এক‌দিন বিকা‌লে সকাল হ‌য়ে‌ছি‌লো পর্ব-৩৭+৩৮

0
475

#এক‌দিন_বিকা‌লে_সকাল_হ‌য়ে‌ছি‌লো
‌লেখক: শারমিন আক্তার সাথী
পর্ব:৩৭

রেনুরা বা‌ড়ি ফেরার পর।
তখন সময়টা সন্ধ্যার অনেক পর। রেনু, কাপড় পা‌ল্টে কেবল বসল। বেশ ক্লান্ত লাগ‌ছে শরীরটা। তখন রেনুর বাবা হা‌মিদ কাজী রেনু‌কে কল কর‌লেন। রেনু ‌বেশ খা‌নিকটা ভয় পে‌য়েই কল রি‌সিভ ক‌রে বলল,
‘আসসালামু আলাইকুম বাবা।
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’
‘কিছু বল‌বেন, বাবা।’
‘‌তোমার মা বল‌ল, তু‌মি আর শিহাব না‌কি বা‌ড়ি চ‌লে গে‌ছো?’
‘‌জি।’
‘‌কেন?’
‘‌শিহা‌বের জরু‌রি কিছু কাজ ছি‌লো।’
‘আমা‌কে কেন ব‌লে গে‌লে না।’
‘আপ‌নি ব্যস্ত ছি‌লেন। মাকে ব‌লে‌ছিলাম।’
‘‌তোমার মা বল‌লেন, তু‌মি নাকি বা‌ড়িতে এসে কিছুই খাও‌নি? বি‌য়ের খাবারও না‌কি খাও‌নি?’

এবার রেনুর খুব ভয় কর‌ছে। তাও নি‌জে‌কে যথা সম্ভব স্বাভা‌বিক রে‌খে, বেশ শক্ত ক‌ণ্ঠে বলল,
‘হ্যাঁ।’
‘‌কেন?’
রেনু লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তারপর বলল,
‘‌বাবা, যেখানে আপনার মেজো মে‌য়ের বি‌য়ে‌তে আমা‌কে ঘ‌রে তালাবদ্ধ ক‌রে রে‌খেছি‌লেন, সেখা‌নে আপনার ছোটো মে‌য়ের বি‌য়ে‌তে আমা‌কে দাওয়াত ক‌রে‌ছেন এটাই আমার সাত জ‌ন্মের ভাগ্য। আপনার মে‌জো মে‌য়ের বি‌য়ের খাবার থে‌কে শুধু বা‌সি ডালটা কপা‌লে জু‌টে‌ছি‌লো, সেখা‌নে ছোট মে‌য়ের বি‌য়ের, তাজা, খাবার আমার পে‌টে হয়‌তো হজম হ‌তো না। ভয় পা‌বেন না, আপনার মে‌জো ‌মে‌য়ের বি‌য়ের দিন, আপ‌নি যেমন আমার ছায়া তার উপর পড়‌তে দেন‌নি, আজ আমি নি‌জেই নি‌জের ছায়া আপনার ছো‌টো মে‌য়ের উপর পড়‌তে দেই‌নি। তার সাম‌নে যাই‌নি। দূর থে‌কে ক‌য়েক নজর দে‌খে‌ছিলাম। সুন্দর লাগ‌ছি‌লো তা‌কে।’

‌রেনুর কথা আর কথার ধরণ শু‌নে হা‌মিদ কাজী তার বিস্ময় কাটাতে পারছেন না। যে মে‌য়ে কখ‌নও তার দি‌কে তা‌কি‌য়ে মুখ ফু‌টে একটু সামান্য উঁচু ক‌ণ্ঠে কথা ব‌লে‌নি, সে আজ এমন বেয়া‌দবের ম‌তো কথা বল‌ছে। হামিদ কা‌জি বল‌লেন,
‘‌রেনু, তোমার ঔদ্ধত্য শু‌নে আমি চূড়ান্ত অবাক!’
‘আমি কো‌নো ঔদ্ধত্য ক‌রি‌নি বাবা যে, আপ‌নি অবাক হ‌বে? আমি স‌ত্যি কথা ব‌লে‌ছি শুধু।’
‘‌তোমার দেখ‌ছি ভীষণ সাহস হ‌য়ে‌ছে। আমার মু‌খের উপর বেয়াদ‌বের ম‌তো কথা বল‌ছো।’
‘সাহস হ‌য়ে‌ছে বৈ‌কি, বাবা। আর আমি আপনার সা‌থে মো‌টেও বেয়াদ‌বি ক‌রি‌নি। আপনারা পূ‌র্বে আমার সা‌থে যে অন্যায় ক‌রে‌ছেন তার উত্তর দি‌য়ে‌ছি মাত্র।’
‘আ‌মি তোমার উপর অন্যায় ক‌রে‌ছি?’
‘আপনার কি মনে হয় অন্যায় ক‌রেন‌নি? তাহ‌লে দয়া ক‌রে অতীত ভে‌বে দেখুন। সবার সাম‌নে আপনার মে‌য়ে‌কে রিয়াজু‌লের মা চড় মার‌লেন, যা‌চ্ছেতাই ব‌লে বা‌জেভা‌বে অপমান কর‌লেন, আপ‌নি তার প্র‌তিবাদ ক‌রে‌ছি‌লেন?
আপনারা বড়র‌াই বলেন জন্ম-মৃত্যু, মানু‌ষের জীব‌নের সব‌কিছু আল্লাহর হা‌তে। তি‌নি যখন চান কাউ‌কে পৃ‌থিবী‌তে পাঠায়, আবার যখন চায় নি‌য়ে যান। তাহ‌লে রিয়াজুলের মৃত্যুর জন্য আমি কীভা‌বে দা‌য়ী হ‌য়ে‌ছিলাম? তার মৃত্যুর জন্য দায়ী ক‌রে আমার সা‌থে আপ‌নি কেন তিন বছর কথা ব‌লেন‌নি?‌ কেন তিন বছ‌রে একবার আমা‌কে জি‌জ্ঞেস ক‌রেন‌নি আমি কেমন আছি? স্বামী তো আমার মারা গি‌য়ে‌ছি‌লো, বিধবা আমি হ‌য়ে‌ছিলাম, কষ্টও সব‌চে‌য়ে বে‌শি আমার হ‌য়ে‌ছি‌লে‌া, তাহ‌লে আপনারা কি‌সের ভি‌ত্তি‌তে আমা‌কে অপরাধী বা‌নি‌য়ে‌ছি‌লেন? বিনা দো‌ষে অপরাধী বা‌নি‌য়ে শা‌স্তি কেন দি‌য়ে‌ছি‌লেন?
ঘ‌রে একটা কা‌জের লে‌াক থাক‌লেও ঘ‌রের কর্তা তার খোঁজ খবর নেয়, কুশল বি‌নিময় করেন ‌সেখা‌নে তিন বছর আপ‌নি কেন আমার কো‌নো খোঁজ ক‌রে‌ননি? একবারও আমার কুশল জান‌তে চান‌নি? কী অন্যায় ছি‌লো আমার? তিন বছ‌রে আপনা‌দের প‌রিবার আমার সা‌থে কুকু‌রের ম‌তো ব্যবহার ক‌রে‌ছে, আপ‌নি কেন তার প্র‌তিবাদ ক‌রেন‌নি? আপনার স্ত্রী, দুই কন্যা অনেকভা‌বে আমার ম‌নে আঘাত ক‌রে‌ছে, সেসব আপ‌নি জান‌তেন, ত‌বে কেন তা নি‌য়ে তা‌দের কিছু বলেন‌নি?কেন একটা বারও আমা‌কে মানুষ ম‌নে ক‌রে‌ননি? কেন ম‌নে হয়‌নি আপনার বড় মে‌য়েটা কত ক‌ষ্টে আছে তা গি‌য়ে একবার জা‌নি? কেন মনে হয়‌নি তা‌র কা‌ছে গি‌য়ে তা‌কে একটু শান্তনা দি, তা‌তে হয়‌তো তার কষ্ট কিছুটা কম হ‌বে! আপ‌নি তো আমার সা‌থে কথাই বল‌তেন না।
বাই‌রের লোক আপনার মে‌য়ে‌কে অনেক অপমান করত, কেন তার প্র‌তিবার ক‌রে‌ননি? একটা মে‌য়ের জন্য পৃ‌থিবীতে সব‌চে‌য়ে ভরসার মানুষ থা‌কে তার বাবা কিন্তু আফ‌সোস আপ‌নি আমার জন্য সেটা হ‌তে পা‌রেন‌নি! ম‌নের ম‌ধ্যে কুসংস্কার পু‌ষে রেখে প্র‌তি‌নিয়ত আপনারা সবাই মি‌লে আমা‌কে কষ্ট দি‌য়ে‌ছি‌লেন। আপনার মা, আমার দা‌দিজান বল‌লেন, আমি অপয়া, নয়‌তো বি‌য়ের সাত‌দি‌নের ম‌ধ্যে স্বামী কীভা‌বে ম‌রে? আপ‌নি তার বাধ্য ছে‌লের ম‌তো তার কথা মে‌নে নি‌লেন? আপনার নি‌জের বি‌বেক বি‌বেচনা ছি‌লো ন‌া? তি‌নি মারা গে‌ছেন। কিন্তু স‌ত্যি বল‌ছি বাবা, তার প্র‌তি আমার ক্ষোপ জীব‌নে কম‌বে না। তি‌নি আপনাদের মনে, ম‌স্তি‌ষ্কে যে কুসংস্কারের ‌বিষ ঢে‌লে দি‌য়ে‌ছি‌লেন তার কার‌ণে তিনটা বছর আমি নরক দর্শন ক‌রে এসে‌ছি। আমি জীব‌নে তা‌কে ক্ষমা করব না।

‌হা‌মিদ কাজী কলটা কে‌টে দি‌লেন। রেনু তবুও ফোনটা কা‌নে চে‌পে ধ‌রে ব‌সে রইল। ওর সারা শরীর থরথর ক‌রে কাঁপ‌ছে। কল কে‌টে দি‌য়ে তান‌জিলার দি‌কে তা‌কি‌য়ে হা‌মিদ কা‌জি বললেন,
‘তানজিলা আমরা সবাই মি‌লে রেনুর উপর এত অন্যায় করে‌ছি?’
তান‌জিলা আঁচ‌লে মুখ চে‌পে কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে বল‌লেন,
‘আপ‌নি তো কেবল কথা না ব‌লে অন্যায় কর‌ছেন। আর আমি তো এতগু‌লো বছর মে‌য়েটা‌কে সহ্যই কর‌তে পা‌রি‌নি। কেন পা‌রি‌নি নি‌জেও জা‌নি না। সবার কথা শু‌নে শু‌নে আমার মনটাও পাথ‌রের ম‌তো হ‌য়ে গে‌ছি‌লো। যার ফলাফল, আমার অজান্তেই মে‌য়েটার সা‌থে দুর্ব্যবহার ক‌রে‌ছি প্র‌তি‌দিন। কেন যে‌নো ভু‌লেই গে‌ছিলাম রেনু আমারই গ‌র্ভের সন্তান। আমার বড় মে‌য়ে। অথচ সেই মে‌য়েটাকে এতটা কষ্ট দি‌য়ে‌ছি যে, মে‌য়েটা এখন আর আমা‌দের ভা‌লোবা‌সে না। আমা‌দের ঘ‌রের খাবার পর্যন্ত খে‌তে চায় না। আল্লাহ আমা‌দের এত বড় পাপ মাফ কর‌বেন তো?’
হা‌মিদ কাজী কিছুই বল‌লেন না। চুপ ক‌রে ব‌সে রই‌লেন শুধু।

‌রেনুকে থরথর কাঁপ‌তে দে‌খে শিহাব জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘তু‌মি যা ব‌লে‌ছো স‌ত্যি ব‌লে‌ছো, তোমা‌কে এত ভয় পে‌তে হ‌বে না। স‌ত্যি ব‌লতে কখনও ভয় পা‌বে না।’
‌রেনু, শিহাবের বু‌কে মাথা রে‌খে বলল,
‘‌শিহাব, আপ‌নি কখনও আমার থে‌কে কখ‌নও এ বুকটা স‌রি‌য়ে নি‌বেন না তো?’
শিহাব শক্ত ক‌রে রেনুকে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘মৃত্যুর আগ পর্যন্ত না।’

৪৪!!
‌বেশ অনেকগু‌লো দিন কে‌টে গেল। সবার জীবন চল‌ছে জীব‌নের ম‌তোই। সুখ-দুঃখ সব মি‌লি‌য়ে। শশী এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। তিন‌দিন আগে ওর পা‌য়ের প্লাস্টার কাটা হ‌য়ে‌ছে। পা এখন সম্পূর্ণ ভা‌লো হ‌য়ে গে‌ছে। তা-ও ডাক্তার ক‌’দিন একটু সাবধা‌নে চলা‌ফেরা কর‌তে ব‌লে‌ছেন।

ইদা‌নিং শশী বারবার ভাব‌ছে, রাযীন‌কে নি‌জের ম‌নের কথাটা ব‌লে দি‌বে কিন্তু কো‌নো না কো‌নো কার‌ণে তা আর বল‌তে পার‌ছে না। ম‌নের কথা ম‌নেই থে‌কে যা‌চ্ছে। আজ ঘুম থে‌কে উঠেই শশী ঠিক করল, আজ যেভা‌বেই হোক রাযীন‌কে নিজের ম‌নের কথা বল‌বে। বল‌বে কতটা ভা‌লোবে‌সে ফে‌লে‌ছে ও রাযীন‌কে! শশী বিছানা ছে‌ড়ে রাযীন‌কে না পে‌য়ে কল করল,
‘‌কোথায় তু‌মি?’
‘অ‌ফি‌সে।’
‘এত সকা‌লে? কেবল সাতটা বা‌জে।’
‘জরু‌রি কাজ আছে।’
‘আমা‌কে ব‌লে যে‌তে পার‌তে।’
‘স‌রি লাভ, তু‌মি ঘুমা‌চ্ছি‌লে আর ঘু‌মের মা‌ঝে তোমায় এত সুন্দর লাগ‌ছি‌লো যে, তোমা‌কে জাগা‌তে মন চায়‌নি। আমার নাস্তার চিন্তা ক‌রো না, আমি খে‌য়ে নিব। তু‌মি প্লিজ খে‌য়ে নিও।’
‘দুপু‌রে বাসায় খা‌বে?’
‘‌নো ডিয়ার। একটা জরু‌রি মি‌টিং আছে। লাঞ্চ তা‌দের সা‌থেই করব। তু‌মি প্লিজ সময় ম‌তো খে‌য়ে নিও।’
‘আচ্ছা।’
শশী কলটা কে‌টে বাচ্চা মে‌য়ে‌দের ম‌তো কাঁদ‌তে লাগল। নি‌জে নি‌জে বল‌তে লাগল,
‘বারবার কেন বল‌তে গিয়েও বল‌তে পার‌ছি না আমার ম‌নের কথা? রাযীন আমি তোমায় ভা‌লোবা‌সি। খুব ভা‌লোবা‌সি, খুব খুব ভা‌লো‌বে‌সে ফে‌লে‌ছি তোমায়।’

সারাটা দুপুর অলস সময় কাটল শশীর।
রাযীন ফিরল দুপুর তিনটায়। শশী তখনও ঘু‌মি‌য়েই ছি‌লো। রাযীন ক‌লিং বেল টেপায় ঘুম ভাঙল। শশী‌কে দে‌খে রাযীন মি‌ষ্টি হে‌সে ওর কপা‌লে চু‌মো খে‌য়ে বলল,
‘সারপ্রাইজ লাভ! আজ‌কের সারাটা বিকাল আর রাত তোমার জন্য।’
শশী ম‌লিন হাসল।

আয়নার সাম‌নে দাঁ‌ড়ি‌য়ে রাযীন শার্টটা খুলল। শশী ধী‌রে ধী‌রে এসে, রাযীন‌কে পিছন থে‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধরল। রাযী‌নের নগ্ন শরী‌রে শশীর স্পর্শ পে‌য়ে অনেকটা কেঁ‌পে উঠল রাযীন। তারপর বলল,
‘কী হ‌লো ম্যাডাম?’
শশী কিছুক্ষণ চুপ থে‌কে বলল,
‘‌কিছু না।’
‘দুপু‌রে খেয়ে‌ছো?’
‘বা‌রোটার সময় নুডুলস খে‌য়ে‌ছি। তারপর ভাত খে‌তে ইচ্ছা হয়‌নি। তু‌মি খে‌য়ে‌ছো?’
‘হুঁ অফি‌সে খে‌য়ে‌ছিলাম। ত‌বে এখন হালকা খুদা পে‌য়ে‌ছে। চ‌লো তোমার সা‌থেও হালকা কিছু খা‌বো।’

শশী, রাযী‌নের কথার উত্তর না দি‌য়ে, রাযী‌নের পি‌ঠে ঠোঁট চে‌পে ধরল। রাযীন ভয়াবহ কে‌ঁপে উঠল। ওর শরী‌রের প্র‌তিটি লোমকূপ দাঁ‌ড়ি‌য়ে গে‌ছে। নি‌জে‌কে বহু ক‌ষ্টে নিয়ন্ত্রণ ক‌রে বলল,
‘কী হ‌য়ে‌ছে শশী?’
শশী আব‌ার কিছু মুহূর্ত চ‌ুপ থে‌কে বলল,
‘শশী, রাযীন‌কে ভা‌লো‌বে‌সে ফে‌লে‌ছে।’
রাযীন বেশ অবাক হ‌য়ে শশী‌র দি‌কে ঘুর‌তে চাই‌লে, শশী আরও শক্ত ক‌রে রাযীন‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘‌প্লিজ আমার দি‌কে ঘু‌রো না। তোমার দি‌কে তা‌কি‌য়ে আমি কিছু ব‌লতে পা‌রি না।’
‘তাহ‌লে এভা‌বেই ব‌লো।’
‘রাযীন আমি জা‌নি না, এটা ক‌বে, কীভা‌বে হলো ত‌বে আমি তোমায় ভা‌লে‌া‌বে‌সে ফে‌লে‌ছি। খুব ভা‌লো‌বে‌সে ফে‌লে‌ছি। তু‌মি হয়‌তো ভাব‌ছো বি‌য়ের মাত্র দেড় মা‌সের ম‌ধ্যে কীভা‌বে তোমায় ভা‌লো‌বে‌সে ফেললাম? যেখা‌নে আমার অতী‌তে একটা রি‌লেশন ছি‌লে‌া! কিন্তু বিশ্বাস ক‌রো রাযীন, আমি সত্যি জা‌নি না, কীভা‌বে তোমায় এত ভা‌লো‌বে‌সে ফেললাম! আমি শুধু জা‌নি তোমা‌কে ছাড়া আমার বা‌কি জীব‌নের এক মুহূর্তও চল‌বে না। চল‌বে না, মা‌নে চল‌বে না। হয়তো এটা‌কেই কবু‌লের জোর ব‌লে। বিয়েতে আল্লাহর অশেষ রহমত থা‌কে ব‌লেই হয়তো স্বামী-স্ত্রী একে অপর‌কে দ্রুত ভা‌লো‌বে‌সে ফে‌লে। দ্রুত তারা মায়ার বাঁধ‌নে আট‌কা পরা। আমি তোমার বাঁধ‌নে সম্পূর্ণভা‌বে আট‌কে গে‌ছি রাযীন। আষ্টে পি‌ষ্টে জ‌ড়ি‌য়ে গে‌ছি তোমা‌কে। আই লাভ ইউ রাযীন।’

রাযীন শশী‌কে নি‌জের দি‌কে ঘোরাল। তারপর বলল,
‘আবার ব‌লো?’
শশী মাথা নিচু ক‌রে বলল,
‘আই লাভ ইউ।’
‘আমার চো‌খের দিকে তা‌কি‌য়ে ব‌লো?’
শশী, রাযী‌নের চো‌খের দি‌কে তা‌কালো। শশীর চোখ অশ্রু‌তে টলমল কর‌ছে। ধরা গলায় বলল,
‘খুব ভা‌লোবা‌সি তোমা‌কে।’
রাযী‌নের চোখও আন‌ন্দে ভ‌রে এল। ঢোক গি‌লে আবারও বলল,
‘ইজ দ্যাট রিয়াল শশী? আই ক্যান্ট বি‌লিভ মাইসেল্ফ। আই থিংক ইট’স মাই ইমা‌জি‌নেশন।’

শশী, রাযী‌নের দুই গা‌লে হাত দি‌লো। ওর হাতও কাঁপ‌ছে। কাঁপা কাঁপা হা‌তে রাযী‌নের গাল ধ‌রে শশী ওর ঠোঁ‌টে গভীর চু‌মো খে‌লো। সে‌দিন সজ‌লের সাম‌নে চু‌মো খাবার পর শশী আর ‌নি‌জে থে‌কে রাযীনের ঠোঁট স্পর্শ ক‌রে‌নি। শশীর সারা শরীর আবার কাঁপ‌ছে। এবার যে‌নো ভা‌লোবাসা আর ভা‌লোসার স্পর্শ সব মি‌লি‌য়ে ওর শরীর একেবা‌রে হাল ছে‌ড়ে দি‌য়ে‌ছে। ম‌নে হ‌চ্ছে আর একটু হ‌লেই প‌ড়ে যা‌বে। শশী, রাযীনকে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘রাযীন, আমার শরী‌রে একটুও শ‌ক্তি নেই। আমা‌কে শক্ত ক‌রে ধ‌রো, নয়‌তো আমি প‌ড়ে যা‌বো।’
রাযীন শক্ত ক‌রে শশী‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রল। তারপর শশীর কপালে ঠোঁট ছুঁ‌ইয়ে বলল,
‘আ‌মি তোমায় প্রচন্ড ভা‌লোবা‌সি শশী।’
‘রাযীন আমা‌কে বিছানায় শুইয়ে দাও। নয়‌তো আবার বেহুশ হ‌য়ে যা‌বো।’

রাযীন, শশীকে কো‌লে তু‌লে বিছানায় শু‌ইয়ে দিলো। তারপর উঠ‌তে নি‌লে শশী রাযী‌নের হাত টে‌নে ধ‌রে, গভীর ভা‌লোবাসায় রাযী‌নের চো‌খের দি‌কে তাকাল। আজ রাযীন, শশীর চোখ ‌দে‌খে সব কিছু যে‌নো বু‌ঝে নেয়। শশীর চোখে আজ প্রণয়ের তীব্র আহবান। আজ আর এ ভা‌লোবাসাময় আহবান এড়ি‌য়ে যেতে পারল না রাযীন। শশী যেমন নি‌জে‌কে‌ সম্পূর্ণভাবে রাযী‌নের কা‌ছে সমার্পন করল, তেম‌নি তীব্র মাদকতায় ভা‌লোবাসা‌কে গ্রহণ করল রাযীনও।

রাযী‌নের দুষ্ট‌ু চাহনী‌তে, শশী লজ্জায় মুখ লুকায়। ভা‌লোবাসা হয়, ঘোর হয় প্রেম‌ঘোর, নেশা হয় নামহীন অনুভূ‌তির। ভা‌লোবাসা মন থে‌কে মন, শরীর থে‌কে শরী‌রের প্র‌তি‌টি র‌ন্ধ্রে র‌ন্ধ্রে পৌঁ‌ছে যায়। ভা‌লোবাসার নতুন ভুব‌নে অভিলা‌ষে নি‌জে‌কে হারায়, অন্য‌কে খুঁ‌জে পায়।

রাযীন, শশী‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে রে‌খে‌ছে। লজ্জায় শশী, রাযী‌নের‌ দি‌কে তাকা‌চ্ছে না। কিছুক্ষণ আ‌গেও ভা‌লোবাসার গভীর অভিলা‌ষে মত্ত ছি‌লো দু’জন। লজ্জায় শশী চোখ বন্ধ ক‌রেই রইল। রাযীন আরও গভীর ভা‌বে জ‌ড়ি‌য়ে ধরল শশী‌কে। শশীর শরীরের সা‌থে রাযী‌নের শরী‌রের স্পর্শ লাগ‌তেই বারবার কে‌ঁপে উঠে ও। শশী চোখ বন্ধ করেই ভাবল, দুুপু‌রের পর এমন কিছু হ‌তে পা‌রে ব‌লে ধারণা ছি‌লো না। রাযীন শশীর গলায় ঠোঁট ছুঁ‌য়ে বলল,
‘আমার লজ্জাবতী, এখন এত কেন লজ্জা পা‌চ্ছো? কিছুক্ষণ আগে তো…! কথাটা বলার আগেই শশী ওর মুখ চে‌পে ধ‌রে বলল,
‘আর কিছ‌ু বলো না প্লিজ, আমি লজ্জায় ম‌রে যাব।’
রাযীন দুষ্টু হাসল। শশী, রাযী‌নের নগ্ন বুকে মুখ লুকা‌লো। রাযীন, শশীর কপা‌লে চু‌মো খেয়ে বলল,
এটা আমার জীব‌নের শ্রেষ্ঠ বিকাল। যে বিকা‌লে স্নিগ্ধ সকা‌লের ম‌তো ভালোবাসা আমি পে‌য়ে‌ছি।

শেষ বিকা‌লে,
রাযীন, শশীর দি‌কে তাকা‌চ্ছে আর দুষ্টু দুষ্ট হাস‌ছে। শশী বিড়‌বিড় ক‌রে বলল,
‘এ ছে‌লে আজ আমা‌কে লজ্জা দি‌য়েই মে‌রে ফেল‌বে?’
রাযীন, শশী‌কে পিছন থে‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কা‌নে আলত কামর দিয়ে বলল,
‘লজ্জা পাবার তো এখনও অনেক বা‌কি। আজ রা‌তে য‌দি তোমার সব লজ্জা আমি না দে‌খে‌ছি, তো ম‌নে রে‌খো আমার নাম রাযীন নয়।’
শশী চোখ বন্ধ ক‌রে বলল,
‘‌প্লিজ চুপ করো।’
‘না আজ থে‌কে চুপ করার দিন শেষ। আজ থে‌কে শুধ‌ু দুষ্টু দুষ্টু ভা‌লোবাসা হ‌বে।’
শশী, রাযী‌নের মুখ চে‌পে বলল,
‘থা‌মো প্লিজ।’
‘না।’
রাযীন, শরীর পি‌ঠে নাক ঘষ‌তে ঘ‌ষ‌তে বলল,
‘‌তোমার কাজ দ্রুত শেষ ক‌রো। আজ অামার অনেক কাজ আছে। এখন আমি এক ঘন্টার জন্য বাই‌রে যা‌বো। সন্ধ্যার পর আস‌ছি।’
‘যাও। তা-ও কিছুটা সময় তোমার দুষ্টু চাহনীর নাগা‌লের বাই‌রে থাকব আমি।’

রাযীন বাই‌রে যাবার পর শশী একটা নিঃশ্বাস ফে‌লে বলল,
‘বদ ছে‌লে কি প‌রিমাণ জ্বালায় আম‌াকে! আজ থে‌কে তো ওর জ্বালার প‌রিমাণ আরও বাড়‌বে। সে অনুম‌তি তো আমিই ওকে দি‌য়ে‌ দিয়েছি। শশী রান্নায় মন দি‌লো। রাযী‌নের ফেবা‌রিট চিং‌ড়ি ভূনা, সাদা ভাত, ডাল, পালং শাক ভা‌জি, আলুর ঝুড়া ভা‌জি। রাযীন সাধারণ খাবার খুব পছন্দ ক‌রে। শশীও আজ রাযী‌নের পছন্দ ম‌তোই রান্না করল।

ঘন্টখা‌নিক পর রাযীন ফিরল। দরজা খু‌লে দি‌য়ে শশী খাবার সাজা‌তে মন দি‌লো। রাযীন এসে পিছন থে‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে ওর ঘা‌ড়ে ঠোঁট ছুঁ‌য়ে বলল,
‘‌শশী আমার চো‌খের সাম‌নে শুধু তু‌মি ভাস‌ছো। এমন নাম না জানা অদ্ভুত ভা‌লোলাগার অনুভূ‌তি আমি কখনও পাই‌নি। নি‌জের মানুষটা‌কে কাছ থে‌কে, খুব কাছ পে‌লে বু‌ঝি এত ভা‌লো লা‌গে!’
শশীর খুব লজ্জা লাগ‌ছে। আজ রাযী‌নের দি‌কে তাকা‌তেই পার‌ছে না। একটু কে‌শে বলল,
‘চা খা‌বে?’
‘হ্যাঁ।’
রাযীন, শশীর হা‌তে একটা প্যা‌কেট দি‌য়ে বলল,
‘এই শা‌ড়িটা তোমার জন্য। আজ কিন্তু আমি নিজ হা‌তে তোমায় শা‌ড়িটা প‌রি‌য়ে দিব। খবরদার নি‌জে পর‌বে না।’
শশী হাসল শুধু।

‌কিছুক্ষণ টি‌ভি দেখল দু’জন। ভা‌লোবাসাময় গ‌ল্পে খুনসু‌টি‌তে কাট‌ছে সময়। রাযীন বলল,
‘শশী খে‌তে দাও। খিদা লাগ‌ছে।’
‘মাত্র তো সা‌ড়ে আটটা বা‌জে।’
‘‌তো কী হ‌য়ে‌ছে? আমার আজ অনেক কাজ আছে।’
তারপর দ‌ুষ্টু হাসল। শশী একটু রাগ দে‌খি‌য়ে বলল,
‘রাযীন, এখন কিন্তু মা*ই*র দিব। সেই বিকাল থে‌কে আমা‌কে লজ্জা দি‌য়েই যা‌চ্ছো!’
‘এখা‌নে তু‌মি আমি ছাড়া আর কে আছে?তাহ‌লে এত লজ্জা পাবার কী আছে?’
‘চুপ। চ‌লো খা‌বে।’

‌খে‌তে ব‌সে রাযীন নি‌জের পছ‌ন্দের খাবার দে‌খে বলল,
‘ওয়াও চিং‌ড়ি ভূনা। বাহ্! কিন্তু তু‌মি তো খে‌তে পার‌বে না। চিং‌ড়ি খে‌লেই চোখ চুলকা‌তে চুলকা‌তে চোখ বড় বড় ক‌রে ফেলো।’
‘জা‌নি জনাব। আমি শাক, আলুভা‌জি আর ডাল দি‌য়ে খা‌বো। তাছাড়‌া সন্ধ্যা‌বেলা তু‌মিই তো কত রকম নাস্তা নি‌য়ে আস‌লে। এখন ‌তেমন খে‌তেও ইচ্ছা কর‌ছে না। শুধু তোমা‌কে সঙ্গ দি‌তে খা‌বো।’
‘আচ্ছা তাহ‌লে আমি খাই‌য়ে দি‌চ্ছি। হা ক‌রো।’
রাযীন শাক আর ডাল দি‌য়ে শশী‌কে ক‌য়েক লোকমা খাই‌য়ে দেওয়ার পর শশী বলল,
‘আর না। এব‌ার তু‌মি খাও।’
রাযীন নি‌জেও খাবার কেবল শেষ কর‌লো। হাত এখনও ধু‌তে পা‌রে‌নি। তখন রাযী‌নের ফো‌নে একটা কল আসল। কলটা রি‌সিভ করে কথা বলার পর রাযী‌নের মুখটা কা‌লো হ‌য়ে গে‌ল। হাতটা ধুয়ে শশী‌কে বলল,
‘জান, ঘন্টাখা‌নি‌কের জন্য অফিস যে‌তে হ‌বে। কিছু জরুরি কাজ এসে‌ছে।’
‘এখন এই রা‌তে?’
‘খুবই জ‌রুরি। নাহ‌লে যেতাম না। ঘন্টা খা‌নি‌রে ম‌ধ্যেই চ‌লে আসব। শা‌ড়িটা কিন্তু আমিই প‌রিয়ে দিব।’
শশী হাসল।

রাযীন বের হবার পর থে‌কে শশীর প্রচন্ড অস্থির লাগ‌ছে। এমন অস্থিরতা ওর কখনও হয়‌নি। কেন জা‌নি ম‌নে হ‌চ্ছে খুব কা‌ছের কেউ হা‌রি‌য়ে যা‌বে। দম বন্ধ হওয়া অদ্ভুত অন‌ুভূ‌তি। শশী ম‌নে ম‌নে বলল,
‘‌হে আল্লাহ সবাই‌কে সুস্থ রে‌খো।’

রাযীন গা‌ড়ি চালা‌চ্ছে। কিন্তু ওর প্রচন্ড মাথা ঘোরা‌চ্ছে। চো‌খে ঝাপসা দেখ‌ছে। হঠাৎ খেয়াল করল, ওর মুখ থে‌কে ফেনার ম‌তো বের হ‌চ্ছে। মানুষ‌কে সা‌পে কাট‌লে যেমন মুখ দি‌য়ে ফেনা বের হয়, ঠিক তেমন। রাযী‌নের হাত-পা, সারা শরীর, অবশ হ‌য়ে যা‌চ্ছে। ও যে গা‌ড়ি চালা‌চ্ছে সেটা ওর মাথায় নেই। গা‌ড়ি রং সাই‌ডে নি‌য়ে গে‌ল। অঘটন যা ঘটার তখনই ঘটল। ওপাশ থে‌কে প্রচন্ড বে‌গে আসা একটা গা‌ড়ি রাযী‌নের গা‌ড়ি‌টা‌কে ধাক্কা দি‌লো।

চল‌বে….

#এক‌দিন_বিকা‌লে_সকাল_হ‌য়ে‌ছি‌লো
‌লেখক: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব:৩৮

৪৫!!
শশী, রাযী‌নের দেওয়া শা‌ড়িটা উ‌ল্টে পাল্টে দেখ‌ছে। সাদা র‌ঙে‌র শিফন, পা‌ড়ে হালকা গোলা‌পি সুতার কাজ। শা‌ড়িটা স‌ত্যি সুন্দর। শশী আয়নার সাম‌নে দাঁ‌ড়ি‌য়ে নি‌জের কাঁ‌ধের উপর শা‌ড়িটা রে‌খে নি‌জে‌কে দেখল। ঘা‌ড়ের কা‌ছে লাল র‌ঙের দাগ দে‌খে লজ্জা পে‌লো। এটা বিকা‌লে রাযীন ক‌রে‌ছে। শশী দাগটা ছুঁ‌য়ে বলল,
‘‌ছে‌লেটা এত দুষ্টু। কী দরকার ছি‌লো এখা‌নে বাইট করার। লোকে দেখ‌লে কী ভাব‌বে? শশী, চোখ বন্ধ ক‌রে ভাব‌লো, ভা‌লোবাসার মানু‌ষের স্প‌র্শে স‌ত্যি ম্যা‌জিক থা‌কে! অদ্ভুত ম্যা‌জিক!’

শশী আয়নার সাম‌নে দাঁ‌ড়িয়ে রাযীনের কথা ভাব‌ছি‌লো, তখন লি‌পি ভি‌ডিও কল করল।
‘‌কি সুন্দরী আমা‌দের তো ভু‌লে গেলি?’
‘‌কী যে ব‌লো না ভা‌বি!’
পাশ থে‌কে রেনু বলল,
‘ভা‌বি মাশাআল্লাহ, যে একখানা বর ‌পে‌য়ে‌ছে তা‌তে আমা‌দের কি সময় দি‌বে, সারা‌দিন ব‌রের সা‌থে ফে‌বিক‌লের ম‌তো চিপ‌কে থা‌কে।’
শশী বলল,
‘‌তোমরা দু’জন আমা‌কে নি‌য়ে মজা কর‌তে কল কর‌ছো?’
রেনু বলল,
‘নন‌দের সাথে মজা করব না তো কার সা‌থে করব?’
লি‌পি বলল,
‘‌তোর না বিকা‌লে আমা‌কে কল করার কথা ছি‌লো?’

বিকা‌লের কথা ম‌নে পড়‌তেই শশী ভয়াবহ লজ্জা পে‌লো। তা দে‌খে লি‌পি বলল,
‘‌কি‌রে এত লজ্জা পা‌চ্ছিস কেন? ম‌নে হ‌চ্ছে বিকা‌লে খুব পার‌সোনাল কা‌জে ব্যস্ত ছি‌লি?’
শশী খা‌নিকটা তুতলে বলল,
‘ই‌য়ে মা‌নে ভাবি।’
শশী কিছু বলার আগেই রেনু বলল,
‘বিকালে কিছু হ‌য়ে‌ছে না‌কি শশী?’
শশী বলল,
‘না না ভা‌বি, কিছু হয়‌নি।’
‌রেনু বলল,
‘‌তোর মুখ দে‌খে ‌তো ম‌নে হ‌চ্ছে অনেক কিছু হ‌য়ে‌ছে।’
শশী বলল,
‘ভা‌বি আমি রাযী‌নকে ব‌লে দি‌য়ে‌ছি।’
‌লি‌পি ব‌লল,
‘কী?’
‘দ্যাট আই লাভ হিম।’
‌রেনু বলল,
‘ওয়াও শশী, দ্যাট’স গ্রেট! তো তারপর কী হলো?’

শশী এবার লজ্জায় ওড়না দি‌য়ে ম‌ুখ ঢে‌কে ফেলল। লি‌পি, রেনু যা বোঝার বু‌ঝে গেল। রেনু বলল,
‘‌দেখ‌ছো ভা‌বি আজকালকার ছে‌লে-মে‌য়ে। বিকা‌লেই…!’
‌লি‌পি রেনুর কান টেনে বলল,
‘আপ‌নিও কম না। আমি সবারটা জা‌নি। চুপ থা‌কেন দুজ‌নেই। শুক্রবার দুপু‌রে খ‌াবার পর রু‌মে ঢু‌কেন আর সন্ধ্যার আ‌গে আপ‌নি আর শিহাব রুম থে‌কে বের হোন না। আপনারা রু‌মে ব‌সে নিশ্চয়ই লুডু খে‌লেন না?’
‌রেনুও লজ্জায় ম‌ুখ লুকা‌লো। শশী বলল,
‘ওহ! তো থ‌লের বেড়াল বের হ‌চ্ছে ত‌বে?’
‌তিনজন‌েই খুব হাসল। অনেকক্ষণ কথা বলার পর কল কাটল শশী।

কল কে‌টে বলল, ভা‌বি‌দের সা‌থে এত কথা বললাম অথচ আমার ম‌ন ভা‌লো হ‌চ্ছে না! ভা‌লো লাগ‌ছে না একটুও। প্রাণটা হাসফাস কর‌ছে। রাযীন‌ গে‌ছে দুই ঘন্টার বেশি হ‌য়ে‌ছে, অথচ এখনও আস‌ছে না। শশী ক‌য়েকবার কল ক‌রে‌ছি‌লো কিন্তু কেউ ধ‌রে‌নি। টেনশনও হ‌চ্ছে খুব। আব‌ারও ফোনটা হা‌তে নি‌য়ে রাযীন‌কে কল করল। ক‌য়েকবার রিং হওয়ার পর এবার কলটা রি‌সিভ করল একজন। শশী, অচেনা কণ্ঠ শু‌নে খা‌নিক চম‌কে গি‌য়ে বলল,
‘‌কে আপ‌নি?’
ওপাশ থে‌কে ভারী আওয়া‌জে একজন বল‌লেন?
‘আপ‌নি কে?’
শশী ফো‌নের দি‌কে তা‌কি‌য়ে নাম্বারটা চেক করল। তারপর বলল,
‘নাহ নাম্বার তো রাযী‌নেরই তাহ‌লে ফোন কে রি‌সিভ ক‌রল?’
শশী বলল,
‘আপ‌নি কে? এটা আমার হ্যাজ‌বেন্ড এর ফোন। আপনার কা‌ছে কী ক‌রে?’
‘ওহ থ্যাংক গড। আমি ই‌নেস‌পেক্টর মারুফ।’

শশীর ব‌ুকটা অজানা আত‌ঙ্কে ধক ক‌রে উঠল। ভয় লাগা ক‌ণ্ঠে বলল,
‘আমার স্বামীর ফোন আপনা‌র কা‌ছে কী ক‌রে?’
‘আপনার স্বামীর গা‌ড়ির ভয়াবহ এক্সি‌ডেন্ট হ‌য়ে‌ছে। উনার ফোনটাও পু‌রোপু‌রি ড্যা‌মেজ হ‌য়ে গে‌ছে। ফ‌লে কাউ‌কে কন্ট্রাক কর‌তে পার‌ছিলাম না। মাত্র তার ফোন থে‌কে সিম খু‌লে আমার ফো‌নে এক‌টিভ ক‌রে‌ছি। এর ম‌ধ্যে আপনার কল।’
শশী উৎক‌ণ্ঠিত হ‌য়ে বলল,
‘ও ঠিক আছে তো?’
‘নাহ। উনার অবস্থা খুব খারাপ। দ্রুত কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতা‌লে চ‌লে আসুন। উনি জরু‌রি বিভা‌গে আছেন।’
ই‌নেস‌পেক্টর মারুফের কথাগুলো শু‌নে শশীর, সারা শরীর থরথর করে কাঁপ‌ছে। কাঁপা কাঁপা ক‌ণ্ঠে বলল,
‘আ‌মি আস‌ছি।’

শশী নি‌জের পার্স আর ফোনটা নি‌য়ে দরজাটা কোনোম‌তে বন্ধ ক‌রে ‌সি‌ড়ি দি‌য়ে দৌঁড়ে দৌঁড়ে নে‌মে সু‌মি‌দের ফ্ল্যা‌টের ক‌লিং বেল টিপতে লাগল। সা‌থে অন্য হা‌তে দরজাও ধাক্কা দি‌তে লাগল। সু‌মি দরজা খু‌লতেই শশী কান্না জ‌ড়িত ক‌ণ্ঠে তাড়াহু‌ড়ো ক‌রে বলল,
‘রাযী‌নের এক্স‌িডেন্ট হ‌য়ে‌ছে। এখন জেলা সদর হাসপাতা‌লের, জরু‌রি বিভা‌গে আছে। প্লিজ আপা দ্রুত চ‌লেন। রা‌সেল ভাই‌কে ডা‌কেন।’
‌পিছন থে‌কে রা‌সেল বলল,
‘কী হ‌য়ে‌ছে শশী?’
‘ভাইয়া সর্বনাশ হ‌য়ে গে‌ছে। রাযী‌নের গা‌ড়ির এক্সি‌ডেন্ট হ‌য়ে‌ছে। দ্রুত চ‌লেন আমার সা‌থে। আমি এখা‌নের কিছুই চি‌নি না।’
রা‌সেল বেশ উৎক‌ণ্ঠিত বলল,
‘আল্লাহ্! কী ব‌লে‌া? তু‌মি দুই মি‌নিট ব‌সো, আমি এক্ষ‌ুনি গা‌ড়ির চা‌বি নি‌য়ে আস‌ছি। সু‌মি তু‌মিও নাইট গাউন ছে‌ড়ে রে‌ডি হ‌য়ে নাও।’

সুমিও, রা‌সে‌লের সা‌থে সা‌থে রুমে গেল। শশী ওখা‌নেই দাঁ‌ড়ি‌য়ে ম‌নে ম‌নে আল্লাহকে ডাক‌তে লাগল। রু‌মে গি‌য়ে সু‌মি আর রা‌সেল একে অপ‌রের দি‌কে তা‌কি‌য়ে হাসল। রা‌সেল বলল,
‘অব‌শে‌ষে!’
সু‌মি খুব আস্তে ক‌রে বলল,
‘হ্যাঁ অব‌শে‌ষে! ত‌বে যার প্ল্যা‌নে এত সব হ‌লে‌া, তাকে খবরটা দাও।’
রা‌সেল হে‌সে বলল,
‘এখনই মে‌সেজ দি‌চ্ছি।’
রা‌সেল একটা নাম্বারে মে‌সেজ করল। “ব্রো কাজ হ‌য়ে গে‌ছে।”

শশী, রা‌সেল আর সু‌মি সা‌থে হাসপাতা‌লে আসার উদ্দেশ্যে বের হ‌লো। প‌থে ব‌সে শশী, প্রথ‌মে রাযী‌নে‌র বাবা, রায়হান রহমান‌কে কল করে বলল,
‘বাবা যত দ্রুত পা‌রেন এখা‌নে চ‌লে আসেন। রাযীনের এক্স‌িডেন্ট হ‌য়ে‌ছে। ও হস‌পিটা‌লে ভ‌র্তি। ওর অবস্থা না‌কি খুব খারাপ! আমি কী করব বুঝ‌তে পার‌ছি না!’
রায়হান রহমান বড় সড় ধাক্কা খে‌লেন। তারপর তাড়াহু‌ড়ো ক‌রে বলল,
‘আমি আস‌ছি।’
রায়হান রহমান কল কে‌টে ক‌য়েকজনকে ফোন ক‌রে জি‌জ্ঞেস কর‌লেন, এখন কক্সবাজার যাবার কো‌নো ফ্ল্যাইট আছে কিনা? কিন্তু এত রা‌তে কো‌নো ফ্ল্যাইট নেই। রায়হান সা‌হেব বল‌লেন,
‘‌ঠিক আছে হে‌লিকপ্টা‌রের ব্যবস্থা ক‌রো।’

শশী তার কল কে‌টে শিহাব‌কে কল ক‌রে সবটা বলল। শিহাবও দ্রুত বাসার সবাইকে জা‌নালো বিষয়টা। শিহাবের কথা শু‌নে সবাই কক্সবাজার যে‌তে চাইল। কিন্তু এই খারাপ সম‌য়ে, এত রা‌তে, এত লোক ট্রা‌ভেল করা যেমন ঝা‌মেলার তেমন রিক্স। ঠিক হ‌লো, সাজ্জাদ, নূর ইসলাম এবং হা‌সি বেগম যা‌বেন। তারা গি‌য়ে প্রথ‌মে প‌রি‌স্থি‌তি দেখ‌বে। বা‌কিরা গে‌লে কাল যা‌বে। তাছাড়া ছোট বাচ্চা এবং ম‌হিলা‌দের নি‌য়ে রা‌তে ট্রা‌ভেল করা ভয়াবহ। শিহাব যে‌তে চাইল কিন্তু নূর ইসলাম বল‌লেন,
‘ঘ‌রের সব পুরুষ য‌দি একসা‌থে চ‌লে যাই তাহ‌লে ম‌হিলারা থাক‌বে কীভা‌বে? আর ‌তোর মা‌য়ের যাওয়াটা প্র‌য়োজন শশী‌কে সাম‌লা‌নোর জন্য। আমরা গি‌য়ে প‌রি‌স্থি‌তি দে‌খি তারপর নাহয় তো‌রা আসিস। দোয়া কর যা‌তে প‌রি‌স্থি‌তি বে‌শি খারাপ না হয়! শিহাব, রায়হান রহমান‌কে কল ক‌রে বলল,
‘আ‌ঙ্কেল রা‌তে কো‌নো ফ্ল্যাইট নেই। তাহ‌লে কি গা‌ড়ি‌তে যাব?’
‘হ্যাঁ আমি জা‌নি। আমি হে‌লিকপ্টার বুক ক‌রে‌ছি। তোমরা ক’জন যা‌বে?’
‘‌তিনজন।’
‘হে‌লিকপ্টা‌রে ছয়জন যাওয়া যা‌বে। তোমরা দ্রুত আমা‌দের বাসার পা‌শের হে‌লি‌পোর্টে চ‌লে আসো।’
‘আচ্ছা আঙ্কেল।’

‌কিছ‌ু সময় পর, শশী, সু‌মি আর রাসেল হস‌পিটা‌লে পৌঁছা‌লো।
শশী ই‌নেস‌পেক্টর মারুফের নাম্বার নি‌য়ে রে‌খে‌ছি‌লো, তা‌কে কল করল। সে বলল, তি‌নি অপা‌রেশন থি‌য়েটা‌রের বাই‌রে। শশী চোখ মু‌ছতে মুছ‌তে সেখা‌নে গে‌ল। মারুফসহ সা‌থে আরও দু’জন পু‌লিশ অফিসার। পোষাক দে‌খে শশী দ্রুত তা‌দের কা‌ছে গি‌য়ে বলল,
‘রাযীন কেমন আছে?’
মারুফ বলল,
‘‌রো‌গীর নাম, রাযীন?’
‘‌জি।’
‘‌কিন্তু তার যে আইডি পেলাম সেখা‌নে লেখা ছি‌লো রাইয়্যান রহমান।’
শশী বলল,
‘রাযীন ওর ডাক নাম।’
‘‌দেখুন মিথ্যা বলব না। আপনার স্বামীর অবস্থা তেমন ভা‌লো না। তি‌নি সিট‌বেল না বেঁ‌ধেই গা‌ড়ি চালা‌চ্ছি‌লেন, ফ‌লে মাথায় এবং যতদূর ম‌নে হয় মেরুদ‌ন্ডেও বেশ আঘাত পে‌য়ে‌ছেন বা‌কিটা ডাক্তার বলবেন। অপা‌রেশন চল‌ছে তার। এখন আল্লাহ‌কে ডাকুন।’
শশী মাথায় চক্কর দি‌চ্ছে। প‌ড়ে যে‌তে নি‌লে সু‌মি সাম‌লে একটা বে‌ঞ্চে ব‌সি‌য়ে বলল,
‘ব‌সো। নি‌জে‌কে শক্ত রা‌খো।’
শশী ম‌নে ম‌নে বারবার বল‌ছি‌লে‌া,
‘আল্লাহ আমা‌কে সহ্য শ‌ক্তি দাও। আমার রাযীন‌কে সুস্থ রা‌খো।’

ঘন্টাখা‌নিক পর ডাক্তার বের হ‌য়ে মারুফকে ডে‌কে বা‌কি‌দের থে‌কে দূ‌রে নি‌য়ে গি‌য়ে বল‌লেন।
‘ইনেস‌পেক্টর এটা দূর্ঘটনার কেস না!’
‘তাহ‌লে?’
‘উনা‌কে কেউ বিষ দি‌য়ে মার‌তে চে‌য়ে‌ছি‌লেন।’
‘কী?’
‘হ্যাঁ। তা-ও সাধারণ বিষ নয়। সা‌পের বিষ দি‌য়ে। আই থিংক, বি‌ষের প্রভা‌বের কার‌ণেই উনি গা‌ড়ির নিয়ন্ত্রণ হা‌রি‌য়ে ফে‌লে‌ছি‌লেন। ত‌বে উনা‌কে কিন্তু সা‌পে সরাস‌রি কা‌টে‌নি। আমরা ভা‌লো ক‌রে চেক ক‌রে‌ছি বরং খাদ্য দ্র‌ব্যের মাধ্য‌মে সা‌পের বিষটা পে‌টে গে‌ছে।’
‘এখন কেমন আছেন?’
‘‌বি‌ষের প্র‌তি‌ষেধক আমরা দি‌য়ে‌ছি। উনি এখন বিপ‌দ মুক্ত। ত‌বে জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত কিছু অবশ্য বলা যা‌চ্ছে না। ত‌বে মাথার বাম পাশে বেশ ইনজু‌রি হ‌য়ে‌ছে। শরী‌রের এক সাইড প্যারালাইজড হ‌য়ে যাবার সম্ভবনা প্রবল। জ্ঞান ফির‌লে বোঝা যা‌বে। আশাক‌রি কালকের ম‌ধ্যে জ্ঞান ফির‌বে।’

মারুফ কিছুক্ষণ ভে‌বে বলল,
‘ডাক্তার সা‌হেব উনার লাইফ রিক্স আছে। উনি যে বিপদমুক্ত সেটা উনার আত্মীয়‌দের বলার প্র‌য়োজন নেই! জাস্ট বল‌বেন হুশ ক‌বে ফির‌বে বল‌তে পার‌ছেন না। উনি কোমায় আছেন। যা‌তে খুনী আবার উনার উপর এ্যাটাক না ক‌রে। আপ‌নি ডাক্তার, আমি পু‌লিশ। দু’জনারই মানুষ‌কে বাঁচা‌নো কর্তব্য। একটা মিথ্যা ব‌লে একজন‌কে বাঁচা‌তে পার‌লে ভা‌লো নয়‌ কি?’
‘আচ্ছা।’
‘ধন্যবাদ ডাক্তার। আমার নতুন কেসটা ইন্টে‌রে‌স্টিং লাগ‌ছে! যাক তদন্ত এখান থে‌কেই শুরু ক‌রি। আপ‌নি রো‌গীর প‌রিবা‌রের কা‌ছে যান। ত‌বে বি‌ষের কথাটাও উনা‌দের বলবেন না। খু‌নি এদের মধ্যেও থাক‌তে পা‌রে।’

ডাক্তার শশী কা‌ছে এসে বলল,
‘‌রোগী আপনা‌দের কী হন?’
শশী বলল,
‘আমার হ্যাজ‌বেন্ড। ওনারা তার বোন দ‌ুলাভাই। ও কেমন আ‌ছে ডাক্তার?’
‘ভা‌লো নেই। যদিও বর্তমা‌নে ভয়টা মোটামু‌টি কে‌টে গে‌ছে। ত‌বে উনি এখন কোমা‌তে আছে। মাথার বাম দি‌কে ভয়াবহ আঘাত পে‌য়ে‌ছে। রক্তক্ষণ হ‌য়েছে প্রচুর। উনি যে বেঁ‌চে আছেন সেটাই সৃ‌ষ্টিকর্তার মহান লীলা। কোমা থে‌কে জল‌দি হুশ ফি‌রে আস‌বে ব‌লে ম‌নে হ‌চ্ছে না। ওনার মে‌রেদ‌ন্ডেও আঘাত লে‌গে‌ছে। উনি প্যারালাইজড হ‌য়ে যাবার সম্ভবনা বে‌শি। আমরা ওনার হুঁশ না আসা অব্দি কিছুই স‌ঠিকভা‌বে বলা যা‌চ্ছে না।’

শশী আর কিছু শুন‌তে পেল না। চো‌খের সাম‌নে হাসপাতাল, হাসপা‌তালের ডাক্তার সবাই‌কে ঝাপসা দেখা‌চ্ছে। ও আর নি‌জে‌কে ধ‌রে রাখ‌তে পারল না। লু‌টি‌য়ে পড়ল হাসপাতা‌লের ফ্লো‌রে।
মারুফ আর সু‌মি মি‌লে ধরাধ‌রি ক‌রে, শশী‌কে হাসপাতা‌লে বে‌ডে শোয়া‌লো। মারুফ, শশীর দি‌কে তা‌কি‌য়ে ম‌নে ম‌নে বলল,
‘‌মে‌য়েটা অদ্ভুত সুন্দর! অনেক্ষণ এক ধ্যা‌নে তা‌কি‌য়ে থাকা যায় তেমন সুন্দর।’

‌কিছুক্ষণ পর শশীর জ্ঞান ফির‌তেই শশী দৌ‌ড়ে রাযী‌নের কা‌ছে গেল। রাযীনকে তখন আইসিইউতে রাখা হ‌য়ে‌ছে। সেখা‌নে বর্তমা‌নে কারও প্র‌বেশ নি‌ষেধ। শশী দরজার কাঁচ দি‌য়ে আকুল চো‌খে রাযী‌নের দি‌কে তা‌কি‌য়ে রই। আর বিড়‌বিড় ক‌রে বল‌তে লাগল,
‘রায‌ীন তু‌মি ঠিক হ‌য়ে যা‌বে। সুস্থ হ‌য়ে যা‌বে।’

রাত চারটার অনেক্ষণ পর হস‌পিটা‌লে এসে পৌঁছা‌লো ওদের প‌রিবার। শশী ওর মা‌কে দে‌খে দৌঁড়ে তা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কান্নায় ভে‌ঙে পড়ল। মিতু ক‌াঁদ‌তে কাঁদ‌তে বলল,
‘আমার ছে‌লেটার কী হ‌য়েছে শশী?
শশী কান্না কর‌তে করতে বলল,
‘মা রা‌তে খাবার পর অফিস থে‌কে কে যে‌নো কল করল। টেনশ‌নে তাড়াহু‌ড়ো ক‌রে বের হ‌লো। তারপর ওর এক্সি‌ডেন্ট এর খবর পেলাম। মা ওর অবস্থা খুব খারাপ।’
রায়হান রহমান ওখা‌নে না দাঁ‌ড়ি‌য়ে সোজা ডাক্তা‌রের কা‌ছে গে‌লেন বিস্তা‌রিত জান‌তে।

চল‌বে…