সে আমার মায়াবতী পর্ব-৩৩+৩৪

0
848

#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_৩৩
সব কিছু শুনে শুধু আমি না বাকিরাও বিমূর হয়ে তাকিয়ে রইলো। আন্টি যে আমার মা সে আমার সামনে এসে গালে হাত দিয়ে বললো-

— সেদিন যদি বায়না ধরে মেলায় না যেতাম তাহলে আজ আমার মেয়েটা আমার কাছেই থাকতো। মনে আছে পরির বাবা আমি ওকে প্রথম দেখেই বলেছি এ আমার মেয়ে পরি। ( আম্মু)

— হ্যাঁ মায়ের মন তো ঠিক চিনেছো। জানো আরাভ শেলিনা বার বার আমার পরির কথা বলতো। ( আব্বু)

— আমার মিষ্টি পরি ভাই তোকে কতটা ভালোবাসি জানিস? তোর মনে আছে আমি তোর জন্য চকলেট না এনে দিলে মুখ ফুলিয়ে থাকতি। তোর পুতুল গুলো আমাকে ছাড়া কাওকেই ছুঁতে দিতি না। আমি কিন্তু আজও তোর পুতুল কাওকে ছুঁতে দেই না। নিজের হাতে তোর রুম সাজিয়ে রেখেছি। আমার বিশ্বাস ছিলো আমার পরি আসবে। ( ফারাজ)

সবার চোখে পানি। মিঃ চৌধুরী আমার এক হাত জড়িয়ে এবার প্রেসের সামনে গিয়ে আবার বললো –

— আই হোপ সবাই আমার ওয়াইফ এর পরিচয় পেয়েছেন? সে কোন পরিচয়হীন মেয়ে না। যথেষ্ঠ সমভ্রাম্ত পরিবারের মেয়ে। আর আজকে যদি সে নিজের পরিচয় নাও পেতো তাহলে তার জন্য বরাদ্ধকৃত ভালোবাসা এতটুকু কমতো না। আমার ঈশুপাখি যেমন আমি তেমনি তাকে ভালোবাসি।( মিঃ চৌধুরী)

ওনার কথায় রীতিমত সবাই অবাক হলেও আমি অবাক হলাম না। জানি এই মানুষটাই আমার ভরসার স্থান। আমার আস্থা আমার ভালোবাসা। এবার আমি আম্মুর দিকে তাকাতেই দেখলাম তার চোখে পানি গড়িয়ে পরছে। আজ প্রথম আমি এই কঠোর মানুষটাকে কাদঁতে দেখছি। আম্মুর সামনে গিয়ে দাড়াতেই আম্মু আমাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে-

— আমাকে তুই ক্ষমা করে দে মা। আমি যে তোর প্রতি এত অন্যায় করেছি তার কোন ক্ষমা হয় না জানি। যেই মেয়ের জন্য আমি তোকে অবহেলা করলাম, সেই মেয়ে আমার মুখ পুড়িয়েছে। কিন্তু তুই এত ভালোবাসার পরেও তোকে কাছে টেনে নেই নি। আমাকে ক্ষমা করে দে মা। (আম্মু)

আম্মু কান্না করে কথাগুলো বলতেই আমি চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললাম-

— কি বলছো আম্মু তুমি। তুমি আমার আম্মু ছিলে আর থাকবেও। হ্যাঁ এখন আমি আমার আসল বাবা মা কে পেয়েছি কিন্তু তাই বলে কি আমার এই আম্মু কে ভুলে যাবো নাকি। তুমি কেদোঁ না আম্মু। ( আমি)

আমার কথায় আম্মু মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরলো। দাঁড়িয়ে আমার আসল মা আর শাশুরি আম্মুর সামনে গিয়ে তিনজনের হাত আমার হাতে নিয়ে বললাম –

— চৌধুরি সাহেব দেখেছেন আমার তিনটে আম্মু। তোমরা দেখেছো আজ থেকে আমার ভালোবাসা তিনগুন বেড়ে গেলো। ( আমি)

— হ্যাঁ পাখি এবার আমাকে মনে রাখলেই হয় তোমার।( মিঃ চৌধুরী)

— আপনি আবার? ( আমি)

আমার কথায় সবাই হেসে দিলে। শশুর আব্বু সবাইকে কেক কাটিং এর জন্য এনাউন্স করে। একে একে সবাই এলে আমিও কেক কাটতে যাই। কিন্তু রাইসা কে এক কোনায় দেখে ওর সামনে দাঁড়াই। আমাকে দেখে রাইসা নিচু তাকালে ওর হাত ধরে কেকের কাছে নিয়ে আসি।

— সবাই এখানে তুই ওইখানে কি করছিস? চল একসাথে কেক কাটি। ( আমি)

আমি খেয়াল করলাম রাইসার চোখে অশ্রুকনা ভির করেছে তাই ওর একহাত জড়িয়ে মিঃ চৌধুরীর দিকে ইশারা করতে উনি হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে। ওনাকেও টেনে এনে কেক কাটি। আজকের দিনটা আমার জিবনের শ্রেষ্ঠ দিন। সব ভালোবাসারা আমাকে ডেকে নিচ্ছে তাদের কাছে। কি নেই আমার কাছে। তিন তিনটে মা আছে, বাবা আছে। পুরো পরিবার আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা আছে সে হচ্ছে আমার স্বামী। আমার ভালোবাসার মানুষ। কেক কেটে সর্বপ্রথম আমি মিঃ চৌধুরীর মুখে ধরি। উনি আম্মু আব্বু কে দেখিয়ে দিলে আমি হেসে বলি-

— আপনার মতো স্বামী প্রতিটা মেয়ে ডিসার্ভ করে। যে তার স্ত্রী কে সিমানাহীন ভালোবেসে মুড়িয়ে রাখে। আপনি আমার অতিত বর্তমান না যেনেই আমাকে বুকে ঠাই দিয়েছে। কখনো এক ফোটা অশ্রু বের হতে দেন নি। আপনি আপনার কথা রেখেছেন মিঃ চৌধুরী। আজকে আপনার জন্যই এই আমি সব পেয়েছি।(আমি)

— তুমি আমার এক আকাশ সমান অধিকার। আমার অতল সমুদ্রের ভালোবাসা। তাকে খুশি করা তো আমার দায়িত্ব। আজকের পর তুমি সবসময় এভাবেই লিড করবে জান। ( মিঃ চৌধুরী)

উনি মুচকি হেসে কথাটা বলে উঠতেই কড়তালির আওয়াজে পুরো চৌধুরি বাড়ি ধ্বনি তুললো। উনি হুট করেই হাটু গেড়ে বসে পরলেন। হাত থেকে ডায়মন্ড রিং বের করে সবার সামনে আমার হাত টেনে পরিয়ে দিলেন। আমার ইচ্ছে করছিলো মানুষটার বুকে মিশে যেতে কিন্তু বড়রা ছিলো বিধায় পারি নি। উনি হয়তো আমার মনের কথা শুনতে পেয়েছেন তাই উঠে সবার সামনেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন-

— আমি তোমার জান। যখন ইচ্ছে জড়িয়ে ধরবে, চুমু খাবে কে বারন করেছে। এত হেজিটেড এর কি আছে পাখি।(মিঃ চৌধুরি)

— অসভ্য লোক মানুষ আছে। কি করছেন ছাড়ুন। ( আমি)

উনি ছেড়ে দিলেও পুরোপুরি ছাড়লেন না। আমার বাহু আকড়ে রইলেন। একে একে সবাইকে কেক খাওয়ানোর পালা শেষ হলো। যে যার মতো ইনজয় করছে। সিড়ির দিকে চোখ পরতেই দেখি, তুবা কে জোড় করে কেক খায়িয়ে দিচ্ছে তুহিন ভাইয়া। বেচারি মনে হয় রেগে ছিলো ঠোঁট ফুলিয়ে কিছু বলার আগেই তুহিন ভাইয়া কিছু একটা বললো। মিউজিকের সাউন্ড এ শুনতে না পেলেও এতটুকু বুঝেছি আমার চৌধুরি সাহেবের মতোই অসভ্য মার্কা কথা বলেছে নয়তো তুবা এখন এমন লাল নীল হতো না। একদল ফ্যমিলি দেখছি যারা জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। আজ বাড়ির প্রতিটা সদস্যের মুখে প্রশান্তির হাসি। আপুকে ভাইয়া এখনোও জোড় করে ফল খাওয়াচ্ছে। আপু কপাল চাপড়াচ্ছে আর বিরবির করছে। মায়া আর আবির ভাইয়া কি সুন্দর লুকিয়ে প্রেম করছে।অবশ্য সামনেই ওদের এনগেজমেন্ট তবুও ওদের মতে বিয়ের আগে প্রেম করার মজাই আলাদা। সবাইকে পরোখ করার চোখ যায় মিঃ চৌধুরীর দিকে। উনি চোখ ছোট ছোট করে বুকে হাত গুজে বললেন –

— শেষ? দেখা হয়েছে? নাকি আরও বাকি আছে? সবার দিকেই নজর খালি আমি ছাড়া। ( মিঃ চৌধুরী)

উনি বাচ্চা বাচ্চা ফেইস এ কথাটা বলতেই আমি খিলখিলিয়ে হেসে দিলাম।
ওনার মুখের সামনে গিয়ে হালকা গাল টেনে দিলাম।
উনি অবাক হয়ে বললো-

— এই তুমি আমাকে নকল করছো? নট ব্যড জান। ( মিঃ চৌধুরী)

দু-জনেই হেসে দিলাম। তারপর খাওয়ার পর্ব এলে সবাই ডিনার করতে বসে। আমি খেতে খেতে পেট ফুল হয়ে গিয়েছে কারন তিন আম্মু, আর সাথে মিঃ চৌধুরী তো আছেই। যত যত বারন করছি বেশি করে গেলাচ্ছে। ফেলতেও পারছি না তাই খেতে হচ্ছে। অসহায় চোখে মিঃ চৌধুরীর দিকে তাকাতেই বলে উঠে –

— নো জান আগে খাও। তোমার কোন বাহানা চলবে না। ওয়েট কতো জানো৷ এখন মুখ ফুলিয়েও কোন লাভ হবে না। ফিনিশ ইট। (মিঃ চৌধুরি)

— যখন প্রথম এ বাড়িতে এসেছি। পরির প্রতি আরাভ এর নেয়া যত্ন গুলো দেখতাম, মনে মনে খুব ইচ্ছা হতো তখন যদি আমার পরি থাকতো আরাভের সাথেই বিয়ে দিতাম। কার কপালে এমন ভাগ্য থাকে স্বামীর এত আদর যত্ন পাওয়ার। আজ ঠিক আমার মনের ইচ্ছা পূরন হয়েছে। সেই আরাভের বউ হয়েছে আমার মেয়েটাই। ( আম্মু)

আম্মুর বলা কথায় সবাই সায় জানালেও এই মানুষটার প্রতি আরো ভালোবাসা বেড়ে গেলো আমার। সত্যি তো কয়জন মেয়ের ভাগ্যে এমব বড় জোটে। আমি সত্যি অনেক লাকি। যে কাওকে পরোয়া করে না তার ভালোবাসায়।

———————————————————–

সময় বহমান কারো জন্যই অপেক্ষা করে না। তেমনি আরও চারটে মাস আমাদের জিবন থেকে সুখে আনন্দে চলে গেলো। এই ক-মাসে উনি আমাকে কোন দিন একা ছাড়ে নি। ভার্সিটিতেও নিজে নিয়ে যেতো। মানুষটাকে মুখ ফুটে কিছু বলা লাগে না। সব কিছুই বুঝে যায়। কথায় কথায় তো তার রোমেন্টিক অত্যাচার আছেই। আপুর সাড়ে চার মাস চলছে। আজ আপুর সাধের অনুষ্ঠানের সাথে আবির ভাইয়া আর মায়ার এনগেজমেন্ট। এক সপ্তাহ পরেই ওদের বিয়ের ডেইট দেয়া হয়েছে। তুবা আর তুহিন ভাইয়ার ও ছোটখাটো ভাবে এনগেজমেন্ট করিয়েছেন। ভাইয়া একটা বিসনেস ট্রিপ এ যাবে তাই তার পরেই ওদের বিয়ে দেয়া হবে। উকিঝুঁকি দিতেই দেখলাম উনি খুব মনোযোগ দিয়ে ল্যপটপে কাজ করছে। তাই ওনাকে একটু বিরক্ত করার জন্য সামনে গিয়ে ঠাস করে ল্যপটপ অফ করে হুট করেই ওনার কোলে চড়ে বসলাম। ওনার গলা জড়িয়ে
ধরলে আমার কোমড় ধরে টেনে নিয়ে এলেন। চুলে হাত বুলিয়ে বললেন-

— কি হয়েছে জান। কিছু লাগবে? মন খারাপ? ( মিঃ চৌধুরী)

— হুম আপনাকে লাগবে। আপনি এখন আর আমাকে এতটুকু টাইম দিচ্ছেন না। সারাদিন ল্যপটপে কি?

— ওহহ আচ্ছা তাই? আমি তো কাজ করছি পাখি। আজ তো অফিস জাবো না তাই কিছু কাজ যেন ডিউ না থাকে তাই করে রাখছি। তো বলুন ম্যডাম আপনি এত সোহাগ করছেন কেন? ( মিঃ চৌধুরী)

— ওহহ তাই আর নিজে যে আমাকে সারাদিন জ্বালাতন করেন তার বেলায়। ঠিক আছে আর আসবো না আমি থাকুন আপনি। ( আমি)

অভিমান করে কথাটা বলতেই উনি আরেকটু কাছে টেনে নিলেন। গালে নাক ঘষে বললেন-

— এত অভিমান এত। সামান্য সময় দেই নি তাতে এত অভিমান। আর যখন তুমি সারাদিন মায়া, আর এনার সাথে বসে থাকো এই বেচারা আমি যে তোমাকে মিস করি সেটা তো বোঝ না। ( মিঃ চৌধুরী)

— ওহহ তাই আপনি রিভেঞ্জ নিবেন। সেটাই আ!! ( আমি)

আমাকে আর কিছু না বলেই উনি জড়িয়ে ধরলেন। চুমুর বর্ষন একের পর এক দিতেই থাকেন। মুখ বুঝে সহ্য করছি ওনার পাগলামি গুলো। মানুষটা কি পরিমান পাগল
হলে এমন করতে পারে সেটাই ভাবছি। নিবিড় ভাবে জড়িয়ে গেলাম মানুষটার বুকে। উনিও হেসে আমাকে বুকে আগলে নিলেন।

#চলবে____________

#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_৩৪
সেই কখন থেকে একটু পর পর মাথা চক্কর দিচ্ছে। যথা সম্ভব নিজেকে সামলে বসে আছি। মিঃ চৌধুরী শুনলে আবার পাগলামি শুরু করে দিবে। আপাদত কাওকে না বলাই বেটার। চুপচাপ বসে আছি। উনি রেডি হয়ে আমার কাছে আসার সময় তুবা, মায়া, আপু, এনা আপু ঘরে চলে আসে।

— ঈশা রেডি হোস নি কেন? একটু পর আবির এর বাড়ির লোক চলে আসবে। ( মায়া)

— আব মানে এক্ষুনি যাবো।(আমি)

— তোর মুখ চোখ এমন শুকনা লাগছে কেন? কি হয়েছে।(আপু)

আপুর কথায় মিঃ চৌধুরী সরু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বড় বড় পা ফেলে আমার দিকে চলে আসে। গালে হাত দিয়ে অস্থির হয়ে বলে –

— হেই জান লুক। কি হয়েছে পরি। শরির খারাপ লাগছে?( মিঃ চৌধুরী)

— আহ মিঃ চৌধুরী আমি ঠিক আছি। টেনশন নেয়ার দরকার নেই। আসলে এম!

আর কিছু বলার আগেই গা-গুলিয়ে উঠলো, কোন মতে দৌরে ভেসিনের সামনে যেতেই হরহর করে বমি করে দেই। কিন্তু কিছুতেই বমি কমছে না। মিঃ চৌধুরী দৌরে এসে আমার কাধ খামচে ধরলেন। একে একে আপু,সহ সবাই চলে এসেছে। আমি মিঃ চৌধুরীকে ঠেলে দিয়ে বললাম-

— আ আপনি যান প্লিজ। আমার জন্য আবার আপনার কাপড় নষ্ট হবে। এমনিতেই রেডি হয়ে! ( আমি)

— একটা থাপ্পড় দিয়ে তোমার গালের দাঁত ফেলে দিবো। আমার ড্রেস আগে না তুমি আগে? ( মিঃ চৌধুরী)

ওনার চিৎকারে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো। বুঝলাম ভুল সময় ভুল কথা বলে ফেলেছি। তাই আমি কিছু বলার জন্য উদ্যত্ম হতেই, উনি ওনার বুকের সাথে চেপে আমার মুখে পানি দিয়ে দিলেন। হুট করেই কোলে নিয়ে বেডে শুয়িয়ে দিলেন।

— কোথায় যাচ্ছেন আপনি? আর আমাকে এখানে শোয়াচ্ছেন কেন? আমি এখন নিচে যাবো, রেডি হবো। আর আপনি এখানে ঘুম পারাচ্ছেন? ( আমি)

— না জান তুমি হটাৎ করেই এমন কেন করলে এটা আমার জন্য জানা বেশি আর্জন্ট। তাই! (মিঃ চৌধুরি)

— হ্যাঁ ঈশা তোর কি হলো আর! ( সামিয়া)

— উফফ না আজ আমি কোন মতেই এই দিন স্পয়েল হতে দিবো না। কত প্লেন আছে আমার। তার মধ্যে শুরু হয়ে গেলো আপনার?(আমি)

— দিন দিন কিন্তু তুই শুকিয়ে যাচ্ছিস। তোকে খুব ক্লান্ত লাগছে। বলছি কি!( তুবা)

— আচ্ছা বেশ আমি যাবো না নিচে হ্যপি তো সবাই?( আমি)

— আরে আমরা তো সেটা বলি নি তুই আজ ডা. দেখিয়ে নে। আর ডা.মিতা তো এসেছে দেখিয়ে নিতে কি প্রবলেম? ( এনা আপু)

— আহা উনি গেস্ট আর এখন আমাকে চেকাপ করতে আসবে? আর আজকে জোড় করে উনি এত খায়িয়েছে। তার উপর তেলের জিনিস প্রচুর খেয়েছি। তাই একটু শরির খারাপ করেছে। এত ভাবার কি আছে?(আমি)

আমার কথায় আপু কিছু বলতে চাইলেও মিঃ চৌধুরীর ইশারায় সবাই চলে গেলো। উনি আমাকে টেনে উঠিয়ে নিলেন। গালে হাত বুলিয়ে বললেন-

— জান তুমি দিন দিন জেদি হয়ে যাচ্ছো। একটুও কথা শুনছো না আমার। (মিঃ চৌধুরি)

— সরি। আমি তো বলেছি কাল পাক্কা ডা. দেখাবো আর আপনি চাইলে আজ অনুষ্ঠান শেষ হোক তারপর মিতা আন্টি দেখে নিবে। ( আমি)

আমি ঠোঁট ফুলিয়ে কথাটা বলতেই উনি ঝুঁকে ঠোঁটে চুমু খেলেন। আমাকে তুলে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পড়িয়ে দিলেন। হাত ভর্তি লাল সাদা চুড়ি। সিম্পল মেকাপ আর অর্নামেন্টস পরিয়ে দিলেন। আয়নায় চোখ বুলিয়ে ওনার দিকে ফিরে পায়ের পাতায় ভর দিয়ে ওনার কাধে হাত রেখে বললাম –

— বিয়ে হয়েছে ছ- মাস হয়ে গেলো কিন্তু আজও আপনি আমাকে শাড়ি পড়া শিখালেন না। খেতে বসলে আগে আমাকে খায়িয়ে দেন। এতটুকু অসুস্থ হলে পাগল হয়ে যান। এতটা ভালোবাসেন কেন আমায়? ( আমি)

— কারন আমার সামনের রমনীর মধ্যে কিছুর কমতি নেই। সে আমার কাছে যথেষ্ঠ। তুমি জানতে চেয়েছো কেন ভালোবাসি? তাহলে শুনে নাও ভালো বাসতে কারন লাগে না। কারনে অকারনে ভালোবাসি মায়াবতি। (মিঃ চৌধুরি)

— আমি আপনার কি হই? ( আমি)

— #সে_আমার_মায়াবতী। তুমি আমার মায়াবতি জান। আমার প্রথম প্রহরের প্রেম। (মিঃ চৌধুরি)

মিঃ চৌধুরীর কথায় প্রশান্তিতে মন ছেঁয়ে গেলো। ওনাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলাম। উনিও সেইম কাজটাও করলেন। সব শেষে নিচে নেমে এলাম। উনি আমার হাত ছাড়ছেই না। বাড়িতে দু-টো খুশি আজ আনন্দে বইছে। আজ সবাই প্লেন করে সেইম শাড়ি আর ছেলেরা পাঞ্জাবি পরেছে। আমার চৌধুরি সাহেবের রুপ জেনো আরও বহুগুন বেড়ে গিয়েছে। মানুষটার দিকে তাকাতেই বার বার ক্রাশিত হই। আম্মু আব্বু সবাই এলে একসাথে আপুর সাধের অনুষ্ঠান শুরু হয়। আবির ভাইয়া আর মায়া একসাথে বসেছে। একে একে কেক কেটে সবাইকে খায়িয়ে দিলেন। সব আইটেম থেকে আপুকে খায়িয়ে দিলেন। খাওয়া শেষে সবাই মায়া আর আবির ভাইয়ার কাছে যায়। আব্বু এনাউন্স করে রিং সেরেমানি সেরে ফেললেন। হইচই গানবাজনা দিয়ে শুরু হলো চারদিক। এর ভিতর মনে হচ্ছে মাথা শুধু ঘুরাচ্ছে। কাওকে কিছু বুঝতে না দিয়ে দাঁড়িয়ে তাল মেলাচ্ছি। এদিক সেদিক মিঃ চৌধুরী কে খুজে দেখলাম ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত। হাটার মতো শক্তি পাচ্ছি না। কাওকে বলবো তার উপায় নেই। সবাই যে যার মতো নাচছে। ছোট ছোট পা ফেলে সিড়ির চার ফ্লোর উঠতেই আর পারলাম না নিজেকে সামলাতে। ঘুরে পড়ে গেলাম নিচে। পুরো বাড়ি স্থম্ভিত হয়েছে আচমকা ঘটনায়। মিঃ চৌধুরী ফোন ফেলে দৌরে এলেন আমার কাছে। আমার মাথা তার কোলে নিয়ে বলতে শুরু করলেন-

— জান এই জান কি হয়েছে? ডা. মিতা আপনি ওকে দেখুন না কি হয়েছে। ( মিঃ চৌধুরী)

আমার কপাল বেয়ে কয়েক ফোটা রক্ত বের হতেই পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ কান্না শুরু করে দিলো। মিঃ চৌধুরী আমাকে কোলে নিয়ে নিলেন। রুমে নিয়ে শুয়িয়ে দিলেন।

— ডা. মিতা ওর কি হয়েছে? এত রক্ত কেন বের হচ্ছে। আমি কিছুই জানি না আমার ঈশু কে ঠিক করে দিন। নাহলে সব ধংস করে দিবো।(মিঃ চৌধুরি)

ওনার কথায় মিতা আন্টি ফারাজ ভাইয়া কে ইশারা দিলেন। ভাইয়া সহ, সবাই ওনাকে বোঝাতে ব্যস্ত। উনি হুট করেই বলে উঠলেন –

— স্টিচ করবেন না। এগুলোতে ওর ব্যথা লাগবে। আপনাকে কিচ্ছু করতে হবে না। ( মিঃ চৌধুরী)

— আরাভ সামান্য কেটেছে স্টিচ করবো না। শুধু বেন্ডেট করে দিবো। এক্ষুনি জ্ঞান চলে আসবে। চেকাপ করতে দাও। (মিতা)

উনি কথা শেষ করে আমাকে চেকাপ করতে ব্যস্ত হয়ে পরে। ফারাজ ভাইয়া চোখের পানি মুছতেই এনা ভাইয়ার সামনে গিয়ে কাধে হাত দিয়ে বললেন-

— আপনি চিন্তা করবেন না প্লিজ। ঈশা ঠিক হয়ে যাবে। ( এনা)

— আমার বোনটার ব্যথা সহ্য হচ্ছে না আমার। ( ফারাজ)

— আপনি দেখুন ও ঠিক হয়ে যাবে। আর আপনাকে হাসিখুশি ভালো লাগে মন খারাপে না। ( এনা)

এনা আপু কথাটা বলেই ব্যক্কল হয়ে গেলো। ভাইয়া চোখ ছোট করে তাকিয়ে হালকা করে বলে –

— মিস বিদেশিনি আপনি তো বলেছেন কথা বলবেন না। তাহলে কি বললেন-( ফারাজ)

— আব মানে আমি শুধু সান্তনা দিয়েছি। আর কিছু ভেবে বসবেন না। ( এনা)

এনা আপু কথাটা বলে বেড়িয়ে যেতেই ভাইয়া কান্নার মাঝেও হালকা হাসলো।ডা. মিতা আমাকে চেকাপ করে গম্ভির কন্ঠে মিঃ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন –

— আমি এটা তোমার থেকে আশা করি নি আরাভ। ( মিতা)

— কি হয়েছে ওর? আর আপনি কি বলছেন? কি করেছি আমি?( মিঃ চৌধুরী)

— ওয়ান মান্থের প্রেগন্যান্ট ঈশা। তুমি এটা করেও বলছো কিছু করো নি? আমি কিন্তু মিষ্টি ছাড়া বাড়ি যাবো না। (মিতা)

ওনার কথায় সবাই প্রথমে অবাক হলেও খুশিতে চিল্লিয়ে উঠে। মিঃ চৌধুরী অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ওঠে। সবাই ওনাকে অভিন্দন যানিয়ে চলে যেতেই আমি পিটপিট করে চোখ খুললাম। উনি আমার দিকে গম্ভির চোখে তাকিয়ে বলে ওঠে –

— এ তুমি কি করেছো পাখি? তোমাকে এবার আমি সামলাবো কিভাবে। (মিঃ চৌধুরি)

— আ আমার সাথে এভাবে বলছেন কেন? আমার কি হয়েছে? খুব বাজে কিছু হয়েছে বুঝি। ( কাদোঁকাদোঁ ফেসে)

— হ্যাঁ আগে আমার তোমাকে সামলাতে হতো আর এখন তোমার সাথে আরেকজন ভাগিদার আসবে। ( মিঃ চৌধুরী)

— কে কে আসবে। ( আমি)

— আমাদের বাচ্চা পাখি। (মিঃ চৌধুরি)

— ওহহ বা –

আর কিছু বলার আগে আমি চিল্লিয়ে ওনার কোলে বসে পরি। কেঁদে দিয়ে বলি –

— বা বাচ্চা। আমাদের বাচ্চা।আমার অস্তিত্ব আসবে পৃথিবিতে। স সত্যি। ( আমি)

কথাটা বলেই কেঁদে উঠলাম। উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন-

— আমাদের প্রিন্স বা প্রিন্সেস আসছে জান। ছোট ছোট হাত পা হবে তাদের। আর হ্যাঁ বাবা ছেলে মিলে মা কে খুব শাসন করবো। ( মিঃ চৌধুরী)

— না আপনার আগেই আমি আমার বেবি কে হাত করে নিবো সে মায়ের পক্ষ নিবে। ( আমি)

আমার কথায় উনি হেসে উঠলেন। দু- জনেই আজ সুন্দর একটা মুহুর্ত পার করছি। ওনার বুকে শুয়ে আমার সুখের অপেক্ষা করছি। আমিও আধো আধো কন্ঠে কারো মা ডাক শুনবো। ভাবতেই ওনাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। উনি আরেকটু আগলে নিলেন আমায়।

#চলবে____________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।