#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি
পর্ব_৯
__আমি তো এখানেই ছিলাম। কোথাও যাইনি।কি হয়েছে আপনার?
__কোথাও যাস না চন্দ্র। আমাকে ছেড়ে একা কোথাও যাস না।ওরা তোকে কেড়ে নিয়ে যাবে আমার থেকে।কেড়ে নেবে ওরা।
__কারা কেড়ে নেবে ?কি বলছেন এসব? আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে?
__চারিদিকে ওরা ঘুরে বেড়াচ্ছে চন্দ্র। আমি তোকে কোথায় লুকাবো বল।এই স্পন্দন তার চন্দ্রকে পৃথিবীর কোথায় লুকিয়ে রাখবে একবার বল চন্দ্র। আমি এই যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছি না চন্দ্র। আমি আর পারছি না।
স্পন্দনকে এভাবে কাঁদতে দেখে চন্দ্র থমকে গেলো। কিসের ভয় পাচ্ছে স্পন্দন তাও চন্দ্রকে নিয়ে।কারা কেড়ে নেবে ওকে এসব কথা কেনো বলছে স্পন্দন।
__আচ্ছা দেখুন আমি ঠিক আছি।এখন তো শান্ত হয়ে যান প্লিজ। আপনার শরীর খারাপ করবে এভাবে উত্তেজিত হলে।চলেন ভেতরে চলেন।
__কোথাও যাবি না তো চন্দ্র?
__কোথাও যাবো না।
__আমাকে ছুঁয়ে বল।
__আপনাকে ছুঁয়ে বললাম চন্দ্র কোথাও যাবে না। এবার চলুন ভেতরে।চোখ মুখের কি অবস্থা করেছেন আপনি কেঁদে কেটে।উঠেন চোখে মুখে পানি দিয়ে এসে ঘুমাবেন। উঠুন এবার।
স্পন্দন চলে যেতে গিয়ে আবার ফিরে এলো।সব দরজা জানালা বন্ধ করে চন্দ্রর মুখটা দুহাতে তুলে ধরে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,
__একটু অপেক্ষা কর চন্দ্র। আমি যাবো আর আসবো।
চন্দ্র এবার বিছানায় বসে স্পন্দনের বলা কথাগুলো ভাবতে লাগলো। হঠাৎ করেই স্পন্দন এমন পাগলামী কেনো করছে। কিছুতেই মাথায় আসছে না চন্দ্রের। এমন সময় দরজায় নক পড়লো। দরজা খুলে দেখে দাদিমা দাঁড়িয়ে আছেন।
__কিছু বলবেন দাদিমা?
__দাদুভাই কোথায়?
__ফ্রেশ হতে গেছে দাদিমা।কিছু বলতে হবে?
__আসলে বলিস আমি ডেকেছি তাকে।
দাদিমা চলে গেলেন। চন্দ্র দেখে স্পন্দন ফ্রেশ হয়ে এসে পড়েছে। চন্দ্র বললো,
__দাদিমা আপনাকে ডেকেছেন।
__তুই ঘুমিয়ে যা চন্দ্র। আমি কথা শেষ করে আসছি।
চন্দ্র বিছানায় মাথা দিয়ে এপাশ ওপাশ করছে।মাথায় স্পন্দনের কথা ঘুরছে শুধু। ঘুম কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না ওর চোখে।
__কিছু বলবে দাদিমা?
__চন্দ্রের পড়াশোনাটা আবার শুরু করার কথা বলতে চাইছিলাম দাদুভাই। সবকিছু তো ভালোয় ভালোয় মিটে গেছে এবার এটা নিয়ে ও আলোচনা করার দরকার।
স্পন্দন গভীর ভাবে কিছু ভাবছে। আনমনে থাকতে দেখে দাদিমা বললেন,
__কিছু বলছো না যে দাদুভাই।
__আমি কাল ওকে জিজ্ঞাসা করে সিদ্ধান্ত নিবো দাদিমা।ও যেটা পড়তে চাইবে আমি ওকে সেটাই পড়াবো।
__খুব ভালো সিদ্ধান্ত দাদুভাই। আশরাফ আজকে চন্দ্রের পড়াশোনা নিয়ে কথা তুলেছিলো। আমি বললাম স্পন্দন দেখবে। কিন্তু আরও একটা কথা বলার ছিলো দাদুভাই।
__আমি জানি তুমি কি বলবে দাদিমা।আসলে চন্দ্র চায়নি যেতে।আর তার ইচ্ছে যখন হবে তখন যাবে।এই নিয়ে চন্দ্রকে কিছু বলার নেই আমার দাদিমা।
__আচ্ছা এসো এখন দাদুভাই।
স্পন্দন রুমে গিয়ে দেখে চন্দ্র ঘুমিয়ে গেছে আবার।স্পন্দন কিছু না বলেই ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়লো।মনে মনে ভাবলো সকালে চন্দ্রের সাথে পড়াশোনা নিয়ে কথা বলবে।
নাস্তার টেবিলে সবাই বসে আছে।স্পন্দন তড়িঘড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো,
__চন্দ্র রেডি হয়ে নে।বের হবো আমরা।
__কোথায় যাবি স্পন্দন?
__চন্দ্রের কলেজে যাবো মা।
__খেয়ে যা স্পন্দন।
বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে বললো,
__সময় নেই মা। চন্দ্র তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে আয়। আমি গাড়িতে ওয়েট করছি।
চন্দ্র দ্রুত রেডি হয়ে স্পন্দনের গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই স্পন্দন বললো,
__বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছি আমরা চন্দ্র?
__কার বিয়ে? আগে বললেন না কেনো? আমি তো সাজতেই পারলাম না।
__ওহ্!তোর আরও সাজার ইচ্ছে ছিলো নাকি চন্দ্র?
নিজের দিকে চোখ বুলিয়ে নিতে নিতে বললো,
__তা নয়তো কি? আমাকে দেখতে কেমন লাগছে দেখেন না?
__কষে থাপ্পড় খাবি গাঁধী।উঠে গাড়িতে বস। সেজেগুজে এসে বলছে সাজতে পারেনি।আমরা কলেজে যাচ্ছি।তোর মতো গাঁধীর থেকে অবশ্য এর থেকে ভালো কিছু পাওয়ার কথা নয়।
চন্দ্র মুখ ফুলিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।স্পন্দন দ্রুত এগিয়ে এসে সিটবেল্ট বেঁধে দিলো। চন্দ্র কেঁপে উঠলো। তবুও কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলো।কলেজ পৌঁছে স্পন্দন সব স্যার ম্যামদের সাথে কথা বললেন চন্দ্রের পড়াশোনা নিয়ে।সবার সাথে কথা বলে ফিরে এসে দেখে চন্দ্র নেই।স্পন্দন এদিকে ওদিকে খুঁজতে লাগলো চন্দ্রকে।আর চন্দ্র পুকুর পাড়ে বসে বান্ধবীদর সাথে আড্ডা দিতে ব্যস্ত।স্পন্দন নামক মানুষটির কথা বেমালুম ভুলে গেছে চন্দ্র। এদিকে চন্দ্রকে যত খুঁজে পাচ্ছে না স্পন্দনের হৃদয় ততোই তোলপাড় শুরু হয়েছে। দারোয়ানের কাছে গিয়ে জানতে চাইলে বললেন,
__চন্দ্র আপু বাইরে আসছে কিনা তা দেখিনি।
__ওর বন্ধু বান্ধবী কাউকে চিনেন?
__২০৪ নম্বর রুমে খোঁজ নিয়ে দেখেন। ওখানেই ওনাদের ক্লাস হয়।
স্পন্দন ছুটতে ছুটতে ২০৪ নম্বরে এসে দেখে ছাত্র ছাত্রীদের অনেকেই আছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মুখটা মানে চন্দ্রের দেখা নেই। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে একটা মেয়ের কাছে জানতে চাইলে বললো,
__চন্দ্র এসেছিলো ক্লাসে।তবে ক্লাস করেনি।রাত আর হিয়ার সাথে বেরিয়ে গেছে।
__কোথায় গেছে?জানো কিছু?
__পুকুর পাড়ে হতে পারে। কারণ ওখানে ওদের একটা বেঞ্চ আছে। সেখানেই বেশি থাকে ওরা।না হলে কলেজ গেইটের বাইরে যে মামা রেস্টুরেন্ট আছে ওখানে দেখতে পারেন। কিন্তু আপনি কে? চন্দ্রকে খুঁজছেন কেনো?
__আমি কেউ না। ধন্যবাদ ইনফরমেশনের জন্য।
__চন্দ্র কি যে করলি তুই?
__কেনো? আমি আবার কি করলাম?
__এখন করবি ইনজয়।তা না বিয়ে করে নিলি।ধুর ভালো লাগে না।
__আমি কি সেধে সেধে করেছি নাকি?বাড়ি থেকে হাত পা বেঁধে বিয়ে দিয়েছে। তারপর এই চন্দ্র বিয়ে করেছে।না হলে কোনোদিন বিয়েই করবে না বলে চন্দ্র প্রতীজ্ঞা করেছিলো।বেডা গোমড়া মুখোর জন্য বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছে চন্দ্র।
রাত বলে উঠলো,
__আমাকেও কেনো এমন ধরে বেঁধে বিয়ে দেয়না চন্দ্র?যে চায় তাকে দেয়না আর যে চায়না তাকেই আগে দেয়।উপরাল্লাহ ও কেয়া কিসমত দিয়া।
সবাই হু হা করে হাসতে লাগলো। এমন সময় স্পন্দন এসে চন্দ্রের হাত টেনে দাঁড় করিয়ে কষিয়ে থাপ্পড় দিয়ে দিলো। এরপর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে টেনে কলেজ থেকে গাড়িতে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিলো। চন্দ্র রেগে আগুন হয়ে গেছে।একেতে এভাবে থাপ্পড় দিয়েছে তার উপর ওখানে কত লোক ছিলো।সবাই দেখেছে। চন্দ্রের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে অপমানে আর লজ্জায়।স্পন্দন কিছু না বলেই গাড়ি সাঁই সাঁই করে চলাতে লাগলো। বাড়িতে এসে দরজা খুলে দেওয়ার আগেই চন্দ্র নিজে খুলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে কলিং বেল দিলো।বড় আম্মু দরজা খুলে হাসি মুখে বললো,
__এতো তাড়াতাড়ি করে এসে গেছিস চন্দ্র।আমি তো,,,,
কথা শেষ করার আগেই চন্দ্র ধুপধাপ শব্দ করে উপরে উঠে গেলো।স্পন্দন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে দেখে ওর মা বললেন,
__চন্দ্রর কি হয়েছে স্পন্দন?
__কিছু হয়নি মা।বাদ দেও। অনেক দিন পর কলেজ গেছে তো তাই এমন মুখ ফুলিয়ে আছে।আসলে ফাঁকি বাজ চন্দ্র তো তাই।
__চুপ কর তুই। একদমই মজা নিবি না।যা ফ্রেশ হয়ে আয়।
রুমে গিয়ে দেখে চন্দ্র ওয়াশরুম থেকে মাত্র বের হয়েছে।চোখে চোখে চোখ পড়লো দুজনের।স্পন্দন কিছু বলতে যাবে তার আগেই চন্দ্র বললো,
__থাক মিস্টার স্পন্দন মির্জা। আপনার আর নিজের হয়ে সাফাই গাইতে হবে না। আমি তো আর আপনার মতো ভিভিআইপি মানুষ না যে আমার ও মান সম্মান থাকবে। আমি হলাম পুতুল। এতো দিন মা বাবা ইচ্ছে মতো খেলেছে আমার সাথে।আর এখন এই স্পন্দন মির্জা।
__চন্দ্র আমার কথাটা একটু শোন প্লিজ।
__কি বলবেন কি আর আপনি? আপনার আরো কিছু বলার আছে ?বলেন বলে ফেলেন।
__চন্দ্র তোকে তখন খুঁজে না পেয়ে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল।মনে হচ্ছিল তোকে হারিয়ে ফেলেছি।ওরা তোর ঠিকানা পেয়ে বুঝি তোকে নিয়ে গেছে। আমার মাথা কাজ করছিলো না।তাই তোকে পেয়ে একটু বেশি রিয়াক্ট করে ফেলেছি আমি।
__আরে সেই কাল থেকে কাদের কথা বলে চলেছেন।কারা কে নিয়ে যাবে আমাকে?আর নিলেই বা কি? আপনার তো খুব খুশি হবার কথা। আপনি তো এমনিতেই আমাকে আপনার জীবনের কোথাও দেখতে চান না।তো ওরা যদি আমাকে নিয়ে যায় তো ভালো হবে আপনার।
স্পন্দন জড়িয়ে ধরলো চন্দ্র কে শক্ত করে।বললো,
__আর একবার ও চলে যাওয়া হারিয়ে যাওয়ার কথা মুখে আনবি না চন্দ্র। আমি তোকে কাউকে নিতে দেবো না। আমার জীবন থাকতে না।
চন্দ্র শান্ত হয়ে গেছে স্পন্দনের স্পর্শে। মিনমিন করে বললো,
__আপনি কাদের থেকে আমাকে লুকিয়ে রাখবেন স্পন্দন?
স্পন্দন হুঁশে এলো। এলোমেলো হয়ে গেছিলো এতো সময়।দ্রূত চন্দ্রকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
__কেউ না।আর এভাবে আমার সাথে চিপকে চিপকে থাকবি না চন্দ্র। আমি এসব পছন্দ করি না।
__আরে আজব তো? আমি কোথায় চিপকালাম? আপনি তো আমাকে মাঝে মাঝে জড়িয়ে ধরে এমন করছেন।
__চুপ ।যা আমার চোখের সামনে থেকে। বেশি বড় হয়ে গেছিস তাইনা?
চন্দ্র হাবলার মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে স্পন্দনের দিকে।আর মনে মনে ভাবছে,
__আমার সাথে চালাকি স্পন্দন মির্জা।এই চন্দ্র কি জিনিস এখনো টের পাননি। এইবার আপনার এই সব অপমানের প্রতি’শোধ হারে হারে টের যদি না পাইয়েছি তবে আমি চন্দ্র না।
#চলবে,,,,,,,,