বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব-২৯+৩০

0
286

#বিষাক্ত_ভালোবাসা
#পর্বঃ২৯
#লেখিকা #শারমিন_আক্তার_বর্ষা
‘আমার সাজানো গোছানো প্লান টাকে নষ্ট করে দিলো এই মেয়েটা কে বলছিল ও-কে আবার ফিরে আসতে। ননসেন্স। এত কষ্ট করে মামুর থেকে দূরে সরিয়ে ছিলাম। চাইনি মামু জানতে পারুক রুহানির আসল পরিচয় তবুও সে জেনেই গেলো। ইয়াক।’

আলোহীন ঘরে কাঠের টেবিলের ওপরে শব্দ করে হাত রাখে আরিশ। তার হাতের শব্দে ভয়ত কেঁপে ওঠে তেজ, প্রবীর ও ওয়াসিফ। আরিশের কথাটি তাদের মাথায় ওপর দিয়ে উবে গেছে। ভ্রু কুঁচকে একে অপরের দিকে চাহনি ফেলল। ভ্রু কুটি একত্র করে ভারী নিঃশ্বাস ফেলল প্রবীর। শানিতকণ্ঠে শুধালো,

‘এসবের মানে কি আরিশ? তুই আগে থেকে চিনতি রুহানি কে আর ও যে তোর মামুর মেয়ে সেটাও জানতিস?’

রাগে হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নেয় আরিশ। শক্ত হাতে আরিশের হাত ধরে ফেলল তাজ। প্রবীরের উক্ত প্রশ্ন টি তাজ নিজেও করল। কেননা ওদের তিন জনের মনে একই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। রুহানিকে বাড়িতে দেখে আরিশ এটা বুঝতে পারে ও’কে ইনফর্ম করেছে একমাত্র আমান। সে জন্য এখন এখানে আমান উপস্থিত নেই।

আরিশ রাগী গলায় বলল, ‘উঁহু না। তোদের মতো আমিও রুহানি কে ওইদিন প্রথম দেখি। নেহার জায়গায় যেদিন রুহানি কে ওরা তুলে এনেছিল। প্রথম বার মেয়ে টাকে দেখে মায়া লাগল। ইচ্ছে করল না মে-রে ফেলতে কিন্তু কি করার আমাদের সবার চেহারা দেখেছে বলে ও-কে যে মরতে হতই। তারপর তোরা ওর লাগেজ চেক করলি। কিছু কাগজপত্র সহ পাসপোর্ট আমার হাতে দিলি। পাসপোর্ট দেখে রুহানি কে চিনতে আমার বেশি সময় লাগেনি। পাসপোর্টে বাবা ও মা’র নাম উল্লেখ্য দেখে আমি বুঝে যাই। রুহানি আমার মামুর মেয়ে। তারপর আর কি ও-কে ওর গন্তব্যে পৌছে দিলাম। তারপর শিওর হওয়ার জন্য ইচ্ছে না থাকা স্বত্বেও শ্যামা মেয়েটার বিয়ে এটেন্ট করি। তখন ওর বান্ধবী কি জেনো নাম ওহ, হ্যাঁ রাইসার কাছে শুনলাম। রুহানি এদেশে ওর বাবাকে খুঁজতে আসছে।

তারপর প্লানিং করে, দুইয়ে দুইয়ে চার করি। এখন তীরে এসে তুরি ডুবার মতো অবস্থা হয়েছে। সব আমানের জন্য ও কল দিয়ে বলেছে বলেই রুহানি দেশে চলে আসছে। আল্লাহ জানে এবার মামু কিরকম রিয়াকশন করবে।’

হতবুদ্ধি চোখে তাকাই ওয়াসিফ। সে সন্দিহান কণ্ঠে বলল, ‘মানে তুই ইচ্ছে করে ইয়াসির আঙ্কেলের সাথে রুহানির দূরত্ব বাড়ানোর জন্য মিথ্যা বলেছিলি?’

আরিশ ফুস করে একটা শ্বাস ফেলল। টেবিলের ওপরে চড়ে বসে। আঁড়চোখে এক নজর ওদের দিকে তাকায়। শক্ত ও গম্ভীর গলায় বলল, ‘হুম। ওইদিন রুহানি কে মামুর সাথে লেকে বসে থাকতে দেখেছিল জাফর। ও তখনই সাথে সাথে আমায় খবর দেয়। তখন আমি ও-কে বলেছিলাম দূর থেকে ছবি তুলে দিতে।’

বলতে বলতে প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করল। গ্যালারি থেকে সেদিনের রুহানি ও ইয়াসিরের পাশাপাশি বসে থাকার ছবি বের করে ফোনটা ওদের দিকে বাড়িয়ে দেয়। অবাক চোখে ফোনের ছবিটা দেখছে। একে অপরের সাথে কথা বলে তাদের মধ্যে জেনো সতেজ ফিরে আসছে। মুখো প্রস্ফুটিত দুজনের হাসি বলে দিচ্ছে ওরাই পৃথিবীর সব থেকে খুশি মানুষ।

ছবির ওপর থেকে চোখ সরিয়ে আরিশের দিকে তাকাল। আরিশ ওষ্ঠদ্বয় জোড়া উল্টিয়ে চোখ বন্ধ করল। বাম হাতের শাহাদাত আঙুল দিয়ে কপাল খানিক কুঁচকে ফের বলল, ‘ওইদিন রাতেই বাড়ি ফিরে রুহানি কে আমাদের শত্রু বলে জানাই। এবং বলি কোনো ভাবেই জেনো ওর সাথে যোগাযোগ না করে। রাস্তা ঘাটে হঠাৎ দেখা হলেও জেনো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে চলে যায়।’

‘তাহলে রাজেশের লোকজন যখন ও-কে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তখন তুই ওমন বিচলিত হয়ে পরে ছিলিস কেন?’

‘তার কারণ হচ্ছে রুহানি ছিল আমার একমাত্র উত্তরাধিকারী। সেজন্য ও-কে বাঁচানো ছিল আমার মূল লক্ষ্য। ভেবেছিলাম ও-কে কোনো রকম এনিয়ে বিনিয়ে আবার কানাডা ব্যাক পাঠিয়ে দিবো। পরে ভাবলাম প্রেমের নাটক করি, বিয়ে করি তারপর সম্পত্তি মামু উনার মেয়ের নামে করে দিলে আমি রুহানির থেকে পেয়ে যাবো। কিন্তু কিছুদিন পর, হঠাৎ মামুর দরজার আড়াল থেকে শুনি, উনি উকিলের সাথে বলছেন, সকল সম্পত্তি আমার নামে লিখে দিবেন। তো এমনি যখন সম্পত্তি আসছে যেখানে ও-কে বিয়ে করে ফায়দা নাই। তাই ও-কে চলে যাওয়ার জন্য তাগিদে দেই। এরমধ্যে মামু কিছু জানতে পারল না তার মেয়ে এসে উনার সামনে থেকে চলে গেছে।

তা বাদে কিছুদিন পর মামু জানালো তার প্রিয় বন্ধুর মেয়ের সাথে আমার বিয়ের কথা উনি পাকাপোক্ত করেছেন। আমি প্রথমত রাজি হইনি। বিয়ে, বউ এসব আমার কাছে নিতান্তই প্যাড়া। তবে খোঁজ নিয়ে দেখি বন্ধুর ও সম্পত্তির অভাব। তাই শুধু লাভে লাভে বিয়ে তে রাজি হলাম। কেননা বিয়ের পরই মামু সব সম্পত্তি আমার নামে লিখে দিবে বলেছিল। আর বিয়ের পূর্বে ঝামেলা পাকালো রুহানি ফিরে এসে। এত কষ্ট মেহমত জলে গেলো। সেই মামু জেনেই গেলো ওই মেয়ে টাই উনার একমাত্র মেয়ে।

আমার বোকা মামু আসলে উনার কোনো দোষ নাই। দোষ তো সব ওই গার্ডদের যারা ও-কে ওমন নিষ্ঠুর ভাবে মারছে। আর গার্ডদের ও কোনো দোষ নেই। সব চাল তো আমার ছিল। আমি সন্দেহ করে ছিলাম এমন কিছু হতে পারে। আমানের ঘন্টার পর ঘন্টা নাজিনের প্রতি আসক্ততা দেখে আমার সন্দেহ হয়েছিল বৈকি ও দু’তিন জন গার্ডদের আমি আগে থেকে রুহানির ছবি দেখিয়ে জানিয়ে রাখি। যদি মেয়ে টা কে গেইটের বাহিরে দেখতে পাও তাহলে সে জেনো কোনো ভাবেই ভেতরে না আসে। আটকানোর জন্য যা করা দরকার করবা। রুহানি গেইটের সামনে আসার পরপরই একজন গার্ড কল দিয়ে বলেছিল, ও আসছে। তারপর ও-কে বাঁধা দেওয়ার জন্যই ও-র ওপরে আঘাত করা হয়েছিল৷ কিন্তু মেয়েটা এত দূরতর যে গার্ড দের চোখে ধুলো ছুঁড়ে বাড়ির ভেতর চলে আসে। আর রইলো আমার মামু উনি তো মেয়ে টাকে দেখলেই ইমোশনাল হয়ে পরেন।

বাড়ির ড্রয়িংরুমে রুহানির কণ্ঠস্বর শুনে আমি আমার হবু শশুর মশাইয়ের ফোনে মেসেজ পাঠাই। যেভাবেই হোক মেয়ে টা কে ভেতর থেকে বের করার ব্যবস্থা নেন। উনি ব্যর্থ হলেন। পারলেন না রুহানি কে বের করতে। কিন্তু আমার কথা মামুর বুকে তীরের মতো বেঁধে ছিল। যেটা মৈথির বাবা করতে পারে নাই। ওইটা মামু করল, গার্ডদের বলল, রুহানি কে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য। ভুল বশত মামু রুহানি কে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আর রুহানি পা ফসকে ফ্লোরে পরে যায়। ফটো ক্যাপ্চারের মতো এই দৃশ্য মামির চোখে পরে যায়।

নিজের আদরের সন্তানের ওপর এই অমানবিক নির্যাতন তিনি সইতে পারেনি। শেষে মামুকে শাসিয়ে গেলো। যা একটু ভয় পেয়ে ছিলাম, মামি চলে আসছে। মামুর জীবন পরিপূর্ণ হবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এগুলোর কিছুই হবে না। মামু মামির পায়ে ধরে মিনতি করলেও মামি মামুকে মাফ করবেন না। কেননা প্রসঙ্গ উনার আদরের মেয়ের। রুহানির মুখে আমি আগেও শুনেছি ও-কে ওর মা অর্থাৎ মামুনি অসম্ভব ভালোবাসে।

নিজের চতুর বুদ্ধির জন্য নিজের সব অপরাধের অপরাধী বানালাম রাজেশ কে। আমার সব দুই নাম্বারি কাজের অপরাধী ও-কে বানালাম। আমি জানতাম রাজেশ আমাকে মার*তে চায়৷ কারণ ওইদিন ক্লিয়ার হল। সা-লা ষ্টুপিড একটা। আমি আরিশ শাহ সাথে পাঙ্গা নিতে আসছিল। আমার জালে ও-কে ফাঁসিয়ে দিলাম। এখন আমার করা অপরাধের জন্য সে জেলে বসে শাস্তি পাবে। আমি ফ্রি আকাশে উড়বো। সব কিছুই ঠিক ছিল। এখন কি করি? মনে হচ্ছে নতুন কোনো প্লানিং করতে হবে। মামি ভুলেও জেনো মামুর প্রতি দূর্বল না হয়৷ এমন কিছু করতে হবে।’

‘এজন্যই তুই রুহানি কে তোর দাবার গুটি বলে অট্টহাসি তে মেতে উঠেছিলি?’

‘আর নয়তো কি? রুহানি মেহেক সারা ‘ও’ তো আমার ট্রাম্প কার্ড।’
_______________
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে রুহানি। ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে ইয়ানা। উনাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে রুহানির বন্ধু ওরা। কাঁদতে কাঁদতে গলা শুকিয়ে আসছে মাথা ঝিমঝিম করছে। ইমার্জেন্সি ডাক্তার এখনও ভালো মন্দ কিছু জানায়নি।

দ্রুত ওয়ার্ড রুম থেকে বের হল ইমার্জেন্সি ডাক্তার। ছুটে যেতে নিলে তাকে বাঁধা দেয় নিশান ও আদনান। ভেতরে রুহানির কথা জিজ্ঞেস করে, ডাক্তার কম্পিত কণ্ঠে বলল,

‘পেসেন্ট অবস্থা বেশি ভালো না। আমি এখানে কিছু করতে পারবো না। নার্স মাহফুজা বলল, উনি নাকি আমাদের অধ্যাপক ‘ডাক্তার শাফায়াত শীষ’ স্যার এইমাত্র হাসপাতালে আসছেন। আমি এখন উনাকেই নিয়ে আসতে যাচ্ছি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুক। আল্লাহ জেনো শীষ স্যারের হাতে জয় দেন। আল্লাহর রহমত থাকলে ডাক্তার শীষ স্যার উনিই পারবেন আপনাদের পেসেন্ট কে সুস্থ করিতে।’

চলবে… ইন শা আল্লাহ।

#বিষাক্ত_ভালোবাসা
#পর্বঃ৩০
#লেখিকা #শারমিন_আক্তার_বর্ষা
বিয়ে বাড়ি আস্তেধীরে শূন্য হতে লাগল। গেস্টরা একে একে চলে গেলো। লোকসমাগম কমে গেলো বাড়িটায় নিস্তব্ধতা ছেয়ে যায়। রুহানি ওদের সাথে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য ওদের পিছু যাচ্ছিল হঠাৎ একটা ওয়েটার সাথে ধাক্কা খায় নাজ। নাজিনের ছোট্ট করে নাজ। গায়ের জামায় সফট্ ড্রিংকস পরায় জামাটা ভিজে যায়। ওয়েটার স্যরি বলে, নাজ কে ওপরে একটা ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। পরিস্কার হওয়ার জন্য।

সবাই চলে যাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ একা নিস্তর ড্রয়িংরুমের মধ্য খানটায় হাঁটু গেঁড়ে বসে রইল ইয়াসির। বুকের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। নিজেকে নিজের কাছে অপরাধী মনে হচ্ছে, কেনো সে বুঝতে পারিনি? যে মেয়ে টার মুখশ্রী দেখিলে পরাণ জুড়িয়ে যায়। ভেতর থেকে আসে প্রশান্তির শ্বাস। যাকে পাশে বসিয়ে কিছুক্ষণ কথা বললে মনে হয়, হ্যাঁ ওই আমার সবচেয়ে আপন জন। সে মেয়ে টা কে কিভাবে এত তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলাম। ভেবে পাচ্ছে না ইয়াসির। চোখের সামনে প্রথম দিন হতে রুহানির মুখশ্রী ভাসছে। লেকে হঠাৎ ধাক্কা খাওয়া। আল্লাহর ইচ্ছে ছিল বলে, সেদিন অজান্তেই মেয়ের সাথে দেখা হয়েছিল। দূর্ভাগ্যবশত চিনতে পারিনি। ওর সাথে কথা বলার সময় মুগ্ধ নয়নে ইয়াসির রুহানির মুখটি লক্ষ্য করেছে। তার কথা বলার ধরণ, কথার মাঝে খিলখিল করে ওঠে ওঠা। সব যে তার পূর্ব পরিচিত। রুহানির মধ্যে ইয়ানার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছিল ইয়াসির। তারপর রেস্টুরেন্টের সামনে অপমান করা। কিছুক্ষণ আগে, নিজের মেয়ে কে নিজ হাতে ধাক্কা দিয়ে দেওয়া। গার্ড দিয়ে বের করে দিতে চাওয়া। সব জেনো এখন ইয়াসিরের গলা চেপে ধরেছে। চোখের কার্নিশ বেয়ে জল টুপটুপ করে বেয়ে চলেছে।

আমতা আমতা করে বলল, ‘-ও’ কি শুধু তোমার মেয়ে ইয়ানা? তোমার রুহি কী আমার কেউ নয়? আমি যদি জানতাম -ও- আমার কলিজার টুকরা৷ তাহলে ও-কে আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও আমার মেয়েটাকে কাউকে হার্ট করতে দিতাম না। আমি ও মেয়ে টেরোরিস্ট এর সাথে সংযুক্ত আমাদের ক্ষতি করার জন্য আসছে। আমার ভুল টা কোথায় ইয়ানা? রুহি আমারও মেয়ে। তুমি ও-কে এত বছর আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখছো। আমি আর আমার মেয়ে কে আমার থেকে দূরে যেতে দিবো না।’ বলে ওঠে হাসপাতালের উদ্দেশ্য দ্রুত রওনা দেয়।

‘বাড়ি না জেনো গোলকধাঁধা। কখন থেকে হাটছি। বারবার মনে হচ্ছে ঘুরেফিরে এক জায়গাতেই আসছি। কোন দিকে যে যাবো?’

বিড়বিড় করে বলতে বলতে একটা ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো নাসরিন। দরজার বাহির থেকে আরিশের কথাগুলো শুনে ফেললো সে। ভয়ে হাত-পা বরফের ন্যায় জমে আসতে লাগল। শুঁকনো ঢোক গিলে ছুটে চলে যায়।

আরিশের চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল প্রবীর ও ওয়াসিফ। মেঝের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল তাজ। নাক টেনে বলল, ‘ছোট্ট থেকে চিনি এই ছেলে টাকে। ছোট্ট থেকে চিনি যে কি না আন্ডারওয়ার্ল্ডের কিং যে সপ্তাহে সপ্তাহে কোটি টাকার ডিল করে। যার নিজের টাকা সম্পত্তির অভাব৷ সে কি না বলছে সে সব কিছু তার মামুর সম্পত্তির জন্য করেছে। হাহহ আরিশ, জন্মের পর থেকে ঠিক মতো সাজিয়ে মিথ্যে কথাও বলতে শিখিসনি। পুরো দুনিয়ার মানুষ জন এসে যদি বলে, তুই সব টাকার জন্য করেছিস তাহলেও আমি তাজ বিশ্বাস করবো না।’

তাজের কাঁধে হাত রাখে ওয়াসিফ। বলল, ‘আমার কেন মনে হচ্ছে -ও মিথ্যে বলে পালিয়ে গেছে।’

পাশ থেকে প্রবীর চেঁচিয়ে বলল, ‘কারণ সত্য এটাই। আরিশ মিথ্যা বলছে। ওর কোনো জন্মেও টাকার লোভ ছিল না। আরিশ পৃথিবীতে সব থেকে বেশি যাকে ভালোবাসে সে হচ্ছে ওর মামু। ওর মামুর খুশির জন্য ই সে মৈথি কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল। তা বাঁধে ওইদিন রাতের ঘটনা আমরা সবাই জানি। ল্যাপটপের ওপাশে ব্যাক্তির কাছে হাত জোর করে কান্না পর্যন্ত করেছিল আরিশ। শুধু মাত্র রুহানির জন্য। দরজার আড়ালে লুকিয়ে দেখেছি শুনেছি আমরা আরিশের ওই ব্যাক্তির কাছে আর্তনাদ। প্রতি টা আর্তনাদে ছিল আমায় রুহানি কে দান করুন। বেশিদিন তো হয়নি মাত্র কিছুদিন আগের ঘটনা। আরিশের আর্তচিৎকার ব্যাক্তির হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি। সে দেয়নি রুহানিকে আরিশ কে।’

‘ওই ব্যাক্তিটা তো আরিশের___’
‘হুঁশশ নাম নিস না। আরিশ শুনতে পেলে মারা-ত্মক রেগে যাবে।’
‘অন্যায় হচ্ছে আরিশের সাথে। আমরা সবটা জেনেও মেনে নিবো?’
‘যার সাথে হচ্ছে সে মেনে নিয়েছে। এখানে আমাদের করার কিছু নেই।’
তীক্ষ্ণ কণ্ঠে তাজ বলল, ‘ওই ব্যাক্তিটার আরিশ কে দেওয়া শর্ত টা মনে আসলে আমার লোমহর্ষক অবস্থা হয়। ইচ্ছে করে সব কিছু তছনছ করে দেই।’
‘আরিশের ভেতরের অবস্থা কল্পনা করতে পারছিস প্রবীর?’
___________
হাসপাতাল এইট ফ্লোর হাত দু’টি পেছনে মুঠি বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আরিশ। কিছুক্ষণ পর, কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পিছনে ঘুরে দাঁড়াল। আরিশ নরম গলায় তার কাছে মিনতি করল। কোনটি সে তার কথা থেকে বিন্দুমাত্র নড়চড় হল না। উনি ফোনে যা বলে ছিলেন এখনও সেটাই পুনরাবৃত্তি করলেন।

তিনি কাঠখোট্টা কণ্ঠে বলল, ‘তোমার অনুরোধ আমি ফেলতে পারবো না বলে ভেবে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারলাম না। ভুল তোমাদের ছিল না, ভুল আমার ছিল। কেননা আমি তোমাদের ভুল করার সুযোগ দিয়ে ছিলাম।’

আরিশ অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনলো। উনার বলা শেষ হতে উনি চলে গেলেন। ভারী নিঃশ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আরিশ।
__________
রুহানির অবস্থা আগের থেকে ভালো। জ্ঞান ফিরেছে, চোখ মেলে সবার আগে আরিশ কে দেখতে চাইলো। ইয়ানা রুহানি কে জানায় আরিশ এখানে আসেনি। দরজার বাহিরে ইয়ানার বাবার সাথে ইয়াসির কথা বলছে। সে বার বার অনুনয়-বিনয় করে মেয়ের সাথে দেখা করতে চাচ্ছে।

বাহিরের শব্দ রুহানির কানেও আসছে৷ সে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বাহিরে কে?’

ইয়ানা কথা ঘুরিয়ে ফেলল। রুহানি কে বিশ্রাম নিতে বলে বাহিরে চলে যায়। কেবিনের মধ্যে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে ডাক্তার শীষ৷ হাতে রুহানির রিপোর্ট। রিপোর্টে এক নজর চোখ বুলিয়ে রুহানির দিকে তাকায়। মুচকি হেসে বলল, ‘আজকের দিনটা আপনাকে হাসপাতালে থাকতে হবে। আগামীকাল আপনি রিলিজ পাবেন।’

ডাক্তার শীষ এর ফোনে কল আসল। ইমার্জেন্সি বলে, বেলকনিতে গিয়ে কল ধরল সে। হন্তদন্ত হয়ে কেবিনে ঢুকল নাসরিন। সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল রুহানি। দরজার শব্দ শুনে ওদিকে তাকাল। নাসরিন ভারী ভারী নিঃশ্বাস ফেলল। কেবিনে কাউকে না দেখতে পেয়ে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে রুহানির দিকে এগিয়ে গেলো। কম্পিত কণ্ঠে সব বলল। যা সে আরিশের মুখ থেকে শুনেছে।
_______________

রাত ক’টা বাজে ঠিক জানা নাই। ঘড়ির কাঁটা ঠকঠক করছে। শেয়াল হাঁক ছেড়ে ডাকছে। অর্ধনগ্ন দু’টি মানব দেহ আপত্তি কর অবস্থায় শুয়ে আছে। আনুমানিক এই ২০থেকে ২১ বছরের বয়সী একটা মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে ইব্রাহীম খলীল। দুই তলা বাড়ি ওপর তলায় চারটা বেডরুম। নিচ তলায় দুইপাশে দুইটা রুম। এক পাশে বড় ড্রয়িং রুম। অন্য পাশে রান্নার জন্য রান্নাঘর ও অন্য দিকে ডাইনিং টেবিল। এত বড় বাড়িতে দুজন ছাড়া আর কেউ নাই। মেয়েটা শরীরে বিছানার চাদর পেছিয়ে ওঠে দাঁড়াল। অস্ফুটস্বরে বলল, ‘ আমাকে এখন বাড়ি ফিরতে হবে।’

লোকটা ওঠে বসল। মেয়েটির হাত ধরে টেনে বিছানায় ফেলে দিলো। উপর থেকে মেয়েকে চেপে ধরে বলল, ‘তোকে দশ হাজার টাকা দিয়েছি। কি এখনই চলে যাওয়ার জন্য আজ সারারাতের তুই আমার ভোগের সামগ্রী।’

চলবে…. ইন শা আল্লাহ।