#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৭_৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
নূর আর মাহি শুয়ে আছে। নূরকে আজ খুব প্রাণোচ্ছল মনে হচ্ছে। ঠিক আগের মতো। এই কয়দিন যেনো জীবিত থেকেও মৃত ছিলো।আজ একদম আগের নূর ফিরে এসেছে মাহির মনে হচ্ছে।
নূর বলে উঠলো, ” আপু বললে নাতো ছেলেটা দেখতে কেমন? তোমার সাথে কেমন মানাবে?
মাহি চমকে নূরের দিকে তাকালো। চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠলো, ” আমার সাথে মানাবে মানে বুঝলাম না!! ”
নূরঃ আরে আগে বলো দেখতে কেমন?
মাহিঃ চারজন ছিলো।
নূর অবাক হয়ে বলে উঠলো, ” চারজন কি একসাথে এসে তোমাকে চিলের মতো ধাবা মেরে নিয়ে ওরাল দিয়ে ছিলো!!”
মাহি নূরের কথা শুনে রেগে বলে উঠলো, ” এই সব কি দরনের কথা নূর!! চারজন কেনো আসবে একজন এসেছিলো..”
নূরঃ ওয়াও!! সিনেমাটিক!! গল্পে, মুভিতে, উপন্যাসে এমন দেখেছি নায়ক নাইকাকে বাচায় তারপর তাদের মধ্যে প্রেম ভালোবাসা হয়ে যায়!!”
মাহিঃ নূর গল্পে, উপন্যাসে কতো কিছুই হয়।গল্প তো গল্পই বাস্তব আর গল্প এক না বুঝলি।
নূরঃ কেনো! এক নয় কেনো শুনি?মানুষের জীবনি দিয়েই তো গল্প লেখা হচ্ছে।
মাহি কিছু বললো না। নূরের সাথে কথা বলা মানে। নিজের ইচ্ছায় পাগল হওয়া।যত আজগুবি চিন্তাভাবনা সব ওর মাথায় আসে।এতো দিন ভালো ছিলো।এখন আবার আগের মতো মানুষকে পাগল বানানোর মিশনে নিমে গেছে।
নূর আবার বলে উঠলো, ” এই আপু, এই শুনোনা?
মাহিঃ হুম বল শুনছি?
নূরঃ ছেলেটার নাম কি?
মাহিঃ ফায়াজ…
নূর শুয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসলো,” ওয়াও! কতো সুন্দর নাম….দেখতে কেমন?
মাহিঃ সুন্দর… আর একটা কথা ও না। চুপচাপ ঘুমা,আর একটা কথা বললে রুম থেকে বের করে দিবো।
নূরঃ বালিশ তো একটা।
মাহিঃ তোর রুম থেকে আরেকটা নিয়ে আয়..
নূর বের হলো উদ্দেশ্য নিজের রুম থেকে বালিশ নিয়ে আসবে।নিজের রুমের কাছে আসতেই বিদুৎ গতিতে কেউ একজন নূরকে দেওয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরলো। নূর ব্যথায় “আহহ” বলে আর্তনাদ করে উঠলো। তাতে সামনের লোকটির কোনো হেলদোল নেই।সেটা রাগে হিতাহিত জ্ঞান শুন্য।
লোকটি নূরের এতটাই কাছে একে ওপরের বুকের ধুকধুক আওয়াজ শুনতে পারছে।নূর মাথা তুলে লোকটির মুখের দিকে তাকালো। হা যা আন্দাজ করে ছিলো তাই।এই পুরুষের গায়ের ঘ্রাণ যে তার বড্ড চেনা।আগে সে সব সময় বলতো,আদি ভাই তুমি সব সময় কি পারফিউম দাও ঘ্রাণটা শুনলে না নিজেকে কেমন যেনো মাতাল মাতাল মনে হয়। এতো মিষ্টি ঘ্রাণ খুব কাছে টানে।’
কিন্তু আজ আদির এতো কাছে থেকেও তার কোনো অনুভূতি কাজ করছে না। আরো রাগে শরীর রি রি করে উঠলো। শরীরে মনে হয় কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে আদির ছোঁয়ায় নূরের এমন মনে হচ্ছে।
নূর রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদি দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, “বাহ!! ভালোই তো দেখছি। এক ভাই হাত ছাড়া হতে না হতেই আরেক ভাই কে হাত করে নিয়েছো।হুহ্ আগে নাটক কেনো করেছিলে আমাকে ছাড়া বাঁচবে না,আমাকে ভালোবাসো।এই কয়দিনে ভালোবাসা উরে গেলো।আমার থেকে আমার ভাইয়ের উপর চলে গেলো।আসলে তোমাদের মতো মেয়েরা এমনি হয়।লো ক্লাস মেন্টালিটির মেয়ে তোমরা।
ঠাসসসসসসসসস
গালে হাত দিয়ে সাপের মতো রাগে ফুসফুস করছে আদি।
নূর রাগে আদির গালে থাপ্পড় বসায় তারপর আদির মতোই দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ” আপনি কি জানেন। আপনি মানুষিক ভাবে অসুস্থ। একটা সুস্থ মানুষ কখনো এমন বিহেভিয়া করতে পারে না। আমি কি করবো না করবো আমার বেপার।আপনি নাক গলাতে আসবেন না।আপনি নিজে কি একবার ভেবে দেখেছেন? আপনি একটা ধোঁকাবাজ, বেইমান, সার্থপর,কাপুরষ যে কিনা প্রেমিকা রেখে তার বেস্ট ফ্রেন্ড এর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। একবার কি তখন আমার কথা ভেবে ছিলেন?আপনাদের মতো ছেলেদের মুখে থুথু মারি।দ্বিতীয় বার আমার গায়ে হাত দেওয়ার মতো ভুল করলে। আমিও ভুলে যাবো আপনি আমার ভাই। হাত ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে দিবো।অন্যের পিছু নেওয়া ছেড়ে নিজের বউয়ের যত্ন নিন কাজে লাগবে।
নূরের কথা শুনে আদির মনে হয় বুকের ভিতর কেউ হাতুড়ি দিয়ে মারছে।নিজের অজান্তেই গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো এক ফোঁটা পানি।মুখে আর কিছুই বললো না। ও যানে নূর এখন খুব রেগে গেছে ওর কোনো কথাই শুনবে না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে রইলো নূরের যাওয়ার দিকে।
আড়াল থেকে কেউ একজন পুরো ঘটনার বন্দি করে নিলো নিজের চোখের ক্যামেরায়।
রুহিকে রুম থেকে বের হতে দিচ্ছে না রুপা বেগম। ওনার এক কথা।মাহির কথা মতো কয়েক দিন বেড রেস্ট করতে হবে।সে তো আর অপরিচিত কারো বাড়িতে বউ হয়ে আসেনি। নিজের মামুর বাড়িতে এসেছে আগে সুস্থ হোক তারপর সংসারের দিকে নজর দিবে।রুহিও বাধ্য মেয়ের মতো সবার কথা শুনছে।সবাইর কাছে নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে হবে।আর যার জন্য আজ ওর পায়ের এই হাল। ওকে ছাড়বে না!।রুহি শুধু মনে মনে বলে। নূর, শুধু একবার সবার কাছে নিজেকে ভালে প্রমাণ করে নেই।তারপর তোকে কিভাবে এই বাড়ি ছাড়া করতে হয় বলেই বাঁকা হাসলো, ওর মাথায় চলছে অন্য প্লেন।
——
সকালে ঘুম থেকে উঠে দুই বোন নামাজ পড়ে, আবার ঘুমিয়ে গেলো।
ঘুম থেকে যখন উঠলো ঘড়ির দিকে তাকি দুই বোনের চোখ চড়কগাছ। তারাহুরো করে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো।
নূর গিয়ে রান্না ঘরে উঁকি দিলো।
ওর বড় আম্মু নূরকে দেখে বলে উঠলো, ” কিরে কিছু লাগবে?”
নূরঃ না….
~আমাকে একটা কাজ করে দে তো..
নূরঃ কি কাজ?
~এই ধর কফিটা রুদ্রকে দিয়ে আয়।আমার এখানে অনেক কাজ। আমি যেতে পারবো না।
নূর বিরক্তিতে কপাল চাপরালো।কে বলে ছিলো রান্না ঘরে উঁকি মারতে।এখন এই যমের রুমে যেতে হবে। রুদ্রকে দেখলেই নূরের কেমন যেনো শ্বাস আটকে আসে।মনে হয় যেনো সে শ্বাসকষ্টের রোগী।
রুদ্রের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, আসবো ভাইয়া?
রুদ্রের আজ হসপিটালে প্রথম দিন। রেডি হচ্ছিলো নূরের আওয়াজ শুনে দরজার দিকে তাকিয়ে বললো,” আসো”গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো রুদ্র।
নূর বিরক্ত হলো খুবই বিরক্ত এই গম্ভীর টাইপের লোকটাকে দেখলেই ওর বিরক্ত লাগে।
রুমের ভেতর গিয়ে আবার রুমটার চারপাশে চোখ বোলালো নূর।এই রুমটা ওর খুব ভালো লাগে শুধু রুমের মালিকটাকেই ভালো লাগে না। এমন গম্ভীর টাইপের লোক ওর পছন্দ না।
রুদ্র এবার সরাসরি নূরের দিকে তাকালো। নূর সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলো।
নূর আর চোখে আবার রুদ্রের দিকে তাকালো।নূরের চাহনি রুদ্রের বুক কেঁপে উঠলো।এটা যেনো তাকানো না ধারালো তীর ছোড়ে মারলো রুদ্রের বুকে।মেয়েটার চাহনি মারাত্মক।
নূর মিনমিন সুরে বলে উঠলো, ” কোথায় রাখবো”..
রুদ্রঃ টি-টেবিলের উপর রেখে যাও।
নূর রাখতে গিয়ে হাত লেগে কিছুটা কফি হাতে পরে গেলো।
নূর মনে মনে ভাবছে, যাহ বাবা আসতে আসতেই কফিতো ঠান্ডা হয়ে গেছে। এখন মানে মানে কেটে পড়ি। কফি রেখে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই গম্ভীর কন্ঠ রুদ্র বলে উঠলো, ” এই মেয়ে দাড়াও!!”..
নূর ভ্রু কুঁচকে পিছন ফিরলো বিরক্তিকর কন্ঠে বলে উঠলো, ” এই মেয়ে, এই মেয়ে করেন কেনো!? আমার একটা সুন্দর নাম আছে..
রুদ্র বলে উঠলো, ” ওহহ আচ্ছা তোমার সুন্দর একটা নাম আছে!! আবার থুতনিতে হাত দিয়ে গভীর কিছু ভাবার মতো সিরিয়াস মুখ করে বললো, ” তা নামটা যেনো কি?”
নূর কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠলো, ” আপনি কি আমার সাথে মশকরা করছেন?”
রুদ্রঃ তুমি কি আমার বেয়াইন লাগো যে মশকরা করবো?”
নূরঃ না! আমি তো আপনার ছোটো বোন লাগি…
সাথে সাথেই রুদ্রের মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো। তারপর ব’লে উঠলো, ” আমার বোন আছে।অন্য কাউকে বোন ভাবতে যাবো কেনো?
নূরঃ আরে আজব তো আপনি ভাবলেই কি আর না ভাবলেই কি। আপনি তো আমার ভাই আদি,আবির,জিসান ভাইয়ার মতো আপনিও আমাদের ভাই।
রুদ্র বলে উঠলো, ” তুমি এখন যাও! আর কখনো আমার রুমের ধারে কাছেও আসবে না।”
নূরের অপমানে রাগে শরীরে মনে হয় কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। দপদপ পায়ের আওয়াজ তুলে রুম থেকে যাওয়ার সময় টেবিলের কোনায় বাড়ি খেয়ে পড়ে যেতে নিলে রুদ্র এসে নূরকে দু’হাতে আগলে নেয়।
নূর যখন বুঝতে পারে রুদ্র তাকে ধরে আছে। বিদ্যুৎ ঝটকায় সে রুদ্রের কাছ থেকে সরে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রুদ্র অবাক হয়ে নূরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।একটা ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার ছিলো তা না কিছু না বলেই বেরিয়ে গেলো বেয়াদব মেয়ে।
_____
নূর কলেজের উদ্দেশ্য বের হবে তখনি মিম এসে বললো,” আপু আমাকে তোমার সাথে নাও। আমাকে নামিয়ে দিয়ে তুমি কলেজ চলে যেও।”
নূরঃ আমি পারবো না। মাহি আপুকে বল।আপু তোর স্কুলের সামনে দিয়েই ভার্সিটিতে যাবে।বলে নূর বেরিয়ে গেলো।
কলেজের সামনে এসে নূর হা করে সামনে তাকিয়ে আছে। কারন সামনে ইরিন আর নীল ঝগড়া লেগে আছে। দেখে মনে হচ্ছে এখন ওদের না থামালে মারামারি শুরু করবে।
নূর ওদের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো. কি হয়েছে? এভাবে ঝগড়া কেনো করছে?
ইরিনঃ দেখ নূর তোর এই বেয়াদব ভাইকে সাবধান করে দে আমাকে যেনো হরিন না ডাকে।
নূরঃ নীল তুই ওকে হরিন আবার কেনো ডেকেছিস?
নীলঃ রাস্তা ঘাটে তো একটু সম্মান দে। আমি তোর গুনে গুনে এক বছরের বড়।
নূরঃ এএএহ আসছে আমার বড় হইতে।ইরিন চল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করবি নাকি কলেজের ভেতর যাইবি।
ইরিনঃ আগুন চোখে নীলের দিকে তাকিয়ে কলেজের দিকে চলে গেলো।
নূর আর ইরিন কথা বলতে বলতে সামনে এগুচ্ছে হটাৎ পিছন থেকে নীল ডেকে উঠলো, ” এই হরিন”
ইরিনের মনে চাচ্ছে ফিরে গিয়ে নীলের কিউট কিউট গালে চারটা থাপ্পড় দিয়ে আসতে।
কলেজের ভেতর ঢুকতেই নূরের ওড়না ধরে কেউ একজন টান দেয়।নূর পিছন ফিরলো কে তার ওড়না ধরলো দেখার জন্য। তাকিয়ে দেখে দুইটা ছেলে। একটা ওর ওড়না ধরে আছে। আরেকটা খুব বাজে দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।
নূরঃ ওড়নাটা ছাড়ুন!!…
একটা ছেলে বলে উঠলো, ” আহ বেবি কুল এতো রেগে যাচ্ছো কেনো?
পাশ থেকে ইরিন বলে উঠলো, ” রাগ করবে না তো কি করবে? আপনি ওর ওড়না ধরেছেন কেনো? ছাড়েন বলছি!!…
দ্বিতীয় ছেলেটা বলে উঠলো, ” যদি না ছাড়ি কি করবে?”
এবার নূর বলে উঠলো, ” ভালোয় ভালো বলছি ওড়না ছাড়োন। না হলে এমন হাল করবো না। নিজের নাম নিজেই ভুলে যাবেন!!..
প্রথম ছেলেটা বলে উঠলো, ” ওওওহ মাগো আমি তো ভয় পেয়ে গেছি।এই কেউ আমাকে ধর!! আমি এই কিউট বেবিটার রূপের ভয়ে কাঁপছি। রাগলে কি কিউট লাগে।শুনো বেবি আমি হলাম এই কলেজের ভি.পি এর ভাই। আমাকে ভয় দেখাতে এসো না বলে নূরের মুখের উপর এসে ফু দিলো।
তখনি ঠসসসসসসস!! করে একটা চড় পরলো ওই ছেলের গালে।
ছেলেটা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। চারপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। রাগে সারা শরীর কাপছে ছেলেটার।এই ছেলেকে চিনেনা এমন কেউ নেই। এই ছেলে কলেজের সব মেয়েদের বিরক্ত করে,অতিষ্ঠ করে তুলে।কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারে না।কারন প্রথম সে ভি.পির ভাই আর দ্বিতীয় সে অনেক বড় মাফিয়া গ্যাং এর সাথে জড়িত বলে।
নূরঃ তুই যেই হস না কেনো আমার কিছু যায় আসে না। দ্বিতীয় বার এই একি ভুল করলে হাত পা ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে দিবো।
দ্বিতীয় ছেলেটা রেগে বলে উঠলো……
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।