#শিশিরে_ভেজা_আলতা
(২য় খন্ড)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা
১৬.
হিমজড়ানো বিকেল; রোদ তখনও পশ্চিমে মিলিয়ে যায়নি। বাতাসে পাতা ঝরে ঝরে পড়ছে পেয়ারা আর আমের বাগানে। কথা ছিল দুপুরের পরই ঘুরতে বের হবে অনুরা। কিন্তু মেয়েরা শাড়ি পরে সাজতে গিয়েই বেলা বয়ে গেল অনেকটা। ঢাকা থেকে আসার সময় এমন কোন প্ল্যান ছিল না তাদের তাই সঙ্গে করে কোন শাড়ি আনা হয়নি। এমনিতেও সোহা শাড়ি, কামিজের প্রতি দূর্বল হলেও অনু এসবে একদম কমফোর্ট বা আগ্রহী কোনটাই নয়। কিন্তু সোহার চাপাচাপিতে সেও রাজী হয়েছে শেষমেশ। কিন্তু বিপত্তি হলো শাড়ি ব্লাউজ নিয়ে৷ শিশিরের মায়ের কানে গেল তারা শাড়ি পরতে চায় তাই সে নিজের স্টিলের আলমারি খুলে দুজনকে ডাকলো। সোহা আর অনু অবাক হয়ে দেখলো আলমারির এক পাল্লার প্রায় অর্ধেকের বেশিটা জুড়ে শুধু শাড়ি। সোহা শাড়ি চেনে খুব সে খেয়াল করলো সেখানে দামী, কমদামি শাড়িতে ভরা। সুতি, সিল্ক, কাতান আরো কয়েক ধরণের শাড়ি দেখে মুখ হা হয়ে গেছে সোহার। শিশিরের মা একটু আধুনিক তা বোঝা যায় তার আচরণে আবার শিশিরের মুখেই শুনেছিল তার মা শহরের মেয়ে। কিন্তু তাই বলে শাড়ির বাহার দেখে একটু বেশিই অবাক হয়েছে। শিফা দুজনকে বলল কে কোন শাড়ি পরবে বেছে নাও।
সোহা খুব বেছে একটা সুতির মধ্যে আকাশনীল রঙা শাড়ি নিয়েছে। অনু খুব একটা বাছাবাছি না করেই কালো সিল্কের শাড়ি নিলো। শিফা আবার জানতে চাইলো আলতা শাড়ি পরবে না! তাকে ফোন করে বলবে আসুক সেও শাড়ি পছন্দ করবে কোনটা পরবে। শিফা ফোন হাতে ঘরের দরজার দিকে এগিয়ে কল দিচ্ছে নকশিকে। সোহা আর অনু তখন ব্লাউজ কি পরবে তা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই সোহা বলল, আয়শার কপাল তো দারুণ অনু।
অনু ভ্রু কুঁচকে তাকালো যার অর্থ সে সোহার কথা বুঝতে পারেনি। সোহা বুঝিয়ে বলল, “দ্যাখ শিশিরের আম্মুর কত্তো শাড়ি। বিয়ের পর নিশ্চয়ই এই সবগুলো তারই হবে যেহেতু কোন ননদ, দেবর থাকবে না!”
“উফ্ সোহা কি টিপিক্যাল চিন্তাভাবনা তোর! শরৎচন্দ্র তোকে বিয়ে করলে খুব বিপদে পড়বে রে।”
মুখের কথা শেষ করতেই অনুর পিঠে দুম করে কি*ল পড়লো। সোহা মুখ ভেঙিয়ে বলল, “আমাকে বিয়ে করলে তার কপাল খুলে যাবে। হুহ”
নকশি ফোন তুলেছে ; সে জানিয়েছে আলতাকে সে তার নিজের শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে।
বিকেলের প্রায় শেষ হয়ে এসেছে তখন। সোহা, অনু দুজনেই আটপৌরে সাজে শাড়ি পরেছে। ব্লাউজ নিয়ে অনু কিছুক্ষণ দোনোমোনো করেছে কারোটাই ফিট লাগছে না বলে কিন্তু অনু তত কিছু না ভেবে নিজেরই এক সাদার মধ্যে কালো স্ট্রাইপের শার্টের সাথে পরে নিয়েছে। আলতাও পরেছে একই সাজে শুধু তার কোঁকড়া চুলগুলোতে বেশ আলগোছে এক বিনুনি করা। গোলাপি ফর্সা মুখটাতে একটুখানি পাউডারের প্রলেপও লাগিয়েছে আজ সে। শিশির যখন আলতাকে আনতে জহিরদের বাড়ি গেইটে গিয়ে দাঁড়ালো তখনি আলতা ঘর থেকে বেরিয়েছিল। চোখের পলকে চারচোখ এক হলো হাত দশেক দূর থেকেই। আলতা আজ শিশিরের চোখে তাকাতেই লজ্জায় মাখামাখি হলো ভীষণ। ভোরের কুয়াশামাখা ঘোলাটে ভোরের মত ঝাপসা হয়েছে তার চোখের দৃষ্টি। সে দৃষ্টিতে লজ্জার পরত পরেছিল তার কথা মেনে চুলের বাঁধন বেঁধেছিল বলেই হয়ত। সোহা, অনু দুজনেই ছিল শিশিরের পিছনে। তারা একটুখানি মুখ বাড়িয়ে টিনের গেইটে থেকেই ডাকলো, জলদি এসো সন্ধ্যে নামছে তো। সোহা অবশ্য একটু উদাস ছিল আজ। তার খুব ইচ্ছে ছিল শরতও আসুক তাদের সাথে কিন্তু সে কথা কে বলবে! গত দু দিনে সে যতবার তাদের সাথে ছিল বলা যায়, প্রত্যেকবারই সময়ের আবদারে থাকা। কখনো শেষ রাতে স্টেশন থেকে নিয়ে আসা, কখনো ফুপুর বাড়ির খাওয়ায় উপস্থিত হওয়া কিংবা নিকষ আঁধার ঘেরা পথে একসাথে মেলায় যাওয়া। কিন্তু বারংবার ছোট ভাইয়ের বন্ধুদের সাথে তার ঘোরাফেরা নিশ্চয়ই স্বাভাবিক ব্যাপার নয়! কিন্তু হাতে সময়টাও যে বড্ড কম। কত গুলো বছর পেরিয়ে গেল মনের কুঠুরিতে এই শরৎচন্দ্রের একলা বসবাস। এবার মন খুব করে চাইছে মনের সকল ভাবনাগুলো শীতের হিমেল হাওয়ার মত শরতের মনেও ছড়িয়ে দিয়ে যেতে। সে কি এই হাওয়ায় গা ভাসাবে নাকি উষ্ণ বালাপোশের মত মনের দুয়ার ঢেকে দেবে সোহার মনের হাওয়া রোধ করতে! বুক দুরুদুরু সময় যতোই আগায় ততোই উদ্বিগ্ন হয় সে। আর তো কালকে দিনটাই হাতে রয়ে গেল। রাত নামলেই ছেড়ে যাবে এই সবুজ গাঁয়ের সেই সাধারণ মানুষটাকে। কত তৃপ্তি নিয়ে গত দু দিনে সে দেখে নিলো মানুষটাকে। অথচ সেই মানুষটা তার দিকে কখনো কৌতূহলী চোখে চেয়ে পর্যন্ত দেখলো না যে চোখে একটা ছেলে মেয়েদের দিকে তাকায়। সে কি দেখতে অসুন্দর! আচ্ছা শরত তো অনুর দিকে কয়েকবার রাগী চোখে তাকিয়েছে কখনোবা বিষ্ময়ে। সে কি অনুকে পছন্দ করেছে? আহ্! এমন কিছু হলে ম*রেই যাবে সোহা। সে হঠাৎই মন খারাপ করে তাকালো অনুর দিকে৷ সম্পূর্ণ কালো আর সাদায় মোড়ানো উদ্যত আচরণ করা তার বান্ধবীটি প্রেম, ভালোবাসা থেকে ক্রোশ দূর যদি তার প্রিয় পুরুষটি তাকেই ভালোবেসে ফেলে! এই প্রথম সোহার মন হীনমন্যতায় ভুগলো নিজের অস্তিত্ব নিয়ে। মন আর মানছে না যে করেই হোক আজ সে শরতকে তার মনের কথা জানিয়ে দেবে।
আলতা বেরিয়ে আসার আগে নকশিকে বলে এলো শিশিররা এসেছে।
চারজনের ছোট্ট দল এগিয়ে চলল নদীর দিকে। পৌষের সময় ধানের ক্ষেত সোনালি, সরষে ক্ষেত হলদে রঙে চোখ ধাঁধানো কিন্তু নদীর ঘাট অর্ধ শুকনো আর নদীর জল অনেক নিচে। তীর জুড়ে আবার কাশফুলের মেলা জমেছে মাস দুয়েক আগে থেকেই। আলতার পরনে সাদা জমিনে লাল পাড়ের কাতান শাড়ি। নকশির এই শাড়িটি তার নিজের কেনা ছিল বলেই স্বচ্ছন্দ্যে পরেছে আলতা। জহিরকে নিয়ে তার খুব একটা খারাপ লাগা নেই। মানুষটা ভালো আজ সারাটাদিনে সে দেখেছে এই মানুষটা তার মায়ের কতো যত্ন করে, সম্মান দেয় এমনকি তাকেও নিজ কন্যার মত স্নেহ করে। তবুও বুকের ভেতর একটা অবাধ কষ্ট এসে হানা দেয় তার মায়ের পাশে তার নিজের বাবার কমতি। সকল মন খারাপ কে উগড়ে দিতে সময় বেশি লাগলো না তার নদীর তীরে গিয়ে। চির চেনা নদীর তীর, নৌকা, আকাশ জুড়ে পলকা মেঘের ভেলা আর কাশফুল নিমেষেই তাকে উৎফুল্ল করে দিল। নদীর পশ্চিম ঘাটে বাঁধা দুটো নৌকার একটাতে উঠে সোহা অনুকে বলল, ক্যামেরা দে শিশিরকে অন্ধকার হওয়ার আগেই ছবি তুলে নেই।
অনু বিরক্তি নিয়ে তাকালো সোহার দিকে।
“ক্যামেরা শিশিরের হাতের ছোট্ট ব্যাগটাতেই আছে।” কথাটা বলে তারা দুজনেই তাকালো পাশে।
“ওমা! শিশির, আয়শা কই!” চমকে গেল অনু, সোহাও অবাক হলো। মাত্রই তো দুজন এখানে ছিল!
সোহা তাড়াহুড়ো করে বলল, “দ্যাখ সে হয়তো তার মার্বেল রানী না কি যেন বলে তাকে প্রপোজ করতে কাঁশফুলের জঙ্গলে নিয়ে গেছে। তুই জলদি তোর ফোন দিয়েই ঝটপট তুলে দে বইন। সূর্য ডুবলো বলে।”
অস্থির, উত্তেজিত শোনালো সোহার গলা। অনুও বাধ্য হয়েই তার ফোন দিয়ে সোহার কিছু ছবি তুলে দিলো। সে পোজ জানে না ভালো তাই সোহাই তাকে বলে বলে তারও কিছু ছবি তুলে দিলো।
কাস্টমারে দোকান জমজমাট আজ শরতের। এদিকে মাল আনতে গিয়েছিল বলে বিকেলে দোকান খোলা হয়নি এখনো মাল গুছিয়ে কাস্টমার বিদায় করতে গিয়ে একটু হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মচারীটি আসেনি বলে। মাত্র আধঘন্টার মধ্যেই সে ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে গেছে এই ঠান্ডার দিনেও। শরতের দোকানে মুদিবাজার থেকে শুরু করে ফ্লেক্সিলোড আর বিকাশ, নগদের ব্যবস্থা করেছে সে কিছুদিন ধরে। দেখতে দেখতে তার দোকানের আয়তন এখন বাজারে সবচেয়ে বড়। উন্নতি তার দিনকে দিন আকাশচুম্বী । কেউ কেউ তো তাকে এখন উস্কে দিচ্ছে বাজারে চালের আড়ৎ খুলতে। তাদের বাজারে এখনো চাল, ডালের আড়ৎ বা কাপড়, কসমেটিকসের কোন ব্যবসায়ী নেই। এসবের জন্য সবাই সদরে কলেজের পাশের ছোট্ট মার্কেটে যায়। শরতও ভাবছে কিছুদিন ধরে কিন্তু এসবে টাকার খেলা একটু বেশিই বড়। তারওপর তার এই দোকানেই আরো একজন কর্মচারী নিবে বলে ভাবছে সে। কাস্টমারদের সবাইকে বিদেয় করার পর সে মাথার ওপরের ছোট্ট ফ্যানটা চালু করে শার্টের ওপরের দুটো বোতাম খুলে মাত্রই স্থির হয়ে বসেছিল। পকেটে ভাইব্রেশনে ফোনটা কাঁপতেই সেটা তুলে নিয়ে তাকাতেই অবাক হলো সে। হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে অনুর ম্যাসেজ! সে মনে করতে পারলো না অনুকে নিজের ফোন নম্বর কবে দিলো! পরমুহূর্তেই মনে পড়লো সেতো এই নম্বরটা সেভ করেছিল অনু কল করার পরই৷ অত্যন্ত বিরক্তিকর মুখ করেই সে মেসেজখানা ওপেন করে বিষ্ময়ে হা হয়ে রইলো কয়েক সেকেন্ড।
“হাত দে দেখি” কাশফুলে ঘেরা জায়গাটাতে দাঁড়িয়ে বড্ড গম্ভীর মুখ করে বলল শিশির। আলতা গাল ফুলিয়ে একবার আশপাশে তাকিয়ে আরেকবার শিশিরের দিকে তাকালো। তাকাতেই তার বুকের ভেতরটা চলকে উঠলো পুরনো এক রাতের কথা মনে করে। শিশিরের চোখের দৃষ্টি কি আজ ঠিক সেই রাতটার মত! নাকি আলতাই ভুল ভাবছে? ভুলও হতে পারে সেতো বছর কয়েক আগের কথা যখন আলতা আরো ছোট ছিল। শিশির ভাইয়ের মামাতো বোনের হলুদের সেই রাতের শিশির ভাই ছিল ভ*য়ংকর এক প্রেমিক পুরুষ৷ যার সেই ভয়*ংকর প্রেম অস্বাভাবিক আচরণ শুধু সে রাতেই দেখেছিল আলতা। তারপর আর কখনো এই মানুষটা সেরকম দৃষ্টি কিংবা আচরণ দেখায়নি আলতাকে। নেশালো, আগ্রাসী এক প্রেমিক সত্তা কি আজ আবারও উপস্থিত হয়েছে এই শিশির ভাইয়ের মাঝে!
“কি হলো হাত দে” এবার খুব ঝাঁঝালো কণ্ঠেই বলল শিশির। আটপৌরে শাড়ি, গলায় মাটির গয়না, চুলে আধখোলা বেণী, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক আর ফর্সা পায়ের পাতা জুড়ে টকটকে আলতা। কিশোরী কন্যার এই রূপে কোনো পুরুষ মুগ্ধ না হয়ে কি পারে! একমাত্র শিশিরই জানে আলতাকে দেখে তার ভেতরে চলা ঝড়টা ঠিক কতখানি ভ*য়ংকর হয়ে উঠেছে। তবুও সামলে নিতে হবে যে এই মনটাকে। নিজের ভেতরকার অসংলগ্ন কামনা, বাসনাকে লুকিয়ে রাখতে হবে যে আরো অনেকটা দিন, অনেকটা সময়৷ আলতার প্রতিক্রিয়া না দেখেই শিশির হাত টেনে আলতাকে বসিয়ে দিলো ঘাসের ওপর৷ তার হাতে থাকা ছোট্ট ব্যাগটাতে আছে সোহার ক্যানন ক্যামেরাটির সাথে শিশিরের রাখা দু গাছি লাল কাঁচের চুড়ি। সেই সাথে আছে লাল টকটকে দুটো জবা৷ বড্ড লুকিয়ে, চুরিয়ে রেখেছিলো এই চুড়িগুলি। আজ অতি গোপনে ব্যাগটাতে পুরে নিয়ে এসেছে আলতাকে পরাবে বলে আর ওই জবা দু’খানা সে তার বন্ধু অপুর বাড়ির গাছ থেকে ছিঁড়ে এনেছে। কত যত্নে রেখেছে এই ছোট্ট ব্যাগটাতে যেন মুচড়ে না যায় প্রেয়সীর বেণীতে ওঠার আগেই। আলতা বিমূঢ় হয়ে বসে রইলো শুকনো ঘাস আর কাশফুলের মাঝে। শিশির বড় যত্নে তার হাত দুটোতে চুড়ি পরিয়ে ফুল দুটো নিয়ে হাঁটু মুড়ে এগিয়ে এলো আলতার মুখোমুখি। শিশিরের পেছন দিক থেকে সরু রাস্তাটা দেখা যায় ভালো করে। তার খেয়াল হয়নি পেছনে কেউ দেখবে কিনা। সে তো সযত্নে ফুল গুঁজছিলো আলতার বিনুনির ফাঁকে তখনই ও পথ থেকে তাদের দেখে থমকে দাঁড়ালো এ গ্রামেরই এক মধ্যবয়স্ক পুরুষ রফিক চাচা। বলা বাহুল্য লোকটা শুধু গ্রামেরই একজন নয় সেই সাথে আহসান আর জহিরেরও বন্ধু মানুষ৷ তবে লোকটা বড্ড শেয়ালের মত ধূর্ত আর হিংসুটে। তার চোখ গ্রামের প্রায় প্রতিটি মানুষের দূর্বলতার দিকেই ঘোরে হরদম। নিজের সংসারে সে দু আনাও সুখী নয় নেহায়েত সে কারণেই অন্যের সুখও খুব একটা বরদাশত হয় না। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন প্রায় সবারই জীবনের সকল ঘটনা নিয়ে সে অপপ্রচার করে বেড়াতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করে। আর আজ তো পুরো এক রসাত্মক ঘটনাই চোখে পড়লো। সে হুট করেই হাঁক ছাড়লো, “কাশক্ষেতে কারা? কার ঝা*উড়া পোলাপান এইখানে লীলাখেলা করতাছো?”
রফিকের কণ্ঠ চিনতে একটুও ভুল হয়নি শিশিরের। নিজের ভুলটা বুঝতেই শিশির আগলে নিলো আলতাকে যেন পেছন থেকে আলতার মুখটা না দেখতে পায় লোকটা। আজ এই মুহুর্তে আলতাকে চিনতে পারলেই যে লোকটা বেস রসাত্মক এক ঘটনা আজ রাতের মধ্যেই চাউর করে দিবে। নেহাৎ বাধ্য হয়েই শিশিরে ঘন কাশফুলের আড়ালে ঠেলে দিলো আলতাকে। নিচু কন্ঠে শুধু বলে দিলো এপাশ দিয়ে তুই চলে যা বাড়িতে। তার সেকেন্ডের করা পরিকল্পনায় একটুও ভুল ছিলো না কিন্তু ভুলটা করলো আলতা। শিশির ওঠে দাঁড়ানোর আগেই সে দাঁড়িয়ে যেতেই রফিক দেখতে পেল আলতাকে। মেয়েটার মুখটা চিনতে একটুও কষ্ট হয়নি তার। এই গ্রাম কোন আশপাশের আরো পাঁচ গ্রাম ঘুরলেও এত পর্সা এত সুন্দরী মেয়ে যে আলতা ছাড়া আর কেউ নেই তা বোধকরি কয়েক গ্রামের সকলেরই জানা। সূর্যডুবির এই সন্ধ্যেতেও নকশির মেয়েকে চিনতে তার একটুও ভুল হয়নি। ভুলটা হলো পিঠ ফেরানো ছেলেটিকে দেখে। পেছন থেকে শুধু ছেলেটির কালো শার্ট আর মাথার কালো চুল ছাড়াই কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে ছেলেটি বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই সে অস্পষ্ট উচ্চারণে বলে উঠলো, “ছেলেটা শরত না!”
চলবে