এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব-৩১+৩২

0
317

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_৩১
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

তানহা রান্না করছে,চৈতালি তানহার পাশে গালে হাত দিয়ে বসে আছে।মনে হচ্ছে চৈতালির কেউ নেই।অনাথ এতিম মেয়ে।চৈতালি মন খারাপ করে বলল।

–ভাবি তুমি আগের মতো নেই।কেমন জানি বড় ভাবি ভাবি ভাব চলে আসছে।আমার সাথে আগের মতো বেশি কথা-ও বলো না।তুমি আমাকে মন থেকে মাফ করতে পারোনি।

–দেখো চৈতালি তরোয়ালের আঘাতের সুস্থতা আছে।কিন্তু কথার আঘাতের সুস্থতা নেই।তুমি আমাকে যেসব কথা বলেছো।কথাগুলোর ওজন অনেক বেশি।তুমি বলেছো।তাই তোমার কাছে বেশি কিছু মনে হচ্ছে না।কিন্তু আমি শুনেছি।আমি জানি আর আমার আল্লাহ জানে,আমাকে কতটা ক্ষত করেছে।তোমার কথা গুলো।আমাকে একটু সময় দাও।আমি সময়ের সাথে সবকিছু ভুলে যাবার চেষ্টায় আছি।

–ভুল মানুষের পাল্লায় পড়ে,কিভাবে তোমাকে কষ্ট দিলাম।এখন আফসোস হচ্ছে,জানো ভাবি।এমন ভুল কেউ যেনো,কোনোদিন না করে।সবকিছু সহ্য করা যায়।কিন্তু পরিবারের মানুষের কষ্ট সহ্য করা যায় না।পরিবারের মানুষকে কষ্ট দিতে গিয়ে,নিজেই ঠকে গেলাম।

–নারী-রা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় কেনো জানো।অতিরিক্ত মায়ার কারনে,আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি মা-বোনদের অতিরিক্ত মায়ার থেকে হেফাজত করুন আমিন।শুনো চৈতালি জীবনে যাই করবে,তাই করবে কখনো কোনো ভুল ব্যক্তির মায়ায় অতিরিক্ত মাত্রায় পড়া যাবে না।কারণ মানুষ যখন দুনিয়ার মায়ায় পড়ে,তখন সে আখেরাতকে ভুলে যায়।আর মানুষ যখন ভুল মানুষের মায়ায় পড়ে।তখন সে,নিজের ব্যক্তিত্ব আর অস্তিত্ব দুটোই ভুলে যায়।তুমি জীবনকে জান্নাত বানাবে নাকি জাহান্নাম বানাবে।এখন সিদ্ধান্ত তোমার,আজ থেকে কাউকে অতিরিক্ত মাত্রায় মায়া করা যাবে না।তুমি আবির ভাইয়ের মায়ায় পড়ে,নিজের ব্যক্তিত্ব আর অস্তিত্ব দুটোই ভুলে গিয়েছিলে,নিজেকে কতটা নিচে নামিয়ে ফেলছিলে,বলতো।জীবন থেকে শিক্ষা নাও চৈতালি।এখন থেকে কোনো কিছু করার আগে,দশবার ভাববে,পরিবারকে জানাবে।কাউকে বিশ্বাস করার আগে,তাকে যাচাই-বাছাই করে নিবে।নিজকে এমন ভাবে গড়ে তুলো,সবাই তোমাকে দেখে আফসোস করে।

চৈতালি আবার কান্না করছে।চোখের পানি মুছে বলল।

–আমি আর তোমাদের কষ্ট দিব না ভাবি।তোমাকে যে,আঘাত করেছি।তার জন্য নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না।

–আমরা ক্ষমা করার কেউ না চৈতালি।ক্ষমা করার মালিক আল্লাহ।তুমি মন থেকে অনুতপ্ত হলে,তিনি ঠিক তোমাকে মাফ করে দিবেন।

তানহার সাথে চৈতালি কথা বলছিল।ইফাদ এসে চৈতালি পাশে চৈতালির মতো গালে হাত দিয়ে বসলো।দু’জনই ইফাদের দিকে তাকালো।

–ভাইয়া তুমি এভাবে গাল হাত দিয়ে বসে আছো কেনো?

–আমার বউ আমার সাথে রাগ করে আছে।

–বউ তো’ অনেক ভালো।অন্য কোনো মেয়ে হলে,সংসার ছেড়ে কবেই চলে যেত।ভাগ্য করে একটা বউ পেয়েছো।

–তোরা প্লিজ আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকিস না।এভাবে তাকিয়ে থাকলে,আমার শরম করে।

তানহা মুখ ঘুরিয়ে নিল।চৈতালি ভাইয়ের কথা শুনে হাসছে,ইফাদ চৈতালির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল।

–শোন কিছু কান্না তুলে রাখ,দেশের যে,অবস্থা কবে জানি পানির অভাব পড়ে।তখন না হয়।তুই তোর চোখের পানি দিয়ে সাধারন জনগণের উপকার করসি।এই নে তোর সাত হাজার টাকা।বিকালে গিয়ে তোর পছন্দের আংটি টা নিয়ে আসিস।

চৈতালি খুশি হয়ে ভাইয়ের দিকে তাকালো।খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে বলল।

–ভাইয়া তোমার মনেই আছে।আজকেই যাব।ও’ ভাবি দু’জনেই আছো।তোমাদের একটা কথা বলতে চাই।

–আমার বউকে নিয়ে বাদে বলবি।

–তোমার বউকেই লাগবে।তোমার বউকে নিয়ে অচিন দেশে হারিয়ে যাব।কেউ আমাদের খুঁজে পাবে না।আমরা বনেবাদাড়ে ঘুরে বেড়াবো।

–কি বলতে চাইছো।আসল কথা বলো চৈতালি।

–ভাইয়া আমি চাকরি করতে চাই।আমার বাসায় থাকতে ভালো লাগে না।নিজেকে খুব একা মনে করি।তোমরা যদি অনুমতি দাও।আমি প্রতিষ্ঠিত হতে চাই।এক লাফে গাছে ওটা যায় না।আমি ছোট থেকে বড় হতে চাই।তোমাদের সবার দায়িত্ব নিতে চাই।তুমি তোমার সুন্দর জীবনটা আমাদের সুখের জন্য ত্যাগ করেছো।এবার আমি তোমাদের জন্য কিছু করতে চাই।

ইফাদ চৈতালি মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল।

–তানহা আমাদের চৈতালি কি খুব বড় হয়ে গেল।কি সুন্দর বড়দের মতো কথা বলছে।এত বুদ্ধি কই থেকে হলো তোর।আমি থাকতে তোর কোনো চিন্তা নেই বোন।আমি যতদিন বেঁচে আছি।তোরা সবাই রাজরাণী হয়ে থাকবি।

–তোমরা অনুমতি দিলেই কালকে যাব।

–কোথায় যাবি।

–আমি অনেক জায়গায় চাকরির আ্যপ্লাই করেছি।একটা কম্পানি থেকে আমাকে সিলেক্ট করেছে।কালকে সেখানেই যেতে হবে।

–আমি থাকতে তুই চাকরি করবি বোন।আচ্ছা তুই যখন বলেছিস।শালীনতা বজায় রেখে বাহিরে চলাফেরা করবি।নিজেকে রক্ষা করে সবকিছু করবি।আর কখনো ভুল পথে পা দিবি না।আচ্ছা বোন আমার।বাহিরে কেউ কিছু বললে,কোনো সমস্যা হলে বাসায় এসে,জানাবি।কখনো কোনোকিছু লুকাবি না।

–কথা দিলাম তোমাদের থেকে আর কখনো কোনোকিছু লুকাবো না।

–আম্মুকে বলেছিস।

–হ্যাঁ আম্মুকে রাতেই বলেছি।আম্মু অনুমতি দিয়েছে।এবং তোমাদের থেকে অনুমতি নিতে বলেছে।

–আচ্ছা কালকে আমি তোকে সাথে করে নিয়ে যাব।

চৈতালি খুশিতে মাথা নাড়াল।

পরের দিন সকাল বেলা,ইফাদ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্ট পড়ছে।মাথায় চিরুনি করেছে সুন্দর করে।তানহা পেছনে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ইফাদ হাতে ঘড়ি পড়ছিল।তানহা এসে ইফাদকে নিজের দিকে ঘোরালো।ইফাদের দিকে তাকিয়ে বলল।

–মাশাল্লাহ।এত সাজগোছ করে বাহিরে যেতে হবে কেনো?যাচ্ছো তো’ চৈতালির সাথে,সেখানে নিশ্চয়ই অনেক মেয়ে আছে।তাদের দেখানোর জন্য এত সুন্দর করে সেজে যাচ্ছো।

–আস্তাগফিরুল্লাহ ঘরে বউ রেখে,আমি কেনো অন্য মেয়েদের জন্য সাজবো।

–ঘরের বউয়ের জন্য সাজেছো।ঘরের বউ দেখেছে।বলতে বলতে ইফাদের শার্টের ওপরের দু’টো বোতাম লাগিয়ে দিল।চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে,চুলে নারিকেল তেল দিয়ে দিল।হালকা করে মুখে-ও দিয়ে দিল।
ইফাদ হতভম্ব হয়ে তানহার দিকে তাকিয়ে আছে।

–এটা কি করলে,,

–আমার বর আমার কাছে সুন্দর হলেই হবে।আর কারো কাছে সুন্দর হওয়া লাগবে না।

–তাই বলে বাহিরে যাব।একটু পরিপাটি হয়ে যাব না।লোকে দেখলে কি বলবে।

তানহার আর কোনো কথা বলল না।রাগ করে বিছানা গোছাতে গেল।ইফাদ তানহার হাত ধরে নিজের সামনের দিকে ঘুরালো।তারপরে দু-হাত আবদ্ধ করে নিয়ে বলল।

–কথায় কথায় রাগ কর কেনো?সুন্দর করে বুঝিয়ে বলবে,আমি যেমন তোমাকে আমার মনের মতো করে নিয়েছি।তুমিও আমাকে তোমার মনের মতো বানিয়ে নিবে।

তানহা মুখ ফুলিয়ে আছে।দেখে ইফাদ তানহার গালে অধর ছুঁইয়ে দিল।তারপর নিজের সাথে মিলিয়ে নিল।

–তানহা চোখ বন্ধ করো।

–কেনো?

–আগে করো তারপরে বুঝতে পারবে।তানহা ইফাদের কথা মতো চোখ বন্ধ করল।ইফাদ তানহার অধর যুগল নিজের আয়ত্তে করে নিল।

চৈতালি ভাইয়া বলে,ডাকতে ডাকতে আসছিল।চৈতালির ডাক শুনে দু’জনেই দূরে সরে দাঁড়াল।চৈতালি ভাইয়ের রুমে এসে বলল।

–ভাইয়া তৈরি হয়েছো।দাঁড়াও আমার রুম থেকে কাগজ পত্র গুলো নিয়ে আসি।

–আমি’ও যাচ্ছি তোর সাথে,বলে এক মুহুর্ত দাঁড়াল না।চৈতালির সাথে চলে গেল।তানহা হেসে নিজের কাজে মন দিল।ইফাদ চৈতালি রুমে এসে,চৈতালির চিরুনি দিয়ে,চুলগুলো ঠিক করে নিল।

–ভাইয়া তুমি আমার চিরুনি নিলে কেনো?

–তোর ভাবি আমার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়েছে।চুলে নারিকেল তেল দিয়ে দিয়েছে।তোর ভাবি মনে করে আমি প্রেম করছি।তুই বল ঘরে বউ রেখে আমি কেনো পাপ কাজে লিপ্ত হব।

–ভাবি একদম ঠিক কাজ করেছে।আমি হলে,মুখ কালো রং মাখিয়ে দিতাম।ভয়ে কেউ আমার বরের দিকে তাকাতো না।বলেই জিভে কামড় দিল চৈতালি।ইফাদ গম্ভীর হয়ে চৈতালির দিকে তাকালো।

–পারলে এখনই গিয়ে এই কথাটা-ও তোর ভাবির কানে নিয়ে আয়।এখনই কালি নিয়ে দৌড়াবে আমার মুখে দেওয়ার জন্য।ইফাদের কথা শুনে চৈতালি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

ফাইয়াজ ভোর পাঁচটা থেকে তোকে ডাকছি।আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিস না।খুব বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলি।আজ থেকে তোর বাবার অফিস তুই সামলাবি।তোর বাবার বয়স হয়েছে।আর কতদিন খাটবে বল তো।এবার বাবার ব্যবসার হাল তোকে ধরতে হবে।মায়ের কথা শুনে,আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো ফাইয়াজ।ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলল।

–উনি রসাতলে যাক।তবুও আমার দেখার বিষয় নেই।তোমার বরের এত বড় ব্যবসা।আমি সামলাতে পারবো না।কারন আমি ব্যবসার ব ও জানি না।পরে কিছু হলে,সব দোষ আমার হবে।আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না।

–এটা তোর কেমন ব্যবহার।এই বয়সে এসে,আমার হাতে মার খাস না।তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে।বাবার সাথে অফিসে যাবি।

–ওনাকে দেখলেই আমার ঘৃণা লাগে।সহ্য করতে পারি না।তোমার কাছে,আমি দুর্বল।সুযোগ বুঝে তোমাকে পাঠিয়ে দিয়েছে।এসব আমি বুঝি না।মনে করেছো।

–বাবা হয় তোর এসব কি ধরনের কথাবার্তা ফাইয়াজ।

–শোনো তোমার বরের অফিসে একটা শর্তে কাজ করতে পারি।আমার পিএ হিসেবে কোনো মেয়ে থাকতে পারবে না।আমার পিএ হিসেবে,আমার বন্ধু অভিকে রাখতে চাই।যদি তোমার বর রাজি থাকে।তাহলে আমি ভেবে দেখতে পারি।

–তুই যা বলবি।তোর বাবা সব কিছু শুনবে।

ফাইয়াজ কোনো কথা না বলে,উঠে চলে গেল।

চৈতালি আর ইফাদ রাস্তা দিয়ে হাঁটছে।চৈতালির মুখে হাসি বিদ্যমান।মনে হয় চাকরিটা হয়ে যাবে।

–ভাইয়া মনে হচ্ছে,আজকে আমার চাকরিটা হয়ে যাবে।

–হয়ে গেলে আলহামদুলিল্লাহ।আমার বোনের খুশিতে আমার খুশি।

–ভাইয়া বেলি ফুলের মালা কিনে দাও।ইফাদ কোনো কথা বলল না।চৈতালির জন্য বেলি ফুলের মালা কিনে নিয়ে আসলো।হাতে একটা লাল টকটকে রংয়ের গোলাপ।চৈতালি বলল।

–এটা কার জন্য বুঝেছি।ভাবি জন্য।ইফাদ কিছু বলল না।চৈতালি বেলি ফুলের মালাটা হাতে পেচিয়ে নিল।

ইফাদ বাসায় এসে,তানহার সামনে ফুলটা ধরে বলল।

–আমি তোমাকে ভালোবাসি বউজান।তানহা ইফাদের দিকে তাকিয়ে আছে।ইফাদ তানহাকে তাড়া দিয়ে বলল।

–ওভাবে তাকিয়ে না থেকে ফুলটা নাও।আমার শরম লাগছে।তানহা এবার শব্দ করেই হেসে ফেলল।কি সুন্দর সেই হাসি।এই হাসি মাখা মুখখানা দেখে হাজার বছর কাটিতে দিতে ইচ্ছে করছে ইফাদের।দু-নয়ন ভরে তানহাকে দেখছে।তানহা ইফাদের হাত থেকে ফুলটা নিয়ে বলল।তাহলে শরম কাটিয়ে মনের কথাটা বলেই ফেললে।বলেই ইফাদকে জড়িয়ে ধরলো।

চৈতালি বই পড়ছিল।হঠাৎ ফোনে মেসেজ আসলো।মেসেজটা দেখে চৈতালি খুশিতে চিৎকার দিয়ে উঠলো।তানহা রান্না করছিল।চৈতালির চিৎকার শুনে,চৈতালির রুমের দিকে গেল।তানহাকে দেখে চৈতালি তানহাকে জড়িয়ে ধরলো।

–ভাবি আমার চারকিটা হয়ে গেছে।এবার আমি তোমাদের সবার দায়িত্ব নিতে পারবো।আর ভাইয়ার ওপরে একা চাপ পড়বে না।ভাইয়া কোথায় ভাবি।

–তোমার ভাই বাসায় নেই।কাজে গিয়েছে।আসতে আসতে বিকেল হবে।চৈতালি নিজের মায়ের কাছে গেল।সবাই খুব খুশি হলো।

পরের দিন সকাল বেলা চৈতালি সুন্দর ভাবে পরিপাটি হয়ে নিল।আজকে অফিসের প্রথম দিন।দেরি করলে চলবে না।একটু আগেই বেড়িয়ে গেল।অফিসে এসে সুন্দর ভাবে সাজানো গোছানো দেখলো।একটা মেয়ে চৈতালির পাশে এসে বলল।

–তুমি আর আমি সেদিন একসাথ বসে ছিলাম।তোমার চাকরিটা হয়ে গেছে।

–জ্বী আমার চাকরিটা হয়ে গেছে।

–আমার চাকরিটা-ও হয়ে গেছে।আজকে অফিসে নতুন বস আসবে।তাই এত আয়োজন।

চৈতালি ছোট করে বলল ওহ্।

যথাযথ সময়ে ফাইয়াজ অফিসে প্রবেশ করলো।সবাই ফুল দিয়ে ফাইয়াজকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।চৈতালি এই কথাটা জানতো না।চৈতালির দেওয়ার মতো কিছু নেই।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে চৈতালি।সবার সাথে কুশল বিনিময় করে,নিজের কেবিনের দিলে গেল ফাইয়াজ।পেছনে অভিও আছে।ফাইয়াজ অভিকে ডেকে বলল।নতুন যাদের চাকরি দেওয়া হয়েছে।তাদের ডেকে নিয়ে আসতে।ফাইয়াজের কথামতো।অভি তিনজনকে ডেকে নিয়ে আসলো।তার মধ্যে চৈতালি-ও আছে।ফাইয়াজ দুজনকে কিছু প্রশ্ন করলো।চৈতালির দিকে চোখ পড়তেই।ভ্রু কুঁচকে তাকালো।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে চৈতালি।মেয়েটার চেহারা কিছুটা নষ্ট হয়ে গেছে।আগের উজ্জলতা হারিয়ে গিয়েছে।আগের থেকে অনেকটা শুকিয়ে গিয়েছে।শরীরে আঘাতের চিহ্ন বিদ্যমান।ফাইয়াজ চৈতালিকে এত নিখুঁত ভাবে দেখছে কেনো?সে,নিজেও জানে না।বাকি দু’জনকে চলে যেতে বলল।সবাই চলে যেতেই চৈতালিকে বসতে বলল।চৈতালি ফাইয়াজের কথা মতো বসলো।

–স্যারের ছাত্রী আমার অফিসে,আজকে তোমার স্যার তোমার সাথে আসে নাই।

–দুঃখিত কিছু মনে করবেন না।আমি এখানে কাজ করতে এসেছি।ব্যক্তিগত কথা বলতে আসি নাই।

–তুমি এবার আসতে পারো।চৈতালি কোনো কথা না বলে,নিজের কেবিনের দিকে চলে গেল।আজকে নতুন।সবকিছু অচেনা না।একটু অস্বস্তি হচ্ছে চৈতালির।তবুও কিছু বলল না।এভাবেই কয়টাদিন চলতে থাকলো।আস্তে আস্তে সবকিছু ভালো লাগতে শুরু করেছে চৈতালির।সামনে চৈতালির ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা।পরীক্ষার টাকা দিতে কলেজে এসেছে।আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল।আবিরের সাথে যেনো দেখা না হয়।কিন্তু জীবনের সব চাওয়া পূর্ণ হয় না।অফিস রুমের দিকে যেতেই দেখলো।আবির অফিস রুম থেকে বেড়িয়ে আসছে।চৈতালি ভেতর থেকে নিজেকে বেশ শক্ত করে নিল।এমন ভাব ধরলো।আবিরকে সে,চিনেই না।ভয় পেলে চলবে না।ভয়কে জয় করতে হবে।বলেই সামনের দিকে এগোতে লাগলো।আবির চৈতালিকে কলেজে দেখে অবাক হলো।সবচেয়ে বেশি হবার হলো চৈতালি আবিরকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।এমন ভাব ধরলো।যেনো,সে আবিরকে চিনেই না।বিষয়টা আবিরের মনে আঘাত আনলো।যে,মেয়েটা তার জন্য পাগল ছিল।সেই মেয়েটা আজকে তাকে পাত্তা দিল না।অবাক নয়নে চৈতালি দিকে তাকিয়ে আছে।চৈতালি ভুল করেও পেছনে ফিরে চাইল না।পরীক্ষার টাকা জমা দিয়ে।অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

আবির চৈতালিকে ডেকেছিল।চৈতালি শুনে-ও না শোনার ভান করে চলে গেল।আবির রেগে চৈতালিকে ফলো করতে লাগলো।চৈতালি অফিসের সামনে এসে দাঁড়াল।আবির গাড়ি থেকে নেমে,চৈতালির সামনে এসে দাঁড়াল।চৈতালি যেদিকেই যাচ্ছে।সেদিনই যাচ্ছে।চৈতালি বিরক্ত হয়ে গেল।রাগী দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকলো।

–আমাকে ইগনোর করছো?কয়দিন আগে-ও আমার পেছনে লেজ কাটা কুকুরের মতো ঘুরেছো।চৈতালি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।কষে আবিরের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।জোরে জোরে চিৎকার করে বলল।

–কু*ত্তা*র* বা*চ্চা* আমার জীবনটা শেষ করে তোর শান্তি হয় নাই।আমাকে মেরে ফেলার জন্য আমার কাছে এসেছিস।আমাকে কুকুর বলছিস।তুই তো’ কুকুরের থেকে-ও অধম।ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করে বেড়াস।আমাকে রাগাস না।ফলাফল ভালো হবে না।

চৈতালির ব্যবহারে রীতিমতো অবাক হয়ে যাচ্ছে আবির।দাঁতের ওপরে দাঁত চেপে বলল।

–আমার কাগজটা আমাকে ফিরিয়ে দাও।আমি আর কখনো বিরক্ত করবো না।কাগজটা না পেলে তোমাকে আমি খুন করে ফেলবো।

–কোনো কাগজ আমার কাছে নেই।আবির চৈতালির গলা চেপে ধরতে যাবে।তার আগেই চৈতালি আবিরের অন্ডকোষ বরাবর লাথি মারলো।আবির মাটিতে লুকিয়ে পড়ল।চৈতালি আশেপাশে কিছু একটা খুঁজছে।ভেতরে অদ্ভুত একটা জেদ চেপে গিয়েছে।অদ্ভুত একটা শক্তি কাজ করছে চৈতালির মধ্যে।একটা ইট হাতে,তুলে নিল।আবিরের দিকে ছুরতে যাবে।আবির উঠে,চৈতালি চুলগুলো নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিল।দু’জন ধস্তাধস্তি করছে।কয়েকজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছে,কেউ এগিয়ে আসছে না।হঠাৎ করেই আবিরের গালে কষে থাপ্পড় পড়ল।তাল সামলাতে না পেরে,আবির নিজে পড়ে গেল।আবিরকে তুলে,আবিরের গলা চেপে ধরলো।

–আমার অফিসের সামনে এসে,আমারই অফিসের কলিগের গায়ে হাত দিস।এতবড় সাহস তোর।আজকে তুই আমার হাত থেকে বেঁচে ফিরতে পারবি না।ফাইয়াজের দু-চোখ অসম্ভব ভাবে লাল হয়ে গেছে।মনে হচ্ছে বহুদিনের ক্ষোভ মিটাচ্ছে।আবিরের জিভা অর্ধেক বেড়িয়ে আসছে।তবুও ফাইয়াজ আবিরকে ছাড়াছে না।কয়েকজন এসে ফাইয়াজকে ছাড়িয়ে দিল।আবিরের মুখ দিয়ে হালকা রক্ত বের হচ্ছে,নিস্তেজ শরীরটা মাটিতে নেতিয়ে পড়েছে।ফাইয়াজ রেগে চিৎকার করে বলে উঠলো।

–এতক্ষন সবাই মিলে,রংতামাশা দেখছিলেন।একটা কাপুরষ একটা মেয়েকে অসন্মান করছিল।তখন সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলেন।একটা অমানুষকে বাঁচাতে সবাই ছুটে এলেন।আপনারা-ও এই ছেলেটার মতো কাপুরষ।এই মেয়েটার জায়গায় যদি,আপনাদের মা-বোন থাকতো।তাহলে এভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতেন।এই কারা কারা ভিডিও করেছেন।সবাই ডিলিট করবেন।এই অভি সবার ফোন নিয়ে নে।একজন-ও যেনো পালাতে না পারে।মানুষ বিপদে পড়লে সাহায্য করেই না।ভিডিও করার বেলা আগে আগে ফেসবুক দিয়ে ভালো সাজতে হবে না।কাপুরষের দল।

–এই ছেলে ভদ্র ভাবে কথা বলো।আমরা মনে করেছি।ওরা স্বামী-স্ত্রী তাই কিছু বলি নাই।

–আপনি আপনার স্ত্রীরর সাথে রাস্তায় এসে মারামারি করেন।সেজন্য আপনার মন মানসিকতা এতটা নিচু।

ইফাদ দোকানে দোকানে টাকা তুলছিল।কে কত টাকা দিল।সেটা হিসেবের খাতায় লিখছিল।হঠাৎ করে দূরে থাকা চৈতালি আর ভীড় জমা মানুষের দিকে নজর যায়।বোনকে বিধস্ত অবস্থায় দেখে,কলিজা কেঁপে উঠলো ইফাদের।দ্রুত পায়ে রাস্তা পার হলো।চৈতালির কাছে এসে,আবিরকে নিচে পড়ে থাকতে দেখে চৈতালির কাছে গেল।ভাইকে কাছে পেয়ে চৈতালি ইফাদকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।

চলবে…..

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_৩২
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

চৈতালি ভাইকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করেই কান্না করছে।চৈতালির মনে এসে হানা দিয়েছে ভয়।আবির চৈতালিকে মেরেছে,সেই ভয় না।তার ভাই যদি তাকে আবার ভুল বুঝে ভেবেই চৈতালির পুরো শরীর কেঁপে উঠলো।

–ভাইয়া বিশ্বাস করো।আমি আবির স্যারের সাথে দেখা করি নাই।আমি কলেজে গিয়ে ছিলাম।সামনে আমার ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা।তাই পরীক্ষার টাকা জামা দিতে গিয়ে ছিলাম।আমি আমার সাধ্য মতো,আবির স্যারকে ইগনোর করেছি।আমাকে ডেকেছিল।আমি শুনেও না শোনার ভান করে চলে আসছি।আমি জানতাম না। আবির স্যার আমার পেছনে পেছনে আসছে।আবির আমাকে একটা কাগজ দিয়েছিল।সেটা আমি হারিয়ে ফেলছি।তার জন্য স্যার আমার শরীরে আঘাত করেছে।একদমে কথা গুলো বলে থামলো চৈতালি।

চৈতালির কথা শুনে,ইফাদের চোখ দুটি অসম্ভব ভাবে রক্তিম বর্ন ধারন করল।রাগে পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে।ইফাদ আশেপাশে কিছু একটা খুঁজতে লাগলো।পাশে বিল্ডিংয়ের কাজ চলছিল।সেখানে থেকে লোহার রডের কিছু কাটা অংশ পেল।কোনো কথা না বলে,লোহার রডটি হাতে তুলে নিল।একজন শ্রমিক ইফাদ কে প্রশ্ন করলে,ইফাদ কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে,সোজ আবিরের সামনে এসে দাঁড়াল।

–অমানুষের বাচ্চা।সেদিন আমার বউয়ের শরীর আঘাত করেছিস।আজকে আমার বোনের শরীরে কোন সাহসে হাত বাড়িয়েছিস।সেদিন জনগণ তোকে আমার হাত থেকে,বাঁচিয়ে দিয়েছে।আজকে তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।

আবির ইফাদের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল’ ইফাদ আমার কথাটা একবার শুনো।কথাটা বলার সাথে সাথে ইফাদ আবিরের হাতে বারি মারলো।আবির ব্যথায় কুঁকড়িয়ে উঠলো।আবিরের দুই হাতে,পরপর আটটা বারি মারলো।ভয়ংকর রুপ ধারন করেছে ইফাদ।হাত ছেড়ে আবিরের পুরো শরীরে আঘাত করছে।আবির সহ্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে।চিৎকার করে ইফাদকে থামতে বলছে।আবিরের চিৎকার ইফাদের কান পর্যন্ত পৌঁছালে-ও হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছাল না।আবিরের নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে শুরু করেছে।ইফাদ আবিরকে মারতে মারতে আধমরা করে ফেলছে।অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে,দেখে ফাইয়াজ ইফাদকে সরিয়ে নিয়ে আসলো।

–ভাইয়া হয়েছে থামুন।মরে যাবেন উনি।এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না।দরকার পড়লে উনার নামে,নারী নির্যাতনের মামলা করে দিবেন।

–এই তুমি আমাকে থামতে বলছো।তোমার বউ-বোনকে যদি কোনো অসভ্য ছেলে স্পর্শ করতো।তাহলে তুমি এভাবে বলতে পারতে।বলতে বলতে ফাইয়াজের দিকে ঘুরলো।ভয়ংকর ভাবে রেগে আছে ইফাদ।ফাইয়াজকে দেখা মাত্রই রাগের মাত্রা দিগুণ বেড়ে গেল।

–ইফাদ ভাইয়া তুমি।ভাইয়া আমাকে চিনতে পেরেছো।আমি ফাইয়াজ পুতুল আপুর..

পুরো কথাটা শেষ করতে পারলো না।তার আগেই ইফাদ বলল।

–একজন বেইমানের ভাই।তোমার সাহস কি করে হয়।আমাকে স্পর্শ করার।একদম আমাকে স্পর্শ করবে না।তোমরা ভাই-বোন যার জীবনে যাও।তাকেই খেয়ে ফেলো।চৈতালি বোন আমার দেখে শুনে থাকিস।আমি আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না।এখানে থাকলে কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলবো।তানহাকে কিছু বলার দরকার নেই।শুধু শুধু চিন্তা করবে।বলেই ইফাদ দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো।যাওয়ার আগে আবিরকে জোরে একটা লাথি মারলো।ফাইয়াজ বেশকিছু দূর ইফাদের পিছু পিছু গিয়েছে।ফলাফল শূন্য।বাধ্য হয়ে ফিরে এলো।চৈতালির কান্না থেমে গেছে।মন কিছুটা হলে-ও শান্ত হয়েছে।ঘরে বউ রেখে যারা,অন্যের মেয়ের জীবন নষ্ট করে।এইসব জা*নো*য়া*রদের এমন হওয়ায় উচিৎ।বলেই আবিরের নিথর দেহে একটা লাথি দিয়ে অফিসের দিকে এগিয়ে গেল।আবিরকে সাহায্য করার জন্য কেউ আসছে না।সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।আবির যতই খারাপ হোক না কেনো?আবির ফাইয়াজের সাথে পড়েছে।কেনো জানি ছেলেটার জন্য মায়া হলো।দ্রুত আবিরকে হসপিটালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিল।

অফিসের কেবিনে বসে ছটফট করছে ফাইয়াজ।ইফাদের সাথে কথাটা বলাটা তার খুব জরুরি।কিন্তু ইফাদ তো’ তার সাথে কথাই বলতে চাইছে না।আজ বাবার কারনে,কতগুলো জীবন নষ্ট হয়ে গেছে।বাবা নামক মানুষটাকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।কি এমন ক্ষতি হতো।সব অনিয়মের দেওয়াল ভেঙে দিত।তার আগে আমাকে জানতে হবে।চৈতালি সাথে কি হয়েছে।মেয়েটা আজকে বেশ ভয় পেয়েছিল।বলেই চৈতালিকে নিজের কেবিনে ডাকলো।

ফাইয়াজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে চৈতালি।মুখটা মলিন হয়ে আছে।চুলগুলো এলোমেলো।মেয়েটাকে কেমন বিধস্ত দেখাচ্ছে।হাজারো কষ্ট বুকে চেপে রেখে ঘুরে বেড়াচ্ছে মেয়েটা।চৈতালিকে যেদিন প্রথম দেখেছিল।সেদিনই ফাইয়াজের চৈতালির জন্য মায়া তৈরি হয়েছিল।কখনো প্রকাশ করেনি।চৈতালি আশেপাশে থাকলে,ফাইয়াজের অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে।কেনো করে ফাইয়াজ নিজেও জানে না।চৈতালির জীবন যেনো নষ্ট না হয়।সেজন্য ফাইয়াজ নিজেই প্রিয়াকে সবকিছু বলে দিয়েছিল।চৈতালিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল।

–দাঁড়িয়ে আছো কেনো?চেয়ার টেনে বসো।চৈতালি ফাইয়াজের কথা মতো চেয়ার টেনে বসলো।

–ইফাদ ভাইয়া তোমার কেমন ভাই হয়।ফাইয়াজের প্রশ্ন কিছুটা ভরকে গেল চৈতালি।নিজেকে সামলে নিয়ে জবাব দিল।

–আমার নিজের ভাই হয়।আপনি কিভাবে চিনেন ভাইয়াকে?

–তোমার ভাইয়ার সাথে আমাকে কথা বলিয়ে দিতে পারবে।উনি না আমার সাথে কথা বলতে চান না।দেখলেই রেগে যায়।আমাকে-ও হয়তো,,

চৈতালি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।ফাইয়াজ কি বলবে শোনার জন্য নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।কিন্তু ফাইয়াজের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।

–চৈতালি অফিস শেষে,আমরা একটা রেস্টুরেন্টে বসতে পারি।

–না।

–কেনো?

–আমি কেনো আপনার সাথে রেস্টুরেন্টে যাব।তাছাড়া ছেলে মানুষের ওপরে থেকে আমার বিশ্বাস উঠে গিয়েছে।আমাকে এমন কোনো কথা বলবেন না।যেনো আমি চাকরি ছাড়তে বাধ্য হই।

ফাইয়াজ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।ভুল মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকে গেলে,আর কাউকেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হবে না।এটাই তো স্বাভাবিক।

–আল্লাহ তায়ালার কসম,তুমি কষ্ট পাও।বা তোমার সন্মানে আঘাত আনবে।এমন কিছু করবো না।শুধু কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই।

–মাফ করবেন।আমি যেতে পারবো না।

–দশটা মিনিট আমাকে সময় দাও।

–আমি আপনার অফিসে কাজ করতে এসেছি।আপনার সাথে ঘুরতে আসি নাই।

–এই মেয়ে এত বেশি বুঝো কেনো?যা বলছি তাই করবে।যদি ভুল কিছু বলি।তাহলে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিবে।তুমি বুঝতে পারছো না।ইফাদ ভাইয়ার সাথে কথা বলাটা আমার জন্য খুব জরুরি।

–আচ্ছা আগে ভাবির থেকে ফোন দিয়ে অনুমতি নেই।

ফাইয়াজ ভ্রু কুঁচকে তাকালো চৈতালির দিকে,চৈতালি সোজাসাপটা উত্তর দিল।দেখুন ভাববেন না।আমি ন্যাকামি করছি।আমি আমার পরিবারকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।আমি চাই না।আমার জন্য আমার পরিবার নতুন করে কষ্ট পাক।আপনার সাথে আমাকে দেখে,অন্য কেউ বাসায় বলবে,তখন সবাই আমাকে ভুল বুঝবে।সেটা আমি মেনে নিতে পারবো না।ভাবিকে ফোন দিব।ভাবির থেকে অনুমতি নিব।আম্মুর থেকে অনুমতি নিব।ভাইয়া রেগে আছে।তা-না হলে,তার থেকে অনুমতি নিতাম।আপনার সাথে আমার যেতে একদমই ইচ্ছে করছে না।আর মন যেখানে সায় না দেয়।সেখানে না যাওয়ায় উত্তম।বলেই চৈতালি বেড়িয়ে চলে গেল।

দুপুরে ইফাদ বাসায় এসে,কোনো কথা না বলে,নিজের রুমে এসে হাত-পা ছড়িয়ে শুইয়ে পড়ল।রাগে পুরো শরীর এখনো কাঁপছে।রাস্তায় এভাবে থাকলে,যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো।তানহার জন্য হলে-ও তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ রাখতে হবে।ইফাদ চিৎকার দিয়ে তানহাকে ডাকলো।তানহা এসে ইফাদের সামনে হাজির হলো।

–সারাদিন কোথায় থাকো।আমি এসেছি দেখতে পাও নাই।নাকি চোখ কপালে নিয়ে হাঁটো।আমি যতক্ষণ বাসায় থাকবো।সব সময় আমার সামনে থাকবে।

তানহা একবার ইফাদকে পরখ করে নিল।ঠান্ডার দিনে-ও মানুষটা ঘামছে।কি হয়েছে মানুষটার।শরীর খারাপ করছে।কোনোদিন তো’ এই সময় বাসায় আসে না।এত রেগেই বা আছে কেনো?তানহা গিয়ে ইফাদের পাশে বসলো।শাড়ির আঁচল দিয়ে,কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো মুছে দিল।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল।

–কি হয়েছে তোমার।এভাবে ঘামছো কেনো?তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে।ডক্টরের কাছে যাবে তুমি।খুব শান্ত হয়েই বলল।

–কথা বলবে না।চুপচাপ বিছানায় এসে,আমার বুকে মাথা রাখো।আমার জ্বলন্ত হৃদয়কে,শীতল করে দাও।

তানহার মনে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।এখন ইফাদকে কোনো প্রশ্ন করে-ও লাভ নেই।মাথা ঠান্ডা হলে,আস্তে ধীরে সুস্থে শুনে,নেওয়া যাবে।কিন্তু অবাধ্য মনটা মানছে না।শোনার জন্য আকুল হয়ে আছে।তানহা কথা না বাড়িয়ে।চুপচাপ ইফাদের বুকে মাথা রাখলো।এটাই তোর তার শান্তির স্থান।তার দলিল করা সম্পত্তি।ইফাদের বুকে মাথা রাখলে,তানহার সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।ভেতর থেকে অদ্ভুত একটা শান্তি অনুভব করে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে আরো শক্ত করে ইফাদকে জড়িয়ে ধরলো।বেশ কিছু সময় অতি বাহিত হয়ে গেল।দু’জনেই নিরবতা পালন করছে।দু’জন দু’জনকে অনুভব করছে।ভালোবাসার মানুষের কাছে থেকে যে,শান্তি পাওয়া যায়।তা পৃথিবীর কারো কাছে থেকে পাওয়া যায় না।তানহা হালকা করে উঠে ইফাদের দিকে তাকালো।ইফাদের কপালে অধর ছুঁইয়ে দিয়ে,ইফাদের এক গালে হাত রেখে বলল।

–আমরা শরম আলা জামাইয়ের কি হয়েছে।আজকে এত রেগে আছে কেনো?বাহিরে কোনো সমস্যা হয়েছে।তানহার কথায় ইফাদ উঠে বসলো।কিছুক্ষণ ঝিম মেরে থেকে তানহার কোলে শুইয়ে পড়ল।মানুষটাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে,খুব যত্ন সহকারে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।তানহা ইফাদকে বিরক্ত করল না।ইফাদের মাথায় বুলিয়ে দিতে লাগলো।একটু পরে ইফাদ বলে উঠলো।

–আমার কাজ আছে।আমি কাজ রেখে বাসায় চলে এসেছি।

–দুপুরে বেলা এসেছো।না খেয়ে কোথাও যেতে দিব না।

–দেখো বউজান।অনেকটা সময় নষ্ট করে ফেলছি।বিকেলে এসে একবারে খাব।বলেই ব্যাগ নিয়ে হাঁটা শুরু করল।তানহার মনটা খারাপ হয়ে গেল।ইফাদ দরজার আসতেই তানহা বলে উঠলো।

–শুনো”

ইফাদ দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে তানহার দিকে তাকালো।

–কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।আমাকে দ্রুত যেতে হবে।

–আসার সময় আমার জন্য একটা বিড়ালের বাচ্চা নিয়ে আসবে।

–আমি বিড়ালের বাচ্চা কোথায় পাব।

–আমি জানি না।তুমি না আমাকে ভালোবাসো।নিজের ভালোবাসার মানুষের জন্য এতটুকু করতে পারবে না।

–আর কতবার বলবো তানহা।বিড়ালের বাচ্চা না নিয়ে,তুমি নিজেই একটা বাচ্চা নিয়ে নাও।

ইফাদ কথা শুনে,তানহা চোখ বড় বড় করে তাকালো।ইফাদ তানহার দিকে তাকিয়ে হেসে চলে গেল।

–অসভ্য লোক একটা।বিড়ালের বাচ্চার কথা বললেই,আমাকে বাচ্চার খোটা দেয়।বাচ্চা কি হাতের মোয়া চাইলাম আর পেয়ে গেলাম।আমার বাচ্চা না হলে,আমি কি করবো।আচ্ছা আমার বাচ্চা না হলে,উনি আমাকে দূরে সরিয়ে দিবেন।ভাবতেই কলিজা কেঁপে উঠলো তানহার।

রাতে সবাই মিলে খেতে বসেছে।সবার মাঝে নিরবতা বিরাজমান করছে।নিরবতা ভেঙে চৈতালি বলল।

–জানো ভাবি আজকে কি হয়েছিল?

চৈতালির কথা শুনে,ইফাদ চোখ গরম করে চৈতালির দিকে তাকালো।ভাইয়ের দৃষ্টি বুঝে চৈতালির মাথা নিচু হয়ে গেল।তানহা একবার ইফাদ দিকে,আরেকবার চৈতালির দিকে তাকালো।

–চৈতালি চুপ হয়ে গেলে কেনো?আজকে কি হয়েছিল,বললে না তো’।

–আমাদের অফিসে নতুন বস আসছে।তার হাতে নাকি একটা বড় কাজ আসছে।কয়দিন পরে পাকা কথা হবে।যদি হয়ে যায়।স্যার বলেছে সবাইকে এক হাজার টাকা করে বেতন বাড়িয়ে দিবে।সবার মনের একটা করে আশা পূর্ণ করে দিবে।স্যারের পাগলামি দেখে আমাদের পুরোনো স্যার মানে স্যারের বাবা রাগ করেছিল।কিন্তু স্যার তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ করেনি।

–খাওয়ার সময় কথা বলতে নেই চৈতালি।চুপচাপ খেয়ে নাও।কেউ আর কোনো কথা বলল না।সবাই খেয়ে উঠে চলে গেল।তানহা সব কাজ শেষ করে নিজের রুমে আসলো।

–দুপুরে তোমার কি হয়েছিল।

ইফাদ গম্ভীর মুখ করে শুইয়ে আছে।তানহার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিল না।মানুষটা অদ্ভুত।যখন খুব রেগে থাকে।তখন কারো কথার উত্তর দেয় না।মাথা ঠান্ডা বলে,আমি চাই না আমার কোনো কথায় কেউ কষ্ট পাক।রাগের মাথায় কাকে দু’কথা শুনিয়ে দিব।কে মনে কতটা কষ্ট পাবে,তাই সে রাগ হলে চুপ করে থাকে।তানহা বুঝে নিল মহারাজ এখনো রেগে আছেন।আর প্রশ্ন করল না।বিছানায় উঠে গিয়ে ইফাদের পাশে বসলো।ফোনটা হাতে নিয়ে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো।ফোন হাতে নিলেই আবির আর আবিরের বউয়ের ছিব তানহার সামনে আগে আসলো।প্রায় দিন-ই আবির বউকে নিয়ে ফেসবুকে ছবি আপলোড দেয়।অনেক সুন্দর সুন্দর স্ট্যাটাস লিখে দেয়।কি সুন্দর লাগে দু’জনকে।তানহার মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে,তাদের মতো করে ছবি আপলোড করতে।নিজের বিকেক আর ইফাদের কাছে বাঁধা পড়ে যায় বারবার।আজকে সাহস করে বলেই ফেলল।

–আমি ফেসবুকে ছবি আপলোড দিব।

তানহার কথা শুনে ইফাদ এবার নড়েচড়ে উঠে বসলো।তানহার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল।

–না।

–কেনো?

–আমি চাই না।আমার বউকে অন্য কেউ দেখুক।আমার বউ শুধু আমি দেখবো।

–আবির ভাই কি সুন্দর করে তার বউয়ের সাথে ফেসবুকে ছবি আপলোড করে।কত সুন্দর সুন্দর কথা লিখে,আপনাকে আমি যেটাই বলি।সেটাতেই না।বিয়ে হয়ে গেছে বলে কি আমার নিজেস্ব কোনো স্বাধীনতা নেই।আমার কোন ইচ্ছে টা আপনি পূর্ণ করে দিয়েছেন।এর থেকে ভালো আমার আবির ভাইকে বিয়ে করলেই ভালো হতো।নিজের মন মতো চলতে পারতাম।কথা গুলো বলে নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরলো তানহা।এগুলো সে কি বলে ফেলল।স্বামীকে নিয়ে আক্ষেপ করে ফেলল।এই জন্যই রাগের মাথায় কথা বলা উচিৎ না।অনেক সময় এমন কিছু কথা আছে।যা আমরা বলতে চাই না।কিন্তু রাগের মাথায় মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসে।পরে কথা গুলো উপলব্ধি করার পরে,নিজের কাছে নিজেকেই অপরাধী মনে হয়।তানহার করুন দৃষ্টিতে ইফাদের দিকে তাকিয়ে আছে।ইফাদ স্থীর দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ গুলো মুহুর্তেই লাল হয়ে গেছে।বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছে।ইফাদের মুখের দিকে তাকিয়ে তানহার বুকটা কেঁপে উঠলো।তানহা এখন উপলব্ধি করতে পারছে।ইফাদকে কতবড় কথা শুনিয়ে ফেলছে।কথাটা ছোট মনে হলে-ও তার ওজন অনেক।যা পৃথিবীর কোনো কিছু দিয়েই পরিমাপ করা যাবে না।তানহার দু-চোখে অশ্রু এসে ভরে গেল।সে,তো’ তার স্বামীকে আঘাত করতে চায় নাই।একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে দেখে উৎসাহিত হয়।তাই মানুষের ভালো কাজ করে,সকলের উচিৎ ভালো কাজে মানুষকে উৎসাহিত করা।মন্দ কাজে নয়।তানহা ক্ষনিকের আবেগে পড়ে,নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে কষ্ট দিয়ে ফেলল।তানহা ইফাদ হাতে হাত রাখতে যাবে।ইফাদ দ্রুত বিছানা থেকে উঠে বসলো।শান্ত গলায় বলল।

–আবির ভাইকে যখন এতই ভালো লাগে,তাহলে আবিরে ভাইকে বিয়ে করে নিলে না কেনো তানহা?যাও’ গিয়ে তোমার আবির ভাইকেই বিয়ে করে ফেলো।সে,হয়তো তোমাকে এখনো অনেক ভালোবাসে,আমি হয়তো তার স্ত্রীরর মতো বিলাসিতার জীবন তোমাকে দিতে পারি নাই।কিন্তু তোমাকে তোমার মতো করে ভালো রাখার চেষ্টা করে ছিলাম।আজকে তুমি আমাকে অন্য ছেলের সাথে তুলনা দিলে,রাখবো না আর কোনো অভিযোগ।করবো না কোনো শাসন।নেই কিছুতেই বারন।নিজের মন মতো চলো।ফেসবুক ছবি আপলোড দাও।বাহিরে গিয়ে ঘুরে বেড়াও।যেটা ইচ্ছে হয় খুশি করো।আমি আর কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না।বলেই রুম ত্যাগ করল।তানহা দৌড়ে ড্রয়িং রুমে আসলো।

–শুনো আমি এভাবে বলতে চাই নাই।কিভাবে মুখ দিয়ে কথা গুলো বের হয়ে গেল।নিজের প্রতি নিজেরই ঘৃণা হচ্ছে,আমার মন মানসিকতা কতটা নিচু হয়ে গেছে।আমি এভাবে বলতে চাই নাই।প্লিজ তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।তানহার কথা শেষ হবার আগেই ইফাদ দরজা খুলে বাহিরে চলে গেল।ঘড়ির কাটায় রাত এগারোটা বাজে।এত রাতে মানুষটা কোথায় বেড়িয়ে গেল।তানহার রাস্তায় বেড়িয়ে মানুষটার দেখা পেল না।মুহুর্তের মধ্যেই মানুষটা কোথায় গেল।তানহার দৌড়ে রুমে চলে আসলো।ইফাদের নাম্বারে ফোন দিতেই ইফাদ কল কেটে দিয়ে ফোন অফ করে দিল।

চলবে…..