খড়কুটোর বাসা পর্ব-৩০+৩১

0
197

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ৩০
#Jhorna_Islam

যুথিকে ইশান নিজের ঘরে এনে শুইয়ে দেয়। তারপর রুমের ভিতর দড়ি খুজতে থাকে। এই মেয়ের যা তে’জ নয়তো কিছুতেই সামলানো যাবে না। এইদিক ঐদিক দড়ি খুঁজেও যখন পেলো না তখন আলমারি থেকে দিনার একটা ওড়না বের করে। একটা দিয়ে পা বাধে তারপর বাইরে গিয়ে আরেক টা দড়ি আনে। দড়ি দিয়ে হাত বাঁধে।

কিছু সময় অপেক্ষা করার পর ও যখন জ্ঞা’ন ফিরে না যুথির, আর অপেক্ষা করে না ইশান।এই মেয়ের নিজে থেকে জ্ঞা’ন ফিরার অপেক্ষায় থাকলে সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। আম ও যাবে ছালা ও যাবে। ঐ বু’ড়ি আবার এসে পরবে।

ইশান তারাতাড়ি গিয়ে টেবিলের উপর থেকে জগ হাতে নেয় পানি নেওয়ার জন্য। কিন্তু জগ টা হাতে নিয়ে মে’জা’জ টাই খারাপ হয়ে যায়। এক ফোটা পানি ও নেই জগে।

দিনা বাপের বাড়ি যাওয়ার আগে হয়তো রেখে যায়নি। এইটা ভেবে হয়তো ইশান বাড়িতেই আসবে না। মনে মনে দিনা কে একটা বা*জে গা*লি দেয় ইশান।তারপর রুম থেকে তারাতাড়ি বের হয়ে যায় পানি আনার জন্য।

পানি নিয়ে ইশান দ্রুতই ফিরে আসে। জগের ঢাকনা খুলে যুথির মুখে পানির ছিটা দিতে থাকে।

নিজের মুখে পানির অ’স্তি’ত্বে যুথির জ্ঞা’ন আস্তে আস্তে ফিরতে থাকে।চোখ পিটপিট করে তাকায়। ঠা’ও’র করতেই পারে না এখনো কোথায় আছে সে। শরীর টা কেমন যেনো লাগছে।হাত পায়ে শক্তি পাচ্ছে না।

এইদিক ঐদিক তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে কোথায় সে।রুম টা তার কাছে অপরিচিত। আগে কখনোই আসেনি। তারপর সামনে চোখ যেতেই ইশান কে দেখতে পায়। হুট করেই সব মনে পরে যায়।

ইশান একটু দূরে দাঁড়িয়ে যুথির দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে হাতে পানির জগ।

যুথি উঠে বসার চেষ্টা করে হাত পায়ে বাঁধা পায়। হাত পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে ওড়না আর দড়ি দিয়ে বাঁধা। অনেক কষ্টে উঠে বসে।

ইশান তুই আমাকে এখানে জো’ড় করে নিয়ে এসেছিস?

জ্বি ভাবিজান। আমি ছাড়া এই ভালো কাজ কে করবে?

তুই আমার হাত পায়ের বাধন খুল আগে তোর ভালো কাজের নমুনা আমি দেখাচ্ছি।

আহ্ কি তে’জ একদম বুকে গিয়ে লাগে। এরকম তে’জি মানুষ কে ব’শ করার মজাই আলাদা।

তুই কি করতে চাইছিস? আমাকে এখানে ধরে এনেছিস কেন? সব কিছু কেড়ে নিয়েছিস আবার কি চাই?

ভাবির ভালোবাসা আর আদর।

ইশানের কথায় যুথি থমকে যায়। এটা কি বলছে?
কাঁপা কাঁপা গলায় যুথি বলে উঠে মা-মানে?

মানে টা খুবই সহজ আরো সহজ করে বলি,, আজকে আমার জোর করতে একদম ইচ্ছে করছে না। তাই আ’পো’ষে আসি।
দেখো ইরহান এখন বাড়িতে নেই তোমার তো কিছু চাওয়া পাওয়া আছে নাকি?

যুথি কপাল কোচকে ইশানের দিকে তাকায়।

ইশান যুথির মুখ ভ’ঙ্গি দেখে বলে,, বুঝতে পারো নি? যতোটা চা’লাক তোমায় ভেবেছি ততোটাও চা’লাক তুমি নও দেখছি।সোজাসাপটা বলি,,তোমার তো শরীরের কিছু চা’হিদা আছে নাকি।বর তো থাকে বিদেশ। কথা বলা আর টাকায় কি সেই সুখ তুমি মিটাতে পারবে?

ইশানের কথায় যুথির গা গুলিয়ে আসে। ছিঃ বলেই রা’গী চোখে তাকায়।

ওসব ছিঃ ছিৎকার করে লাভ নেই। মনে মনে যে ঠিকই চাইছো আমি খুব ভালো করে জানি।দেখলাম তো কিছু সময় আগে নিজের বরকে কিভাবে কাছে চাইছিলে।এখন আমার সামনে ভাব ধরছো।

তুই লুকিয়ে লুকিয়ে আমাদের কথা শুনেছিস? ভুলে গেছিস আমি কি হই তোর? বড় ভাবি হই।

এজন্যই তো ভাবির চা’হি’দা পূরণ করতে চাইছি।দেবর হিসাবে আমার একটা দায়িত্ব আছে না? কথা দিচ্ছি কেউ জানতে পারবে না। ইরহান ও জানবে না বিষয় টা তোমার আর আমার মাঝেই থাকবে।তুমি ও মজা নাও আমাকে ও দাও একটু।

জা*নো*য়া*র তোর জি’ভ আমি টেনে ছি’ড়ে ফেলবো। তোর সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি তুই এসব বলছিস কোন সাহসে? ঘরে বউ রেখে তুই অন্য মেয়ের দিকে ন’জর দিস? খ*বি*শ তুই শুধু একবার বাঁধন টা খোল।কথা গুলো বলেই যুথি হাত পা মোচড়া মোচড়ি করতে থাকে।

আরে রাগে না ভাআআআআবি জি কথা টা টেনে টেনে বলে,,আর ঘরে বউ থাকলে কি হবে? একটা কথা জানো না “পরের ঘরের পিঠা খাইতে লাগে মিঠা”।

ইশান ভালোয় ভালোয় বলছি আমায় যেতে দে।নয়তো তোর কি হা’ল করবো তুই ভাবতেও পারবি না। চিৎকার করে এখন লোকজরো করে গ্রামের লোকেদের হাতে তোকে গণধো’লা’ই খাওয়াবো আমি।

যুথির কথা শুনে ইশান হো হো করে উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠে যেমন যুথি কোন মজার কৌতুক বলেছে।

এইই যা কর চিৎকার। ডাক লোকদের তাতে আমার কি হবে? যা হওয়ার তোর হবে।ব’দ’নাম হবে তোর।গ্রামের লোকে মুখে চু’ন কা’লি লাগাবে তোর।

যুথি ভাবনায় পরে যায়।

গ্রামের লোক আসতে আসতে তোর বাঁধন খুলে দেবো।তারপর যখন জানতে চাইবে তুই এখানে কেনো তখন বলবো তোর শরীরের চা’হি’দা মিটাতে এসেছিস আমি রাজি না হওয়ায় আমাকে অ’প’বা’দ দিতে এসেছিস।সবাই তাই বিশ্বাস করবে কেন জানিস? কারণ তোর বর বিদেশ। আর এসব ঘটনা অ’হ’র’হ ঘটে চলেছে।

ইশানের প্রতিটি কথায় রা’গে গা জ্বলছে যুথির । আসলেই কি গ্রামের লোক যুথিকেই দোষারোপ করবে।কিছু ভাবতে পারছে না। চিন্তায় মাথার ফেটে যাচ্ছে।

যুথি যদি জানতো ইশানের উপর গ্রামের লোক আগে থেকেই খে’পে আছে। একটা সুযোগ পেলেই চলে।কিন্তু যুথি এসবের কিছু জানে না।

————————-

চারদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে অনেক আগেই।ইরহান কাজে একটু বিরতি পেয়েই যুথিকে কল লাগায়। মেয়েটার সাথে কথা না বললে শান্তি পায় না। সারাদিন কথা বললেও মনে হয় তৃ’প্তি মিটে না।এই যে কিছু সময় আগে মাত্র কথা বলল।তবুও এখনই কেমন ছ’ট’ফ’ট করছে মনটা কথা বলার জন্য।

কল দিয়ে কানে ধরতেই শুনতে পায় অপর পাশ থেকে একটা মহিলা কন্ঠে বলে উঠছে মোবাইল বন্ধ আছে। মোবাইল বন্ধ শুনে ইরহানের কপালে ভা’জ পরে।মোবাইল বন্ধ কেন থাকবে। দুপুরে ঘুমোয় সময় তো ফুল চার্জ দিয়েছে। যুথি কি বন্ধ করে রেখেছে মোবাইল? সেটা কি করে সম্ভব। মোবাইল বন্ধ কেন করে রাখবে?

আরো কয়েক বার কল লাগায় কিন্তু বন্ধই বলছে।এইবার ইরহানের ভিতর ভ’য় আর টেনশন ঢুকে যায়। মেয়েটা বাড়িতে একা আছে। কিছু হলো না তো আবার? যুথির কিছু হয়েছে ভাবতে গেলেই ক’লি’জা মো’চ’ড় দিয়ে উঠে। ভিতরে এসে অস্থিরতা ভ’র করে।

কিছু সময় পায়চারি করার পর দাদির কথা মাথায় আসে।দাদির তো এতক্ষনে চলে যাওয়ার কথা। দাদির ফোনে কল দিতে থাকে। রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না। একের পর এক কল দিতে থাকে আর বলতে থাকে দাদি কলটা ধরো।

যুথির দাদি তখন রিকশাতে নিজের কোমড়ে গুঁজে রাখা ব্যাগটা বের করতে থাকে ফোনটা নেওয়ার জন্য। ফোন হাতে নিয়ে কল রিসিভ করতেই ইরহান তড়িঘড়ি করে বলে উঠে,, দাদি ফোন কেন ধরছিলেনা? সব ঠিক আছে? যুথি ঠিক আছে?

নাত জামাই আমিতো রিকশা তে।বাড়ি যাচ্ছি।

তুমি এখনো বাড়ি যাওনাই দাদি?

এইতো যাইতেছি। একটু দেরি হয়ে গেছে।

দাদি তারাতাড়ি বাড়ি যাও তুমি।যুথির ফোন বন্ধ । আমার টেনশন হচ্ছে দাদি।দোহায় লাগে তারাতাড়ি যাও।

যুথির ফোন বন্ধ? কিন্তু ফোন বন্ধ কেন?

আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

ইরহানের অ’স্থি’র’তা দেখে উনিও চিন্তায় পরে যান। রিকশা চালক কে তারাতাড়ি যাওয়ার কথা বলে। ইরহান কে বলে তুমি টেনশন করো না। হয়তো ফোনে চার্জ নাই।নয়তো ফোনে কোন সমস্যা হয়েছে হয়তো।

তাই যেনো হয় দাদি।আল্লাহ যেনো আমার যুথি রানী কে সুস্থ রাখে। তুমি গিয়ে আমাকে জানাও।

———————-
অন্যদিকে তাছলিমা বানু ইশানকে একেরপর এক ফোন দিয়ে চলেছে রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে কিন্তু ইশান ফোন তুলছে না।ছেলেটার জন্য চিন্তা হচ্ছে। এই ছেলে নিজের ম’র্জি মতো চলাফেরা করে আগে পরে কি হবে সেই বিষয়ে একটুও ভাবে না।

এই যে নিজের মা ফোন দিচ্ছে ফোনটা রিসিভ করার প্রয়োজন ও মনে করছে না।

আজ সকাল থেকেই মনটা তার কু ডাকছে। কোন অঘটন না ঘটে। সব তো এই ছেলেটাই ঘটাবে। যে সে অঘটন তো আর ঘটাবে না।কিভাবে সামলাবে তখন? আরো কয়েক বার কল করার পর ও যখন রিসিভ করে না তখন সিধান্ত নেয় এই রাতেই বাড়ি চলে যাবে।নয়তো সারারাত চিন্তায় থাকবে ঘুমোতেও পারবে না।

———————–
অনেক হয়েছে তোকে তোর সম্মতি তে আমার করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তুই মানলি না।তোর হয়তো জানা নেই এই ইশানের চোখে যেটা পরে সেটা সে হয় আ’পো’ষে নেয় নয়তো ছিনিয়ে নিতে জানে।তোকে আমার এতোসময় দেওয়াটাই ঠিক হয়নি। এখন জোর করেই সব করবো বলেই শ’য়’তা’নি হাসি দিয়ে এগোতে থাকে।

যুথি চেষ্টা করেও হাতে পায়ের বাধন খুলতে পারছে না।ভয়ে তার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে।

দে-দেখ ইশান একদম আমার কাছে আসবি না।আমাকে একদম ছোঁয়ার ও চেষ্টা করবিনা বলে দিলাম। তোর ভাই শুনতে পারলে তোকে কিন্তু ছাড়বে না ইশান।মাটিতে পুঁ’তে ফেলবে তোকে।

কে ভাই? ঐ ইরহান কে আমি কোনো দিন ভাই বলে মানিই নাই।আর সে ঐ প্রবাস থেকে আমাকে কি করবে? তোর কারণে মা’ইর খেয়েছিলাম সেটাও ভুলিনি আমি।

ইশান না। না করছি আমাকে ছু’বি না।একটুতো নিজের বিবেকটা জাগ্রত কর। এতো নিচে নামিস না আল্লাহ সহ্য করবে না।

ইশান আসতে আসতে যুথির অনেক কাছে চলে এসেছে। ইশানের নিশ্বাস যুথির মুখে বা’রি খাচ্ছে। ঘৃণায় গা গো’লা’চ্ছে চোখ দিয়ে পানি পরছে যুথির। ইশান টান দিয়ে যুথির ওড়না খুলবে বুঝতে পেরে চোখ বন্ধ করে জোরে ইশানন বলে চিৎকার করে উঠে।

হুট করে ইশানের আ’র্ত’না’দ শুনে চোখ খুলে যুথি। অনেক কষ্টে আবার উঠে বসে নিচে তাকিয়ে দেখে ইশান ঘাড়ে হাত দিয়ে নিচে বসে আছে।

ইশান ব্যা’থা’তু’র চোখে সামনে তাকিয়ে বলে তু-তুমি কখন এলে? আমাকে তুমি আ’ঘাত করলে?

ইশানের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে এগিয়ে গিয়ে যুথির হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেয়।

যুথি অবাক হয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে রয়। এতোদিন শ’ত্রু’র মতো আচরণ করে অপমান করে আজ তাকে বাচাচেছ?

#চলবে,,,,,,,,,,,,,

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ৩১
#Jhorna_Islam

ইশান মাথায় বেশ জোরে শো’রেই আ’ঘাত পেয়েছে। লাঠির বাড়িটা লেগেছে বেশ ভালোভাবেই। আ’ঘা’তের জায়গা টা হাত দিয়ে চেপে ধরে নিচে বসে আছে। আর সামনের দিকে এই কান্ড ঘটানো রমনীটির দিকে তাকিয়ে আছে।

যে এখন যুথির হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিতে ব্যস্ত। এতো বড় একটা ঘটনা ঘটিয়েও মুখ ভঙ্গি নির্বিকার।

ইশানের বিষয় টা স’হ্য হলো না। তে’তে উঠে বলল এই তুই আমায় মারলি? তোর সাহস দেখছি বেড়ে গেছে তুই কোন সাহসে আমার গায়ে হাত তুলেছিস?

ইশানের কথা কেউ কানেই তুলছে না।

যুথি অবাক চোখে তার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেওয়া রমনীটির দিকে তাকিয়ে আছে।

ইশান এবার একটা গা’লি ছুড়ে মারে।

যা শুনে দুইজন ই ইশানের দিকে দৃষ্টি দেয়। তারপর জোরে চিললিয়ে বলে উঠে ইশান ভুলে ও মুখ খারাপ করবে না। তোমার পা’পের ঘ’রা পূর্ণ হয়ে গেছে এইবার তুমি আর র’ক্ষা পাবে না।

ও’রে’ব্বা’স এই না হলে আমার বউ।কি সুন্দর নিজের বর কে হু’মকি দিচ্ছে। অনেক দিন হয়ে গেলো তুই আমার হাতে মা’ইর খাস না তাই নারে দিনা? তোর শরীর ম্যা’জ ম্যা’জ করছে নিশ্চই মা’ইর খাওয়ার জন্য?

যুথিকে বাঁচানো ব্যক্তিটা আর কেউ নয় ইশানের বউ দিনা।যে কিনা এতোদিন নানান ছ’লে যুথি কে কথা শুনিয়েছে অপমান করেছে। কতো ভাবে ক্ষ’তি করার চেষ্টা করে গেছে।

এই দিনা তুই এটা বল তুই ঘরে ঢুকলি কি করে? আমিতো ভিতর থেকে লক করে রেখেছিলাম। ভিতর থেকে কেউ না খুললে বাইরে থেকে কেউ ভিতরে ঢুকতে পারবে না। আর তোর কাছে তো চাবিও নেই। তুই কি করে ঢুকলি?

দিনা ইশানের কথায় তা’চ্ছিল্যের হাসি দেয়। তারপর বলে দু’শ্চ’রিত্র পুরুষ তোকে কে বলেছে আমি এখন ঢুকেছি ঘরে?

ইশান কপাল কোচকে ফেলে,, কখন ঢুকেছিস?

কালকে যখন মেয়ে এনে ফু’র্তি করছিলি আমাদের এই রুমে তখন। মেয়ে পেয়ে এতোটাই ব্যস্ত ছিলি মেইন দরজা টা দিতে ভুলে গেছিস। এতোদিন বাইরে এসব করে বেরিয়েছিস এইবার সুযোগ বুঝে ঘরে নিয়ে এসেছিস সব ই আমি দেখেছি।

কাল বাড়িতে আসলে তোকে আমি দেখিনি কেনো? কোথায় ছিলি তুই? মিথ্যা বলে আমার সাথে মজা নিচ্ছিস?

তোর সাথে মজা তাও আমি? হাহ্!

কাল বাড়িতে মায়ের সাথে রাগারাগি করে রা’গ করে রাতের বেলাই বেরিয়ে এসেছিলাম। বাড়িতে এসে দেখি দরজা শুধু ভিড়িয়ে রাখা। বেশ অবাক হয়ে ছিলাম।তুইতো বাড়ি থাকবি না ভেবেছিলাম হয়তো তোর মা দরজা দিতে ভুলে গেছে। ঘরে ঢুকে আগে তোর মায়ের কাছেই গিয়েছিলাম দেখা করার জন্য। গিয়ে দেখি তোর মা নেই।ভাবলাম কোথাও হয়তো গিয়েছে বেশি মাথা ঘামাইনি। শরীরটা বেশ ক্লান্ত লাগছিলো তাই তারাতারি রুমে আসতে গিয়ে রুমের সামনে এসে যা দেখি তা আর নাই বলি। এরকম দৃশ্য আমার কোনো শ’ত্রু যেনো কখনো না দেখে। তুই আমায় এতোদিন অনেক কষ্ট দিয়েছিস সব মাথা পেতে নিয়েছি।কিন্তু কোনো নারী তার স্বামীকে ঐই অবস্থায় অন্য একটা মেয়ের সাথে স’হ্য করতে পারবে না।

ঐ দৃশ্য দেখে আমি নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম। কথা বলার শক্তি ও আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম।

চুপচাপ পিছিয়ে গিয়ে ইরহান ভাইয়ের রুম টায় চলে যাই।তোদের দেখে আমার গা খুব গোলাচ্ছিল। অনেক কষ্টে রুমে ঢুকে দরজা লক করে বসে থাকি।পুরো শরীর জা’লা করছিল।কাল থেকে আজ সন্ধা পর্যন্ত আমি ঐ রুমেই ছিলাম।

যুথি এইখানে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।কি করবে বা বলবে যুথি বুঝতে পারছে না। এই প্রথম যুথি কথা খুঁজে পাচ্ছে না বলার জন্য। এখন কিছু বলা ঠিক ও হবে না বলে যুথির মনে হচ্ছে।

—————————-

এই দিকে যুথির দাদি গেইটের সামনে এসে রিকশা থেকে তারাতাড়ি নামে।তারপর ভাড়া মিটিয়ে প্রায় দৌড়ে ভিতরে ঢুকে।

চারিদিকে অন্ধকার।ছোট্ট মোবাইলের আলো দিয়ে এগিয়ে যায়। ঘরের সামনে গিয়ে অবাক হয় এইটা ভেবে এখোনো ঘরে আলো জ্বলেনি। ঘরে আলো জ্বালালে টিনের ফাঁকা দিয়ে আলো এসে বাইরে পরে।

দরজার সামনে এগিয়ে যেতেই কিছু একটা পায়ের নিচে পরে। মোবাইলের লাইট নিচে তাক করতেই দেখতে পায় যুথির ফোন টা।নিচে বসে তারাতাড়ি করে তুলে নেয়। ভাগ্যিস জোরে পাড়া লাগেনি।

কিন্তু যুথির মোবাইল এখানে এইভাবে পরে আছে কেনো? ভিতরে এবার ভয় ঢুকে যায়। তারাতাড়ি দরজা খুলে ঘরে ঢুকে বাতি জ্বালাতে জ্বালাতে যুথিকে ডাকে।কোনো সারা শব্দ নেই। চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে ঘরের কোথাও নেই যুথি। কোথায় চলে গেলো মেয়েটা?

যুথির মোবাইল চালু করতে গিয়ে বুঝতে পারে বন্ধ হয়ে আছে।

অন্য দিকে ইরহান একের পর এক যুথির ফোনে আর দাদির ফোনে কল দিয়ে চলেছে। যুথির ফোন বন্ধ। দাদি কল ধরছে না।

টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে ইরহানের। আল্লাহ কে ডাকছে শুধু মনে মনে। একটাই প্রার্থনা তার যুথি রানী যেনো ঠিক থাকে।স’হি’সা’লা’ম’ত থাকে কিছু যেনো না হয়। ইরহানের খুব ভ’য় হচ্ছে। ইচ্ছে করতেছে একছুটে দেশে চলে যেতে।

দাদির অবস্থা খারাপ যুথিকে না দেখতে পেয়ে।বাইরে গিয়ে গোসল খানা,টয়লেট সব চে’ক করে কোথাও নেই। কই গেলো মেয়ে টা আস্তে করে ডাকতে থাকে। কোথায় খুজবে এখন কিছুই বুঝতে পারছে না। মেয়েটার চিন্তায় ঘাম ছুটে গেছে রীতিমতো।পরোক্ষনে পুকুর পাড়ের কথা মাথায় আসতে দৌড়ে পুকুর পাড়ে যায়।এই বয়সে এসব দৌড়াদৌড়ি করা যায়? তাও করছে নাতনি টা কে খুঁজে বের করতে হবে।

——————————–

তোকে আমি ছাড়বনা দিনা তোকে আমি তা’লা’ক দিবো।এখন তুই সামনে থেকে যা তোকে আমি পরে দেখে নিচিছ।এখন আমার কাজে একদম বাঁধা দিবিনা।

তুই তা’লাক দেওয়ার জন্য আগেতো বেঁচে থাক।তুই কি ভেবেছিস আমি ঐ রুমে বসে সারাক্ষণ বসে শোক পালন করেছি? মোটেও না তোকে কিভাবে শেষ করবো সেই উপায় খুজেছি।তুই অনেক মেয়ের জীবন তাদের ইচ্ছায় অনিচ্ছায় নষ্ট করেছিস।আর না।শেষে কিনা নিজের ভাবির দিকে ন’জর দিলি।আরে বে’ঈ’মা’নী যতোই করিস ওদের সাথে তাই বলে এমন কাজ করবি? তোকে আজ আমি ছাড়বো না।অনেক হয়েছে আর না।

তোকে মে’রে আমি আমার ভালোবাসার মানুষটার কাছে চলে যাবো।যাকে আমি বিয়ের আগেই আমার মনে দা’ফ’ন করেছিলাম তার কাছে। সেই মানুষ টা আজও আমার পথ চেয়ে বসে আছে।

ইশান এইবার উঠে দাড়িয়ে দিনারে বলে তে’ড়ে আসতে নিলে দিনা তার হাতের লাঠি দিয়ে ইশানের মাথায় আবার আ’ঘাত করে। মুহূর্তের মধ্যে র/ক্তে’র বন্যা বয়ে যায়। ইশান শব্দ করে শুয়ে কা’ত’ড়া’তে থাকে।

যুথি দেখে চোখ বন্ধ করে নেয়।

দিনা যুথির কাছে এগিয়ে এসে কাঁধে হাত রেখে বলে,,তুমি তোমার ঘরে যাও বোন। তোমার সম্পর্কে কেউ কিছু জানতে পারবে না। আমি যে এই কাজ করেছি সেটার প্রমাণ লোক ঠিক পেয়ে যাবে।কিন্তু আমাকে পাবে না। তোমার নাম এসবে জড়াবে না। তোমাদের সাথে অনেক অন্যায় করেছি।এই জা*নো*য়া*রদের সাথে মিলে।পারলে মাফ করে দিও।

যুথি দিনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আজ এই দিনাকে সে চিনতে পারছে না। আগের দিনার সাথে কোনো মিল নেই। দিনার দিকে তাকিয়ে আবার ইশানের দিকে তাকায়।

দিনা হয়তো বুঝতে পারছে বিষয় টা।তুমি এর চিন্তা করো না।এরে তোমার শাস্তি দিয়ে তোমার হাত নোংরা করতে হবে না। চিন্তা কারো না একেবারে হয়তো মারবো না।কিন্তু এমন অবস্থা করবো কোনো মেয়েদের দিকে তাকাতেও ভ’য় পাবে। তুমি চলে যাও।

যুথি দিনার মাথায় কাঁপা কাঁপা হাত রেখে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে দৌড়ে বের হয়ে আসে।হাত পা তার কাঁপছে। শরীরে একটুও বল পাচ্ছে না।

যুথি দৌড়ে বাইরে এসে হাঁপাতে থাকে। আল্লাহ তাকে আর তার সন্তান কে দিনাকে পাঠিয়ে বাঁচিয়ে দিয়েছে।

অনেক কষ্টে শক্তিহীন শরীরে ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায়। ঘরে বাতি জ্বালানো দেখে বুঝতে পারে দাদি এসেছে।দূর্বল কন্ঠে দাদি কে ডাক দেয়। দুইবার ডাকার পরও কোনো সারা শব্দ পায় না।

যুথির দাদি পুকুর পাড়ে আরো অন্যান্য জায়গায় যুথিকে খুঁজে না পেয়ে ঠিক করে নেয় ইমনদের ঐখানে যাবে।পরে ঘরের সামনে এসে যুথিকে দেখতে পায়।

ও বু তুই কইছিলি? বলেই যুথির কাছে এগিয়ে যায়।

দা-দাদি আমায় ধ-ধরে ঘরে নেও।আর পানি দাও।শরীরে শক্তি পাচ্ছি না। গলা শুকিয়ে গেছে।

যুথির দাদি যুথিকে ধরে ঘরে নিয়ে যেতে যেতে নানান প্রশ্ন করতে থাকে আর বি’লা’প করতে থাকে।

#চলবে,,,,,,,,,,