হারিয়েছি নামপরিচয় পর্ব-২৫+২৬

0
305

#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ২৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফাবিহা আচমকা সবার সামনে এসে বলে,
‘এই বিয়ে হতে পারে না। আমি রিফাতের সন্তানের মা হতে চলেছি।’

ফাবিহার কথাটা শুনে উপস্থিত সবাই চমকে উঠে। মেঘলা হতবাক হয়ে যায়। রিফাতের চেহারায় রাগ স্পষ্ট বোঝা যায়। সবাই আচমকা ঘটনা যাওয়া এই ঘটনায় কানাঘুষা শুরু করে। রিফাত ফাবিহাকে রাগী গলায় বলে,
‘কি বাজে কথা বলছ তুমি ফাবিহা? আজ আমাদের বিয়ে। আজকের দিনে এসে তুমি কি সব বলছ।’

ফাবিহা কেদে দেয় সবার সামনে।
‘তুমি এভাবে বিয়ে করে নিলে আমাদের সন্তানের কি হবে? তাকে আমি কিভাবে পিতৃপরিচয় দিব?’

মেঘলা হতবিহ্বল হয়ে যায়। রিফাত ফাবিহার সামনে গিয়ে তাকে শাসিয়ে বলে,
‘এসব নাটক অন্য কোথাও গিয়ে করো তুমি। এখানে তোমার এসব নাটক চলবে না।’

‘এমন কেন করছ তুমি রিফাত? তুমি নিজেও খুব ভালো করে জানো আমি নাটক করছি না। সেদিন ড্রাংক হয়ে তুমি আমার সাথে ই’ন্টিমেট হয়েছিলে। আর এই সন্তান,,,’

ফাবিহার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগে কেউ তার গালে খুব জোরে একটা থা’প্পর দেয়। ফাবিহা হতবাক হয়ে মেঘলার দিকে তাকায়। কারণ থা’প্পরটা মেঘলাই দিয়েছে।

মেঘলা ফাবিহার সামনে আঙুল তুলে বলে,
‘একদম আমার স্বামীর নামে মিথ্যা অপবাদ দিবা না। আমি জানি রিফাত আর যাই করুক তোমার মতো একটা নোং’রা মেয়েকে কোনদিন স্পর্শ করবে না।’

রোজিয়াও তাদের সমর্থনে এগিয়ে আসে।
‘হ্যা আমার ছেলে এমন কাজ করতেই পারে। তোমাকে রিফাতের বাবা এসব নাটক করতে বলেছে তাইনা? আমি লোকটাকে খুব ভালোভাবেই চিনি। নিজের স্বার্থের জন্য উনি সব করতে পারেন। শেষপর্যন্ত কিনা নিজের ছেলের সাথে এমন বাজে একটা খেলা খেললেন ছি!’

আমিনুল হক নিজের স্বপক্ষে বলেন,
‘আমি কিছুই করিনি। এই ফাবিহা মেয়েটাই নিজের এসে আমাকে তার দূর্দর্শার কথা বলেছে। রিফাতের বাবা হিসাবে আমি এটা মানতে পারি নাই যে আমার ছেলে হয়ে ও একটা মেয়েকে ঠকিয়ে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করবে।’

রিফাত অধৈর্য হয়ে যায়।
‘আমি বলছি তো যে এই মেয়েটা যা বলছে সব মিথ্যা। আর ও যে এসব বলছে তার প্রমাণ কি?’

ফাবিহা নিজের চোখের জল মুছে। নিজের ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে বলে,
‘এই যে দেখুন সবাই এটাতে প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট আছে। যেখান থেকে স্পষ্ট জানা যায় আমি প্রেগন্যান্ট।’

মেঘলা ফাবিহার হাত থেকে পেপারগুলো নিয়ে দেখে সে ঠিকই বলছে যে সে প্রেগন্যান্ট। মেঘলা এবার প্রশ্ন করে,
‘কিন্তু এটার কি প্রমাণ যে এই বাচ্চাটা রিফাতের?’

‘আমি জানতাম এই প্রশ্নটা উঠবে। তাই আমি প্রমাণ নিয়েই এসেছি।’

এই বলে ফাবিহা একটা ছবি দেখায় সবাইকে৷ যেখানে রিফাত ও সে খুব ঘনিষ্ঠভাবে ছিল। ছবিটা দেখার পর সবাই ফাবিহার পক্ষে ও রিফাতের বিপক্ষে কথা বলতে থাকে।

৪৯.
রিফাতকে অনেকেই অবিশ্বাস করছে। এটাতে তার বিন্দুমাত্র কিছু যায় আসে না। কারণ রিফাতের বিশ্বাস মেঘলা অন্তত তাকে অবিশ্বাস করবে না। আর হলোও তাই। মেঘলা সবকিছু দেখার পরেও বলে,
‘আমি এসব কিছু বিশ্বাস করি না। এই ছবিটা তো ফেকও হতে পারে। আজকাল কম্পিউটারের সাহায্যে এডিট করে এমন ছবি তৈরি করা যায়। তাই এই সামান্য প্রমাণে আমি রিফাতকে অবিশ্বাস করব না।’

ফাবিহা এবার সবার সামনে অদ্ভুত কাহিনি ঘটিয়ে ফেলে। নিজের ব্যাগ থেকে একটি ব্লেড বের করে নিজের হাতে ধরে।
‘আমি জানতাম সত্যকে সবসময় এভাবে ভুল প্রমাণ করা হয়। আজ রিফাত যদি আমায় বিয়ে না করে তাহলে আমি নিজের সন্তানকে পিতৃপরিচয় দিতে পারব না। আমি এমনটা চাইনা। তাই আজ সবার সামনে নিজের জিবন দিয়ে দেবো। আমার লা’শের উপর দিয়ে তোমাদের নতুন জিবনের সূচনা ঘটুক।’

কথাটা বলে ফাবিহা ব্লেড দিয়ে একটানে নিজের হাতের অনেকখানি কে’টে ফেলে। যার ফলে স্রোতের বেগে তাত হাত দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। উপস্থিত সবাই ঘাবড়ে যায়। কয়েকজন গিয়ে ফাবিহাকে ধরে। ফাবিহা বলতেছিল,
‘আমি নিজের জন্য কিছু চাই না। শুধু নিজের সন্তানের স্বীকৃতি চাই।’

ফাবিহার এই কাণ্ডতে মেঘলা, রিফাত দুজনেই বাকরুদ্ধ। রোদেলা মেঘলার কাধে হাত রাখে।
‘বিয়েটা কি তুই করবি মেঘ? আমার তো মনে হয় মেয়েটা সত্য বলছে। যদি মিথ্যা হতো তাহলে এভাবে নিজের হাত কাট’তো না।’

‘তোরা যে যাই বল আমি রিফাতকে অবিশ্বাস করি না। আমি জানি রিফাত এমন কিছুই করেনি।’

‘বিশ্বাস ভালো কিন্তু অন্ধবিশ্বাস ভালো না বোন।’

মেঘলা আর কিছু বলে না। রিফাত অসহায় দৃষ্টিতে মেঘলার দিকেই তাকিয়ে ছিল। মেঘলা রিফাতের হাত শক্ত করে ধরে বলে,
‘দুনিয়ার সবাই আপনার বিপক্ষে যাক তবুও আমি আপনার পাশে থাকব।’

রোজিয়া মেঘলার মাথায় হাত দিয়ে বলেন,
‘অতীতের ঘটনার জন্য তোমার উপর আমার অনেক রাগ ছিল। আজ আর কোন রাগ রইল না। আমি বুঝতে পারছি আমার ছেলে তোমাকে এত কেন ভালোবাসে। কারণ তুমি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য। আমি জানি তুমি আর রিফাত মিলে সব সত্য সবার সামনে আনবে। আজ যারা আমার ছেলের দিকে আঙুল তুলছে তাদের সবার মুখ তোমরাই বন্ধ করে দিবে।’

‘আপনি দোয়া করুন যাতে তাই হয়।’

৫০.
ফাবিহা হাসপাতালে ভর্তি। তার সাথে দেখা করতে এসেছে আমিনুল হক। ফাবিহার সামনে এসেই আমিনুল হক তার প্রশংসা করে বলতে থাকে,
‘বাহ কত ভালো নাটক করলে তুমি। আমি তোমার ফ্যান হয়ে গেলাম।’

ফাবিহা শ’য়তানী হেসে বলে,
‘এতটুকু তো আমাকে করতেই হতো ডার্লিং। তুমি যখন তোমার বাচ্চার দায়িত্ব নিতে চাইছ না তখন তোমার ছেলেই সেই দায়িত্ব নিক।’

আমিনুল হক ফাবিহার মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে,
‘চুপ। এই কথা আর ভুল করেও উচ্চারণ করবা না।’

ফাবিহা বাকা হেসে বলে,
‘যখন আমার সাথে ফূ’র্তি করছিলা তখন ম-ম ছিল না? ব্যা’টা বুড়ো ভাম। দুটো বউ আছে তাদের দিয়ে পোষায় না। এত বড় বড় বাচ্চাকাচ্চা আছে তোমার তাও তুমি,,,’

‘এই তুমি বেশি কথা বলিও না। আমি ফ্রি তে কিছু করি নি। তোমাকে টাকার ভরিয়ে দিয়েছি। আর বোঝোই তো, আমার দুই বউই বুড়ি হয়ে গেছে। তাদের দিয়ে কি আর পোষায়? আমার তো তোমার মতো মেয়েই দরকার।’

‘টাকার সাথে পেটও তো ভরিয়ে দিয়েছ। এখন এই বাচ্চার দায় কে নেবে বলো তো। সেই কারণে তোমার পরামর্শে তোমার ছেলের উপরই দায় দিলাম।’

আমিনুল হক বলেন,
‘আমি যা করেছি ভালোই তো করেছি। এমনিতেই ঐ মেঘলাকে আমার পছন্দ না। মেয়েটা অনেক ধূর্ত। ওর বাবার সাথে আমার শত্রুতা। তাই এভাবে এক ঢি’লে দুই পাখি মা’রলাম। ‘

‘ভিডিওতে আপনাদের সব কথা রেকর্ড হয়েছে কিন্তু।’

কারো গলার স্বরে দরজার দিকে তাকায় দুজনেই। আর তাতেই চমকে যায়। মেঘলা ও রিফাত এতক্ষণ সব কথা শুনেছে এবং রেকর্ডও করেছে। রিফাত খুব রেগে গেছে। তার বাবা যে এতটা নিচে নামতে পারে সেটা কখনো ভাবতে পারে নি রিফাত।

‘ছি আব্বু। তোমাকে আজ আব্বু বলতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে। তুমি কিনা,,,’

‘আমার কথা শোন রিফাত,,,’

‘ও আজ তোমার কোন কথা শুনবে না। অনেক অন্যায় করেছ তুমি এখন আর নয়। আমি ডিভোর্স চাই তোমার কাছে।’

রোজিয়া ঝাঝালো কন্ঠে চমকে যান আমিনুল ইসলাম। কিছু বলার আগেই মেহেরও রোজিয়ার তালে তাল মিলিয়ে বলে,
‘হ্যা আমিও আপনার সাথে আর সংসার করতে চাইনা। আমিও চাই আপনি আমাকে তালাক দিয়ে দেন। আমার পুরো জিবনটা আপনার জানি ন’ষ্ট হয়ে গেছে। শেষ ক’টা দিন ক’লংক ছাড়া বাচতে চাই, একটু শান্তিতে বাচতে চাই। এই শান্তিটুকু আমাকে দিন।’

আমিনুল হক দিশেহারা হয়নি যান। কি করবেন সেটা বুঝতে পারছিলেন না। ফাবিহাও একইরকম পরিস্থিতিতে পড়েছে। আচমকা আমিনুল হক জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান।
রিফাত ডাক্তার ডেকে আনে। আমিনুল হককে হাসপাতালের ভর্তি করানো হয়। ডাক্তার চিকিৎসা করে বলেন,
তিনি স্ট্রোক করেছেন। সুস্থ হয়ে গেলেও এখন তাকে প্যারালাইজড হয়ে আজিবন পার করতে হবে।

তার এই অবস্থা দেখে রোজিয়া বলে,
‘এটাই আল্লাহর বিচার। যা হয়েছে একদম ভালো হয়েছে। আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ২৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফাবিহা এতকিছুর পরেও হার মানতে রাজি নয়। মেঘলা ও রিফাতের চরম সর্বনাশ করতে চায় সে। তাই তো আজ রিফাত ও মেঘলা যখন সব প্রতিকুলতা পেরিয়ে আবার বিয়ের আয়োজন করছে তখন ফাবিহা নতুন পরিকল্পনা করছে।

রিফাত ও মেঘলা অবশেষে আজ বিয়ের জন্য আবার প্রস্তুত হচ্ছে। আগেরবার বাধার সম্মুখীন হলেও এবার নির্বিঘ্নেই বিয়েটা করে নিতে চায় তারা। এবার বড় কোন উৎসব নয়। খুব সামান্যভাবে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শে’ষ হবে। বিয়ে উপলক্ষে সামান্য কয়েকজন নিকটাত্মীয় উপস্থিত হয়েছে।

রোদেলা,আখি সবাই মিলে মেঘলাকে সাজিয়ে দিচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলেও মেঘলার কেন জানি মনে হচ্ছে আজ খুব খারাপ কিছু হতে চলেছে। রোদেলা মেঘলাকে অন্যমনস্ক দেখে প্রশ্ন করে,
‘এত কি ভাবছিস? চিন্তা করিস না মেঘ। দেখবি এবার সবকিছু ভালোই হবে। আল্লাহ চান তো এবার তোর আর রিফাতের বিয়েটা ভালোভাবেই সম্পন্ন হবে ইনশাআল্লাহ।’

মেঘলা জোরপূর্বক একটু হাসে। তার মনের মধ্যে যে কি চলছে সেটা সে কোনভাবেই প্রকাশ করতে পারছে না। আচমকা মুনিয়া এসে বলেন,
‘চলো এখন। কাজি এসে গেছেন। এবার তোমাদের বিয়ে পড়ানো হবে।’

মেঘলা রোদেলা ও মুন্নির সাথে নিচে চলে যায়। রিফাতের পাশে বসানো হয় মেঘলাকে। কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। মেঘলাকে কবুল বলতে বললেই মেঘলা বলে দেয়,
‘কবুল।’

রিফাতও কবুল বলে দেয়। অবশেষে রিফাত ও মেঘলার বিয়েটা সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়ে যায়। মেঘলার মন থেকে অবশেষে ভয় অনেকটাই দূর হয়।
‘যাক তাহলে আমার ভাবনা ভুল ছিল। খারাপ কিছুই তো হলো না। আমাদের জিবনে আর কোন বাধা নেই।’

বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে মেঘলার বিদায়ের পালা আসে। মেঘলাদের গ্রামের বাড়িতেই বিয়েটা হয়েছে। এখন বিয়ের পর এখান থেকে রিফাতের বাড়ির উদ্দ্যেশে রওনা দেয় তারা।


রিফাত ও মেঘলা পৌছায় রিফাতদের বাড়িতে। আজ আবার রিফাতের হাত ধরে অনেকদিন পর নিজেদের কক্ষে প্রবেশ করে মেঘলা। রিফাত কক্ষে প্রবেশ করেই মেঘলাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।
‘অনেক প্রতীক্ষার পরে আমি আজ তোমাকে পেয়েছি। এবার আর কেউ আমাদের আলাদা কর‍তে পারবে না।’

মেঘলার কপালে নিজের অধর ছুইয়ে দেয় রিফাত। মেঘলার পুরো শরীরে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায়। ধীরে ধীরে আরো গভীরভাবে মেঘলাকে স্পর্শ করতে থাকে রিফাত। মেঘলার ওষ্ঠদ্বয় নিজের আয়ত্তে করে নেয়। একসময় এভাবে পবিত্র বন্ধনের পবিত্র সম্পর্কে মেতে ওঠে দুজনে। প্রথমবারের মতো তাদের ভালোবাসার মিলন ঘটে। এই রাত সাক্ষী হয় মধুচন্দ্রিমার ✨

৫১.
নতুন দিন যেন নতুন বিপদের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে। ফাবিহা রিফাতদের বাড়ির সামনের এসে দাড়িয়েছে। তার দাবি, যেহেতু তার সন্তানের পিতা আমিনুল হক তাই এই বাড়িতে তারও অধিকার আছে। ফাবিহার এই দাবি মানতে রাজি নয় এই বাড়িই কেউই। কিন্তু ফাবিহা একপ্রকার জোর করেই বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে।

মেঘলা ফাবিহাকে এই বাড়িতে দেখে একটুও খুশি হয়না। বরং সে মনে মনে পরিকল্পনা করে নেয় কিভাবে এই মেয়েটাকে বিদায় করবে। মেঘলা কাউকে একটা ফোন করে। ফোনের বিপরীতদিকের মানুষটাকে কিছু বলতেই লোকটি বলে,
‘কোন চিন্তা করবেন না। আপনি যা বলবেন তাই হবে।’

ফাবিহা জোরপূর্বক বাড়িতে ঢুকে আমিনুল হকের রুমে ঢুকে পড়ে। ফাবিহার এই বাড়াবাড়ি কারো সহ্য হচ্ছিল না। এমন সময় কয়েকজন পুলিশ বাড়িতে আসে। তারা এসেই ফাবিহার খোজ করতে থাকে। ফাবিহা নিচে নেমে আসলে বলে,
‘আমরা আপনাকে গ্রেফতার করব।’

ফাবিহা তোতলাতে তোতলাতে বলে,
‘কে,,কেন? আমার অপ,,,অপরাধ কি?’

‘আপনি এভাবে জোর করে অন্য কারো বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেন না। এটা অপরাধ।’

ফাবিহা তখন বলে,
‘আমার গর্ভে আমিনুল হকের সন্তান। তাই আমি কিছুতেই এই বাড়ি ছেড়ে যাবো না।’

তখন পুলিশ অফিসার বলে,
‘আপনাদের সম্পর্কটা অবৈধ। কারণ আপনারা বিবাহিত নন। তাই এই বাড়িতে থাকার কোন অনুমতি আপনার নেই।’

শেষে বাধ্য হয়ে ফাবিহা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। কারণ পুলিশ অফিসার বলেছিল যদি সে বাইরে না যায় তাহলে তাকে গ্রেফতার করা হবে।

ফাবিহা চলে যেতেই মেঘলা পুলিশ অফিসারকে এসে বলে,
‘ধন্যবাদ মুগ্ধ। তুই তো ভালোই অভিনয় করলি।’

মুগ্ধ নামের ছেলেটা বেশ জোরে শব্দ করে হাসে। রিফাত কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করে,
‘অভিনয় মানে?’

মেঘলা এবার সব কিছু বলে,
‘আসলে এ হলো আমার বন্ধু। কলেজে আমরা একসাথে পড়েছি। আমি তো চুপচাপ হয়ে থাকতাম তাই আমার বেশি বন্ধু-বান্ধব ছিলনা। তবে যে গুটিকয়েক বন্ধু-বান্ধব ছিল তাদের মধ্যে মুগ্ধ একজন। ও অনেক ভালো অভিনয় করতে পারত। কলেজের বিভিন্ন ফাংশনে অভিনয়ও করেছে। ও এখন একটা নাট্যদলে কাজ করে। আজ যখন ফাবিহা এই বাড়িতে আসল তখন আমি মুগ্ধকে ফোন করে সব বললাম। তখন মুগ্ধই ওর নাট্যদলের লোকদের পুলিশ সাজিয়ে নিয়ে এলো।’

রিফাত অবাক হয়ে যায়।
‘তোমার তো অনেক বুদ্ধি হয়েছে। আর মুগ্ধ আপনাকেই থ্যাংকস। আমাদের এভাবে সাহায্য করার জন্য।’

‘থ্যাংকস বলার দরকার নাই। মেঘলা আমার বন্ধু। ওর জন্য এতটুকু করতেই পারি।’

৫২.
কয়েক মাস পর,
মেঘলা এখন চট্টগ্রাম মেডিকেলেই পড়ছে। এখন পড়াশোনার অনেক চাপ তাই অনেক ব্যস্ত সে। পড়াশোনার জন্য চট্টগ্রামেই থাকতে হচ্ছে মেঘলাকে। চট্টগ্রামে রিফাত যেই ফ্ল্যাট কিনেছে এখন সেখানেই থাকে মেঘলা। রিফাত অবশ্য সপ্তাহে দু-তিনদিন এসে দেখা করে যায়।

আজকে ক্লাস শেষে আখির সাথে কথা বলছিল মেঘলা। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে একসময় মেঘলা প্রশ্ন করে,
‘আচ্ছা তোর ভাই আরিয়ানের কি খবর? রিয়্যালিটি শো এর সেমিফাইনালে তো মুন্নি আর আরিয়ান দুজনেই বাদ পড়ে গেল। তারপর মুন্নি তো গান ছেড়ে পড়াশোনায় মন দিল। আরিয়ানের তো কোন খোজই নেই।’

‘ভাইয়ার কথা আর কি বলব। রিয়্যালিটি শো না জেতার দুঃখে ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিল। তাই আব্বু ওকে হায়ার স্টাডিজের জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দিল। আর আমার ভাইয়া কি লেভের প্লেবয় তোকে কি বলব। আরো গেছে বিদেশে। প্রতি মাসে গার্লফ্রেন্ড বদলাচ্ছে। আমার তো এসব দেখেই কেমন লাগছে।’

মেঘলার বেশ হাসি পায় আখির কথায়। তবে সে অনেক কষ্টে হাসি নিয়ন্ত্রণ করে রাখে।

আখি প্রশ্ন করে,
‘আমি শুনলাম তুমি নাকি কয়েকদিনের জন্য ঢাকা যাচ্ছ? কিন্তু কেন?’

‘আসলে সামনে মুন্নির বিয়ে। সেই কারণেই যাবো।’

‘ওহ মুন্নির বিয়ে। কার সাথে?’

‘মুন্নিরই ভার্সিটির এক ফ্রেন্ড নাম রাসেল। মুন্নির কাছে শুনেছিলাম রাসেল নাকি ওকে অনেক আগে থেকেই ওকে ভালোবাসত। এমনকি একদিন প্রপোজও করেছিল। তখন তো মুন্নি আরমান খানের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল তাই রাসেলকে প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছিল। তবে পরে ও বুঝতে পেরেছে যে রাসেল ওকে অনেক ভালোবাসে। মুন্নির আরমান খানের প্রতি যেটা ছিল সেটা শুধুই ভালো লাগা, রাসেলের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দেখে মুন্নি রাসেলের প্রেমে পড়ে যায়। এখন সেই প্রেমেরই পরিণতির সময়।’

‘ও ভালোই তো৷ আচ্ছা ফাবিহা নামের মেয়েটার খবর কি?’

মেঘলা আফসোস করে বলে,
‘মেয়েটার অবস্থা ভালো না। নিজের কলংক ঢাকতে মাঝবয়েসী একটা লোককে বিয়ে করেছিল। এখন সেই লোকটা নাকি ফাবিহার উপর অনেক অত্যা’চা’র করে। এরমাঝে মেয়েটা নাকি অনেকবার পালিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করেছিল কিন্তু পায়নি। বাচ্চাটাও নাকি ন’ষ্ট করেছে ফাবিহা।’

‘সবই কর্মফল। একেই তো এতগুলো অন্যায় করেছে তার উপর নিষ্পাপ বাচ্চাটাকেও শে’ষ করে দিয়েছে। ঐ ফাবিহার সাথে তো আরো খারাপ কিছু হওয়া উচিত।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨