতা)

হুম একটু তো খেয়েছি। কথাটি শুনে আদ্রিতা হেসে উঠলো। পাশে দাঁড়িয়ে সাজ্জাদ সব কথা শুনছে নাগে হাতের রগ গুলো যেনো বেরিয়ে আসছে। আদ্রিতা আবার আদ্রর উদ্দেশ্য বলে মনে,

আচ্ছা আমি ভিতরে যাচ্ছি কথাটি বলে আদ্রিতা চলে গেলো। সাজ্জাদ তখন ও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্র সাজ্জাদের উদ্দেশ্য বলে উঠলো,

ব্রো তোর শালিকা কিন্তু সেই খুব সুন্দর আমার পছন্দ হয়েছে ( আদ্র)

সাজ্জাদ চমকে উঠলো। আদ্রকে নিয়ে এই ভয়টি পাচ্ছিলো। সাজ্জাদ জিজ্ঞেস করলো,

পছন্দ হয়েছে মানে? ( সাজ্জাদ)

আমার গার্লফ্রেন্ড বানাবো ( আদ্র)

তোর না কত কত গার্লফ্রেন্ড আছে? ( সাজ্জাদ)

হুম আছে কিন্তু আদ্রিতার মতো নেই কথাটি বলে আদ্র চলে গেলো। সাজ্জাদের ইচ্ছে হচ্ছে আদ্রিতাকে খু*ন করে ফেলতে এই জন্যই সাজ্জাদ চাইতো না যেনো আদ্রিতা আদ্রর সাথে মিশুক।

বাইরে দাঁড়িয়ে কি ভাবছিছ? ( স্বাধীন)

কিছু না ( সাজ্জাদ)

ভিতরে চল একটু পর অনুষ্ঠান শুরু হবে ( স্বাধীন)

হুম চল ( সাজ্জাদ)

সাজ্জাদ আর স্বাধীন ভিতরে চলে গেলো। সাজ্জাদ গিয়ে স্টেজে বসলো। স্বাধীন ও সাজ্জাদের পাশে বসলো। হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো। একে একে সবাই সাজ্জাদকে হলুদ দিতে থাকলো। পাশে স্বাধীন বসে থাকায় মাঝে মধ্যে দুষ্টামি করে স্বাধীনকে ও হলুদ দিয়ে দিচ্ছে। আদ্রিতা নিরবে সব দেখে যাচ্ছে। সামনা সামনি যতই শক্ত থাকুক ভিতরে ভিতরে ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। আদো ও কি ভালোবাসার মানুষটির সাথে অন্য কাউকে সহ্য করা যায় আদ্রিতা আনমনে বলে উঠলো,
আপনি আমার না হওয়া এক সুখ!🖤 তখন সাজ্জাদের মা আসলো,

কিরে তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিছ কেনো? সবাই দেখ ওখানে কতো মজা করছে তুই ও যা। ( সাজ্জাদের মা)

হ্যাঁ আন্টি যাচ্ছি। ( আদ্রিতা)

কথাটি বলে যেখানে সাজ্জাদকে হলুদ দেওয়া হচ্ছিল সেখানে গিয়ে দাঁড়ালো। আদ্রিতার চোখ দুটি ভিজে উঠেছে। সাজ্জাদের চোখজোড়া ও এতোক্ষণ আদ্রিতাকেই খুঁজে চলেছিলো। এতক্ষণ পর আদ্রিতাকে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।

আরে মিস বকবক একা দাঁড়িয়ে যে? ( আদ্র)

না এমনিই দাঁড়িয়ে আছি ( আদ্রিতা)

কেনো জানি মনে হচ্ছে মন খারাপ? ( আদ্র)

আদ্রিতা হাসলো।

আচ্ছা মিস বকবক আপনি কাউকে ভালোবাসেন?( আদ্র)

না কিন্তু কেনো? ( আদ্রিতা)

না এমনই ( আদ্র)

এরকম আর ও অনেক টুকটাক কথা আদ্রিতা আর আদ্র বলে যাচ্ছে। আদ্র বরাবরই একজন রসিক মানুষ। তাই আদ্রর কথায় বারবার আদ্রিতা হেঁসে উঠছে। সাজ্জাদ বিষয়টি লক্ষ্য করছে আর রাগে শেষ হয়ে যাচ্ছে। স্বাধীন ও বিষয়টি খেয়াল করেছে। স্বাধীন একটু দুষ্টুমি করে সাজ্জাদের উদ্দেশ্য বললো,

আদ্রিতা আর আদ্রকে কিন্তু এক সাথে ভালোই মানাবে। আবার দেখ নামে ও কতো মিল। আদ্রিতার মধ্যেই যেন আদ্র বিরাজ করছে। তোর শালিকা হিসেবে তোর দায়িত্ব ভালো ছেলে দেখে আদ্রিতাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া। ( স্বাধীন)

সাজ্জাদ কড়া চোখে তাকালো স্বাধীনের দিকে। স্বাধীন চুপ হয়ে গেলো। আদ্রিতা বেশি বাড় বেড়েছে হারে হারে টের পাবে। সাজ্জাদ মনে মনে কথাটি বললো। আদ্রিতা আর আদ্র কথা বলছিলো তখন সেখানে আদ্রিতার মা আসলো। আদ্রিতার উদ্দেশ্য বললো,

মা তুই ও যা সাজ্জাদকে হলুদ দিয়ে আয় (সাজ্জাদের মা)

হ্যাঁ মিস বকবক চলো যাই ( আদ্র)

তারপর আদ্রিতা আর আদ্র একসাথে সাজ্জাদের সামনে আসলো সাজ্জাদেকে হলুদ দিতে। সাজ্জাদ আদ্রর উদ্দেশ্য বলে উঠলো,

বাইরে গিয়ে দেখ তো সব গেস্টরা খেতে বসেছে নাকি। সব ঠিক মতো কি হচ্ছে? নাকি কারোর সমস্যা হচ্ছে একটু যেয়ে দেখ ( সাজ্জাদ)

ওকে ব্রো যাচ্ছি। মিস বকবক গেলাম ( আদ্র)

আদ্রিতা হেঁসে আদ্রকে বিদায় জানালো।

আরে তুমি এতোক্ষণ কোথায় ছিলে? ( স্বাধীন)

ভাইয়া আদ্র ভাইয়ার সাথে ছিলাম ( আদ্রিতা)

ও আচ্ছা সাজ্জাদকে হলুদ লাগিয়ে দেও ( স্বাধীন)

ভাইয়া আপনার ও না কয়দিন পর বিয়ে? আপনাকে হলুদ দিয়ে দিচ্ছি কথাটি বলে আদ্রিতা স্বাধীনের গায়ে হলুদ দিয়ে দিলো।

আরে আরে আমার বিয়ের দেড়ি আছে সাজ্জাদের কালকে বিয়ে সাজ্জাদকে আগে হলুদ দিয়ে দেও।( স্বাধীন)

আদ্রিতা সাজ্জাদের দিকে তাকালো। সাজ্জাদ আগে থেকেই আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে আছে। কোনোমতে আদ্রিতার পক্ষে সম্ভব না। সাজ্জাদকে হলুদ দিয়ে দেওয়া।

ভাইয়া আপনি সাজ্জাদ ভাইয়াকে হলুদ দিয়ে দিয়েন আমি পারবো না। ( আদ্রিতা)

কথাটি বলে আদ্রিতা দৌঁড়ে ছাদ থেকে নিচে নেমে গেলো।

মেয়েটা শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছে। ( স্বাধীন)

আর এক দিন বাকি। ( সাজ্জাদ)

একটা কাজ কর তুই ওকে একটু হলুদ দিয়ে দে। না হলে তোর দেওয়ার আগে আদ্র ওকে হলুদ দিয়ে দিবে। সেটা মনে হয় তোর ভালো লাগবে না? ( স্বাধীন)

কিন্তু এখন কিভাবে যাবো? ( সাজ্জাদ)

আরে তুই যা আমি এখানে সামলে নিবো। ( স্বাধীন)

আচ্ছা আমি নিচে যাচ্ছি। ( সাজ্জাদ)

*****

আদ্রিতাদের বাড়িতে এখন মানুষ জন কম। বেশিরভাগ মানুষ সাজ্জাদের বাসায়। সামিরা নিরবে তার রুমে বসে আছে আর চোখের জল বিসর্জন করছে। সামিরার আর একটি অভ্যাস হচ্ছে ডায়েরি লেখা। সামিরা ভাবছে ডায়েরিটি কি পুড়ে ফেলবে নাকি? কারণ এখানে সামিরার সব মনে কথা লেখা আছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে। কেনো এক অজানা অনুভূতিতে আটকা পড়লো?

******

বস কালকে মেডামের বোনের বিয়ে সাজ্জাদের সাথে। ( মিন্টু)

গ্রেট। এটাই চেয়েছিলাম আদ্রিতার রাইফ থেকে যেনো সাজ্জাদ চলে যায়। (S.R)

বস আপনি কখন আসবেন? ( মিন্টু)

কালকে আসতে আসতে রাত হবে। (S.R)

ওকে বস আমরা অপেক্ষায় থাকবো। ( মিন্টু)

দেশে ফিরেই আদ্রিতাকে তুলে নিয়ে আসবো। আদ্রিতা শুধু আমার। ওর উপর আর কারোর অধিকার নেই। তুই আমাদের লোকদের রেডি থাকতে বলিছ। (S.R)

ওকে বস ( মিন্টু)

একদিকে সাজ্জাদ নিজের বউয়ের সাথে থাকবে। অন্যদিকে আদ্রিতাকে আমি আমার করে নিবো। ( S.R)

ওকে বস। আমরা সব কাজ কমপ্লিট করে রাখবো। আপনি চিন্তা করবেন না। ( মিন্টু)

ওকে (S.R)

কথাটি বলে S.R ফোন রেখে দিলো। মিন্টু হচ্ছে S.R এর লোক।

******

সাজ্জাদ নিচে নেমে আসলো দেখতে৷ পারলো আদ্রিতা বারান্দায় হেঁটে যাচ্ছে শুধু শুধু একবার এপার থেকে ওপার আবার ওপার থেকে এপার। সাজ্জাদ আস্তে করে সাজ্জাদের রুমে ডুকলো। আদ্রিতা হেঁটে যাওয়ার সময় টান মেরে আদ্রিতাকে নিজের রুমের ভিতর নিয়ে নিলো।

কি করছেন ছাড়ুননন ( আদ্রিতা)

ছাড়ার জন্য ধরেছি নাকি? ( সাজ্জাদ)

সাজ্জাদ রুমের দরজা আঁটকে দিলো।

কোন সাহসে আপনি দরজা আটকালেন? বাড়ি ভর্তি মানুষ কেউ দেখে ফেললে উল্টা পাল্টা ভাববে। দয়া করে দরজা খুলুন ( আদ্রিতা)

দেখুক সমস্যা কি? ( সাজ্জাদ)

লজ্জা করে না আপনার? আমার বোনের সাথে বিয়ে হবে তা শর্তে ও আমার সাথে অ*সভ্যতামী করেন দরজা খুলুন বলছি। ( আদ্রিতা)

কথাটি বলে আদ্রিতা দরজা খুলতে গেলে। সাজ্জাদ আদ্রিতাকে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে।

না লজ্জা করে না। আর কি বললে অসভ্যতামী করেছি? এখন দেখবে অসভ্যতামী কাকে বলে। ( সাজ্জাদ)

কথাটি বলে সাজ্জাদ লেহেঙ্গার উপর দিয়ে আদ্রিতার উন্মুক্ত পেটে হাত দেয়। আদ্রিতার গলায় নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। আদ্রিতা কেঁপে উঠে স্পর্শে……….

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৪২
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

আদ্রিতা কেঁপে উঠে স্পর্শে। ধাক্কা দিয়ে সাজ্জাদকে দূরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। সাজ্জাদ আর ও শক্ত করে নিজের সাথে আদ্রিতাকে মিশিয়ে নেই। কিছুক্ষণ পর সাজ্জাদ ছেড়ে দেয় আদ্রিতাকে। আদ্রিতা ঠাশ করে সাজ্জাদকে একটি চ*ড় মারে। তারপর সাজ্জাদের উদ্দেশ্য বলে উঠে,

লজ্জা করে না? কালকে আমার বোনের সাথে আপনার বিয়ে আর আজকে আমার সাথে আপনি ছিহহ কিভাবে এইরকম করছেন। ( আদ্রিতা)

তোমার সাহস আছে বলতে হবে। না হলে আজ পর্যন্ত কেউ সাজ্জাদের সাথে চোখ তুলে পর্যন্ত কথা বলে নি আর সেই জায়গায় তুমি আমাকে চ*ড় মারলে। ( সাজ্জাদ)

অ*সভ্যতামী আমার সাথে করবেন না। ( আদ্রিতা)

তাই বুঝি কেনো কি করবে?(সাজ্জাদ)

কথাটি বলে সাজ্জাদ আবার আদ্রিতার দিকে এগাতে থাকলো। আদ্রিতার কোমর জড়িয়ে ধরে আদ্রিতাকে উঁচু করে আদ্রিতার ঠোঁট ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। আদ্রিতা শুধু সাজ্জাদের বু*কে কিল ঘুসি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সাজ্জাদ তাও দূরে যাচ্ছে না। হঠাৎ সাজ্জাদ শুনতে পারলো আদ্র আসছে আর সাজ্জাদকে ডাকছে,

ব্রো এই ব্রো দরজা খুল।( আদ্র)

আদ্রিতা আদ্রর আওয়াজ শুনে ভয় পেয়ে গেলো। এখন এক সাথে আদ্রিতা আর সাজ্জাদকে দেখলে বাসায় কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। আদ্রিতা সাজ্জাদের দিকে তাকালো। সাজ্জাদ আচমকা আদ্রিতাকে কো*লে তুলে নিলো। আর ওয়াশরুমে বাথটাবে গিয়ে রেখে দিলো।

কি করছেন? ( আদ্রিতা)

চুপ কোনো কথা বলবে না। আদ্রর সাথে কথা বলে বাকি রোমান্স শেষ করবো। ( সাজ্জাদ)

কথাটি বলে সাজ্জাদ বাইরে এসে ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে দিলো।

লোকটা পাগল হয়ে গিয়েছে। আর সাথে আমাকে ও পাগল করে দিচ্ছে। আমি এখানে বসে বসে এখন কি করবো অসহ্য। আদ্রিতা বাথটাবে বসে বসে কথাগুলো বলছে৷ এদিকে সাজ্জাদ এসে দরজা খুলে দিলো।

আরে ব্রো এতো সময় কেনো রাগলো? ( আদ্র)

কাজ করছিলাম ( সাজ্জাদ)

ও ( আদ্র)

কেনো এসেছিছ? কোনো দরকার?( সাজ্জাদ)

হ্যাঁ ব্রো মেহমানদের খাবার বেড়ে দিতে গিয়ে তরকারির ঝোল জামায়পড়ে গেছে আর আমার ওয়াশরুমে কেউ গিয়েছে তাই ভাবলাম তোর ওয়াশরুমে এসে একটু ড্রেসটা পরিষ্কার করে নেই ( আদ্র)

কথাটি শুনে সাজ্জাদ ভয় পেয়ে উঠলো।

না আমার ওয়াশরুমে এখন যাওয়া যাবে না। আমার মুখে দেখেছিছ কতো হলুদ আমি মুখ ধুবো ( সাজ্জাদ)

ব্রো আমার বেশি টাইম লাগবে না জাস্ট যাবো আর আসবো। ( আদ্র)

না আগে আমি যাবো। তুই অন্য রুমের ওয়াশরুমে যা। কথাটি বলে সাজ্জাদ ওয়াশরুমের ভিতর গিয়ে দরজা আঁটকে দিলো। আদ্রিতা সাজ্জাদকে দেখে কিছু বলতে নিবে এর আগেই সাজ্জাদ হাত দিয়ে আদ্রিতার মুখ চেপে ধরলো। বাইরে থেকে আদ্র চিল্লাচ্ছে।

আপনার জন্য আমি কতো ঝামেলায় পড়ে গেলাম। ( আদ্রিতা)

চুপ তোমার জন্য আমি ঝামেলায় পড়েছি ( সাজ্জাদ)

অসহ্য দূরে সরুন আমার থেকে ( আদ্রিতা)

কথাটি বলে আদ্রিতা বাথটাব থেকে উঠে দাড়ালো। বাথটাব থেকে নিচে নেমে গেলো।

যদি না সরে আসি তোমার থেকে? ( সাজ্জাদ)

সাজ্জাদ আদ্রিতাকে টান মেরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। সাজ্জাদের গাল আদ্রিতার গালের সাথে মিশিয়ে সাজ্জাদের গায়ে লাগানো হলুদ আদ্রিতার গালে লাগিয়ে দিলো। সাজ্জাদ কিছুটা হলুদ সাজ্জাদের হাতে লাগিয়ে নিলো। সাজ্জাদের হাত আদ্রিতার পে*টে স্পর্শ করলো আদ্রিতার পে*টে হলুদ লাগিয়ে দিলো।

ছাড়ুনননন ( আদ্রিতা)

আদ্রিতা ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার জন্য যেতে নিলো কিন্তু হঠাৎ পা পিছলে বাথটাবে পড়ে গেলো পড়ার সময় সাজ্জাদের জামা ধরেছিলো সাজ্জাদ ও নিজের তাল সামলাতে না পেরে আদ্রিতার উপর পড়ে গেলো। হঠাৎ আদ্রিতার বাথটাবের কল খুলে গেলো। কিছুটা পানি পড়েছে এর আগেই সাজ্জাদ কল অফ করে দিয়েছে। সাজ্জাদ উঠে দাঁড়ালো। আদ্রিতাকে ও দাঁড় করালো।

ব্যাথা পেয়েছো? ( সাজ্জাদ)

না কিন্তু ড্রেস ভিজে গিয়েছে এখন আমি কি করবো?( আদ্রিতা)

সাজ্জাদ কিছু না বলে চুপচাপ বেরিয়ে গেলো। আদ্রিতা ও সাজ্জাদের পিছন পিছন বেরিয়ে গেলো। সাজ্জাদ আলমারি থেকে আদ্রিতার পরনের লেহেঙ্গার মতো একটি লেহেঙ্গা বের করলো। আদ্রিতা কিছুটা বিস্মিত হলো।

আপনার কাছে এই লেহেঙ্গা কেনো? ( আদ্রিতা)

সামিরার জন্য কিনেছিলাম আগে থেকেই এখন দেখলাম তুমি ও কিনেছো। এইটা পড়ে নেও। ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা লেহেঙ্গাটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি করবে বুঝতে পারছে না

কি একা চেঞ্জ করতে পারবে না? আমি ড্রেস পড়িয়ে দিবো নাকি ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওয়াশরুমে যেয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো। সাজ্জাদ রুমের দরজা খুলে দেখলো বাইরে কেউ নেই সেই সুযোগে আদ্রিতাকে রুম থেকে বের করে দিলো। আদ্রিতা যাওয়ার একটু পর সাজ্জাদ ও রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। দু’জনই আবার ছাদে চলে গেলো। সাজ্জাদ ছিলো না বলে সবাই অনেক রকম প্রশ্ন করতো কিন্তু স্বাধীন সবটুকু সামলে নিয়েছে।

এখন সামিরাদের বাসায় যাওয়ার সময় হয়ে গেছে (সাজ্জাদের মা)

সবাই সম্মতি প্রকাশ করলো।

শোন আদ্রিতাদের বাসায় যাওয়ার পরও আদ্র আদ্রিতার সাথে বেশি থাকতে চাবে৷ তুই একটু সামলে নিস। ( সাজ্জাদ)

আচ্ছা তুই টেনশন নিস না। ( স্বাধীন)

সবাই বেরিয়ে পড়লো আদ্রিতাদের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্য।

******

আরিয়ান টঙ্গে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলো। হঠাৎ একটু মেয়ে দৌঁড়ে আসতে গিয়ে আরিয়ানের সাথে ধাক্কা খেলো। আরিয়ানের হাত থেকে চায়ের কাপ পড়ে গেলো।

এই মেয়ে দেখে চলতে পারো না? ( আরিয়ান)

আরিয়ান কথাটি বলে পিছনে তাকিয়ে দেখলো আলো ভয়ার্তে চোখে তাকিয়ে আছে।

তুমি এইরাতে কি করছো এইখানে? ( আরিয়ান)

আলো ভয়ে কাঁপছে। আলো হাতের ইশারায় সামনে দেখালো। আরিয়ান সামনে তাকিয়ে দেখলো কয়েকটি বকাটে ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। আরিয়ানের আর বুঝতে বাকি নেই যে কি হয়েছিলো। ছেলেগুলো আরিয়ানকে দেখে অন্যদিকে চলে গেলো। আরিয়ান তাকিযে দেখলো আলো একটি হলুদ শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। চুল গুলো খোরা। এমন নাম আলো তার উপর আজকে যেনো একটু বেশি জ্বলজ্বল করছে।

এখন বাইরে কি করছো? ( আরিয়ান)

আদ্রিতার বাসায় যেতে নিছিলাম আর তখন.. ( আলো)

আলো আর কিছু বললো না। আরিয়ান বলে উঠলো আদ্রিতা বাসা মনে হয় আর একটু সামনে এসো আমি তোমকে পৌঁছে দেয়। ( আরিয়ান)

আলো দ্বিমত প্রকাশ করলো না। আরিয়ানের সাথে হাঁটতে শুরু করলো।

******

সাজ্জাদের পরিবার আদ্রিতাদের বাসায় এসেছে। সামিরাকে স্টেজে বসানো হয়েছে। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে। একে একে সবাই সামিরা কে হলুদ গিয়ে দিলো। সামিরা পাথরের ন্যায় বসে থাকলো। স্বাধীনকে দেখে সামিরার বুক কেঁপে উঠছে বার বার। আদ্র এর মধ্যে অনেকবার আদ্রিতার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বার বারই স্বাধীন দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে আলো এসে এসেছে তাহনা আবিরের ও আসার কথা ছিলো কিন্তু আবির কোনো কাজে আটকে গিয়েছে তাই তাহনা ও আসে নি। আলো আদ্রিতার কাছে আসলো,

দোস্ত ঠিক আছিছ তুই? ( আলো)

আমার আবার কি হবে? আমি ঠিক আছি ( আদ্রিতা)

আলো আর কিছু বললো না। আলো খুব ভালো করেই জানে ভিতরে ভিতরে আদ্রিতা শেষ হয়ে যাচ্ছে। আলো ও যেয়ে সামিরাকে হলুদ দিয়ে আসলো। আদ্রিতা বলতে গেলে সারাক্ষণ সামিরার পাশেই ছিলো। স্বাধীন এক কর্ণারে দাঁড়িয়ে আছে।

বাবা তুমি ও যেয়ে ওদের সাথে মজা করো।( আদ্রিতার মা)

হ্যাঁ আন্টি যাচ্ছি। কথাটি বলে স্বাধীন স্টেজের সামনে এসে দাঁড়ালো।

ভাইয়া আপনি ও হলুদ দিয়ে দেন আপুকে।( আদ্রিতা)

হ্যাঁ দিচ্ছি। কথাটি বলে স্বাধীন সামিরার গায়ে হলুদ লাগিয়ে দিলো। স্বাধীনের স্পর্শে সামিরা কেঁপে উঠলো। স্বাধীন হলুদ লাগিয়ে আদ্রিতার সাথে হাসাহাসি করছে। মেহমানদের খাবার খাওয়ানো নিয়ে বাকিরা ব্যস্ত। সামিরা কোনোমতে চোখের জল আটকে রেখেছে মনে হচ্ছে এখনই যেনো টুপ করে চোখ থেকে জল পড়বে।

*** কিছুক্ষণ পর***

সামিরার গায় হলুদ শেষ হয়ে গিয়েছে। সাজ্জাদের পরিবারের সবাই সাজ্জাদের বাসায় যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েছে। সামিরা ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। আদ্রিতা ও নরমাল একটি ড্রেস পড়ে নিলো। সবাই যার যার মতো রুমে শুয়ে পড়লো। কালকে খান বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে বলে কথা। প্রত্যেক রুমে মানুষর অভাব নেই। কিন্তু আদ্রিতার রুমটি ফাঁকা কারণ সামনে আদ্রিতার ফাইনাল পরীক্ষা তাই আদ্রিতার বাবা বরে দিছে এখন যেনো ঔই রুমে কারোর থাকার ব্যবস্থা না করে। আদ্রিতা সোফার রুমে বসে আদ্রিতার ছোট খালামনির সাথে গল্প করছিলো। সেসময় আদ্রিতার বাবা রুমে আসলো, আদ্রিতা আমার সাথে একটু রুমে আয়। কথাটি বরে আদ্রিতার বাবা চলে গেলো।

বাবা কিছু বলবে? ( আদ্রিতা)

তোর কি কোনো ছেলেকে পছন্দ আছে? ( আদ্রিতার বাবা)

হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে আদ্রিতা চমকে উঠলো আমতা আমতা করে বললো না বাবা কিন্তু কেনো?

আমি একটি ছেলে পছন্দ করেছি তোর বিয়ের জন্য। ( আদ্রিতার বাবা)

বিয়ের কথা শুনে আদ্রিতা চমকে উঠলো।

বাবা আমি মাএ ইন্টারে পড়ি আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না। ( আদ্রিতা)

আমি চাচ্ছি শুধু কাবিন করিয়ে রাখতে ( আদ্রিতার বাবা)

বাবা আমি পড়তে চাই ( আদ্রিতা)

ছেলে নিজেই তোকে পড়াবে। কোনো বাঁধা সৃষ্টি করবে না। ( আদ্রিতার বাবা)

তাও বাবা আমি রাজি না ( আদ্রিতা)

আমার কথায় শেষ কথা। এ ব্যাপারে তোর কোনো মতামত চাচ্ছি না। যদি তোর কোনো পছন্দ থাকতো তাহলে না করতাম। কিন্তু যেহেতু পছন্দ নেই তাই এই ছেলের সাথেই তোর বিয়ে হবে। ( আদ্রিতার বাবা)

কিন্তু বাবা ( আদ্রিতা)

আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না ( আদ্রিতার বাবা)

আদ্রিতা দৌঁড়ে রুমে চলে গেলো। রুমে যেয়ে সাজ্জাদকে কল দিলো,

হ্যাঁ বলো এতো রাতে কল দিলে যে? ( সাজ্জাদ)

বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে ( আদ্রিতা)

কথাটি শুনে সাজ্জাদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

আমার ও বিয়ে কালকে আমার পিছনে আর পরে থেকো না। হয়তো সবার ভালোবাসার পূর্ণতা পায় না। তোমার বাবা যার সাথে বিয়ে ঠিক করেছে তাকে বিয়ে করে সুখী হও। ( সাজ্জাদ)

কথাটি বলে সাজ্জাদ লাইন কেটে দিলো। আদ্রিতা আবার ফোন করার চেষ্টা করলো। কিন্তু ফোন বন্ধ আসছে। আদ্রিতা দেয়াল ঘেঁষে নিচে বসে পড়লো। তার মানে শেষ হযে গেলো সাজ্জাদের সাথে আদ্রিতার সকল সম্পর্ক?

আদ্রিতা নিচে বসে মনে করতে লাগলো আজ থেকে ঠিক দু’বছর আগের কথা যেদিন সাজ্জাদের সাথে প্রথমবার আদ্রিতার দেখা হয়েছিলো…

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৪৩
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

আজ থেকে ২ বছর আগে সাজ্জাদ আর আদ্রিতার যেদিন প্রথম দেখা হয়েছিলো।

********

আদুরিরিরিরিরির উঠ ঘুম থেকে। ( সামিরা)

হুম হুম ( আদ্রিতা)

এই মেয়ে উঠ কলেজের দেড়ি হয়ে যাবেন ( সামিরা)

না দি আর একটু পর ( আদ্রিতা)

আর দেড়ি না এখনই উঠ। ( সামিরা)

আদ্রিতা ঘুমে মোড়ামুড়ি করছে। তখন মাএ ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস হালকা হালকা শীত আছে। আদ্রিতার বয়স মাএ ১৫ বছর। তখন নতুন নতুন ক্লাস ১০ এ উঠেছে। শীতের জন্য আদ্রিতার স্কুলে যাওয়ার কোনো ইচ্ছায় হচ্ছে না। তাও সামিরা টেনে তুললো আদ্রিতাকে।

৫ মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে নিচে চল। ( সামিরা)

যা দি আমি আসছি। ( আদ্রিতা)

তাড়াতাড়ি কর না হলে দেড়ি হয়ে যাবে। ( সামিরা)

কথাটি বলে সামিরা নিচে চলে গেলো। আদ্রিতা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। কলেজ ড্রেস পড়ে নিচে নেমে গেলো। নিচে আদ্রিতার মা বাবা সামিরা সবাই নাস্তা করতে বসেছে।

আদ্রিতা আজকে বাসায় তাড়াতাড়ি এসে পড়িছ। ( আদ্রিতার বাবা)

আচ্ছা কিন্তু কেনো?( আদ্রিতা)

গ্রামের বাসায় যেতে হবে। গ্রামে একটু ঝামেলা হয়েছে। আর আমরা যাচ্ছি শুনে তোর দাদু বললো তোদের সবাইকে যেনো নিযে আসি। তোর দাদুর শরীরটা ও অনেক খারাপ কালকে আবার পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে। তাই ভাবছি একবার দেখেই আছি।( আদ্রিতার বাবা)

কিন্তু বাবা আমি যেতে পারবো না। কালকে স্কুলে পরীক্ষা আছে। ( আদ্রিতা)

কিন্তু আমি কথা দিয়েছি যে তোরা সবাই যাবি। ( আদ্রিতার বাবা)

একটা কাজ করো তোমরা চলে যাও আমি এখানেই থাকি৷ ( আদ্রিতা)

তুই একা থাকবি কিভাবে?( আদ্রিতার মা)

আরে মা বললাম না কালকে পরীক্ষা। তাই আজকে আলোর বাসায় যাবো স্কুল থেকে প্রথমে কোচিং এ যাবো তারপর আলোর বাসায় চলে যাবো। ( আদ্রিতা)

কিন্তু আদ্রিতা….( আদ্রিতার মা)

মা চিন্তা করো না ত একদিন আলোর বাসায় থাকলে কিছু হবে না। আর এমনিইও আন্টি অনেকদিন থেকে যেতে বলছিলো। ( আদ্রিতা)

আচ্ছা যা তুই। ( আদ্রিতার বাবা)

আচ্ছা। ( আদ্রিতা)

আদ্রিতা স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো। আর বাকিরা গ্রামে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লো।

***স্কুলে***

আলো আসবে না আজকে? ( আদ্রিতা)

না আমাকে কল করেছিলো বললো আসবে না। ( মায়া)

[ মায়া আদ্রিতা আর আলোর বেস্ট ফ্রেন্ড। স্কুলে থাকতে তারা একসাথেই পড়তো। পরবর্তীতে মায়ার পরিবার কানাডায় চলে যায়। আর আদ্রিতা আর আলো বন্ধুত্ব এখন পর্যন্ত আছে। মায়ার সাথে ও কথা হয় এখন ও ]

আলো আসবে না শুনে আদ্রিতা খুশিই হয়েছে একবারে আলোর বাসায় যেয়ে আলোকে সারপ্রাইজ দিবে। কথাটি মনে মনে ভেবে আদ্রিতা হাসলো। স্কুলের ক্লাস শেষ করে আদ্রিতা কোচিং-এ চলে গেলো। কালকে আবার একটি পরীক্ষা আছে না হলে ভুলে ও আজকে কোচিং-এ যেতো না। সোজা আলোর বাসায় চলে যেতো। আদ্রিতা কোচিং-এর ক্লাস করে বের হলো। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। সারাদিন পড়াশোনা করে আদ্রিতা এখন ক্লান্ত তার উপর আবার রিক্সা পাচ্ছে না। আলোদের বাসায় যাওয়ার ২টি রাস্তা আছে। এর মধ্যে একটি শর্টকাট কিন্তু সেই রাস্তায় সমস্যা হলো মানুষজন খুব কম চলাচল করে। যেহেতু রিক্সা পাচ্ছে না তাই আদ্রিতা ঠিক করলো হেঁটেই চলে যাবে। আদ্রিতা হাঁটা শুরু করলো। নিরব রাস্তা তার উপর মাএ ১৫ বছরের একটি মেয়ে সন্ধ্যায় একা একা হেঁটে যাচ্ছে।আদ্রিতার কিছুটা ভয় ভয় লাগছে তবুও হেঁটে যাচ্ছে। হঠাৎ একটি পুরান বাড়ির দিক দিয়ে শব্দ আসতে থাকলো। কেমন জানি কান্নার শব্দ। আদ্রিতা ভাবলো কেউ হয়তো ব্যথা পেয়েছে তাই কান্না করছে। আদ্রিতা সেই বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। সামনে যেয়ে আদ্রিতা যা দেখলো তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। একটি লোক অন্য একটি লোকের মাথা ছুরি দিযে আলাদা করে দিলো। মাথা আলাদা করার পর ও লোকটি থেমে যায় নি। বরং ওপর লোাটির হাত পা সব আস্তে আস্তে ছুরি দিয়ে কেটে ফেললো। খুব ভয়ংকরভাবে আদ্রিতার চোখের সামনে S.R একটি লোককে খুন করলো। S.R খুন করে খুশিতে হো হো করে হেঁসে উঠলো। আদ্রিতা ভয়ে কাঁপছে। চলে যাওয়ার মতো শক্তি ও যেনো পাচ্ছে না। হঠাৎ মিন্টু (S.R এর লোক) আদ্রিতাকে দেখে ফেললো।

বস এইখানে কোনো মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ( মিন্টু)

কথাটি শুনে S.R কিছুটা ভয় পেলো মনে করেছিলো হয়তো পুলিশের লোক। পিছনে ঘুরে S.R দেখলো বাচ্চা একটি মেয়ে। S.R মিন্টুর উদ্দেশ্য বললো আরে এ দেখি একটি বাচ্চা। (S.R)

কথাটি বলে S.R আবার হো হো করে হেঁসে উঠলো।

আদ্রিতা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। এখনি যেনো পড়ে যাবো।

এই মেয়েটাকে নিয়ে আয় এখনি ওকে খু*ন করে ফেলবো। (S.R)

ওকে বস ( মিন্টু)

আদ্রিতা কিছু বলার শক্তি ও পাচ্ছে না। ১৫ বছরের একটি মেয়ের সামনে যদি কেউ এইভাবে খুন করে তাহলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই ভয় পাওয়ারই কথা। মিন্টু আদ্রিতার দিকে এগিয়ে আসলো। আদ্রিতার হাত ধরতেই নিবে ঠিক সেসময় পিছন থেকে কেউ খুব জোরে মিন্টুকে লা*থি দিলো। মিন্টু ছিটকে পড়লো। আদ্রিতা পাশে তাকিয়ে দেখলো। কালো স্যুট পরা একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিতার থেকে বেশ কিছুটাই লম্বা। আদ্রিতা আর স্থির থাকতে পারলো না মাটিতে ঢলে পড়লো।

#চলবে