পারলে ঠেকাও পর্ব-১৪

0
278

#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মধুজা জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে অক্ষরের সামনে আবিষ্কার করে। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে মধুজা বুঝতে পারে সে এখন হাসপাতালে আছে। জ্ঞান হারানোর আগের মুহুর্ত মনে পড়তেই মধুজা ভয়ে আতকে ওঠে। অক্ষর মধুজার ভয়ার্ত মুখ দেখে বুকে হাত গুজে বলে,
‘এত ভয় নিয়ে সাংবাদিক হওয়া যায়না হানি। আবার এতটা দুঃসাহসী হওয়াও ভালো না।’

মধুজা বলার মতো কিছু খুজে পায়না। ড্যাবড্যাব করে অক্ষরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
‘কি ভাবছ আমি এখানে কি করছি? আমি তোমাকে দেখতে এসেছি। তুমি এখন বার্ন হসপিটালে আছো। তোমার ডান হাতের অনেকটা পুড়ে গেছে।’

মধুজা নিজের হাতের দিকে তাকায়। ব্যান্ডেজ দেখে বুঝতে পারে কেন হাতটা এতক্ষণ জ্ব’লছিল। মধুজা শুকনো মুখ করে নেয়। অক্ষর বেশ রাগী গলায় বলে,
‘এখন কি বাড়ি ফিরবে?’

‘হ্যা চলুন।’

‘যাবো তো বটেই। বাট তার আগে একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো হানি, তুমি সাংবাদিক হয়েছ এটাতে আমার কোন আপত্তি নেই। এটা সম্পূর্ণ তোমার ইচ্ছা। তার মানে এই নয় যে, তুমি এতটা কেয়ারলেস হয়ে যাবে৷ এটাই তোমার প্রথম এবং শেষ সুযোগ। নেক্সট টাইম যদি এরকম কিছু হয় তাহলে তোমাকে আর আমি এই পেশায় যুক্ত থাকতে দিবো না। মাইন্ড ইট।’

‘আপনি এত হাইপার হবেন না পা,,, না মানে লাবিব কোথায়? ও তো আমার সাথে ছিল।’

‘তোমার ক্যামেরাম্যানের কথা বলছ? তারও চিকিৎসা চলছে। দুটো পা’ই পুড়ে গেছে। বেশি সাহসিকতা দেখাতে গেলে এমনই হবে। হোয়াট এভার, এখন তুমি চলো।’

অক্ষর সাবধানে মধুজাকে তুলে নেয়। মধুজাকে খুব সন্তর্পণে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যায়। মধুজাকে গাড়িতে তুলে গাড়ির দরজা বন্ধ করে বলে,
‘আজ থেকে আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত তুমি সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকবা। আমি কিন্তু তোমার কোন কথা শুনব না। আর যদি আমার কথা না শোন,,’

‘তাহলে কি করবেন?’

অক্ষর মধুজার ওষ্ঠদ্বয় নিজের দখলে করে নেয়। মধুজা অক্ষরের স্পর্শে কেপে ওঠে। গাড়ির বাইরে থেকে কেউ দেখতে পারে বুঝতে পেরে অক্ষর দ্রুত সরে আসে।
‘বুঝেছ তো আমার কথার অবাধ্য হলে আমি কি করতে পারি।’

মধুজা বিড়বিড় করে বলে,
‘এমন হলে তো আমি আরো বেশি করে অবাধ্য হবো।’

অক্ষর স্পষ্ট শুনতে পায় কথাটা৷ নিজের কানকেও বিশ্বাস হচ্ছিল না তার। মধুজার হঠাৎ এই পরিবর্তন বেশ ভাবাচ্ছে তাকে। তাহলে কি হানিও ভালোবেসে ফেলল তার পাগলা ডাক্তারকে?

২৭.
বাড়িতে পৌছে মধুজা দেখতে পায় মমতা চৌধুরী দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে বসে আছেন। মধুজাকে দেখামাত্রই তিনি ছুটে এসে বলেন,
‘তুমি ঠিক আছো তো? কতটা পু’ড়ে গেছে।’

‘আপনি চিন্তা করবেন না, আমি ঠিক আছি। সামান্যই পু’ড়ে গেছে।’

‘তুমি এতটা বেখেয়ালি কেন? আমি এমন জানলে তোমাকে সাংবাদিকতা করতে দিতাম না।’

মধুজা মুখটা দুঃখী দুঃখী করে নেয়। তখন মমতা চৌধুরী তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘মন খারাপ করো না। তোমার ভালোর জন্যই বলছি। রাওনাফ খাবার নিয়ে আয়। মধুজা তুমি তো সকাল থেকে কিছু খাওনি। এই অবস্থায় তোমার ভালো খাবার খাওয়া প্রয়োজন। তাহলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারবা।’

অক্ষর মমতা চৌধুরীকে বলে,
‘আম্মু ওর কিছু মেডিসিন আছে সেগুলো টাইমলি দিতে হবে। তুমি একটু খেয়াল রেখ এইদিকে। আমার খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা অপারেশন করতে হবে আজ। এখনই আমাকে যেতে হবে। তুমি মধুজার খেয়াল রেখো।’

‘তুই না বললেও আমি খেয়াল রাখব। মধুজা তো আমার মেয়ের মতোই।’

অক্ষর নিশ্চিত হয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় মধুজাকে বারবার বলে যায় নিজের খেয়াল রাখতে। মধুজার খুব ভালো লাগে অক্ষরের এই কেয়ারগুলো। নিজেকে এখন বেশ ভাগ্যবতী মনে হয় তার। অক্ষর ছিল জন্যই হয়তো এত সুন্দর একটা পরিবার পেয়েছে মধুজা। অথচ সে অক্ষরকে কত কষ্টই না দিয়েছে। সেসব ভেবে খুব আফসোস হয় মধুজার।

মধুজার আচমকা মনে পড়ে যায় অক্ষরের উপর ধেয়ে আসা বিপদের কথা। মধুজা এতকিছুর মাঝে এই ব্যাপারটা ভুলেই গিয়েছিল৷ মধুজা ঠিক করে নিয়েছে যে করেই হোক সেই মানুষটাকে খুজে বের করবে যে অক্ষরের ক্ষতি চায়।

মধুজা নিজের এসব ভাবনায় ব্যস্ত ছিল তখন মমতা চৌধুরী স্যুপ এনে মধুজাকে খেতে বলে। মধুজার হাতে ব্যান্ডেজ থাকায় ঠিকমতো খেতে পারছিল না। তখন মমতা চৌধুরী তাকে খাইয়ে দেয়। মধুজা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে এই ঘটনায়। তার চোখে জল এসে যায়। মমতা চৌধুরী মধুজার চোখের জল দেখে বলে,
‘কাদছ কেন?’

‘আপনাকে দেখে আমার মায়ের কথা খুব মনে পড়ে।’

‘আমি তো তোমার মায়ের মতোই। কিন্তু আমার একটা ব্যাপার খুব খারাপ লাগে তুমি আমাকে মা বলে ডাকো না। জানো বর্ণ যখন আমার গর্ভে ছিল তখন আমার কত ইচ্ছা ছিল আমার একটা মেয়ে হবে।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে। আজ থেকে আপনাকে মা বলব।’

মমতা চৌধুরী খুশি হয়ে যান। হঠাৎ করে তার সকালের কথা মনে পড়ে যায়। তাই তিনি মধুজাকে প্রশ্ন করেন,
‘আচ্ছা তখন তুমি কি যেন বিপদের কথা বলেছিলে। কি বিপদ হবে অক্ষরের?’

মধুজার মনে হয় মমতা চৌধুরীকে কিছু বললে তিনি চিন্তা করবেন। তাই ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে বলে,
‘আসলে উনি হাসপাতালে একজন পেশেন্টের ফ্যামিলি থেকে থ্রেট পেয়েছিলেন৷ তবে এখন সব ঠিক হয়ে গেছে। ওনারা বুঝতে পেরেছেন যে পেশেন্টের মৃত্যুর জন্য অক্ষর দায়ী নয়।’

মধুজা সাংবাদিক হওয়ায় খুব সহজেই একটি মিথ্যা কাহিনি বানিয়ে ফেলে। মমতা চৌধুরীও বিশ্বাস করে নেয়!

২৮.
মধুজা রুমে শুয়ে ছিল। এভাবে শুয়ে থাকতে তার ভালো লাগছিল না মোটেও৷ তবুও মমতা চৌধুরীর কথায় ঘরে বিশ্রাম নিতে হচ্ছে। মধুজার হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে যায়। অক্ষরের বিপদের আশংকা তো এখনো আছে। মধুজা অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নেয় এবার অক্ষরের সাথেই সরাসরি এই বিষয় নিয়ে কথা বলবে।

যেই ভাবা সেই কাজ। এক মুহুর্ত দেরি না করে অক্ষরকে ফোন করে মধুজা। প্রথম দুইবার ফোন রিং হতে থাকে কিন্তু অক্ষর রিসিভ করে না। তৃতীয় বার ফোনটা রিসিভ হয়। অক্ষর মধুজার ফোন দেখে উদ্বীগ্ন হয়ে বলে,
‘তোমার কি কোন প্রব্লেম হচ্ছে? আমি বাড়িতে আসব এখন?’

‘না আমার কোন প্রব্লেম নেই। প্রব্লেম তো আপনার।’

অক্ষর কিছু না বুঝতে পেরে প্রশ্ন করে,
‘আমার আবার কি প্রব্লেম?’

মধুজা এবার চিন্তায় পড়ে যায়। অক্ষরকে সবকিছু জানানো ঠিক হবে কিনা এই নিয়ে দ্বিধায় ছিল সে। অক্ষর মধুজার থেকে কোন উত্তর না পেয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘কি হলো চুপ করে আছ কেন?’

‘আসলে হয়েছেটা কি,,,’

মধুজা অক্ষরকে গতকাল রাতে দেখা ছায়ামূর্তি, আজ সকালে পাওয়া চিঠির ব্যাপারে সবকিছু বলে। সব শুনে অক্ষর বলে,
‘আমিও দুইদিন থেকে খেয়াল করছি ব্যাপারটা। কেউ আমার পিছু নিচ্ছে।’

‘আচ্ছা আপনার কি কারো উপর সন্দেহ হয়? মানে আপনার কোন শত্রু।’

‘আমার কোন শত্রু নেই। তবে হ্যা, আমি গতকাল বুদ্ধি করে একটা কেমিক্যাল ছু’ড়ে দিয়েছিলাম লোকটার হাতে। আই থিংক সে যেই হোক তার হাতে র‍্যাশ ওঠার কথা।’

মধুজা অনেক ভেবে একটা বুদ্ধি বের করে। অক্ষরকে বলে,
‘আমার কথাটা শুনুন। তাহলে আজ রাতেই আমরা তাকে ধরতে পারব।’


রাতে অক্ষর যখন বাড়ি ফেরে তখন বুঝতে পারে রোজকার মতো আজকেও কেউ তার পিছু নিচ্ছে। অক্ষর চুপচাপ হাটতে থাকে। আচমকা কেউ সামনে এসে অক্ষরের মুখে কিছু একটা স্প্রে করে। অক্ষর সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়। সে বাকা হেসে বলে,
‘এবার আমি নিজের প্রতিশোধ নিতে পারব তোমার উপর মিস্টার অক্ষর চৌধুরী।’

বলে একটা ছু’রি বের করে অক্ষরের পে’টে ঢুকাতে যাবে তখনই মধুজা এসে তার হাত ধরে ফেলে। মধুজার সাথে তার হাতাহাতি শুরু হয়। সে মুখে একটি মাক্স পড়ে ছিল। মধুজা সুযোগ বুঝে মাক্সটি টেনে খুলে নেয়। তাকে দেখে অবাক হয়ে যায় মধুজা। বিস্ময়ের সাথে বলে ওঠে,
‘তুমি!’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨