সে আমার মায়াবতি পর্ব-২৩+২৪

0
823

#সে_আমার_মায়াবতি
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_২৩
সকালে সুন্দর মুহুর্ত কাটিয়ে একপর্যায় ব্রেকফাস্ট টেবিলে উপস্থিত হলাম। কিন্তু বুঝলাম না সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে হাসছে কেন? ভাবনার মাঝেই মিঃ চৌধুরী আমার মুখে কাস্টার্ড ঢুকিয়ে দিলেন,লোকটা এতটা লজ্জা দেয় সবার সামনে। তাই মিনমিনিয়ে বললাম –

— মিঃ চৌধুরী আমি খেতে পারবো। আমার হাত ঠিক আছে,। ( আমি)

— আই নো তুমি সব পারো শুধু আমাকে আদর করা ছাড়া। ( মিঃ চৌধুরী)

আমি যেই না পানি খেতে যাচ্ছিলাম ওমনি, মিঃ চৌধুরীর কথায় গলায় পানি আটকে গিয়েছে, উনি ব্যস্ত হয়ে আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। সবাই মুচকি হেসে খাওয়ায় মন দিলেও আমি রাগি চোখে ওনার দিকে তাকাই। লোকটা এতটা ঠোঁটকাটা স্বভাবের। তবুও নিজের হাতে খাওয়াচ্ছে। এর মাঝেই এনা মুখ বাকিয়ে বললেন –

— আরাভ ঈশা কি বাচ্চা নাকি যে হাতে খেতে পারে না।তুমি ওকে খায়িয়ে দিচ্ছো যে! ( এনা)

— আমার বউ বাচ্চা নাকি বড় সেটা তোকে ভাবতে হবে না। আমার জানকে আমি কিভাবে খাওয়াবো কিভাবে রাখবো সেটা নিতান্তই আমার ব্যপার। তাই আমাদের পারসোনাল লাইফে তোর ইন্টারফেয়ার করতে হবে না।
(মিঃ চৌধুরি)

মিঃ চৌধুরীর কথায় এনার মুখে তালা ঝুঁলে গিয়েছে। তাই চুপচাপ আমার দিকেই কটমট চোখে তাকিয়ে আছে। আমিও মুখ ভেংচি দিলাম। আর দেখিয়ে দেখিয়ে হা করলাম।
মিঃ চৌধুরী আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে ক্রুর হেসে আমাকে খাওয়াতে লাগলেন। এর মাঝেই বাড়ির সবাই মন খারাপ করে বসে ছিলেন আমি আপু চলে যাবো, বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগবে। কিন্তু আমি গিয়ে তাদের শান্তনা দেই যে এক / দুই দিনের তো ব্যপার।
খাওয়া শেষ এ বসার ঘরে গিয়ে সবাই বসে। আমরা একটু পর বের হবো তাই, আন্টি আংকেল এর সাথে একটু গল্প করছিলাম।
হুট করেই মায়া চিৎকার দিয়ে ওঠে- সবাই উৎসক চোখে তাকাতেই দেখলাম এনা শাড়ি পরে সেজে বের হয়েছে।মায়া বলে উঠলো-

— আরে এনা আপু শাড়ি পরে এত সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছো? ( মায়া)

— আমি তো ঈশাদের সাথে যাবো। তাই না ঈশা? ( এনা)

ওনার কথায় আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। উনি কি বলছে, আমি আবার কখোন বললাম? তার মাঝেই মিঃ চৌধুরী এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন –

— জান তুমি বলেছো? ( মিঃ চৌধুরী)

আমি কিছু বলার পূর্বেই এনা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— ঈশা যুদ্ধ হয় সমানে সমানে। তাই আমিও তোমার সাথে যেতে চাই। যেনো তোমাদের কেমেস্ট্রি আরও হিট করতে পারি। ( এনা) ( সয়তানি হেসে)

— আপনি মনে হয় ভুলে যাচ্ছেন, আমার মিঃ চৌধুরী কোন পন্য বা সামগ্রি নয় যে,তাকে নিয়ে বাজি ধরবো বা যুদ্ধ করবো। তাই নেক্সট টাইম এটা বলবেন না। আর হ্যা আমাদের লাইফে এমনিতেই কেমেস্ট্রি জমে ক্ষির তাই আলাদা সাসপেন্স এর দরকার নেই। আপনি চাইলে এমনিতেও যেতে পারেন। ( আমি)

— এই ঈশা তোরা কি ফুসুরফাসুর করছিস তখন থেকে? ( মায়া)

— আব আসলে হ্যাঁ মানে এনা আপু যেতে চেয়েছে তাই আর! ( আমি)

— জান আমরা ঘুরতে যাচ্ছি না, এটা রেওয়াজ তাই যাচ্ছি, এখানে এনা গিয়ে কি করবে।
( মিঃ চৌধুরী)

— আরাভ আমাকে নিয়ে চলো না প্লিজ। আমি তো বিডি এসেও কোথায় যেতে পারছি না। তাই ( এনা)

— মিঃ চৌধুরী যাক না উনি আমাদের সাথে। একটু ঘুরে আসুক। একা থেকে কি করবে? ( আমি)

— ওকে। ( মিঃ চৌধুরী)

আন্টি আংকেল আর ফারাজ ভাইয়া টুকটাক কথা বলে একটু আগেই চলে গিয়েছেন।
যেহুত নতুন সেটেল্ড হয়েছে, তাই কাজের চাপ বেশি। কিন্তু যাওয়ার আগে আমাকে প্রমিস করিয়েছে যেন, আমরা সবাই যাই। আর আমিও বলেছি যখন আমাকে দেখতে ইচ্ছা করবে চলে আসতে। এনা আপু রেডি হয়ে আগেই গাড়ির কাছে গিয়ে বসে আছে। আমি আর আপুও রেডি হতে চলে গেলাম, আজ যেহুত বিয়ের প্রথম বার বাড়ি যাবো তাই ভাবছি শাড়ি পরে যাবো। কিন্তু কোনটা পরবো ডিসাইড করতে করতে চোখ যায় বেডের ওপর শপিং ব্যগ এ। সেই বিয়ে বাড়ির ঘটনা আবার চোখে ভেসে উঠেছে। আচ্ছা শাড়িটা কি তার মানে মিঃ চৌধুরী দিয়েছিলেন। আর ওই অজানা ব্যক্তি সেই বা কোথায়? ভাবনার মাঝেই ঘড়ির দিকে চোখ পড়তে দেখি বেলা বারছে। তাই বেশিকিছু না ভেবে শাড়ি বেডে রেখে অন্য জিনিসগুলো পরে বের হলাম। কিন্তু বের হতেই যে সোজা মিঃ চৌধুরীর মুখোমুখি হবো ভাবতে পারি নি। যেই না চিৎকার দিবো ওমনি উনি মুখ চেপে ধরলেন।

— আহ জান জামাই আমি। এভাবে চিৎকার করছো কেন? কিছু দেখি নি তো। ( মিঃ চৌধুরী)

আমি মমম আওয়াজ করতেই উনি মুখ ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে দাড়ালেন। আমি শ্বাস নিয়ে বললাম,

— আ আপনি এভাবে ভয় পায়িয়ে দিচ্ছিলেন মিঃ চৌধুরী। ( আমি)

— জান ইউ লুকিং সো হট বেবি। ক্যন আই কিস ইউ? (মিঃ চৌধুরী)

আমি জানি উনি এখন জোর করে চুমু খাবেন তাই দূরে সরে হাত দিয়ে শাড়ি যেমন তেমন পেচিয়ে বললাম –

— ছি আপনি কি বলছেন এসব! ( আমি)

— বাংলায় বলছি আদর করবো তুমি বোঝ না পাখি? ( ঠোঁট কামড়ে) ( মিঃ চৌধুরী)

— আ আমার দেরি হচ্ছে, আমি শাড়ি পর!!

আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কাছে টেনে নিলেন। আমার কপালে চুমু খেয়ে শাড়ি হাতে নিতে নিতে বললেন–

— জান ট্রাস্ট করো তো আমায়? ( মিঃ চৌধুরী)

আমি জানি, পৃথিবিতে আমার ফ্যমিলির পর এই মানুষটাকেই যে বিশ্বাস করি বেশি। যার কাছে আমি সারাদিন,রাত ঘুরঘুর করি আমি তার আইনগত স্ত্রি হওয়া সত্বেও যে আমার অনুমতি ব্যতিত স্পর্শ করে না। তার কাছে আমি সবচেয়ে নিরাপদ। তাই অগাধ বিশ্বাস নিয়ে মাথা নাড়ালাম –
উনিও মুচকি হেসে আমায় শাড়ি পরিয়ে দিলেন। আশ্বর্যের বিষয় উনি আমাকে এতটুকু টাচ করে নি। কুঁচি গুলো আমার হাতে দিলেন আমিও গুজে নিলাম। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন –

— আমার পরি এমনিতেই সুন্দর, তাকে সাজাতে কিছুই লাগে না। তবুও আজ আমি নিজের হাতে তাকে সাজিয়ে দিবো –( মিঃ চৌধুরী)

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই সাজিয়ে দিচ্ছেন। আমি আয়নায় মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। লাল সিদুঁর রাঙা কাতান শাড়ি, ঝুমকা, মেচিং জুয়েলারি আর লাল চুড়ি, সাথে কাজল আর বেবি পিংক লিপস্টিক দিয়ে দিলেন। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই ভাবছি, কি সুন্দর করে সাজিয়েছে মানুষটা আমায়। আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে গালে হাত গলিয়ে দিলেন। আমার চোখে চুমু খেয়ে বললেন-

— মাশাল্লাহ। আমার পাখি কে আমার চোখে পৃথিবির শ্রেষ্ঠ সুন্দরি লাগছে। যে আমার একান্তই আমার। ভালোবাসি বউ। ( মিঃ চৌধুরী)

আমি লজ্জায় মাথা নুয়িয়ে ফেললে আমাকে কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে, নিজে রেডি হতে চলে যায়৷ আমিও তাই নিচে বেককনিতে একটু হাটাহাটি করে রুমে আসতেই আবার হারিয়ে গেলাম আমার চৌধুরী
সাহেবের দিকে। যে আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।সিদুঁর
রাঙা পাঞ্জাবি তে, হাতে রোলাক্সের ঘড়ি পরিহিত যুবক। যার হালকা চাপদাড়ি আর গভির চোখের চাহনিতে আমি হারিয়েছি বারবার।

— মিসেস চৌধুরী আমি
সম্পুর্ন তোমার পাখি। তাই এভাবে চোখ দিয়ে গিলে না খেলেও পারো। ( বাকা হেসে)
(মিঃ চৌধুরি)

— আব না মানে আমি ( আমি)

— জান অধিকার কেউ কাওকে দেয় না। নিজের যা তা ছিনিয়ে নিতে হয়। এবার চলুন মিসেস চৌধুরী,উই আর লেইট। ( মিঃ চৌধুরী)

লোকটা আমাকে কিছু বোঝার সময় না দিয়েই টেনে নিয়ে গেলেন। সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ চোখে। আম্মু আব্বু ওনাকে এই সেই বলে দিলেন আমাকে নিয়ে যেন ৩/৪ দিন থেকে আসে। কিন্তু লোকটা সেখানেই বলে দিয়েছে আজকের বেশি একদিন ও থাকবে না৷ আর কি করার গাড়ির কাছে গেলাম। ভাইয়া আর আপু আলাদা গাড়িতে যাবে আর আমি আর মিঃ চৌধুরী আলাদা গাড়িতে যাবো। গাড়ির কাছে গিয়ে ফ্রন্ট সিটে বসতেই আমার আগে, এনা আপু বসে গেলেন। আর মিঃ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন-

— আসলে তুমি তো জানো আরাভ আমি সামনে না বসলে মাথা ঘুড়ায়। তাই আজ যদি ঈশা ম্যনেজ করে একটু পিছে বসে! ( এনা)

— তুই চাইলে অন্য গাড়িতে যা, এখানে ঈশা বসবে। তুই! ( মিঃ চৌধুরী)

আমি ওনাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বললাম –

— আহ থাক না মিঃ চৌধুরী, আপু যখন বসবে বসুক না। ( আমি)

— পাখি তুমি কি বলছো? তুমি একা কেন বসবে, আমি তোমাকে নিয়ে বসবো।( মিঃ চৌধুরী)

আমার কথায় এনার খুশি বেশিক্ষন টিকলো না। কারন আমি মিঃ চৌধুরীকে হাত ধরে টেনে নিয়ে পেছনে বসে পরেছি। এনা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞাস করলো –

— ঈশা আরভ কে নিয়ে গেলে কেন? তাহলে ড্রাইভ কে করবে? ( এনা)

— আপু আমার হাসবেন্ড কে কি আপনার ড্রাইভার মনে হয়, যে আপনাকে ড্রাইভ করে নিয়ে যাবে। ওই তো ড্রাইভার এসেছে। উনি ড্রাইভ করবে। ( আমি)

— ওয়াট? আমি ড্রাইভার এর সাথে বসবো? ( এনা)

— প্রথম কথা আপনিও যা উনিও তা। আর আপনিও মানুষ ওনার মতো৷ আর দ্বিতীয় কথা আপনি সামনে বসতে চেয়েছেন কার সাথে বসবেন সেটা ফেক্ট নয়। তাই না চৌধুরী সাহেব? ( আমি)

আমি ওনার দিকে তাকাতেই দেখলাম মিটমিটিয়ে হাসছে। আজব লোকটাকে নিয়ে আমি ফাইট করছি আর উনি হাসছে? উনি এনার দিকে ফিরে এবার বলে –

— এনা ঈশু পাখি ঠিক বলেছে, এবার তোর প্রবলেম হলে অন্য গাড়িতে যেতে পারিস। ( মিঃ চৌধুরী)

এদিকে এনা রাগে ফোসফোস করছে, আর মনে মনে আওরাচ্ছে-

— ছাড়বো না তোমায়। আমাকে তোমার কথায় কথায় হিয়মিলিয়েট করা বার করবো। যাস্ট ওয়েট এন্ড সি। আমাকে তুমি চিনো নি এখনো। খুব বড় ভুল করলে আমার সাথে লেগে। এর ফল তোমাকে ভয়াবহ ভাবে ভোগ করতে হবে। ( এনা)

আমি এবার মিঃ চৌধুরীর দিকে তাকাতেই উনি আমাকে আরেকটু কাছে নিয়ে টিপ পরিয়ে দিলেন। কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন —

— যে সম্পুর্না তাকে সব রুপেই আমার চাই। সে আমাকে বার বার ঘায়েল করে। একটা ভালোবাসার চাদড়ে মুঁড়ে রাখবো। সে কি জানে এই প্রেমিক পুরুষ তার মায়াতেই আবদ্ধ। ( মিঃ চৌধুরী)

লোকটা আসলেই পাগল। এতটুকু ক্ষুত রাখে নি আমার। আসলেই পাগল সে। সামনে তাকাতেই দেখি এনা, চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে। আমিও চোখ টিপ মেরে মিঃ চৌধুরীর বুকে মাথা এলিয়ে দিলাম। শান্তির স্থানে আমার ঠাই হয়েছে। তাই মনের সুখে শুকরিয়া করলাম এই মানুষটা আমার থাকুক। আজিবন মানুষটার ভালোবাসায় আমি হারিয়ে যেতে চাই।

#চলবে____________

#সে_আমার_মায়াবতি
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_২৪
লোকটার মাঝে আমি কি সুখ খুজে পাই জানি না। কেন তার মায়া এতটা টানে আমায়?অবাদ্য ভাবনায় জল্পনা কল্পনা করতে করতে চোখের পাতা যে বুঁজে এসেছে তা টের পেলাম না। কিছু সময় বাদে টের পেলাম কেউ খুব নিবির ভাবে আগলে নিয়ে কিছু বলছে। নিভু নিভু চোখে দৃষ্টি অবলোকন করতেই চোখে পরে সেই গভির চাহনি।
বোঝার চেষ্টা করছি কি বলছে মানুষটা আমায়!

— ঈশু পাখি ওঠো, দেখো আমরা চলে এসেছি। ওয়েক আপ জান। তুমি কি চাইছো আমি এখানেও তোমাকে কোলে নিয়ে রোমেন্স শুরু করি? ( মিঃ চৌধুরী)

ওনার ঠোঁটকাটা মার্কা কথা শুনে আমার ঘুমে বাতি ফিউজ হয়ে গিয়েছে।ঝট করে বুক থেকে ওঠে বললাম-

— আপনি নির্লজ্য ভারি অসভ্য চৌধুরি সাহেব।( আমি)

— ওনলি ফর ইউ পাখি। ( মিঃ চৌধুরী)

আমি জানি এই লোকটার সাথে কথা বাড়ালে এমনিতেই দিন শেষ হয়ে যাবে। তাই কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। কিন্তু একটা জিনিস খুব ভাবাচ্ছে আমাকে, এনা আমাদের সাথে এলো কেন?তাহলে কি ওর মাথায় কোন প্লেন চলছে?ভাবনার মাঝেই কর্ণকুহর হয় মিঃ চৌধুরীর গলা-

— সবাই ভিতরে ওলরেডি আরও দশ মিনিট আগে চলে গিয়েছে। এখনো লেইট করবে? ( মিঃ চৌধুরী)

— দ দশ মিনিট?এত টাইম আপনি আমাকে নিয়ে বসে ছিলেন? এত টাইম আমি কি করেছি?ঘুমিয়েছি?হায় আল্লাহ এখন সবাই কি ভাব্বে?( আমি)

— এত টাইম তুমি ঘুমন্ত কন্য সেজে আমকে পাগল করেছো আর আমি কিছু মনে করি নি জান।( মিঃ চৌধুরী)( ইনোসেন্ট ফেসে)

—আচ্ছা এবার চলুন। কিন্তু কাউকে বলবেন না আমি গাড়িতে ঘুমিয়েছি।(কাদোঁ কাদোঁ ফেস) ( আমি)

— ওকে আমি নাহয় তোমার এই ফেবারটা করলাম। কিন্তু এর জন্য আমি কি পাবো? (মিঃ চৌধুরি)

— আ আমার কাছে তো কিছু নেই। আচ্ছা আপনার কি চাই?( আমি)

— যদি বলি তোমাকে? (মিঃ চৌধুরি)

— কি? ( চোখ বড় করে) (আমি)

— আ’ম জোকিং বেবি। আমার কাছে ইনশাল্লাহ পৃথিবির সব সুখ আছে।আমার মায়াবতি আছে, আর কি চাই আমার? তবে তুমি যেহুত দিবে তাই সময় মতো চেয়ে নিবো। দিবে না পাখি?( মিঃ চৌধুরী)

— দি দিবো। ( আমি)

আমি জানি এই লোকটা কখনো এমন কিছু আমার কাছে চাইবে না, যা আমি দিতে পারবো না।এতটুকু সময়ে আমি এই মানুষটাকে ভরসা করতে শিখেছি। তাই আর কিছু না ভেবে হাটতে শুরু করলাম, বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই চাচিমা জড়িয়ে নিলো নিজের আচঁলে। কত দিন মানুষটাকে দেখি নি,চাচ্চু এসে মিঃ চৌধুরীর সাথে কুশল বিনিময় করলেন। আম্মুর সাথে দেখা করতে মনটা অধ্যর্য হয়ে আছে। রান্না ঘরে প্রবেশ করতেই দেখি আম্মু আর দাদি রান্না করছে। আগে তো আমি আর চাচিমা মিলেই সব সামলে নিতাম। আমি পিছন থেকে আম্মু কে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলাম-

— কেমন আছো আম্মু? (আমি)

— হুম ভালো। যা এখান থেকে। ( আম্মু) (গম্ভির কন্ঠে)

— আম্মু তোমাকে খুব মিস করি। রাগ করে আছো, আমার ওপর? ( আমি)

— এহহ ঢং দেখলে আর বাচুম না। এহন আইসে আম্মা। এই তোর জামাই নিয়া আইসোস ভালো মতো নিয়ম শেষ হইলে যাবি গিয়া৷ এত ন্যকামি করবি না তুই। যা এহান তোন। (দাদি)

— দাদি তুমি এভাবে বলছো কেন? তুমিও কি রেগে আছো? আম্মু রাইসা কোথায়? ( আমি)

— দেখো ঈশা আমি তোমাকে আগেই বলেছি, বাড়িতে নতুন জামাই এসেছে যথেষ্ঠ ঠান্ডা আছি । রাইসাকে দিয়ে তোমার কোন কাজ নেই। ও নিজের রুম এ আছে৷আমার মেয়ের যা ক্ষতি করার তা করেছো। তুমি যাও আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না। ( আম্মু)

আম্মুর কথায় নিশ্বঃব্দে কেঁদে উঠি। দাদি মুখ ভেংগিয়ে চলে যায়।মিঃ চৌধুরী কথা মনে উঠতেই চোখের পানি মুছে তাড়াতাড়ি বসার ঘরে গেলাম। চোখ পড়লো সবার ওপর। আপু সায়ন ভাইয়ার সাথে চাচ্চু আর চাচিমা কথা বলছে। এনার দিকে তাকাতেই দেখি তার সম্পুর্ন ধ্যেন আপাদত মোবাইলে নিবদ্ধ। কিন্তু মিঃ চৌধুরী কে কোথায় দেখতে পেলাম না। এদিক সেদিক ঘুরে তাকাতেই দেখি, রান্নাঘরের দড়জার এপাশে কানে মোবাইল নিয়ে দাড়ানো। আচ্ছা উনি কিছু শুনেছে দাদি বা আম্মুর কথা?
এর মাঝেই খেয়াল করলাম রাইসা নিচে নামছে। একটা ছোট টপস্ পরে। নিচে নেমেই আপুকে জড়িয়ে ধরলো। আপুও মেকি হেসে আগলে নিলো রাইসা কে।

— আরে জিজু কেমন আছেন? অপেক্ষায় ছিলাম আপনাদের। ( রাইসা)

— ভালো। তুমি কেমন আছো? ( সায়ন)

এর মাঝেই চাচ্চু এসে তাড়া দিলো সবাইকে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে৷দুপুর যেহুত তাই খাবার শেষে সবাই আড্ডা দেয়া যাবে৷ চাচিমার ইশারায় মিঃ চৌধুরী কে ডেকে নিলাম ঘরে যাওয়ার জন্য। সামনে দু-পা এগোতেই তুবা এসে টেনে নিলো। আসা মাত্রই গল্প শুরু করে দিয়েছে।আমিও গল্প করতে বসে গেলাম। মিঃ চৌধুরীর কথা মাথা থেকে একেবারেই আউট হয়ে গিয়েছে৷ চাচিমা এসে ধমক দিলে মনে পরে মানুষটা তো আমার সাথেই এসেছে। আর কিছু না ভেবে দৌরে ঘরে গেলাম।হাপাতে হাপাতে ঘরে ঢুকতেই দেখি হাত ভাজ করে এদিকেই তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে উনি জানতো আমিই আসবো। তাই জ্বিব কেটে আস্তে করে বললাম –

— আ আমি দুঃখিত মিঃ চৌধুরী, আসলে খেয়াল ছিলো না আপনি মানে – ( আমি)

— পুরো কথা ফিনিশ করো জান। ইউ নো আমি অর্ধেক কথা শুনতে অভস্ত্য নই। ( মিঃ চৌধুরী)

— আপনি আমার কত যত্ন নেন, এতটুকু কষ্ট পেতে দেন না।আর আ আমি সব ভুলে গল্প জুরে বসে ছিলাম। ( আমি)

এই মানুষটাকে এতটুকু কষ্ট দিলেও আমার আত্মা আমাকে ধিক্কার দিবে, এই মানুষটা তো আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। কথাটা ভাবতেই চোখের কোন বেয়ে দু- ফোটা অশ্রুকনা ঝরে পরলো। হাতে টান অনুভব হওয়াতে ওপরে তাকাতেই দেখলাম গভির চোখের মানুষটাকে। যে স্বযত্নে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন-

— পাখি তুমি কান্না করছো কেন? আমি কিছু বলেছি?প্লিজ জান বুকে লাগে কেদোঁ না। বিলিভ মি আমি এতটুকু মন খারাপ করি নি। আমি খুশি যে আমার প্রেয়শি আমার কথা ভাবছে। সে আমার ভালোবাসায় একটু একটু করে আকৃষ্ট হচ্ছে। ( মিঃ চৌধুরী)

আমি লোকটার কথায় দিকবেদিক ভুলে ওনার বুকে কিল দিয়ে বসি।আমি নিজের অজান্তে একি করলাম হায় আল্লাহ এখন কি হবে?

— জান ইউ হিট মি? তুমি আমাকে হিট করলে বাট আমি তো অন্যকিছু করবো( বাকা হেসে) ( মিঃ চৌধুরী)

— একদম না, আ আপনি চু চুমু দিবেন আমি জানি।কাছে ঘেষবেন না কিন্তু। (আমি)

কে শোনে কার কথা, উনি সেই টেনে নিয়ে আমাকে চুমুর বর্ষনে ভরিয়ে দিলেন। জোড় করে ছাড়া পেয়ে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করলে অসভ্য লোকটা ঠোঁট কামড়ে হেসে শিস দিতে দিতে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলেন।
আমিও মুচকি হাসলাম। এই লোকটার স্পর্শে আমার কম্পন ওঠে যায়। বেহায়া মনটা বারবার বলছে, ওনার কথা,স্পর্শ, এসব একদিনের জন্য ছুটি নিলে আমি পাগল পাগল হয়ে যাবো। যেহুত আপু আর ভাইয়া আছে ঘরে, তাই চলে গেলাম পাশের গেস্ট রুমে। ফ্রেশ হয়ে শুভ্র রঙ এর সালোয়ার সেট পরে নিলাম। নিজের ঘরে গিয়ে দেখি মিঃ চৌধুরী ঘুরে ঘুরে আমার রুমটা দেখছে। হয়তো ওনার প্রাচির সাম্রাজ্যটা মিস করছে। তাই দির্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম-

— মিঃ চৌধুরী খুব অবাক হচ্ছেন? আসলে একটু ম্যনেজ করে থাকতে হবে। আপনার খুব কষ্ট হবে তাই না। আসলে আম!

— হুস জান। কি বলছো, এই ঘরটা ইভেন এই ঘরের মানুষটা আমার। এটা আমার রানীর ছোট রাজত্ব্য, ছোট হোক বা বড় হোক আমি সন্তুস্ট। ( মুচকি হেসে) (মিঃ চৌধুরি)

আমি অপারক তার কথায়, কেন এই লোকটা আমাকে এইভাবে তার মায়ায় আবদ্ধ করছে। ভাবনার সাগর থেকে চমকে ওঠি তুবার কথায়।

— বোন তুই আজকের দিনটা প্লিজ ভাবনার ভিতর ডুবিস না। জিজু আসছে খেতে আয়, আন্টি ডাকছে। (তুবা)

— হ্যাঁ তুই যা আমি আসছি। (আমি)

— কেন আরেকটু রোমেন্স করবি বুঝি? ( চোখ টিপে) (তুবা)

আমি চোখ রাঙাতেই আমাকে চাপড় মেরে চলে গেলো। মিঃ চৌধুরীর দিকে ঘুরে তাকাতেই আমার হাতে তাওয়াল দিয়ে দিলেন। উৎসক চোখে তাকাতেই বুঝিয়ে দেয় চুল মুছিয়ে দিতে। আমিও কথা না বাড়িয়ে হাত তুলি মুছে দিতে।কিন্তু ওনার হাইটের সাথে আমি কিছুই না। পায়ের পাতায় ভর দিয়েও নাগাল পাচ্ছি না। অসহায় চোখে তাকাতেই হেসে আমাকে টেনে নিয়ে, নিজে বেডে বসে গেলেন। আমার কোমড় জড়িয়ে আকরে নিলেন। আমি কেপে উঠি ওনার ঠান্ডা স্পর্শে। কিছুক্ষিন বাদে খাবার টেবিলে হাজির হলে একে একে বসে পরি। রকমারি খাবারে ভর্তি টেবিল। কিন্তু এর ভিতর খেয়াল করেছি, রাইসা আর এনা খুব ভালো সম্পর্কের আভাস দিচ্ছে। আম্মু সবাইকে বেড়ে দিলেও আমাকে দেয় নি। মিঃ চৌধুরীকেও জামাই আদর করছে। আমার প্লেট ফাকা তাই আমি নিজের খাবার বেড়ে নেয়ার আগে মিঃ চৌধুরী থামিয়ে দিলেন।

— আহ জান আমি খায়িয়ে দিচ্ছি।তুমি বসো। ( মিঃ চৌধুরী)

সবার দিকে তাকাতেই দেখি মিটমিটিয়ে হাসছে। কিন্তু রাইসা আর এনা বাদে। দাদি অন্যদিকে ঘুরে খাচ্ছে। আচ্ছা লোক তো, সবার সামনেও কি মুখে তুলে খাওয়াতে হয়। কিছু বলতেও পারছি না। কি সুন্দর মাছের কাঁটা বেছে ছোট বাচ্চার মতো খাওয়াচ্ছে। খাওয়ার পর্ব শেষ হলো সবার খুনঁশুটিতে। খাওয়া শেষ এ সবাই চলে গেলো বিশ্রাম নিতে। আমি চাচিমা কে সাহায্য করতে চাইলেও তুবা আর চাচ্চু বকা দিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে।
যেই না ঘরে যাবো ওমনি এনা আর রাইসা পথ আটকে দাড়িয়েছে।

— কি হয়েছে রাইসা? আর এনা আপু তুমি আমাকে এভাবে আটকালে কেন? ( আমি)

— বাহ খুব আদর করে আরাভ তোকে। তো ইচ্ছে করেই কি আমাকে নমুনা দেখালি? ( রাইসা)

— প্রথমত তুই ভাইয়া বলবি। কারন উনি তোর বড়। আর দ্বিতীয় তো আদর সোহাগ আমার জামাই করে আমাকে তোকে দেখানোর প্রয়োজন মনে করছি না। ( আমি)

— ঈশা তুমি তো দেখি খুব কথা বলো।নিজের বোনকেও ছাড় দেও না?( এনা)

— ওও এবার বুঝেছি, যে তোমাদের মধ্যে এত মিল কিভাবে হলো।নিশ্চয়ই আমাদেত দু-জনকে আলাদা করার জন্য৷ ( আমি)

— যেই না বড়লোক বাড়িতে বিয়ে হয়েছে ওমনি মুখের বুলি ফুটেছে তাই না? ( রাইসা)

— এসব কি বলছিস। অন্তত্য তোর মতো ছোট মনের নই আমি। ( আমি)

— আচ্ছা ঈশা আরাভ তোমায় খুব ভালোবাসে। তো তোমাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তো? নাকি শুধু ( এনা)

— চুপ করুন আপনি। শুধু শারিরীক সম্পর্ক হলেই যে ভালো থাকা যায় তা নয়। কাউকে ভালোবেসে টাচ্ না করেও তার ভালোবাসা উপলব্ধি করা যায়। (আমি)

— আহ তোর জ্ঞান তুই রাখ তো। তোকে আরাভ শুধু ইউস করছে,নাহলে ভাব বিয়ের এতদিন অথচো তোর শরিরে কোন চিহ্ন নেই ভালোবাসার৷ (সয়তানি হেসে) ( রাইসা)

আমি বেশ বুঝতে পেরেছি ওরা এক হয়ে আমাকে কথার জালে ফাসাতে চাইছে। তাই মুচকি হেসে বললাম, ঠিক আছে প্রমান চাই তো, আর তোমরা কি ভেবেছো তোমাদের কথায় আমি মিঃ চৌধুরী কে ভুল বুঝবো আমাদের আলাদা করার ভালো ফন্দি এটেছো কিন্তু সেটা কাজে দেওয়ার নয়। তোমরা দেখতে চাও তো আমাকে উনি ভালোবাসে কিনা? বেশ তবে তাই হোক। (আমি)

আমার কথায় রাইসা আর এনা আপুর কোন ভাবাবেগ দেখা দিলো না। কিন্তু আমি কিছুতেই বুঝতে দিবো না আমাদের মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে কিনা।
কান্না পাচ্ছে ভিশন কি করবো এখন আমি। ভাবতে ভাবতে মিঃ চৌধুরী কাছে নিজের রুমে গেলাম। কিন্তু ওনাকে কোথাও না দেখে ফিরে আসতে নিলে হুট করে মিঃ চৌধুরী ঘরে প্রবেশ করে। ফলস্রুতিতে ধাক্কা খেয়ে পরে নিতে চাইলেও পারলাম না। শক্ত বাহুবন্ধনে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। কিছু না বলেই ওনাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। এতক্ষনের জমে থাকা কান্নাটাও যেন ভালোবাসার মানুষটাকে দেখে আপনা আপনি ঝরে পড়ছে। হাতের বাধন আলগা হতেই ওপরে তাকানোর আগেই সেই চিরচেনা মানুষটা দুই হাতে কোমড় উচিয়ে ফাঁকা জায়গা ভরাট করে ফেলে। মিশিয়ে নেয় নিজের মাঝে। আরেকটু কাছে টেনে অধরে অধর মিলিয়ে দেয়। আজ আমিও কোন বাধা দিচ্ছি না। নিজ থেকে আরেকটু কাছে গিয়ে দুই হাতে মুড়িয়ে গেলাম তার মাঝে।। আজ না আছে কারো তাড়া না আছে বাধা। কিন্তু দড়জার বাহিরে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে, এনা আপু আর রাইসা। এর ভিতর মুচকি হেসে আরেকটু নিবিড়ে জড়িয়ে গেলাম আমার প্রেমিক পুরুষ এর বুকে।

#চলবে____________