পারলে ঠেকাও পর্ব-০২

0
463

#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ২
#লেখিকাঃদিশা_মনি

বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর মধুজার বান্ধবী ও কাজিনরা তাকে ঘিরে ধরে। মধুজার বেস্ট ফ্রেন্ড আরহা তাকে বলে,
‘শেষমেষ এই পাগলটাকেই বিয়ে করে নিলি। তোর জন্য খারাপ লাগছে। না জানি বিয়ের পর এই পাগলা ডাক্তারের কত পাগলামী তোকে সহ্য করতে হয়।’

মধুজা এমনিতে ভয়ে আধমরা অবস্থা। তার উপর এই ধরনের কথা শুনে সএ আরো বেশি মন খারাপ করে। আরহা একটু থেমে বলে,
‘যাই বলিস তোর বর দেখতে কিন্তু খুব হ্যান্ডসাম। আমি তো দেখে ক্রাশ খেয়ে গেছি।’

মধুজা বিড়বিড় করে বলে,
‘আর আমি খেয়েছি বাঁশ।’

‘কিছু বললে?’

আচমকা কারো কন্ঠস্বর শুনে ঝিমিয়ে যায় মধুজা। চোখ ঘুরিয়ে বাম দিকে তাকাতেই দেখতে পায় অক্ষর বুকে হাত গুজে দাড়িয়ে আছে। অক্ষরকে দেখে মধুজার সব কাজিনরা ফিসফিস শুরু করে। আরহা একটু দুষ্টু টাইপের মেয়ে। তার মাথায় একটা শ’য়তানী বুদ্ধি আসে। তাই সে অক্ষরকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে থাকে,
‘জানেন আমাদের মধু না খুব কিউট একটা মেয়ে। ও এত কিউট যে স্কুল,কলেজ এমনকি এখনো যেই ছেলে ওকে দেখে সেই ওকে বিয়ে করতে চায়। আপনাকে তো বলাই হয়নি তোর অনেকগুলো বয়ফ্রেন্ডও ছিল৷ ওর ফাস্ট কিস, ফাস্ট হাগ এমনকি,,,’

আরহার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই মধুজা চিৎকার করে বলে,
‘এই একদম মিথ্যা কথা বলবি না। আমি এখনো পিওর ভার্জিন।’

মধুজার কথা শুনে সবাই মুখ টিপে হাসতে থাকে। মধুজাও ঝোকের সবে এমন কথা বলে দেয়ায় লজ্জা পায়। অক্ষর মধুজার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
‘বিয়ের পরেও কি পিওর ভার্জিন থাকতে চাও?’

কথাটা বলে মধুজার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে অক্ষর। মধুজা মনে মনে বলে,
‘এই পাগলা ডাক্তারটা দেখছি খুব অসভ্য। আব্বু এ কার সাথে বিয়ে দিল আমায়। এর সাথে আমি কিছুতেই সংসার করব না। পারলে ঠেকাও আমাকে।’

মধুজা দৌড়ে তার বাবা মিলন হাসানের সামনে গিয়ে উপস্থিত হয়। মিলন হাসান অতিথিদের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত ছিল। মধুজা সবার সামনে কিছু বলতে পারছিল না। তাই মিলন হাসানকে বলে,
‘আব্বু, তুমি একটু এদিকে এসো তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।’

মিলন হাসান বিরক্ত হন খানিকটা।
‘এখন আবার তোমার কি কথা? যাও বিদায় নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নাও।’

মধুজার এবার বেশ রাগ হয় তার বাবার উপর। তাই সবার সামনেই বলে দেয়,
‘আমি কোন বিদায় টিদায় নিবোনা। আমি শ্বশুর বাড়িও যাবো না। এই বাড়িতেই থাকব।’

মধুজার কথা যেন ছোটখাটো বো’মের মতো বিস্ফো’রিত হয় সকলের মাঝে। মুহুর্তেই সবার মাঝে একটা কথা ছড়িয়ে পড়ে যে,
‘পাত্রী বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ি যেতে চাইছে না! নিশ্চয়ই ছেলেকে ঘর জামাই করে রাখতে চায়।’

৩.
মধুজা নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে পড়ে। কে কি বলছে না বলছে তাতে মধুজার কিছু যায় আসে না। মধুজা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে যাই হয়ে যাক না কেন সে ঐ পাগলা ডাক্তারের সাথে গিয়ে থাকতে পারবে না।

অক্ষরের কানেও এই কথাটা পৌছে গেছে যে তার নববিবাহিতা স্ত্রী শ্বশুর বাড়ি যেতে ইচ্ছুক নয়। তাই ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। কথাটা কানে আসতেই অক্ষরের মেজাজ আবার গরম হয়ে যায়। অক্ষর নিজের হাতঘড়িতে সময় দেখে নেয়। এখন বাজে ৭ঃ২০। ৮ টার মধ্যে তাকে হাসপাতালে পৌছাতে হবে। অনীল চৌধুরী মিলন হাসানের সাথে এই বিষয়ে কথা বলছেন। মিলন হাসান নিজের মেয়ের ব্যবহারের জন্য বারবার ক্ষমা চাচ্ছেন।

এসবের মাঝে অক্ষর রেগে গিয়ে আরহার সামনে আসে। আরহা অক্ষরের এই রাগী রূপ দেখে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। অক্ষর আরহার কাছে জানতে চায়,
‘মধুজার কোন রুমে আছে?’

আরহা ভয়ে কাপা কাপা হাতে দেখিয়ে বলে,
‘দোতলায় সবার বাম দিকের রুমটায়।’

অক্ষর গটগট পায়ে সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে যায়। মধুজার রুমের সাথে এসে দরজা ধাক্কাতে থাকে। দরজা ধাক্কিয়ে বলে,
‘এই মেয়ে দরজা খোলো বলছি। নাহলে দরজা ভে’ঙে ভেতরে ঢুকতে বাধ্য হবো। কি মনে করেছ টা কি তুমি? তোমার অনেক বদমাইশি আমি সহ্য করেছি। এবার সব সহ্যের সীমা পার হয়ে যাচ্ছে।’

মধুজা অক্ষরের কথায় ভয় পেয়ে যায় খানিকটা। কিন্তু সেও আজ ঠিক করে নিয়েছে যাই হয়ে যাক না কেন দরজা খুলবে না। তাই কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে থাকে।

অক্ষর এবার প্রচণ্ড রেগে যায়। দরজা জোরে জোরে ধা’ক্কাতে শুরু করে। অনেকেই মধুজার রুমের সামনে এসো জড়ো হয়ে যায়। অনীল চৌধুরী অক্ষরকে ধমক দিয়ে বলে,
‘এসব কি অভদ্রতা অক্ষর? সরে এসো বলছি।’

রাগে অক্ষরের ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে। নিজের বাবার কথাতেও কর্ণপাত করে না সে। আজ সে এক অন্যরকম রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। যেন সকলে চ্যালেঞ্জ ছু’ড়ে দিয়েছে,
‘আজ আমি আমার বউকে নিজের সাথে নিয়ে যাবোই। পারলে ঠেকাও আমাকে।’

৪.
জোরে দরজা ধাক্কানোর শব্দে ভয় পেয়ে যায় মধুজা। তার আর বুঝতে বাকি নেই অক্ষর প্রয়োজনে দরজা ভেঙে হলেও তাকে নিয়ে যাবে। তাই মধুজা ভয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ে। ভয়ে কাপতে কাপতে সামনে এগোয়। আল্লাহর নাম নিয়ে দরজাটা খুলে দেয় মধুজা।

দরজা খুলতেই মধুজার নজরে আসে অক্ষরের রাগী চেহারা। ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে মধুজা। কিছু বলতে উদ্যত হয় ঠিক সেই সময়ই আচমকা অক্ষর সবার সামনে মধুজাকে কোলে তুলে নেয়। মধুজা বিস্ময়ে থ মে’রে যায়। মনে মনে বলে,
‘এই পাগলা ডাক্তারটার কি কোলে তোলার অসুখ আছে নাকি? যখনই দেখ কোলে তুলে নেয়।’

এদিকে প্রকাশ্যে কিছু বলতে গিয়েও অক্ষরের রাগী চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলার সাহস হয়ে ওঠেনা মধুজার। সে শুধু একবার নির্বিকার চিত্তে সামনের দিকে তাকায়। সবাই হা করে অক্ষরের কীর্তিই যেন দেখে যাচ্ছে।

এতগুলো মানুষের সামনাসামনি অক্ষর তাকে কোলে নিয়েছে ভাবতেই লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করল মধুজার। অক্ষরের যেন এসব দিকে কোন খেয়ালই নেই। সে খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আব্বু আমি ওকে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। তুমি বাকি সব আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে চলে এসো।’

আর কোন কিছু না বলে মধুজাকে কোলে নিয়েই হাটতে শুরু করে দেয় অক্ষর। সবাই তাদের দিকেই তাকাচ্ছিল। মধুজা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নেয়। অক্ষরকে মনে মনে হাজারটা গালি দেয়।

অক্ষর গাড়ির সামনে এসে মধুজাকে কোল থেকেই নামিয়ে দেয়। নিজে গাড়িতে উঠে পড়ে মধুজার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘দাড়িয়ে না থেকে চুপচাপ গাড়িতে উঠে পড়ো। তোমাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আমাকে আবার হসপিটালে ফিরে যেতে হবে।’

মধুজা কিছু বলতে যাবে তখন আবার অক্ষরের রাগী চেহারা দেখে কিছু বলতে পারে না। ভদ্র মেয়ের মতো অক্ষরের কথা অনুযায়ী গাড়িতে বসে পড়ে। অক্ষর গাড়ি চালানো শুরু করে।

মধুজা অনেক কষ্টে নিজের মনে সাহস সঞ্চার করে বলে,
‘আপনি কি সত্যি পাগল নাকি?’

মধুজার প্রশ্নটা শুনে অক্ষরের ভ্রু কুচকে যায়। সে গম্ভীরভাব নিয়ে বলে,
‘তোমার কেন আমাকে পাগল মনে হচ্ছে?’

‘পাগল না হলে কেউ এভাবে সবার সামনে একটা মেয়েকে কোলে তুলে নেয়?’

‘একটা মেয়ে বলছ কেন তুমি আমার বিবাহিতা স্ত্রী। তোমাকে সবার সামনে কোলে নিব, পারলে কিসও করব। কারো কিছু বলার নাই।’

‘ইশ কি নির্লজ্জ আপনি। এরকম কথা বলতে আপনার মুখে আটকাচ্ছে না?’

অক্ষর আচমকা গাড়ি থামায়। পিছনে ফিরে মধুজার দিকে তাকায়। অক্ষরের চাহনিতে ইতিমধ্যেই মধুজার বুকে ঢিপঢিপ ঢিপঢিপ শব্দ করতে শুরু করেছে। অক্ষর বাকা হেসে বলে,
‘নিজের বউয়ের কাছে যদি লজ্জা পাই তাহলে কোনদিন বাবা ডাক শুনতে পারব না। এখন বেশি কথা না বলে নেমে পড়ো। আমার বাড়ি এসে গেছে।’

মধুজা আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে যায়। গাড়ি থেকে নেমে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয় সে।
‘উফ অবশেষে পাগলা ডাক্তারের গাড়ি থেকে নামলাম।’

অক্ষর আবার গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যায়। ঘড়িতে সময় দেখে ইতিমধ্যে ৭ঃ৫০ বেজে গেছে। খুব দ্রুত তাকে হসপিটালে পৌছাতে হবে। তাদের বাড়ি থেকে অক্ষরের হসপিটাল বেশি দূরে নয়। গাড়িতে করে ৫ মিনিটেই পৌছানো সম্ভব। মধুজার বাড়িও বেশ কাছাকাছি।

মধুজা অক্ষরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলতে থাকে,
‘পাগলা ডাক্তার একটা। আমাকে এভাবে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। এখন আমি এই অচেনা অজানা বাড়িতে একা কিভাবে যাবো? আমি কিছুতেই এই পাগলা ডাক্তারের সাথে সংসার করবো না। পারলে ঠেকাও।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨