এক‌দিন বিকা‌লে সকাল হ‌য়ে‌ছি‌লো পর্ব-৪৫

0
479

#এক‌দিন_বিকা‌লে_সকাল_হ‌য়ে‌ছি‌লো
লে‌খিকা: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব:৪৫

রেনু মিছ‌রি মু‌খে দি‌য়ে চ‌ুপ ক‌রে ব‌সে রইল। হা‌সি বেগম কাপটা নি‌য়ে চ‌লে গে‌লেন। লি‌পি এসে বলল,
‘‌তোর খবর কী রেনু?’
‘কী খবর ভা‌বি?’
‘ক’‌দিন যাবত জ্বর ঠান্ডা কম‌ছেই না তোর। কেন?’
‘আ‌মি কী ক‌রে বল‌বো?’
‘তোর সাই‌কেল ঠিক আছে তো? মিস হয়‌নি তো?’
‘আ‌রে না ত‌ু‌মি যেমন ভাব‌ছো তেমন কিছু না। কয়েক‌দিন আগে না পি‌রিয়ড হ‌য়ে গেল।’
‘‌তো‌কে বিশ্বাস নেই। প্রথমবার যখন কন‌সিভ কর‌লি তুই বুঝ‌তেই পা‌রিস‌নি।’
‘আ‌রে না না ভাবি, এবার সব ঠিক আছে। ত‌াছাড়া তোমার দেওর আর আমি এখন কিছু প্ল্যান করব না। শশীর এ অবস্থা আর আমরা এ সম‌য়ে বাবুর চিন্তা ক‌রি কী ক‌রে ব‌লো? তাছাড়া প্রথম মিসক্যা‌রে‌জের পর শরীরটা‌কে সুস্থ হ‌তেও তো সময় দি‌তে হ‌বে। এখন সব‌কিছু অগোছা‌লো। সব একটু গু‌ছি‌য়ে নি। বি‌শেষ ক‌রে শশী জেল থে‌কে বের হ‌য়ে, ওর স্বাভা‌বিক জীব‌নে ফির‌লেই আমি নতুন কাউ‌কে আনার প‌রিকল্পনা করব।’
‘বাহ্।’
‘ভা‌বি তু‌মি কেন সে‌কেন্ড বে‌বি প্ল্যান কর‌ছো না?’
‘আমা‌রে তো পাগলা কুত্তায় কামড়ায় যে, সা‌হি‌রের ম‌তো বিচ্ছু একটা বাচ্চা থাক‌তে আরেকটা প্ল্যান করব! ওকে সামলা‌তেই দম বের হয়, তারপর তো আরেকটা। মাফ কর বইন।’
‌রেনু হে‌সে বলল,
‘সা‌হির মো‌টেও বিচ্ছু না। ও একটু দুষ্টু মাত্র।’
‘‌তাহ‌লে তো‌কে দি‌য়ে দিলাম। নি‌য়ে যা।’
‘ও‌কে।’

‌রেনু সা‌হির‌কে ডাকল। সা‌হির কা‌ছে আস‌তেই বলল,
‘বাবা, চল তো ঘু‌রে আছি।’
‘চা‌চি, আমি কিন্তু চক‌লেট খা‌বো।’
‘তুই যা খে‌তে চাই‌বি তা-ই খায়া‌বো, অনেক খেলনা কি‌নে দিব। শর্ত একটা এখন থে‌কে তোর মা‌কে মা ডাক‌বি না, বরং আমা‌কে মা ডাক‌বি।’
‘আচ্ছা চা‌চি।’
‘মা ডাক।’
‘ও‌কে মা।’
‌লি‌পি বলল,
‘কি লো‌ভী ছে‌লে দেখছিস রেনু! চক‌লেট আর খেলনার লোভ দেখা‌তেই তোর প‌ক্ষে চ‌লে গেল। আবার আসিস আমার কা‌ছে।’
সা‌হির বলল,
‘লাগ‌বে না তোমা‌কে। আমার রেনুমা আছে তো।’

‌রেনু, সা‌হির‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘স‌ত্যি ভা‌বি, ওর মুখ থেকে রেনুমা ডাকটা কি মি‌ষ্টি লাগছে! বাবা এখন থে‌কে তুই আমা‌কে রেনুমা ব‌লে ডাক‌বি। ওকে।’
সা‌হির বলল,
‘ও‌কে। তাহ‌লে তু‌মি আমা‌কে সা‌হিরবাবা না বরং আব্বাজান ব‌লে ডাকবা। আব্বাজান ডাক‌লে বড় বড় লা‌গে নি‌জে‌কে।’
‌রেনু হে‌সে বলল,
‘আচ্ছা আব্বাজান।’
‌লি‌পি হাসল ওদের দু’জনার কান্ড দে‌খে। তারপর বলল,
‘‌রেনু, শিহাব কখন ফির‌বে?’
‘ভা‌বি ও আজ ফির‌বে না। কক্সবাজার গে‌ছে না‌কি কি একটা জরু‌রি কা‌জে।’
‘‌সে‌কি এমন কী জরু‌রি কাজ যে বাসায়ও আসল না?’
‘জা‌নি না ভা‌বি। তেমন কিছু ব‌লে‌নি। বলল ফি‌রে জানা‌বে।’
‘ওহ। কখন ‌ফির‌বে?’
‘কাল দুপু‌রে বা বিকা‌লে।’
‘আচ্ছা।’

‌রেনুর ফো‌নে কল আসল। ওর বাবা হা‌মিদ কা‌জি কল ক‌রে‌ছেন। রেনু ফোন রি‌সিভ ক‌রে বলল,
‘আসসালামু আলাইকুম, বাবা।’
‘ওয়াইক‌ুম আসসালাম।’
‘‌কেমন আছেন, বাবা?’
‘ভা‌লো। তুই কেমন আছিস রে, মা?’
‘ভা‌লো।’
‘শশীর, কী খবর?’
‘‌কো‌নো খবর নেই বাবা।’
‘আহা‌রে! মে‌য়েটা এই অবস্থায় জে‌লে ব‌সে খুব কষ্ট পা‌চ্ছে।’
‘হ্যাঁ বাবা।’
‘আচ্ছা শোন কাল বাজার থে‌কে ন‌লেন গুড় কি‌নে‌ছিলাম। তোর জন্যও তিন কে‌জি কি‌নে‌ছি।’
‘কী ব‌লো? এত গুড় দি‌য়ে কী হ‌বে? শীত তো প্রায় শেষই।’
‘‌পিঠা পু‌লি বা‌নি‌য়ে খা‌বি।’
‘বাবা, শশীর কথা ভে‌বে বাসার সবার মন সবসময় খারাপ থাকে। পিঠা বা‌নানোর ম‌তো মন মান‌সিকতা কারও নেই।’
‘আচ্ছা ত‌বে তোর মা‌কে বল‌ছি তি‌নি বা‌নি‌য়ে দি‌বে। তুই কী পিঠা খা‌বি বল?’
‘না না বাবা শুধু শুধু কষ্ট ক‌রো না।’
‘আ‌রে ক‌ষ্টের কী আছে? বল কি পিঠা খাাবি?’
‘না না বাবা।’

হা‌মিদ কা‌জি হালকা ধমক দি‌য়ে বল‌লেন,
‘এত কথা না ব‌লে বল কি পিঠা খা‌বি? তুই না বল‌লেও আমি পিঠা বা‌নি‌য়ে পাঠা‌বো। তার চে‌য়ে বরং তুই তোর পছন্দ ম‌তো বল আর শিহাব কী পিঠা পছন্দ ক‌রে?’
‘আচ্ছা ত‌বে ন‌লেন গুড় দি‌য়ে চিতই পিঠা বা‌নি‌য়ে পা‌ঠিও আর মা‌কে বলবা একটু পা‌য়েশ রাঁধ‌তে। মা‌য়ের হা‌তের ন‌লেন গু‌ড়ের পা‌য়েশ পৃ‌থিবীতে বেস্ট।’
‘আচ্ছা। আর শিহাব?’
‘পা‌য়েশটাই শিহা‌বের জন্য।’
‘আচ্ছা। রাখ‌ছি ত‌বে।’
‘আচ্ছা বাবা।’

‌রেনু কল কে‌টে ভাবল,
‘এখন সম্পর্কগু‌লো কত সুন্দর! ঠিক সকা‌লে রো‌দের ম‌তো উজ্জল, স্বচ্ছ, তুলতু‌লে, মোলা‌য়েম। সবাই কত ভা‌লোবাস‌ছে আমা‌কে। হে আল্লাহ এরকমই সবাই‌কে রে‌খো। আর শশী‌কে দ্রুত মুক্ত করার ব্যবস্থা ক‌রো।’

রেনু ভাবল কীভাবে ওর সাথে ওর প‌রিবা‌রের সম্পর্ক ঠিক হ‌লো? এক‌দিন রেনুর কা‌ছে কল আসল ওর বাবা খুব অসুস্থ। রেনু‌কে দেখ‌তে চায়। রেনু, শিহাব‌কে নি‌য়ে ত‌ড়িঘ‌ড়ি ক‌রে যায়। শত রাগ থাক, বাবা তো? তার অসুস্থতার কথা শু‌নে আর না যে‌য়ে থাক‌তে পা‌রে‌নি রেনু। কিন্তু বা‌ড়ি গি‌য়ে অনেক অবাক হ‌লো। দেখল, ওর বাবা দি‌ব্যি হে‌ঁটে চ‌লে কাজ কর‌ছে। রেনু বেশ রাগ ক‌রে বলল,
‘বাবা আপ‌নি না অসুস্থ ছি‌লেন?’
‘হ্যাঁ প্রেশারটা একটু বে‌ড়ে‌ছি‌লো।’
‘‌কিন্তু মা যে বলল, অবস্থা অনেক খারাপ।’
‘হ্যাঁ আমার ম‌নের অবস্থা অনেক খারাপ।’
‘‌কেন?’
‘‌‌শিহাব‌কে নি‌য়ে ভিত‌রে গি‌য়ে ব‌সো, তারপর বল‌ছি।’

রেনু বেশ অবাক হ‌লো, তার ব্যবহা‌রে। তা-ও ওরা ভিত‌রে গি‌য়ে বস‌লো। হা‌মিদ কা‌জি, নিজ হা‌তে ওদের জন্য শরবত, ক‌য়েক রকম পিঠা নি‌য়ে এসে বল‌লেন,
‘‌রেনু, এগু‌লো আমার সাম‌নে ব‌সে খাও।’
‌রেনু বেশ অভিমান ক‌রে বলল,
‘আ‌মি এখা‌নে আপনা‌কে দেখ‌তে এসে‌ছি খে‌তে নয়।’
‘‌তো রোগী‌কে দেখ‌তে আস‌লে কি তা‌দের বাসায় খাওয়া যায় না?’
‘না যায় না। আপনা‌কে ‌দেখা হ‌য়ে‌ছে, আমি এখন চ‌লে যাব। শিহাব চলুন।’
‘‌দে‌খি তু‌মি কীভা‌বে চ‌লে যাও। আজ য‌দি তু‌মি না খে‌য়ে চ‌লে যাও তাহ‌লে আল্লাহর কসম কে‌টে বল‌ছি আমি আজ থে‌কে ফোটা পা‌নিও খা‌বো না। না খে‌য়ে খে‌য়ে ম‌রে যাব।’

‌রেনুর অভিমান, দুঃখগু‌লো আরও মাথাচারা দি‌য়ে উঠল। রাগ ক‌রে বলল,
‘এখন কেন আমার সা‌থে এমন ব্যবহার কর‌ছেন? এখন কেন ভা‌লো ব্যবহার কর‌ছেন? এখন আমার কারও প্র‌য়োজন নেই। এখন আমার মাথা গোজার জন্য শক্ত একটা স্থান আছে। কিন্তু যখন আমার খারাপ দিন ছি‌লো, যখন আপনা‌দের সা‌পোর্ট আমার সব‌চে‌য়ে বে‌শি তখন আপনারা কেউ আমা‌কে শান্তনা দেওয়া তো দূ‌রের কথা, উল্টা দোষারপ ক‌রে গে‌ছেন প্র‌তি মুহূ‌র্তে।’

‌হা‌মিদ কা‌জি রেনুর কথা শু‌নে বলল,
‘আচ্ছা তোমার কথা সব মানলাম। সব দোষ স্বীকার করলাম। এবার আর আমা‌দের উপর রাগ ক‌রে থেকো না।’
‘আমার আপনা‌দের উপর রাগ নেই বরং কষ্ট আছে। আপনারা সবাই মি‌লে আমার সা‌থে কেমন ব্যবহার ক‌রে‌ছি‌লে সেগু‌লো একবার ভে‌বে দেখুন। ঘ‌রের কা‌জের লো‌কের সাথেও মানুষ হয়‌তো এমন ব্যবহার ক‌রে না, যতটা আপ‌নারা আপনাদের ‌নি‌জের বড় মে‌য়ের সা‌থে ক‌রে‌ছেন। অবশ্য আপ‌নি তো আমার সাথে কথাই বল‌তে না! কখনও জান‌তেও চান‌নি আমার কথা! আপনা‌কে আর কী বল‌বো?’
হা‌মিদ কা‌জি মাথা নিচু ক‌রে বল‌লেন,
‘‌সন্তান ভুল কর‌লে, বাবা-মা তা‌কে ক্ষমা করে দেন। ত‌বে সন্তান কি তার বাবা-মায়ের ভুল ক্ষমা কর‌তে পা‌রে না?’

হা‌মিদ কা‌জির কথায় রেনুর বুকটা ধক ক‌রে উঠল। কী বল‌বে ভেবেই পে‌লো না! চুপ ক‌রে রইল। হা‌মিদ কা‌জিও চুপ ক‌রে রই‌লেন। শিহাব, রেনুর কা‌নের কা‌ছে মুখ নি‌য়ে বল‌ল,
‘‌তোমা‌কে ক‌ঠিন রূ‌পে একদম মান‌ায় না। তু‌মি আমা‌দের কা‌ছে সেই রেনু যার অপর নাম সরলতা, যার মা‌ঝে সবার জন্য অপ‌রিসীম মায়া।’

‌রেনু ঝরঝর ক‌রে কাঁদ‌তে লাগল। বেশ শব্দ ক‌রে কাঁদ‌তে লাগল। অনেকক্ষণ সময় নি‌য়ে কাঁদলো। হা‌মিদ কা‌জি থামা‌তে গে‌লে, শিহাব হাত ইশারায় বাঁধা দি‌লো। কারণ আজ রেনুর কাঁদা দরকার। কেঁ‌দে কেঁ‌দে ম‌নের সব কষ্ট দূর করা দরকার। অনেক্ষণ কাঁদার পর রেনু ওর বাবা‌কে বলল,
‘এক শ‌র্তে খা‌বো য‌দি তু‌মি ছো‌টো‌বেলার ম‌তো আমা‌কে নিজ হা‌তে খাই‌য়ে দাও।’
হা‌মিদ কা‌জি খুশি ম‌নে নিজ হা‌তে খাবার তু‌লে রেনু‌কে খাই‌য়ে দি‌লো। তান‌জিলা এসে এক লোকমা খাবার রেনুর দি‌কে বা‌ড়ি‌য়ে বলল,
‘আমার হা‌তে খা‌বি না মা?’
‌রেনু তার হা‌তেও খেল। তান‌জিলা, শিহা‌বের দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘ধন্যবাদ শিহাব।’
‌শিহাব মৃদু হে‌সে বলল,
‘ধন্যবাদ আ… আপা ডাক‌তে গি‌য়ে শিহাব আবার বলল, মানে মা।’

‌রেনু, শিহা‌বের পে‌টে কনুই দি‌য়ে গুতা দি‌য়ে বলল,
‘‌তো মামা, এসব আপনার প্ল্যান ছি‌লো?’
‌শিহাব, রেনুর কান টে‌নে বলল,
‘আবার…?’
তারপর রেনুর মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে বলল,
‌’রেনু তু‌মি খুব ভা‌লো মে‌য়ে। পৃ‌থিবীর সব রকম সুখ পাওয়ার অধিকার তোমার আছে। তোমার দু‌টো প‌রিবার। আমি চাই তু‌মি সবার সা‌থে, সবাই‌কে নি‌য়ে খুব খুব ভা‌লো থা‌কো।’

‌রেনু স্মিত হাসল। শিহাব ম‌নে ম‌নে বলল,
‘‌রেনু তু‌মি স‌ত্যি কত সরল। কত সহ‌জে এত বছ‌রের কষ্ট‌কে ভু‌লে গি‌য়ে সবার সা‌থে মি‌শে গেলে। আমি হ‌লে পারতাম না। কেউ আমাকে এত কষ্ট দি‌লে, আমি কখনও তার সা‌থে মিশতাম না। কিন্তু আমি চাই তোমার পরিবা‌রের সা‌থে তোমার সম্পর্ক খুব ভা‌লো থাকুক। কারণ কাল য‌দি, আমি তোমার সা‌থে না থা‌কি, তখন যে‌নো তোমার পরিবার তোমার পা‌শে থা‌কে।’
‌হা‌মিদ কা‌জি, রেনু‌কে বল‌লেন,
‘‌রেনু আজ রা‌তে কিন্তু তোরা থাক‌বি।’
‘‌কিন্তু বাবা সকা‌লে শিহা‌বের অফিস আছে।’
‘‌ঠিক আছে, অফি‌সে নাহয় এখান থে‌কে যা‌বে। তুই কয়টা দিন তোর নি‌জের বা‌ড়ি থাক। বি‌য়ের পর এক‌বারও এসে ক‌’দিন থাক‌লি না।’

‌রেনু শিহা‌বের পা‌নে তাকা‌লো। শিহাব সম্ম‌তি দি‌লো। রেনু খু‌শি হ‌লো খুব। এই প্রথম রেনুর ম‌নে হলো বি‌য়ের পর বাবার বা‌ড়ি নাইও‌রো‌তি এ‌সে‌ছে। ‌রেনু, শিহাব‌কে নি‌জের রুমে নি‌য়ে গেল। নি‌জের রুমটা‌কে দেখা‌তে লাগল। সব কিছুর গল্প খু‌টি‌য়ে খু‌টি‌য়ে বল‌তে লাগল। রেনুর গল্প বলার ধরন দে‌খে শিহাব মুগ্ধ হ‌য়ে ওর গা‌লে চু‌মো খে‌লো। রেনু লজ্জায় চোখ বন্ধ ক‌রে বলল,
‘‌ছি কী কর‌ছেন? বাবা-মা দেখ‌লে কী বলবে?’

‌শিহাব, রেনুর কথায় শুধু হাসল। রেনু ভীষণ খু‌শি ছি‌লো। নি‌জের খু‌শিটা সম্পূর্ণভা‌বেই শিহা‌বের কা‌ছে ব্যক্ত করল। সে রা‌তে রেনু নিজ থে‌কে শিহাব‌কে খুব ভা‌লোবাস‌লো। ঠিক যেমনটা মে‌য়েরা নিজ স্বামীর জন্য ভা‌লোবাসার ঝু‌ড়িতে নিজ ভা‌লোবাসা জ‌মি‌য়ে, সা‌জি‌য়ে রা‌খে। তেমন ক‌রে ভা‌লোবাসার ঝুড়ির জমা‌নো সব ভা‌লোবাসা শিহাব‌কে প্রদান করল।

প‌রের দিন সকা‌লে রেনু ওর মা‌য়ের সা‌থে রান্না কর‌ছি‌লো। তখন তান‌জিলা বলল,
‘‌রেনু?’
‘হ্যাঁ মা।’
‘তুই ও বা‌ড়ি‌তে সুখী তো?’
‘ভীষণ।’
‘আমা‌দের মন থে‌কে ক্ষমা ক‌রে‌ছিস তো?’
‘মা জা‌নো তোমা‌দের আমি বহু পূ‌র্বেই ক্ষমা ক‌রে‌ দি‌য়ে‌ছিলাম। শুধু অভিমানটা ছিলো। তার কারণ হ‌চ্ছে শিহাব। তোমরা আমার জীব‌নে শিহা‌বের ম‌তো একজন মানুষ‌কে এনে দি‌য়ে‌ছো। যার কার‌ণে তোমা‌দের প্র‌তি থাকা আমার সব রাগ পা‌নি হয়ে গে‌ছি‌লো।’
তান‌জিলা, রেনু‌কে জ‌ড়িয়ে ধ‌রে চো‌খের জল মুছল।’
তারপর তিন-চার দিন রেনু ওর বাবার বা‌ড়ি বে‌ড়ি‌য়ে‌ছে। খুব আনন্দে কে‌টেছি‌লো দিনগু‌লো। এখনও প্রায়ই যাওয়া আসা হয় ওদের।

৬০!!
অর্ক, রো‌মিসার ছ‌বিটা দি‌কে তা‌কিয়ে নিজ নি‌জে বলল,
‘জীব‌নে আমি অনেক অন্যায় ক‌রে‌ছি, অনেক পাপ ক‌রে‌ছি কিন্তু একটা পাপ কর‌তে গি‌য়ে গভীরভা‌বে ফেঁ‌সে গে‌ছি। অথচ আমার প্ল্যা‌নে আমি ফাঁসব এমন কো‌নো স্থান ছি‌লো না। তবুও তোমা‌তে ফে‌ঁসে গেলাম রো‌মিসা। আমার সবটা মিথ্যা হ‌লেও, তোমার প্র‌তি ভা‌লোবাসাটা কখনও মিথ্যা হ‌বে না। আমি তোমা‌কে ভা‌লোবা‌সি রো‌মিসা। খুব ভা‌লোবা‌সি ছো‌টো পা‌খি। তু‌মি আমায় আমার ম‌তো ক‌রে ভা‌লোবা‌সো তো ছো‌টো পা‌খি?

চল‌বে…