বৃষ্টিময় প্রেম পর্ব-৬৮

0
1276

#বৃষ্টিময়_প্রেম
#পর্বঃ৬৮
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা

দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলো সপ্তাহখানেক সময়। এরই মধ্যে ঢাকার পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা হয়ে গেছে। বলাবাহুল্য, প্রথম পরীক্ষায় আমি চান্স পাইনি। আর ব্যর্থতার সেই রেজাল্ট অন্য পরীক্ষার আগের দিন প্রকাশিত হওয়ায় সেই ডিপ্রেশনে পরের পরীক্ষাতেও হতাশাজনক অবস্থা হয়েছে আমার। মনের মাঝে অস্থিরতা বিরাজ করলে কি আর মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখা যায়? আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়, বারবার মাথায় শুধু নিজের ব্যর্থতা ও হতাশার কথা ভেসে উঠায় ডিপ্রেশনে জর্জরিত হয়ে পড়েছি ক্রমশ। এরই মধ্যে পূর্ণ-ও সুস্থ হয়ে গেছেন পুরোপুরি। বহুদিন অফিসে না যাওয়ায় কাজ জমা পড়েছিলো বেশ, তাই ক’দিন যাবত সকাল সকাল বেরিয়ে যান আবার সেগুলো ওভারটাইম করে কাজ শেষে বাসায় ফিরেন বেশ দেরি করে। এই হতাশাময় অবস্থায় আজকাল না নিজের একা একা থাকতে ভালো লাগে, না উনাকে বেশিক্ষণ কাছে পাই! সবমিলিয়ে এক বড়সড় কস্টের পাহাড় জমে আছে বিষন্ন মনে!

সেই কস্টের পাহাড় যেন আরও ভারী হয়ে গিয়েছিলো দ্বিতীয় রেজাল্টের পরের রাতে পূর্ণর সাথে তুমুল কথা-কাটাকাটি হওয়ায়। এমনিতে আমার ব্যর্থতা নিয়ে, চান্স পাওয়ায় অপরাগ হওয়া নিয়ে বাসার কেউ কিছু বলেনি আমায়। সবাই সান্তনাই দিয়েছিলো নম্রভাবে, বলেছিলো এগুলো নিয়ে মন খারাপ না করতে। অথচ যার থেকে আমি সহানুভূতি চাইছিলাম তিনি কোনোকিছু না বলায় ছোট্ট মনের বেশ অভিমান জমেছিলো তার উপর! এসব নিয়েই রাগে মনের দুঃখ প্রকাশ করেছিলাম তার কাছে, কিন্তু নির্দয় পাষাণ লোকটা আমার কস্টে সহমর্মিতা না দেখিয়ে উল্টো আমার উপরেই রাগ ঝেড়েছিলো! মনের দুঃখে সেদিনের পর থেকে আমাদের মাঝে স্বাভাবিক কথোপকথন হয়নি বরং এক অদ্ভুত নীরবতা চলছে দুজনের মধ্যে।

এখন আমার ঢাকার মধ্যের সব পরীক্ষার রেজাল্ট শেষ, শুধু একটার রেজাল্ট বাকি। আর বাকি আছে রাজশাহীর পরীক্ষা! যেখানে যেতে দিতে চাইছিলেন না বড়াব্বু। তাই তো রাজশাহীর পরীক্ষার একদিন আগে রাতে বড়াব্বুর সাথে বসে কথা হচ্ছিলো ড্রয়িংরুমে। পূর্ণ তখনো বাসায় আসেন নি।
প্রসঙ্গ ছিলো আমি রাজশাহী পরীক্ষা দিতে যেতে চাই কি না! তো বেশ সুন্দরভাবেই একজন বাবার ন্যায় বড়াব্বু আমায় বলছিলেন,

—তুই কি রাজশাহীতে পরীক্ষা দিতে যেতে চাস? দেখ মা, আমি কোনো জোর করবোনা। আমার ইচ্ছে নেই তোকে রাজশাহী যেতে দেওয়ার, তোর ওখানে হয়ে গেলে ঢাকা থেকে বেশ খানিকটা দূর হয়ে যাবে। আর এতদিন পর তোকে পেয়ে আবারো দূরে যেতে দিতে ভালো লাগেনা। প্রাইভেট এ ভর্তি করিয়ে দেই তোকে? কি বলিস?

একটু পর থেমে বললেন,

—আমার দিক থেকে যা ভালো মনে হয়েছে আমি বললাম। কারণ আমি চাইনা তুই আর পরীক্ষা দে। যা হওয়ার হয়েছেই! এখন বাকিটা তোর ইচ্ছা। যদি তুই দিতে চাস তবে আমি মানা করবোনা!

বড়াব্বুর কথায় এক মুহুর্তের জন্য চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম আমিও। মন বলছেনা যেতে মানা করি, বলে দেই আমি এ বাসা ছেড়ে অন্যকোথাও থাকতে চাইনা কিন্তু মস্তিষ্ক আছে দোটানায়। তাই মন ও মস্তিষ্কের দ্বন্দে আমতা আমতা করে কিছু বলতে ঠিক এমন সময় পূর্ণর উদয় হলো ড্রয়িংরুমে। হয়তো বড়াব্বুর কথা শুনেছিলেন বাসায় ঢোকার সময় তাইতো বলে উঠলেন,

—ওকে জিজ্ঞেস করছো কেন, বাবা? যাকে ধরে ধরে পড়ানোর পরেও, পড়াশুনার প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা করে দেওয়ার পরেও যার রেজাল্টের এ দুর্দশা, সে রাজশাহী যেয়েও আর কি করবে? অযথা যাওয়ার কোনো মানে হয়না!

উনার কথায় বজ্রাহতের মতো চেয়ে থাকলাম। যদিও এখানে শুধু বড়াব্বু আর আমি আছি। তবুও উনি এভাবে আমাকে বলবেন? আমার মনের কস্টটা একবারো বুঝবেন না? আমার মনে প্রশ্নের ঝড় উঠতেই বড়াব্বুর ককণ্ঠস্বর কানে এলো,

—এটা কোনো কথা বলার ধরন হলো, পূর্ণ? তুমি দিন দিন বেশি কঠোর হয়ে যাচ্ছো। তুরফা ছোট, হয়তো টেনশনে নার্ভাস হয়ে পরীক্ষা খারাপ দিয়েছে দুটো তাই বলে যে রাজশাহীতেও ওর চান্স হবেনা এটা তুমি কিভাবে বলতে পারলে? রাগের চোটে নিজের ম্যানারস ভুলে যেয়োনা।

—তুমি ওর কস্ট টাই দেখতে পাচ্ছো, আমারটা পাচ্ছোনা? আমি যেটা দেখতে পাচ্ছি সেটাই তো বলছি। দুনিয়ার সবদিকে ও ভালো, অন্য যত কাজ আছে সবকিছুতে ও এক্সপার্ট অথচ পড়াশুনার জায়গায় এসে ফাঁকিবাজি! কত আশা নিয়ে ওকে পড়িয়েছিলাম তুমি জানোনা? আর ও কি করলো?

পূর্ণর একেকটা কথায় মনের মধ্যে জোরেশোরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো! মনে হলো যেন এতক্ষণের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিলেন তিনি! এভাবে বলতে পারলেন তিনি? কস্ট কি উনি একাই পেয়েছেন? যার ব্যর্থতা তার চেয়ে উনার কস্ট বেশি? কিন্তু মনে মনে এতকিছু ভাবলেও বড়াব্বুর সামনে তাকে কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারলাম না। শব্দগুলোও মনের মধ্যেই ঘুরপাক গেলো, মুখ পর্যন্ত পৌঁছালো না! মাথা নিচু করেই চোখ বেয়ে যেকোন মুহুর্তে গড়িয়ে পড়া অশ্রুজল থামানোর চেস্টা করলাম শুধু। বড়াব্বু কিছুক্ষণ পর থেমে বললেন,

—তুরফা নিজের সর্বোচ্চ দিয়েই চেস্টা করেছে, তুমিও সেভাবেই ওকে সাপোর্ট করেছো। এরপরেও ভাগ্য সহায় না হলে আর কি করার? ভাগ্যের উপর তো কারো হাত থাকেনা, তাইনা? কস্ট তোমরা দুজনেই পেয়েছো। এটা তোমাদের পার্সোনাল ব্যাপার তাই বেশিকিছু বলবোনা। শুধু বলবো নিজের রাগকে কন্ট্রোল করো। রাগের বশে এমন কিছু বলে বসোনা যাতে পরে অনুশোচনা হয়।

বড়াব্বুর কথায় চোয়াল শক্ত করে হাতজোড়া মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকলেন পূর্ণ, যেন নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেস্টা করছেন৷ বড় দীর্ঘশ্বাস নিয়ে পূর্ণ কিছু বলতে যাবেন ঠিক তখনি আমার মুখ ফসকে বের হয়ে এলো,

—আমি রাজশাহী যেতে চাই, বড়াব্বু। পরীক্ষা দিতে চাই সেখানে।

আচমকা আমার এমন কথায় বড়াব্বু চমকে গেলেন। উনার থেকে চোখ সরিয়ে পূর্ণর দিক তাকাতেই চোখজোড়া মিলিত হলো, যে চোখের ভাষা অস্পষ্ট! তিনি আদৌ বিস্মিত হয়েছেন কিনা এটা তার নির্বিকার মুখভঙ্গিমা দেখে বোঝা অসম্ভব। যেন সর্বদার ন্যায় গম্ভীরতার খোলসে আড়াল করে রেখেছেন মনের ভেতরের অনুভূতিগুলোকে, সেভাবেই শুষ্ক ঢোক গিললেন। চোখমুখ শক্ত করে উনি কিছু বলে উঠার আগেই বড়াব্বুর আওয়াজ,

—তোরা দুজনই আগে শান্ত হ। এখন মাথা গরম আছে তোদের। রাগের বশে কে কি বলছিস নিজেরাও হয়তো বুঝছিস না। তাই আমি বলবো ভেবেচিন্তে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে!

—আমার যা ভাবার হয়ে গেছে, বড়াব্বু। আমি পরীক্ষা দিবো রাজশাহী যেয়ে। বললামই তো।

—তা তো হচ্ছেনা কারণ আমি নিয়ে যেতে পারবোনা তোমায়। আমার অনেক কাজ আছে…

কথার মাঝখানে আগ বাড়িয়ে থামিয়ে দিলেন পূর্ণ। তীক্ষ্ণ চোখে সেদিক চেয়ে অভিমানী কণ্ঠে বললাম,

—আপনার নিয়ে যেতে হবেও না। আমি জানি আপনি অনেক ব্যস্ত, কাজই করুন। রেজাল্ট যা হওয়ার হোক, আমি তো এ পরীক্ষা দিবোই এবং আমায় বড়াব্বু নিয়ে যাবেন। তাইনা, বড়াব্বু? নিয়ে যাবেন না আমাকে বলুন?

করুণ চোখে বড়াব্বুর দিকে তাকিয়ে থাকায় কাজ হলো! উনার মন গললো। বড়াব্বু ইতস্ততভাবে মাথা নাড়তেই সূক্ষ্ম হাসির রেখা ফুটলো আমার ঠোঁটে। পাশ থেকে মনে হলো পূর্ণ চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছেন কিন্তু আপাতত সেদিকে আমার খেয়াল নেই। আমি আছি মনের অদ্ভুত বাসনায়। হঠাৎ করেই হৃদয়ের মাঝে অদম্য ইচ্ছাশক্তি জাগ্রত হলো। নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে মন চাইলো সবার কাছে! পূর্ণ সহ বাকি সবাইকে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার যে আমিও চাইলে নিজ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো! এতক্ষণে মনে জমে থাকা রাগ যেন হঠাৎ করেই প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসে রুপান্তরিত হলো। এসব ভাবতে ভাবতেই উত্তরের অপেক্ষায় বড়াব্বুর দিক তাকাতে উনি বললেন,

—ঠিক আছে। তুরফা যখন যেতে চাইছে আমি ওকে রাজশাহী নিয়ে যাবো। আমাদের খালাতো বোনের বাসা আছে ওখানে, পরীক্ষা দিয়ে ওখানে যাবো। একদিন থেকে পরেরদিন ফিরে আসবো।

—তুমি ওকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যাবে নাকি পিকনিকে? অযথা থাকবে কেন?

হঠাৎ করে পূর্ণর এমন কথায় তেলেবেগুনে জ্ব/লে উঠলাম আমি। থতমত খেয়ে গেলেন বড়াব্বু। বিস্ময়ের রেশ কাটিয়ে থমথমে গলায় বলে উঠলেন,

—চুপ করো বেয়াদব ছেলে। দিন দিন তোমার একগুঁয়ে কথাবার্তার ধরন দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার!

তবে বড়াব্বুর কথায় পূর্ণর মুখভঙ্গির বিশেষ পরিবর্তন হলোনা। চুপচাপ সেভাবেই একটা ড্যামকেয়ার লুক নিয়ে চলে গেলেন রুমে। একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেদিক চেয়ে রইলাম দুজন। এই লোকটা কোনোদিনও ভালো হবেনা! অসহ্যকর।

_____________________

যথারীতি বড়াব্বুর সাথে রওনা হওয়ার জন্য ভোরে রেডি হচ্ছিলাম। বাড়ির সবার মতো পূর্ণ তখন গভীর ঘুমে মত্ত। কাল রাতেও রুমে আসার পর আর কোন কথা হয়নি আমাদের। ভেবেছিলাম হয়তো জেগে থাকবেন, রাগ-অভিমান থাকলেও সেটা পাশে রেখে বরাবরের মতো আমায় সাহস জুগিয়ে পরীক্ষার জন্য শুভকামনা জানাবেন। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি দিয়ে তার শান্ত নিঃশ্বাস বলছে উনি ঘুমের সাগরে তলিয়ে আছেন। অগোচরেই এক শ্বাস ফেলে তার গালে হাত রেখে আলতোভাবে ঠোঁট ছুইয়ে বিছানা থেকে উঠে আসছিলাম। ওড়নায় টান লাগায় ভেবেছিলাম হয়তো জেগে আছেন, পেছনে ফিরতেই দেখি ঘুমের মাঝেই ধরে রেখেছেন সেটা। পুনরায় হতাশ হয়ে ওড়না থেকে তার হাত সরিয়ে চলে এলাম রুম থেকে। প্রয়োজনীয় সবকিছু হাতে নিয়ে বড়াম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম বড়াব্বুর সাথে। গাড়িতে চেপে বসতেই চলতে শুরু করলো সেটা। গাড়ির জানালা বন্ধ কর‍তে করতে হঠাৎ বড়াব্বু বললেন,

—আসার পূর্ণ তোকে আর কিছু বলেনি তো এ ব্যাপারে? সকাল সকাল বকেনি তো আবার? ঝগড়া হয়েছে তোদের?

বড়াব্বুর কথায় ভ্রু কুচকে গেলো। তাচ্ছিল্যের সাথে ভাবলাম আপনি যার কথা ভাবছেন উনি হয়তো জানেও না আমি এখন বাসা থেকে বের হয়েছি, তিনি তো নিমজ্জিত আছেন গভীর ঘুমে!
তবুও দ্বিধান্বিত কণ্ঠে সুধালাম,

—না তো। কেন কি হয়েছে?

—তাহলে ও সকাল সকাল এভাবে মুখটা অসহায়ের মতো করে দাঁড়িয়ে আছে কেন বেলকুনিতে? নিজেই রাগ দেখাবে আবার নিজেই ভিক্টিমের মতো ভাব দেখাবে। বেয়াদব একটা!

বড়াব্বুর কথায় বিস্মিত হলো চোখজোড়া। উনি উঠে গেছেন? বেলকুনিতেও দাঁড়িয়েছেন? ভাবামাত্রই দ্রুতহাতে জানালা অর্ধেক খুলে পেছন ফিরলাম বাসার দিকে। কিন্তু গাড়ি এতক্ষণে সামনে গেছে। উনাকে দেখা আর হলোনা এ যাত্রায়! চলে গেলাম রাজশাহীর উদ্দেশ্যে!

_____________________

রাজশাহী এসে বড়াব্বুর খালাতো বোন অর্থাৎ ফুপির বাসায় ভালোই কাটছে সময়। পরীক্ষাও বেশ কনফিডেন্সের সাথে দিয়েছি এবার, নির্ভয়ে স্থিরভাবে দাগিয়েছি সবকিছু। আজকের পরীক্ষাটা পুরোপুরি ঠান্ডা মাথায় দিয়ে একটা জিনিস ভালোভাবে উপলব্ধি করেছি, মনোবল স্থির থাকলে আর যাই হোক কাউকে ঠেকানো যায়না। আমার ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। এ পরীক্ষা নিয়ে আমি বেশ ইতিবাচক। আমার সন্তুষ্ট মুখ দেখে বড়াব্বুও যথেষ্ট খুশি। পরীক্ষা শেষে সন্ধ্যায় বসে গল্প করছিলাম সবাই ফুপিদের সাথে। পূর্ণ পরীক্ষা দিয়েই বাসায় যেতে বললেও বড়াব্বু তার-ই বাবা। ছেলের কথাকে পাত্তা না দিয়ে দিব্যি আজকে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন। মনে মনে আমিও খুশি। এরমধ্যে পূর্ণ-র সাথে একটিবারও কথা হয়নি আমার!

রাতের খাবার খেয়ে রুমে চলে এসেছি। বিছানায় বসতেই কল এলো বড়াম্মুর। ফোন রিসিভ করতেই বললেন,

—কি রে, পরীক্ষা কেমন দিয়েছিস? কথাই তো হয়নি সারাদিন। তুই আর তোর শশুড় দুইজনই দেখি ভুলে গেছিস আমাদের। কেউ ফোন দিলোনা একবারো পুরোটা দিনে! তাকে ফোন দিলাম ধরলোনা। তাই তোকে দিলাম। আজ তাহলে তোরা আসছিস না?

—সরি, বড়াম্মু। সবার সাথে দেখা হয়ে ব্যস্ত ছিলাম খুব। পরীক্ষা ভালো দিয়েছি। কাল সন্ধ্যায় ফিরবো ইন শা আল্লাহ! বড়াব্বু ঘুমিয়ে গেছেন হয়তো তাই খেয়াল করেন নি ফোন দিয়েছো।

—আচ্ছা, সমস্যা নেই। দেখেশুনে আসিস। একটা ভালো খবর আছে তোদের জন্য। এখনি বলবো নাকি কাল আসার পর জানাবো?

—এখনি বলো শুনি…

কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরেও ওপাশ থেকে আওয়াজ না আসায় বারকয়েক “হ্যালো” বলার পর খেয়াল করলাম আমার ফোন বন্ধ হয়ে গেছে! সারাদিনের ব্যস্ততায় ফোনে চার্জ দিতেই ভুলে গিয়েছিলাম। ব্যাগ হাতড়ে চার্জার খুজতে গিয়েও পেলাম না। তাড়াহুড়ায় কি তবে চার্জারই ভুলে এসেছি নাকি? হতাশ মুখে ভাবলাম!

অতঃপর কাল কারো থেকে চার্জার নিয়ে ফোন চার্জ দিবো ভেবে ঘুমানোর জন্য চোখ বুজে শুয়ে পড়লাম। আনমনেই মাথায় ঘুরতে লাগলো বড়াম্মুর কথা! কি হতে পারে সেই ভালো খবর?

#চলবে