#বিষাক্ত_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৯
#লেখিকা: #শারমিন_আক্তার_বর্ষা
মাঝ রাস্তায় হঠাৎ আরিশ ছুটে এসে রুহানির চুমু খেয়ে বসল, সেটাও আবার ঠোঁটে। আকস্মিক ঘটনায় হতবুদ্ধি হয়ে যায় রুহানি। চোখ জোড়া বড়সড় করে ফেললো। ঘনঘন নিঃশ্বাস নিতে লাগে। স্তব্ধতা ঘিরে ধরেছে ও’কে। কি করবে কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। নেত্রযুগল স্থির করে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মিনিট দুই একের পর নিজ হুঁশশ ফিরে পায় রুহানি। নিজের শক্তি প্রয়োগ করে আরিশের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। আরিশ ও’র বাম হাতের দুই আঙুল রুহানির ওষ্ঠদ্বয়ের ওপরের ছুঁইয়ে দিলো, রুহানি নড়ে সরে যেতে নেয়। আরিশ তার ডান হাত রুহানির কোমড় চেপে ধরে একটানে নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসে। এতটা কাছাকাছি যে তাদের মধ্যে বিন্দু মাত্র ফাঁক নেই। রুহানি ছুটবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। রুহানি কে উত্তেজিত হতে দেখে মৃদু হাসি দিয়ে আরিশ নেশালো কণ্ঠে বলে,
” তখন একবার ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু এবার যদি ধরি মিস তাহলে কিন্তু ধম বন্ধ হয়ে গেলেও ছাড়বো না।”
আরিশের কথা কানে তুললো না রুহানি। ‘ও’ আরিশের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর দিগুণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ আরিশ রুহানিকে শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত ও রাগী গলায় বলে,
” তুমি এক কথার মেয়ে না।” তীক্ষ্ণস্বরে কথাটি বলে আবারও রুহানির কোমল ওষ্ঠদ্বয়ের সাথে নিজের ওষ্ঠদ্বয় জোড়া এক করে নেয়। আগের থেকেও বেশি ছুটাছুটি করছে রুহানি কিন্তু আরিশ ও’কে ছাড়ছে না। রুহানি য়খন ছাড়া পাবার জন্য বেশি নড়ছে আরিশ তখনই রুহানির ওষ্ঠদ্বয়ে আলতো করে কামড় দিচ্ছে। ব্যাথায় যে কুঁকড়াবে তার ও ব্যাবস্থা নেই। আরিশের ও’কে এভাবে চেপে ধরায় ধম বন্ধ হয়ে আসছে ও’র। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছে না ও ফেলতে পারছে না বলে, রুহানির ধম বন্ধ হয়ে যাবে। হঠাৎ লাফিয়ে ওঠে বসল রুহানি। বাম হাত বুকের ওপরে রেখে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলতে লাগল। ঘামে কপাল চিপচিপে হয়ে আছে। উত্তেজিত হওয়ায় বুকের মধ্যে হার্ট টা লাফালাফি করছে। মনে হচ্ছে, কিঞ্চিত জায়গা পেলে খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসবে। রুহানি চারপাশে অন্ধকার দেখছে, কিছুটা সময় নিয়ে নিজেকে শান্ত করল। পরক্ষণে চারপাশে চোখ বুলাতে নিজেকে শ্যামাদের ফ্লাটে উপস্থাপন করল। ত্যক্ত শ্বাস ফেলে রুহানি ত্রস্তকণ্ঠে বলে,
” এটা একটা দুঃস্বপ্ন। ভাবতেও আমার গায়ের পশম শিউরে ওঠছে স্বপ্ন ও এতটা ভয়ঃকর হয়।” বুকের ওপর তিনবার থু থু দিয়ে শুধু পরে।
আজ সারাটা দিন রুহানি আরিশের সাথে ছিল। সন্ধ্যার দিকে গাড়ি করে শ্যামার বাসার গেইটের সামনে ও’কে নামিয়ে দিয়ে যায় আরিশ। একটা মানুষ কে পরিপূরকভাবে না চিনে তাকে বাজে বলাটা নিতান্তই অনুচিত। আজ সারাটা দিন রুহানি আরিশের কাছাকাছি ছিল, আরিশকে দেখেছে কতটা প্রকৃতি প্রিয় সে। মানুষের প্রতি কত স্নেহ মমতা ভালোবাসা। রুহানি সাথে নিয়ে পার্কে প্রবেশ করে। সেখানে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরির পর, দু’জনে বের হয়। দুপুর টাইম খিদে পেয়েছে। কাছেপিঠে কোনো ভালো রেস্টুরেন্টে খেতে যাবে বলে, দুজনে একটা রিক্সা তে ওঠলো। রেস্টুরেন্টের সামনে নামিয়ে দেয়। আরিশ রিকসাওয়ালা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
” আপনি কিন্তু কোথাও যাবেন না। আমরা সারাদিন আপনার রিক্সা করে ঘুরবো।” রিক্সা ওয়ালা ডানে মাথা কিছুটা নিচু করে সম্মতি জানালো। রুহানিকে সাথে নিয়ে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে। দু’জনের খাবার অর্ডার দিয়েছে ও এক জনের খাবার পার্সেল। রুহানি অবাক দৃষ্টিতে আরিশের মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে, “কি অমায়িক লোকটা৷” মনে মনে বলল।
আরিশ খাবারের পার্সেল হাতে রোডের ওপারে গেলো রিক্সা গুলার হাত খাবারগুলো গুঁজে দিয়ে বলল,” এগুলো আপনার।”
এতগুলো খাবারের প্যাকেট দেখে খুশি হল রিক্সাওয়ালা। খুশিতে চোখে জল চলে আসল লোকটার। রেস্টুরেন্টের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে মুদৃ হাসল রুহানি৷ এ যুগে কতজনই বা অন্যর মুখে হাসি ফোটায়? ক’জন’ই বা নিজের খাওয়া ফেলে অন্যর মুখে খাবার তুলে দেয়? রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে দু-জনে আবারও রিক্সায় চড়ে। রিক্সা দিয়ে ঢাকা শহর ঘুরতে অনেক মজা। রুহানি কে নিয়ে নদীর পাড়ে যায়, দুজনে একটা বোট নিয়ে জলে নামে। সারাদিন ঘুরবার পর, রুহানিকে। রিক্সা করে শ্যামার বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয়। গেইটের ভেতরে দিয়ে যেতে গিয়ে একবার রুহানি পিছনে ঘুরে তাকাল। কেনো তাকাল তার কারণ ওর নিজেরও জানা নেই। মন বলছিল একটিবার তাকাও। তাকিয়ে দেখল, আরিশ রিক্সা থেকে নেমে পরছে আর দাঁড়িয়ে ওর যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে। আরিশের মুখে প্রস্ফুটিত হাসি দেখে রুহানি মুচকি হাসল।
আরিশ চলে যাবার পর থেকে রুহানি আরিশের চিন্তায় মগ্ন। খেতে বসতে সব সময় ও” আরিশকে দেখতে পাচ্ছে। চোখের পাতায় ঘুম নেই, যে মেয়ে কখনো নিজের বন্ধু দের বাদে অন্য ছেলেদের সহ্য করতে পারতো না। সে ছেলে আজ সন্ধ্যা থেকে একটা ছেলের স্মৃতি চারণ করছে। রাত বেশি হয়েছে কি না হয়নি সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই রুহানির, একটা কফি মগ হাতে নিয়ে ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। হুট করে আরিশকে কেনো এত মনে পড়ছে। তার কথা চিন্তা করে ভালো লাগা কাজ করছে। এই ভালো লাগার উৎস কোই? কফির মগ থেকে গরম গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিঃশ্বাস ফেললো রুহানি। করুণ কণ্ঠে বলে,
” আগামীকাল আবারও যেতে হবে। বাবাকে খুঁজতে হবে।”
ফেসবুক স্ক্রোল করতে করতে একদিন পড়েছিলাম, একজন মানুষ অন্য জন মানুষ কে তখনই স্বপ্ন দেখে যখন বিপরীতে মানুষ টি তাকে খুব মিস করে। গালে হাত রেখে পিটপিট করে রুহানি তাকাল। হটাৎ মন উদাস হয়ে গেলো মনে জুড়ে গেলো বিষন্নতা।
অন্ধকার একটা ঘরের মধ্যে একসাথে দাঁড়িয়ে আছে নিহান ও আদ্রিক। ভ্রুযুগল কুঁচকানো করে আদ্রিক নাহিনকে দেখছে। নাহিনের মস্তিষ্কে কি চলছে, সে দেখে আন্দাজ করার চেষ্টা করছে। ভারী নিঃশ্বাস ফেলে আদ্রিক প্রশ্ন ছুঁড়ে, “হঠাৎ জরুরি তলব। তাও আবার এমন অদ্ভুত জায়গায়?”
আদ্রিকের কথাশুনে অট্ট হাসিতে ফেটে পরে নিহান। চোখ জোড়া ছোটছোট করে নিহানের দিকে তাকাল আদ্রিক। তার হঠাৎ এই হাসির শব্দর কারণ আদ্রিকের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আদ্রিককে সন্দেহের নজরে তাকাতে দেখে সশব্দে হেসে উঠল নিহান।
“এ.স একটা কথা বলার ছিল?”
সকাল সকাল কোম্পানিতে চলে আসে। তাজ কল দিয়ে জানায় ওদের যে মিটিং টা বিকেলে হওয়ার কথা ছিল ওইটা ইমারজেন্সির সকালেই হবে। তারাহুরো করে ফ্রেশ হয়ে অফিস চলে আসে। মিটিং রুমে সকলে মিলে তাদের মিটিং সম্পূর্ণ করে। মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে লিফটের কাছাকাছি আসে এ.স পিছন থেকে শানিতকণ্ঠে উক্ত প্রশ্ন টি করে তাজ। তাজের কথাটি শুনে চলতে গিয়েও থেমে যায় আরিশ। ঘাড় কাত করে শক্ত গলায় বলল, ” কি বলবি বল।” তাজ ভারী নিঃশ্বাস ত্যাগ করে গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলল, ” আর্শি আসছে আর ও তোর সাথে দেখা করতে চাচ্ছে।”
তাজের কথাটি কর্ণকুহরে হানা দিতে রাগান্বিত চোখে তাজের দিকে তাকাল এ.স। রাগে চোয়াল শক্ত করে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল,
” এ.স না চাইলে তাকে দেখার সাহস কারো নেই। যেভাবে আসছে সেভাবে চলে যেতে বলো। সময় হলে আমি নিজে দেখা করতে যাবো।” এ.স এর কথায় নির্বাক তাকিয়ে রইল তাজ ভারী নিঃশ্বাস ফেলে চলে যায়। রুমে ঢুকে গলার টাই টা লুজ করে রাগে চেয়ারে লাণ্থি মারল। রাগে আরিশের কপালের রক ফুলে উঠেছে। মাত্রাতিরিক্ত রাগে ফুসতে ফুসতে চোখ জোড়া বন্ধ করে সোফার ওপরে বসে পরল। চোখ জোড়া খিঁচে মেলে তাকাল, সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,” আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপর শুরু হবে আমার আসল খেলা।”
চলবে… ইন শা আল্লাহ!
#বিষাক্ত_ভালোবাসা
#পর্বঃ২০
#লেখিকা: #শারমিন_আক্তার_বর্ষা
তোকে আমরা একা কোথাও যেতে দেবো না। তোর কিছু হলে আমরা আন্টিকে কি জবাব দেবো? তোর যদি যেতেই হয় সাইফ ও আয়রা কে সাথে নিয়ে চল।
ব্রেকফাস্ট টেবিলে বাহিরে যাওয়ার কথা তুলল রুহানি। একা যাবে শুনে শক্ত গলায় কথাটি বলল শ্যামা ও আদনান। আগামীকাল চলে যেতে হবে। অন্য দিকে যাওয়ার নিয়ত নেই কারো। লাবণ্য সারাক্ষণ রুমের এককোণে বসে ফোন টিপে ও মিটমিট করে হাসে। অন্য দিকে বারান্দায় গিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ফিসফিস করে কথা বলে আয়রা। রাইসার কথা বাদ দিলাম। ওর কানাডায় বয়ফ্রেন্ড থাকা সত্বেও এ.স এর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে। নাজিনের ফোনে মাঝেমধ্যে একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসছে, কল রিসিভ করলে ওপার থেকে কেউ কথা বলে না। এবং সময়ে অসময়ে মেসেজ করে। মেসেজের ধরণ দেখে বোঝা যায় কোনো প্রেমিক যে প্রেমে পড়েছে নাজিনের। মেসেজগুলো রুহানি, শ্যামা কিংবা অন্য কাউকে কিছু বলেনি। গতকাল রাতে ফোনে লাস্ট একটা মেসেজ আসে, মেসেজটা ছিল এমন,
মেয়েদের প্রতি কখনো কোনো ফিলিংস কাজ করেনি৷ রাস্তা ঘাটে ছেলেদের তাদের গার্লফ্রেন্ড দের দেখলে আমার মেজাজ হরম হতো মনে হতো ওরা টাইম নষ্ট করছে। এসব ফাউল পাগলামি যার কোনো গুরুত্ব নেই। কিন্তু তোমাকে দেখার পর থেকে আমি বুঝতে পারছি, ভালোবাসার ওপর নাম হচ্ছে পাগলামি। যে প্রেমিক প্রেমিকা প্রেমে পাগলামি করে না তাদের প্রেম, প্রেম নয়। আমি বুঝতে পারছি নাজিন আমি তোমার প্রেমে পরেছি। আমি পাগল হয়ে গেছি, আমি তোমার প্রেমে পাগলামি করছি। আমার ইচ্ছে করে সর্বক্ষণ তোমাকে আমার সামনে বসিয়ে রাখি, তুমি হাসিমুখে কথা বলবে আমি দু-চোখ ভরে দেখবো। তুমি চলে যাবে ভাববে আমার শ্বাসরুদ্ধকর কষ্ট হচ্ছে। তুমি চলে যাওয়ার আগে আমি তোমাকে সামনে থেকে একটিবার দেখিবো৷ বিশ্বাস করো, আমার দ্বারা তোমার কোনো ক্ষতি হবে না। যদি ইচ্ছে হয়, গতকাল বিকেল চারটায় (জায়গার নাম) এই জায়গায় চলে আসবা। এক মুঠ হলুদে গোলাপ নিয়ে রাস্তার মোড়ে আমি তোমার জন্য অপেক্ষায় থাকবো।
মেসেজটা দেখার পর থেকে হতবুদ্ধি হয়ে যায় নাজিন৷ কি করবে এত ভেবেও বুঝতে পারছে না। দ্বিধা দন্ডায় ভুগছে, যাবে কি যাবে না। শ্যামার হাসবেন্ড বিডিআর সকালে শশুর বাড়িতে নাস্তা করে সকলের থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়। আজকে তার ছুটি শেষ, যাওয়ার পথে উনার বাবা ও মা’র সাথে দেখা করে বিদায় নিয়ে যাবে।
সাইফ ও আয়রা কে নিয়ে রুহানি কিছুক্ষণ আগে বেরিয়ে গেছে। লিভিং রুমে বসে গম্ভীর হয়ে মেসেজ টা দেখছে হটাৎ শ্যামা এসে ওর পাশে বসল। অন্য মন্যস্ক হয়ে ফোনে এত কি দেখছে, দেখার জন্য উঁকি দেয় শ্যামা। উঁকি ঝুঁকি দিয়ে কিছুটা মেসেজ পড়ে নাজিন লক্ষ্য করল শ্যামা ওর ফোনের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ জোড়া ছোটছোট করে নাজিনকে চেপে ধরলো শ্যামা। বাধ্য হয়ে সত্য টা বলতে হলো ও’কে। সব শুনে শ্যামা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুঁড়ল, কবে থেকে হচ্ছে এসব?
ভারী নিঃশ্বাস ফেলে নাজিন বলে, যেদিন রুহানি কিড’নেপ হল তার পরদিন থেকে শুরু হয়েছে।
অ্যাটিটিউট নিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসে শ্যামা। চোখজোড়া পিটপিট জেরে গম্ভীর গলায় বলে, লোকটা কে জানতেই হবে? কে সে যে তোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে? মিশন বিকেল চারটা, তুই একা না তোর সাথে আমিও যাবো।
নাজিন ও শ্যামা বের হওয়ার কিছুক্ষণ পর পর রাইসা ও লাবণ্য দু’জনে একা একা বেরিয়ে যায়। আরিফ ও নিশানের শরীরটা ভালো লাগছে না বলে, দুপুর বেলা খেয়ে ঘুম দিয়েছে। অন্য দিকে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে শ্যামার ননদ জুহির সাথে চ্যাটিং করছে আদনান। এক সময় শ্যামার ননদ নূরী বলল, ও’ আদনানের সাথে দেখা করতে চায়। এমনিতেও ওর সব বন্ধুরা কোনো না কোনো কাজে বাহিরে চলে গেছে। দু’জন ঘুমাচ্ছে ও’ একাই বসে আছে। আগামীকাল চলে যাবে৷ যাওয়ার আগে বেয়াইনের সাথে দেখা করলে মন্দ হয় না। আদনান তারাহুরো করে রেডি হতে চলে গেলো বাথরুমে। এক তলায় ওরা চারজন ছেলে এক রুমে থাকে আর মেয়ে চারজন অন্য রুমে৷ রুহানি একা একটা রুমে থাকে। ঘুমের মধ্যে হঠাৎ তাকাল আরিফ। আদনান কে তারাহুরো করে বেরিয়ে যেতে ওঠে বসল। নিশান কে টেনে তুলল আরিফ। বিরক্ত হয়ে রাগান্বিত করল নিশান। এতে অবশ্য কোনো কাজ হল না। আরিফ নিশানের ঘুম ভাঙিয়ে বলল, আদনান সেজেগুজে কোথাও বেরিয়ে গেছে। আদনান গেছে শুনে লাফিয়ে উঠল নিশান। কিয়দংশ একে অপরের চেহারা দেখল। পরক্ষণে লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো। রাস্তার মোড়ে আদনান কে দেখা গেলো একটা রিক্সায় উঠছে। নিহান ও আরিফ ফলো করে পিছনে অন্য একটা রিক্সায় উঠলো। কিছুক্ষণ পর, বাজারে একটা ফুলের দোকানো রিক্সা থামালো, রিক্সা থেকে নেমে এক পিস লাল টকটকে গোলাপ ফুল কিনে রিক্সায় ওঠে বসলো। আদনান কে ফুল কিনতে দেখে আকাশ সমান অবাক হল নিশান ও আশিক। বলদের মতো একে অপরের দিকে কিছু মূহুর্ত তাকাল।
বড় একটা বট গাছের নিচে একটা বেঞ্চের ওপরে একজন ছেলে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে। ছেলেটার ডান হাতের দিকে বেঞ্চে একটা হলদে গোলাপ রাখা। গোলাপ ফুলটা দেখে নাজিন ও শ্যামা শিওর হয়েছে এই ছেলেটাই নাজিনকে কল ও মেসেজ করে। ছেলেটা যেমন লম্বা তেমন দেখতে সুন্দর। এখনকার যুগে ফ্যাশন ছেলেদের চুল বড় করে রাখা। অথচ ছেলেটার চুল একদম ছোট ছোট। এই ছোট চুল জেনো ছেলেটার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে। ছেলেটাকে দেখে নাজিনের ভালো লাগে, বলা যায় পছন্দ হয়। অন্য দিকে শ্যামা নাজিনকে ধাক্কা দিয়ে বলে, ছেলেটা যদি ভালো হয় তাহলে হাত ছাড়া করিস না দোস্ত। হেব্বি দেখতে।
নাজিন ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে কনুই দিয়ে খোঁচা দিয়ে বলল, তোর না জামাই আছে তাও অন্য ছেলের দিকে নজর দেস। শ্যামা আহত কণ্ঠে বলল, নজর কই দিলাম শুধু বললাম সুন্দর। নাজিন কম্পিত কণ্ঠে বলল, আচ্ছা বাদ দে এখন কি করবো বলো?
শ্যামা রাগী গলায় বলল, কি করবো মানে? এতদূর পর্যন্ত আসছি কী দূরে চলে যাওয়ার জন্য? যা গিয়ে দেখা কর। উল্টা পাল্টা কিছু করলে শুধু আমাকে আওয়াজ দিবি। নাজিন এগিয়ে গেলো, বেঞ্চের ওপর থেকে হলদে গোলাপ নাজিনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে লোকটা জিজ্ঞেস করল, আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো? নাজিন ডানে-বামে মাথা নাড়াল। কোনো সমস্যা হয়নি। লোকটার পাশে বসে নাজিন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে লোকটা আগে বলল, আমি আমান চৌধুরী। তুমি হয়তো ইতস্তত বোধ করছো। সমস্যা নেই নিজেকে রিলাক্স করো। নাজিন সময় নিয়ে বলে, ওর সাথে ওর বন্ধু আসছে। আমান তাত্ক্ষণিক বলে উঠল, কোথায় উনাকে নিয়ে আসো? উনাকে আবার কোথায় রেখে আসছো? নাজিন শ্যামার নাম্বারে কল দিয়ে ওদের কাছে আসতে বলে দেয়। লাবণ্য রাইসাকে সাথে নিয়ে পাশে একটা পার্কে গেছে ওখানে একটা ছেলের সাথে দেখা করবে। ছেলেটা আর কেউ নয় শ্যামার হাসবেন্ডের বন্ধু আহিল। শ্যামার হলুদে আহিলের সাথে লাবণ্যর পরিচয় হয়। এবং সেদিনই সকলের অগোচরে দু’জনার মন দেওয়া নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে লাবণ্য এখন রাইসাকে বলেছে আর কাউকে এখনও জানায়নি। আদনান রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে জুহির জন্য অপেক্ষা করছে। জুহি কিছুক্ষণ আগে মেসেজ দিয়ে বলেছে, অন দ্য ওয়ে। রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে আদনান কে দেখছে নিশান ও আরিফ। ঢাকা শহরের অলিগলি ঘুরতে ঘুরতে নাজেহাল অবস্থা রুহানির। সকালে নাস্তা খেয়ে বের হ’য়েছে আর এ পর্যন্ত তিন জনের পেটে কিছুই পরেনি। রুহানির বাবার নামে এই পর্যন্ত পনেরো ষোলো জন মানুষের সন্ধ্যান পেয়েছে বিপাকে পরতে হল রুহানিকে। বাবার নাম জানলেও তাকে কখনো চোখে দেখেনি। হতাশ হয়ে তিনজনে একটা ট্যাক্সিতে উঠল। মন খারাপ করে বসে আছে রুহানি। আয়রা ও সাইফের প্রচুর খিদে লাগছে। রুহানিকে বলার সাহস পাচ্ছে না। ওরা সবাই জানে রুহানির বাংলাদেশে আসার মূল কারণ ওর বাবাকে খোঁজা। সেখানে রোজ রুহানি হেরে যাচ্ছে। একটা নামের এতগুলো মানুষের মধ্যে নিজের বাবাকে কিভাবে চিনবে ও’? চক্ষু জোড়া ছলছল করে উঠল। আয়রা আমতা আমতা করে বলল, আমার খিদে পেয়েছে। রুহানি ওদের দু’জনকে এক পলক দেখে ড্রাইভার কে উদ্দেশ্য করে বলে, মামা গাড়ি একটা ভালো রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড় করাবেন আমরা নামবো।
ড্রাইভার ছোট্ট করে, আচ্ছা। বলে গাড়ি চালাতে মন দেয়।
অন্য দিকে গাছের নিচে বসে আহিল, নাজিন ও শ্যামা তিনজন বেশ কিছুক্ষণ গল্প করল। আমান দু’জনকে উদ্দেশ্য করে বলল, চলো এখন আমরা কিছু খেতে যাই। সামনেই একটা ভালো রেস্টুরেন্ট আছে। ওদের পেটেও খিদে লাগছে দু’জনে চুপিচুপি খেতে চলে গেলো। পার্কে ঘুরাঘুরি করে আহিল, লাবণ্য ও রাইসাকে বলল, বিকেল পাঁচ টা বাজতে চলছে। চলো সবাই মিলে একটু রেস্টুরেন্টে গিয়ে হাল্কা পাতলা কিছু নাস্তা করি।
আহিলের প্রস্তাবে রাজি হয় রাইসা ও লাবণ্য। প্রথমত লাবণ্য রাজি হয়নি কিন্তু খাবারের কথা শুনলে রাইসার খিদে পায়। ওর জোরাজোরি তে লাবণ্য রাজি হয়। সবাই দশ পাঁচ মিনিট আগ পিছ করে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করল। দুই তিন টেবিল দূরত্বে বসেছে সবাই। ভুলক্রমে সবাই একই রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছে। ওয়েটার কে ডেকে খাবারের মেনু চক করে খাবার অর্ডার দিল। ওয়েটার অর্ডার কনফার্ম করে চলে যায়। আশপাশ লক্ষ্য করতে রুহানির ওর দুই টেবিল সামনে নজর গেলো। ভালো করে লক্ষ্য করে সাইফ ও আয়রা কে উদ্দেশ্য করে বলে, ওইটা শ্যামা ও নাজিন না? কিন্তু ওদের সাথে ছেলেটা কে?
ছেলেটার পিঠ দেখতে পাচ্ছে রুহানি। রুহানির কথায় সাইফ ও আয়রা দু’জনে ওদিকে তাকাল। আসলে নাজিন ও শ্যামা দুজনে বসে আছে সাথে একজন ছেলে। কৌতূহল বসত নিজেদের টেবিল ছেড়ে এগিয়ে গেলো রুহানি, আয়রা ও সাইফ। রুহানি ওদের দেখে রীতিমতো ভীমড়ি খেয়ে পড়ে শ্যামা ও নাজিন। অন্য দিকে জুহি ও আদনান একটা টেবিলে বসে নিজেদের কথা এগিয়ে নিচ্ছে এমন সময় দুই পাশের দু’টি চেয়ারে বসল নিশান ও আরিফ। ওদের দুজনকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল আদনান। নাজিন ও শ্যামা এখানে কেন আসছে কি বলবে ভাবছে এমতবস্থায় সাইফ দূরে একটা টেবিলের দিকে শাহাদাত আঙুল তাক করে বলে, ওই যে ওরা দু’জন লাবণ্য ও রাইসা।
সাইফের কথামতো রুহানি, শ্যামা, নাজিন ও আয়রা ওদিকে তাকাল। পাশের টেবিলে তর্কাতর্কি হচ্ছে শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাল লাবণ্য ও রাইসা। অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে দু’জন ওদের দু’জনের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আদনান, নিশান ও আরিফ। ওদের সাত জনের দিকে এরা ছয়জন এগিয়ে গেলো। টেবিলের ওপর হতেই দিয়ে শব্দ করে রুহানি শাসিত কণ্ঠে সকলের থেকে জানতে চেয়ে বলে, তোরা সবাই একসাথে এখানে কি করছিস? আর তাও আলাদা আলাদা টেবিলে সাথে করে দু’জনের ছেলে ও একজনের মেয়ে।
রুহানির কথায় সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। নিশান ও আরিফ মুখ খুলে বলে, ঘুম ভেঙে দেখে আদনান তারাহুরো করে বের হয়ে যাচ্ছে। তারপর ওরা ওর পিছু নিয়েছে। রাইসা মিনমিন করে বলে, ও’কে লাবণ্য নিয়ে আসছে। নাজিন আর শ্যামা একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে। শ্যামা বেশ অবাক হয়েছে ওর স্বামীর বন্ধু আহিল কে লাবণ্যর সাথে ও ননদ জুহি কে আদনানের সাথে দেখা করতে আসছে শুনে। আমান কে দেখে সন্দেহের নজরে তাকায় রুহানি। আমানকে কেন জেনো ওর চেনা চেনা লাগছে। রুহানি রাগী গলায় শুধালো, আমি আপনাকে আগে কোথাও দেখেছি। কিন্তু কোথায়? কিছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে বলল, এ.স কি হয় আপনার?
আমান ভাবান্তর কণ্ঠে বলল, এ.স আমার বিজনেস পার্টনার তা ছাড়া আমরা ছোটো থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড।
রুহানি শূন্যে দুইহাত ভাসিয়ে বলে, হয়েই গেলো। এটাই সন্দেহ করছিলাম। নাজিন সন্দিহান কণ্ঠে বলল, তুই উনাকে কিভাবে চিনলি?
রুহানি গম্ভীর গলায় বলে, আমাকে যেদিন উনার বন্ধু কিডনেপ করেছিলেন সেদিন রাতে উনিও উনাদের সাথে ছিলেন। আমি সবার মুখ দেখেছি।
রুহানির লাগামহীন কথায় জোরপূর্বক হাসি দিলো আমান। এ.স এর সাথে থেকেও আমান যথেষ্ট শান্তশিষ্ট ছেলে। সহজে রেগে যায় না তাজ, প্রবীর ও ওয়াসিফের মত। ওদের চারজনের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একজন মানুষ আমান ও’কে দেখলে বোঝা যায় ছেলেটা জতটা স্বভাবসুলভ। সবার সাথে খুব সহজে মিশে যায় ও হাসিখুশি। মনে মনে বলে, এক কথায় দু কথায় কথা অনেক বাড়বে। আর এটা একটা পাবলিক প্লেস তাই চুপ করে গেলাম। তবে লুকিয়ে লুকিয়ে সকলের ট্যাম্পু চালানো বের করবো একবার বাড়ি যাই।
হাসি মুখে সকল বন্ধুরা খেতে বসে। সকলে সবার সাথে পরিচিত হলো। কে কাকে ভালো বাসে ও পছন্দ করে সকলের সামনে শিকার করল। নতুন প্রেম বলে, ট্রিট একটু বেশি।
দূর থেকে এক জোড়া চোখ রুহানি কে পরখ করছে। মেয়েটার মুখে এতক্ষণে এক চিলতে হাসি ফুটেছে। লোকটা কানে ফোন লাগিয়ে কর্কশকণ্ঠে বলল,
বস মেয়েটাকে একা পাচ্ছি না। সব সময় দুই একজন লগে থাকছে। আর এখন তো একদল মুরগির বাচ্চা নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে বসছে। লোকটা আঁড়চোখে আমান কে দেখে আরও বলল, বস মেয়ে ও ছেলেগুলোর সাথে এ.স এর প্রাণপ্রিয় বন্ধুদের মধ্যে একজন আমান চৌধুরী একই টেবিলে বসে খাবার গিলছে।
ফোনের অপরপ্রান্তের লোকটি অট্টহাসি দিয়ে থেমে গেলেন গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলল, পাখি যতই দেখে শুনে পাহারা দিয়ে রাখুন না কেনো সে ঠিক খাঁচায় পুড়বে।
চলবে… ইন শা আল্লাহ!