তেজপাতা পর্ব-০৪

0
353

#তেজপাতা
#পর্বঃ৪
#Jhorna_Islam

দুই বোন তাদের মা বাবার আদরে বা’দর হয়ে যাওয়া একমাত্র ভাইকে পড়াতে বসেছে। খুবই সিরিয়াস মোড নিয়ে তা না হলে তাদের ভাই একটু ভয় পাওয়া তো দূরে থাক বড় বলে গণ্যই করে না।তাই সাথে একটা বে’ত নিয়ে বসেছে।

সাদ দুই বোনের মুখের দিকে তো আরেকবার বে’তের দিকে তাকাচ্ছে।

প্রথম প্রশ্ন করে পুরো পৃথিবীর মধ্যেবর্তী জায়গার নাম বল?

— সাদ কিছুটা ভাবুক ভাব নিয়ে বলে,,আমি যেখানে বসে আছি এইটাই পুরো পৃথিবীর মধ্যেবর্তী জায়গা।

— দুই বোন অবাক হয়ে তাদের ভাইয়ের দিকে তাকায়। এটা কেমন উত্তর যুক্তি দে দেখি।

— এবার গিয়ে তোমরা দুই বোন মেপে এসো। তারপর আমার কাছে আবার এসো আমি ততক্ষণে একটু ঘুমাই। যুক্তি কোনো কাজের না মেপে আসলে প্রমান সহ পাইবা।

বলেই শুয়ে পরতে নেয়। আবার সাদকে টেনে তুলে। আচ্ছা এটা বাদ দে।ছয় ঋতুর নাম বল দেখি।
সাদ এবার কিছু টা সিরিয়াস ভাব নিয়ে বলে,,,
১. গ্রীস্মকাল।
২.বর্ষা কাল।
৩.শরৎকাল।
৪.হেমন্তকাল।
৫.বিয়েকাল।
৬.বসন্তকাল।

দুই বোন এক সাথে বলে উঠে বিয়ে কাল মানে?

এটা শীতকাল না আপুগন এটা বিয়েকাল কারণ অলরেডি আমরা ২০+ বিয়ে খেয়ে ফেলেছি।আরো তিনটা পেন্ডিং এ আছে। এর মানে হলো এটা বিয়ে কাল।

তারপর হাই তুলতে তুলতে শুয়ে পরে।তোমরা এবার যাও আমি অনেক পরেছি।এবার আমি ঘুমাবো।

মুহূর্তের মধ্যে সাদ ঘুমিয়েও যায়।অনেক ডেকেও তাকে জাগানো যায় না।ধাক্কা দিয়ে ডাকতে গেলে হাত পা ঠাস ঠুস বোনদের উপর ছুঁড়ে ফেলে।

রিনা এসে দুই মেয়ে কে জানায় তারা বিয়ের দাওয়াত খেতে যাবে গ্রামের বাড়ি।

হাসি খুশি যেতে চায় না। কথাটা মাকে বলতেই এমন ভাবে চোখ গরম করে তাকায় যেনো এখনি গি*লে খাবে।তাই বাধ্য হয়ে যেতে রাজি হয়।

পরের দিন যাওয়ার জন্য তৈরি হওয়ার সময় দুইবোনের মধ্যে আরেক প্রকার সং’ঘ’র্ষ সৃষ্টি হয়।

হাসি একটা সুন্দর লাল জামা পরেছে এটার সাথে পড়ার জন্য যেই উড়নাটা কয়েকদিন আগে কিনে এনেছিল সেটা খুঁজে পাচ্ছে না তারপর তাকিয়ে দেখে উড়না টা খুশি পরে কি যেনো খুঁজছে।

হাসি খুশির কাছে গিয়ে বলে,,এই তুই আমার উড়না নিয়েছিস কেন? ওটা আমি এই জামার সাথে পরবো বলে কিনেছি দে ওটা।

এটা আমি পরেছি না তুই তোর জামার সাথের উড়না টা পর।

না আমি এটা পরবো দে বলছি।

দিবো না। এ নিয়ে অনেক টানাটানি করেও পায় নি।
তারপর খুশি তাকিয়ে দেখে ও যেই জোতা জোরা পরবে ভেবেছিল সেই জোতা জোরা হাসির পায়ে। হাসিও এবার দেয়নি জোতা জোরা। এ নিয়ে দুই বোনের ই মন খারাপ।

সাজতে বসে ঝামেলায় পরে যায় খুশি।খুশি একটু সাজতে ভালোবাসে।হাসি তেমন সাজে না। তাই সাজাতে বা সাজতে পারে ও না।

খুশি চোখে আইলাইনার দিতে গিয়ে ঝামেলায় পরে। এ নিয়ে ছয় বার দেওয়ার চেষ্টা করছে একটা মোটা হলে আরেকটা চিকন হয়।একটা সুন্দর হলে আরেক টা ঘেটে ঘ হয়ে যায়। কয়েকবার গিয়ে ধুয়ে ও এসেছে। আর হাসি কে বকছে সাজাতে কেন পারে না।

এই দিকে রিনা তারা দিচ্ছে। তাই খুশি ঠিক করলো আর আইলাইনার লাগাবেই না। মুখ ধুয়ে আসে।

কিন্তু খুশি কে দেখে হাসি হেসে দেয়,, বাহ রে খুশি তোকে পুরাই ক’ট’ক’টির মতো লাগছে।আয়নায় মুখটা দেখ।আহারে বেচারি মনে হচ্ছে ছে*কা খেয়ে বে’কা হয়ে গেছে কতো দিন ঘুমায় না।তার জন্য চোখে ডার্ক সার্কেল পরেছে।

খুশি কটমট করে বোনের দিকে তাকিয়ে আবার গিয়ে মুখ ধুয়ে আসে। তবুও যেনো মুখটা কালো হয়ে আছে। মায়ের জন্য আর কিছুই করতে পারলো না।

গাড়িতে গিয়ে বাঁধে আরেক বিপত্তি। মানুষ চারজন কিন্তু খুশির মা বাসের মধ্যে সিট নিয়েছে দুইটা। হাসি খুশির বাবা যাবে না। এখন সমস্যা হলো চারজন দুই সিটে বসে এতোটা পথ যাবে কি করে?

রিনা কে বলে আরো সিট নেওয়ার জন্য।

–“হো তোদের বাপের তো জ’মি’দারি আছে তাই না? টাকায় কা’মরা’য়? চুপচাপ দুই সিটে বসবি আমি সাদ রে কোলে নিয়ে এক সিটে বসবো।তোরা দুই বোন এক সিটে।

অর্ধেক পথ হাসি খুশিরে কোলে নিয়ে বসবি।আর অর্ধেক পথ খুশি হাসিরে নিয়ে বসবি। এইখান থেইকা যেই টাকা বাঁচবো সেই টাকা থেইকা পাঁচ টাকার ক’ট’ক’টি মজা খাওয়াবো এবার চুপচাপ বস।

দুই বোন কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকায়। তারপর প্রথমে হাসির কোলে খুশি বসে।অন্যান্য সিটের লোকেরা কেমন করে তাকাচ্ছে। তাই খুশি উড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে।

——-+————–
বিয়ে বাড়িতে হই হোল্লড় গান বাজনা লেগে আছে।

গায়ে হলুদের দিন সাধারণ ভাবে গেলেও পরের দিন বুঝতে পারলো আসল কাহিনী।বাচ্চারা পঁচা ডিম,পাতিলের কালি,রং এমন কি মাছ কাটার পানি ছাই কিছুই বাকি রাখছে না একে অপরকে ছুরে মারছে।

অনেক কষ্টে বিচ্ছু বাহিনীর হাত থেকে দুইজন বেঁচে গেছে।

যেহেতু ছেলের বিয়ে তাই বরযাত্রী যাবে।সকলেই তৈরি। হুট করে বর মহাশয় মায়ের আঁচল ধরে কান্না জুড়ে দিয়েছে। “ওমাগো আমার বিয়ে হয়ে গেলো গোওও থু’ড়ি বিয়ে করে নিলাম গোওও।”

বরের কান্না দেখে সবাই একটু বিরক্ত। বর টা একটু বুদ্ধি কম। তাই তার মা মাথায় হাত বুলিয়ে বিয়ে করতে পাঠায়।

কনের বাড়িতে বসে আছে এদিকে খাবার দেওয়ার নাম নেই।
এদিকে খিদায় পেটে ইঁদুর হ’র’তাল করছে।

— তোর খিদা লাগে নাই? জিজ্ঞেস করে হাসি।

— একটু একটু লাগছে।

— কি বলিস তোর মতো খা’দকের একটু খিদা লাগছে?

— একদম আমার খাবার নিয়ে কিছু বলবিনা হাসুনির মা।

— এই তুই আমাকে আবার হাসুনির মা বললি? শসার খো’সা কোথাকার।

— ঝ’গড়া বাদ।তোর না খিদে পেয়েছে? ইঁদুর নাকি হর’তাল করছে পেটে। আমার কাছে একটা উপায় আছে।

— কি উপায়?

— গ্রামে কমদামে ইঁদুর মা’রার বি/ষ পাওয়া যায়।মনে হয় বিশ টাকা। এনে খেয়ে ফেল তাহলে খেল খ’ত’ম।

— হাসি খুশির কথা শুনেই পিঠে দুই ঘা লাগিয়ে দেয়। ব’জ্জা’ত মাইয়া।খালি মাথায় শ’য়’তানি বুদ্ধি।

তুই ইঁদুর মা’রার বুদ্ধিতো দিলি না আমাকে মা’রার বুদ্ধি দিলি। ক’ট’ক’টি কোথাকার।

————————————–
অনেক অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেই সময় আসলো।না মানে খাওয়ার সময়।

হাসি খুশি একসাথে বসেছে খাবার খাওয়ার জন্য। ইশশশ কি খিদাইনা পেয়েছে।টেবিলে এসে আরো অনেকেই বসেছে। হাসির পাশে একটা মহিলা তার মেয়েকে নিয়ে বসেছে। অন্য পাশে রিনা সাদ কে নিয়ে বসেছে।

টেবিলে প্রথমে পোলাও এর প্লেট রাখা হয়। দুই বোন পোলাও নিয়েই গাপুস গুপুস খাওয়া শুরু করে। তারপর আস্তে আস্তে সব এনে দেয়। বড় বড় লোকমা দিয়ে খাবার মুখে দিতেছিলো দুই বোন,এমন সময় ক্যামেরা মেন ক্যামেরা নিয়ে হা’জির। মুখের সামনে এনে ক্যামেরা ধরে রাখে। বিশেষ করে যখন লোকমাটা মুখে দেওয়ার জন্য হা করে তখনই। হাসি আস্তে করে বলে,,কি য’ন্ত্রনা রে খুশি শান্তি তে কি খেতেও পারবো না? এই ব্যাটারে এখান থেকে ভা’গা। নয়তো আরামছে বড় লোকমা মুখে দিয়ে খেতে পারবো না।পরে বিয়ের ভিডিও মানুষে দেখলে হাসিখুশি করবো না মানে হাসাহাসি করবো।বলবো দেখ দুই বোন কি রা’ক্ষ’স। এমন ভাবে হা করে খাবার খাচ্ছে যেনো পুরো দুনিয়াটাই গি’লে ফেলতে পারবে।

খুশি এবার ক্যামেরা ম্যানের দিকে তাকিয়ে বলে,, ঐ মিয়া এইখানে কি ভিডিও করেন? শান্তি তে খাইতে দেন।খাওয়ার ভিডিও করতে আসছে।আমাদের খাওয়ায় আপনার ক্যামেরার ন’জর না লাগাইয়া হাটেন এখান থেকে। গিয়ে বর বউয়ের ভিডিও করেন। সারাদিনে খাইতে বসছি ডোন্ট ডিসটার্ব।

লোকটা খুশির কথায় চলে যায়।

তারপর আরামসে খেতে থাকে। এর মধ্যে হাসির পাশে বসে থাকা মহিলা তার মেয়ের পিঠে ধুপাধুপ তা’ল ফেলতে থাকে না মানে কি’ল বসাতে থাকে।দুই বোন খাওয়া বাদ দিয়ে মহিলার দিকে তাকায়।

হ’ত’চ্ছা’ড়ি তোরে পোলাও খাইতে বলছে কে? জীবনে পোলাও খাসনাই? আরেকটা পোলা মুখে দিলে আবার কি’ল পরবো পিঠে। চুপচাপ গোশত খা।বেশি বেশি করে প্লেটে নিয়ে নিয়ে খা। নয়তো টেবিলের সবাই নিয়া নিবো।এভাবে ইদুরের মতো কু’টুস কু’টুস করে কতোক্ষনে খাবি? কালকে রাত থেকে ভাত দেই নাই যেনো এখানে এসে ভালো করে খেতে পারিস।

তারপর মহিলাটা ব্যাগ থেকে একটা পলিথিন বের করে নিজের হাটুর উপর বিছিয়ে নেয়।মেয়েকে বলে খাবি আর সুযোগ বুঝে পলিথিনে ঢুকাবি বুঝলি?

হাসি খুশি নিজেদের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে খাওয়ায় মন দেয়। মাংসের বাটি দিয়ে গেলে দুই বোন নেওয়ার আগেই মহিলা সব বেছে প্লেটে ঢেলে নেয়। তারপর পলিথিনে চা’লান করে। দুই বোন নিতে গিয়ে শুধু ঝোল পায়। মহিলাকে খুশি কিছু বলতে নিলে হাসি হাত ধরে আঁটকে দেয়। মাথা দিয়ে ইশারা করে বোঝায় কিছু বলিস না।

খুশি রা’গে নিজের প্লেট থেকে সব মাংস ঐ মহিলার পলিথিনে ঢেলে দিয়ে ব’লে,, নিন হয়েছে নাকি আরো লাগবে? লাগলে বলবেন হ্যা পুরো হাড়ির মাংস সব এনে দিয়ে দিবো। তারপর দুইবোন খাবার শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। পাশে ড্রামে পানি রাখা আছে হাত ধোঁয়ার জন্য। সাবান ও রাখা আছে। সাবান দেখে গা ঘিন ঘিন করে উঠলো।চিটচিটে হয়ে আছে। হাতে সাবান ঘষে পানি দিয়ে একটু ধুয়েও রাখেনি। কি একটা অবস্থা। সাবান ছাড়াতো হাত ও ধোয়া যাবে না।এখানে অন্য কিছু নেই।তাই উপায় না পেয়ে একটা পাতা এনে সাবান টা ধরে তারপর ভালো করে ধুয়ে নেয়।

উফফ চল একটু রেস্ট নিতে হবে। খুশি বলে,,,

হুম চল।

হাসি সামনে হাঁটছে। খুশি পিছন পিছন।হাসি এদিক ওদিক তাকিয়ে গেলেও খুশির সেদিকে খেয়াল নেই। সে একমনে মাথা নিচু করে ফোন টিপছে আর হাঁটছে।

হঠাৎ করে কোথা থেকে পানি ছিটে এসে খুশির পুরো শরীর ভিজে যায়।কয়েক মুহূর্তের জন্য কিছুই বুঝতে পারেনি কি হয়ে গেলো।থো’ম ধরে দাঁড়িয়ে রয়। তারপর ঘার ঘুড়িয়ে পাশে তাকায় পানি কোথা থেকে শরীরে পরলো দেখতে।পাশে তাকিয়ে খুশি দেখে একটা পনেরো ষোলো বছরের চ্যাংড়া পোলা বোল হাতে কাচুমাচু করে দাড়িয়ে আছে। খুশি নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখে সাদা জামা প্রায় হলুদ হয়ে গেছে। বুঝতে আর বাকি নেই শরীরে মাংসের এটো পানি ফেলেছে।
হাসি এগিয়ে এসে বলল ইসসরে মানলাম তুই মাংস খেতে ভালোবাসিস তাই বলে এভাবে এঁটো ঝোল এসে পরবে তোর উপর মাংস পরলেও না হয় কথা ছিলো।

নে খুশকি নে আরো ফোন গুঁ’তা আর হাট।হাসির ভিতরে ভিতরে দম ফাটা হাসিতে ফেটে পরছে বাইরে প্রকাশ করতে পারছেনা।খুশি আরো রেগে যাবে বলে।
#চলবে,,,,,,