#My_First_Crush
#পর্ব-২৭
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
(হৃদি)
এক মুহুর্তের জন্য একদম স্তব্ধ হয়ে যাই আমি। হুট করে কিছু বোধগম্য হয় না। সব বিভ্রমের মতো মনে হয়। রাইয়ানের হাতের বাঁধন আরো শক্ত হয়ে আসে। কিছুটা সময় যেন এভাবেই কাটে। এরপর ভেতরে ভেতরে আমি নিজেকে সামলে নেই। আস্তে আস্তে নিজেকে রাইয়ানের থেকে ছাড়িয়ে ধীর কন্ঠে বলি, ‘তুমি এখানে? আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে আসতে পারিনি। সেটাই কি নিতে এসেছো?’
রাইয়ান ব্যাকুল স্বরে আমার চুলে হাত রেখে বলল, ‘আমি তোমাকে নিতে এসেছি হৃদি। আই অ্যাম সরি! আমার ডিভোর্স চাই না। প্লিজ আমার সাথে ফিরে চলো! আমরা আবার সবকিছু ঠিক করে ফেলবো।’
রাইয়ানের হাতটা আমার থেকে সরিয়ে আমি বললাম,
‘সরি রাইয়ান! আমি জানি না তুমি সত্যিই কি মনে করে এখানে এসেছো। কিন্তু আমি আর ফিরে যেতে যেতে পারবো না। আমি মুভ অন করে ফেলেছি। আবারো সেই পেছনে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।’
রাইয়ানের চোখ লাল হয়ে আসে। কিছু একটা চেপে আছে যেন ভেতরে। চোখ টলমল করতে থাকে। আমি দেখেও না দেখার ভাণ করি। নিজের বক্তব্য পেশ করেই আড়াল করি নজর। নিজেকে শক্ত করে বলি,
‘তুমি চলে যাও রাইয়ান।’
কথাটা বলে আমি চলে আসি। রাইয়ান অপলক আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর সে কোথায় যায় আমি জানি না। কারণ এরপর আমি আর তাকে সেখানে দেখিনি। হয়তো সে চলে গেছে। আমি চাইলাম এ ব্যাপারে মাথা না ঘামাতে। কিন্তু অলক্ষ্যে অগোচরে এই ভাবনা ঠিকই মনের মধ্যে উঁকি দিতে লাগলো। কেন বাংলাদেশে এলো রাইয়ান? কি প্রয়োজন ছিল তার এতোদিন বাদে আবার আমার সামনে আসা? আমি তো নিজেকে একটু একটু করে স্বাভাবিক করারই প্রয়াস করছিলাম। ইউএস ছেড়ে বাংলাদেশে আমি একারণেই এসেছিলাম যাতে জীবনের এই বড় পরিবর্তনে নিজেকে ভুলিয়ে রাখতে পারি আমি। নয়তো একই জায়গায় থেকে রাইয়ানের থেকে দূরে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না। এখন যখন সবকিছু এই নতুন জায়গায় গুছিয়েই নিচ্ছিলাম আমি তখন এভাবে হঠাৎ স্বপ্নের মতো করে এসে আমাকে এলোমেলো করে দেওয়া খুব কি প্রয়োজন ছিল রাইয়ানের?
কিছুদিন পর আমি ঢাকায় ফিরে আসি। শুরু হয় আমার প্রাত্যাহিক জীবন। মাঝখানে কেটে যায় দশ, পনেরো দিন। রোজকার মতোই অফিসে যাবার জন্য তৈরি হই আমি। বাস ধরে চলে যাই অফিসে। অফিসে ঢুকে জানতে পারি নতুন একটা ডোনেশন ডিল পেয়েছে আমাদের এনজিও। অনেক বড় বিদেশি কোম্পানি থেকে। তবে তারা ডোনেশন দেওয়ার আগে অবশ্যই যাচাই করে নিবেন। আমাদের এনজিও সত্যিই দরিদ্র দুঃস্থদের সাহায্য করে কিনা এবং আমাদের কাজ কতোটা ভালো সেটা যাচাই করে তবেই তারা ডোনেশন দিবেন এবং তার মাধ্যমে নিজেদের প্রোমোটও করবেন। তাই এখানকার কাজ পরিদর্শনের জন্য একজন সুপারভাইজার পাঠাবেন তারা। তিনি যদি সব ঠিক আছে বলে সম্মতি দেন তবেই আমাদের এনজিও ডোনেশনটা পাবে। সেই সুপারভাইজার ইংরেজ বলে আমাকে তার ইনচার্জে রাখলেন জাহিদ ভাই। তার ভাষ্যমতে আমার ইংরেজি স্কিল ভালো। তাই আমিই তার সাথে সবথেকে ভালো কমিউনিকেট করতে পারবো। আমি রাজী হলাম। ব্যাপারটা বোধহয় পছন্দ হলো না মুনিয়ার। এতো বড় দায়িত্ব আমি পাওয়ায় তার মুখ ভার হয়ে গেলো। পুরো অফিসে তোড়জোড় করে সেই সুপারভাইজার আসার প্রস্তুতি শুরু হলো। একটা কেবিনও প্রস্তুত করা হলো তার জন্য।
দেখতে দেখতে সুপারভাইজার আসার দিন এসে পড়লো। অন্য দিনের তুলনায় আরো আগেই অফিসে গেলাম আমি। তবুও গিয়ে শুনি সুপারভাইজার এসে পড়েছে। জাহিদ ভাই তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসেন আমার দিকে। ফিসফিস করে আমাকে বলেন তিনি কেবিনেই আছেন। আমি লেট করে ফেলেছি। এখনই তাড়াতাড়ি গিয়ে যেন দেখা করি। আমি মাথা নাড়িয়ে তাড়াতাড়ি হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে কেবিনের দিকে এগোই। কাঁচের দরজা টেনে ভেতরে ঢুকি। হাসি হাসি মুখ করে সামনে তাকাতেই দেখি সুপারভাইজারের চেয়ারে কালো টি শার্টের উপর নীল ব্লেজার পরে রাইয়ান বসা। রাইয়ান একটা ভাব নিয়ে আমার দিকে ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে থাকে। মুখের হাসি গায়েব হতে হতে আমি আক্কেলগুড়ুম হয়ে যাই। চোখের পলক ফেলা বন্ধ হয়ে যায়। জাহিদ ভাই আমার পাশে দাঁড়িয়ে রাইয়ানকে উদ্দেশ্য করে হড়বড় করে আমার পরিচয় দিতে থাকেন। সেদিকে আমার কান যায় না। আমার হতভম্ব দৃষ্টি রাইয়ানের দিকেই। একসময় জাহিদ ভাই আমার কানের কাছে জোরে জোরে ফিসফিস করে আমার ধ্যান ভাঙায়। আমাকে হ্যালো বলতে বলে। আমি বলি না দেখে জাহিদ ভাই তাড়া দিতে থাকেন। আমি জোর করে রাইয়ানকে হ্যালো বলি। রাইয়ান হেসে চোখের পলক ফেলায়। একসময় কেবিন থেকে সবাই বেরিয়ে গেলে আমি সুযোগ বুঝে রাইয়ানকে জিজ্ঞেস করি,
‘তুমি এখানে কি করছো?’
রাইয়ান সকৌতুক বলে, ‘বুঝতে পারছো না। আমার কোম্পানির পক্ষ থেকে ইন্সপেকশনের জন্য আমাকে পাঠানো হয়েছে।’
‘তুমি এগুলো ইচ্ছে করে করছো তাই না?’
রাইয়ান হেসে বলল, ‘কেন? সারপ্রাইজ হয়ে গেলে বুঝি! তুমি আমাকে একজীবনে এতোগুলো সারপ্রাইজ দিয়েছো আমারও তো একটু উসুল করা দরকার তাই না?’
রাইয়ানের জেদ দেখে এবার আমার মাথায়ও জেদ চেপে বসলো। এমন সময় জাহিদ ভাই কেবিনে ঢুকলে আমি তাকে বললাম,
‘জাহিদ ভাই, আমি তার ইনচার্জে থাকবো না।’
জাহিদ ভাই অবাক হয়ে বললেন,
‘কেন?’
আমি বললাম, ‘কারণ তিনি ইংরেজদের দেশ থেকে আসলেও মোটেও ইংরেজ নন। বাংলা ভাষাও খুব ভালো মতোই পারেন।’
রাইয়ান আমাকে ফাঁদে ফেলতে বলল,
‘আচ্ছা, আপনি কিভাবে জানলেন?’
আমি থতমত খেয়ে গেলাম। দেখলাম জাহিদ ভাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি আমতা আমতা করে দ্রুত ভেবে বললাম,
‘আমার মনে হয়েছে।’
জাহিদ ভাই আমাকে এক সাইডে নিয়ে বললেন,
‘এসব কি হৃদি? তার সামনেই তুমি এভাবে মানা করে দিচ্ছো। সে যদি মাইন্ড করে তখন কি আমরা ডোনেশন পাবো!’
আমি কিছু বলতে চাইলাম তার আগেই জাহিদ ভাই বলে উঠলেন, ‘আর কোন কথা না। আমি যেমনটা বলেছিলাম তেমনই তুমিই তার ইনচার্জে থাকবে। ঠিকাছে?’
অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি মাথা নাড়ালাম। দুজনে আবারো এসে দাঁড়ালাম রাইয়ানের সামনে। রাইয়ান হাসি হাসি মুখ করে জিজ্ঞেস করলো,
‘কোন কি সমস্যা?’
জাহিদ ভাই বিগলিত হয়ে বললেন,
‘না, না মি. রাইয়ান সব ঠিক আছে। ওঁ এমনিই মজা করছিল।’
রাইয়ান বলল, ‘ও আচ্ছা।’
জাহিদ ভাই বললেন, ‘যাও হৃদি, মি. রাইয়ানকে আমাদের অফিসটা একটু ঘুরে ঘুরে দেখাও।’
অগত্যা রাইয়ানকে নিয়ে আমাকে অফিস ঘুরিয়ে দেখাতে হলো। কেবিন থেকে বের হতেই অফিসে থাকা সকল মেয়েরা মুখ হা করে রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। ফিসফিস করে একজন আরেকজনকে বলতে লাগলো, ‘কি হ্যান্ডসাম!’ সকলের ফিসফিসানি স্পষ্ট কানে এলো আমার। আমি সকলের হা হয়ে থাকা মুখের দিকে তাকাতে লাগলাম। রাইয়ান পেছন থেকে আমাকে ডেকে বলল,
‘তুমি বসো কোথায়?’
আমি হাত দিয়ে আমার ডেস্কটা দেখালাম। রাইয়ান বলল, ‘আচ্ছা, কালকে থেকে তুমি আমার কেবিনের পাশেই বসো।’
আমি স্পষ্ট ভাষায় বললাম, ‘না।’
জাহিদ ভাই এসে সবার সাথে রাইয়ানের পরিচয় করিয়ে দিলো। রাইয়ানও নিজের সম্পর্কে পরিচিতি দিয়ে প্রশ্ন করলো, আর কারো কোন প্রশ্ন আছে কিনা। রাইয়ানের ফ্রেন্ডলি কথাবার্তায় সবাই একটু সহজ হয়ে এলো। অফিসের মধ্যে সব থেকে বেশি কথা বলা মাসুদ বলে উঠলো, ‘মি. রাইয়ান, সব মেয়েদের পক্ষ থেকে আপনাকে নিয়ে একটা প্রশ্ন আছে।’
রাইয়ান কৌতূহলী চোখে তাকালো। মাসুদ মজা করে বলল, ‘আপনার কি কোন গার্লফ্রেন্ড আছে?’
রাইয়ান স্মিত হেসে আমার দিকে একপলক তাকিয়ে বলল, ‘আমি ম্যারিড।’
সব মেয়েদের মুখে আফসোসের একটা গুঞ্জন শোনা গেলো। আমি আড়চোখে রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
___________________________________________________
(রাইয়ান)
হৃদি ভেবেছিল আমাকে চলে যেতে বললেই আমি চলে যাবো। হয়তো সে এটা ভুলে গিয়েছিল, হার মানার পাত্র আমি নই। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ স্বভাব তো ছিল আগে থেকেই। এক্ষেত্রে কাজে লেগে গেলো আমার কোম্পানির ডোনেশন ফিল্ডটা। অফিস আওয়ার শেষ করে বিকেলের দিকে নিজের ভাড়া বাসায় ফিরে এলো হৃদি। দোতলায় নিজের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে চাবি দিয়ে বাসার তালা খুললো। ঠিক সেই সময়ে পাশে চোখ যেতেই দেখলো এতক্ষণ দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আমাকে। হৃদির চমকে উঠা স্পষ্ট টের পেলাম আমি। হৃদি চোখ কপালে তুলে বলে উঠলো,
‘তুমি?’
হৃদিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে গেলাম আমি। সাথে করে নিজের ব্যাগপত্রও নিয়ে এলাম। হৃদি আমার পেছন পেছন আসতে আসতে বলতে থাকে,
‘হ্যালো? তোমাকেই বলছি আমি। আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না? তুমি এখানে এসেছো কেন?’
আমি এবার হৃদির দিকে ফিরে দাঁড়ালাম। একটুর জন্য মাথায় বারি খেতে খেতে বেঁচে যায় হৃদি। নিজেকে সামলে নেয়। আমি বললাম,
‘আমার বউ যেখানে থাকবে আমাকেও তো সেখানেই থাকতে হবে। আচ্ছা তোমার রুমটা কোথায়?’
হৃদি বলে উঠে, ‘মানে?’
চারিদিকে চোখ বুলিয়ে সামনে একটা রুম দেখে সেখানেই ঢুকতে যাই আমি। হৃদি তাড়াতাড়ি আমার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। দু হাত বাড়িয়ে আমাকে আটকে বলে,
‘এখানেই দাঁড়াও। এটা আমার বাড়ি। আমি এখানে তোমাকে থাকতে দেবো না।’
আমি বললাম, ‘তাহলে আমি কোথায় থাকবো?’
‘আমি কি জানি! তোমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে থাকো।’
‘তাহলে তো এখানেই থাকবো।’
এই বলে আমি নিজের আরো ব্যাগগুলো বাইরে থেকে ভেতরে আনলাম। আমাকে আটকাতে হৃদি ব্যাগগুলো ধরে টানাটানি শুরু করে দেয়। একসময় আচমকা হাত ছুটে ছিটকে শুয়ে পরে পেছনের সোফায়। আমি এক হাতে ভর দিয়ে ওঁর উপর উবু হয়ে বললাম,
‘তুমিও না! এখন কি রোমান্সের সময়! এটা আমরা পরে দেখবো।’
হৃদি মুখ হা করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। মুচকি হেসে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াই আমি। ব্যাগ থেকে আমাদের বিয়ের ছবির একটা ফটো ফ্রেম বের করে সোফার পাশে রাখি। হৃদি ফটো ফ্রেমটি হাতে নিয়ে আমাকে সহ বাইরে নেবার জন্য টানতে থাকে। এতো ছটফট স্বভাব যে মেয়েটা কার থেকে পেয়েছে! টানতে টানতে দরজা পর্যন্তও চলে আসে। মনে মনে আমি মৃদু হাসি। হাতটা একটু টেনে সোজা করতেই হৃদি ধপাস করে মাটিতে বসে পরে। হাতে ধরা থাকে সেই ফ্রেমটি। পেছন থেকে আরেকজন ছবির ফ্রেমটি তার হাতে নেয়। হৃদি চমকে উঠে পেছনে তাকায়। এতোটা চমকে উঠে যে দাঁড়াতেও ভুলে যায়। সামনে তাকিয়ে আমি দেখলাম মেক্সি পরনে একজন মোটা ভারী মহিলা আমাদের ছবিটার দিকে মনোযোগের সাথে তাকিয়ে আছে। মহিলাটি ছিল মূলত হৃদির বাড়িওয়ালি। বাড়িওয়ালিকে দেখে হৃদি জোর করে মুখে হাসি টেনে আনে। বাড়িওয়ালি মহিলা ছবির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ইনিই তাহলে তোমার জামাই?’
হৃদি পরে যায় গ্যাড়াকলে। বাংলাদেশে চাকরি পাবার মতোই দুঃসাধ্য ব্যাপারের মতোই যে একজন ব্যাচেলরের বাসা পাওয়া, এটা হৃদি খুব হাড়ে হাড়েই টের পায়। আর তার উপর যদি হয় কোন একা একটি মেয়ে তাহলে তো কথাই নেই। কোন জায়গাতেই যখন হৃদি কোন বাসা ভাড়া পাচ্ছিল না তখন এই বাসার জন্য হৃদি বাড়িওয়ালিকে বলে তার স্বামী বিদেশে থাকে। কিছুদিন পর দেশে আসবেন। এখন বাড়িওয়ালি হৃদি আর আমার বিয়ের ছবি দেখে যখন আমার দিকে ইশারা করছে তখন জোর করে মুখে হাসি টেনে সেটা স্বীকার করা ছাড়া হৃদির আর কিছু করার থাকে না। বাড়িওয়ালি পান চিবোতে চিবোতে হেসে বললেন,
‘যাক! ভালোই হইছে তোমার জামাই আইছে। নয়তো তোমার একলা একলা এই বাসায় থাকনডা আমারো ভালা লাগতাছিলো না। তো বাবা, এখন এখানেই তো আছো তাই না?’
কথাটা আমাকেই উদ্দেশ্য করে বলে বাড়িওয়ালি। আমি খুশির সাথে বলি, ‘জ্বি অ্যান্টি, অনেক দিন।’
হৃদি ভেতরে ভেতরে কটমট করে তাকায় আমার দিকে। এভাবেই হৃদির বাসায় নিজের থাকাটা ফিক্সড করে দু চোখের পলক ফেলে হৃদিকে একটা ইশারা করি আমি।
বাড়িওয়ালি চলে গেলে সেখান থেকে সরতে গিয়েও আবার পেছনে ফিরে হৃদির দিকে তাকাই আমি। হৃদি তখনও বসে বসে নিজের মনে দাঁত কিড়মিড় করে যাচ্ছে। আমি মুচকি হেসে তাকে কোলে তুলে নেই। হৃদি হাত পা ছুঁড়ে ছুঁড়ে আমাকে থামানোর চেষ্টা করে কিন্তু আমি থামি না। আরো ভালো করে ধরে তাকে সোফায় নিয়ে এসে বসাই। গজগজ করতে করতে হৃদি ঠিক হয়ে বসে। এতক্ষণে আমি আমার আসল ব্যাগটি সামনে আনি। যেটা হয়তো এতক্ষণ হৃদি খেয়াল করেনি। আমার হাতে ধরে রাখা ক্যাট ব্যাগের মধ্যে মিঁয়োকে দেখতে পেয়েই আপ্লুত হয়ে পড়ে হৃদি। আমি ব্যাগ থেকে মিঁয়োকে বের করে আনি। মিঁয়ো দৌড়ে গিয়ে হৃদির কোলে উঠে পরে। এতদিন পর মিঁয়োকে ফিরে পেয়ে আনন্দ আত্মহারা হয়ে পরে হৃদি। জেরিনের থেকে জানতে পারি, বাংলাদেশে হৃদির কেমন অবস্থা হবে সেটা অনিশ্চিত বলে মিঁয়োকে আসার সময় সাথে নিয়ে আসেনি হৃদি। জেরিনের কাছে রেখে আসে। পরিকল্পনা ছিল সেখানে যাওয়ার পর সবকিছু গোছানো হলে মিঁয়োকে নিজের কাছে আবার নিয়ে আসবে হৃদি। আজ যখন হুট করে মিঁয়োকে হৃদি আমার সাথে দেখতে পায়, এমন অপ্রত্যাশিত সারপ্রাইজে হৃদি সত্যিই আনন্দিত হয়ে পড়ে। মিঁয়োকে গালের কাছে নিয়ে আদর করতে থাকে। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বহুদিন পর হৃদির সেই হাসি মুখ দেখতে থাকি। হৃদির মুখে সবসময় এই হাসিটা ধরে রাখাই এখন আমার একমাত্র চাওয়া।
চলবে,
#My_First_Crush
#পর্ব-২৮
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
রাইয়ান গোসল করছিল। এমন সময় পানি চলে যায়। রাইয়ান অবাক হয়। হুট করে কলটা বন্ধ হয়ে গেলো কেন? ফেনায় ভুত হয়ে মগে থাকা কিছু পানি নিয়ে মুখ ধুয়ে নেয়। আরো দু একবার কল বন্ধ করে, চালু করেও দেখে আর পানি পড়ছে না। এমনিতেও বাথরুমটা অনেক ছোট। গোসল করতে গেলে পুরো বাথরুমটাই পানিতে ভিজে যায়। এত ছোট কোন বাথরুম হয়! রাইয়ানের অ্যাপার্টম্যান্টের বাথরুমটা তো এই বাসার রুমের চাইতেও মনে হয় বড়। রাইয়ান একবার নাক মুখ কুঁচকে আশেপাশে তাকিয়ে তারস্বরে ডাকতে লাগলো, ‘হৃদি, হৃদি!’
হৃদি ছোট্ট একটা ইলেকট্রিক কুকারে ডিম ভাজছিল। এমন সময় সচরাচর এই বাসায় গ্যাস থাকে না। রাইয়ানের ডাক কানে যেতেই সে রান্নাঘর থেকেই চেঁচিয়ে বলল, ‘কি হয়েছে?’
‘বাথরুমে তো আর পানি পড়ছে না। এমন কেন?’
হৃদি এবার বাথরুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। বাইরে থেকেই বলল,
‘মনে হয় পানি চলে গেছে।’
রাইয়ান অবাক স্বরে বলল,
‘চলে গেছে মানে? পানি আবার কিভাবে চলে যায়?’
এমন অদ্ভুত কথা যেন প্রথম শুনলো রাইয়ান। সে ভেবেছিল বোধহয় পানির কলে কোন সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এটা কেমন উত্তর। হৃদি বলল,
‘চলে গেছে মানে চলে গেছে। এখানে সবসময় পানি থাকে না। এতক্ষণ যে ছিল এটাই অনাকাঙ্ক্ষিত।’
‘তাহলে এখন আমি কি করবো?’
‘বেরিয়ে আসো।’
রাইয়ান আঁতকে উঠে বলল, ‘আমার পুরো শরীরে সাবান মাখা। এই অবস্থায় কিভাবে বেরিয়ে আসবো?’
হৃদি ঠোঁট টিপে হেসে বিড়বিড় করে বলল,
‘ভালো হয়েছে। আরো থাকবে এখানে?’
রাইয়ান আবারো আকুতি করে বলল,
‘প্লিজ হৃদি কিছু একটা করো। আমাকে একটু পানি দাও।’
হৃদির একবার মনে হলো না দেই। রাইয়ান অতিষ্ট হয়ে তারপর যেন চলে যায়। তবে সেই ভাবনাকে কার্যকর করলো না। রাইয়ানকে ডেকে বলল,
‘পাশের লম্বা নীল ড্রামটায় দেখো পানি রাখা আছে।’
হৃদির কথামতো নীল ড্রামটার উপরের কালো ঢাকনাটা সরিয়ে সেটা ভর্তি পানি দেখতেই রাইয়ান যেন প্রাণ ফিরে পেলো। নয়তো যে আজ কি হতো!
গোসল সেরে কোমরে শুধু একটা টাওয়েল জড়িয়ে বেরিয়ে এলো রাইয়ান। হাত দিয়ে মাথার ভেজা চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে হৃদির রান্নাঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো। খুন্তি হাতে আনমনে রাইয়ানের দিকে চোখ পড়তেই মুখ হা হয়ে গেলো হৃদির। রাইয়ান দু হাত দু দিকে বাড়িয়ে দিয়ে শাহরুখ খান স্টাইলে হৃদিকে আহ্বান জানালো। হৃদির হাত থেকে খুন্তি পড়ে গেলো। সে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো রাইয়ানকে। রাইয়ানও প্রশান্তি মনে আঁকড়ে ধরলো হৃদিকে। একটা টি শার্ট উড়ে এসে একদম মুখ বরাবর পড়লো রাইয়ানের। মুখ থেকে টি শার্ট টা সরাতেই বিভ্রম ভাঙলো তার। শুনতে পেলো হৃদির বিরক্ত স্বর,
‘বাথরুম থেকেই একেবারে জামা পরে বেরোতে পারো না। জামা পড়তেও যেন কষ্ট। এই ছেলেরা হয়ই একটু বেশরম।’
রাইয়ানের মুখ থেকে একটা আফসোসের মতো শব্দ বেরোলো। কি ভেবেছিল আর কি হলো!
টি শার্ট আর ট্রাউজার্স পরে ঠিকঠাক হয়ে খেতে আসলো রাইয়ান। ছোট্ট একটা প্লাস্টিকের গোলাকার টেবিল। চেয়ারগুলোও প্লাস্টিকের। একপাশে হৃদি বসা। অপরদিকে রাইয়ান। খাবারের মেন্যু খুবই সিম্পল। ডাল ভুনা, ডিম ভাজা, ছোট মাছের চচ্চড়ি। ডিমটা শুধু মাত্র ভেজেছে আর বাকিগুলো সকালেই রান্না করা। গরম করে এনেছে হৃদি। রাইয়ান নিজের প্লেটে ভাত নিতে নিতে বলল,
‘এখানে এর থেকে কি আর কোন ভালো বড় বাসা নেই?’
হৃদি সুর দিয়ে বলল, ‘আছে। কিন্তু সেই ভালো বড় বাসার ভাড়া গুলোও অনেক…. বড় ! আমার স্যালারিতে এই এলাকায় এমন বাসাটাই আমি এফোর্ড করতে পারি। এই ভাড়ায় আরো ভালো বাসা চাইলে আরো ভিতরে ঢুকতে হবে। কিন্তু আমার তো এনজিওর কাছাকাছি লোকেশনেরটাই নিতে হবে তাই না!’
‘তুমি স্যালারি কত পাও?’
হৃদি নিরস গলায় ভাত খেতে খেতে উত্তর দিল,
‘বিশ হাজার।’
রাইয়ান বলে উঠলো, ‘তাহলে তো অনেক।’
হৃদি খাওয়া বন্ধ করে রাইয়ানের দিকে তাকালো। প্রথম ধাক্কাতেই ডলার আর টাকার হিসেবটা ধরতে পারলো না রাইয়ান। তারপর কিছু খেয়াল হওয়ায় সে ফোন বের করে গুগলে কিছু একটা হিসেব করে চমকে উঠে হৃদির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘এতো কম স্যালারি! দুইশো ডলারও হয় না পুরোপুরি। তোমাদের তো ল্যাবার ল’এর ভিত্তিতে অনশন করা উচিত। এত ঘন্টা খাটিয়ে মাত্র একতটুকু স্যালারি দেয়!’
হৃদির খানিক হাসি পেলো। হাসি চেপে হৃদি সিরিয়াস ভঙ্গি করেই বলল,
‘এখানে ঘন্টার হিসেব করে পেমেন্ট হয় না। আমেরিকার মতো সবদেশ তো আর এতো ধনী না। তুমি বুঝবে না। শুধু শুধু বাদ দাও।’
রাইয়ান তবুও মনে মনে কিছু একটা হিসেব করতে লাগলো। ভাবতে লাগলো, তবুও এতো কম স্যালারি! সেই হিসেবে তো এই এরিয়ার মধ্যে সব থেকে ধনী ব্যক্তি দেখি আমিই হবো। এসব ভাবতে ভাবতেই রাইয়ানের নজর পড়লো একটা ছোট বাটির উপর। সেখানে লাল রঙের অদ্ভুত কিছু একটা পেস্ট এর মতো দেখতে পেলো সে। হৃদিকে জিজ্ঞেস করলো,
‘এটা কি?’
বাটিটাতে ছিল শুটকি ভর্তা। এই বাটি করে বাড়িওয়ালিকে একদিন পাস্তা রান্না করে দেওয়ায় ফেরত হিসেবে সে আজ শুটকি ভর্তা দিয়ে গেছে। রাইয়ান এতক্ষণে সেটা হাতে নিয়ে নিয়েছে। ভালো করে দেখে বলল,
‘বাহ! কালারটা সুন্দর তো!’
হৃদির দেখাদেখি সেও ভাতের সাথে মেখে নিলো ভর্তাটা। হৃদি কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাইয়ান মুখে পুরে নিলো। ভাত চিবোতে চিবোতেই হঠাৎ থেমে গেলো রাইয়ানের মুখ। হৃদি চোখ সংকুচিত করে তাকিয়ে রইলো রাইয়ানের দিকে। রাইয়ান একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো। এতো ঝাল! রাইয়ানের মনে হলো মুখের মধ্যে আগুন পুরে নিয়েছে। ঠিক এই কথাটাই বলতে চাইছিল হৃদি। আমেরিকার তুলনায় এখানে ঝাল একটু বেশি খাওয়া হয়। অনেক বছর বাংলাদেশে কাটিয়ে যাবার পরেও প্রথম প্রথম ফিরে এসে হৃদিরও এই ঝালে মানিয়ে নিতে একটু সময় লেগেছিল। সেদিকে রাইয়ান তো একদম নতুন ট্রাই করছে এখানকার খাবার। তার উপর শুঁটকি ভর্তায় তো একটু বেশিই ঝাল দেওয়া হয়। রাইয়ান মুখ ফোঁপাতে লাগলো। মাথার মধ্যে মনে হচ্ছে ঝিম ধরে আছে। গ্লাসের পর গ্লাস পানি খেয়েই ভরে ফেললো পেট। ঠোঁট, নাক, চোখ একদম লাল টকটকে হয়ে গেলো। খানিকবাদে একটু সুস্থির হলো রাইয়ান। সোফার উপর বসে বসে ফোনে গেমস খেলে সময় পার করার চেষ্টা করলো। এত্ত যে মশা! পারলে রাইয়ানকে কোলে করে নিয়ে যায়। হৃদি তখন রান্নাঘরে বাসন কোসন ধুয়ে রাখছিল। রাইয়ানের মাথার কাছে সোফার গায়ে বসেছিল মিঁয়ো। রাইয়ান সেদিকে আনমনে তাকিয়ে বিড়বিড় করে মিঁয়োকে বলতে লাগলো, ‘তোমাকে কি মশা কামড়ায় না? কি জানি! আমার রক্তেই কোন ইয়াম্মি ইনগ্রেডিয়েন্টসের সন্ধান পেয়েছে।’
সেই সময় পাশে চোখ পড়তেই রাইয়ান দেখলো হৃদি রুমে যাচ্ছে। রাইয়ানও খুশি হয়ে রুমে যেতে নিলো। দরজা মুখেই আটকে ফেললো হৃদি। প্রশ্ন করলো,
‘কি?’
রাইয়ান হেসে বলল, ‘ভেতরে যাবো।’
‘কেন?’
‘ঘুমাবো না!’
হৃদি বিছানা থেকে একটা বালিশ নিয়ে রাইয়ানের দিকে ছুঁড়ে মারলো। বালিশ ক্যাচ করে হতবাক চোখে তাকিয়ে রইলো রাইয়ান। হৃদি মুখে নকল হাসি টেনে বলল, ‘সরি! আমার কারো সাথে বেড শেয়ার করার অভ্যাস নেই।’
রাইয়ানের আর বুঝতে বাকি রইলো না হৃদি যে তাকে ঐ সোফায় ঘুমাতে বলছে। রাইয়ানের কথা কত সুন্দর রাইয়ানকেই ফিরিয়ে দিলো হৃদি। মিঁয়োকে কোলে নিয়ে মুখের উপর রুমের দরজা হৃদি বন্ধ করে দিলো। রাইয়ান সোফার কাছে গিয়ে মুখটা ভোঁতা করে বলল,
‘কিন্তু এখানে তো অনেক মশা হৃদি।’
রুম থেকে হৃদিও উত্তর দিলো, ‘কয়েল জালিয়ে নাও।’
রাইয়ান নিজের উপর নিজেই একটা বিরক্তসূচক শব্দ করলো। বিড়বিড় করে বলল,
‘এর থেকে তো দেখি বিড়াল হলেই ভালো হতো। সোফায় না ঘুমিয়ে কত সুন্দর কোলের মধ্যে ঘুমাতে পারতাম। এক্সট্রা আদরও জুটতো কপালে। আর এখন!’
তারপর আবার ভাবতে লাগলো আগের কথা। না জানি কিসের ভূত চেপেছিল মাথায়। বিয়ের রাতে হৃদিকে ঐ কথাটা না বললে আজ তাকেও আবার সেম কথা শুনতে হতো না। এখন নিজে যখন আগে এমন করেছে তখন তাকেও তো একটু ভোগ করতে হবে।
সোফায় বসে বসে চোখ ঘুরিয়ে রাইয়ান আবারো দেখতে লাগলো হৃদির বাসা। অনেক ছোট বাসা। একটা বাথরুম। একটা কিচেন। আর একটাই বেডরুম। আর মাঝখানে হলরুমের মতো একটু ফাঁকা জায়গা। কিন্তু সেটাও খুব বেশি বড় নয়। সেই তিন সিটের সোফাতেই বসে আছে রাইয়ান। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সেকেন্ড হ্যান্ডের। দেয়ালের রংগুলো জায়গায় জায়গায় উঠে গেছে। ভালো বার্নিশ করাও নেই। এমন জায়গায় জীবনে কখনো থাকেনি রাইয়ান। আর এতো গরম! মনে হচ্ছে আর একটু থাকলেই গায়ে ফোসকা পড়ে যাবে। তার উপরে কোন এসিও নেই। এখানে তো আরও বেশি দরকার এসি। মাথার উপর বিশ্রী ঘটঘট শব্দ করে যেই ফ্যান ঘুরছে তার থেকে আদৌ কোন বাতাস বেরোচ্ছে কিনা রাইয়ানের সন্দেহ। রাইয়ানের মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো। এর তুলনায় নিজের অ্যাপার্টমেন্টটা স্বর্গ বলে মনে হতো লাগলো তার।
রাইয়ান টি শার্টটা নাড়িয়ে এই হাস ফাঁস ভাবটা একটু কমাতে চাইলো। বালিশ ঠিকভাবে রেখে শুতে গিয়েই মনে হলো কয়েল জ্বালানো হয়নি। আবারো উঠে সামনের সেন্টার টেবিলের নিচের তাক থেকে কয়েল নিয়ে কিচেনে গেলো। দিয়াশলাইয়ের কাঠি ধরিয়ে কয়েল জ্বালানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু বারবারই কাঠি নিভে যাওয়ায় কয়েল জ্বালাতেই পারছিল না। একে একে অনেকগুলো কাঠি নষ্ট করে ফেললো। একসময় কয়েল জ্বালাতে সক্ষম হলো রাইয়ান। কিন্তু এই চক্করে হাতে একটু ছেঁকাও লাগিয়ে ফেললো। কয়েল জায়গামতো রেখে আবারো সোফায় শুয়ে পড়লো সে। তারপর আবার খেয়াল হলো লাইট বন্ধ করেনি। আবার উঠে গিয়ে লাইট বন্ধ করলো। পুনরায় সোফায় এসে শুয়ে চোখটা একটু বন্ধ করতেই চলে গেলো কারেন্ট। এই গরমে শেষ সম্বল ঘটঘটানি ফ্যানটাও বন্ধ হয়ে গেলো। গরম কাকে বলে এবার হাড়ে হাড়ে টের পেলো রাইয়ান। রাইয়ানের এবার বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কেঁদেই ফেলতে ইচ্ছে করলো। মুখে একটা ন্যাকানো সুর তুলে মাথার নিচ থেকে বালিশটা নিয়ে অতিষ্ট ভঙ্গিতে নিজের মুখ ঢাকলো রাইয়ান।
___________________________________________________
(হৃদি)
রুমের দরজাটা মৃদু ফাঁক করে রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলাম আমি। আমি খুব ভালোভাবেই জানি রাইয়ান কেমন মানুষ। সবকিছু একদম পারফেক্ট ভাবে না পেলে রাইয়ান স্বস্তি পায় না৷ নিজের অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেও বিন্দুমাত্র একটু ধুলোও রাইয়ান সহ্য করতে পারতো না। জামা কাপড় হতে হবে ব্রান্ডেড। একদম পরিষ্কার। দু দিন পর পর বিছানার বেডশিট পাল্টানো চাই তার। যেখানের জিনিস সেখানে না থাকলে তার নাক কুঁচকে যেতো। রাইয়ানকে ভালো লাগানোর জন্যই আমি দিনভর এসব নিয়ে পরে থাকতাম। ঠিক রাখতাম সবকিছু। সেই রাইয়ান যে এমন জায়গায় থাকতে পারবে না তা খুব ভালোভাবেই জানি আমি। এতদিন বাংলাদেশের ফাইভ স্টার হোটেলে কাটিয়ে রাইয়ান আর এগুলো ধারণা করতে পেরেছে কই! সবাই তো আর সব পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে না। আমি যতদূর জানি, এদিক থেকে রাইয়ানের মধ্যে মানিয়ে নেওয়া স্বভাব নেই বললেই চলে। সেখানে জন্মের পর থেকেই এতো ভালো পরিবেশে থেকে এখানে নিজেকে মানানো রাইয়ানের মতো মানুষের পক্ষে অসম্ভব। আমি একদম নিশ্চিত, কাল সকাল হতেই রাইয়ান এখান থেকে কেটে পড়বে।
চলবে,