বিবাহিতার সাতকাহন পর্ব-১৪+১৫

0
302

#বিবাহিতার সাতকাহন
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১৪

একটা অপরিচিত নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে। মেসেজটা ওপেন করে লক্ষ্য করলাম তাতে লেখা

“হ্যালো! আমি পিয়াস। ভেবো না নম্বর কীভাবে পেয়েছি। জোগাড় করে নিয়েছি। একটু আগে কাকা এসে বাজার দিয়ে গিয়েছে খেয়াল করলাম। আমি জানি তুমি আমাকে নিজে থেকে মেসেজ করবে না। তাই আমিই করলাম। আমি কি আসব রান্না করতে?”

পিয়াসের মেসেজটা দেখে ভালোই বিস্মিত হলাম। ছেলেটা এত খেয়াল করছে আমার, যা রিতীমতো বিস্ময়কর। চুপচাপ বসে রইলাম কতক্ষণ ভ্যাবলার মতো। তারপর মেসেজের রিপ্লাই দিলাম

“হুম এসো। এসে রান্না করে দিয়ে যাও। আমার হাতেরও অবস্থা তেমন ভালো না। তুমিই বরং এসে রান্না করে দিয়ে যাও।”

মেসেজটা ডেলিভার হওয়ার মিনেট দুয়েকের মধ্যে পিয়াস চলে এসেছে। পিয়াস এসেই মাথা চুলকাতে চুলকাতে জিজ্ঞেস করল

“ভাইয়া কী বাজার পাঠিয়েছে?”

আমার মোলায়েম উত্তর

“এই তো গরুর মাংস। আর কিছু পাঠায় নি। গরুর মাংস আর ডাল রান্না করলেই হবে।”

“আচ্ছা দাঁড়াও আমি আগে মাংস গুলো ঠিকমতো কেটে নেই। ছুরি আছে তোমার বাসায়?”

“তোমাকে কষ্ট করে ছুরি দিয়ে কাটতে হবে না, আমার বটি আছে। বটি দিয়েই কেটে দিচ্ছি।”

কথাটা বলেই বটি দিয়ে মাংসগুলো ছোটো ছোটো টুকরা করে কেটে নিলাম। তারপর পিয়ার সেটা ধুয়ে পরিষ্কার করে মসলা দিয়ে ভালোভাবে মাখিয়ে বসিয়ে নিল। এরপর গল্প জুড়ে দিল। ছেলেটা ভীষণ কেয়ারিং তো বটেই তার উপর বকবক ও করে বেশি। আমার আবার এসব বকবক শুনতে খারাপ লাগে না। বকবকের এক পর্যায়ে সে বলে উঠল

“নুহাশ ভাইয়ের সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে কতদিন হয়েছে?”

“খুব বেশিদিন হয়নি। কেন বলো তো?”

“তাহলে তো বলা চলে নতুন বউ। নতুন বউ হয়ে এত মলিন থাকো কেন? সাজগোজ করো না কেন? আমি তো জানতাম নতুন বউরা অনেক সাজগোজ করে জামাইকে দেখায়।”

আমি এক রাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে জবাব দিলাম

“তোমার ভাইয়ার কী এত দেখার সময় আছে নাকি আমি সেজেছি কি’না। সারাদিন থাকে চোর ডাকাত নিয়ে। আর ওদের সাথে থাকতে থাকতে ওদের বিচার করতে করতে তোমার ভাইয়ারও মন পাথর হয়ে গেছে। এখন এ মনে আবেগ কাজ করে না।”

“তুমি মনে হয় অনেক আবেগী?”

আবারও দীর্ঘ শ্বাস আঁচড়ে পড়ল। মোলায়েম গলায় জবাব দিলাম

“আমি আবেগী না তবে বড্ড অভিমানী। জানো পিয়াস তোমার ভাইয়ার একটায় সমস্যা আমার অভিমান গুলো বুঝতে পারে না। আমি অভিযোগ না করলেও ভীষণ অভিমান করতে জানি। কিন্তু আমার হাসি মুখের আড়ালে সে অভিমান গুলো চাপা পড়ে যায়।”

“অতি আবেগীরাই অভিমানী হয়। তবে একদিন শাড়ি পরে ছাদে যেও। আমাকে কল দিও। আমি তোমার ফটোগ্রাফারের দায়িত্ব নিব নে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। এবার বকবক থামাও।”

পিয়াস চুপ হয়ে গেল। গরুর মাংসের একটা সুগন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। পিয়াস আরও কিছুক্ষণ মাংসটা কষিয়ে নিয়ে তাতে ঝোল দিল। পাশাপাশি চুলায় ততক্ষণে ডালটা হয়ে গেছে। ডালের পর ভাতও বসিয়ে দিল। ডাল, মাংস আর ভাত রান্না করতে সময় বেশি লাগেনি। রান্না শেষে পিয়াস আর বেশিক্ষণ থাকল না। বাসায় চলে গেল।

দুপুরে নুহাশ এসে খেয়ে গিয়েছে। আমিও খেয়ে নিয়েছি। বিকেল বেলায় একটা সুন্দর জামা পরে পিয়াসদের বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম। আন্টির সাথেও কথা হবে আর তার বোন মিথির সাথেও পরিচয় হবে। মিথি পিয়াসের বড়ো বোন। পিয়াস আর আন্টির মুখে কেবল নাম শুনেছি। দেখা হয় নি। পিয়াস আর আন্টি বাসায় আসলেও মিথি এখনও আসেনি। আসলে পরিচয়টা হয়ে যেত।

বিকেল ৫ টা। গরমটা একটু কমেছে এখন। ঢাকায় রোদের যে দাবদাহ ঠিক দুপুর দিকটা আজাব মনে হয়। মনে হয় জাহান্নামের আগুনে আছি। জানি না জাহান্নামের আগুন কত প্রখর। তবে এ আগুন সহ্য করতেই যে নাজেহাল অবস্থা পরকালে কী হবে কে জানে। ভুলের উপর ভুল আর পাপের উপর কেবল পাপেই করে যাচ্ছি। দিনশেষে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

পিয়াসদের বাসার সামনে গিয়ে কলিং বেল চেপে ধরলাম। পিয়াসের বোন মিথি দরজা খুললো। আমাকে দেখেই হেসে বলে উঠল

“মুমু আপু। তাই না?”

“বাহ! বুঝলে কী করে? আমাকে তো আগে দেখোনি।”

“দেখতে হবে না। পিয়াস তো সারাদিনেই আপনার কথা বলে। ওর মুখে বর্ণণা শুনে আন্দাজ করে নিয়েছি। ও তো আপনার খিচুরির এত প্রশংসা করেছে কী বলব।”

আমি হাসতে হাসতে জবাব দিলাম

“ও একটু পাগল টাইপ যা বুঝলাম। আর তুমি আমাকে তুমি করেই বলো। আপনিটা বেশ বেমানান লাগছে।”

মিথি মুচকি হেসে জবাব দিল

“তা বলা যাবে সমস্যা নেই। তুমি ভেতরে আসো। বাইরে দাঁড় করিয়েই কথা বলছি। পিয়াস বলছিল তুমি আজকে আসবে লুডু খেলতে। তুমি এসে ভেতরে বসো আমি মাকে ডেকে আনছি।”

আমি মিথির কথায় ভেতরে গিয়ে বসলাম। মিথি রুমের দিকে এগুলো আন্টিকে ডাক দিতে। এর মধ্যে পিয়াস হাজির। আমাকে ভালো করে দেখে বলল

“মাশআল্লাহ সুন্দর লাগছে। তুমি দাঁড়াও সবার জন্য কফি করে নিয়ে আসি। তারপর একসাথে কফি খাব আর লুডু খেলব। জোরা জোরা হয়ে খেলব। আমি আর তুমি এক দলে আর মা আর মিথি আপু এক দলে।”

“তা হবে না। আমি আর মিথি এক দলে আর আন্টি আর তুমি এক দলে থাকবে। দেখব কে জিতে তুমি নাকি।”

“তোমাকে তো আমি হারাবই। দাঁড়াও তুমি…., আমি কফি করে নিয়ে আসি।”

“এখন কী আমাকে বসা থেকে দাঁড়াতে হবে।”

“আরে বোকা এ দাঁড়ানো সে দাঁড়ানো না। তুমি বসো আমি আসছি।”

পিয়াস ছুট লাগাল রান্না ঘরের দিকে। ততক্ষণে আন্টি আর মিথি এসে গল্প জুড়ে দিল। আন্টি আর মিথির কথা শুনে বুঝতে পারলাম পিয়াস আমার ব্যাপারে অনেক কিছুই তাদের বলেছে। আর সবচেয়ে বড়ো কথা মিথিও বেশ মিশুক। আমরা সমবয়সী বলা চলে তাই মিথির সাথে আমার বেশ ভালোই ম্যাচ হয়ে গেল। একটু স্বস্তি লাগছে ওর মতো একটা মেয়ে পেয়ে। অনেক কথায় না বলা থাকে যা বলার জন্য একটা বান্ধবী দরকার হয়। আর আমি যেন সেটাই মিথির মধ্যে পাচ্ছি। অল্প সময়ে বেশ মিশে গেলাম তাদের সাথে।

পিয়াস কফি নিয়ে হাজির। লুডুর পসরা সাজানো হলো। পিয়াস আর ওর মা এক দলে আমি আর মিথি এক দলে। কফিতে চুমুক দিয়ে খেলা শুরু করলাম। অনেকদিন পর এভাবে বসে লুডু খেলছি। বেশ ভালোই লাগছে। আগে বোনরা একসাথে হলে লুডু খেলতাম। এখন আর সেটা হয়ে উঠে না। কারণ একেক জন একেক নগরীর বাসিন্দা।

লুডুতে প্রথম ধাক্কায় ছক্কা তুলা বেশ কঠিন। এ ছক্কা তুলতে গিয়ে হাজার বার কানা/শূন্য উঠবে। লুডুর ঘুটিটাও যেন সব বুঝে।

যাক অবশেষে পিয়াসের মায়ের প্রথম ছক্কা উঠার মাধ্যমে ছক্কা উঠার সূচণা হলো। আমি অনেকবার চেষ্টা করেও ছক্কা তুলতে পারছি না। মিথি আর পিয়াস ইতোমধ্যে ঘুটি চালানোতে ব্যস্ত। আর আন্টির ঘুটি তো পাকা হয়ে যাওয়ার পালা। এবার অবশেষে আমার ছক্কা উঠল। কিন্তু উঠার পর হলো নতুন মসিবত।

কপি করা নিষেধ

#বিবাহিতার সাতকাহন
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ১৫

আমার গুটি চালানো শুরু। আস্তে আস্তে গুটি এখন পিয়াসের এলাকায়। পিয়াসের দুই উঠলেই আমার গুটিটা খাওয়া পড়ে যাবে। মনে মনে দোয়া করছিলাম তার যেন দুই না উঠে। এদিকে পিয়াসের দুই এই উঠল। পিয়াসের মা জোরে হেসে বলে উঠল

“পিয়াস মুমুর গুটিটা খা।”

পিয়াস আমার গুটিটা না খেয়ে অন্য গুটি চালান দিল। এভাবেই পিয়াস খেলায় ছাড় দিতে লাগল। পিয়াসের এ অবস্থায় আমি বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লাম। কিছুটা রাগ ও হচ্ছে পিয়াসের উপর। আমার সাথে এমন করলে অন্যরাও বিষয়টা অন্য চোখে নিতে পারে এজন্য। এদিকে পিয়াসের এমন আচরণে খেলার দৃশ্য পাল্টাতে লাগল। এলোমেলো হয়ে গেল খেলার পরিবেশ। পিয়াস তা বুঝতে পেরে সবার গুটি এলোমেলো করে দিয়ে বলে উঠল

“খেলতে হবে না এসব খেলা। বা*লের খেলা আমার।”

পিয়াসের মুখের ভাষা শুনে আমি কিছুটা রেগে উত্তর দিলাম

“তুমি খেলবে না ভালো কথা। তবে এমন বাজে স্ল্যাং উচ্চারণ করলে কেন? আর খেলা তো খেলায়। এখানে তোমার মন মর্জি মতো সব হবে? তা তো না। ধুর খেলার মুডটাই নষ্ট করে দিলে তুমি।”

মিথি কপাল কুঁচকে রাগ গলায় আমার সাথে তাল মিলিয়ে বলে উঠল

“তুই সবসময় এমন করিস। এজন্যই তোর সাথে খেলতে ইচ্ছে করে না। লুডু নিয়ে আমার চোখের সামনে থেকে যা।”

পিয়াসের মা এখানে নীরব দর্শক। আমাদের কথোপকথন শুনে যাচ্ছে। কোনো তাল বেতাল তার হচ্ছে না। বরং আমাদের কথোপকথনেও তিনি বেশি মন দিতে পারলেন না। টেলিভিশন ছেড়ে সিরিয়াল দেখায় মন দিলেন। এদিকে পিয়াস মাথা নীচু করে অপরাধীর মতো বসে আছে। মিথি আবারও ধমক দিয়ে বলল

“তোকে না বললাম আমার চোখের সামনে থেকে যেতে। যাচ্ছিস না কেন? সমস্যা কী তোর?”

পিয়াস বসা থেকে উঠে হনহনিয়ে তার রুমের দিকে চলে গেল। আমি আর মিথি গেলাম মিথির বেড রুমে। দুজন বেশ জমিয়ে আড্ডা দিলাম। অনেকদিন পর একটু ভালো লাগছে কারও সাথে এভাবে কথা বলতে পেরে। মনটায় বেশ শান্তি লাগছে।

কথা শেষ করে বাসায় আসলাম। রাত ৮ টা বাজে। নুহাশকে কয়েকবার কল দিলাম ধরল না। রাত ১০ টায় নুহাশ কল দিয়ে জানাল আসতে দেরি হবে। রাত একটাও বাজতে পারে। আমি হ্যাঁ, না কিছু বলার আগেই কল কেটে গেল।

অস্থির লাগছে। একা একা সময় যেন কাটছে না। শ্বশুড় , শ্বাশুড়ির সাথে থাকলেও জ্বালা আবার একা থাকলেও জ্বালা। ডিপ্রেশন সবসময় ঘায়েল করে হানা দেয় পিছু ছাড়ে না। অস্থির হয়েই এপাশ ওপাশ করছিলাম। এর মধ্যে পিয়াসের মেসেজ

“কী করো?”

“এই তো কিছু না। তুমি?”

“কফি খাচ্ছি। তুমি খাবে? খেলে এখনি বানিয়ে নিয়ে আসতেছি।”

“ওহু দরকার নেই। আমি ঘুমিয়ে যাব এখন। তুমি আজকে খেলায় এমন করলে কেন?”

“আমি এমন না করলে তুমি হেরে যেতে।”

“তো কী হত? খেলাতেই তো হার জিত। আর তুমি তো প্রথমে চেয়েছিলেই আমি হারি। তাহলে পরে এমন করলে কেন?”

“খেলার সময় তোমার হারটা মানতে পারছিলাম না। আর তুমি হেরে গেলে তো আমিও হেরে যেতাম। তাই তোমাকে জিতিয়ে নিজে জিততে চেয়েছিলাম।”

“এত পাকা পাকা ফিল্মি ডায়লগ না দিয়ে পড়তে বসো। পরীক্ষা সামনে তোমার।”

“তুমি বললে সব করতে রাজি।”

“ওহ! তাই নাকি। আমি তোমার কে হে?”

“জানি না।”

“ঘুমাও, আমি ঘুমাব। বাই।”

“হুম বাই।”

কথোপকথনের সমাপ্তি। আমি চুপ হয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছি। আদৌ কী পিয়াস, আমাকে বোনের মতো অথবা ভালো বন্ধুর মতো দেখে তো? তার সাথে এভাবে কথা বলা ঠিক হচ্ছে তো? এটা কী কোনোভাবে অন্যায় করা হচ্ছে? অবচেতন মনে এসব ভেবে পুনরায় আবার ভাবতে লাগল। নাহ! যা হচ্ছে হোক। পিয়াস কী ভাবছে তাতে আমার কী আসে যায়? আমি তো নুহাশকে ভালোবাসি আর পিয়াসকে আমি ছোটো ভাই আর বন্ধুর চোখেই দেখি। এসব হাবিজাবি অনেক চিন্তার বিস্তরণেই ঘটাচ্ছিলাম আমি।

আস্তে আস্তে চোখ দুটোতে ঘুম এসে জড়ো হয়ে গেল। কারও স্পর্শ শরীরে লাগছে। ঘুম চোখে তাকালাম। নুহাশ বসে আছে। বিরক্ত গলায় বলল

“মুমু তোমার বাজে স্বভাব আর গেল না। দরজা লক না করে ঘুমাও কেন? আর উঠো প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে।”

শরীরটা বেশ ক্লান্ত লাগছ। তবুও দ্রূত উঠলাম। নুহাশকে তরকারি গরম করে খেতে দিলাম। নুহাশ খাওয়ার সময় ভালো মন্দ কিছু বলে নি। অবশ্য নুহাশের ভালো মন্দ বলায় আমার এখন কিছু যায়, আসেও না। নুহাশ খাওয়া শেষে রুমে প্রবেশ করল। আমিও খেয়ে নিলাম দ্রূত। তারপর সব গুছিয়ে রুমে গেলাম। নুহাশের একটু সান্নিধ্য পাওয়ার ইচ্ছা তো ছিলই তবে সেটা আর পূরণ হবে না বুঝতে পারলাম। ইতোমধ্যে নুহাশ নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আমি আর কথা না বাড়িয়ে পাশেই শুয়ে ঘুমানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিলাম।

সকাল টা শুরু। নুহাশকে নাস্তা দিয়ে হালকা গলায় বললাম

“একা একা ভালো লাগে না। আর তুমিও বাসায় এসে একদম চুপ হয়ে যাও। সারাদিন এভাবে থাকতে ভীষণ খারাপ লাগে।”

নুহাশের বিরক্তমাখা উত্তর

“তোমার ভালো কিসে লাগবে আল্লাহ জানে। খাবার, বাজার.. মুখ ফুটে বলার আগেই নিয়ে আসতেছি। কাপড়চোপড় বলার আগেই কিনে দিচ্ছি তারপরও তোমার মন ভরছে না। বাবা, মায়ের সাথেও থাকতে পারলে না আর এখানে এসেও তোমার নাটক শুরু। তোমাকে তো বুঝতে হবে। আমি সারাদিন কাজে থাকি। বাসায় আসি একটু বিশ্রাম নিতে আর সেখানেও তোমার প্যানপ্যান। অসহ্য লাগে এগুলো।”

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে বের হয়ে গেল সে। আমি চুপ হয়ে বসে আছি। কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক তাই বলে কী মিনেট পাঁচেক সময়ও হয় না আমাকে দেওয়ার জন্য। আমার সাথে কথা বলার জন্য। এটুকু সময় তো সে ইচ্ছে করলেই বের করে নিতে পারে। বউকে খেতে পড়তে দিলেই কী সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। আমরা মেয়েরা আসলেই ভীষণ স্বার্থপর। কারণ আমরা চাই পুরুষের অক্লান্ত ভালোবাসা। আর এ ভালোবাসা দিতে ব্যর্থ হলেই আমাদের স্বার্থে টান পড়ে। তখন আমরা পাগলামি করি, ভালোবাসা পেতে মরিয়া হয়ে উঠি।

আমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। তারপর নিজেকে সামলে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আসলাম। আমি নুহাশের থেকে একটু বেশিই আশা করে ফেলি যেটা অনুচিত সেটাই মনকে বুঝাতে লাগলাম।

১১ টা বাজতে চলল। নুহাশকে নাস্তা দিয়েছিলাম সেটা না খেয়েই চলে গিয়েছে সে। এরপর আমারও গলা দিয়ে কিছু নামে নি। তবে পেট জানান দিচ্ছে সে কিছু চায়। তাই নিজের সকল কষ্ট চাপা দিয়ে খেতে বসলাম। খাওয়া প্রায় শেষ। কলিং বেলের আওয়াজ কানে আসলো। নিশ্চয় পিয়াস এসেছে। তাই সাথে সাথে খাওয়া থেকে না উঠে খাবার টা শেষ করে হাত ধুয়ে দরজা খুলতে গেলাম। দরজা খুলে কিছুটা অবাক হলাম।

কপি করা নিষেধ