হৃদয় নিবাসে তুই
পর্ব_০২
লেখনীতেঃভূমি
একদম স্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করবেন না অদ্রিজা।একদমই নাহ।আপনি আপনিই! আমার এক রাতের সঙ্গী ছিলেন।ব্যাস!এর বাইরে এসব কেয়ার,খাবার নিয়ে আসা, ব্যান্ডেজ করা কোনটাই করবেন না আপনি।আর যদি মনে করেন এসব করে আপনি আমার মনে জায়গা করতে পারবেন? ইউ আর রং অদ্রিজা,কপ্লিটলি রং।রক্তিম মাহুমদ নারীদের মনে নয় নারীদের শরীরে বিশ্বাসী।ভালোবাসা নয় কামনায় আসক্ত!’
পেঁছন থেকেই নিজের থেতলে যাওয়া হাতটা দিয়েই অদ্রিজার বাম হাতটা মুঁছড়ে ধরেই কথাগুলো বলল রক্তিম।হাতের রক্তগুলো মাখামাখি করে লেগে গেল অদ্রিজার হাতে আর পিঠেও।অদ্রিজা হাত ব্যাথায় অস্ফুট স্বরে “আহ” আওয়াজ করতেই রক্তিম বাঁকা হাসল।মাথা নামিয়ে অদ্রিজার কানের কাছে মুখ এনেই দাঁত কেলিয়ে বলল,
ব্যাথা পেলেন অদ্রিজা?
অদ্রিজা ঘাড় ঘুরিয়ে রক্তিমের দিকে তাকাল।রক্তিমের মুখে হাসি ঝুলানো।ট্যারাব্যাকা দাঁত গুলো স্পষ্ট দৃশ্যমান হলো দাঁত কেলিয়ে হাসাতে।হাসিটা অসুন্দর নয়। বরং মোহনীয়!কিন্তু হাসি দিয়ে যে একটা মানুষকে বিচার করা যায় না।নয়তো এই সুন্দর হাসিটার মতোই মানুষটাকেও সুন্দর ভাবত সে।অদ্রিজা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ।লম্বা চওড়া মানুষটার বুকের সাথে তার পিঠ মিশে আছে।আধভেজা চুলগুলো ছুঁয়ে আছে তার গালে।হাত ব্যাথার চেয়েও নিজের এতটা কাছে একটা পুরুষ মানুষের উপস্থিতি ভয়ঙ্কর!অস্বস্তিতে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিয়েই নিজের হাতটা ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করল। রক্তিম হাসল। অদ্রিজা
কষ্ট পাওয়ার জন্য আরো জোরে মুঁছড়ে ধরল হাতটা।তারপরই বলল,
‘পারবেন নাহ ছাড়াতে।’
অদ্রিজা চোখজোড়া বন্ধ করে ব্যাথা সহ্য করার চেষ্টা চালাল।যেন হাতটা ভেঙ্গে গুড়িয়েই যাবে। মাংসপেশী গুলো ব্যাথায় তড়তড় করতেই দাঁতে দাঁত চেপে অস্ফুট স্বরে বলে উঠল অদ্রিজা,
‘হাতটা ছাড়ুন রক্তিম।লাগছে।’
‘লাগুক!’
রক্তিমের নির্বিকারে দেওয়া উত্তরে অদ্রিজা ছটফট করে উঠল। ব্যাথায় কাঁতরে উঠেই নিজের হাতটা বার কয়েক টেনে হিঁছড়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করল।কিন্তু এবারও পারল নাহ সে।রক্তিমের মতো মানুষের সাথে পারাটা অবশ্য সম্ভব ও নয়।শক্তপোক্ত পেটানো শরীর।অদ্রিজার মতো দুই কি চারজন এসে তাকে একসাথে মারলেও কাজ হবে না।অদ্রিজা ছোটছোট শ্বাস ফেলতেই চোখের পানি গড়াল গাল বেয়ে। কঠিন গলায় বলে উঠল,
‘হ্যাঁ, লাগুক।লাগুক!আমি ও দেখি কতক্ষন আপনি এভাবে ব্যাথা দিতে পারেন।আর আমিও কতটুকু সহ্য করতে পারি।’
রক্তিম হু হা করে হেসে উঠল।অদ্রিজার ডানহাতটাও মুঁছড়ে পেছনে নিয়ে একসাথে চেপে ধরল দুই হাত। তারপর অদ্রিজার কানের কাছেই ফিসফিসিয়ে বলল,
‘রক্তিম বলতেই মেয়েরা পাগল।কিন্তু ব্যাথা সহ্য করেও রক্তিমের এতটা কাছাকাছি থাকার সুযোগ হারাতে চাইলেন না?এটা তো পিউর ভালোবাসা! ওয়াও!’
অদ্রিজা তাচ্ছিল্য হেসেই বলে উঠল,
‘ভালোবাসা?ভালোবাসা আদৌ আপনার মতো মানুষ বুঝতে পারে রক্তিম?ভালোবাসাটা মনের বিষয়!দুইজনের মনের বিষয়।আর সেক্ষেত্রে দেখতে গেলে আপনার না আছে মন আর না আছে অন্যদিকের মানুষটার মন বোঝার ক্ষমতা। তাই আপনার দ্বারা ভালোবাসাটা যেমন সম্ভব নয় ঠিক তেমনই কারোর পক্ষে আপনাকে ভালোবাসাটাও সম্ভব নয়।আর যেখানে ভালোবাসাটাই সম্ভব না সেইখানে পিউর ভালোবাসা খুঁজে নিয়েছেন আপনি?হাস্যকর!’
‘তার মানে বলছেন আপনি কখনো আমায় ভালোবাসবেন না?আমার জন্য ভালোবাসা জম্মাবে না আপনার মনে কোনদিন।তাইতো?’
অদ্রিজা আগের মতোই কঠিন গলায় বলে উঠল,
‘নিঃসন্দেহে নাহ।আপনার মতো চরিত্রহীন মানুষকে আর যায় হোক ভালোবাসা যায় না রক্তিম।কোনভাবেই নাহ।’
‘কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার কি জানেন?এই চরিত্রহীন রক্তিম বলতেই মেয়েরা পাগল হয়ে যায়। রক্তিমের প্রতি মেয়েদের ভালোবাসা জম্মাতে দুই মিনিটও সময় লাগে নাহ। আর আপনি তো সেইখানে কিছুই নাহ অদ্রিজা।এন্ড ইউ নো হোয়াট অদ্রিজা?আপনি খুব শীঘ্রই আমাকে ভালোবাসবেন।এই যে আজ তেজ নিয়ে বলে উঠলেন কখনোই ভালোবাসবেন নাহ?সেইদিন কিন্তু আপনি নিজের মাঝে নিজে মরবেন কেবল আমাকে ভালোবাসেন এই কথাটা ভেবেই।একটা চাপা কষ্ট সেইদিন আপনার পিছু পিছু হানা করবে শুধু এই মানুষটাকে ভালোবাসেন বলে।আর সেইদিন আপনি আপসোস করবেন, কেন আমার সাথে আপনার দেখা হলো তা নিয়ে, কেন আমার প্রতি আপনার অনুভূতি জম্মাল তা নিয়ে।যেমনটা সবাই করে আর কি।আপসোস!আপনিও তাদের মতো উদাহরণ হতে চলেছেন।’
কথাগুলো বলেই অদ্রিজার হাতজোড়া ছেড়ে দিল রক্তিম।অনেকক্ষন পর নিজের হাত জোড়া শক্ত বাহু জোড়া থেকে মুক্তি পেয়ে শিথিল হতে লাগল যেন হাতের মাংসপেশি গুলো।ফর্সা ধবধবে চিকন হাতজোড়ায় রক্তিমের আঙ্গুলের চাপ স্পষ্ট।অদ্রিজা হাতের দিকে একনজর তাকিয়েই বলে উঠল,
‘ছাড়লেন কেন?আমি তো বলেছিলাম লাগুক।আরো লাগুক।আমি সহ্য করে নিব।’
অদ্রিজার কথাটা শুনেই রক্তিম কাবার্ড থেকে নিজের শার্ট বের করে পরতে পরতেই অদ্রিজার দিকে তাকাল।চেহারায় কঠোরতা স্পষ্ট।নাকের অগ্রভাগ আর ফর্সা গাল হালকা লাল দেখাচ্ছে।কোমড় পর্যন্ত লম্বা চুলগুলো হাত খোঁপা করা।পরনে তার খয়েরী রংয়ের সুতি শাড়ি।মেয়েরা নাকি শাড়ীতে সুন্দরী হয়ে উঠে।অদ্রিজাকেও শাড়ীতে ভীষণ মানিয়েছে। সাদা ধবধবে শরীরের এই রমণীকে প্রতিবারই দেখে স্নিগ্ধ নজরে চেয়েছে সে। আজও ব্যাতিক্রম হলো নাহ।খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অদ্রিজাকে নিচ থেকে উপর পর্যন্ত দেখে নিতে নিতে অদ্রিজা তাচ্ছিল্য মাখা হেসে চলে যেতে নিচ্ছিল।রক্তিম বিরক্ত হয়েই বলে উঠল,
‘দাঁড়ান।এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকুন।আপনার শাস্তি।’
অদ্রিজা হতবিহ্বল চোখে তাকাতেই রক্তিম তা উপেক্ষা করে টাউজার হাতে নিয়ে পা বাড়াল ওয়াশরুমের দিকে।মিনিট পাঁচ পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসেই অদ্রিজার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে অদ্রিজা।মুচকি হেসে দু পা এগিয়ে চেয়ার টেনে বসল সে।টাউজারের পকেট থেকে একটা রুমাল বের করেই টেবিলে রাখল।অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই ভ্রু উঁচিয়ে বলে উঠল,
‘এদিকে আসুন।’
অদ্রিজা দুই কদম এগিয়েই গম্ভীর গলায় বলল,
‘বলুন।’
রক্তিম থেতলে যাওয়া ডান হাতটা এগিয়ে দিল সামনে।মুখে বাঁকা হাসি ঝুলিয়েই বলে উঠল,
‘আপনার অনেক দরদ হয়েছিল না আমার এই হাতটার প্রতি?নিন। বেঁধে দিন রুমালটা হাতে।’
অদ্রিজা অবাক হয়ে তাকাল।কয়েক সেকেন্ড ইতস্থত করেই রুমালটা হাতে নিল সে।মৃদু শ্বাস ফেলে বলল সে,
‘রুমালটা বাঁধলে আপনার ক্ষত ঠিক হয়ে যাবে না মিঃ রক্তিম।ঔষুধ ছাড়া রুমালে তো ক্ষত সারার কোন ম্যাজিক হয়ে যাবে নাহ।তাই না?’
‘উহ! আপনি একটু বেশিই কেয়ার নিতে শুরু করলেন না টিপিক্যাল বউদের মতো? আমার ক্ষতর জন্য ঐ রুমালটাও প্রয়োজন নেই,ব্যান্ডেজ তো দূর।’
অদ্রিজা বিরক্ত হলো। লোকটার অদ্ভুত কাজকর্ম, অদ্ভুত আচরণ সত্যিই বিস্ময়ের।ক্ষতটা কি এমনি এমনিই ঠিক হয়ে যাবে?আশ্চর্য!চুপচাপ রুমালটা বাঁধতে লাগল হাতে সে।রক্তিম ব্যাথা পাবে ভেবেই আস্তেধীরে রুমালটা পেঁছিয়ে বাঁধল সে।তারপর তপ্তশ্বাস ফেলেই বেরিয়ে আসল সেইখান থেকে।আর রক্তিম পেঁছন থেকে অদ্রিজার দিকে চেয়েই মুচকি হাসল।চামচ দিয়ে খাবার মুখে নিতে নিতেই বাঁকা হেসে বিড়বিড়িয়ে বলল সে,
‘আপনি সহ্য করতে চাইছেন।আমাকে সহ্য করতে চাইছেন।আমার আচরণকে সহ্য করতে চাইছেন।কিন্তু পারবেন নাহ।পারবেন নাহ অদ্রিজা।আই প্রমিজ।’
তখন রাত একটা কি সাড়ে বারোটা।রক্তিম বেলকনিতে দাঁড়িয়েই সিগারেটের ধোঁয়া উড়োতে ব্যস্ত ছিল।অদ্রিজা এখন যেই রুমে সেই রুমটা তার পাশেরই রুম।বেলকনি দুটোও পাশাপাশি।এক নজর পাশের বেলকনিটার দিকে তাকিয়েই তপ্তশ্বাস ফেলল সে।জীবনের সবগুলো কষ্ট নিকোটিনের কালো ধোঁয়ায় উগড়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাল।এর আগে অবশ্য কোনদিন সিগারেট খায়নি সে।ড্রিংক করেই নিজের কষ্ট ভোলার চেষ্টা চালাত। কিন্তু আজ ড্রিংক করে নি সে।ইচ্ছেই হয়নি ড্রিংক করার।বরং রাগ হচ্ছে। গতকাল রাতে ড্রিংক না করলে হয়তো অদ্রিজার সাথে কিছুই ঘটত নাহ।অদ্রিজা আর তার মাঝে হয়তো কিছুই হতো নাহ।কিন্তু হলো, ড্রাংক থাকার কারণে।কথাটা ভেবেই সামনের টুলটায় লাথি দিল রক্তিম।ঠিক তখনই সামনে এসে দাঁড়ালেন রিয়াদ সাহেব।ছেলের দিকে তাকিয়েই গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
‘আমি তোমায় কি বলেছিলাম রক্তিম?’
রক্তিম রিয়াদ সাহেবের কথা শুনেই একনজর তাকালেন তার দিকে।তারপর সেভাবেই সিগারেটে টান নিয়ে ধোঁয়া উড়োতে ব্যস্ত হয়ে বলল,
‘বিয়ে করতে বলেছিলেন।করেছি তো।’
‘ আমি তোমায় শুধু বিয়ে করতে বলিনি রক্তিম।আরো কিছু শর্ত দিয়েছিলাম আমি তোমায়।মনে নেই?’
রক্তিম পাশ ফিরে রিয়াদ সাহেবের দিকে চাইল।তারপর হেসেই বলল,
‘আছে মিস্টার মাহমুদ।বিয়ের পর একমাস এই বাসায় থাকতে হবে। তাইতো?আছি তো।’
রিয়াদ সাহেব কঠিন নজরে তাকালেন।তারপর গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন,
‘শুধু এটা নয় রক্তিম।বলেছিলাম বিয়ের পর একমাস তুমি আর অদ্রিজা একসাথে থাকবে।অদ্রিজার খেয়াল রাখবে এই একমাস।কোন খারাপ আচরণ করবে না।কোন মেয়ের সাথে মেলামেশা করবে নাহ।ড্রিংক বা স্মোক কোনটাই করবে নাহ।কিন্তু তুমি কালকে ড্রিং করেছো, আজ স্মোক। এসব কি?’
রক্তিম মৃদু হাসল।ডান ভ্রু উঁচু করেই বলে উঠল,
‘আমিও আপনাকে বলেছিলাম এত শর্ত মানা সম্ভব নয়।’
‘ওকে ফাইন!তাহলে ডিলটা ফাইনাল হবে না তোমার কথা মতো। আর আমার কোম্পানির ৫০% প্রোপার্টি ও তুমি পাবে না আর নাহ ঐ বিশাল এরিয়াটা আমি অনাথ আশ্রমের জন্য ছেড়ে দিব।’
রক্তিম এবার ক্ষ্রিপ্ত চাহনিতে তাকাল।দাঁতে দাঁত চেপেই বলে উঠল,
‘আমি আপনার প্রোপার্টি কোনকালেই চাইনি মিস্টার মাহমুদ।কিন্তু ডিলটা যে ফাইনাল হওয়া চাইই!আর ঐ এরিয়াটাও চাই।মাইন্ড ইট!আর আপনার এই শর্তেই আমি অদ্রিজাকে বিয়ে করেছি, এবার যদি ডিলটা আর এরিয়াটা না পাই তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না মিস্টার মাহমুদ!’
‘দেখা যাক ডিলটা ফাইনাল হয় কিনা।একমাস পরই ফাইনাল হবে তা।তার জন্য সবকটা শর্তই মেনে চলতে হবে তোমায়।সবকটায়।’
রক্তিম এবার সিগারেটটা ছুড়ে দিল বেলকনির বাইরে।চোখ মুখে তিক্ততা স্পষ্ট তার।নিজের বাবার কথা গুলো তার একেবারেই পছন্দ হয়নি তা তার কপালের ভাজেই বেশ স্পষ্ট।দাঁতে দাঁত চেপেই বলে উঠল সে,
‘ডিলটা আমার কাছে কতটুকু ইম্পোর্টেন্ট আপনি বুঝতেও পারছেন না মিস্টার মাহমুদ।নয়তো একটা সরল মেয়েকে বিয়ে করে তার জীবন নষ্ট করতাম না আমি।যে বাড়িতে আমি দশবছর বয়সের পর একটা মুহুর্তও ছিলাম নাহ আমি সেই বাড়িতেই থাকছি।তাও আবার আপনার সাথে। এক ছাদের নিচে।এই দুটো শর্ত মেনে নিয়েছি, বাকি গুলো তো তার কাছে কিছুই নয় মিস্টার মাহমুদ।আর সে ডিলটা যদি ফাইনাল না হয় তো বুঝতে পারছেন আপনি কি ঘটবে?আন্দাজও নেই আপনার। ‘
রিয়াদ সাহেব ক্লান্ত চোখে তাকালেন।তারপর হালকা হেসেই বলে উঠলেন,
‘যাও, নিজের রুমে যাও। আমি তোমায় শর্তে এটাও বলেছি অদ্রিজার সাথে একসাথে একমাস থাকতে হবে তোমায়। আশা করি মনে আছে?’
রক্তিম আনমনে কিছু একটা ভেবে নিয়েই রিয়াদ সাহেবের দিকে তাকাল। ভ্রু নাচিয়েই তৎক্ষনাৎ বলে উঠল,
‘কালকে আমি এই রুমেই ড্রিংক করেছিলাম।স্পষ্ট মনে আছে আমার।কাল এতটাই ড্রাংক ছিলাম যে,,,’
কথাটা বলেই থামল রক্তিম।তারপরই কড়া দৃষ্টিতে রিয়াদ সাহেবের দিকে তাকিয়েই বলে উঠল,
‘মিস্টার মাহমুদ?আমাকে ড্রাংক অবস্থায় ঐ রুমে কে নিয়ে গিয়েছে?কে?আপনি?’
‘হ্যাঁ।আমিই।কেন?’
রক্তিমের চোখ মুখ লাল হয়ে উঠল মুহুর্তেই।রিয়াদ সাহেবের দিকে ক্ষ্রিপ্ত চাহনিতে তাকিয়েই দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
‘ডিজগাস্টিং!আমি আপনাকে বলেছিলাম? বলিনি।তাও কোন সাহসে আপনি আমাকে ওই রুমে নিয়ে গিয়েছিলেন?হাও ডেয়ার ইউ মিস্টার মাহমুদ?আপনি জানেন ও না আপনি আমার সাথে কি করেছেন।এর জন্য আপনাকে সাফার করতে হবে মিস্টার মাহমুদ।’
কথাগুলো বলেই আর এক পা ও দাঁড়াল নাহ রক্তিম।রিয়াদ সাহেবের উপর তার প্রচুর রাগ হচ্ছে।রাগে শরীরের শিরা উপশিরা গুলো যেন টইটই করছে। কিন্তু সেই টইটুম্বুর রাগটাই শীতলতায় পূর্ণ হলো অদ্রিজার রুমে ডুকে অদ্রিজার ঘুমন্ত মুখটা দেখেই।কোনরকমে হাত পা গুঁটিয়ে রেখে ঘুমোচ্ছে অদ্রিজা।এলেমেলো চুলগুলো মুখের উপর লেপ্টে মিশে আছে। জানালা দিয়ে শীতল বাতাস দুই একবার বয়ে যেতেই চুলগুলো আপন মনে নড়েচড়ে আবারও মিশল তার ফর্সা গালে।ঘুমন্ত মুখটা মোহনীয় ।চোখের ঘন পাঁপড়ি গুলোও অদ্ভুত সুন্দর বোধ হলো রক্তিমের কাছে।নিজের চোখজোড়া বন্ধ করেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে।দু পা এগিয়েই অদ্রিজার মুখোমুখি হাঁটু গেড়ে বসল সে।আরো কয়েক মিনিট ঠিক সেভাবে তাকিয়ে থেকেই অদ্রিজার চুলগুলো হাত দিয়ে কানের পিছনে গুঁজে দিয়েই মৃদু গলায় বলল সে,
‘আপনাকে সরতে হবে অদ্রিজা।আমার জীবন থেকে সরতে হবে।যে কোন মূল্যেই।নয়তো যে রক্তিম এই রক্তিম থাকবে নাহ।তার মাঝে অবিন্যস্ত ভাবে অন্য এক রক্তিম তৈরি হয়ে যাবে। আর আমি যে সেটা চাই না অদ্রিজা।রক্তিমের কাউকে প্রয়োজন নেই। নাহ তো তার বাবার প্রয়োজন আছে, নাহ তো মা, আর নাহ ভালোবাসার মানুষ।সে একা।একাই থাকবে!প্লিজ লিভ অদ্রিজা।প্লিজ!’
অদ্রিজা বেঘোরেই ঘুমাচ্ছিল।রক্তিম ছোট ছোট চোখে কয়েকবার তাকিয়েই হাত জোড়া দিয়ে অদ্রিজার ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে গিয়েও থেমে গেল আবার।এই মেয়েটার মাদকতা বড় অদ্ভুত।আগের রাতে সে ড্রাংক ছিল তাই ভুলবশত তেমন কিছু হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু আজ?আজ তো সে ড্রাংক নয়।তবুও মেয়েটাকে দেখে আসক্ত হতে বাধ্য সে।তার মুখ, চোখ, চুলের মাদকতা শরীর ময় বিরাজ করতেই ছিটকে উঠে দাঁড়ার রক্তিম।দ্রুত বেলকনির দিকে পা বাড়িয়ে বেলকনির দরজা বন্ধ করল।জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলেই দূর আকাশে চোখ রাখল সে।অন্ধকার আকাশ!
চলবে…..