প্রীতিলতা পর্ব-১৮

0
464

#প্রীতিলতা ❤️

#লেখিকা:- Nowshin Nishi Chowdhury

#১৮_তম_পর্ব🍂

ছোটবেলা থেকে খুব দুরন্ত স্বভাবের ছিলাম আমি। আর ভাইয়া ছিল আমার একদম বিপরীত একদম শান্ত বাচ্চা। আমার ক্রিয়েটিভ জিনিসপত্র খুব ভালো লাগতো। কোন কিছু তৈরি করা, এক্সপেরিমেন্ট চালানো এ বিষয়গুলোর উপরে আমার আলাদা ঝোঁক ছিল।

এমনও হয়েছে ছোট্ট একটা এক্সপেরিমেন্ট চালাতে গিয়ে আমি পুরো ঘর নোংরা করে ফেলেছি। আম্মুর সে কি বকাবকি।

বলে হাসলেন সাফওয়ান। ছাদের উপরে ডিভান এ পাশাপাশি বসে আছি। কথাগুলো বলতে গিয়ে কেমন যেন একটা শিশুশুলভ আচরণ ফুটে উঠলো তার মুখে।

তারপরও যান এসব আমি কখনো গায়ে মাখতাম না। আমি তো সবসময় আমার মর্জি মতোই চলতাম। খেলাধুলা , পড়াশোনা কোন কিছুতেই পিছিয়ে ছিলাম না আমি। যখন যেটা চেয়েছি হাতের মুঠোয় পেয়েছি। এজন্যই হয়তো আমি একটু উগ্র টাইপ।

আমার জীবনে ছোট খালামনির অবদান অনেক। তাকে প্রথম প্রথম আম্মু বলে ডাকতাম এখনো ডাকি ছোট আম্মু বলে। শুধু একটা জিনিসের অভাব ছিল একটা ছোট পুতুলের মত বোন যেটা আমার ছিল না।

একদিন দেখলাম খালামণি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পেট আঁকড়ে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে কাঁদছে। সবাই তাড়াতাড়ি ছোট আম্মুকে নিয়ে কোথায় যেন চলে গেল।

আমি রুমে গিয়ে দেখি সায়েম বসে কাঁদছে। আমি যে তাই আমাকে জড়িয়ে ধরে আরো জোরে কান্না করে দিয়ে বলল,

— আম্মুকে সবাই কোথায় নিয়ে গেল?

আমি সায়েমকে কাঁদতে নিষেধ করে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম,

— ছোট আম্মুর পেটে ব্যথা করছে তাই হয়তো ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে। দেখবি কিছুক্ষণ পরেই ছোট আম্মু সুস্থ হয়ে বাসায় চলে আসবে।

সেদিন সারারাত মা বাবা ছোট ফুপা ছোট আম্মু কেউই বাসায় আসেনি। সারারাত আমি সায়েম আর সামিরা আপু একসাথে ছিলাম। সায়েম কান্নাকাটি করছিল। আম্মুর কাছে ফোন দিয়েছিলাম আম্মু বলল,
— ছোটআম্মু সকালে একদম সুস্থ হয়ে যাবে।

পরে সকালবেলায় আম্মু ফেরত এসে আমাদের সবাইকে তৈরি করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে গিয়ে দেখি ছোট আম্মুর পাশে তোমাদের পেছানো একটা ছোট্ট পুতুল রাখা আছে। পুতুলটাকে ছুঁতে ই কেমন যেন নড়ে চড়ে উঠলো।

সত্যি বলতে ওই সময় তোয়ালে পেঁচানো ওই ছোট্ট পুতুলকে দেখে আমি যে কি খুশি হয়েছিলাম সেটা বলে বোঝাতে পারবো না। ছোট্ট একটা পুতুল বোন। তোয়ালে পেঁচানোর একটুখানি ফাক দিয়ে মুখটা দেখা যাচ্ছে। আমি আর সায়েম তো একেবারে হামলে পড়েছিলাম দোলনার উপরে।

পরে আর বাসায় আসিনি। একেবারে ছোট আম্মুকে সাথে করে নিয়ে হসপিটাল থেকে বাড়ি এসেছিলাম সন্ধ্যায়।

ছোট্ট পুতুল বোনের নাম রাখা হলো সায়েম আর আমার নাম অনুসারে সাইমা।

কথাটা শেষ করে উনি আমার দিকে তাকালেন। আমি চমকে উঠলাম। উনি সাইমাকে বোন বলে সম্বোধন করলেন কেন?

আমাকে চুপচাপ থাকতে দেখে উনি আবার বলতে শুরু করলেন,

— সায়েম আর আমার সারাদিনের কাজ ছিল সায়মা ওর ছোট ছোট হাত নাড়িয়ে কি বলতো? কি বুঝাতো তাই নিয়ে একজন আরেকজনের সাথে ঝগড়া করা। বলতে গেলে সারাদিনই সাইমাকে নিয়ে বসে থাকতাম আমরা। সারাদিন দেখতাম চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে মাঝে মাঝে যখন খিদে লাগতো তখন ভ্যাক করে কেঁদে দিয়ে জেগে উঠতো সে।

খুব সুন্দর একটা জীবন্ত খেলনা পেয়ে গিয়েছিলাম আমরা। স্কুলে যাওয়া ছাড়া প্রায় সময় পড়ে থাকতাম সাইমার পাশে। বাহির ও খেলতে যেতাম না আমি আর সায়েম। তাই নিয়ে বন্ধুদের সাথে অনেক গন্ডগোল তারপরে মারামারি হয় আমাদের। তারপরে সায়েম এবং সায়মা এরা দুজনই আমার একমাত্র বন্ধু হয়ে ওঠে ।

সায়েম আর আমি একসাথে কলেজ পর্যন্ত পড়েছি। তারপরে ও বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে চান্স পেল সেখানে চলে গেল আর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগে। কিন্তু সাইমা যখন ক্লাস এইটে পড়ে তখন থেকে ওর মধ্যে কেমন একটা পরিবর্তন দেখা শুরু করি।

আমি আমার সামনে লজ্জা পাওয়া। ভাইয়া বলে ডাকতে না চাওয়া। কিন্তু প্রথমে আমি ব্যাপারটা অতটাও পাত্তা দিইনি। কিন্তু আমার কলেজ ফ্রেন্ড এর বোন সায়মার সাথে পড়তো ।

আমার সেই বন্ধু একদিন এসে আমাকে বলল,

— কিরে খালাতো বোন ফিক্সড করে রাখছো নাকি। তোমার নামে সাধারণ কথা বলা যায় না।

আমি আর সায়েম কিছুটা ক্ষেপে উঠে বললাম,

— কি যা তা বলতেছিস?

আমার সেই বন্ধু রাগ ঝেড়ে বলল ,

— সায়মা আমার বোনকে ধরে মারছে আর চিল্লায় চিল্লায় স্কুলে বলছে তুই নাকি শুধুমাত্র ওর জন্য তোদের নাকি বিয়েও ঠিক হয়ে আছে।

কথাগুলো শুনে আমি আকাশ থেকে পড়েছিলাম পরে সায়েম সায়েমাকে চেপে ধরলে সে সবকিছু স্বীকার করে। কিন্তু আমি ওকে সবসময় আমার বোনের নজরেই দেখেছি।

ব্যাস ব্যাপারটা ওখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। সায়েম সাইমাকে খুব ভালোভাবে বুঝিয়েছিল। আমি ওকে অন্য দৃষ্টিতে দেখিনা ছোট বোনের মতোই দেখি।

সাইমা চুপ হয়ে গিয়েছিল। তারপরে আমাদের এডমিশন টেস্টের পরে আমি ঢাকা আর সায়েম বরিশাল, সায়মা খুলনায় থেকে গেল।

এসব ব্যাপার নিয়ে আর কোন আলোচনা হয়নি আমাদের মধ্যে। কিন্তু আবার এই ব্যাপারটা সূত্রপাত ঘটে সায়মার বুয়েটে চান্স পাওয়ার পরে। ওর খুশি দেখে কে?

যতটা না খুশি ছিল বুয়েটে চান্স পেয়েছে তার থেকেও বেশি খুশি ছিল ঢাকায় থাকতে পারবে বলে। ঢাকায় ওর ভালোভাবে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম আমি।

আমিতো একটা ছোট ফ্লাট নিয়ে থাকতাম। বারবার যখন-তখন আমার ফ্লাটে এসে হাজির হত নানা বাহানায় থাকার চেষ্টা করত আমার ফ্ল্যাটে।

আমি দাঁতে দাঁত চিপে সাফওয়ানের কথার উত্তর করলাম,

— ফ্লাটে আর কি কি করতেন সেগুলো বলুন। ভেঙে বলুন শুনতে খুব ভাল লাগছে।

সাফওয়ান ক্ষেপে উঠলেন,

— তোমার ওই অশ্লীল মস্তিষ্ক থেকে এইসব অশ্লীল চিন্তাভাবনা বাদ দাও। জীবনে সুখী হতে পারবা।

হ্যাঁ আপনি তো সুখী মানুষ সৌখিন মানুষ ভদ্র নম্র ধোয়া তুলসী পাতা একেবারে।

সাফওয়ান ডিভানে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললেন,

— তোমার থেকে ভালো আছি।

আমি দাঁতে দাঁত চিপে বললাম,

— আপনাকে তো আমি।

সে চোখ বন্ধ করা অবস্থা তাই বলল,

— যেখানে বসে আছো সেখানেই চুপচাপ থাকো এখনো কথা শেষ হয়নি আমার।

আমি থেমে গেলাম। কারন আমার সবকিছু জানতে হবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।

—- যেহেতু ছোট বোন মানি ওকে, সেহেতু ওর উপর একটা অন্যরকম দুর্বলতা ছিল আমার। ওর কোন কথা ফেলতে পারিনা আমি। হঠাৎ হঠাৎ ফ্লাটে এসে বায়না করতো চলো না ভাই আজকে একটু ঢাকা শহরটা ঘুরে দেখি। চলনা আজ বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি। চলো আজ আমি রেস্টুরেন্টে খাব।

ওর সব বায়না আমি নির্দ্বিধায় মেনে নিতাম। আরো কি করতো গোপনে ছবি তুলে তুলে ফেসবুকে আপলোড করতো এবং বিভিন্ন ধরনের রোমান্টিক ক্যাপশন লিখতো।

আমার ফ্রেন্ড সার্কেলদেরও বলেছিল এবং প্রমাণ দেখিয়েছিল যে আমি নাকি ওর বয়ফ্রেন্ড। ফ্রেন্ডরাও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ছাড়তো। আমার হাজারবার না বলা কে সহস্রবার এর মতো হ্যাঁ মনে করত ওরা।

তাই একসময় হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। কাউকে কিছু বলতাম না। এর মধ্যে প্রায় অনার্স কমপ্লিট হয়ে যায় আমার। মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছি। এরমধ্যে আমার এক ফ্রেন্ড পুরো খবর নিয়ে আসলো আমার সো কল্ড গার্লফ্রেন্ড মানে সায়মা নাকি বুয়েটের কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ।

কথাটা অতটাও যাচাই করার ইচ্ছা হলো না কারণ বন্ধুদের সামনে নিজেকে প্রমাণ করার খুব দরকার ছিল যে আমি আর সায়মা কোন সম্পর্কে ছিলাম না। ফ্রেন্ডদের অনেকে বিশ্বাস করলো আবার অনেকে বলল সাইমা নাকি আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। তা গেল।

অনার্সে যেহেতু ভালো রেজাল্ট করেছি মাস্টার্সেও একটা ভালো রেজাল্ট আমার কাম্য‌ তাই বছরের প্রথম থেকেই পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ দিলাম একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম সায়মা আগের মত অত ঘনঘন আমার ফ্ল্যাটে আর আসে না।

আগে যে মেয়ের সপ্তায় ৫-৬ দিন আসতো সে এখন মাসে সর্বসাকুল্যে একবার আসে। ব্যাপারটা তো আমিও খুশি হয়েছিলাম ভেবেছিলাম হয়তো পড়াশোনা একটু মনোযোগী হয়েছে।

এর মধ্যেই হঠাৎ বাড়ি থেকে জানতে পারলাম ভাইয়া আর সামিরা আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে ফাইনাল পরীক্ষার পরেই বিয়ে। শুনে খুব খুশি হলাম আমারও সামনে পরীক্ষা পরীক্ষাটা শেষ হয়ে গেলে ভালোই মজার একটা মুহূর্ত কাটবে।

ধীরে ধীরে পরীক্ষার ডেট এগিয়ে আসতে লাগলো, আমিও পুরোটা পড়াশোনার মধ্যে ঢুকে গেলাম। সায়মার ব্যাপারটা পুরো মাথা থেকেই চলে গিয়েছিল আমার। এর মধ্যে সাইমা আর কখনো ফ্ল্যাটে আসেনি। পরীক্ষাটাও আলহামদুলিল্লাহ শেষ করলাম।

এখন খুলনায় ফিরে যাওয়ার পালা। ডিসেম্বর মাস আমরা প্রায় সবাই ঝনঝাট মুক্ত। ব্যাগ পত্র গুছিয়ে সাইমাকে কল দিলাম ফোন ওয়েটিং পেলাম। মনে করলাম বাসায় হয়তো কথা বলছে।

প্রায় আধা ঘন্টা পরে আবার রিং দিলাম তখন ওয়েটিং। এবার ফোন রেখে দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই সায়মা আমাকে কল ব্যাক করল। জানালো কালকে আমার সাথে খুলনায় ফিরবে। আমি যেন ট্রেন স্টেশনে জন্য অপেক্ষা করি।

পরের দিন ট্রেন ছাড়ার সময়ের অনেকটা আগেই আমি রেল স্টেশনে গিয়ে উপস্থিত হই। টিকিট অনুসারে আমার আর সাইমার সিট দেখে সিটের উপরে লাগেজ তুলে রেখে জানালা বরাবর বাইরে এসে স্টেশনে পাকা করে বাঁধিয়ে রাখা জায়গায় বসি।

ট্রেন ছাড়ার ৫ মিনিট আগে দেখলাম সাইমা স্টেশনের মেন গেট থেকে ভেতরে আসছে। না দেখে আবার আমি আমার ফোনে নজর বন্ধ করলাম। এখন পরে দেখলাম সাইমা আমার কাছে এসে পৌঁছায়নি।

নজর ঘুরিয়ে দেখলাম পিলারের পাশে কার সাথে কথা বলছে এবং লাস্টে জড়িয়ে ধরে বাই বলে টলি ব্যাগের হ্যান্ডেল ধরে এগিয়ে আসছে। পিলারের ওপাশে কে ছিল আমি দেখতে পাইনি।

আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,

— তুমি কি আমার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছো ভাইয়া?

ওর মুখে ভাইয়া ডাক শুনে আমি যেন তাজ্জব বনে গেলাম। এবার বলে বলেও ভাইয়ার ডাক ডাকানো যায়নি। সে আজ নির্দ্বিধায় ভাইয়া বলে ডাকছে।

সাফানের মুখে সায়মার ভাইয়া ডাক সোনাটা শুনে নিজের মনের মধ্যে যেন একটা বসন্তের হাওয়া বয়ে গেল। সাফানের উপর অনেক রাগ হল ভাইয়া ডাকছে বলে পিত্তি জ্বলে গেছে ওনার। হুহ ঢং

তুমি আমার সাইট ব্যাগটা সরিয়ে ওই পাশে রেখে ওকে বসা জায়গা করে বললাম,

— বেশি নয় মাত্র 15 মিনিট হলো বসে আছি।

— ওহ

বলেও ফোনে কি যেন করতে লাগলো। ট্রেনে উঠে বসার সংকেত দিতেই আমরা তাড়াতাড়ি সিটে গিয়ে বসে পড়লাম।

খুলনা পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেশ রাত হয়ে গেল আমাদের। বাড়িতে গিয়ে জানতে পারলাম আগামীকাল আপু আর ভাইয়ার এনগেজমেন্ট। রাতটুকু বিশ্রাম নিয়ে সকাল থেকে কাজে লেগে পড়লাম।

ভাইয়াকে সাথে করে নিয়ে শপিংয়ে যাব এছাড়া ঘরোয়া ভাবে এনগেজমেন্টের আয়োজন করা হলেও আত্মীয়-স্বজনে ভরপুর ছিল বাড়িটা

সন্ধ্যাবেলায় যখন এনগেজমেন্ট এর জন্য ভাইয়াকে তৈরি তৈরি করছিলাম তখন ভাইয়া আরও একটা প্যাকেট বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন তৈরি হয়ে আসতে।

চেঞ্জিং রুমে গিয়ে প্যাকেট থেকে ড্রেস বের করতে দেখলাম ভাইয়ার এনগেজমেন্ট এর জন্য যে ড্রেস কেনা হয়েছে আমার জন্য সেই একই ড্রেস কিনেছে ভাইয়া। প্রথমে একটু সন্দেহ হলেও। পরে ভাবলাম তুই ভাই একই ড্রেস পরব। তাই হয়তো ভাইয়া কিনেছে।

ভাইয়া আর আমি তৈরি হয়ে নিচে চলে আসলাম। পরে দেখি সামিরা আপু এবং সায়মা ও একই ড্রেস পরা। এবার আমার সন্দেহটা গাড়ো হল কি করতে চাইছে কি?

আমার ভাবনার মধ্যে ভাইয়া আর সামিরা আপু হাঁকে স্টেজে তোলা হলো । আংটি বদল হয়ে গেল। তখন আব্বু স্টেজে উঠে সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমার আর সায়মার এঙ্গেজমেন্ট ঘোষণা করল।

আমি যতটা না অবাক হয়েছি তার থেকে দ্বিগুণ অবাক হয়েছে সাইমা। ভয়ে ওর মুখটা রক্তশূন্য হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কেন সেটা আমি বুঝতে পারিনি।

আমাদের কথার মাঝে প্রীতম হঠাৎ ছাদে এসে বলল,

— তোমরা এখানে বসে গল্প করছ আর আমি সারা বাড়ি খুঁজে মরছি। কতক্ষণ এখানে আছো তোমরা? মা ওই দিকে তোমাদের খাওয়ার জন্য ডাকছে।

প্রীতম কে বললাম,

— তুই যা আমরা আসছি।

প্রীতম নাছোড়বান্দার মত সাফওয়ানের পাশে এসে তার হাত ধরে টেনে হিচড়ে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলল আগে চলো পরে কথা বলবে তোমরা। এসো এসো

সাফওয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— খাওয়ার পরে বাকিটুকু বলবো।

আর এদিকে আমি হাজারটা প্রশ্নের মধ্যে ডুবে গেছি। সাইমা যদি সাফোয়ানকে এতটাই ভালবাসবে তাহলে এনগেজমেন্টের কথা শুনে কেন ভয় পেল এবং আতঙ্কে মুখটা রক্তশূন্য হয়ে গেল।

তারমানে সায়মা যা বলেছে সব মিথ্যে কথা। আমার সাফওয়ান কেউ কতটা বিশ্বাস করব আমি? কেমন যেন সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। উফ উ ফ প্রীতমকে এখনি আসতে হলো।

আমায় বাকিটুকু শুনতেই হবে না হলে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর ও আমি পাব না। আর না পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে পারব।

চলবে….❣️