অন্তর দহন পর্ব-২৫ এবং শেষ পর্ব

0
640

#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি

অন্তিম_পর্ব

জেলে দেওয়া হয়েছে হৃদিকে। কিভাবে স্পন্দনকে ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে একটু একটু করে শেষ করে দিতে চেয়েছিলো সেগুলো স্বীকার ও করেছে। চন্দ্র স্পন্দনকে বাড়িতে এনেছে। খুব করে অনুরোধ করে বড় আব্বুর জামিনের ব্যবস্থা করেছে।মিশালের কাছে যে সব প্রমাণ ছিলো তা জমা দেওয়া হয়েছে থানায়। সন্ধ্যায় চন্দ্র বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ভাবছে এই কয়দিনে ওর জীবনে কত কিছু ঘটে গেলো।স্পন্দন নিঃশব্দে এসে চন্দ্রকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুলে মুখ গুজে দিলো।আড়ষ্ট কন্ঠে বললো,

__আমার চন্দ্রাবতী হয়ে এভাবে আমাকে ভালোবেসো চন্দ্র । আমি তোমাকে ছাড়া কিছু না এবার বুঝতে পারলে তো। তোমাকে ছাড়া তোমার স্পন্দন অসম্পূর্ণ। ভীষণ একা তোমার স্পন্দন। কখনো আমাকে ছেড়ে কোথাও যেওনা চন্দ্র।

__আপনার সাথে এভাবে মিশে যাবো এটা কখনো ভাবিনি স্পন্দন। এখন আমার পুরো অস্তিত্ব জুড়েই শুধু আপনি আছেন স্পন্দন। আপনার সাথে এই অস্তিত্বের বন্ধন যে কখনো ছিন্ন হবার নয়।

__ভালোবাসি চন্দ্র।ভালোবাসি আমি আমার চন্দ্রাবতীকে।

__ভালোবাসি স্পন্দন। আপনার চন্দ্র আপনাকে ভীষণ ভালোবাসে।

বাইরে থেকে দরজার নক পেয়ে চন্দ্র পেছনে ঘুরতে গেলেই স্পন্দন চন্দ্রের কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো,

__বিকালে তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো চন্দ্র।

চন্দ্র কিছু বলতে চেয়েও বললো না। চুপচাপ গিয়ে দরজা খুলে দিতেই কাজিন ভাই বোন গুলো হুড়মুড় করে সব রুমে ঢুকলো। ওদের একসাথে দেখে চন্দ্র অবাক হয়ে বললো,

__এই বাহিনী কোথা থেকে আগমন হলো?তাও আবার আমার আর আমার স্পন্দনের রোমান্টিক টাইমে।

ওরা সবাই একসাথে বলে উঠলো,

__ও ও ও ও। এখন ভাইয়াই সব।আমরা বুঝি কেউ না।

স্পন্দন ভেতরে এসে বললো,

__তোরা আসার আর সময় পাস না।যে পায়ে এসেছিস সেই পায়ে বেরিয়ে যা।না হলে স্পন্দন তোদের সাথে কি করবে সেটা ভাবতেও পারবি না।

__যাচ্ছি যাচ্ছি ভাইয়া।এতো ভয় দেখানোর কি আছে ভাইয়া?

সবাই চন্দ্র আর স্পন্দনের কথায় হতাশ হয়ে বললো,

__তোমাদের প্রেমের কাবাবে হাড্ডি হচ্ছি না আমরা।চল সবাই।

যেতে যেতে চিল্লিয়ে বলে গেলো,

__রাতে পার্টি হবে পার্টি।আমরা এখন চলে গেলেও তখন কিন্তু ছেড়ে দিবো না।

স্পন্দন আর চন্দ্র দু’জনেই হাসতে লাগলো।বাড়িটাতে আবার প্রাণ ফিরে এসেছে বলে মনে হচ্ছে।সবাই একসাথে আবার কতগুলো দিন পর ভাবতেই ভালো লাগছে।স্পন্দন চন্দ্রের দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চন্দ্র বুঝতে পেরে দৌড়ে চলে যাওয়ার সময় পড়ে যেতে নিলেই স্পন্দন ওকে ধরে নেয়। এরপর বললো,

__এখনো ছেলেমানুষী গেলো না চন্দ্র। এভাবে কেউ ছোটাছুটি করে বলো।

__আপনি তখন ওভাবে তাকিয়ে ছিলেন কেনো?

__আমি তাকাবো না তো কে তাকাবে চন্দ্র।যাও রেডি হয়ে নাও।বের হতে হবে আমাদের।

চন্দ্রকে নিয়ে স্পন্দন বাইরে যাওয়ার সময় সৈয়দ মির্জা বললেন,

__আমাকে মাপ করে দিস বাবা।হয়তো ক্ষমার অযোগ্য তবুও পারলে মাপ করে দিস।

স্পন্দন বললো,

__কেউ যদি ভুল করার পর অনুতপ্ত হয় মন থেকে তাহলে অবশ্যই তাকে ক্ষমা করা উচিত আব্বু। আপনার উপর আমার আর কোনো রাগ নেই।

অনেক দিন পর ছেলের মুখে আব্বু ডাক শুনে কেঁদে উঠলো সৈয়দ মির্জা।স্পন্দন বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,

__সব ঠিক হয়ে যাবে আব্বু।এই সৈয়দ বাড়িতে আর কখনো দুঃখের ছায়া পড়বে না।

ডাক্তার চন্দ্রের রিপোর্ট নিয়ে দেখছে। চন্দ্র আর স্পন্দন দু’জনেই তাকিয়ে আছে সেদিকে।স্পন্দনের শুধু গলা শুকিয়ে আসছে। না জানি রিপোর্টে কি আসে।ডাক্তার এবার কিছুটা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,

__কংগ্রেচুলেশন মিস্টার এন্ড মিসেস্ স্পন্দন মির্জা।আপনারা বাবা মা হতে চলেছেন। আপনার ধারণা সঠিক মিস্টার স্পন্দন মির্জা।মিসেস্ স্পন্দন প্রেগন্যান্ট।

চন্দ্র লজ্জা ভয় দুইটাতেই মাথা নিচু করে ফেললো।স্পন্দন বললো,

__চন্দ্রের কোনো সমস্যা নেই তো এই প্রেন্যান্সিতে?

__সমস্যা তো আছেই মিস্টার স্পন্দন। আপনার ওয়াইফের বয়স কম। এখন প্রেগন্যান্সিতে উনার লাইফ রিস্ক আছে।তবে সাবধানে থাকবেন তবেই হবে।আর আমি তো আছিই। সমস্যা হলে বলবেন। আমি যথাযথ ভাবে চেষ্টা করবো মিস্টার স্পন্দন।

চন্দ্র স্পন্দনের এমন শুকনো মুখ দেখে আরো চুপচাপ হয়ে গেছে।মনে মনে ভাবছে হয়তো স্পন্দন এই খবরে খুশি হয়নি।স্পন্দন চন্দ্রকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে রেখে পানি এনে দিলো।সাথে চন্দ্রের পছন্দের খাবার। চন্দ্র সেগুলো এক পাশে রেখে স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে বললো,

__আপনি খুশি হননি স্পন্দন?

চন্দ্রের কথা শুনে স্পন্দন চন্দ্রকে জড়িয়ে ধরে বললো,

__আমি মনের কথা বুঝিয়ে বলতে পারি না চন্দ্র। আমি ভীষণ খুশি হয়েছি রে। তবুও মনের মধ্যে তোমাকে হারানোর ভয়ে আমি ভীত হয়ে আছি।কোনো কিছুর পরিবর্তে তোমাকে আমি হারাতে পারবোনা চন্দ্র। কিছুতেই না।

__আপনি থাকতে আপনার চন্দ্রের কখনো কিছু হবে না স্পন্দন।এতো ভয় পাচ্ছেন কেনো?

__জানিনা চন্দ্র। তোমাকে ভালোবাসার পর আমার পুরো পৃথিবী পাল্টে গেছে। এখন আমার সমস্ত কিছু শুধু তুমি চন্দ্র।তাই তোমাকে ছাড়া একটা মুহূর্ত ও আমার থাকা সম্ভব নয় চন্দ্র।

বাড়িতে এসে সবাইকে খবরটি দিলো স্পন্দন।সবাই ভীষণ খুশি। আজকে সৈয়দ বাড়িতে খুশির বন্যা বয়ে চলেছে।দাদিমা দুহাত ভরে দোয়া করলেন চন্দ্র আর স্পন্দনকে। অনেক রাত পর্যন্ত কাজিন ভাই বোনদের সাথে মজা করে কেটেছে। আব্বু আম্মু চাচা চাচী ফুপিরা অনেক দোয়া করেছে চন্দ্রকে। সবথেকে খুশি হয়েছেন বড় আম্মু।উনি অনেক সময় চন্দ্রকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন। অনেক আদর করেছেন। এরপর বলেছেন,

__আমার আজকে থেকে সংসারের থেকে ছুটি হলো চন্দ্র। আজকে থেকে এই বাড়ির সকল কিছুর দায়িত্ব তোর।

চন্দ্র বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছে। সারাদিনের দৌড় ঝাঁপ ওর শরীর আরেকটু দূর্বল করে দিয়েছে।স্পন্দন দ্রুত এসে বললো,

__কি হয়েছে চন্দ্র? কোথায় কষ্ট হচ্ছে?

__কিছু হয়নি স্পন্দন।একটু ক্লান্ত লাগছে।

স্পন্দন ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে চন্দ্রের দিকে। এখন থেকেই মেয়েটার এতটা কষ্ট হচ্ছে এরপর কি হবে।এসব ভেবেই খারাপ লাগছে স্পন্দনের। চন্দ্র স্পন্দনের বুক মাথা রেখে বললো,

__আপনি আর আমি মিলে দুজনেই নতুন অথিতির যত্ন রাখবো স্পন্দন। আপনি ভয় পাবেন না।

স্পন্দন চন্দ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,

__ভালোবাসি চন্দ্র।

__ভালোবাসি স্পন্দন।

সমাপ্ত ___________:____________