বিধুর রজনী পর্ব-২৫

0
238

#বিধুর_রজনী
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৫]
___________________
৫৭.
” এভাবে নিজের ধ্বংস ডেকে আনবেন না।সম্রাট ভীষণ রেগে আছেন সম্রাজী’র উপর হামলার বিষয়ে খবরা খবর নিশ্চয়ই তিনি নিবেন।আর এর দায়িত্ব আমার ঘাড়ে পড়বে।যার নুন খাই তার সাথে গাদ্দারী করার ইচ্ছে আমার নেই।এমন কাজ আপনি করবেন আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।”

” চুপ করো চোখ থেকেও অন্ধ তোমরা।জালিমের বংশের মেয়েকে ঘরের বউ করে তুলেছে সিদ্দীক। এই অন্যায় কিছুতেই আমি মেনে নিতে পারিনা।আমাদের বংশের নাম ডাক আছে আহমেদাবাদ রাজ্যের সকল পরম্পরা সম্রাট জ্ঞানী, গুনি, শৌর্যবান, বীর্যবান সর্বশেষ তাসবীরের পর নিশ্চয়ই তার পুত্র সিংহাসন লাভ করবে আর সেই পুত্র কার গর্ভে জন্ম নেবে তা দেখবে না তোমরা?তাসবীরের পুত্র জন্ম নেবে এক ব্যভিচারী বংশের নারীর গর্ভে।আমাদের ভবিষ্যৎ করুন রউফ বড্ড করুন।”

” আরওয়া নূরকে বিবাহের সম্মতি সম্রাট সিদ্দীক দিয়েছেন এছাড়া সম্রাজ্ঞীও অনুমতি প্রদান করেছেন বলেই এই বিবাহ হয়েছে।”

” আমাকে একটি বার জানানো হয়নি।ব্যবসা কাজে রাজ্যের বাইরে থাকি বলে পরিবারের আমি কেউ না?সম্রাট সিদ্দীকের সৎ ভাই হতে পারি কিন্তু কোনদিন এই রাজ্যের দাবি তুলিনি তার অনিষ্ঠ করিনি সর্বদা তাকে আপন ভাইয়ের চোখে দেখেছি।”

” সে কথা আমিও মানি ভাইজান।আপনি সর্বদা সৎ ভাবেই ভালোবেসেছেন এই পরিবারকে এই রাজ্যকে।”

” কিন্তু তার মূল্য আমার ভাই দেননি।”

শেষোক্ত বাক্যটি বলে পালঙ্কে বসে পড়লেন সম্রাট সিদ্দীকের সৎ ভাই সালমান।সম্রাট সিদ্দীকের পিতার দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে জন্ম নেয় একমাত্র পুত্র সন্তান যার নাম সালমান।সম্পর্কে তারা সৎ ভাই হলেও দু’জনের মাঝে কখনো কোন বিরোধাভাস পাওয়া যায়নি।আবু সিদ্দীক কখনো তার সৎ ভাইকে হিংসাত্মক চোখে দেখেননি সালমানের যখন যা প্রয়োজন সর্বদা তিনি তাই করেছেন।সালমান নিজেও ভাইয়ের প্রতি সর্বদা অনুগত।
রাত্রিতে সম্রাজী আরওয়ার উপর কারা হামলা করেছে তার তদন্তে কাজে লেগে পড়েন সেনাপ্রধান রউফ।পরবর্তী সকল অনুসন্ধান শেষ জানতে পারেন আবু সালমান এমন দুঃসাহসিক কাজ করেছেন তখন থমকে যান রউফ।ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব কিছুতেই চাননা তিনি।তাই সবার কাছে ঘাতকের পরিচয় লুকিয়েছেন সেনাপ্রধান।অপরদিকে আহমেদাবাদের প্রাসাদে আবু সালমান উপস্থিত হয় গতকাল অপরাহ্ণে তিনি আগে থেকে পরিকল্পনা করায় তাসবীর আরওয়াকে নিয়ে প্রাসাদ থেকে বের হতে আক্রমণ চালান।

” আমি কাউকে কিছু জানাবো না ভাইজান।তবে এর পেছনেও আমার শর্ত আছে।”

” তুমি আমাকে শর্ত দাও!এত সাহস তোমার।”

” উত্তেজিত হবেন না ভাইজান।হয় আপনি শর্ত মানবেন না হয় আমি গিয়ে সম্রাট তাসবীরকে সবটা খুলে বলবো।আমি কিছুতেই চাই না আপনাদের চাচা ভাতিজার মাঝে দ্বন্দ্ব হোক।তাছাড়া আপনার ভাই জানলে ভীষণ কষ্ট পাবেন।”

” কষ্ট!কষ্ট আমার ভাই মোটেও পাবে না।আলোর হত্যাকারীর বংশের একটা মানুষকেও আমি বাঁচিয়ে রাখবো না কথা এ মনে রেখো রউফ।”

রউফ হতাশার শ্বাস ছাড়লো পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে বারংবার ঘোলাটে আকার ধারণ করেছে।ততক্ষণে কক্ষে হাজির হন একজন প্রহরী।

” সেনাপ্রধান মশাই আপনাকে সম্রাট স্মরণ করেছেন।”

” আমি আসছি আপনি যান।”

প্রহরী পুনরায় বেরিয়ে গেল কক্ষ ছেড়ে।সালমান সরু চোখে তাকিয়ে আছে সেনাপ্রধান রউফের দিকে।

” আপনি কি আমার শর্ত শুনবেন না?”

” কি শর্ত তোমার?”

” আপনি আজকের পর এই দুঃসাহস ভুলেও করবেন না।সম্রাট যা প্রতিশোধ নেওয়ার তিনি তা অক্ষরে অক্ষরে নেবেন আপনি শুধু শুধু..…”

” হয়েছে যাও যাও আমি আর এসবের মাঝে নেই দুশমনের সঙ্গে বসবাসের ইচ্ছে আমার ভাইয়ের থাকতে পারে কিন্তু আমার নেই।আমি।কালকেই চলে যাবো।”

সেনাপ্রধান রউফ মাথা দুলালেন।এরপর বেরিয়ে গেলেন কক্ষ ছেড়ে অন্তত এবার আর কোন অনিষ্ঠ না হয়।
.
সম্রাট তাসবীরের চোখে মুখে আতংকের কমতি নেই।তিনি আজ সভায় বসেছেন অথচ সভার কাজে তার মন নেই।বহিরাগত শত্রু তার রাজ্যে পা ফেলেছে।কত বড় স্পর্ধা হলে সম্রাটের কলিজায় হামলা করতে পারে।শত্রু কি যেনে বুঝেই এই কাজ করেছে নাকি তাকে মারতে এসেছিল।সম্রাটের দুটি প্রিয় প্রাণীর উপর হামলা হলো এক তার প্রাণ প্রিয় বেগম আরওয়া নূর অপরদিকে প্রিয় অবলা প্রাণী তারিম।উজির আতেফ পাশ থেকে সম্রাটের চিন্তিত মুখ পরখ করছিলেন।

” আপনি চিন্তা করবেন না সম্রাট আমাদের সেনাপ্রধান নিশ্চয়ই ঘাতককে খুঁজে বের করবেন।”

” চিন্তা করবো না বললেও যে চিন্তা হয় উজির মশাই।ইবনুল রাশীদের কোন খোঁজ পেয়েছেন?”

” আমাদের গুপ্তচর চারিদিকে ছড়িয়ে আছে এছাড়াও সম্রাট ওয়াহাব এবং তার পুত্র মেসবাহ তাদের হন্য হয়ে খুঁজছেন ইবনুল রাশীদ এবার আর পার পাবেন না।”

” মেসবাহ’র সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন উজির মশাই।তিনি এখন আমাদের আরেকটা বড় সুযোগ অন্তত যাই হোক ইবনুলের শাস্তি দুজনে মিলে দিতে চাই।”

” আপনি বরং আজ সভার কাজ বন্ধ রাখুন সম্রাট আজ সম্রাজীর পাশে আপনার থাকা জরুরি।”

উজির মশাইয়ের কথায় মিহি হাসলেন তাসবীর।

” এভাবে বলবেন না।প্রজারা ভাববে সম্রাট রাজকার্য ছেড়ে পত্নী সেবায় লেগেছেন।আপনি তো জানেন সম্রাটের কোন স্ত্রী নেই পরিবার নেই তাদের আছে রাজ্য প্রজা তরবারি।তবুও আমি আমার জহুরি চোখে বেগমের খেয়াল রেখেছি পরিস্থিতি বেগতিক হলে আমার নিকট সংবাদ নিশ্চয়ই আসবে।”

৫৮.
বন্দিদশা থেকে কয়েক মুহূর্তের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়েছে আবু আব্বাসকে।মেয়ের আহতের সংবাদ শুনে তার উচাটন মন ক্রমশ ব্যাকুলতায় ঘিরে ধরে।যত যাই হোক আরওয়া তার নিজের ঐশ্বর্য।মেয়েকে একবার দেখতে চাওয়ার অনুরোধ করলে এ নিয়ে আর দ্বিমত পোষণ করেননি তাসবীর তিনি সাময়িক সময়ের জন্য আব্বাস রাশীদকে মুক্তি দেন।আরওয়ার শিয়রে বসে মেয়ের মাথা হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি আরওয়া তখন নিশ্চুপ তাকিয়ে ছিলেন জানলার বাইরে।গত রাতে হঠাৎ আক্রমণে সবটা যেন তার মস্তিষ্কে গেঁথে গেছে জোরালো ভাবে।যতবার বিষয়টি ভুলতে চান ততবার মনে পড়ে যায় অন্ধকারের বিভীষিকাময় রাতের কথা।

” মা চুপচাপ আছো কেন?কথা বলো তোমার আম্মু কাঁদছেন।”

আরওয়া ঘাড় ঘুরিয়ে শাহাবার নিকট দৃষ্টি রাখলেন।মানুষটা কাঁদতে কাঁদতে নাক চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।অপরদিকে ইদ্রীস বিষণ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।লতা বেশ দূরে দাঁড়িয়ে আরওয়াকে দেখছে।

” এসব কী?তোমরা এত কাঁদছো কেন?মরে যাইনি আমি, বেঁচে আছি।”

” এভাবে বলছো কেন মা?রেগে আছো মনে হচ্ছে!”

পিতা আব্বাসের কথা মাথা তুলে বসলেন আরওয়া।হাতের তীব্র ব্যথা এখনো সারেনি তাই থুবড়ে পড়তে নিলে দ্রুত ধরে নেন আব্বাস রাশীদ।

” আমি রেগে নেই আমি দুশ্চিন্তা আছি।হঠাৎ কে আমাদের পেছনে পড়েছে কার অনিষ্ঠ করেছে আমার স্বামী কিংবা আমি। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এসব বড় ভাইজানের কাজ।”

পিলে চমকে উঠলেন শাহাবা।ছেলের প্রতি তার একটুও মায়া দরদ কাজ করে না।মা হিসেবে তিনি যেন অনুভূতি শূন্য হয়ে পড়েছেন।একের পর এক ছেলের নামে নোংরা অভিযোগ শুনতে শুনতে তার মনটা বিষিয়ে উঠেছে।তাই ক্রোধ নিয়ে বলেন,

” ইবনুল যদি আমার মেয়ের ক্ষতি করতে উঠে পড়ে লাগে তবে মা হিসেবে বলছি ইবনুলের জন্ম যেমন আমি দিয়েছি তার মৃত্যুর কারণ আমিই হবো।”

ইদ্রীস ছুটে এলেন শাহাবার নিকট আগলে ধরলেন তার মাকে।এভাবে উত্তেজিত হয়ে পড়লে অসুস্থ হয়ে পড়বেন তিনি।আব্বাস রাশীদ আরওয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত স্বরে।বলেন,

” খারাপ মানুষের যেমন শত্রু থাকে তেমন ভালো মানুষেরো শত্রু থাকে।ভালো খারাপ মিলে এ জগৎ।তাই তাসবীরের যে শত্রু নেই তা বললে চলবে না হয়তো আছে।আমার মুখে ভালো খারাপের কথা শুনে আবার তাচ্ছিল্য করিস না মা।আমার বয়স শেষ কৌঠায় পৌঁছে গেছে।এই বন্দিদশা থেকে আমার মুক্তি নেই আমি জানি।তবে আমি বুঝতে পারছি যৌবনের ভুল যার মাশুল জীবনব্যাপী দিলেও ফুরাবে না।তবে আমি নিশ্চিন্ত আমার একমাত্র মেয়ে আদর্শ পুরুষের স্ত্রী।তাসবীরকে কখনো ভুল বুঝবে না ছেলেটার জীবনের সবকিছু একদিকে আর তোমার ভাবনা অন্যদিকে।আমার স্ত্রী ছোট পুত্র বাকিদের খেয়াল আশা রাখছি সে রাখবে।এ দুনিয়ায় বিশ্বাসভাজন মানুষের বড্ড অভাব।”

আরওয়া প্রত্যুত্তর করলেন না।তিনি তাকিয়ে রইলেন জানলার বাইরে।কানের কাছে বার বার পিতা আব্বাসের বাক্যবাণ বাজছে।আরওয়ার পায়ের কাছে বসে থাকা ফুফুমা আসমা তখন অবজ্ঞা সহিত হাসলেন।ভাইয়ের মুখে এসব কথা শূলের ন্যায় তার শরীরে লাগে।এই মেয়ের জন্য তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে।এই আহমেদাবাদ রাজ্যের সাথে অলকপুরী রাজ্যে যখন সর্বপ্রথম যুদ্ধ ঘোষণা হয় তখন সেই যুদ্ধে প্রাণ হারায় তার স্বামী।অথচ নিয়তির কি বিচার আজ সেই রাজ্যে তিনি আত্মীয়তার সম্পর্কে এখানে উপস্থিত আছেন।তার কষ্টটা কেউ প্রাধান্য দিলো না।সারাটা জীবন তিনি বিধবা তকমা লাগিয়ে ঘুরেছেন।

” শুনুন ভাই বিশ্বস্ত মানুষ পিঠে ছুরি দেয় গোপনে সূক্ষ্ম চালে আর ছলে।শামুকের ন্যায় বাইরের খোলস তারা শক্ত রেখে ভেতরের চতুরতা লুকিয়ে রাখে।”

আরওয়া ভয়ার্ত চোখে তাকালো ফুফুমা আসমার নিকট।অতীত ভেবে বিষিয়ে উঠলো তার মন।বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে দেখেছে ফুফুমা কোন দিন তার ভালো কোন বিষয়ে ভালো ভাবে নেননি উলটো বাগড়া দিয়েছেন।তাই এই নিয়ে আর কথা বাড়ালেন না সম্রাজ্ঞী আরওয়া।

৫৯.
অন্ধকার কক্ষে টিমটিমে প্রদীপের আলো জ্বলছে।আরওয়ার নির্দেশ অনুযায়ী কক্ষে হালকা আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।তাসবীর পালঙ্কের এক কোনায় বসে আছেন।তার বাম হাত দখল করে নিয়েছে তাসবীর।ডান হাতে তীর লাগায় সেই হাত নাড়াতেও কষ্ট হচ্ছে আরওয়ার।আর তাই তো তাসবীর আজ নিজেকে রেখেছেন দূরে দূরে।কক্ষে এলে যে মানুষটা চিপকে লেগে থাকতো আজ সেই মানুষটার দূরত্ব বড্ড বিরক্তিকর অনুভূতি দিচ্ছে আরওয়াকে।তাসবীরের চোখে চোখে রেখে ভারিক্কি সুরে আরওয়া বলে,

” আপনি দূরে কেন তাসবীর?কাছে আসুন।”

” এ সময় দূরে থাকা শ্রেয়।”

“কিন্তু আমার যে ভালো লাগছেনা।”

” তোমার ভালো না লাগলেও তোমার হাত পায়ের জন্য আমার দূরত্ব ভালো। চোট লেগেছে তোমার এ কথা ভুলে যেও না।”

” আমি ভুলিনি।আপনি আমার পাশে আসুন প্রতিদিনের ন্যায় আপনার বুকে মাথা রাখতে চাই।”

” তোমার নড়াচড়া বেশি করা ঠিক হবে না।”

আরওয়া মিহিয়ে গেল।মনে বাসা বাঁধলো সুপ্ত রাগের।ডান হাতটা হালকা উল্টাতে জয়ের হাসি হাসলো সে।না তেমন ব্যথা নেই।পা নাড়িয়েও সন্তুষ্ট তিনি, শরীরের তীব্র যন্ত্রণা ইতোমধ্যে কেটে গেছে।

” আপনি আমার অনুভূতির দাম দিচ্ছেন না তাসবীর।আমার কাছে আসুন।”

বাধ্য হয়ে আরওয়ার পাশ ঘেঁষে শুয়ে পড়লো তাসবীর।তাতে অবশ্য আরওয়াকে পাত্তা দিলেন না তিনি। তাসবীর আজ নিজেকে সর্বোচ্চ দিয়ে সংযত রাখবেন।

” এই যে বীর মশাই নিজেকে দূরে দূরে রাখলে হবে?বংশের প্রদীপ জ্বলবে কি করে?”

তাসবীর বিস্মিত নয়নে তাকালো আরওয়ার পানে।হঠাৎ এসব কথা তুলছে কেন এই মেয়ে।

” তুমি ঘুমিয়ে পড় আরওয়া।আগামীকাল আমার অনেক কাজ আছে।চাচা এসেছেন তার সাথে রাজ্যের টুকটাক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

” দিনের কাজ দিনে করবেন আগে রাতের কাজ করুন।”

” রাতের আবার কি কাজ?”

” আপনি কিছুই বুঝেন না।নাকি বুঝতে চাইছেন না।”

তাসবীর নাক ফুলিয়ে তাকালো আরওয়ার পানে।এই মেয়েটা হাসছে কেন?

” ঘুমিয়ে পড়তে বলেছি আমি।”

আরওয়া একটুও পাত্তা দিল না তাসবীরের কথায় উলটো এগিয়ে এলো তার কাছে।গালের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে নিজের গাল ঘষলো বারংবার।তাসবীর নিশ্চুপ মেয়েটার কাণ্ডকর্ম দেখছে।তাসবীরের সারা মুখে উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দিল আরওয়া।তাসবীর নিজেকে বাইরে থেকে সংযত রাখলেও ভেতরটা নাজেহাল অবস্থা।আরওয়ার মাথার পেছনে হাত রাখতেই ছিটকে সরে আসে সে।

” ঘুমিয়ে পড়ুন সম্রাট আমার ঘুম পাচ্ছে।”

” ঘুমন্ত বাঘ’কে জাগিয়ে তুলে তুমি ঘুমাবে তা তো হচ্ছে না।”

” কি হচ্ছে না হচ্ছে এসব ভেবে আমার কাজ নেই বীর মশাই আমি ঘুমাবো।”

“তোমার ধ্বংস তুমি নিজেই ডেকে এনেছো এতে আমার দোষ নেই।”

আরওয়া কিছু বলতে চাইলে তাসবীর তার অধর নিজ আয়ত্তে নিয়ে নেয়।নিষ্প্রভ কক্ষে আরওয়ার ভয়ে কাতর বিধুর মুখখানি দেখে গভীর ঘোরে পড়ে যায়।বিবাহিত সম্পর্কের পূর্ণতা তবে এই রজনীতে হতে চলেছে।আরওয়া একটা সময় নিজেকে মানিয়ে নেয় তাসবীরের দুহাত আঁকড়ে ধরে নিজের নরম হাতের সাহায্যে।রাত যত গভীর হয় দুজনের সম্পর্ক তত গভীরতায় তলিয়ে যায়।তাসবীরের অগাধ ভালোবাসার ছোঁয়ায় নিজেকে স্বেচ্ছায় বিলিয়ে দেন আরওয়া।
তারপরের দিনগুলো কেটে গেলো স্বপ্নের মতো সুন্দর।তাসবীরের যত্নে ভালোবাসায় নিজেকে বড্ড ভাগ্যবতী মনে হতে থাকে আরওয়ার।অপরদিকে তাসবীরের পরিবারের এত আদর মায়া আগলে রাখা সব মিলিয়ে জীবনটা তখন পরিপূর্ণ কানায় কানায়।তাসবীর নিজেও আরওয়াকে নিজের সহধর্মিণী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।এই মেয়েটা তাকে মানসিক দিক দিয়ে কখনো ভেঙ্গে দেয়নি বরং প্রতিটি পদক্ষেপে দিয়েছে প্রবল সাহস প্রেরণা।
ভোরের আলো ফুটে গেছে প্রহরী দাসীরা নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।সম্রাট তাসবীর তখন সভায় বসবেন বলে প্রস্তুত হচ্ছিলেন এমন সময় প্রাসাদের কানায় কানায় পৌঁছে গেল এক বিভীষিকাময় বার্তা। “আব্বাস রাশীদ মা/রা গেছেন তাকে কেউ কারাগৃহে বিষ দিয়ে হ/ত্যা করেছেন নাকে মুখে মানুষটার ফেনা দেখা যাচ্ছে।নিশ্চয়ই এই হ-ত্যাকান্ড কোন পরিকল্পিত চাল।”

#চলবে___

#বিধুর_রজনী
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২৫ ‘বর্ধিত অংশ’]
___________________
৬০.
তাসবীর তাজ্জব বনে বসে আছে রাজসভায়।কি হচ্ছে কি হচ্ছিল সবকিছু যেন তার মাথার উপর দিয়ে গেল।আব্বাস রাশীদের মৃত্যু তিনি সহজে হজম করতে পারছেন না তার থেকেও বড় কথা তিনি কখনোই চাননি এভাবে তার জীবনে মৃত্যু আসুক।বন্দিশালায় এত সতর্কতার মাঝেও কে তার খাওয়ারে বিষ মেশালো সে বিষয়ে অবগত নন তাসবীর।একই পাত্রে বাকি বন্দিদের খাওয়ার রান্না হয়েছিল সেই রান্না গ্রহণে কারো কোন সমস্যা দেখা যায়নি তাহলে নিজের খাওয়ারে কি তিনি নিজেই বিষ মিশিয়েছেন?

” আপনার কথা মতো সকল রাঁধুনি’কে জিজ্ঞাসা বাদ করেছি কিন্তু সবারি এক মত একই রান্নার খাবার তো বাকিরাও খেয়েছে কই তাদের তো কিছু হয়নি।”

উজির আতেফের কথায় মাথা দুলালেন তাসবীর।দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বলেন,

” সেনাপতি মশাইকে বলুন এবার যেন পাতালের প্রহরীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।”

” তাদের সবাইকে চাবুকের সাহায্যে প্রহার করা হয়েছে র/ক্তা/ক্ত অবস্থায় কাঁদতে কাঁদতে একটাই কথা বলেছে তখন তারা ঘুমে ছিল এই বিষয়ে তারা কিছুই জানে না।”

” কেউ জানে না তাহলে কি আমি জানি?আমি মেরেছি তাকে।”

সম্রাট তাসবীর উত্তেজিত হয়ে উঠলো।ক্রোধে তার শরীর কাঁপছে।বাকি সভাসদগন সম্রাট তাসবীরের নিকট তাকিয়ে যেন তামাশা দেখছে।

” আমার মনে হচ্ছে তিনি নিজের মৃত্যু নিজেই গ্রহণ করেছেন।হয়তো তার কাছে বিষাক্ত কোন জড়িবুটি ছিল।”

” আমার শর্তের কথা ভুলে গেলেন উজির মশাই।এমন কিছু আঁচ করতে পেরে আমি আগেই আব্বাস রাশীদকে শর্ত দিয়েছিলাম যদি তিনি আত্মহত্যা করেন তবে আমার কাছে বন্দি থাকা তার পরিবারের একটা সদস্যও বাঁচবে না আমার জীবদ্দশায় সবচেয়ে নিকৃষ্ট মৃত্যু আমি তাদের দেব।এরপরেও আব্বাস রাশীদের এমনটা করার কোন প্রশ্নই আসেনা।

“আমার তো মনে হচ্ছে সর্ষের মধ্যেই ভূত সম্রাট।”

” আমারো তাই মনে হচ্ছে তবে আব্বাস রাশীদকে মেরে তাদের কি লাভ?”

” সে কথা আমার বুঝে আসছে না সম্রাট।আপনি হয়তো রাজ্য পুনরায় আব্বাস রাশীদকে ফিরিয়ে দিতে পারেন তার ভয়ে অলকপুরীর উজির হাযম এমনটা করছেন না তো?”

” উজির হাযমকে আমি অবিশ্বাস করতে চাই না।তবে আমার সন্দেহের তালিকায় কেউ বাদ যাবে না।উজিরের পেছনে গুপ্তচর লাগাও।”

” যথা আজ্ঞা সম্রাট।”

স্বামীর প্রতি বিতৃষ্ণা জাগলেও কখনোই তার মৃত্যু কামনা করেননি শাহাবা।হঠাৎ এমন এক দুঃসংবাদে তার মস্তিষ্ক অচল করে দিয়েছে।শ্বাস প্রশ্বাসের ক্রিয়া যেন বন্ধ হওয়ার উপক্রম।তিনি নিঃসহায় চোখে তাকিয়ে আছেন ইদ্রীসের পানে।ছেলেটা কেমন হাউমাউ শব্দে কাঁদছে অথচ একটা সময় বাবার অরাজকতায় বিষিয়ে উঠেছিল সে।পাশে আহাজারি করছেন ফুফু আসমা।তার প্রতিটি আহাজারিতে তাসবীরকে লানত দিচ্ছেন।আরওয়ার সঙ্গে দেখা হলো না অনেকক্ষণ হলো।অবশ্য দেখা করবেন কি করে মেয়েটা জ্ঞান হারিয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে পালঙ্কে।শাহাবা উঠে দাঁড়ালো ছুটলো সে আরওয়ার নিকট।

বালিশের কোলে মুখ গুজে হুহু শব্দে কাঁদছে আরওয়া।পিতা হারানোর শোক এত সহজে তো মন থেকে কাটবে না।সম্রাট আব্বাস রাশীদ যার ভয়ে দাস-দাসী, প্রহরী,পেয়াদা-পাইক, সভাসদস্য,প্রজারা তটস্থ থাকতো আজ সেই মানুষটা নেই।সেই মানুষটাকে কেউ খুন করেছে কত বড় স্পর্ধা!আরওয়ার কান্নার গতি থেমে নেই বরং বাড়ছে লতা আজ আরওয়াকে সান্ত্বনা দেওয়ার পরিবর্তে নিজে এক কোণায় বসে কাঁদছে।সম্রাজ্ঞী বিনিতা মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে স্থির হতে বলছে শাহাবা কক্ষের দ্বারে এসে নিজের চোখ মুছে নেন আরওয়ার মাথা তুলে নিজের ঘাড়ে তুলে নেন।শাহাবার নিকট চোখে চোখ রেখে ফুঁপিয়ে উঠলেন সম্রাজী আরওয়া।

” কান্না থামাও অনেক কেঁদেছো।কান্নার মাঝে কোন সমাধান নিহিত নেই।তোমার বাবার জন্য দোয়া করো এ ছাড়া আর পথ নেই।”

” এসব বলছেন কেন মা কে আমার বাবাকে মেরেছে তার খোঁজ কি আমরা পাব না?”

” যদি পাওয়ার থাকে তাসবীর বাবা নিশ্চয়ই এর সমাধান বের করবে।তুমি চোখ মুছে নিজেকে প্রস্তুত করে নাও শেষ বারের মতো তোমার বাবাকে দেখার প্রস্তুতি নাও”

ধীরে ধীরে সময়টা পেরিয়ে গেল।অলকপুরী রাজ্যে আব্বাস রাশীদকে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।সেনাপতি ফারুক উজির হাযম সহ অনন্য সভাসদদের কান্না অবাক চোখে দেখেছিলেন তাসবীর।আব্বাস রাশীদের মৃত দেহের পাশে হাঁটু মুড়ে কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়েন উজির হাযম এতটা বছর এই মানুষটার সহচর ছিল সে জীবনের তাগিদে হাজার মানুষের জীবনের প্রয়োজনে গাদ্দারি করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি কিন্তু মায়া,মায়াটা কাটাতে এখনো পারেননি যে তাইতো শেষ বিদায়ে ভেঙ্গে পড়লেন তিনি।সম্রাট তাসবীর অবাক চোখে সবটা দেখছিলেন একি সত্যি কারের কান্না নাকি সবটাই নাটক।উজির আতেফকে তিনি অবিশ্বাস করতে চাননা কিন্তু তবুও বিশ্বাস নামক শব্দটাকে আঁকড়ে ধরে থাকলে যে চলবে না।

আব্বাস রাশীদের দাফন শেষে পুনরায় নিজের রাজ্যে ফিরে গেলেন তাসবীর।তার সঙ্গে পুরোটা সময় ছিল ইদ্রীস উজির আতেফ সহ সেনাপতি মশাই।রাজ্যে রাজ্যে আব্বাস রাশীদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়েছে বাতাসের বেগে যার হেতু ধরে ইবনুল রাশীদ হয়তো আসবে নিজের বাবাকে শেষ দেখা অন্তত দেখবে কিন্তু ইবনুল রাশীদের আগমন ঘটেনি তবে তিনি কোথায়?কী অবস্থায় আছেন?মনের কোণে নানান প্রশ্ন ভীড় জমালো তাসবীরের তবুও বাইরে থেকে তিনি নীরব।

সকল ব্যস্ততার অবসান ঘটিয়ে সবটা নীরব হয়ে গেলো আহমেদাবাদ প্রাসাদের।তাসবীর সারাটা দিন কাটিয়ে নিজের কক্ষে প্রবেশ করার সু্যোগ পেলো গহিন রজনীতে।আরওয়া তখন পালঙ্কের এক কোণে বসে চিন্তায় মগ্ন।তাসবীর দ্বার বন্ধ করে পাঁজা কোলে তুলে নিলেন আরওয়াকে।তাসবীরের দেখা পেয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে উঠলেন তিনি।অভিযোগের সুরে বলে,

” এমনটা কেন হলো?এমনটা না হলেও পারতো।”

” আপনি দুর্বল হয়ে পড়েছেন এখন ঘুমের প্রয়োজন।”

” ঘুম!তা কি আর আমার চোখে নামবে।আমি আমার বাবার হ/ত্যা কারীর খোঁজ চাই সম্রাট।অন্তত আমি জানতে চাই… ”

তাসবীর আরওয়াকে পালঙ্কে শুইয়ে দিলো।নরম তুলতুলে চাদর গায়ে জড়িয়ে আরওয়ার ঠোঁটে তর্জনীর আঙুল দিয়ে বলে,

” হুসসস আমি আর কিছু শুনতে চাই না।যা করার আছে আমি করবো আমার মনে মনেই আছে।তুমি ঘুমিয়ে পড়ো আরওয়া।”

” আমার বাবাকে আপনি ক্ষমা করেছেন তাসবীর?বলুন না ক্ষমা করেছেন?”

তাসবীর থমকে গেল হতাশার শ্বাস ছেড়ে মাথা নেড়ে বলে,

” করেছি ক্ষমা যা হয়েছে যা হবে তা আমাদের তকদীরে ছিল।তুমি এবার চুপ করো।”

” আমায় একটু জড়িয়ে ধরবেন সম্রাট মশাই।খুব শক্ত করে এতটাই শক্ত যতটা শক্ত হলে আপনার স্পর্শে আমি একূলওকুল ভুলে যাই।”

এ যেন নিঃসংকোচ আবেদন।তাসবীর জড়িয়ে নিলো মেয়েটাকে।রেশমি চুল গলিয়ে বেশকিছুক্ষণ বিলি কেটে দিল।একটা সময় ঘুমের সাগরে পাড়ি জমালো আরওয়া।তাসবীর সেই সুযোগে আরওয়ার সারা মুখে উষ্ণ স্পর্শে উত্তাল হলো।তাসবীরের ছোঁয়ায় আরওয়া তখন কেঁপে উঠছিল।তাসবীর নিজের অবাধ্য অনুভূতিকে সংযত রেখে ঘুমোনোর চেষ্টা চালালো তবে আফসোস কিছুতেই ঘুম নামলো না দু চোখে।

প্রত্যুষের আলো ফুটতে তাসবীরের তন্দ্রা কেটে যায়।পাশে হাঁটু মুড়িয়ে বসে থাকা আরওয়ার পানে চেয়ে বেশ বিচলিত হয়ে পড়ে।মেয়েটার চোখ মুখ রক্তিম ভাব ধারণ করেছে বেশ খানিকক্ষণ যাবৎ কান্নার ফলে যে এই পরিণতি তা বেশ সহজেই বুঝতে পারলো তাসবীর।

” কী হয়েছে আরওয়া?শরীর খারাপ লাগছে?”

দু’পাশে মাথা নাড়ালো আরওয়া।রক্তিম চোখের কাতর চাহনিতে চেয়ে রইলো বেশ কিছুক্ষণ।সম্রাট তাসবীর ততক্ষণে উঠে বসেছে সম্রাজী আরওয়া এগিয়ে এসে তার নরম হাতে প্রাণ প্রিয় স্বামীর দু’গাল স্পর্শ করে।হঠাৎ ছোঁয়ায় খানিকটা বিচলিত হয়ে উঠেন তিনি।

” কি হয়েছে?”

” আমার ভয় লাগছে ভীষণ ভয়।”

” কিসের ভয়?এমন করছো কেন?”

” জানি না,জানি না আমি কিসের ভয়।”

” নিজেকে শান্ত করুন এমন উচাটন হবেন না আল্লার উপর ভরসা রাখুন।”

আরওয়া স্থির নয়নে তাকিয়ে থেকে পুনরায় সশব্দে কেঁদে উঠলেন। এই সময়টা তাসবীরের কাছে বড্ড পীড়াদায়ক আরওয়ার আহাজারি তার মোটেও ভালো লাগে না।তাদের সুখ শান্তির আদলে ঢল নেমেছে দুঃখ যন্ত্রণার।

৬১.
অলকপুরী রাজ্যে আজ আব্বাস রাশীদের জন্য দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।এর সাথে প্রজাদের ভোজনের ব্যবস্থা করা হয়।প্রত্যুষে শাহাবা এবং ইদ্রীস রাশীদকে সাথে নিয়ে আহমেদাবাদ থেকে রওনা হন সম্রাট তাসবীর।পুত্র তাসবীরের এসব আয়োজনে কখনো দ্বিমত পোষণ করেননি পিতা আবু সিদ্দীক।বরং পুত্রের এমন দায়িত্বে তিনি সন্তুষ্ট।আরওয়া আজ একা কক্ষে আগের মতো হাসি খুশির রঙ তার জীবন থেকে মুছে গেছে সম্রাট তাসবীরের প্রতি তার বিরক্তি চলে এসেছে পিতা আব্বাসের মৃত্যুর ষষ্ঠ দিন আজ।অথচ এতটা দিনেও আব্বাস রাশীদের মৃত্যুর জট খুলতে ব্যর্থ তাসবীর।আরওয়ার প্রতিটি প্রার্থনায় একটাই সুর আব্বাস রাশীদের মৃত্যুর হেতু তিনি জানতে চান।ঝুট ঝামেলা যু/দ্ধহীন ফাঁকা ময়দানে কে কৌশল খাটিয়ে মারলো তাকে, প্রশ্ন তো মনে থেকেই যায়।

” আসবো সম্রাজী?”

ফুফুমা আসমার কণ্ঠে চমকে যান আরওয়া দ্রুত পা চালিয়ে এগিয়ে যান দ্বারের সম্মুখে।

” এভাবে বলছেন কেন ফুফুমা?আপনি আমার কক্ষে যখন ইচ্ছে আসবেন এতে আবার এভাবে বলার কি আছে?”

” যত যাই হোক আপনি এই আহমেদাবাদের সম্রাজী সম্রাটের সমতুল্য স্থান আপনার আপনাকে কুর্নিশ না করে অনুমতি না নিয়ে এই কক্ষে প্রবেশ করা যে অনুচিত।”

ফুফু মা আসমার মিহিয়ে যাওয়া কণ্ঠে তীক্ষ্ণ খোঁচানো কথা গায়ে লাগালেন না আরওয়া।তিনি হাত টেনে কক্ষে আনলেন আসমাকে এবং পালঙ্কে বসিয়ে ক্ষান্ত হলেন।

” মুখটা শুকনো লাগছে যে কিছু মুখে তুলেননি ফুফুমা?”

” এ প্রাসাদে বসে রাজার হালে থেকেও এই খাদ্য বস্তু আমার তৃপ্তি মেটাবে না মা।”

” কেন? এভাবে বলছো কেন?”

” আমি সারাজীবন তোমাকে অপবাদ দিয়ে এসেছি তাই তুমি আমায় খারাপ ভাবতেই পারো।এই আহমেদাবাদ রাজ্য দখলের যুদ্ধে প্রাণ যায় আমার স্বামীর অথচ সেদিনে তোমার জন্ম।
আর আজ ভাগ্যক্রমে এই রাজ্যের সম্রাটের স্ত্রী তুমি।এখন তুমি সম্রাজী।কিন্তু ভেবে চিনতে দেখো যে তোমার পিতাকে হত্যা করেছে তাকে তুমি চোখ বুঝে বিশ্বাস করো।সেদিন তোমার পিতা মারা গেলেন আজ যে তোমার মা-ভাই মারা যাবে না তার নিশ্চয়তা কী?তাসবীর হয়তো সুযোগ বুঝে আড়ালে নিয়ে তোমাদের হত্যা করবেন এমনটাও হতে পারে।”

” ফুফুমা!এসব অলক্ষুণে কথা কেন বলছেন?”

” আমি কখনো সত্য কথা পেটে বেঁধে রাখিনা তোমার পিতা হত্যাকারী তোমার স্বামী।একে একে তোমাদের ধ্বংস করবে সে আর তাকে কৌশলে কার্য সিদ্ধির সময় সুযোগ সবটাই তুমি করে দিচ্ছ আরওয়া।”

” ফুফুমা আপনি এখন আসতে পারেন।আমি কখনই আমার স্বামীকে অবিশ্বাস করবো না।”

” ঠিক আছে তবে সময় সবটা বলবে।তোমার পেছনে শানিত তরবারির সাহায্যে তোমার বিশ্বস্ত স্বামী তোমায় কতল করবে।”
#চলবে___