#সে_আমার_মায়াবতি
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_২২
আজকেও নব দিনের সূচনা হয় চিরচেনা মানুষটার বুকে। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি, লোকটা গভির ঘুম এ মগ্ন। আচ্ছা উনি এত সুপুরুষ কেন? আমার মতো শ্যমলা মেয়ের সাথে কি এই লোকটা কে মানায়। গভির দৃষ্টিতে মানুষটাকে যত দেখি ততো দূর্বল হয়ে যাই। হুট করেই একটা অদম্য ইচ্ছা জেগে উঠলো। আস্তে আস্তে ওনার মুখের ওপর ঝুঁকে গেলাম। যেই না গালে ঠোঁট ছোয়াতে যাবো তখন মনে পরলো —
ছি আমি কি করতে যাচ্ছিলাম। এখন উনি দেখে ফেললে কি হতো, না লোকটা জেগে ওঠার আগেই সরে যেতে হবে। নয়তো কি ভাববে উনি আমায়? যেই ভাবা সেই কাজ যেই না সরে যাবো ওমনি কোন মিষ্টি সুপুরুষ এর কন্ঠস্বর আমার কানে বেজে উঠলো–
— এটা কি হলো জান?তুমি কাজটা ফিলাপ না করে সরে গেলে কেন? ( মিঃ চৌধুরী)
— আ আপনি জেগে আছেন? ( চোখ বড় বড় করে)
— ইয়াহ জান। বাট তুমি যেই কাজটা করতে যাচ্ছিলে সেটা ফিনিশ করো। ( মিঃ চৌধুরী)
— আ আমি কিছু করতে যাই নি৷ বিশ্বাস করুন। আমি কিচ্ছু করি নি। ( চোখ বন্ধ করে) ( আমি)
— তাই বেবি? বাট আমি যে দেখলাম তুমি আমাকে স্কেন করছিলে। কাছে এগিয়ে আসছিলে, আর কিস করতে যাচ্ছিলে। এখন আমি কোন এক্সকিউজ শুনতে চাই নি। (মিঃ চৌধুরি)
— আমি পারবো না। আ আর আপনি ভূল দেখেছেন। আমার উঠতে হ! ( আমি)
মিঃ চৌধুরী আমাকে ঘুরিয়ে আমার ওপর ঝুঁকে গেলেন। আমার গালে স্লাইড করতে করতে বললেন —
— ওপেন ইউর আইস জান। আমাকে রোমেন্টিক করে দিয়ে তুমি পাড় পাবে তা তো হবে না সুন্দরি। এখন আমার আদর চাই বাই হুক অর কুক।
(মিঃ চৌধুরী)
— আপনি কেন বুঝছেন না। আমি এসবের জন্য প্রস্তুত নই৷ প্লিজ আমাকে একটু সময় দিন মিঃ চৌধুরী। ( আমি)
— ঠিক আছে সময় তুমি চেয়েছো কিন্তু আমার জন্য সময় লাগবে না। আম ওলয়েস প্রিপিয়ার্ড। ( বাকা হেসে) ( মিঃ চৌধুরী)
— মানে?
— নো মিসেস চৌধুরী মানে মুখে নয়, ডাইরেকলি বুঝিয়ে দিচ্ছি। ইউ নো তোমাকে কত সুন্দর লাগছে, এই ঘুম ঘুম চোখ, এলোমেলো চুল, ঘুম জড়ানো কন্ঠ, ঈশুপাখি, আমার প্রেম প্রেম পাচ্ছে।
বলে আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার মুখে একের পর এক চুমু বর্ষন করেই যাচ্ছে। হাত পা ছড়িয়ে বাধা দিতেই দুই হাত চেপে গালে ঠোঁট বুলিয়ে, আমার ঠোঁট এ ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন।এতক্ষন ছটফট করলেও ওনার স্নিগ্ধ স্পর্শে জমে বরফ হয়ে গিয়েছি। কিছু সময় পর আমাকে ছেড়ে ঠোঁট কামরে হেসে বললো-
— টেষ্ট সো গুড। এখন থেকে আমার মরনিং কিস তোমাকে দিয়েই শুরু করবো পাখি। আর শেষ ও তুমি করবে। ( চোখ টিপে) (মিঃ চৌধুরী)
— ছিইই অসভ্য। আপনি ভারি অসভ্য চৌধুরী সাহেব। ( মুখে হাত দিয়ে) ( আমি)
— পৃথিবির প্রত্যেকটা পুরুষ তার স্ত্রীর কাছে অসভ্য জান। তাহলে আমিও তো আমার পরির কাছেই অসভ্য হবো। ( মিঃ চৌধুরী)
ওনার কথায় কান চেপে
কোনমতে বললাম —
— কয়টা বাজে আপনার খবর আছে?নামাজ এ দেরি হচ্ছে প্লিজ। ( অসহায় চোখে) (আমি)
— হ্যা চলুন আজ আমরা একসাথে নামাজে দাঁড়িয়ে যাই একসাথে। ( হাত বাড়িয়ে) ( মিঃ চৌধুরী)
আমিও ওনার হাতে হাত রেখে উঠলাম। একসাথেই দু- জন ওজু করে নিলাম। এর মধ্যে উনি কালকে ছাদে ঘুমিয়ে যাওয়া নিয়ে জ্বালিয়েছে। ফ্রেশ হয়ে আমরা একসাথেই নামাজে দাঁড়িয়ে পড়ি। লোকটা কে শুভ্র পাঞ্জাবি, স্নিগ্ধ সকালের চেহারা তে আরো একবার ক্রাশ খেলাম।
নামাজ পড়া শেষ হলে, উনি ল্যপটপ নিয়ে বসে আমি পেকিং করতে বসি। মনের সুখে কাজ করছি আর ভাবছি আজ কতদিন পর আবার বাড়িতে যাবো। আচ্ছা উনি কি থাকতে দিবে না আমায়? ভাবনায় ছেদ ঘটে মিঃ চৌধুরীর ডাকে–
— তুমি কি একেবারেই চলে যাচ্ছো পাখি?
উনি ল্যপটপ৷ এর দিকে তাকিয়ে এই কথা কি আমাকেই বলছে? এই নামে তো আসমাকেই ডাকে। কিন্তু এই কথা বলছে কেন?
— আপনি কি আমাকে বলছেন?
— না আমি আরেকটা বিয়ে করেছি, সেই বউ কে বলছি। আপনি বুঝতে পেরেছেন মিসেস চৌধুরী?
ওনার কথায় বুঝতে পেরেছি ওনি আমাকে শুনিয়েই এই কথা বলেছে তাই মুখ ভেংচি দিলাম।
— এই মেয়ে তুমি কি করলে? আমাকে মুখ বেকালে তুমি?
বলেই হু হা হা করে হেসে দিলেন। আমি মুগ্ধ নয়নে অপলক তাকিয়ে আছি, ইশ কি সুন্দর হাসে উনি। মায়া তবে আমি যে শুনলাম উনি হাসেই না, আর এখন তো দেখি কথায় কথায় হাসে।
— এই মেয়ে কথা বলছো না কেন? (মিঃ চৌধুরি)
— আপনি আবার আমাকে এই মেয়ে এই মেয়ে বলছেন?
মুখ ফুলিয়ে)
— উপস সরি পাখি। তোমাকে ডাকার জন্য আমার কাছে গোটা নামের সম্ভার পরে আছে,। তাই আগেই বলছি, এত পেকিং না করাই ভালো। আমরা কাল চলে আসবো। (মিঃ চৌধুরী)
— আচ্ছা ঠিক আছে।
আহ হবে না। আমি কিছুদিন থেকে তবেই আসবো। কতদিন বাড়িটা বাড়ির মানুষগুলো দেখি নি। একবার শুধু বের হই আমিও দেখিয়ে দিবো মিঃ চৌধুরী,। ( সয়তানি হেসে মনেমনে) ( আমি)
— আই নো জান। তোমার মাথায় কিছু চলছে। যেটাই চলুক সেটা যে আমাকে ঘিরে সেটাও আমি খুব ভালো করে জানি। দেখা যাক, আমার দূর্বলতায় তুমি কি করো। ( মিঃ চৌধুরী)
আমি পেকিং শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি মাত্র সাতটা বাজে। তাই বেলকনিতে গিয়ে ঘুরে আসি। কিচ্ছুক্ষন সময় কাটিয়ে ঘুরে দাড়াতেই চোখ পড়ে বাগানে। ইশ কি সুন্দর বাগান। সারি সারি ফুল, ফলের সমারহ্। দোলনাও আছে। এত সুন্দর নিখুঁত ভাবে সাজিয়ে রেখেছে বাগানটা। আচ্ছা একবার ঘুরে আসলে কেমন হয়? কিন্তু উনি কি বের হতে দিবেন। নখ কামরে কথা গুলো ভাবছিলাম তখন পেছন থেকে উনি জড়িয়ে ধরলেন ,
এতদিনে লোকটার স্পর্শ, শরিরে স্মেল, সব কিছুই আমার চেনা, তাই বুঝতে পারলাম, ইনি আমার স্বামী। আমার মিঃ চৌধুরী।
— কি ভাবছিলে ঈশুপাখি।
— কিছু না।
— গার্ডেন এ যাবে পরি। ( ঘারে মুখ গুজে)
— আপনি নিয়ে যাবেন?
—আমি আগেই বলেছি। এই পুরো সামরাজ্য তোমার। তাই সাড়া বাড়িতে তুমি ঘুরতে পারো। চলো।
আমি সত্যি অবাক।মানুষটা আমার মনের কথাও বোঝে। পাশের বেলকনি তে চোখ পরতেই দেখি আপু আর সায়ন ভাইয়া কফি খাচ্চে আর খুনঁশুটি করছে৷ আমার চোখ অনুকরন করে মিঃ চৌধুরীর তাকালো। মুচকি হেসে আমার হাত ধরে নিচে নিয়ে গেলেন। নিচে যেতেও উনি হাত ছাড়ে নি। মেইডদের দিকে তাকাতেই দেখলাম মুচকি মুচকি হাসছে। তাদের চোখাচোখিতেই আমিও হালকা হাসলাম লোকটার পাগলামো দেখে। আমি তাই হাটার মাঝেই বললাম–
— মিঃ চৌধুরী?
— হুম জান।
— আমি কি ছোট বাচ্চা? সবার সামনে এভাবে হাত ধরে নিয়ে যাবার কি আছে?
— হ্যা বাচ্চা, আমার পরি। আমার কাছে তুমি দশটা সন্তানের মা হলেও বাচ্চাই থাকবে পাখি৷
আমি ওনার কথায় লজ্জা পেলেও সামলে নিলাম। গার্ডেন এ গিয়ে আরও অবাক হলাম, আসলেই অনেক সুন্দর৷ আমি ফুল দেখে লাফিয়ে উঠি। আমি ভুলেই গিয়েছি মিঃ চৌধুরী আমার পাশে আছে। দৌরে এই ফুল ওই ফুল ছুঁয়ে দিচ্ছি। কাঠঁগোলাপ দেখে মিঃ চৌধুরীর দিকে তাকালে, ইশারা দিলেন ফুল ছেড়ার। আমি ফুল ছিড়ে হাতে নিয়ে এদিক সেদিক হাটছি। আর মিঃ চৌধুরী তার ফোনে আমার করা প্রত্যেকটা ভংগিমার অনূভতি লিপিবদ্ধ করছেন। দূর থেকে মালি, গার্ডরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। যেই মানুষটা নিজে ফুল, ফলের যত্ন নেয়। কাউকে একচুল ফুল ছিড়তে দেয় না। এমন কি নিজের বোনকেও না। সেই মানুষটা নিজে কালো গোলাপ ছিড়ে আমার কানে গুজে দিলেন। আমিও হেসে দিয়ে তার হাত জড়িয়ে বললাম-
— থ্যংক ইউ মিঃ চৌধুরী। আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো এমন গার্ডেন করার। ফুল ছোয়ার যে বড্য ইচ্ছে ছিলো। আপনার জন্য তা পূরন হয়েছে। ( মুচকি হেসে)
— তোমার মতো ফুলকে খুশি করতে আমি এমন হাজারটা বাগান করতে পারি জান। আজ থেকে এই গার্ডেন আমি তোমার করে দিলাম,নিজের মতো গুছিয়ে নাও। তারপর না হয় আমাকে গুছিয়ে দিবে।
আমার গালে হাত গলিয়ে কথাগুলো বলছিলেন উনি। আমি সত্যি অনেক লাকি মিঃ চৌধুরী সত্যি। আপনি আমাকে সবসময় এভাবে আগলে, ভালোবাসবেন তো?
কথাগুলো মনে মনে বললেও মুখে বলতে পারলাম না৷ এদিকে সকাল সকাল সুইমিংপুল এর পাশে বিচ এরিয়াতে বসে আমাদের খুনঁশুটি তে চোখ বুলিয়েছে চারটি মানুষ। আম্মু আব্বু,আন্টি, আংকেল। যারা এখনো মুগ্ধ নয়নে এদিকেই তাকিয়ে আছে। আর আমি তাকিয়ে আছি, আমার দেখা পৃথিবির সুদর্শন পুরুষ এর দিকে৷ যে তার মোহমায়ায় আমাকে আটকে রেখেছে।
একটু একটু করে যার রঙিন চাহনিতে আমি ডুবে গিয়েছি অতল সাগরে।
#চলবে____________