অজানা অনুভুতি পর্ব-৪৪+৪৫+৪৬+৪৭

0
264

#অজানা_অনুভুতি
#পর্বঃ ৪৪
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে আদ্রিতা। পাশে একটি সোফায় সাজ্জাদ ফোনে কথা বলছে কারোর সাথে। কালকে সন্ধ্যায় সাজ্জাদই মিন্টুকে লাথি মেরেছিলো। সাজ্জাদ ফোনে কথা বলছে হঠাৎ দেখলো বেডে শুয়ে থাকা মেয়েটি হারকা নড়াচড়া করছে। সাজ্জাদ মেয়েটিকে একবার পরখ করে নিলো। দুই জুটি করা, পরনে স্কুল ড্রেস, বয়স ১৪ কি ১৫ হবে। লম্বাই মেবি ৫ ফুট আর সাজ্জাদ ৬ ফুট। কালকে সন্ধ্যায় পোড়া বাড়িতে এমন একটি মেয়েকে দেখে সাজ্জাদ অবাক হয়েছিলো। মেয়েটির ব্যাগে বাড়ির কোনো ঠিকানা বা নাম্বার পাওয়া যায় নি বলে হসপিটালে নিয়ে এসেছে। সাজ্জাদ একবার চলে যেতে চেয়েছিলো। পরে নিজের বিবেকের বাঁধা খেলো। তাই কালকে রাত থেকে অপেক্ষা করছে মেয়েটির জ্ঞান ফিরার। কিছুক্ষণ পর আদ্রিতার জ্ঞান ফিরে আসলো। আশেপাশে তাকিয়ে সাজ্জাদকে দেখে ভয়ে কেঁপে উঠলো। এদিকে সাজ্জাদ ফোনে কথা বলার সময় হঠাৎ দেখলো মেয়েটির জ্ঞান ফিরেছে।

এই মেয়ে তোমার নাম কি? ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। খু*ন হওয়া জায়গায় সাজ্জাদকে দেখে মনে হচ্ছে সাজ্জাদ ও খু*নের সাথে জড়িত৷ আদ্রিতা সাজ্জাদের কথার কোনো জবাব দিচ্ছে না। তখনই রুমে ডক্টর প্রবেশ করলো।

ডক্টর মেয়েটির জ্ঞান ফিরেছে?( সাজ্জাদ)

হুম আমি দেখছি। ( ডক্টর)

এখন কেমন ফিল করছো? ( ডক্টর আদ্রিতার উদ্দেশ্য কথাটি জিজ্ঞেস করলো)

আদ্রিতা ভয়ার্ত চোখে ডক্টেরের দিকে তাকালো। ডক্টর ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সাজ্জাদকে বললো,

আপনি একটু আমার সাথে বাইরে আসুন। ( ডক্টর)

সাজ্জাদ বাইরে গেলো।

জ্বি বলুন ( সাজ্জাদ)

কালকের সন্ধ্যার ঘটনা শুনে মনে হচ্ছে সেখানে আপনাকে দেখে মেয়েটি আপনাকে ভয় পাচ্ছে। আপনি একটু ফ্রি হওয়ার চেষ্টা করুন ওর সাথে। ( ডক্টর)

আচ্ছা আমি ট্রাই করবো। ( সাজ্জাদ)

ওকে ( ডক্টর)

কথাটি বলে ডক্টর চলে গেলো। সাজ্জাদ স্বাধীনকে কল দিলো। স্বাধীনকে বলেছিলো কালকের ব্যাপারে

আলগা একটা ঝামেলা নিয়ে নিছি রে ( সাজ্জাদ)

কথা বলে দেখ কি অবস্থা ওকে বাসায় ছেড়ে দিয়ে অফিসে এসে পড়। ( স্বাধীন)

ওকে ( সাজ্জাদ)

সাজ্জাদ ফোনটি রেখে আদ্রিতার সামনে এসে বসলো। শান্ত গলায় বললো,

তোমার নাম কি? ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা, আদ্রিতা খান। ( আদ্রিতা)

নামটা শুনে সাজ্জাদের কাছে কিছুটা চেনা চেনা লাগলো। সেদিকে পাওা না দিয়ে বললো,

আমাকে ভয় পাওয়ার দরকার নেই। কালকে যাদের দেখেছো আমি তাদের সাথে কেউ নই। আমি তোমাকে দেখেছিলাম একা একা যাচ্ছে পোড়া বাড়ির দিকে তাই কৌতুহল বশত তোমার পিছু নিয়েছিলাম পরে দেখলাম বিপদে পড়েছে তাই সাহায্য করেছি এর বেশি কিছু না। আমি যা বলেছি বুঝতে পেরেছো? ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।

আচ্ছা তোমার চুলে যেই রাভার দিয়ে বেঁধেছো সেটি কোথায় পেয়েছো? ( সাজ্জাদ)

কেনো? আপনাকে কেনো বলবো? ( আদ্রিতা)

না আমার পছন্দ হয়েছে তোমার এই রাবার ব্যান্ডটি আমাকে দিবে? ( সাজ্জাদ)

আজব আমি আপনাকে এইটা কেনো দিবো?( আদ্রিতা)

সাজ্জাদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

কোন ক্লাসে পড়ো? ( সাজ্জাদ)

দশম শ্রেনী ( াদ্রিতা)

বয়স কতো? ( সাজ্জাদ)

১৫ বছর ( আদ্রিতা)

বাসা কোথায়? ( সাজ্জাদ)

আপনি আমাকে স্কুলের সামনে একটু নামিয়ে দিন। ( আদ্রিতা)

আচ্ছা ঠিক আছে চলো ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা সাজ্জাদের সাথে বেরিয়ে পড়লো। সাজ্জাদের আদ্রিতাকে স্কুলের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। আদ্রিতা মাঠে দাঁড়িয়ে আছে। কালকে সন্ধ্যা থেকে যা যা হচ্ছে সব কিছু কেমন জানি কল্পনার মতো ছিলো। আদ্রিতার সামনে বার বার সেই খু*ন করার দৃশ্য ভেসে উঠছে। এমন সময় আলো আসলো,

কিরে আজকে তাড়াতাড়ি স্কুলে আসলি যে?( আলো)

আদ্রিতা আলোকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।

এই আদ্রিতা কি হয়েছে বল। ( আলো)

আদ্রিতা সব ঘটনা খুলে বললো আলোকে ভয়ে আলোর ও পশম দাঁড়িয়ে গেছে।

যে তোকে সাহায্য করেছে সে নিশ্চয়ই অনেক ভালো। না হলে এভাবে কেউ সাহায্য করে না ( আলো)

হুম হয়তো ভালো। ( আদ্রিতা)

**** কিছুদিন পর ****

সেদিনের পর প্রায় ১ মাস কেটে গেছে। এর মধ্যে সাজ্জাদের সাথে আদ্রিতার আর কোনো দেখা হয় নি। আদ্রিতা ও সেদিনের কথাটি ভুলতে বসেছে। কিন্তু অজান্তেই অনেক বড় একটি প্রমাণ নিযে আদ্রিতা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আদ্রিতা আর আলো স্কুলের ক্লাস শেষ করে কোচিং-এ এসে পড়লো। তখন শুনতে পারলো তাদের কোচিং-এর স্যার নাকি এক্সিডেন্ট করেছে। তাই আজকে থেকে তার পরিবর্তে নতুন একজন স্যার ক্লাস নিবে। ওই স্যার সুস্থ হলে আবার তিনি ক্লাস নিবেন।

***কিছুক্ষণ পর***

নতুন স্যার হিসেবে সাজ্জাদকে দেখে কিছুটা চমকে উঠলো।

ইনি তোমাদের স্যারের বন্ধু। যতদিন না তোমাদের স্যার সুস্থ হবে ততদিন পর্যন্ত ইনি ক্লাস নিবে। কথাটি বলে কোচিং-এর প্রধান স্যার চলে গেলো।

আদ্রিতা সাজ্জাদকে দেখে ভয়ে আলোর হাত খামছে ধরলো।

এই কি হয়েছে? ( আলো)

না কিছু না ( আদ্রিতা)

সাজ্জাদ একবার আড় চোখে আদ্রিতার দিকে তাকালো। তারপর ক্লাস নেওয়া শুরু করলো। ক্লাস শেষে সবাইকে বাড়ির পড়া দিয়ে দিলো। আর আদ্রিতার উদ্দেশ্য বললো,

একটু অফিস রুম এসো ( সাজ্জাদ)

কথাটি বলে সাজ্জাদ বেরিয়ে গেলো। আদ্রিতা ভেবে পাচ্ছে না সাজ্জাদ কেনো তাকে এখন ডেকেছে?

স্যার তোকে চিনে নাকি? ( আলো)

মনে আছে সেদিন সন্ধ্যার কথা? সেদিন উনি আমাকে সাহায্য করেছিলো ( আদ্রিতা)

আলো কিছুটা চমকে উঠলো কথাটি শুনে,

কি উনি তোকে সাহায্য করেছিলো? ( আলো)

হুম। ( আদ্রিতা)

মনে হয় তোকে চিনতে পেরেছে তাই ডেকেছে চল গিয়ে দেখি কি বলে। ( আলো)

ওকে ( আদ্রিতা)

আদ্রিতা আর আলো অফিস রুমের দিকে গেলো…

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৪৫
#লেখিকা ঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

আদ্রিতা সাজ্জাদের রুম প্রবেশ করলো আলোকে নিয়ে। সাজ্জাদ আড়চোখে একবার তাকালো। তারপর বললো,

কেমন আছো? ( সাজ্জাদ)

জ্বি হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ ভালো ( আদ্রিতা)

আমাকে চিনতে পেরেছো? ( সাজ্জাদ)

হুম ( আদ্রিতা)

সাজ্জাদ এবার আলোর উদ্দেশ্য বললো তোমার নাম কি?

আলো আমি আদ্রিতার বেস্ট ফ্রেন্ড। ( আলো)

ও আচ্ছা ঠিক আছে যাও তোমরা। ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা আর আলো চলে গেলো।

স্যার খারাপ না মনে হয়। আমার মনে হয় না সেদিন তুই যেই খু*ন হতে দেখিছিলি সেখানে স্যারের হাত রয়েছে। আর ভয়ে পেয়ে লাভ নেই। ( আলো)

হুম ঠিক বলেছিছ। ( আদ্রিতা)

আদ্রিতা আর আলো কোচিং থেকে বেরিয়ে গেলো। সাজ্জাদ স্বাধীনকে কল দিলো,

আমাদের আর ও ৩ বছর অপেক্ষা করতে হবে। ( সাজ্জাদ)

হুম যেহেতু কাজ আমাদের তাই অপেক্ষা করতে ক্ষতি নেই। একটা কাজ কর কয়েকদিন তুই মেয়েটার সাথে একটু ফ্রি হওয়ার চেষ্টা কর। ( স্বাধীন)

হুম তাই করছি। ( সাজ্জাদ)

ওকে ( স্বাধীন)

স্বাধীন ফোন রেখে দিলো।

******

কেটেগেলো বেশ কয়েকদিন এর মধ্যে সাজ্জাদ আর আদ্রিতার বলতে গেলে খুব ভালো একটা বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে। সাজ্জাদ ক্লাস নিচ্ছে এমন সময় প্রধান শিক্ষক ক্লাস আসলেন,

তোমাদের পিকনিক এর ব্যবস্থা করেছি। নেক্সট শুক্রবার তোমাদের পিকনিক। আশা করি তোমরা সবাই যাবে। আমরা ময়নামতি যাবো বলে ঠিক করেছি। সবাই যাবে ত? ( প্রধান শিক্ষক)

জ্বি স্যার আমরা আসবো। ( সব স্টুডেন্ট একসাথে বললো)

সাজ্জাদের আর পড়ানো হলো না। সব স্টুডেন্টরা হাসি তামাশায় মেতে উঠলো।

দোস্ত যাবি ত পিকনিকে? ( আলো)

হ্যাঁ কেনো যাবো না আমি ত অবশ্যই যাবো ( আদ্রিতা)

আমি ও যাবো অনেক মজা হবে রে ( আলো)

হুম ঠিক বলেছিছ ( আদ্রিতা)

কি যে একটা ঝামেলায় ফেঁসে গেলাম এখন নাকি আবার ওদের সাথে পিকনিকে যেতে হবে। ( সাজ্জাদ মনে মনে কথাটি বললো)

****রাতে আদ্রিতাদের বাসায়****

মা আমি পিকনিকে যাবো। ( আদ্রিতা)

না এতো দূর যাওয়ার কোনো দরকার নেই। ( আদ্রিতার মা)

না মা প্লিজ আমি যকই আলো ও যাবে আমার সাথে। ( আদ্রিতা)

কোথায যাবি তোরা? ( আদ্রিতার মা)

ময়নামতি ( আদ্রিতা)

না এতো দূর যাওয়ার কোনো দরকার নেই। ( আদ্রিতার মা)

প্লিজ যায় না। বাবা তুমি ত কিছু বলো যেতে দেও আমাকে ( আদ্রিতা)

আচ্ছা যা ( আদ্রিতার বাবা)

ইয়েয়েসসস আমি ও যাবো অনেক মজা হবে। ( আদ্রিতা)

কবে যাবি? ( আদ্রিতার বাবা)

১ সপ্তাহ পর। ( আদ্রিতা)

আচ্ছা ঠিক আছে। ( আদ্রিতার বাবা)

সামিরা ক্যাম্পে গিয়েছে না হলে আদ্রিতার সাথে সাসিরা ও যেতো। পিকনিকে যাওয়ার অনুমতি পেয়ে আদ্রিতা খুশিমনে ঘৃমাতে চলে গেলো।

**** ১ সপ্তাহ পর ****

সকাল ৬ টার দিকে সবাই বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে। পিকনিকে যাওয়ার জন্য। আদ্রিতার ঘুমে অবস্থা খারাপ। আলোর ও একই অবস্থা। সাজ্জাদ ও এসেছে। ফরমাল ড্রেসে অসাধারণ লাগছে সাজ্জাদকে। আদ্রিতা একটি বেগুনি কালারের ড্রেস পড়েছে। বলতে গেলে সিম্পলের মধ্যে গরজিয়াছ। সবাই বাসে উঠে পড়লো।
আপন গতিতে বাস চলে যাচ্ছে। সবাই গান বাজনাতে মেতে উঠেছে।

*** কয়েকঘন্টা পর ***

সবাই পৌঁছে গেলো। প্রথমে সবাই কতক্ষণ রেস্ট নিয়ে নিলো। তারপর বিভিন্ন খেলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে কেটে গেলো অনেকটা সময়। দুপুরের সময় হয়েছে। সবাই খেতে বসেছে। এর মধ্যে কোনো সিট৷ খালি না পাওয়ায় আদ্রিতা সাজ্জাদের পাশে খেতে বসেছে। সাজ্জাদ একবার মেয়েটিকে পরখ করে নিলো। চুল গুলো বাতাসের কারণে হালকা উড়ছে। মাঝে মধ্যে সাজ্জাদের উপর এসে চুল গুলো পড়ছে। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। বাড়তি কোনো মেকআপ নেই। বেগুনি কালার ড্রেসে অসাধারণ লাগছে। গায়ের রঙ একটু বেশি ফর্সা। গলায় একটি সোনার চেন পড়া। পিকনিকে সাধারণত কেউ সোনার চেন পড়ে না। হয়তো আদ্রিতাদের আর্থিক অবস্থা ভালো। তাই পিকনিকে ও সোনার চেন পড়েছে। সাজ্জাদ আদ্রিতাকে ভালো করে একবার পরখ করে নিলো। তারপর আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। খুব আনন্দ সহকারে কেটে গেলো সবার পিকনিক। সারাদিন শেষে সবাই আজকে ক্লান্ত। এখন বাসায় যাওয়ার জন্য সবাই বাসে উঠেছে

স্যার একটা সমস্যা হয়ে গেছে ( বাস ড্রাইভার কোচিং-এর প্রধান স্যারের নিকট কথাটি বললেন)

কি হয়েছে? ( প্রধান শিক্ষক)

বাস চলছে না। ( বাস ড্রাইভার)

কিকিকি? চলছে না মানে? ( প্রধান শিক্ষক)

জানি না স্যার আমার মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে ইন্জিন এ কোনো ঝামেলা করেছে। ( ড্রাইভার)

সবাই আস্তে আস্তে বাস থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়ালো৷ সন্ধ্যা হযে এসেছে। তার মধ্যে অনেক গুলো ছেলে মেয়ে নিযে কিভাবে ঢাকা ফিরে যাবে কেউ বুঝতে পারছে না। সাজ্জাদ ভাবতে থাকলো কাউকে কল দিয়ে গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে আজকে আর বাসায় যাওয়ার কোনো উপায় থাকবে না। সাজ্জাদ দাঁড়িয়ে কথাগুলো ভাবছে। কোচিং-এর সব স্যাররা একএিত হয়ে ঠিক করছে যে কি করা যায়। হঠাৎ পিছন থেকে সব স্টুডেন্টরা চিল্লিয়ে উঠলো,

সবাই পিছনে তাকিযে দেখলো একদল ডাকাত তাদের ঘিরে রেখেছে। এর মধ্যে কয়েকজন স্টুডেন্টের গলায় ছু*রি ধরে রেখেছে। তার মধ্যে আদ্রিতা ও আছে।

কারা আপনারা ছেড়ে দিন ওদের ( প্রধান শিক্ষক)

আমরা কারা বুঝতে পারছিছ না? ( ডাকাত দলের সর্দার)

ওদের ছেড়ে দিন ওরা বাচ্চা। ভয় পাচ্ছে ওরা ( সাজ্জাদ)

এই হিরো বেশি কথা বলবি না তাহলে কিন্তু এক কো*পে সবাইকে খু*ন করে ফেলবো ( ডাকাত দলের সর্দার)

এই ওদের কাছে যা যা আছে সব কিছু নিয়ে ওদের সবাইকে এখানে মাটিতে পুঁ*তে দে। ( ডাকাত সর্দার আরেকটি ডাকাতের উদ্দেশ্য বললো,

ভয়ে সবার অবস্থা খারাপ। আলোর গলায় ছুরি ধরে নি। আদ্রিতা, মায়া, মারিয়া আর ও কয়েকজন স্টুডেন্টের গলায় ছু*রি ধরে রেখেছে। কয়েকজন ডাকাত এসে সবার ফোন টাকা পয়সা আর ও যা যা ছিলো সেগুলো সব নিয়ে নিলো।

সব দিয়ে দিয়েছি এখন সব স্টুডেন্টদের ছেড়ে দিন। ( সাজ্জাদ)

যাদের গলায় ছু*ড়ি ধরা ছিলো তাদের গলা থেকে ছু*ড়ি নামিয়ে ধাক্কা দিয়ে বাকি স্টুডেন্টদের কাছে ফেলে দিলো। আদ্রিতা যেয়ে নিচে পড়লো। আলো টেনে তুললো আদ্রিতাকে। সাজ্জাদের দেখে খারাপ লাগলে ও আদ্রিতার কাছে যায় নি।

সবাইকে বাঁধ ওদের খু*ন না করলে সমস্যা হবে। ( ডাকাত দলের সর্দার)

কথাটি শুনে যে যেই দিকে পারলো দৌঁড়ানো শুরু করলো, ডাকাত দলের মানুষরা ও দৌঁড়াচ্ছে। আলো আর আদ্রিতা হাত ধরে দৌঁড়ে যাচ্ছে।

আমি আর পারছি না রে ( আদ্রিতা)

থামিস না দৌঁড়াতে থাক ( আলো)

হঠাৎ একজন ডাকাত আদ্রিতা আর আলোর খুব কাছাকাছি চলে আসলো। ভয়ে একজন আরেকজনের হাত ছেড়ে দিলো। দুজন দু’দিকে চলে গেলো। আদ্রিতা একটি গ্রামের দিকে দৌঁড়ানো শুরু করলো আর আলো বাকিরা যেই রাস্তায় গিয়েছে সেই রাস্তায় গেলো। ওদের পিছনে সাজ্জাদ ও ছিলো। আদ্রিতাকে একা ওইখানে যেতে দেখে সাজ্জাদ ও আদ্রিতার পিছনে গেলো। সাজ্জাদের একটি কাজের খুব বড় প্রমাণ আদ্রিতার কাছে আছে। তাই কোনোভাবেই সাজ্জাদ চাই না আদ্রিতার কোনো ক্ষতি হোক। অনেক্ক্ষণ পর বাকিরা একটি পুলিশ স্টেশনের সামনে পৌঁছে গেলো। পুলিশ স্টেশনের সামনে দেখে ডাকাতরা এগোতে আর সাহস পেলো না। কিন্তু তাদের মনে পড়লো দু’জন গ্রামের দিকে গিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য গ্রামের দিকে ছুটতে থাকলো। আদ্রিতা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে থেমে গেলো আর সম্ভব হচ্ছে না আদ্রিতার পক্ষে।

দাঁড়িয়ে থেকে না ( সাজ্জাদ)

আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না আর আলো কোথায়?( আদ্রিতা)

আলো অন্যদিকে চলে গেছে। আমার মসে হচ্ছে এদিকে শুধু আমরা দু’জন এসেছি বাকিরা অন্য দিকে চলো আমাদের সেদিকে আবার যেতে হবে( সাজ্জাদ)

আচ্ছা ( আদ্রিতা)

আদ্রিতা আর আলো যেতে নিবে তার মধ্যে কিছু মানুষ হাতে মশাল আর ছুড়ি হাতে এগিয়ে আসলো সাজ্জাদ আর আদ্রিতার দিকে। ভয়ে আদ্রিতার হাত পা জমে যাচ্ছে। সাজ্জাদ ও চিন্তায় পড়ে গেছে এরা কেনো এগিয়ে আসছে সাজ্জাদ আর আদ্রিতার দিকে?

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৪৬
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

আদ্রিতা আর সাজ্জাদকে গ্রামের কিছু লোক ঘিরে ধরেছে।

এই ছোকরা কেরে তুই? আর এই রাতে একা একটা মাইয়ার লগে কি করছ? ( গ্রামের লোক)

[ এখন সন্ধ্যা কিন্তু গ্রামের জন্য বলতে গেলে রাত]

কথাটি শুনে আরেকজন গ্রামের লোক বলে উঠলো,

না জানি এই মাইয়ার লগে কি আকাম করছে ( গ্রামের লোক)

হ তাই হইবো আমগো গ্রামে এইসব আকাম আমরা সহ্য করুম না

দেখুন আমাদের কথা বুঝার একটু চেষ্টা করুন আমরা বিপদে পড়ে এখানে এসেছিলাম। এর বেশি কিছু না। আমাদের একটি ফোন দিতে পারবেন?( সাজ্জাদ)

হ ধরা খাইলে সবাই এমনই কই যে কিছু করি নাই। তোদের কি মনে হয় আমরা বুঝি না? রাইতে এমন এক সুন্দর মাইয়া পাইলে বুঝি কোনো পোলা মাইয়ারে ন*ষ্ট না কইরা থাকতে পারে? ( গ্রামের লোক)

ঘৃণায় অপমানে আদ্রিতার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। সাজ্জাদ ও বুঝতে পারছে এখানে বেশি কথা বলে নাই।গ্রামের মানুষতের বোঝানো সম্ভব না।

ওগোরে এখনিই বিয়া দিতে হইবো না হইলে গ্রামের নামে বদনাম হইবো।

বিয়ের কথা শুনে ভয়ে আদ্রিতার হাত পা কাঁপছে। সাজ্জাদ ও চমকে উঠলো,

বিয়ে দিবেন মানে? কে আপনারা কোন সাহসে আমাদের বিয়ের কথা বলেন? ( সাজ্জাদ)

আকাম করার পরে ও দেখি পোলার তেজ কমে না।

দেখুন আমার বয়স এখন ২৫ আর মেয়েটির বয়স মাএ ১৫ এ আমাদের মধ্যে বিয়ে সম্ভব না। ( সাজ্জাদ)

যেই মাইয়া তোর লগে এতো রাত পর্যন্ত ছিলো ওই মাইয়ারে পরে কে বিয়া করবো? তোরই এখন বিয়া করা লাগবো ওরে।

সাজ্জাদ আর ও অনেক কিছু বললো কিন্তু কেউ কোনো কথা শুনলো না। গ্রামের লোক কাজী ডেকে আনলো, সাজ্জাদ এবং আদ্রিতাকে কবুল বলতে বললো, আদ্রিতা কাঁপছে। কিছু বলার শক্তি যেনো নেই। গ্রামের লোকদের ভয়ে ৩ কবুল বলে ফেললো বাধ্য হয়ে সাজ্জাদের ও বলতে হলো। ব্যাস একটি পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলো দু’জন। আস্তে আস্তে গ্রামের লোকের ভিড় কমে গেলো। আদ্রিতা হেলে নিচে পড়ে যেতে নিলে সাজ্জাদ আঁকড়ে ধরলো, সাজ্জাদ এবং আদ্রিতার প্রথম স্পর্শ। যেখানে স্পর্শ করা পবিএ এখন তারা পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ।

আদ্রিতা উঠো ( কথাটি বলে সাজ্জাদ আদ্রিতার গালে হালকা হাত দিলো)

গ্রামের এক দম্পতি এগিয়ে এসে বললো,

বাবা তোমাগোরে দেইখ্যা ভালা মানুষই মনে হয়তাছে কিন্তু বুঝো না গ্রারমে এমনে মাইয়া মানুষের লগে পোলা মানুষ দেখলে কেউ ভালা চোখে দেখে না। মাইয়াডা ত মনে হয় তোমান থিকা ভালোই ছোড রাইত হইয়া আইছে একটা কাম করো আমরা দুই বুড়া বুড়ি থাকি আমগো বাসায় রাতটা থাইক্কা যাও। এই রাইতে এমন সুন্দর মাইয়া নিয়া ঘুরা ভালো হইবো না। আর মাইয়াডা মনে হয় জ্ঞান হারাইয়া লাইছে। এই রাতে মাইয়ারে নিয়া থাকবা কই? আবার গ্রারমে ডাকাত দল ও আছে।

সাজ্জাদ একবার আড়চোখে আদ্রিতার দিকে তাকালো আদ্রিতা কি আসলেই সুন্দর? না হলে অচেনা মানুষরা কেনো আদ্রিতাকে সুন্দর বলবে? সাজ্জাদ খেয়াল করে দেখলো সুন্দর কি না জানি না। কিন্তু মেয়েটির মধ্যে আলাদা এক মায়া আছে।

কি ভাবতাছো বাবা? আমগো লগে আইয়ো

সাজ্জাদ বাধ্য হয়ে আদ্রিতাকে উঠিয়ে নিলো গ্রামের লোকটির পিছনে পিছনে তাদের বাসায় গেলো। আদ্রিতার মুখে কিছুটা পানি ছিটালে আদ্রিতার জ্ঞান ফিরে আসলো, আদ্রিতা ডুকরে কেঁদে উঠলো,

আমাদের কি সত্যি বি….?( আদ্রিতা কান্নাস্বরে বললো)

হ্যাঁ মা তোগো আসলেই বিয়া হইয়া গেছে। ( গ্রামের মহিলাটি)

আমি বাসায় কি জবাব দিবো আর আমি কি করবো? এ বিয়ে আমি মানি না। ( আদ্রিতা)

ওই মহিলাটি আদ্রিতাকে নিয়ে অন্য রুমে গেলো। সাজ্জাদ বসে বসে দেখছে সব কেমন জানি হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, বিখ্যাত সাজ্জাদ হোসেনের বউ নাকি এমন পিচ্চি? ওই লোকটি সাজ্জাদের উদ্দেশ্য বললো,

বুঝছো বাবা আমি যখন বিয়া করি তোমগো চাচি আসিলো আমার থেইকা পোনরো বছরের ছোড। যেদিন বিয়া কইরা আনলাম কি ভয়ডা না পাইছিলো আমারে। ভয়ে সে কি কান্নাই না করছিলো। আমি বুইঝা উঠতে পারি নাই তোমগো চাচিরে কেমন সামলামো আমি আছিলাম বাড়ির বড় পোলা রাগ আছিলো অনেক বেশি। সেই আমি তোমগো চাচিরে হাসানোর লাইগ্গা কতো কাহিনীডা নাই করছিলাম তারপর থেইকা তোমার চাচির লগে পোরা বন্ধুর মতো হইয়া গেলাম। এখন কি যে ভালোবাসে তোমার চাচি। বুঝছো পোলা তোমার ও তোমার বউয়ের মন জয় কইরা লইতে হইবো। ওই বাচ্চা মাইয়া ঝামেলা করবো, কান্নাকাটি করবো, তোমারে ঝালাইবো তোমার সহ্য কইরা লইতে হইবো তাইলেই সংসার টিকবো। বুঝছো? ( লোকটি)

জ্বি চাচা বুঝতে পারছি। ( সাজ্জাদ)

*****

বুঝছো মাইয়া এখন ওই পোলা তোমার স্বামী তোমার মাইন্না চলতে হইবো।

কিন্তু চাচি আমার বাসায় আমি কি জবাব দিবো? আর উনাকে আমি পছন্দ করি না। ( আদ্রিতা)

স্বামীর ব্যাপার এমনে কইতে হয় না। শোনো তোমরা একটা পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ। কয়দিন পর এমনি এমনি ভালোবাসা আইয়া পড়বো৷ আমি ও তোমগো চাচারে পছন্দ করতাম না। আর এখন দেখো তোমগো চাচা ছাড়া বুজি না কিছুই। স্বামীরে সম্মান করবা। আচলে বাইন্ধা রাখবা ভালো না বাসলে কিন্তু অন্য মাইয়ার দিকে ঝোঁক আইয়া পড়বো। কোনো বউ কিন্তু এইডা সহ্য করতে পারবো না বুঝছো? তাই ভালোবাসা দিয়ে আগলাইয়া রাখবা। বুঝছো? ( মহিলাটি)

আদ্রিতা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।

আসো অনেক রাইত হইয়া গেছে খাইয়া ঘুমাও( মহিলাটি)

আদ্রিতা মহিলাটির সাথে বের হলো। দেখলো সাজ্জাদ আর ওই লোকটি গল্প করছে। মহিলাটি ভাত বেড়ে দিলো, আদ্রিতা না খেয়ে বসে আছে। খাবারের মধ্যে ভাত আর মাছ দিয়েছে।

কি গো মাইয়া খাও না কেনো?

চাচি আমি মাছ বাঁচতে পারি না। ( আদ্রিতা)

বাচ্চা মাইয়া ত তাই এইডা পারো না। বাবা তুমি একটু বউডারে মাছ বাইছা দেও ( মহিলাটি)

সাজ্জাদ কিছু না বলে আদ্রিতাকে মাছটি বেছে দিলো কিছুটা সংশয় নিয়ে আদ্রিতা খেয়ে নিলো। সাজ্জাদ ওই লোকের ফোন নিয়ে প্রধান শিক্ষককে কল দিলো তিনি বলেছেন পুলিশের আশ্রয় নিয়ে এখন একটি নিরাপদ জায়গায় আছে। যেহেতু সাজ্জাদ আর আদ্রিতা গ্রামের মধ্যে আছে তাই এখন আসতে সাজ্জাদকে ফিরে আসতে না করেছে। না হলে আবার ডাকাত দল হামলা করতে পারে। প্রধান শিক্ষক সব স্টুডেন্টদের বাসায় ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে আজকে তারা ফিরবে না। ওই দম্পতি আদ্রিতা আর সাজ্জাদকে থাকার জন্য একটি রুম দিলো। সাজ্জাদ আর আদ্রিতা সেই রুমে প্রবেশ করলো,

দেখো একটি এক্সিডেন্টে ছিলো এই বিয়েটি খুব শীঘ্রই ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবো। (সাজ্জাদ)

ডিভোর্স এর কথাটি শুনে আদ্রিতার কলিজাটা যেনো কেঁপে উঠলো। পবিএ সম্পর্ক গুলো বুঝি এমন হয়? আদ্রিতা সাজ্জাদের কথা শুনে কিছু বললো না। কি বলবে? আদ্রিতা ত এই বিয়ে করতে চাই নি। কিন্তু এখন বিচ্ছেদের কথা শুনে সেটি ও সহ্য করতে পারছে না।

তোমার বয়স যেনো কতো? ( সাজ্জাদ)

১৫ বছর ( আদ্রিতা)

কি বাচ্চা মেয়ের পাল্লায় পড়লাম রে। ( সাজ্জাদ)

আমাকে একদম বাচ্চা বলবেন না। কেনো আপনার কি বুড়ি বউ দরকার? ( আদ্রিতা)

তাহলে তোমার কি মনে হয় তোমার মতো ছোট মেয়ের সাথে আমি সংসার করবো?( সাজ্জাদ)

আপনি জানেন কমপক্ষে প্রতিদিন ২,৩ টা করে প্রপোজ পায়। এর মধ্যে একটি ছেলে প্রায় ডিস্টার্ব করতো। একদিন ইচ্ছে মতো মেরেছি তারপর থেকে আর ডিস্টার্ব করি নি। ( সাজ্জাদ)

সাজ্জাদ অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,

কি তুমি মেরেছো? ( সাজ্জাদ)

হুম ত সমস্যা কি? আমাকে ডিস্টার্ব করেছে তাই মেরেছি। আদ্রিতা খান সহজে কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। ( আদ্রিতা)

আদ্রিতার শেষ কথাটি সাজ্জাদের পছন্দ হলো। সাজ্জাদ ও কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। তাহলে একটি দিক থেকে আদ্রিতা আর সাজ্জাদের মিল পাওয়া গেলো।

আমার ঘুম পেয়েছে ঘুমাবো আমি। আপনি নিচে ঘুমান আমার বিছানায় আসবেন না। ( আদ্রিতা)

এই ঠান্ডায় আমি নিচে কেনো ঘুমাবো? আর তোমার বিছানা মানে? ( সাজ্জাদ)

যাই হোক আমি আপনার সাথে ঘুমাবো না।( আদ্রিতা)

আজ একটা সত্যিকারের বউ থাকলে এমন করতো না আমার সাথে ( সাজ্জাদ)

কথাটি শুনে আদ্রিতা কিছু একটা ভেবে বললো, আচ্ছা বিছানায় ঘুমাতে পারেন কিন্তু মাঝখানে বালিশ দেওয়া থাকবে। ( আদ্রিতা)

ওকে ( সাজ্জাদ)

কিন্তু এখানে কোনো কম্বল নেই ঠান্ডা লাগবে অনেক। ( আদ্রিতা)

চাচা, চাচি এতোক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে তাই ঘুমিয়ে যাও। তাদের ডিস্টার্ব করা যাবে না। ( সাজ্জাদ)

আচ্ছা ( আদ্রিতা)

সাজ্জাদ এবং আদ্রিতা শুয়ে পড়লো। আদ্রিতা কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের রাজ্য হারিয়ে গেলো। সাজ্জাদের ঘুম নেই। বুঝতে পারছে না হুট করে এই বিয়ের কি পরিণাম হবে? আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে দেখলো ঠান্ডায় কাঁপছে। কপালে হাত দিয়ে দেখলো প্রচন্ড জ্বর। সাজ্জাদ কি করবে বুঝতে পারছে না। বাধ্য হযে এক হাত দিয়ে আদ্রিতাকে আঁকড়ে ধরলো যেনো কিছুটা উষ্ণতা পাই। এখন আদ্রিতা সাজ্জাদের কাছে হালাল। এই ছোঁয়াতে কোনো পাপ নেই। সাজ্জাদ ও একসময় ঘুমিয়ে পড়লো আর সাজ্জাদের বাহুতে আদ্রিতা…….

#চলবে

#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ৪৭
#লেখিকাঃ আদ্রিতা খান অদ্রি

সকাল সকাল সাজ্জাদের ঘুম ভেঙে গেলো। আদ্রিতাকে ডেকে তুললো। আদ্রিতার হালকা জ্বর আছে। ওরা দু’জন উঠে রুম থেকে বের হলো।

কি গো ঘুম হইছে নি তোমগো? ( মহিলাটি)

জ্বি চাচি ঘুম হয়েছে। ( সাজ্জাদ)

মাইডার মুখখানা এমন শুখনা লাগে কেন?( মহিলাটি)

এমনিই চাচি ( সাজ্জাদ)

না মাইডারে ত ভাল্লাগতেছে না। কথাটি বলে মহিলাটি আদ্রিতার শরীরে হাত দিযে বললো,

তোমার বউডার দেহি বহুত জ্বর। ( মহিলাটি)

জ্বি চাচি রাতে একটু জ্বর এসেছিলো। ( সাজ্জাদ)

একটা কাম করো মাইয়া তুমি গোসল কইরা নেও জ্বর একদম যাইবোগা ( মহিলাটি)

কি এই জ্বরে আবার গোসল করবে? ( সাজ্জাদ)

হ বাবা আমগো জ্বর হইলে আমরা এমনই করি। ( মহিলাটি)

না চাচি থাক এখন আর গোসল করা লাগবে না। ( সাজ্জাদ)

আইচ্ছা ( মহিলাটি)

এমন সময় ওই লোকটি আসলো। সাথে কাজী ডেকে এসেছে। কালকে শুধু মুখে কবুল বলে সাজ্জাদ আর আদ্রিতার বিয়ে হয়েছ৷ আজকে রেজিস্টি করার জন্য ওই লোকটি কাগজ পএ রেডি করে এনেছে। সাজ্জাদ জানে এখানে কথা বলে কোনো লাভ নেই। তাই চুপচাপ সই করে দিলো। সাজ্জাদকে দেখে আদ্রিতা ও সই করে দিলো।

যাক তোমগো বিয়ার দলিল তাইলে রেডি হইছে ( লোকটি)

হুম ( সাজ্জাদ)

একটা কাম করো বাবা মাইয়াডারে ঘরে নিয়া যাও। আমি ঘরেই তোমগো খাবার পাঠাইয়া দিতাছি। ( মহিলাটি)

আচ্ছা চাচি ( সাজ্জাদ)

সাজ্জাদ আর আদ্রিতা ঘরে ডুকলো জ্বরের কারণে আদ্রিতা মাথা ঘুরে পরে যেতে নিলো সাজ্জাদ উঠিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো।

বেশি খারাপ লাগছে? ( সাজ্জাদ)

মাথা ঘুরছে ( আদ্রিতা)

চুপ করে শুয়ে থাকো ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা ও আর কিছু না বলে চুপ করে শুয়ে থাকলো। কিছুক্ষণ পর মহিলাটি এসে খাবার দিয়ে গেলো। সাজ্জাদ নিজ হাতে আদ্রিতাকে খাইয়ে দিলো। খাবার খাওয়ার পর আদ্রিতা কিছুটা সুস্থ অনুভব করছে।
সাজ্জাদ প্রধান শিক্ষকের কাছে কল দিয়ে জানিয়ে দিলো আদ্রিতাকে নিয়ে আসছে।

চাচি আমরা যায় তাহলে? ( সাজ্জাদ)

হ বাবা যাও আর শোনো তোমার বউডারে আদর সোহাগ দিয়া ভরাইয়া রাইখ্খো ( মহিলাটি)

কথাটি শুনে আদ্রিতা কিছুটা লজ্জা পেলো।

দোয়া করবেন বলে আদ্রিতা আর সাজ্জাদ বেরিয়ে পড়লো। গ্রামের রাস্তায় সব দম্পতি হেঁটে চলেছে। সামনে অনেক কাঁদা দেখে আদ্রিতা দাঁড়িয়ে পড়লো।

কি হয়েছে দাঁড়ালে কেনো? ( সাজ্জাদ)

এই কাঁদায় যদি পড়ে যাই? ( আদ্রিতা)

সাজ্জাদ কিছু বলতে নিবে পরে মনে হলো জ্বরের কারণে ঠিক নেই আসলে ও যদি পরে যাই? তাই কিছু না বলে সরাসরি আদ্রিতাকে কো*লে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো,

কি করছেন ছাড়ুননন ( আদ্রিতা)

শুনলে না চাচি কি বলেছে? বউরে আদর দিয়ে রাখতে। ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা লজ্জায় আর কিছু বললো না। সাজ্জাদ ও মুচকি হেঁসে হেঁটে চলেছে।

-*****

তোমরা এসেছাে কি ভয়টা না পেয়েছিলাম। ( প্রধান শিক্ষক)

আমরা ঠিক আছি। ( সাজ্জাদ)

এই আদ্রিতা ঠিক আসিছ তুই? ( আলো)

আদ্রিতা এখনো একটি ঘোরের মধ্যে রয়েছে।

কিছু বলছিছ না কেনো? ( আলো)

হ্যাঁ আমি একদম ঠিক আছি। ( আদ্রিতা)

সবাই বাসে উঠে পড়লো। এক অনিশ্চয়তার ভিড়ে ছুটে চলেছে দু’টি মানুষের জীবন।

*****এক সপ্তাহ পর *****

আদ্রিতাদের কোচিং-এ ওই স্যার সুস্থ হয়ে গিয়েছে। তাই এখন আর সাজ্জাদ আসে না। সাজ্জাদের সাথে এখন আদ্রিতার কথা হয় না। কিন্তু আদ্রিতার অস্থিরতা কমে না সাজ্জাদের সাথে কথা বলার জন্য। পবিএ সম্পর্ক গুলো বুঝি এমনই হয়। আদ্রিতা কোচিং করে বের হলো। মনে অস্থিরতা কাজ করছে কোনো কিছুই যেনো এখন ভালো লাগে না। কিশোরী মনে কারোর প্রতি প্রেমর দেখা মিলছে। আনমনে আদ্রিতা হেঁটে চলছিলো। হঠাৎ সামনে দেখলো সাজ্জাদ কারোর সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে। আদ্রিতা স্থির হয়ে গেলো। হাত পা যেনো কাঁপছে,

তুমি এখানে? ( সাজ্জাদ)

কোচিং করে বের হলাম। ( আদ্রিতা)

ও কেমন আছো? ( সাজ্জাদ)

আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি? ( আদ্রিতা)

হুম আমি ও( সাজ্জাদ)

আদ্রিতা আর কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সাজ্জাদই আবার বলে উঠলো,

ওকে পরে কথা হবে। কথাটি বলে সাজ্জাদ চলে গেলো।

দুর কেনো যে কিছু বলতে পারি না ( আদ্রিতা দাঁড়িয়ে মনে মনে কথাটি বলছিলো) তখন হঠাৎ সাজ্জাদের আওয়াজ শুনতে পেলো,

এই শুনো? ( সাজ্জাদ)

হ্যাঁ? না মানে জ্বি বলেন ( আদ্রিতা)

আমার ফোন নাম্বার কোনো দরকার হলে ফোন দিয়ো। ( সাজ্জাদ)

আদ্রিতার কাছে মনে হচ্ছে ফোন নম্বর নই, চাঁদের একটি টুকরা পেয়ে গেছে এতো খুশি লাগছে আদ্রিতার কাছে। সাজ্জাদ ফোন নম্বর দিয়ে চলে গেলো। আদ্রিতা ও নম্বর নিয়ে চলে আসলো। কিন্তু কোনো মেসেজ বা কল দেওয়ার সাহস হয় নি।

****পরেরদিন ****

কোচিং-এ যেয়ে আদ্রিতা জানতে পারলো সাজ্জাদ আবার কিছুদিন তাদের ক্লাস নিবে। আদ্রিতা অনেক খুশি হলো। সাজ্জাদ ক্লাস এসে একনজর আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে ক্লাস নেওয়া শুরু করলো। পবিএ সম্পর্ক গুলো সত্যি খুব সুন্দর আস্তে আস্তে আদ্রিতা সাজ্জাদের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে।

__________৬ মাস পর ________

দেখতে দেখতে ৬ মাস কেটে গেছে। এতোদিন সাজ্জাদ প্রায় সময় আদ্রিতাদের ক্লাস নিয়েছে। আদ্রিতা এখন সম্পূর্ণরূপে সাজ্জাদকে ভালোবাসে। শুধু প্রকাশ করা বাকি। এতোদিন ফোনে কথা বলা, ছোট খাটো ভালোবাসার দিক গুলো আদ্রিতার মনে সাজ্জাদের জন্য ভালোবাসা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আজ আদ্রিতা সাহস করে সাজ্জাদকে বলছে একটি রেস্টুরেন্টে আসতে আদ্রিতা কিছু কথা বলবে। সাজ্জাদ রাজি হয়েছে আসবে। হ্যাঁ আজকে আদ্রিতা আদ্রিতার ভালোবাসা প্রকাশ করবে সাজ্জাদের কাছে । আদ্রিতা আলোকে বলেছে সাজ্জাদকে ভালোবাসে কিন্তু বিয়ের কথাটি বলে নি।

*****সন্ধ্যার সময় *****

সাজ্জাদ আসতে রাজি হতো না। কিন্তু ওই রেস্টুরেন্টে সাজ্জাদের অফিসের একটি অনুষ্ঠান রয়েছে। তাই সাজ্জাদের ত আসতেই হতো আর আদ্রিতা আসবে শুনে আর না করে নি ওকে ও আসতে বলেছে। আদ্রিতা সুন্দর করে সেজে প্রবেশ করলো রেস্টুরেন্টে। সাজ্জাদ আদ্রিতাকে দেখে উঠে আসলো সাথে ২,৩ জন এসেছে। আদ্রিতার সাথে শুধু আলো এসেছে।

আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। ( আদ্রিতা)

আমার ও তোমার সাথে কিছু কথা আছে। ( সাজ্জাদ)

কথাটি শুনে আদ্রিতা অনেক খুশি হয়ে গেলো।

আগে আমি বলি? (আদ্রিতা)

হুম বলো ( সাজ্জাদ)

১ সেকেন্ড ভাইয়া আপনারা কথা বলুন আমি একটু আসছি। আলো ইচ্ছে করে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। সাজ্জাদ ও বাকিদের দূরে যেতে বললো

হুম এখন বলো। ( সাজ্জাদ)

আপনার সাথে আমার যেই ঘটনাটি এক্সিডেন্টে হয়েছিলো সেটির বাস্তব রূপ দিতে চাই। আমি আপনাকে ভালোবাসি। সারাজীবন আপনার সাথে থাকতে চাই। ( আদ্রিতা এক নিশ্বাসে কথা গুলো বললো)

পাগল হয়ে গেছো নাকি? তোমার মতো মেয়েকে নিয়ে আমি সংসার করবো কোন কারণে? যা হয়েছিলো তা একটি এক্সিডেন্টে ছিলো। তোমার মতো মেয়েকে আমি ভালোবাসি না। আর আজকে তোমার সাথে কথা বলতে চেয়েছি কারণ ডিভোর্স পেপারে সাইন করার জন্য। বিয়ের ৬ মাস হয়ে গেছে এখন আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।

কথাগুলো শুনে আদ্রিতা পুরো পাথরের মতো হয়ে গেলো। বিয়ের মতো পবিএ একটি জিনিসকে আপনি এইভাবে নিচ্ছেন? ( আদ্রিতা)

বললাম না আমি তোমাকে ভালোবাসি না। কি দেখে ভালোবেসেছো আমাকে? আমার টাকা দেখে? যখনই শুনেছো আমি বড় ব্যবসায়ী হতে যাচ্ছি তখনই আমার প্রেমে পড়ে গেলে? ( সাজ্জাদ)

ব্যাস, এতটুকুই যথেষ্ট ছিলো আদ্রিতার আত্মসম্মানে আঘাত করার জন্য।

কোথায় সাইন করতে হবে বলে দিন আপনাকে মুক্ত করে দিচ্ছি। ( আদ্রিতা)

সাজ্জাদ পেপারটি এগিয়ে দিলো। আদ্রিতা কোনো কথা না বলে চুপচাপ সাইন করে দিয়ে চলে আসলো। পিছনে ফিরে একবার তাকায় নি পর্যন্ত। সাজ্জাদ কিছুটা আহত হয়েছিলো মনে মনে। পরে আবার ভাবলো সাজ্জাদ যা যা বলেছে তাতে আদ্রিতার এমন আচরণ করা ঠিকই আছে। সেদিনের পর সাজ্জাদ আর আদ্রিতার চেহারা পর্যন্ত দেখেনি। কোচিং-এ যেয়ে জানতে পারে আদ্রিতা কোচিং ছেড়ে দিছে। স্কুলে খবর নিয়ে দেখলো স্কুল ও বদলে নিয়েছে। আদ্রিতার ফোন নম্বর ও বন্ধ। হ্যাঁ আদ্রিতার সাথে যোগাযোগ করার আর কোনো রাস্তা সাজ্জাদের কাছে ছিলো না।

******

সেদিনের অপমানের পর আদ্রিতা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। আর কখনো সাজ্জাদের সামনে আসবে না। অনেক কষ্ট করে মা বাবাকে ম্যানেজ করে স্কুল, কোচিং সব বদলে ফেলেছিলো। আদ্রিতা ওই সিমটি ও কখনো ব্যবহার করে নি আর। মাঝখানে শুধু টিভিতে খবর দেখেছিলো দেশের বড় ব্যবসায়ী হিসেবে সাজ্জাদকে পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কোনো রকম খবর বা দেখা তাদের হয় নি।কিন্তু ভাগ্যের কি অদ্ভুত খেলা? সামিরাকে বিয়ে করার জন্য সাজ্জাদ আসলো আর আবার দেখা হলো সাজ্জাদ আর আদ্রিতার।

****বর্তমান সময়*****

আদ্রিতা নিচে বসে কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নিচেই ঘুমিয়ে পড়িছিলো। এমন সময় বারান্দা দিয়ে কেউ একজন প্রবেশ করলো। আদ্রিতাকে নিচ থেকে উঠিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো। আদ্রিতার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিলো। মায়াপরি কালকে থেকে এই পৃথিবীর সামনে তুমি আমার। আদ্রিতার গায়ে কম্বল টেনে দিয়ে লোকটি বেরিয়ে পড়লো।

#চলবে