এক‌দিন বিকা‌লে সকাল হ‌য়ে‌ছি‌লো পর্ব-২৭+২৮

0
507

#এক‌দিন_বিকা‌লে_সকাল_হ‌য়ে‌ছি‌লো
‌লেখকঃ শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্বঃ২৭

৩৭!!
রাত নয়টা।
ছা‌দে দাঁ‌ড়ি‌য়ে শশী আর রাযীন গল্প কর‌ছে, দুষ্টু‌মি, খুনসু‌টি কর‌ছে। রাযীন কথা বল‌ছে শশী এক ধ্যা‌নে রাযী‌নের চো‌খে দি‌কে তা‌কি‌য়ে তা শুন‌ছে। রাযীন বলল,
‘এভা‌বে তা‌কি‌য়ে কী দেখ‌ছো?’
‘‌তোমার চোখ। রাযীন তোমার চো‌খের ম‌তো এত স্বচ্ছ আর মায়াবী চোখ সচারাচার ছে‌লে‌দের হয় না। আমি দে‌খি‌নি কখ‌নও। তোমার ‌চোখ যে‌নো তোমার হৃদ‌য়ে দর্পন। তোমার ভিত‌রের সকল কথা তোমার চোখ ব‌লে দেয়া। তোমার চো‌খে অদ্ভুত বিশুদ্ধতায় ভরা। তোমার চাহনি শীতল, নরম। দেখ‌লে ম‌নে হয়, শী‌তের সকা‌লের নরম রো‌দের ম‌তো মোলা‌য়েম। তোমার চো‌খের দি‌কে তাকা‌লে আমার তা‌কি‌য়ে থাক‌তে ইচ্ছা ক‌রে। ছে‌লে‌দের চোখ এত মায়া ভরা কেন হ‌বে? তা‌দের চাহনি এত শীতল, মোলা‌য়েম কেন হ‌বে?’
‘তাহ‌লে কেমন হবে?’
‘‌ছে‌লে‌দের চাহনি হবে ক‌ঠিন। চোখ থাক‌বে লাল‌চে, বা হলুদাভ কিন্তু তোমার চোখ সাধারণ চো‌খের ম‌তো-ই। চো‌খের ম‌নি গভীর কা‌লো। বা‌কিটা সাদা, আর অদ্ভুত রক‌মের স্বচ্ছ। সব‌চেয়ে বড় কথা, তোমার চো‌খের দি‌কে তাকালে তোমার শত্রুও মে‌বি তোমার মায়ায় প‌ড়ে যা‌বে।’

রাযীন হে‌সে বলল,
‘তু‌মি আমার চোখ নি‌য়ে যতটা বিশ্লেষন ক‌রো এতটা কেউ কখনও ক‌রে‌নি।’
‘হয়তো তারা আমার ম‌তো খেয়াল ক‌রে দে‌খে‌নি।’
‘হয়‌তোবা। ত‌বে আমার এটা ভা‌লো লা‌গে। ভীষণ ভা‌লো লা‌গে। তোমার প্র‌তি ভা‌লোবাসা আরও বে‌ড়ে যায়।’
‘রাযীন মাথা নিচু ক‌রে কা‌ছে এসো।’
রাযীন কা‌ছে আস‌তেই শশী, রাযীনের দুই চো‌খে-ই ঠোঁট ছুঁ‌য়ে বলল,
‘‌তোমার চোখদু‌টো আমার ভীষণ প্রিয়। এ দু‌টোর দি‌কে খেয়াল রেখ।’
রাযীন মৃদু হে‌সে গাল এগি‌য়ে বলল,
‘এখা‌নেও দুই একটা দি‌তে পা‌রো।’
শশী হে‌সে বলল,
‘এহ আস‌ছে। বস‌তে দি‌লে শু‌তে চায়।’
‘তু‌মি নিজ ইচ্ছায় ‌চো‌খে দিয়ে‌ছো এখন গা‌লেও লাগ‌বে।’
‘পারব না।’

রাযীন, শশী‌কে শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘‌দি‌তে হ‌বে।’
শশী বলল,
‘ছা‌ড়ো দি‌চ্ছি।’
রাযীন ছাড়‌তেই শশী দৌঁড়ে কিছুদূর গি‌য়ে বলল,
‘ছাদের দরজা পর্যন্ত যাবার আগে য‌দি আমা‌কে ধর‌তে পা‌রো। তাহ‌লে একটা না পাঁচটা দিব। শশী দৌড় দি‌লো, সা‌থে রাযীনও কিন্তু ছা‌দের দরজায় পৌঁছা‌নো একটু আগে রাযীন, শশী‌কে ধ‌রে বলল,
‘এখন দাও।’

শশী, রাযী‌নের থে‌কে নি‌জে‌কে ছা‌ড়ি‌য়ে বে‌খেয়া‌লে দৌঁড় দি‌লো। অঘটনটা তখনই ঘটল। বে‌খেয়ালে শশী পা পিছ‌লে সি‌ড়ি দি‌য়ে গ‌ড়ি‌য়ে প‌ড়ে যায়। ক‌য়েক‌ সি‌ড়ি পড়ার পর শশী কোনম‌তে নি‌জে‌কে সামলা‌লো। ঘটনা এত দ্রুত ঘ‌টে গে‌ছে যে, রাযীন বুঝ‌তেই পারল না কী হ‌য়ে‌ছে? শশীর চিৎকা‌রে দ্রুত ওর কা‌ছে আসল। শশীর কপা‌লের কিছু অংশ ফে‌টে রক্ত বের হ‌চ্ছে। রাযীন অনেক বেশি হতভম্ব হ‌য়ে গেল। খু‌শির মুহূর্ত মুহ‌র্তেই দুঃ‌খে প‌রিণত হ‌লো।

রাযীন, শশীর কপালটা চে‌পে ধ‌রে বলল,
‘অ‌নেক রক্ত বের হ‌চ্ছে।’
শশী বলল,
‘রাযীন কপাল ছা‌ড়ো আমার পা দে‌খো। আমার পা বোধহয় ভে‌ঙে গেছে।’
রাযীন হতভম্ব হ‌য়ে শশীর পা‌য়ের দি‌কে তাকাল। বাম পা‌য়ের পাতাটা সা‌থে সা‌থে-ই অনেকটা ফু‌লে গে‌ছে। ফোলাটা দেখ‌লেই বোঝা যায় পা ভে‌ঙে গে‌ছে। না ভাঙ‌লে এত বে‌শি ফু‌লে যায় না। শশী যন্ত্রনায় ছটফট কর‌তে কর‌তে বলল,
‘রাযীন আমার খুব কষ্ট হ‌চ্ছে। যন্ত্রনায় ম‌নে হ‌চ্ছে জানটা বে‌ড়ি‌য়ে যা‌বে। তাড়াতা‌ড়ি হস‌পিটা‌লে চ‌লো।’

রাযীন কী কর‌বে ভে‌বে পা‌চ্ছে না! শশী‌কে অতটা কষ্ট পে‌তে দে‌খে ওর হুশ জ্ঞান যে‌নো লোপ পা‌চ্ছে। শশীর ধাক্কায় হুশ আসল। শশী‌কে কো‌লে তু‌লে লিফ‌টে ক‌রে সাত তলায় নামল। রু‌মে ঢু‌কে শশী‌কে চেয়া‌রে ব‌সি‌য়ে ফ্রিজ খু‌লে অনেকগু‌লো বরফ একটা কাপ‌ড়ে পে‌চি‌য়ে নি‌য়ে শশীর মাথার ফাঁটা জ‌ায়গাটায় আর পা‌য়ের ব্যথা জায়গায় চে‌পে ধরল। শশী যন্ত্রনায় কাতা‌রাচ্ছে।

রাযীন দ্রুত ওর বোন সু‌মি‌কে কল ক‌রে ওদের ফ্ল্যা‌টে আস‌তে বলল। তারপর নি‌জেই শশীর মাথার কাটা জায়গাটা প‌রিষ্কার ক‌রে ব্যা‌ন্ডেজ ক‌রে দি‌লো। শশী পা‌য়ের যন্ত্রনায় ছটফট কর‌ছে দে‌খে বলল,
‘জান একটু সহ্য ক‌রো। আমরা এখন-ই হাসপিটা‌লে যাব। তোমার মাথায় ব্যা‌ন্ডেজ না কর‌লে তো সেখান থে‌কে রক্ত প‌ড়ে তোমার অবস্থা আরও খারাপ হ‌বে।’
সু‌মি, রা‌সেল ফ্ল্যা‌টে আস‌তেই রাযীন সং‌ক্ষে‌পে ঘটনা ব‌লে বলল,
‘আপা ঘ‌রের দি‌কে খেয়াল রে‌খো। আমি শশী‌কে নি‌য়ে হাসপাতা‌লে যা‌চ্ছি। রাযীন গা‌ড়ির চা‌বি প‌কে‌টে নি‌য়ে শশী‌কে কো‌লে নি‌লো। তারপর ফ্ল্যাট থেকে বের হ‌য়ে লিফ‌টে উঠল। সু‌মি, রা‌সেলও ওদের পিছু পিছু নিচ তলা পর্যন্ত আসল। সু‌মির স্বামী রা‌সেলও ওদের সা‌থে গেল। রা‌সেল গা‌ড়ি চালা‌চ্ছিল আর রাযীন, শশী‌কে নি‌য়ে পিছ‌নে বসল।

রাযীন বার বার শশীর গা‌লে হাত দি‌য়ে বল‌তে লাগল,
‘স‌রি শশী। আমার কার‌ণেই তোমার এ অবস্থা।’
রা‌সেল বলল,
‘কী হ‌য়ে‌ছি‌লো রাযীন?’
রাযীন বলল,
‘ছা‌দে ব‌সে ওর সা‌থে দুষ্টু‌মি কর‌তে গি‌য়ে বে‌খেয়া‌লে ‌সি‌ড়ি দি‌য়ে প‌ড়ে যায়। ভাইয়া ওর পা’টা বোধ হয় ভে‌ঙে গে‌ছে।’
রা‌সেল ম‌নে মনে বলল,
‘দু‌টোই ছাদ থে‌কে প‌ড়ে ম‌রে গে‌লে ল্যাটা চু‌কে যেত। আমা‌দের আর কো‌নো চিন্তা-ই থাক‌তো না। রহস্যময় হে‌সে রা‌সেল ম‌নে ম‌নে বলল, রাযীন তু‌মি নি‌জেও জা‌নো না, চট্টগ্রাম আসার সিদ্ধান্তটা তোমার জন্য কতটা ভয়াবহ হ‌তে যা‌চ্ছে। ম‌নে হয় না চট্টগ্রাম থে‌কে বেঁ‌চে ফিরতে পার‌বে। মু‌খে বলল, কী যে ক‌রো না তোমরা! দুষ্টু‌মি, খুনসু‌টি তো ঘ‌রে ব‌সেও করা যায়। গে‌লে ছা‌দে এখন দেখ‌লে কী অবস্থা!’
রাযীন বলল,
‘ভাইয়া দ্রুত চালান। শশীর কষ্ট হ‌চ্ছে।’
রা‌সেল ম‌নে ম‌নে বলল,
‘বউ-এর ক‌ষ্টে দেখ‌ছি শালার ক‌লিজা ধ‌রে গে‌ছে। যত্তসব ন্যাকা‌মি!’

হ‌াসপাতালে পৌঁ‌ছে শশীর পায়ের এক্স‌-রে করা‌নো হ‌লো। মাথা স্কান করা‌নো হ‌লো। শশীর মাথায় কো‌নো সমস্যা হয়‌নি। জাস্ট চামরাটা একটু ফেঁ‌টে গে‌ছে। তার জন্য সেলাইও লাগ‌বে না। ক‌’দিন পর এম‌নি‌-ই ঠিক হ‌য়ে যা‌বে। ত‌বে ওর পা‌ ভে‌ঙে‌ছে। পা‌য়ের পাতার হা‌ড্ডি ‌বেশ খা‌নিটা ফে‌ঁটে গে‌ছে। ডাক্তার বলল, ক্লোজড ফ্রাকচার। তারা শশীর পা টে‌নেটু‌নে সোজা ক‌রে প্লাস্টার ক‌রে দি‌লেন। প্লাস্টার করার সময় যন্ত্রনায় শশীর জানটা বে‌রি‌য়ে যা‌চ্ছিল। আর শশীর কষ্ট দে‌খে রাযীন জান বের হ‌য়ে যা‌চ্ছিল। প্লাস্টার করার পর শশী‌কে ডাক্তার বে‌ডে শুই‌য়ে দিয়ে বলল,
‘কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন। নি‌জে‌কে স্বাভা‌বিক করুন।’
ডাক্তার রাযীন‌কে বলল,
‘আমার চেম্বা‌রে আসুন।’
রাযীন তার সা‌থে যাবার পর ডাক্তার বল‌লেন,
‘‌বেশ ভা‌লোভা‌বেই ফ্র্যাকচার হ‌য়ে‌ছে। মোটামু‌টি একমাস তো লাগ‌বেই জোড়া লাগ‌তে। একমাস পা‌য়ে কো‌নো রকম প্রেসার দেয়া মানা। একমাস পর প্লাস্টার কাট‌তে নি‌য়ে আস‌বেন। আর ওষুধ লি‌খে দি‌য়ে‌ছি। এগু‌লো নি‌য়মিত খাওয়া‌বেন। ক‌’দিন ব্যথা, যন্ত্রনা অনেক হ‌বে। প্লা‌স্টা‌রের ম‌ধ্যের স্থান চুলকা‌তে পা‌রে ত‌বে তা‌তে বিরক্ত হ‌য়ে যে‌নো আবার প্লাস্টার খুলে না ফে‌লে খেয়াল রাখ‌বেন। কো‌নো সমস্যা হ‌লে আমা‌কে জানা‌বেন বা হস‌পিটা‌লে চ‌লে আস‌বেন। এখন চাইলে ওনা‌কে নি‌য়ে যে‌তে পা‌রেন, ভ‌র্তি করা‌নো লাগ‌বে না।’

রাযীন ডাক্তা‌রের সা‌থে কথা ব‌লে শশীর কা‌ছে গে‌ল। শশী চোখ বন্ধ ক‌রে আছে। রাযী‌নের নি‌জে‌কে ভীষণ অপরাধী ম‌নে হ‌চ্ছে। দুষ্টু‌মি কর‌তে গি‌য়ে শশী‌কে এতটা কষ্ট দি‌য়ে ফেল‌বে ভাব‌তে পা‌রে‌নি। যন্ত্রনায় শশীর চোখ মুখ এর ম‌ধ্যেই ব‌সে গে‌ছে। রাযীন, শশীর মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে বলল,
‘আমার চাঁদটা কষ্ট পা‌চ্ছে খুব।’
শশী চোখ মেলার সা‌থে সা‌থে ওর চো‌খের কোন গ‌ড়ি‌য়ে ক‌য়েক‌ফোঁটা অশ্রু গ‌ড়ি‌য়ে বা‌লি‌শে হা‌রি‌য়ে গেল। রাযীন, ওর চো‌খের পা‌নি মুছে বলল,
‘‌বে‌শি ব্যথা কর‌ছে?’
‘হুম।’
‘ডাক্তার ওষুধ দি‌য়ে‌ছেন খে‌লেই ক‌মে যা‌বে।’
‘আ‌মি বা‌সায় যাব।’
‘হ্যাঁ এখন-ই যা‌বো আমরা। ডাক্তার তোমা‌র পা‌য়ে প্রেসার নি‌তে নি‌ষেধ কর‌ছে। সো মাই প্রি‌ন্সেস কাম টু মাই ল্যাপ।’
শশী রাগ ক‌রে বলল,
‘এমন সময় কেউ এমন ক‌রে কথা ব‌লে?’
‘আ‌রে খারাপ কী বল‌ছি? তু‌মি তো হাঁট‌তে পার‌বে না তাই তোমা‌কে কো‌লে নি‌তে হ‌বে।’
শশী রাগ দে‌খি‌য়ে বলল,
‘‌কো‌লে নি‌তে হ‌বে না। আমি নি‌জেই হেঁ‌টে যে‌তে পারব।’
‘তু‌মি যে‌তে চাইলেই তো আমি যে‌তে দিব না।’

তারপর শশী‌কে কোলে তু‌লে ফিস‌ফিস ক‌রে বলল,
‘তু‌লোর পুতুল।’
রাযীন এসব শশীর মন ঘোরা‌নোর জন্য কর‌ছে। যা‌তে ব্যথার দি‌কে ওর ম‌নো‌যোগ কম থা‌কে। শশী লজ্জা পে‌লেও নাক ফু‌লি‌য়ে বলল,
‘এত যন্ত্রনায় তোমার রোমা‌ন্টিক কথা ভা‌লো লাগ‌ছে না। জল‌দি বাসায় চ‌লো আমি ঘুমা‌বো। আমার মাথা ব্যথা কর‌ছে। তাছ‌াড়া আমার খুদাও লাগ‌ছে খুব।’
‘তাহ‌লে আগে কিছু খে‌য়ে তারপর বাসায় যাই।’
‘এই অবস্থায় আমি কোথাও যাবো না। সোজা বাসায় চ‌লো। বাসায় গি‌য়ে ভাত খা‌বো।’
‘চ‌লেন ম্যাডাম।’

গা‌ড়ি‌তে যেতে যেতে রা‌সেল জি‌জ্ঞেস করল,
‘এখন কেমন লাগ‌ছে শশ‌ী?’
‘‌প্রচন্ড যন্ত্রনা কর‌ছে।’
‘‌তোমার মুখ দে‌খেই তা বোঝা যা‌চ্ছে। এরপর তোমরা ছোটাছু‌টি করার আগে হিসাব ক‌রে কর‌বে। রাযীন?’
‘হ্যাঁ ভাইয়া?’
‘‌তোমার কাজ কেমন চল‌ছে?’
‘আলহামদু‌লিল্লাহ। খুব ভা‌লো।’
‘এই প্র‌জেক্ট থে‌কে তোমার কত টাকা লাভ হ‌তে পা‌রে?’
‘চার কো‌টি টাকার ম‌তো।’
রা‌সেল, শশী দুজ‌নেই বেশ বড় ধাক্কা খে‌লো। শশী এখনও জা‌নে না রাযীনরা কত ধনী! শশী ম‌নে ম‌নে বলল,
‘বাবা-মা আমা‌কে এত ধনী প‌রিবা‌রে বি‌য়ে কেন দি‌লো? অবশ্য বাবা‌কে কী বলব সব তো মিস্টার রাযীন কর‌ছে।’
আর রা‌সেল ম‌নে ম‌নে বলল,
‘কর কর প্র‌ফিট কর। আরও প্র‌ফিট কর। কিন্তু শেষ‌মেস এই টাকা ভোগ তো আমরা-ই করব। তুই তো কব‌রে থাক‌বি। কব‌রে ব‌সে লাখ-কো‌টির হিসাব কর‌বি।’

ব‌াসায় পৌঁ‌ছা‌তে পৌঁছা‌তে রাত দেড়টা বে‌জে গে‌লো ওদের। শশী‌কে বিছানায় ব‌সি‌য়ে রাযীন বেশ হাপা‌চ্ছে। তা দে‌খে শশী হে‌সে বলল,
‘আ‌মি তো তু‌লোর পুতুল। তাহ‌লে হাঁপা‌চ্ছো কেন?’
‘‌তো তু‌লোর পুতু‌লে ওজন থা‌কে না না‌কি?’
‘তা তু‌লোর ওজন কী খুব বে‌শি?’
রা‌যীন হে‌সে বলল,
‘নাহ বে‌শি না। মো‌টে ৪৪ কে‌জি। তা কেন বে‌শি হ‌তে যা‌বে? আমি তো রোজ নু‌নের বস্তা টা‌নি তাই অভ্যাস আছে।’
শশী রাগ ক‌রে বলল,
‘কী বললা?’
‘‌কিছু না। তু‌মি চেইঞ্জ ক‌রে নাও। তোমার জামায় র‌ক্তের দাগ লেগে আছে।’
‘হুঁ আমার জামা দাও।’

রাযীন কাবাট থে‌কে শশীকে সু‌তির থ্রী-‌পিচ দি‌য়ে বলল,
‘নাও। চেইঞ্জ করো।’
‘‌তো তু‌মি কেন দাঁ‌ড়ি‌য়ে আছো?’
‘‌কেন চেইঞ্জ কর‌তে আমার ‌হেল্প লাগ‌বে না তোমার?’
‘জনাব আমার পা ভে‌ঙে‌ছে হাত নয়। আমি নি‌জের কাজ নি‌জে কর‌তে পারব। বের হও রুম থে‌কে।’
রাযীন দুষ্টু হে‌সে বলল,
‘এই যে এভা‌বে এখন তা‌ড়ি‌য়ে দি‌চ্ছো, এক‌দিন দেখ‌বে তোমার শরীর মন সব আমার দখ‌লে হ‌বে। তখন দেখব কী ক‌রে তাড়াও?’
‘‌সেটা যখন হ‌বে তখন দেখা যা‌বে। এখন বের হও।’

শশী জামা বদ‌লে রাযীন‌কে ডাকল। রাযীন রুমে ঢু‌কে বলল,
‘এর ম‌ধ্যে শেষ?’
‘আপ‌নি যে সে‌লোয়ার দি‌য়ে‌ছেন এটা প্লাস্টার পরা পা দি‌য়ে যা‌বে না। কাবা‌টে আমার আরও ঢিলা প্লাজু আছে সেটা দিন।’
রাযীন প্লাজুটা দি‌য়ে বলল,
‘এটা‌কে প্লাজু না ব‌লে পে‌টি‌কোট বল‌লেই হয়। ‌দেখ‌তে তেমনই। তোমরা মে‌য়েরা এটা প‌রে কি ক‌ম‌ফো‌র্টেবল ফিল ক‌রো?’
শশী রাগ ক‌রে বলল,
‘ক‌ম‌ফো‌র্টেবল ফিল না কর‌লে প‌রি কেন? এটা প্রায় সব মে‌য়ে‌দের পছন্দ।’
‘জা‌নি। রাস্তা ঘা‌টে বহুত দে‌খি। তু‌মি চেইঞ্জ ক‌রো, আমি ততক্ষ‌ণে একটু মা‌কে কল ক‌রে আসি।’
‘এত রা‌তে মা‌কে কেন কল কর‌বে?’
‘আ‌রে তোমার খবরটা দি‌তে হ‌বে না।’
‘‌কো‌নো প্র‌য়োজন নেই। শুধু শুধু সবাই টেনশন কর‌বে।’
‘‌জি না মা‌ঝে মা‌ঝে টেনশন করা ভা‌লো। টেনশ‌নে ভা‌লোবাসা লু‌কি‌য়ে থা‌কে।’

রাযীন, শশীর কথা না শু‌নে ফোন নি‌য়ে রু‌মের বাই‌রে চ‌লে গেল। শশী কাপড় পা‌ল্টে রাযীন‌কে ডে‌কে বলল,
‘রাযীন রান্না ঘ‌রে নি‌য়ে চ‌লো। খাবার রে‌ডি ক‌রে দি‌চ্ছি।’
‘আপনার এত টেনশন না নি‌লেও হ‌বে। খাবার রেডি কর‌ছি। কিন্তু তরকা‌রি নষ্ট হ‌য়ে গে‌ছে। তাই ডিম ভা‌জি কর‌তা‌ছি। পাঁচ মি‌নিট ব‌সেন।’
শশী মুখ ভার ক‌রে বলল,
‘‌তোমা‌কে ক‌’দিন খুব পেইন দিব তাই না?’
রাযীন, শশীর কা‌ছে এসে কপা‌লে চু‌মো খে‌য়ে বলল,
‘মা‌ঝে মা‌ঝে স্বামী-স্ত্রীর মা‌ঝে ছো‌টো ছো‌টো টেনশন হওয়া ভা‌লো। ভা‌লোবাসা গভীর হয়।’

খাবার পর শশী, রাযী‌নের বু‌কে মাথা দি‌য়ে বলল,
‘রাযীন?’
‘হ্যাঁ।’
‘তু‌মি আমায় কতটা ভালোবা‌সো?’
রাযীন গভীরভা‌বে শশী‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘এতটা যে, তুমি য‌দি ব‌লো রাযীন তোমার প্রাণটা আমায় দি‌য়ে দাও, আমি চোখ বন্ধ ক‌রে দি‌য়ে দিব। যতটা ভা‌লোবাস‌লে ভা‌লোবাসার মানুষটা ব্য‌তিত নিঃশ্বাস নি‌তেও কষ্ট হয়। ততটা।’
শশী খুব কান্না পে‌লো। রাযী‌নের বু‌কে মুখ লু‌কি‌য়ে বলল,
‘‌কেন ভা‌লোবা‌সো এতটা?’
‘জা‌নি না।’

শশী ম‌নে ম‌নে বলল,
‘রাযীন তোমার ভা‌লোবাসায়ই আমা‌য়ে বাধ্য কর‌ছে তোমায় ভা‌লোবাস‌তে। তু‌মি জা‌নো না ইদা‌নিং সারাটা সময় আমি শুধু তোমার কথাই ভা‌বি। না চাইতেও তোমার কথা ভা‌বি। চোখ বন্ধ কর‌লে, তোমার ছ‌বি ভে‌সে ওঠে। তোমার ছোঁয়া, তোমার স্পর্শ আমা‌কে ভিতর থে‌কে না‌ড়ি‌য়ে দেয়। সবসময় তোমা‌কে কা‌ছে পে‌তে মন চায়। সবসময় তোমার বু‌কের মা‌ঝে থাক‌তে মন চায়। তোমার স্পর্শ পে‌তে মন চায়। তুমি যখন কা‌ছে থা‌কো আমি খু‌শি‌তে থাকি। দূ‌রে থাক‌লে আমার মন বিষন্ন থা‌কে। মনটা সবসময় তোমা‌কে কা‌ছে চায়। তোমার বু‌কে শা‌ন্তি পাই। তু‌মি জা‌নো না আমি ইদা‌নিং তোমা‌কে নি‌য়ে দুষ্টু দুষ্টু স্বপ্ন দে‌খি। দে‌খি তু‌মি আমার কা‌ছে আস‌ছো, অনেক কা‌ছে আস‌ছো। এতটা কা‌ছে যে, তোমার নিঃশ্বাস আমার প্র‌তি‌টি স্পন্দন‌কে স্পর্শ কর‌ছে। আমার তখন নি‌জে‌কে অস্থির লা‌গে। তোমা‌কে মিস ক‌রি ভীষণ। তোমা‌কে বে‌শিক্ষণ না দেখ‌লে পাগল পাগল লা‌গে। এমন কেন ম‌নে হয় আমার? আমি কি ত‌বে তোমা‌কে…! ত‌বে আমি তোমায় এত দ্রুত এ কথা বলবো না। আমি তোমা‌কে অপেক্ষা করা‌চ্ছি না, বরং নি‌জে‌কে জানার চেষ্টা কর‌ছি। আমি নি‌জে‌কে আরও ভা‌লো ক‌রে জান‌তে চাই। এত দ্রুত তোমা‌কে কী ক‌রে ভা‌লো‌বে‌সে ফেললাম রাযীন? সে কার‌ণে আমি বুঝ‌তে চাই তোমা‌কে কতটা কতটা ভা‌লোবে‌সে ফে‌লে‌ছি? তোমাকে ভা‌লো‌বে‌সে নি‌জে‌কে নি‌ঃশ্ব কর‌তে চাই। নি‌জের সবটা দি‌য়ে শুধু তোমা‌কে কেবল তোমা‌কে-ই ভা‌লোবাস‌তে চাই।’
‘শশী।’
‘হুঁ।’
‘ঘু‌মি‌য়ে‌ছো?’
‘না।’
‘ব্যথা বে‌শি কর‌ছে?’
‘হ্যাঁ।’
‘ওষুধ খে‌য়ে‌ছো, এখন ঘুমাও তাহলে ক‌মে যা‌বে।’
‘হুম।’
‘আই লাভ ইউ।’
শশী, রাযী‌নের বু‌কে চু‌মো খে‌লো। ম‌নে ম‌নে বলল,
‘হয়তো আমিও।’

৩৮!!
‘‌শিহাব।’
‘ব‌লো রেনু?’
‘মু‌ক্তি আপার মৃত্যুর জন্য আপ‌নি কীভা‌বে দায়ী?’
‘শুন‌বে তু‌মি এখন?’
‘হ্যাঁ ব‌লুন।’
‘‌রেনু ত‌ু‌মি মান‌সিকভা‌বে প্রস্তুত তো?’
‘হ্যাঁ।’

চল‌বে…

#এক‌দিন_বিকা‌লে_সকাল_হ‌য়ে‌ছি‌লো
‌লেখকঃ শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্বঃ ২৮

‘সে‌দিন চাক‌রি ছেড়ে আমি ঢাকা থে‌কে বরাব‌রের ম‌তো ফ‌রিদপুর মা‌নে নিজ শহ‌রে চ‌লে আসি। ঢাকা আর আমার মন টিক‌তো না। ভিতর থে‌কে একেবা‌রে ভে‌ঙে প‌ড়ে‌ছিলাম খুব। এখা‌নে ফেরার পর নি‌জে‌কে কো‌নো না প্রায় এক বছর পর মু‌ক্তি আমা‌কে কল ক‌রে। প্রথম ক‌য়েকবার ওর কল রিসিভ না কর‌লেও, প‌রে রি‌সিভ ক‌রি। রি‌সিভ করার পর বলে‌ছি‌লো,
‘‌কেমন আছো, শিহাব?’
‘ভা‌লো।’
‘আমা‌কে জি‌জ্ঞেস কর‌বে না আমি কেমন আছি?’
‌’জি‌জ্ঞেস করার কী আছে? বড়‌লোক প‌টি‌য়ে‌ছো ভা‌লো তো থাক‌বেই।’
‘আর লজ্জা দিও না শিহাব।’
‘আজব! লজ্জার কী আছে? যা স‌ত্যি তাই বললাম।’
‘‌শিহাব, তু‌মি কি আমার সা‌থে দেখা কর‌তে পার‌বে?’
‘‌কেন?’
‘‌একটু জরুরি কথা ছি‌লো।’
‘‌ফো‌নে ব‌লো।’
‘‌ফো‌নে বলা যা‌বে না।’
‘আ‌মি এখন ঢাকা আস‌তে পারব না।’
‘‌প্লিজ শিহাব। ফ‌রিদপুর থে‌কে ঢাকা আস‌তে তো বে‌শি সময় লা‌গে না।’
‘‌তো?’
‘তু‌মি চেষ্টা কর‌লেই পার‌বে?’
‘অসম্ভব।’
‘‌প্লিজ শিহাব আল্লাহর দোহাই লা‌গে, প্লিজ আসো। আমি তোমার সা‌থে দেখা‌ কর‌তে চাই।’
‘‌কেন?’
‘‌বললাম তো কিছু জরু‌রি কথা আছে।’
আ‌মি বেশ রাগ ক‌রে-ই ব‌লে‌ছিলাম,
‘তোমার জরুরি প্র‌য়োজ‌নে আমার কী?’
‘‌প্লিজ।’
‘না।’
‘‌প্লিজ।’
এতবার অনু‌রোধ করার পর না কর‌তে পারলাম না। ব‌লে‌ছিলাম,
‘ক‌বে দেখা কর‌বে?’
‘শুক্রবার বিকা‌লে।’
‘আচ্ছা আমি পৌঁ‌ছে যাব।’

ঢাকায় পৌঁছা‌নোর পর আমরা একটা ক্যা‌ফে‌তে দেখা করলাম। মু‌ক্তি দেখ‌তে আগের ম‌তো সুন্দর নেই। চো‌খের নি‌চে কা‌লি প‌ড়েছে, মুখ শু‌কি‌য়ে ছো‌টো হ‌য়ে গে‌ছে। ওর পেটাও হালকা ভারী দেখা‌চ্ছিল। আমি ভাবলাম হয়‌তো একটু মোটা হয়ে‌ছে, বা ব‌ড়োলোক নতুন স্বামীর দা‌মি খাবার খেয়ে চ‌র্বি জ‌মে‌ছে। আমাকে দে‌খে মু‌ক্তি বলল,
‘‌কেমন আছো?’
দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে আমি বললাম,
‘ভা‌লো। ব‌সো, তারপর ব‌লো কী বল‌বে? আমা‌কে আবার রা‌তেই ফ‌রিদপুর ‌ফির‌তে হ‌বে।’

‌কিছুক্ষণ চুপ থে‌কে মু‌ক্তি বলল,
‘‌শিহাব!’
‘হ্যাঁ।’
‘আমা‌কে ক্ষমা ক‌রো।’
আ‌মি কিছুক্ষণ চুপ থে‌কে ব‌লে‌ছিলাম,
‘আচ্ছা করলাম।’
মু‌ক্তি বেশ অবাক হ‌য়ে ব‌লে‌ছি‌লো,
‘তু‌মি স‌ত্যি আমাকে মাফ ক‌রে‌ছো?’
‘হ্যাঁ। আস‌লে ভে‌বে দেখলাম, মানুষ যে কা‌জে খু‌শি পায় তা‌র সেটাই করা উচিত। তোমার খু‌শি ছি‌লো রু‌মেল সা‌হেব তো তু‌মি তার কা‌ছে গে‌ছো। আমার খু‌শি আমার প‌রিবার আমি তা‌দের কা‌ছে চ‌লে গে‌ছি।’
‘‌বি‌য়ে ক‌রে‌ছো?’

আমি মিথ্যা বললাম।
‘না ক‌রি‌নি। ত‌বে মে‌য়ে দেখা হ‌য়ে গে‌ছে। শীঘ্রই বি‌য়ের ডেট ফাইনাল হ‌য়ে যা‌বে।’
‘যার সা‌থে বি‌য়ে ঠিক হ‌য়ে‌ছে তা‌কে ভা‌লোবা‌সো?’
‘এখনও ভা‌লোবা‌সি‌নি ত‌বে নি‌জের স্ত্রী‌কে কোন স্বামী ভা‌লো না বে‌সে পা‌রে?’
‘‌শিহাব তু‌মি কি আমা‌কে এখনও ভা‌লোবা‌সো?’
আ‌মি বেশ ক‌ঠিন ক‌রে বললাম,
‘না।’
‘আ‌গে তো ভীষণ ভা‌লোবাস‌তে।’
‘‌সেটা অতীত।’
‘‌তোমার সেই অতী‌তের ভা‌লোবাসা য‌দি আজ তোমার কা‌ছে কিছু চায় ত‌বে কি তু‌মি তা‌কে তা দি‌বে? প্লিজ বর্তমানটা ভু‌লে যাও। ম‌নে ক‌রো, আমরা অতী‌তের সেই শিহাব আর মু‌ক্তি। তো অতী‌তে সেই মু‌ক্তি য‌দি তোমার কা‌ছে ‌কিছু চায় ত‌বে দি‌বে তা‌কে?’
‘আ‌গে শু‌নি কী চাও। তারপর সিদ্ধান্ত নিব।’

মু‌ক্তি কিছুক্ষণ চুপ ক‌রে রইল। হয়‌তো কথা বলার জন্য প্রস্তু‌তি নি‌চ্ছিল বা সাহস যোগা‌চ্ছিল। তারপর বলল,
‘তু‌মি আমা‌কে আব‌ার বি‌য়ে করে নাও।’
কথাটা শু‌নে আমার এত হা‌সি পে‌লো যে, বেশ শব্দ ক‌রে হাস‌তে লাগলাম। আশে পা‌শের টে‌বি‌লের ক‌য়েকজন লোকও অামার হা‌সি শুনে আমার দি‌কে তা‌কি‌য়েছি‌লো। আমি হাস‌তে হাস‌তে বললাম,
‘মু‌ক্তি তু‌মি দেখ‌ছি ইদা‌নিং বেশ মজা করা শি‌খে‌ছো?’
মু‌ক্তি অসহায় চো‌খে আমার দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘আ‌মি মজা কর‌ছি না শিহাব।’
‘তাহ‌লে এটা তোমার সি‌রিয়াস জরুরি কথা? রি‌য়েলী মু‌ক্তি তোমার ম‌নে হয়, এত কিছু হবার পরও আমি আবার তোমায় গ্রহণ ক‌রার ম‌তো ভুল করব? আচ্ছা আমি চললাম।’

তখন মু‌ক্তি ব‌লে উঠল,
‘আ‌মি প্রেগ‌নেন্ট শিহাব।’
আ‌মি আবার চেয়া‌রে ব‌সে বললাম,
‘ওয়াও গুড নিউজ। তা তোমার স্বামী মিস্টার রু‌মেল কোথ‌ায়?’
দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে মু‌ক্তি বলল,
‘রু‌মেল আমা‌কে বি‌য়ে ক‌রে‌নি।’
আ‌মি তা‌চ্ছিল হে‌সে বললাম,
‘বাহ্! বি‌য়ে না ক‌রেই তোমা‌কে মা বা‌নি‌য়ে দি‌লো? বেশ ফাস্ট দেখ‌ছি রু‌মেল সা‌হেব। বু‌ড়ো ভামটার প্র‌তিভার তা‌রিফ না ক‌রে পার‌ছি না! যা হোক সেটা তোমাদের বিষয়। আমা‌কে‌ কেন ডে‌কে‌ছো সেটা ব‌লো?’
‘রু‌মেল আমা‌কে চিট ক‌রে‌ছে। আমা‌কে বি‌য়ে করার কথা ব‌লে…! আমিও তার টাকা, বিলা‌সিতার চাক‌চি‌ক্যে সব ভু‌লে গে‌ছিলাম। মানুষ চেনার ক্ষমতা হা‌রি‌য়ে ফেল‌ছিলাম। আমার চো‌খে বিলা‌সিতার ছা‌নি প‌ড়েছি‌লো যে, তোমার শুদ্ধতম ভা‌লোবাসা দেখ‌তে পা‌রি‌নি। নি‌জের বড় বড় স্বপ্ন পূরণ কর‌তে রু‌মেল সা‌হেব‌কে নি‌জের সফলতার সি‌ড়ি ভে‌বে‌ছিলাম কিন্তু সেটা ছি‌লো আমার বোকা‌মি, ‌চো‌খের ধোকা।’

দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে বেশ সাধারণভা‌বেই আমি বললাম,
‘‌তো এখন আমি কী কর‌তে পা‌রি?’
‘‌কিছুমাস আগে আমার পি‌রিয়ড মিস হয়। খেয়াল ক‌রে দেখলাম, প্রায় চার মাস যাবত আমার পি‌রিয়ড হ‌চ্ছে না। আস‌লে কা‌জে, ব্যস্ততায় নি‌জের এসব দি‌কে খেয়াল করার সময়-ই পাই‌নি। তাছাড়া তু‌মি তো জান‌তে আমার পি‌রিয়ড অনিয়‌মিত। মা‌ঝে মা‌ঝে তিন-চার মাস পরও পি‌রিয়ড হয়। সে কার‌ণে বিষয়টার দি‌কে অত গুরুত্ব সহকা‌রে খেয়াল ক‌রি‌নি। তারপরও একটা টেস্ট করালাম। যে‌হেতু রু‌মে‌লের সা‌থে আমার অবাধ মেলা‌মেশা ছি‌লো। টেস্ট ক‌রে জান‌তে পারলাম আমি প্রেগনেন্ট। য‌দিও আমি বাচ্চা চাই‌নি তবুও ভুলবসতো হ‌য়ে গে‌ছে।
রু‌মেল‌কে জানালাম সে বলল, এবরশন ক‌রি‌য়ে নি‌তে। আমিও ভাবলাম, এখন বাচ্চা মা‌নেই ঝা‌মেলা। আমার স্ব‌প্নের প‌থে বাঁধা। ডাক্তা‌রের কা‌ছে গেলাম কিন্তু ডাক্তার বল‌লেন, বাচ্চার বয়স অল‌রে‌ডি ষোল সপ্তা‌হের বে‌শি হ‌য়ে গে‌ছে। এ মুহূ‌র্তে এবরশন করার ম‌তো রিক্স তারা নি‌তে পার‌বে না। তাছাড়া আমার শরীর এখন এবরশন করার জন্য রে‌ডি না। এবরশন করা‌লে আমার প্রাণহানী হ‌তে পা‌রে। তাছাড়া এবরশন করা‌তে হ‌লে, আমার স্বামীর সাক্ষর লাগ‌বে।
কথাটা আমি রু‌মে‌লকে জানাল‌াম। বললাম আমরা বি‌য়ে ক‌রে‌ ফে‌লি। সে একেবা‌রে না ক‌রে দি‌লো। শুধুই তা-ই করল না কিছু‌দিন পর আমা‌কে চাক‌রিচুত্য করল। আমার সাথে যোগা‌যোগ বন্ধ করল। তা‌কে পু‌লি‌শের ভয় দেখা‌লে বলল, ওমন দ‌ুই চার থানার পু‌লিশ, বড় বড় মন্ত্রী, মি‌নিষ্টার তার প‌কে‌টে থা‌কে। তাছাড়া ডিএনএ টেস্ট ক‌রেও য‌দি প্রমাণ করার ‌চেষ্টা ক‌রি বাচ্চাটা তার তা-ও পারব না। কারণ রি‌পে‌ার্ট ভুল প্রমাণ কর‌তে তার দুই মি‌নিট লাগ‌বে না। আমি কী করব বুঝ‌তে পারছিলাম না! রু‌মে‌লের কাছে আকু‌তি মিন‌তি কম ক‌রি‌নি। কিন্তু তা‌তে লাভ হয়‌নি। আমার সা‌থে সে সম্পূর্ণভা‌বে যোগা‌যোগ বি‌চ্ছিন্ন ক‌রে দেয়। বর্তমা‌নে সে দে‌শের বাই‌রে। তারপর অনেক ভাবলাম। তারপর তোমার কথা ম‌নে পড়ল।
তোমার আর আমার বি‌য়ের কথা নওশীন আর মা‌হিন জা‌নে কেবল। কিন্তু ডি‌ভো‌র্সের কথা মা‌হিন ব্য‌তিত কেউ জা‌নে না। মা‌হিন কাউ‌কে বল‌বেও না। তু‌মি তো আমা‌কে অনেক ভা‌লোবা‌সো।’

আ‌মি অনেককটা অবাক হ‌য়ে ব‌লে‌ছিলাম,
‘‌তো?’
‘প্লিজ শিহাব আমা‌কে আবার বি‌য়ে ক‌রে নাও। বাচ্চাটা‌কে আর আমা‌কে বাঁচাও। আমরা সবাই‌কে বলব বাচ্চাটা আমা‌দের। তু‌মি-ই তো বল‌তে তোমার প‌রিবার তোমার কো‌নো কথা অবিশ্বাস ক‌রে না। তু‌মি প্লিজ আমা‌কে গ্রহণ ক‌রো।’
আ‌মি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। তারপর বললাম,
‘মু‌ক্তি আমার ম‌নে হ‌চ্ছে, টেনশ‌নে তোমার মান‌সিক অবস্থার অনেক অবনতি হ‌য়ে‌ছে। সে কার‌ণে উল্টা-পাল্টা কথা বল‌ছো। তোমার একজন মান‌সিক ডাক্তার দেখা‌নো প্র‌য়োজন। আর মু‌ক্তি জীব‌নে আমি বহু মে‌য়ে‌কে চি‌নে‌ছি, জে‌নে‌ছি কিন্তু তোমার ম‌তো স্বার্থপর, মেরুদন্ডহীন, র্নিলজ্জ মে‌য়ে আমি জীব‌নে দে‌খি‌নি। এই তু‌মি না মে‌য়ে? মে‌য়ে‌দের তো লজ্জা থা‌কে! তোমার নেই কেন? ছি! নি‌জের পাপ ঢাক‌তে এখন আমা‌কে ব্যবহার কর‌তে চাই‌ছো? একবার আমা‌কে ব্যবহার ক‌রে ছু‌ড়ে ফে‌লে দি‌য়ে‌ছি‌লে। অনেক ক‌ষ্টে নি‌জে‌কে গু‌ছি‌য়ে‌ছি। এখন আবার আস‌ছো আমার গোছা‌নো জীবন এলোমে‌লো কর‌তে। তোমা‌কে আমি সে সু‌যোগ দিব না। আমার মন অত বড় নয় যে, একবার কা‌রও কাছ থে‌কে প্রতা‌রিত হ‌বার পরও আবার তা‌কে কা‌ছে টে‌নে নিব। আমার মন অত বড় নয়। যে, একবার আমার সা‌থে প্রতরনা ক‌রে আমি দ্বিতীয়বার তার মুখদর্শনও ক‌রি না। তোমার কপাল ভা‌লো যে, আমি তোমার সা‌থে দেখা কর‌তে এসে‌ছি। কু‌কু‌রের মুখ দেয়া খাবার কো‌নো মানুষই খায় না। আর আমিও তো মানুষ, তাই ভ‌ক্তি হয় না।’

তারপরও মু‌ক্তি আমা‌কে অনেকভা‌বে বুঝা‌নোর চেষ্টা করল। শেষ‌মেস আমা‌কে ইমোশনালী ব্ল্যাক‌মেইল কর‌তে লাগল। তারপর আমি ব‌লে‌ছিলাম,
‘দে‌খো মু‌ক্তি আমা‌কে এ ইমোশনাল ব্ল্যাক‌মেইল ক‌রে তোমার লাভ হ‌বে না। তু‌মি আ*ত্ম*হ*ত্যা ক‌রো, নয়তো তার চে‌য়ে বে‌শি কিছু ক‌রো, আমার তাতেকিছু যায় আসে না। তু‌মি আমা‌কে মান‌সিকভা‌বে এমনভা‌বে ভা‌ঙে‌ছো যে, আমি জা‌নি না কী ক‌রে নি‌জে‌কে আবার আগের ম‌তো স্বাভা‌বিক করব! তুমি আমার জীবনটাকে শেষ ক‌রে দি‌য়ে‌ছো? মন থে‌কে ভা‌লোবাসা নামক শব্দটাকে মে‌রে ফে‌লে‌ছো। এখন তু‌মি যা ইচ্ছা ক‌রো, আমার তা‌তে কিছু আসে যায় ন‌া।’
মু‌ক্তি বেশ শক্ত ক‌রে বলল,
‘আ‌মি কিন্তু সত্যি-ই এখন নি‌জের প্রাণ দি‌য়ে দিব।’
‌সে‌দিন ক‌ঠিন মু‌খে ব‌লে‌ছিলাম,
‘এজ ইউর উইশ।’

মু‌ক্তি আমার কথাগু‌লো এত সি‌রিয়াস‌লি নি‌বে আমি ভা‌বিনি। ও তখন-ই ক্যা‌ফে থে‌কে বের হ‌য়ে রাস্তার দি‌কে দৌড় দি‌লো। আমি ভাব‌ছিলাম হয়‌তো ও আমা‌কে ভয় দেখা‌চ্ছে। কারণ ওর নাটক তো আমি কম দে‌খি‌নি। তা-ও আমি উঠে ওকে থামা‌তে গেলাম। হঠাৎ ও রাস্তার মা‌ঝে গি‌য়ে চলন্ত একটা ট্রা‌কের সাম‌নে লাফ দি‌লে‌া। আমিও কিছু না ভে‌বে ওকে বাঁচা‌তে দৌঁড় দিল‌াম।

তারপর আমার আর সে বিকালের কথা কিছু ম‌নে নেই। আমার জ্ঞান ফিরল তখন আমি হস‌পিটা‌লের বে‌ডে, মু‌খে অক্সি‌ে‌জেন মাস্ক, মাথায় তীব্র যন্ত্রনা আর হাত একটা ভাঙা। গলায় প্রচন্ড ব্যথা। আমার পা‌শে ব‌সে মা কাঁদ‌ছেন। সে‌দিন বিকা‌লে আমার জীব‌নে রাত আসে‌নি, এসে‌ছি‌লো সরাস‌রি সকাল।

ভাবলাম কাউ‌কে জি‌জ্ঞেস করব কীভা‌বে কী হ‌লো? কিন্তু গলায় প্রচন্ড ব্যথার কারণে আমার কী হয়ে‌ছি‌লো কিংবা মু‌ক্তির কথা কাউ‌কে জি‌জ্ঞেস কর‌তে পারলাম না। ডান হাত ভে‌ঙে গে‌ছি‌লো বিধায় লি‌খেও কিছু বল‌তে বা জান‌তে পা‌রি‌নি। তিনদিন পর আমি একটু একটু কথা বলতে পারলাম।

তখন ভাইয়া‌কে জি‌জ্ঞেস করলাম,
‘ভাইয়া আমার কী হ‌য়ে‌ছি‌লো?’
ভাইয়া প্রচন্ড রাগ ক‌রে বলল,
‘সিনেমার হি‌রো‌দের ম‌তো ন্যাকা‌মি কর‌বি না। ঢাকার রাস্তা মা‌নেই প্রচন্ড ব্যস্ত। ওমন ব্যস্ত রাস্তায় কেন দৌড় দি‌ছি‌লি হারা‌মি? তো‌রে কি পাগলা কুত্তায় লড়াই‌ছি‌লো? না‌কি ষা‌ঁড়ে গুতা দি‌ছি‌লো যে চলন্ত গা‌ড়ির সাম‌নে দৌড় দি‌ছিস? আল্লাহর অশেষ রহমত ছি‌লো যে, ত‌ুই বেঁ‌চে গে‌ছিস।
ক‌’দিন যাবত আমাদের উপর দি‌য়ে কী যা‌চ্ছে বুঝ‌তে পার‌ছিস? মা-বাবা অসুস্থ হ‌য়ে গে‌ছেন। শশী কেঁ‌দে কে‌টে সারা বা‌ড়ি মাথায় ক‌রে রাখ‌ছে। তোর ভা‌বিও টেনশ‌নে আর সংসা‌রের চা‌পে অসুস্থ প্র‌ায়। আর আমি তো‌কে নি‌য়ে ছোটা‌ছু‌টি কর‌ছি।
ঘ‌রের সবাই যে যার ম‌তো আমার কা‌ছে তাদের কষ্টটা ব‌লে যা‌চ্ছে কিন্তু আমি কার কা‌ছে বল‌বো? আমি তো বড় ছে‌লে ঘ‌রের। আমার একটা মাত্র ছোট ভাই, আমার সব‌চে‌য়ে প্রিয় মানুষটা এক‌সি‌ডেন্ট ক‌রে হস‌পিটা‌লের জরু‌রি বিভা‌গে চি‌কিৎসাধীন অবস্থায় প‌ড়ে আ‌ছে। সে বাঁচ‌বে কিনা ডাক্তারা স‌ঠিক বল‌তে পার‌ছি‌লো না! বুঝ‌তে পার‌ছিস আমার কেমন লাগ‌ছি‌লো? ভাইয়া চোখ মু‌ছে আবার বলল, কেন‌রে পা‌জি তুই কেন এমন ক‌রিস? আমা‌কে হয়রান ক‌রে তুই মজা পাস? ছো‌টো‌বেলা থে‌কে কম জ্বা‌লিয়ে‌ছিস যে, এখস দামড়া হ‌য়েও জ্বালা‌চ্ছিস?’

আ‌মি আস্তে ক‌রে বললাম,
‘স‌রি ভাই।’
‘‌তোর স‌রি তুই ওষু‌দের সা‌থে গি‌লে খা। তুই হুট ক‌রে ঢাকা কেন আস‌ছি‌লি?’
‘ব‌লে এসে‌ছিলাম তো, কিছু কাজ ছি‌লো।’
‘‌নিকু‌চি ক‌রি তোর কা‌জের। আর কো‌নো‌দিন বা‌ড়ির বাই‌রে পা দি‌লে তোর পা-ও আমি ভে‌ঙে ফেলব। এক‌সি‌ডেন্ট এর দিন বিকা‌লে একজন তোর ফোন থে‌কে কল করল। আমি ভাবলাম তুই কিন্তু কথা বলল আরেকজন। আ‌মি তার কা‌ছে তোর সম্প‌র্কে জ‌ানলাম। তারপর বাবা‌কে নি‌য়ে সোজা ঢাকা হাসপাতা‌লে আসলাম। তো‌কে এখা‌নেই আনা হ‌য়ে‌ছি‌লো। তোর সাথে একটা মে‌য়েও এক‌সি‌ডেন্ট ক‌রে‌ছি‌লো।

মে‌য়ের কথা শু‌নে আমি উদ্দিঘ্ন হ‌য়ে জি‌জ্ঞেস করলাম,
‘‌মে‌য়েটা ঠিক আছে?’
ভাইয়া মন খারাপ ক‌রে ব‌লে‌ছি‌লেন,
‘না মে‌য়েটা মারা গে‌ছে। মে‌য়েটার ফো‌নে তোর নাম্বার ছি‌লো। মে‌য়েটা কে?’
মু‌ক্তির মৃত্যু খবর শু‌নে আমি যে‌নো বোবা হয়ে গেলাম। চোখ থে‌কে অশ্রুধারা বইতে লাগল। ম‌নে ম‌নে বল‌ছিলাম, হোক মু‌ক্তি খারাপ তবুও তা‌কে ভীষণ ভা‌লোবাসতাম। কষ্ট হ‌চ্ছিল ওর জন্য খুব। নি‌জে‌কে অপরাধী ম‌নে হ‌চ্ছিল। ম‌নে হ‌চ্ছিল, আমার কার‌ণেই ও মারা গে‌ছে। মে‌য়েটা কতমাস যাবত অনেক টেনশন আর কষ্টে ছি‌লো। আমার কা‌ছে সহায়তা চাইল কিন্তু আমি ওকে চরম অপমান ক‌রে মৃত্যুর দিকে ঠে‌লে দিলাম। এ আমি কী করলাম?’
ম‌নে ম‌নে বিড়‌বিড় কর‌ছিলাম আর কাঁদ‌ছিলাম।

ভাইয়া ক‌য়েকবার জি‌জ্ঞেস কর‌লেন, মে‌য়েটা কে?’
আ‌মি নি‌জে‌কে কিছুটা স্বাভা‌বিক ক‌রে, ধীর গলা বললাম,
‘আমার ক্লাস‌মেট।’
‘‌সে কথা‌ আমরা আগেই শু‌নে‌ছিলাম। পু‌লিশ তার ফো‌নে তোর নাম্বার পে‌য়ে আমা‌দের জি‌জ্ঞেস ক‌রে‌ছি‌লো মে‌য়েটা‌কে চি‌নি কিনা? আমরা তো চি‌নতাম না, তাই না ব‌লে দি‌য়ে‌ছিলাম। আর মে‌য়েটার মা এবং মামা এসে‌ছি‌লেন মেয়েটার ব‌ডি নি‌তে, তারাও তো‌কে চিনত না। প‌রে পু‌লিশ খোঁজ নি‌য়ে দেখল, তোরা একই ভা‌র্সি‌টিতে মাস্টার্স কর‌তি প্লাস একই অফিসে এক বছর আগে জব কর‌তি। আমরা ভে‌বেছিলাম তো‌দের অন্য কো‌নো সম্পর্ক আছে। কিন্তু প‌রে মে‌য়েটার বেস্ট ফ্রেন্ড মা‌হিন বলে‌ছি‌লো, তোরা না‌কি শুধু বন্ধু ছি‌লি। তাছাড়া কিছু না। মে‌য়েটার ব‌ডি পোস্টম‌র্টেম কর‌তে দেয়া হয়‌নি। মেয়েটার মা অনেক কান্নাকা‌টি ক‌রে পোস্টম‌র্টেম কর‌তে দেয়‌নি। তি‌নি চান না, তার মে‌য়ে এত কষ্ট পে‌য়ে মারা যাবার পর আবার তার শরীর কাটা ছেড়া করা হোক।’

আ‌মি খা‌নিকটা অবাক হ‌য়ে বললাম,
‘‌মে‌য়েটার মা কাঁদল আর পু‌লিশ তার কথা মানল?’
‘সেটা আমারও স‌ন্দেহ হ‌য়ে‌ছি‌লো। গোপ‌নে খোঁজ নি‌য়ে জানলাম কো‌নো প্রভাবশালী ব্য‌ক্তি না‌কি ফোন ক‌রে পোস্টম‌র্টেম কর‌তে নি‌ষেধ কর‌ছে।’
‌আমি বু‌ঝে গে‌লাম। এটা রু‌মেল সা‌হেব ব্য‌তিত আর কেউ নয়। কারণ পোস্টম‌র্টেম কর‌লে তো তার নোংরা‌মিগু‌লো সবাই জে‌নে যে‌তো। তারপর ভাইয়া বল‌ছিলেন,
‘স‌ত্যি কি তোরা বন্ধু ছিলি?’

আর ভাইয়ার কাছে কিছু লুকালাম না। সব খু‌লে বললাম। শু‌নে ভাইয়া দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে ব‌লে‌ছি‌লেন,
‘যা ব‌লে‌ছিস আমা‌কে বল‌ছিস এ পর্যন্ত-ই শেষ। এ বিষ‌য়ে আর কো‌নো কথা কা‌রও সা‌থে কখনও বল‌বি না। বাবা-মা জান‌তে পার‌লে ম‌রে যা‌বেন। য‌দি সবার এবং নি‌জের ভা‌লো চাস ত‌বে সবসময় ম‌নে কর‌বি তোর কা‌লো অতীত ব‌লে কিছু নেই। মু‌ক্তি না‌মে কেউ তোর জীব‌নে আসে‌নি। তুই শিহাব, শুধু আমা‌দের শিহাব।’

এতটু‌কু ব‌লে থামল শিহাব। রেনু‌কে বলল,
‘আমা‌কে একটু পা‌নি দাও রেনু।’
‌রেনু পা‌নি দি‌য়ে বলল,
‘তারপর কী হ‌লো?’

চল‌বে….