এক‌দিন বিকা‌লে সকাল হ‌য়ে‌ছি‌লো পর্ব-২৩+২৪

0
531

#এক‌দিন_বিকা‌লে_সকাল_হ‌য়ে‌ছি‌লো
‌লেখকঃ শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্বঃ ২৩

৩৩!!
রাত তিনটা,
কারও উষ্ণ সংস্প‌র্শে রাযী‌নের ঘুম ভাঙল। শশী ওর বু‌কের ম‌ধ্যে ঢু‌কে চোখ বন্ধ ক‌রে আছে। রাযীন অনেকক্ষণ চুপ থে‌কে বলল,‌
‘তু‌মি এখানে?’
‘আমার একা একা ঘুম আস‌ছে না। ভয় কর‌ছে।’
‘‌ঠিক আছে, ত‌বে পা‌শের বা‌লিশে শোও।’
‘না আমি তোমার বু‌কেই শো‌বো।’

রাযীন আর কথা বাড়াল না। রা‌তে শশীর ঐরূপ আচর‌ণের পর রাযীন ভে‌বে পা‌চ্ছে না, শশী‌কে কী বলা উচিত? শশী, রাযীন‌কে জ‌ড়িয়ে ধ‌রে ঘু‌মি‌য়ে পড়ল।‌ রাযীন ভাবল,
‘এ মে‌য়ের মাথার স্ক্রু নি‌শ্চিত ঢিল‌া। কখন কী ব‌লে? কখন কী ক‌রে নি‌জেই জা‌নে না! ত‌বে হ্যাঁ এটা স‌ত্যি সব মানুষ নি‌জের আবেগ ক‌ন্ট্রোল কর‌তে পা‌রে না। বিশেষ ক‌রে ভ‌া‌লোবাসার মানু‌ষের ক্ষে‌ত্রে আবেগ ক‌ন্ট্রোল করা স‌ত্যি অসাধ্য সাধন করার ন্যায়। শশীর ম‌নে হয়তো অতটা জোর নেই নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার। শশীর কেন বল‌ছি, আমার নি‌জের-ই তো নেই। শশীর ক্ষে‌ত্রে আমার কো‌নোরকম নিয়ন্ত্রণ নেই। য‌দি থাক‌তো ত‌বে শশী আজ আমার বউ হ‌তো না, শশী আমার বু‌কে থাক‌তো না। প্র‌তিটা মানুষ-ই ভালোবাসার বেলায় বড্ড অসহায়, বড্ড বেহায়া। যেমনঃ আ‌মি, শশী, সজল। বেহায়া ব‌লেই তো, আমি জা‌নি যে, শশী আমা‌কে ভা‌লোবা‌সে না, তবুও তা‌কে পাগ‌লের ম‌তো ভা‌লোবা‌সি।’

সকালবেলা রাযীন, শশী‌কে ঘুম থে‌কে না তু‌লেই অফি‌সে চ‌লে গে‌ল। ঘুম থে‌কে‌ উঠে রাযীন‌কে না দে‌খে শশীর খুব মন খারাপ হ‌লে‌া। শশী ম‌নে ম‌নে বলল,
‘একবার আমা‌কে ডে‌কে তু‌লতে তো পারত? প‌রোক্ষ‌ণেই ম‌নে ম‌নে বলল, অবশ্য গতকাল রা‌তে যা ক‌রে‌ছি, তারপর তো, ওর সা‌থে কথা বলাই মুশ‌কিল ম‌নে হ‌চ্ছে।’

রাযীন রা‌তে বা‌ড়ি ফি‌রেও কো‌নো কথা বলল না। নি‌জের ম‌তো কাজকর্ম কর‌তে লাগল। শশী জি‌জ্ঞেস করল,
‘‌খে‌তে দিব?’
‘‌খে‌য়ে এসে‌ছি।’
‘আ‌মি খাই‌নি।’
‘আচ্ছা খেয়ে নাও।’
শশী না খে‌য়ে রাগ ক‌রে রুমে চ‌লে গেল। রাযীন দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে বলল,
‘‌মে‌য়েটা এত পাগলা‌মি কর‌ছে কেন? প্রথ‌মে তো নি‌জে থে‌কেই আমা‌কে ছে‌ড়ে যাবার জন্য পাগল, তারপর আবার আমার ফুল এটেনশনও পে‌তে চাই‌ছে। হয় এ মে‌য়ের মাথার স্ক্রু প‌ড়ে গে‌ছে, নাহয় নি‌শ্চিত দ্বিধায় ভুগ‌ছে আমা‌কে আর সজল‌কে নি‌য়ে। তোমার দ্বিধা আমি কা‌টি‌য়ে দিব শশী। সে ব্যবস্থা আমি ক‌রে‌ছি।’
অতঃপর রহস্যময় হাসল রাযীন।

রাযীন প্লে‌টে খাবার নি‌য়ে রু‌মে গেল। দেখল শশী কাঁদ‌ছে। রাযীন প্লেট টে‌বি‌লে রে‌খে ওর পা‌শে ব‌সে হাত ধ‌রে বলল,
‘কাঁদ‌ছো কেন?’
‘আ‌মি জা‌নি, রাযীন তু‌মি আমা‌কে খুব খারাপ ভাব‌ছ? বি‌বেকহীন, বা‌জে মে‌য়ে ভাবছ?’
‘খারাপ কেন ভাবব?’
‘গত রা‌তে আমি কাজ-ই তেমন ক‌রে‌ছি।’

রাযীন কিছ‌ুক্ষণ চুপ থে‌কে বলল,
‘শশী, তোমার জন্য আমি এতটা পাগল যে, তোমার কো‌নো কিছুই আমার কা‌ছে খারাপ লা‌গে না। সব কিছু‌ই আমা‌কে মুগ্ধ ক‌রে।’
শশী বেশ অবাক হ‌লো, তারপর কিছু একটা ভে‌বে বলল,
‘সজল কাল বিকা‌লে দেখা কর‌তে ব‌লে‌ছে।’
রাযীন শীতল ক‌ণ্ঠে বলল,
‘আচ্ছা।’
‌রাযী‌নের এমন শীতলতা দে‌খে শশী বলল,
‘রাযীন আমি কিন্তু একবারও ব‌লি‌নি আমি সজ‌লের কা‌ছে চ‌লে যাব। আমি শুধু ব‌লে‌ছি‌ ওর সা‌থে আমা‌কে একটা বার দেখা ক‌রি‌য়ে দাও।’
রাযীন আবারও শীতল ক‌ণ্ঠে বলল,
‘আচ্ছা।’
তারপর খাবার প্লেটটা শশীর হা‌তে দি‌য়ে বলল,
‘‌খে‌য়ে নাও।’

শশী নি‌জের হা‌তে খাবার নি‌য়ে রাযী‌নের মু‌খের দি‌কে এগি‌য়ে বলল,
‘আ‌মি জা‌নি তুমি খাও‌নি‌। আমি খাই‌য়ে দি‌চ্ছি।’
রাযীন, শশীর হা‌তে খাবার লোভ সামলা‌তে পারল না। একটু খা‌নি খে‌য়ে বলল,
‘তু‌মি খাও।’
রাযীন ম‌নে ম‌নে বলল,
‘কাল আমার ভা‌লোবাসা আর ধৈ‌র্য্যের পরীক্ষা শশী। আমি জা‌নি আমি নিরাশ হ‌বো না। সৃ‌ষ্টিকর্তার প্র‌তি সে ভরসা আছে আমার। আর আমার প‌রিকল্পনার প্র‌তিও।’

তারপর রাযীন শু‌য়ে পড়ল। শশীও একটুখা‌নি খে‌য়ে রাযী‌নের বু‌কে মাথা রাখল। তারপর বলল,
‘রাযীন?’
‘হুঁ।’
‘কাল য‌দি আমি সজ‌লের সা‌থে চ‌লে যাই, ত‌বে কি তু‌মি আমা‌কে সারাজীবন ঘৃণা কর‌বে?’
খুব শান্ত ক‌ণ্ঠে রাযীন বলল,
‘না। যা‌কে নি‌জের সবটা দি‌য়ে ভা‌লোবে‌সে‌ছি, তা‌কে ঘৃণা করা সহজ না।’
শশী ম‌নে ম‌নে বলল,
‘এ কার‌ণেই হয়‌তো আমি সজলকে ঘৃণা কর‌তে পার‌ছি‌ না।’

প‌রের দিন বিকা‌লে।
কক্সবাজার সমুদ্র তীরে।
বিশাল সমু‌দ্রের এক নির্জন কূ‌লে দাঁ‌ড়ি‌য়ে আছে ওরা তিনজন। সমুদ্র শশীর সব‌চে‌য়ে প্রিয় স্থান। কিন্তু আজ সমুদ্র তী‌রে এসে খু‌শি হ‌তে পার‌ছে না ও। মনটা আজ ভীষণ খারাপ ওর। প্রচন্ড ভয়ও কর‌ছে। আপন ম‌নে ভাব‌ছে,
‘আজ‌কের নেওয়া সিদ্ধা‌ন্তে বদ‌লে যা‌বে আমার জীবন। একজন‌কে চিরত‌রে হা‌রি‌য়ে ফেলব। ইস য‌দি সমু‌দ্রে নি‌জের সব কষ্ট ভা‌সি‌য়ে দি‌তে পারতাম! তাহ‌লে হয়‌তো ম‌নে শা‌ন্তি পেতাম।’
ওরা যেখা‌নে দাঁ‌ড়ি‌য়ে সেখানে লোকসমাগম খুব একটা নেই বল‌লেই চ‌লে। সমুদ্র তো ছো‌টো নয়, আর তাছাড়া এখা‌নে যারা-ওবা আছেন, সবাই যে যার ম‌তো আছে। আশে-পা‌শে কে কী কর‌ছে তার দি‌কে খেয়াল দি‌চ্ছে না! রাযী‌নের কথায় চৈতন্য ফিরে পে‌লো শশী।

রাযীন, শশী‌কে, সজলের সাম‌নে দাঁড় ক‌রিয়ে বলল,
‘‌তোমরা কথা ব‌লো আমি ওদিকটায় থাক‌ছি।’
শশী, রাযী‌নের হাত ধ‌রে বলল,
‘তু‌মি কোথায় যা‌চ্ছো? আমার সা‌থে-ই থাকো।’
বিষয়টা সজলের খুব খারাপ লাগ‌লেও শশীর দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘‌কেমন আছো শশী?’
‘ভা‌লো। তু‌মি?’
‘ভালো।’

তারপর কিছুক্ষণ কে‌টে যায় কিছুটা নীরবতায়। নীরবতা ভে‌ঙে,শশী, সজ‌লের দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘আজ আমি এখা‌নে তোমা‌কে কিছু কথা বল‌তে এসে‌ছি।’
সজল বলল,
‘ব‌লো।’
‘সজল তু‌মি ফোন করে ব‌লে‌ছি‌লে, তু‌মি ভুল ক‌রে‌ছে‌া, এখনও আমা‌কে ভা‌লোবা‌সো, আমি তোমার কাছে গে‌লে তু‌মি এখনও আমা‌কে ফির‌য়ে নি‌বে। সমাজ, পৃ‌থিবীর তোয়াক্কা তু‌মি ক‌রো না। তু‌মি ভীষণ কান্না কর‌ছি‌লে!’
‘হ্যাঁ তাই।’
‘তু‌মি জা‌নো তোমার কথাগু‌লো শোনার পর, তোমার কান্না শোনার পর আমি কতটা ভে‌ঙে প‌ড়ে‌ছিল‌াম। রাযী‌নের সা‌থেও উদ্ভট আচরণ ক‌রে‌ছি। যাই হোক, তোমার সব প্র‌শ্নের উত্তরে আমি কিছু বলব না, শুধু একটা জি‌নিস দেখাব। আশাক‌রি এরপর তোমার আর কো‌নো প্রশ্ন থাক‌বে না!
সজল বলল,
‘কী দেখা‌বে?’

শশী, রাযী‌নের দি‌কে ঘুরল। তারপর নি‌জের পা দু‌টো উঁচু ক‌রে রাযী‌নের ঠোঁ‌টে গভীর চু‌মো খে‌লো।
ওরা যে সমুদ্র তী‌রে, সজ‌লের সাম‌নে দাঁ‌‌ড়ি‌য়ে তার তোয়াক্কা করল না শশী। রাযী‌নের ঠোঁট ছে‌ড়ে শশী, রাযীন‌কে বলল,
‘আমা‌কে শক্ত ক‌রে ধ‌রো, নয়‌তো বেহুশ হয়ে যাব।’
রাযীন, শশীকে আক‌ড়ে ধরল। ও চূড়ান্ত অবাক। শশী, সজ‌লের দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘আশা ক‌রি তুমি তোমার উত্তর পে‌য়ে গে‌ছ। এরপর আমার সা‌থে যোগাযোগ করা দুঃসাহস ক‌রো না। আমি আমার সিদ্ধা‌ন্তে ততটা অটল যতটা অটল পর্বত তার নি‌জের অবস্থা। জীব‌নের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমার শুধু রাযীন‌কে-ই চাই।’

সজল অশ্রু‌সিক্ত নয়‌নে বলল,
‘চার‌দি‌নের বি‌য়ের জন্য, তু‌মি চার বছ‌রের সম্পর্ককে এভা‌বে অব‌হেলা কর‌লে শশী? এভা‌বে অপমান কর‌লে আমায় শশী!’
‘সজল সময়টা ব্যাপার না। সময় হোক দীর্ঘ কিংবা অল্প, শুদ্ধতম ভা‌লোবাসাটা বে‌শি জরু‌রি। রাযীন চার‌দি‌নে আমা‌কে ঐ শুদ্ধতম ভা‌লোবাসার ভরসা দি‌য়ে‌ছে যা তু‌মি চার বছ‌রে পা‌রো‌নি। চার দি‌নের বিবাহ শব্দটা, চার বছ‌রের সম্প‌র্কের থে‌কে অনেক শ‌ক্তিশালী ম‌নে হ‌চ্ছে আজ আমার কা‌ছে। চার‌দি‌নে রাযীন আমায় এমন মায়ার ডো‌রে ‌বেঁ‌ধে‌ছে যা তু‌মি চার বছ‌রে পা‌রে‌ানি। আমি এখনও রাযীন‌কে ভা‌লোবা‌সতে পা‌রি‌নি ঠিক-ই ত‌বে আমি ওর মায়ায় প‌ড়ে‌ছি। গভীর মায়া যা‌কে ব‌লে। এ মায়া কাটা‌নো সহজ নয়। আর মায়ায় পড়‌লে, ভা‌লোবাসা এম‌নি হ‌য়ে যা‌য়।’
তারপর শশী, রাযীন‌কে উদ্দেশ্য ক‌রে বলল, ‘রাযীন আমি কিন্তু হেঁ‌টে যে‌তে পারব না। আমার হাঁত পা, পু‌রো শরীর কাঁপ‌ছে। ম‌নে হ‌চ্ছে শরীরটা ম‌নের ধকল নি‌তে পার‌ছে না।’

রাযীন, শশী‌কে কো‌লে তু‌লে নি‌লো। আজ রাযী‌নের চোখ-মুখ থে‌কে আনন্দ উপ‌ছে পড়‌ছে। রাযীন ম‌নে ম‌নে বলল,
‘হা‌রেনি আমার ভা‌লোবাসা। আমি পরা‌জিত হই‌নি, পরাজয় হয়‌নি আমার ভা‌লোবাসার। আমি শশীকে, ওর মায়া‌কে জি‌তে‌ছি, ভা‌লোবাসাও জি‌তে যাব।’
শশী‌কে গা‌ড়ি‌তে ব‌সি‌য়ে রাযীন বলল,
‘শরীর ঠিক আছে তোমার?’
‘শরী‌রের কী হ‌বে? তারপর দুষ্টু হে‌সে বলল, তুমি মিয়া ভেজাইল্লা পাব‌লিক।’
‘‌কেন আমি কী করলাম?’
‘‌তোমার ঠোঁ‌টে নি‌শ্চিত জ্ঞান হারা‌নোর ম‌তো কো‌নো পদার্থ আছে, নয়ত যখনই তোমার ঠোঁট আমার ঠোঁট‌কে স্পর্শ ক‌রে আমার ম‌নে হয় তখন-ই জ্ঞান হা‌রি‌য়ে ফেলব। নি‌শ্চিত তোমার ঠোঁ‌টে ভেজাল আছে। কই কা‌ছে আসো তো চেক ক‌রে দে‌খি।’

রাযীন কা‌ছে এসে আরও গভীরভাবে শশীর ঠোঁ‌টে চুমো খে‌লো। এবার শশী অাবার বেহুশ হ‌য়ে যাবার ভান করল। রাযীন নিজের ঠোঁট ধ‌রে বলল,
‘বার বার বেহুশ হ‌য়ে যা‌চ্ছে শশী। ম‌নে হয় আমার ঠোঁ‌টেই কো‌নো গন্ড‌গোল আছে। কালই ডাক্তা‌রের কা‌ছে যেতে হ‌বে।’
এদি‌কে বেহুশ হবার ভান ধ‌রে শশী বহু ক‌ষ্টে হা‌সি চে‌পে রাখ‌ল। কিছুক্ষণ পর শশী চোখ মেল‌তেই রাযীন বলল,
‘‌ঠিক আছো?’
অ‌নেক ক‌ষ্টে নি‌জের হাসি চে‌পে শশী বলল,
‘হ্যাঁ।’
‘আ‌মি কাল‌কেই ডাক্তার কা‌ছে যাব। ডাক্তার‌কে বিস্তা‌রিত বল‌বো। তারপর দে‌খি তিনি কী ব‌লেন?’
শশী মজার ছলে বলল,
‘ডাক্তারের সি‌রিয়াল ত‌বে এখ‌ন-ই নি‌য়ে নাও। প‌রে য‌দি সি‌রিয়াল না পাও।’
‘ও হ্যাঁ। ভা‌লো কথা মনে কর‌ছো। আমি সু‌মি আপা‌কে কল ক‌রে একজন ভা‌লো ডাক্তা‌রের‌ খোঁজ নিচ্ছি।’

এবার শশী নি‌জের হা‌সি চে‌পে রাখ‌তে পারল না। শব্দ ক‌রে হাস‌তে হাস‌তে বলল,
‘মাথায় গ‌ন্ডো‌গোল আছে না‌কি?’
‘‌কেন?’
‘আ‌রে বোকা আমি তো বেহুশ হবার ভান কর‌ছিলাম শুধু।’
‘আজ নাহয় ভান কর‌ছো সে‌দিন তো স‌ত্যি বেহুশ হ‌য়ে‌ছি‌লে। কেন?’
শশী নাক ফু‌লি‌য়ে ফস ক‌রে দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে বলল,
‘এত কিছু জা‌নো আর এটা জা‌নো না? আরে সে‌দিন আমার লাই‌ফে ফাস্ট লি‌পকিস ছি‌লো। তো নি‌জের শরী‌রের অতি‌রিক্ত অনুভূ‌তি নি‌জেই ক‌ন্ট্রোল করতে পা‌রি‌নি। তাই এমন বেহুশ হ‌য়ে গে‌ছিলাম। এটা কেবল আমার নয়, অধিকাংশ মে‌য়ে‌দের বেলায়ই হয়তো হয়?’
‘সব মে‌য়ে বেহুশ হয়।’
‘দূর বলদ।’
‘কী বললা?’
‘আ‌রে মাইন্ড করো না। সবাই বেহুশ হয় ব‌লি‌নি। দেখা যায় প্রথম কিস, বা ইন্টি‌মেট হবার সময় অধিকাংশ মে‌য়ে‌দেরই লজ্জা আর অনুভূ‌তি চরম মাত্রায় থাকার কার‌ণে অনে‌কে নি‌জের শরীর মন দু‌টো‌কে ক‌ন্ট্রোল কর‌তে পারে না। তখন ম‌নে হয় শরীর অবস হ‌য়ে যা‌চ্ছে। অতি‌রিক্ত লজ্জায় মে‌বি এমন হয়অ বি‌শেষ মানুষটার বি‌শেষ স্পর্শও অনেক বি‌শেষ হ‌য়ে থাকে।’
‘বাহ! দারুণ বল‌লে তো! বি‌শেষ মানুষটার বি‌শেষ স্পর্শও অনেক বি‌শেষ হ‌য়ে থাকে। তোমার কথাটাও আমার কা‌ছে বি‌শেষ। আচ্ছা আমি কী তোমার সেই বি‌শেষ মানুষ‌টি?’

শশী রাগ ক‌রে বলল,
‘সারা রাত ইসুফ জুলেখার পু‌থি প‌ড়ে, বেইন্নাকালে কয় জুলেখা কার বাপ? মা‌নে যার জন্য নি‌জের এত বছ‌রের সম্পর্ক শেষ ক‌রে দি‌য়ে আসলাম, পু‌রো দু‌নিয়ার সামনে নি‌জের লজ্জার প‌রোয়া না ক‌রে তা‌কে চু‌মো খেলাম, আর সে ব‌লে, আ‌মি কী বি‌শেষ? মা একদম ঠিক ব‌লে, তু‌মি একটা গাধা।’
‘কার মা তোমার না আমার?’
‘‌তোমার… তোমার… তোমার… !
রাযীন হাসল শুধু।

শশী, রাযী‌নের হা‌সি দে‌খে ম‌নে ম‌নে বলল,
‘ওর হা‌সি কতটা স্বচ্ছ, সুন্দর, বাচ্চা‌দের ম‌তো র্নিমল। হা‌সিটা যে‌নো ওর ম‌নের শুদ্ধতার প‌রিচয় বহন ক‌রে। এ হা‌সি এমনই থাক আজীবন। তারপর মু‌খে বলল,
‘রাযীন একটা কথা ব‌লি?’
‘ব‌লো?’
‘সজলকে ঐ কথাগু‌লো বলতে, ওকে ছে‌ড়ে আস‌তে আমার খুব কষ্ট হ‌য়ে‌ছে। ম‌নে হ‌চ্ছিল, ক‌লিজা ছি‌ড়ে যা‌বে। কিন্তু এত‌দিন ম‌নে যে পাথরটা প‌ড়ে, মনটা ভাড় হ‌য়ে ছি‌লো, ম‌নের ‌সে পাথরটা আজ স‌রে গে‌ছে। নি‌জে‌কে হালকা, মুক্ত লাগ‌ছে। এখন আমি নিজ সংসা‌রে মন দি‌তে চাই। রাযীন দি‌তে পার‌বে না আমায় একটা ছোট্ট সংসার?’
রাযীন, শশী‌কে কা‌ছে টে‌নে, কপা‌লে ভা‌লোবাসার চিন্হ দি‌য়ে বলল,
‘সব তোমার। সংসার আর সংসা‌রের মানুষগু‌লোও তোমার, আর এ রাযীনটাও তোমার।’

শশী দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে রাযী‌নের বুকে মুখ ল‌ু‌কা‌লো। দীর্ঘশ্বা‌সের সা‌থে যে‌নো শশীর কষ্টগু‌লোও উড়ে যা‌চ্ছে। আজ সমুদ্রপা‌ড়ে স‌ত্যিই যে‌নো সমুদ্র শশীর সব কষ্ট নি‌জের বুকে ধারণ করল। এ কার‌ণেই তো ও সমুদ্র বিশাল। আমার ম‌তে মানু‌ষের দুঃখ ক‌ষ্টের ভার নি‌তে নি‌তেই সমুদ্র দিন দিন বিশাল থে‌কে বিশালতম হ‌চ্ছ। চো‌খের কোন বে‌য়ে ক‌য়েক‌ ফোঁটা নোনা তরল ঝ‌রে পড়ল শশীর। শশী ম‌নে ম‌নে বলল,
‘আজ‌কের কান্নাটা আনন্দ আর বেদনা দু‌টোর কান্না। এক ভা‌লোবাসা হা‌রি‌য়ে আবার ভা‌লোবাসা পে‌য়ে‌ছি। সজ‌লের ভা‌লোবাসা কতটা ছি‌লো জা‌নি না, ত‌বে রাযী‌নের ভা‌লোবাসা মহাশূ‌ণ্যের ম‌তো ম‌নে হয়। যা কো‌নো শেষ নেই। তারপর মুখে বলল, রাযীন এবার ঘ‌রে চ‌লো, আমা‌দের ঘ‌রে। না‌কি এখা‌নে ব‌সেই রাত পার কর‌বে? এক‌দিন রা‌তে আমা‌কে সমু‌দ্রে নি‌য়ে আস‌বে। অামি কখনও রা‌তের সমুদ্র দে‌খি‌নি।’
রাযীন গা‌ড়ি স্টার্ট কর‌তে কর‌তে বলল,
‘আচ্ছা।’

ঘ‌রে ফেরার পর, ফ্রেশ হ‌য়ে দু’জন এক জায়গায় বস‌তেই শশী, রাযীন‌কে জি‌জ্ঞেস করল,
‘আ‌মি তোমার কী হই?’
‘আমার প্রাণ।’
শশী রাগ ক‌রে বলল,
‘‌সোজাসুজি ব‌লো কী হই?’
‘বই থুক্ক‌ু বউ।’
শশী এবার রাযীন‌কে মার‌তে মার‌তে বলল,
‘‌তো তোমার বউ অন্য লো‌কের কা‌ছে, মা‌নে তার প্রাক্ত‌নের কা‌ছে যে‌তে চাইল আর তু‌মি তা‌কে নি‌য়ে গে‌লে? নি‌জের অধিকার খাটা‌লে না? কেন? এই ভা‌লোবা‌সো আমা‌কে?’
রাযীন শশীর হাত ধ‌রে বলল,
‘আ‌মি তোমায় ভা‌লোবা‌সি এটাই বড় কথা, তোমার খু‌শি আমার কা‌ছে সবার আগে প্রধান্য পা‌বে।’
শশী, রাযীন‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘‌কেন ভা‌লোবা‌সো এত?’
‘আ‌মি জা‌নি না। শুধু ভা‌লোবা‌সি।’

শশী, রাযীন‌কে গভীর ভা‌বে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে, রাযী‌নের গলায় চু‌মো আঁকল। রাযীন অনেকটা কেঁ‌পে উঠল। ঘোর লে‌গে গে‌ল দুজনার অনুভূ‌তি‌তে। শশী‌কে অনেকক্ষণ জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রার পর ওর ঠোঁ‌টে গভীর চু‌মো খে‌লে‌া। তারপর শশী গা‌লে, চো‌খে, অতঃপর গল‌ায়। অনেকটা ঘোর লাগার ম‌তো ক‌রে একে অপ‌রের কা‌ছে আরও কা‌ছে যা‌চ্ছিল, সম্পর্ক গভীর থে‌কে গভীরতম হ‌তে যা‌চ্ছিল। শশীর জামার ফিতা খোলা এক পর্যায় রাযীন বলল,
‘ভা‌লোবা‌সো আমায়?’
শশী মাথা নিচু ক‌রে বলল,
‘এখন কেবল মায়ায় প‌ড়ে‌ছি। ভা‌লোবাসা হয়‌নি।’
রাযীন, শশীকে ছে‌ড়ে দি‌য়ে বলল,
‘‌যে‌দিন তোমার মনে কেবল আমার বসবাস হ‌বে, সে‌দিন শরীর, মন দু‌টোই আমার হ‌বে। সে‌দিন-ই আমা‌দের জীব‌নে এ বি‌শেষ মুহূর্তটা আস‌বে।’

শশী কিছুক্ষণ চ‌ুপ থে‌কে বলল,
‘রাযীন?’
‘হুঁ।’
‘তোমার সব ঠিক আছে তো?’
‘মা‌নে?’
‘মা‌নে এতটা কা‌ছে আসার পরও নি‌জে‌কে নিয়ন্ত্রণ ক‌রে ‌নি‌লে? ইজ এভ‌রি‌থিং ওকে রাযীন?’
রাযীন শব্দ ক‌রে হে‌সে, শশীর না‌কে চুমো খে‌য়ে বলল,
‘আমার দুষ্টু বউটা, সব ঠিক‌ আছে। তোমার টেনশন কর‌তে হ‌বে না।’
তারপর শশী‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘শশী আমি চাই আমা‌দের জীব‌নে বি‌শেষ মুহূর্তটা যখন আস‌বে, তখন তু‌মি কেবল আমার থাক‌বে, আমা‌দের ভা‌লোবাসার ম‌ধ্যে তৃতীয় কো‌নো ব্য‌ক্তি থাক‌বে না, ম‌নের ভিত‌রে কো‌নো সংসয় থাক‌বে না। থাকব শুধু তু‌মি আর আমি আর আমা‌দের জীব‌নে সব‌চে‌য়ে বি‌শেষ মুহূ‌র্তের ভা‌লোবাসাময় অনুভূ‌তি।’
শশী রাযীন‌কে আরো শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘রাযীন তু‌মি এত ভা‌লো কেন?’
রাযীন হাসল শুধু।

রা‌তের খাবা‌রের পর রাযীন, শশী‌কে বলল,
‘আ‌মি একটু ছাদ থে‌কে আস‌ছি?’
‘এত রাতে ছা‌দে কেন যা‌বে?’
‘একটু কাজ আছে।’
শশী স‌ন্দে‌হের নজ‌রে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘কী কাজ? এই তু‌মি আবার সিগা‌টের খাও না‌কি?’
‘‌ছি ছি। আমার কো‌নো বা‌জে অভ্যাস নেই। বা‌জে অভ্যা‌সের ম‌ধ্যে একটা হ‌লো, প্র‌তি‌দিন কম হ‌লেও দুই কাপ কড়া লিকা‌রের দুধ চা লা‌গে। এছাড়া আমার নেশা বল‌তে শুধু তু‌মি।’
শশী লজ্জা পেল। রাযীন বলল,
‘‌ফো‌নে নেটওয়া‌র্কে সমস্যা কর‌ছে, জরুরি একটা কল কর‌তে হ‌বে।’
‘‌ঠিক আছে যাও, জল‌দি চ‌লে আস‌বে।’
‘ওকে ম্যাডাম।’
রাযীন ছাদে গি‌য়ে সজল‌কে কল করল। সজ‌লের নাম্বারটা ওর ফো‌নে ফালতু রহমান লি‌খে সেইভ করা।

চল‌বে… …

#এক‌দিন_বিকা‌লে_সকাল_হ‌য়ে‌ছি‌লো
‌লেখকঃ শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্বঃ২৪

রাযীন ছাদে গি‌য়ে সজল‌কে কল করল। সজ‌লের নাম্বারটা ওর ফো‌নে ফালতু রহমান লি‌খে সেইভ করা। ক‌য়েকবার রিং হওয়ার সজল কলটা রি‌সিভ করল। কল রি‌সিভ কর‌তেই রাযীন বলল,
‘ধন্যবাদ।’
সজল কো‌নো ফরমাল কথা না ব‌লে সরাস‌রি প্রশ্ন করল,
‘আপ‌নি আমা‌কে ব্ল্যাক‌মেইল ক‌রে এসব কেন করা‌লেন?’
রহস্যময় হে‌সে রাযীন বলল,
‘কী করলাম?’
‘এই যে, শশীর সা‌থে ফো‌নে কথা বলালেন, আর দেখা করালেন? এ নাটকগু‌লো কেন করা‌লেন?’
দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে রাযীন বলল,
‘শশীর পরীক্ষা নি‌চ্ছিলাম।’
‘‌কেমন পরীক্ষ‌া?’
‘য‌দি তু‌মি কখনও কুটচালী ক‌রে শশী‌কে ডা‌কো ত‌বে, শশী তোমার ডা‌কে সারা দেয় কিনা?’

সজল গম্ভীর ক‌ণ্ঠে বলল,
‘শশী খুব ভা‌লো মেয়ে। ও খুব লয়াল। স্বামী থাক‌তে জীব‌নে অন্য কা‌রো ডা‌কে সারা দিত না, হোক সে প্রাক্তন।।’
‘শশী‌র সম্প‌র্কে তোমার কাছ থে‌কে জানার প্র‌য়োজন নেই! ওকে আমার চে‌য়ে বেটার হয়তো ওর নি‌জের বাবা মা-ও জা‌নেন না।’
‘এ‌সব ক‌রে লাভ কী হ‌লো?
‘ফলাফল তোমার সাম‌নে ছি‌লো। শশী চার বছ‌রের সম্পর্ক ছে‌ড়ে চার‌দি‌নের বি‌য়ে‌কে চুজ ক‌রে‌ছে। অবশ্য বি‌য়ে নি‌জে নি‌জেই একটা প‌বিত্র শক্ত বাঁধন। এ বাঁধ‌নের কা‌ছে, অন্য অনেক সম্পর্ক-ই কম গুরুত্ব বহন ক‌রে। আর তাছাড়া শশী‌কে নি‌য়ে আমি এতটা প‌জে‌সিভ যে, ও আমা‌কে ছে‌ড়ে যা‌বে সে কথা আমি ভাব‌তেই পা‌রি না। ভাব‌লেই আমার দম বন্ধ লা‌গে।’

রাযী‌নের কথা শু‌নে কিছুক্ষণ চুপ থে‌কে সজল বলল,
‘ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড একটা প্রশ্ন ক‌রি?’
‘হুঁ।’
‘য‌দি শশী আমা‌কে চুজ করতো, ত‌বে ছে‌ড়ে দি‌তেন ওকে?’
‘তার আগে তু‌মি ব‌লো, তুমি একটা বিবা‌হিত মে‌য়ে‌কে মে‌নে নি‌তে?’
সজল কিছুক্ষণ চুপ থে‌কে বলল,
‘হ্যাঁ।’
‘সজল তু‌মি শশী‌কে অনেক ভা‌লোবাস‌তে তাই না?’
‘হ্যাঁ। কিন্তু নি‌জের ভু‌লে হা‌রি‌য়ে ফেলল‌াম। প‌রে ওর কা‌ছে ক্ষমা চাই‌তে এসে আপনার হা‌তে ধরা খে‌য়ে মার খেল‌াম, নাকও ফাঁটালাম।’
হাসল রাযীন। সজল বলল,
‘হাই‌সে ন‌া। আমার নাক এখনও প্রচন্ড ব্যথা কর‌ছে।‌’
রাযীন বলল,
‘তু‌মি কাজই মার খাবার ম‌তো ক‌রে‌ছি‌লে।’
‘তা নাহয় বুঝলাম, আপ‌নি কিন্তু আমার প্র‌শ্নের জবাব দি‌লেন না?’
‘কোন প্রশ্ন?’
‘শশী আমা‌কে চুজ কর‌লে কী কর‌তেন? ওকে ছে‌ড়ে দি‌তেন?’
‘নাহ ওকে ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে ন‌া!’
‘তাহ‌লে?
‘আমি তোমা‌কে দু‌নিয়া থে‌কে গা‌য়েব করে দিতাম।’

রাযী‌নের কথায় কেন জানি সজ‌লের খুব ভয় ল‌াগল। এক অদ্ভুত ভয়! যার কো‌নো বর্ণনা হয় না। সজল ম‌নে ম‌নে বলল,
‘এ লোক‌কে বিশ্বাস নেই। শশীর জন্য চূড়ান্ত পাগল। কিন্তু মুখে বলল, আ‌মি আম‌ার কথা রে‌খেছি। এবার আপ‌নি আপনার কথা রাখ‌বেন আশা ক‌রি। আমার সি‌ক্রেটটা কখ‌নো শশীর কা‌ছে বলবেন না। আমি শশীর ঘৃণার পাত্র হ‌য়ে থাক‌তে চাই না।’
‘শশী কখনও জান‌বে না। প্র‌মিজ।’
‘ধন্যবাদ। মূলত আমি ওর কা‌ছে ক্ষমা চাই‌তে এসে‌ছিলাম চট্টগ্রাম। সেটা তো ও দি‌লো না। আপ‌নি ওকে বল‌বেন আমা‌কে যে‌নো ক্ষমা ক‌রে দেয়। আ‌মি ওর ভা‌লোবাসাটা না পাই, ঘৃণাটা অন্তত চাই না।’
‘আচ্ছা বল‌বো।’
‘কাল নিজ শহ‌রে চ‌লে যা‌চ্ছি। ভা‌লো থাক‌বেন।’
‘তু‌মিও।’
‘শশীর খেয়াল রাখ‌বেন ওকে খ‌ুব ভা‌লোবাস‌বেন। জা‌নি আপনা‌কে ব‌ল‌তে হবে না তাও বললাম।’
‘‌আচ্ছা।’

সজল কল কে‌টে আকাশে উঠা চাঁ‌দের পা‌নে চে‌য়ে বলল,
‘‌মিস ইউ শশী। লাভ ইউ ফর‌এভার এন্ড এভার। আই অ্যাম রি‌য়েলী স‌রি শশী। তোমায় সরাস‌রি বল‌তে পার‌লে ভা‌লো হ‌তো। কিন্তু‌ আমি জা‌নি তার আর হ‌বে না হয়‌তো কখনও। আর কখনও তোমায় পাওয়া হ‌বে না। হ‌বে না তোমা‌কে ছুঁ‌য়ে দেখা। হ‌বে না তোমার চু‌লে গন্ধ নেয়া। তোমার আঙু‌লে আঙুল জ‌ড়ি‌য়ে হ‌বে না আর চির‌চেনা সে প‌থে হাঁটা। হ‌বে না তোমার কপা‌লের চুল স‌রি‌য়ে আলত চু‌মো খাওয়া। হ‌বে না তোমায় জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে তোমার স্পর্শ নেয়া। হ‌বে না তোমার সা‌থে ঝগড়া করা। পা‌র্কের সবুজ ঘা‌সে হ‌বে না কা‌রও কো‌লে শু‌য়ে থাকা। কেউ আর আমার চু‌লে বি‌লি কে‌টে, হাত বু‌লি‌য়ে বল‌বে না, সজল তোমার চুল কত সুন্দর। কেউ আর আমার চো‌খে চু‌মো খে‌য়ে লজ্জায় আমার বু‌কে মুখ লুকা‌বে না। রাগ ক‌রে বু‌কে কিল মার‌বে না। আমার অসুস্থতায় কাঁদ‌বে না। কথায় কথায় ভা‌লোবা‌সি বল‌বে না।
তু‌মি স‌ত্যি ব‌লে‌ছি‌লে শশী আমি প্র‌তি‌ষ্ঠিত তো হ‌বো ত‌বে তোমা‌কে হা‌রি‌য়ে নিঃশ্বও হ‌বো। আজ আমি স‌ত্যি নিঃশ্ব। জীব‌নে হয়‌তো আমি খুব বড় হ‌বো, তু‌মি হয়‌তো জান‌বেও কিন্তু জান‌বে না বড় হবার পরও আমার বু‌কে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস থাক‌বে। সে দীর্ঘশ্বাস তোমা‌কে না পাবার হ‌বে। এখন ম‌নে হ‌চ্ছে তু‌মি বিহীন বড় হ‌য়ে আমি কী করব? কিন্তু আমি বড় হ‌বো শশী, অনেক বড়। যে প্র‌তিষ্ঠা, সাফল্য পাবার জন্য তোমা‌কে হারালাম, সে প্র‌তিষ্ঠা‌কে আমি অর্জন করবই। আর আমার জীব‌নে প্র‌তিষ্ঠার পিছ‌নে যে, নারীর অবদান থাক‌বে সে তু‌মি শশী। সে তু‌মি। আমি তোম‌ায় খুব ভা‌লোবা‌সি শশী, ভ‌বিষ্য‌তেও বাসব। তু‌মি ভা‌লো থে‌কো শশী। ভা‌লো থে‌কো। তোমার সুখে থাকাটাই আমার ভা‌লো থাকার উৎস হ‌বে। রাযীন সা‌হেব স‌ত্যি ভা‌লো মান‌ুষ। তোমা‌কে ভা‌লো রাখবে খুব। তোমার পাগল সজলটা তোমায় স‌ত্যি খুব ভা‌লোবাস‌তো। ভা‌লোবা‌সি শশী। বড্ড ভা‌লোবা‌সি।’

রাত বা‌রোটা,
রাযীন বিছানায় ব‌সে ব‌সে কিছু কাগজপত্র দেখ‌ছে। শশী বিছ‌ানায় ব‌সে রাযী‌নের পি‌ঠে হেলান দি‌য়ে বই পড়‌ছে। কিছুক্ষণ পর রাযীন, শশীর হাত থে‌কে বইটা নি‌য়ে বলল,
‘এত রা‌তে কী বই পড়‌ছো দে‌খি?’
‘‌তোমার দেখা লাগ‌বে না। দাও আমা‌কে।’
রাযীন বই‌য়ের নাম দে‌খে ভ্রু না‌চি‌য়ে বলল,
‘ওহ হো “‌তোমায় নি‌য়ে”! শার‌মিন আক্তার সাথীর লেখা। পড়ো প‌ড়ো তোমার এটা বে‌শি বেশি পড়া দরকার।’
‘‌কেন?’
‘কারণ তোমার ভা‌লোবাসা শেখা দরকার। প‌ড়ে দে‌খো ইচ্ছেময়ী ঠিক কীভা‌বে দিগন্ত‌কে ভা‌লোবাসে! প‌ড়ে কিছু শে‌খো। কী ক‌রে ভা‌লোবাস‌তে হয়।’

শশী হে‌সে বলল,
‘আমার অত ভা‌লোবাসা শেখার প্র‌য়োজন নেই। যা শি‌খে‌ছি তা‌তে-ই জ্ব‌লে পু‌ড়ে মর‌ছি। আর জ্বল‌তে চাই না।’
‌কিছুটা সময় নীরবতা আর দীর্ঘশ্বা‌সে কাটা‌নোর পর রাযীন বলল,
‘শশী?’
‘হুঁ।’
‘তু‌মি সজ‌লের সাম‌নে অমনটা না কর‌লেও পার‌তে।’
‘কেমনটা?’
‘আমা‌কে চুমো না খে‌লেও পার‌তে। ও কিন্তু তোমায় স‌ত্যি ভা‌লোবা‌সে। এমনটা করার কার‌ণে ও স‌ত্যি অনেক কষ্ট পে‌য়ে‌ছে।’
শশী বেশ রাগ ক‌রে বলল,
‘এখন স‌ত্যি ভা‌লোবাসা দেখা‌তে আস‌ছে। আমার বি‌য়ের আগে ওর স‌ত্যি ভা‌লোবাসা কোথায় ছি‌লো? তখন তো আমি শুধু ওর পা ধরা‌ বাদ রে‌খে‌ছিলাম। বা‌কি সকল ভা‌বে বু‌ঝি‌য়ে‌ছি। কিন্তু ও কী করল? বলল, আ‌মি, বি‌য়ে, এসব না‌কি ওর পিছুটান। ও প্র‌তি‌ষ্ঠিত হ‌তে চায়, বি‌দে‌শে সেটেল হ‌তে চায়। ‌তো এখন হোক প্র‌তি‌ষ্ঠিত? আমি তো এখন আর ওর লে‌জে পা দি‌য়ে আট‌কে রা‌খি‌নি।

রাযীন শশী‌কে ঠান্ডা কর‌তে বলল,
‘কুল কুল।’
শশী আরও রাগ ক‌রে বলল,
‘রা‌খো তোমার কু্ল কুল। এখন কেন আমার কা‌ছে আস‌ছে? ক‌’দিন আগেও বেহায়ার ম‌তো ওর কা‌ছে বার বার গি‌য়ে‌ছি। নি‌জের আত্মসম্মান‌কে আর ক‌তো ছো‌টো করব? এখন আস‌ছে আমা‌কে ফি‌রি‌য়ে নি‌তে? ও কী ভে‌বে‌ছে ও আমা‌কে ফি‌রি‌য়ে নি‌তে আস‌বে আর আমি নাচ‌তে নাচ‌তে ওর কা‌ছে যাব? এখন এত ভা‌লোবাসা উত‌লে পড়‌ছে বি‌য়ের আগে কোথায় ছি‌লো তা? এখন আমা‌কে পাবার জন্য যা কর‌তা‌ছে বি‌য়ের আগে কোথায় ছি‌লে‌া তা? এখন যা ব‌লে‌ছে, ক‌রে‌ছে বি‌য়ের আগে য‌দি তার ১০%-ও বলত, করত ত‌বে আজ আমি তোমার নয় বরং ওর ঘ‌রে থাকতাম।

রাযীন আপ‌নি য‌দি আমা‌কে এতটা ভা‌লো না-ও বাস‌তেন তা-ও আমি নি‌জের বিবা‌হিত স্বামী‌কে ছে‌ড়ে ওর কা‌ছে যেতাম না।
আমি ১৫ বছ‌রের কি‌শোরী নেই। বোঝার ম‌তো য‌থেষ্ট ম্যা‌চিওর বয়স হ‌য়ে‌ছে আমার। বি‌য়ের পর আমি ওর সা‌থে চ‌লে গে‌লে, হয়‌তো ওকে পেতাম কিন্তু আমার প‌রিবারসহ পু‌রো দু‌নিয়া‌কে আমি হারাতাম। একটা অবিবা‌হিত মে‌য়ে যখন পা‌লি‌য়ে গি‌য়ে বি‌য়ে ক‌রে, তখন লোক সেটা ক‌দিন পর মে‌নে নেয়, তারা স্বাভা‌বিক ভা‌বে জীবন যাবন কর‌তে পা‌রে। কিন্তু একটা বিবা‌হিত মে‌য়ে সংসার ছে‌ড়ে যখন অন্য লো‌কের সা‌থে পালায়, সমাজ সে মে‌য়েকে পতিতার চে‌য়েও নিকৃষ্ট ভা‌বে। আর আমি নি‌জে‌কে এতটা নি‌চে কখনও নামা‌তে পারব না।’

‌বিমর্ষ মু‌খে রাযীন বলল,
‘‌তো তু‌মি সমা‌জের ভ‌য়ে আমার সা‌থে থাকবে? আমা‌কে ভা‌লো‌বে‌সে না?’
শশী আবার রাগ ক‌রে বলল,
‘নাক বরাবর একটা ঘু‌ষি দিব, উল্টা পাল্টা কথা বললে। বল‌ছি না ভা‌লোবাসাও হ‌য়ে যা‌বে।’
রাযীন দু’হাত তু‌লে বলল,
‘ওপস! স‌রি।’
‘রাযীন আমি তোমাতে স‌ত্যি ভয়ানকভাবে মুগ্ধ হ‌য়ে‌ছি। আমার জীব‌নে তু‌মি য‌দি প্রথ‌মে আস‌তে, ত‌বে হয়‌তো এ ম‌নে অন্য কা‌রও ছাঁয়াও পড়ত না। অন্য কারও রঙও লাগত না।’
রাযীন হে‌সে বলল,
‘‌চিন্তা করো না আমি তোমায় আমার র‌ঙে রা‌ঙি‌য়ে নিবো।’
শশী, রাযী‌নের কপা‌লের সা‌থে নি‌জের কপাল স্পর্শ ক‌রি‌য়ে বলল,
‘ম‌নে থা‌কে যে‌নো?’
‘থাক‌বে। এখন ঘুমাও রাত বা‌রোটার বেশি বা‌জে।’
‘তু‌মিও তো ঘুমা‌চ্ছো না।’
‘আমার একটু কাজ আছে।’
‘‌ঠিক আছে কাজ শেষ করো, আমি ততক্ষ‌ণে উপন্যা‌সের শেষ অংশটু‌কো প‌ড়ি।’
এভা‌বেই খুনসু‌টি‌তে কে‌টে যায় কিছুদিন।

৩৪!!
‌রেনু‌ এখন অনেকটাই সুস্থ। ব্লিডিং ক‌মে গে‌ছে। শরী‌টাও আগের থে‌কে খুব ভা‌লো।
রেনু শিহা‌বের বু‌কে মাথা দি‌য়ে শুয়ে আছে। শিহাব রেনুর চু‌লে হাত বুলা‌তে বুলা‌তে বলল,
‘‌রেনু?’
‘ব‌লেন?’
‘‌তোমা‌কে একটা গল্প ব‌লি।’
‘ব‌লেন।’
‌শিহাব কিছুসময় চুপ ক‌রে রইল। শিহাব‌কে চুপ থাক‌তে দে‌খে রেনু বলল,
‘‌কী হ‌লো? ব‌লেন?’

একটা লম্বা নিঃশ্বাস নি‌য়ে শিহাব বলা শুরু করল,
‘‌কিছু বছর পূ‌র্বে একটা ছে‌লের সা‌থে একটা মে‌য়ের কা‌জের সূ‌ত্রে প‌রিচয় হয়। প‌রিচয় বন্ধু‌ত্বে এবং বন্ধুত্ব একটা সময় প্রে‌মে প‌রিণত হয়। প্রেম হবার কিছু সময় পর তারা রে‌জি‌ট্রি ক‌রে বি‌য়েও ক‌রে ফে‌লে। ছে‌লেটা প্রথ‌মে প‌রিবার সহ বি‌য়ে করতে চে‌য়ে‌ছি‌লো কিন্তু মে‌য়েটা এত দ্রুত প‌রিবার‌কে জানাতে চায় না। সে শুধু কোর্ট ম্যা‌রেজ ক‌রে রা‌খে। বি‌য়ের পরও ছে‌লেটা তার প‌রিবারকে বি‌য়ের কথা জানা‌তে চায়। কিন্তু মে‌য়ে‌টি নি‌ষেধ ক‌রে। ছে‌লেটা ভে‌বে‌ছি‌লো, যে‌হেতু তারা দুজ‌নেই চাক‌রিজী‌বি সেহেতু প‌রিবার মে‌নে নি‌তো কিন্তু মে‌য়েটা চায়‌নি তা। সে ছে‌লেটাকে কসম দি‌য়ে আট‌কে দেয়। মে‌য়েটার ম‌নে কী ছি‌লো ছে‌লেটা তা জানত না।
তা‌দের দু’জনার সংসার বল‌তে কিছু ছি‌লো না। ‌রোজ অফি‌সে দেখা হ‌তো, মা‌ঝে মা‌ঝে তারা ঘুরতে যেতো, হো‌টে‌লে গি‌য়ে থাকত, একে অপরের জৈ‌বিক চা‌হিদা মেটা‌তো। এছাড়া তা‌দের ম‌ধ্যে সাংসা‌রিক কো‌নো বিষয়ই ছি‌লো না।
ছে‌লেটার এসব একদম ভা‌লো লাগত না। সে সংসার কর‌তে চাই‌তো। মে‌য়েটা‌কে নি‌য়ে সু‌খে সংসার কর‌তে চাইতো। নি‌জের ঘর সাজা‌তে চাই‌তো। কিন্ত‌ু মে‌য়েটা সংসা‌রে আগ্রহী ছি‌লো না। তারম‌নে অন্য কিছু চল‌ছি‌লো।
এক‌দিন মে‌য়েটা হুট ক‌রে ছেলেটার কা‌ছে ডি‌ভোর্স চাইল। ছে‌লেটা কারণ জান‌তে চাই‌লে, জানা‌লো সে অন্য একজন‌কে ভা‌লোবাসে। তাও ছে‌লেটা ডি‌ভোর্স দি‌তে চায়‌নি। সেতো মে‌য়েটা‌কে ভা‌লোবাস‌তো, তা‌কে নি‌য়ে সু‌খে থাক‌তে চে‌য়ে‌ছি‌লো। ছে‌লেটা সোজাসু‌জি ব‌লে দেয়, সে ডি‌ভোর্স দি‌বে না। সে তা‌কে ভা‌লোবা‌সে, তার সা‌থে সংসার কর‌তে চায়। সবাই‌কে তা‌দের বি‌য়ের কথা জানা‌বে। তখন মে‌য়েটা জানায় বহু আ‌গেই সে ছে‌লেটার থে‌কে কৌশ‌লে ডি‌ভোর্স পেপ‌ে‌রে সাইন ক‌রি‌য়ে নি‌য়ে‌ছে। ছে‌লেটা এখন ডি‌ভোর্স দি‌তে রা‌জি হোক বা না হোক তা‌দের ডি‌ভোর্স অনেক‌দিন আগেই হ‌য়ে গে‌ছে।
‌ছে‌লেটা অসহায় হ‌য়ে মে‌য়েটার পা‌য়ে পর্যন্ত ধ‌রে, যা‌তে ছে‌লেটা‌কে ছে‌ড়ে না যায়। কিন্তু মে‌য়েটা ছে‌লেটার অনুভূ‌তির কো‌নো কদর ক‌রে‌নি। বরং ছে‌লেটা‌কে ছে‌ড়ে অন্য একজনার সা‌থে চ‌লে যায়।’

এতটু‌কো ব‌লে শিহাব থামল। রেনু বেশ বিস্ময় নি‌য়ে ‌জি‌জ্ঞেস করল,
‘তারপর?’
‘তারপর ছেলেটা ভাঙা মন নি‌য়ে তার শহ‌রে চ‌লে আসে। বছর খা‌নিক এভা‌বেই কে‌টে যায়। এক‌দিন মে‌য়েটা ছে‌লেটা‌কে ফোন ক‌রে। তারপর এক বিকা‌লে তারা দেখা ক‌রে। এতটু‌কো ব‌লে শিহাব কিছুক্ষণ থ‌ামল। তারপর বলল, রেনু তু‌মি কী জা‌নতে চাও ছে‌লেটা কে?’
‌রেনু উৎসুক চো‌খে তাকা‌লো। তারপর জি‌জ্ঞেস করল,
‘‌কে?’
‘‌ছে‌লেটা আর কেউ নয় তোমার স্বামী শিহাব। মে‌য়েটার নাম মুক্তি। আর নওশীন মু‌ক্তির-ই ছো‌টো বোন।’

‌রেনু যে বড় রক‌মের ধাক্কা খে‌লো তা ওর মুখ‌োভ‌ঙ্গি দে‌খে স্পষ্ট বুঝা গে‌ল। রেনু বেশ বড় বড় চোখে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘আপ‌নি বিবা‌হিত ছি‌লেন?’
‌শিহাব মাথা নিচু ক‌রে বলল,
‘হ্যাঁ।’
‘আ‌মি আপনার দ্বিতীয় স্ত্রী?’
‘হ্যাঁ।’
‘আমার পূ‌র্বেও আপ‌নি একজন‌কে ভা‌লোবাস‌তেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘তা‌কে খুব ভা‌লোবাস‌তেন?’
‘হ্য‌াঁ।’
‌রেনুর গলা ধ‌রে আস‌ছে। তারপর বলল,
‘তাহ‌লে আপনা‌দের মা‌ঝে আমি কী ক‌রে এলাম?’
‘তু‌মি কেন মা‌ঝে আস‌তে যা‌বে? তু‌মি বর্তমা‌নে আমার একমাত্র স্ত্রী এবং আমি শুধু তোমা‌কেই ভা‌লোবা‌সি।’
‘আপ‌নি এত বড় কথাটা আমার কাছ থে‌কে কেন লুকা‌লেন?’
‘তু‌মি কেন আমার প‌রিবারে কেউ-ই এ কথা জা‌নে না।’
‘আপ‌নি আমা‌কে এভা‌বে ঠকা‌লেন শিহাব?’
‘‌বিশ্বাস ক‌রো রেনু আমি তোমা‌কে ঠকাই‌নি। তু‌মি পু‌রো ঘটনাটা আবার মন দি‌য়ে শো‌নো তারপর যা বলার ব‌লো? পু‌রো ঘটনা শু‌নে য‌দি তোমার ম‌নে হয় আমা‌কে শা‌স্তি দেয়া দরকার, আমি সে শা‌স্তি মাথা পে‌তে নিব। তবুও প্লিজ মাথা ঠান্ডা ক‌রে ঘটনাগু‌লো শোনো। তারপর সিদ্ধান্ত তোমার। কারণ আমি অপরাধী।’
‌রেনু কান্না কর‌তে কর‌তে বলল,
‘ব‌লেন?’

চলবে…..