#এক_প্রহর_ভালোবাসার
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
#ত্রিয়োদশ_পর্ব
সবাই খাবার টেবিলে চুপচাপ বসে আছে। লিমার কথা যে কারো পছন্দ হয়নি তা সবার মুখের হাবভাব দেখলেই বুঝা যাচ্ছে। এক অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে এমন মন্তব্য করায় সাইফ রেগে গেলো।
– মম আপনি কিভাবে সানা কে নিয়ে এসব বলতে পারেন? ও কি ইচ্ছে করে অসুস্থ হয়েছে? কেউ কি ইচ্ছে করে নিজের পা ভাঙ্গে?
– নিজের মায়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় মনে হচ্ছে সে আদব কায়দা বিদেশে গিয়ে ভুলতে বসেছো সাইফ?
– না আব্বু আপনি হয়তো ভুলে গেছেন আপনার স্ত্রী যাকে নিয়ে এসব বলছে সেই মেয়েটি আপনার নিজের ভাগ্নী?
– বাদ দেও সবাই কথা খেয়ে নেও ভাবি এতো কষ্ট করে সবার জন্য রান্না করছে আর তোমরা কি শুরু করেছো।
সাফোয়ান চুপচাপ বসে আছে। নিজের মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টায়। সে চায়না তার ব্যাবহারে কেউ কষ্ট পাক।
সিনথীয়া।( আসলে আমি সাফোয়ান আর সাইফের বোনের নাম আগে কি দিয়েছিলাম তা ভুলে গেছি তাই নতুন করে এই নাম দিলাম। )
সিনথীয়া খাবার খাওয়ার ফাকে আদিলের দিকে তাকাচ্ছে বারবার। হয়তো প্রথম দশর্নে সে ক্রাস খেয়েছে তার উপর। রাফিয়া নিজের বোনের নামে এতো কথা শুনে খাবার গলা দিয়ে নামছে না। তবুও জোর করে খাওয়ার চেষ্টা করছে।
– পিচ্ছু সানা আজ কতবড় হয়ে গেছে তাই না ভাই? কি সুন্দর রান্নাবান্না শিখে গেছে। তার হাতের রান্নাও মা শা আল্লাহ কত মজার।আমি ভাবতেও পারি নাই।
সাইফের কথায় মুচকি হাসে সাফোয়ান। হ্যাঁ তার সেই ছোটো অবুঝ সানা আজ অনেক বড় হয়ে গেছে। সানার কথা মনে পরতেই সাফোয়ান খাবার টেবিল থেকে উঠে নুজের রুমের দিকে চলে যায়। সানাকে একা রুমে রেখে এসেছে সে। সাফোয়ানের চকে যাওয়াতে কেউ কিছু বলে নাই সবাই জানে কই যাবে তাই। লিমা আর শিহাব ও উঠে নিজেদের রুমে চলে যায়। টেবিলে রাফিয়া,সিনথীয়া,আদিল,সাইফ আর রেহানা। রেহানা সবাইকে খাবার বেরে দিচ্ছে।
– আচ্ছা রেহানা আপা কুদ্দুস ভাই কই? আমি এসেও তাকে দেখলাম না। আগে তো উনি সারাদিন ভাইয়ের আগে পিছে ঘুরতেন?
কুদ্দুসের কথা শুনতেই অন্যমনস্ক হয়ে পরে রেহানা। আসলেই কুদ্দুস কোথায় আছে কেউ জানেনা৷ সেই যে পালিয়েছে আজ এই কয়েকবছরেও তার হদিস পাওয়া যায় নাই। মব তার বিষিয়ে উঠলো। রেহানা কে ভালোবাসার মায়ায় আটকে নিজেই উধাও হয়ে গেলো৷
– জানিনা ভাই ৩ বছর আগে এক ঘটনার পর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নাই। অইদিনের পর উনি পালিয়ে কোথায় গেছে আমরা কেউ জানিনা। বড় ভাইজান তো এখোনো উনাকে খুঁজে বেড়ায় ।
– কি এমন হয়েছিলো রেহানা আপা?
– বাদ দেন এইগুলা আজকে পরে ভাইজান থেকে সব শুইনেন।
আদিলের দিকে চুপিচুপি তাকাচ্ছে সিনথীয়া আর খাচ্ছে। আদিল ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বিষম খেলো। এক মেয়ে তাকে এভাবে দেখছে ব্যাপারটা মোটেও হজম হচ্ছে না তার। আর মেয়েটা যদি হয় সাইফ সাফোয়ানের বোন।
রাফিয়া ও নিজের খাওয়া শেষ করে উঠে চলে যায়। রাফিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাইফ। হয়তো সে নিজেকে নাহলে অন্যকে বোঝাতে অক্ষম৷
রাত প্রায় ৩ টার কাছাকাছি, সানার মনে হচ্ছে কেউ তার ছেলেকে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে সে৷ ধীরে ধীরে তার সামনে চেহারা স্পষ্ট হোলো। তার মা-বাবা তার ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। সানা দৌড়েও তাদের নাগাল পাচ্ছে না। চিল্লিয়ে উঠে বসলো সে। তার চিৎকারে সাফোয়ানের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। উঠে জলদি সানার কাছে গেলো।
– কি হয়েছে সানা এভাবে চিল্লাচ্ছো কেনো?
– আমার ছেলে সাফোয়ান আমার ছেলে মা-বাবা চুরি করে হারিয়ে গেলো। এনে দেন আমাকে আমার ছেলে এনে দেন প্লিজ।
সাফোয়ানের চোখ ও ছলছল হয়ে গেলো মনে পরে গেলো সেই ছোট্ট হাত – পায়ের ছোট্ট দেহটা। আদিল,সিনথীয়া,রাফিয়া,সাইফ সহ সবাই সানার চিৎকার শুনে এইরুনে ছুটে আসে। সানার মুখে ছেলের কথা শুনে রাফিয়া আর রেহানা বাদে সবাই অবাক হয়ে যায়। সাফোয়ানের বুকে মাথা রেখে ফুপিয়ে কেদে যাচ্ছে সানা। ঘুমের রেশ এখোনো কাটে নাই তার। সানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সায়াফোয়ান।
– ভাই কি হয়েছে?
– ঘুমের মধ্যে খারাপ স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছে ও।
– ভাই একটা কথা জিজ্ঞেস করবো সত্যি সত্যি বলবা?
– হ্যাঁ কর না তুই?
– কি হয়েছিলো তখন ভাই আমরা তো কেউ ছিলাম না এখোনো জানতেও পারলাম না।
সাইফের কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাফোয়ান। নিজের মধ্যে চেপে রাখা কথা গুলো এতোদিন পর সবার সাথে বলার সময় হয়েছে। সাইফ বলা শুরু করলো।
– তখন আমি সানাকে নিয়ে এসেছি হবে ৩*৪ মাস। সানার অর্ধবার্ষিক পরিক্ষা চলছিলো তখন। সানা পড়াশুনা নিয়ে অনেক খামখেয়ালি করতো। কিছুদিন যাবোদ সে ঠিকমতো খাবার খেতো না। আমি ভাবতান পরিক্ষার জন্য হয়তো ওর চিন্তায় এই অবস্থা। শেষ পরিক্ষার দিন স্কুলে ও সেন্সলেস হয়ে যায় তখন ও কে নিয়ে আমি হাসপাতালে যাই।।ডক্টরের সাথে কথা বলে আমি কানফর্ম হই যে ও প্রেগন্যান্ট। আমার মাথায় তখন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। নিজের উপর রাগ হয়েছিলো প্রচুর। কারন ওর সাস্থ্য নিয়ে আমি প্রন্ড চিন্তায় ছিলাম। ওর এখন কন্সিভ করাটা ওর শরীরের পক্ষে যতোটা ক্ষতিকর ততোটা আমাদের বাচ্চার জন্য ও। সামনে ও তার এস এস সি এক্সাম। কি থেকে কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। মম কে জনালাম। মম তো বেজায় খুশি তার বংশধর আসবে। এদিকে আমিও নিজের কাজ সামলে সানার খেয়াল রাখতে পারছিলাম না।
– আচ্ছা ভাইয়া আমরা ও তো জানতাম সানা প্রেগন্যান্ট এরপর কি এমন হলো যে সানার বাবা-মা হারিয়ে গেলো। বাবুকেও আল্লাহ নিয়ে নিলো? আর ভাবিও কেমন পালটে গেলো।
– চুপ কর ভাইয়ার কথা শেষ হওয়ার আগে বাম-হাত ঢুকাস কেন? ভাইয়া তুমি বলো।
সাইফ আর সিন্থিয়ার কথার জন্য আদিলের ডিস্টার্ব হলো। আদিল অনেক মনোযোগ সহকারে সাফোয়ান থেকে শুনছিলো।
– সানার তখন ৪ মাস শেষের দিকে। কেমন যেন সুন্দর হয়ে যাচ্ছিলো দিন দিন। বিশ্বাস হচ্ছিলো না আমার এইটুকু মেয়ের পেটুতে আরেকটা জিবন।এরপর আমি সানার খেয়াল রাখার জন্য গ গ্রাম থেকে রাফিয়া কে ও ওর মা-বাবাকে নিয়ে আসি, তাদের আনা যে আমার জিবনের এতো বড় ভুল হবে তা যদি জানতাম তাহলে এই ভুল আমি করতাম না৷
সানা আবারো কেদে উঠাতে সাফোয়ান তার কথা থামিয়ে দেয়। সানা প্রচুর কাদছে আর বলছে তার বাবুকে না নিতে। সানা ঘুম ঘুম চোখেই নিজেকে খামচাতে লাগলো। নিজের গালে নিজেই থাপ্পর দিতে লাগলো।
– সব আমার দোষ আমার, আজ আমার জন্য আমার বাবু আমার কাছে নাই। আল্লাহ তুমি আমাকেও নিয়ে যাও আমার যে আর ভালো লাগছেনা আল্লাহ।
সানার অবস্থা দেখে আদিল সাইডে রাখা ব্যাগ থেকে ইঞ্জেকশন বের করে আবারো পুশ করে দিলো। সানা শান্ত হয়ে গেলো আবারো।
– ভাবির অবস্থা দেখে তো মনে হচ্ছে ওনার মেন্টাল কন্ডিশন তেমন ভালো না। উনার এর আগেও এমন বিহেভ করেছে আরো অনেক মনে হচ্ছে। উনাকে কি ডাক্টার দেখানো হয় নাই?
এবার রাফিয়া মুখ খুললো।
– ভাইয়ার থেকে পুরো কাহিনী শুনুন তাহলে সব বুঝতে পারবেন কিভাবে কি হয়েছে।
– এক মিনিট তুমিও এখানে ছিলে তাইনা রাফিয়া? তুমিও তাহলে জানো এখানে কি কি হয়েছে। সব জানার কথাই।
– থাম আমি বলছি।
সানার মা-বাবা-রাফিয়াকে পেয়ে সানা প্রচন্ড খুশি থাকতো। তবে সানার বা-মায়ের মাঝে সেই খুশি দেখা যেতো না। আমার সম্পত্তির লোভে তারা সানাকে আমার সাথে বিয়ে দিয়েছিলো বয়স লুকিয়ে। আংকেল আর মম নাকি ওনাকে অনেক টাকা-আর যায়গা দেওয়ার লোভ দেখিয়েছিলো কিন্তু তা তারা কিছ্য না দেওয়ায় আমাদের উপর অনেক রাগ ছিলো।
..#চলবে.?