#তোর_শহরে_রেখেছি_পা
#পর্ব_২২
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
আফরিন এর খুব রাগ হচ্ছে। সেটা ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তা দেখে আরুহি মুচকি হেসে বলল,,,
“কিরে মুখটাকে এমন ফুলিয়ে রেখেছিস কেন? তোকে দেখে মনে হচ্ছে তুই আমাকে আর মিস্টার নিশান কে গিলে খেয়ে নেবি। আর আমাকে খাওয়াচ্ছিস একটু ভালো মুখ করে খাওয়া তোর ওরকম চেহারা দেখে আমার তো খেতে ইচ্ছে করছে না।”
তখন আরহাম আফরিনের থেকে খাবার টা নিয়ে বলল,,,
“আফরিন মাথা ঠান্ডা করো। তোমাকে আমরা সবাই বুঝিয়ে বলবো। মাথা ঠান্ডা করে না শুনলে তুমি বুঝবে না।”
তখন আফরিন মুখ ফুলিয়ে বলল,,
“তারমানে আপনিও সবকিছু জানেন শুধু আমাকেই জানান নি! আমাকে জানালে কি হতো।
“তুমি তো এখনও কিছুই জানো না তাহলে আগেই এতো কৌতুহল দেখাচ্ছো কেন?
“জানিনা দেখেই তো কৌতুহল হচ্ছে।এখন আমাকে ঘটনা কি বলুন তো?
“তোমাকে বলবো কিন্তু কাউকে বলা যাবে না কিন্তু?”
“কাউকে বলবো না! এখন বলুন।”
“ওকে ফাইন তোমার ভাই আবরার হচ্ছে সি আই ডির স্পাই অফিসার।”
“কি!!!!”
আফরিন এর কি টা এতোটাই জোরেই ছিল যে সবাই একটু ভয় পেয়েই গেছে। তখন আবরার বলল,,
“আমি সবসময় দেশের হয় কাজ করতে চেয়েছি। সেটা তো তুই জানিস ! সিক্রেট ভাবে দেশের জন্য কিছু করতে এই প্রফেশনে এসেছি। আমার পরিচিতদের মধ্যে আরহাম ভাইয়া আর আরুহি ছাড়া আর কেউ জানেনা আমি একজন স্পাই অফিসার। আমি তোদের ইচ্ছে করেই বলিনি যে আমি এই কাজ করি। আরহাম ভাইয়া কাজের ওখান থেকে জেনেছে।আর আরুহি আরহাম ভাইয়ার থেকে।”
“আমাকে বললে কি হতো!”
“সরি নিশু বলা হয়ে ওঠেনি।”
“তারমানে এই জন্যই হুটহাট কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে যেতে।”
‘হুম!”
“আচ্ছা ভাইয়ার টা গেছে এবার আমার ননদিনী আপনি বলুন তো আপনি কে?”
তখন আরুহি অবাক হওয়ার ভান করে বলল,,
“আমি আবার কে? আমি আরুহি মাহমুদ খান আরহাম মাহমুদ খানের এর খানের বোন সাথে এখন নিশি আফরিন এর ননদ।”
“আমাকে এভাবে ঢপ মেরে লাভ নেই। যে মেয়ে একাই চারজন কে গুলি করতে পারে সে মেয়ে যে সাধারণ কেউ না এটা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছি আমি। তারওপর নিশানা গুলো একদম পাক্কা।”
তখন আবরার অবাক হয়ে বলল,,,
“মানে? তারমানে ওখানে যে আরো কয়েকটা লোককে পড়ে থাকতে দেখলাম ওগুলো কে উনি মেরেছেন আমি তো ভাবলাম আরহাম ভাইয়া বোধহয় আমার থেকে আগে এসে ওদের মেরেছে।”
তখন আরহাম বলল,,
“আরুহি কে সেটা আমি বলছি! তার আগে বলি কেন হয়েছে। আমার মা বাবা যখন মারা যায় তখন আরুহি আর আমি বুঝতে পারি যে কেউ আমাদের মা বাবা কে খুন করেছে। আরুহি সেদিন প্রতিজ্ঞা করে যে বা যারা আমাদের বাবা মাকে মেরেছে তাদের কাউকে ছাড়বে না।সবাইকে শাস্তি দেবে। বাবা মা মারা যাওয়ার কয়েকমাস পর আমরা একটা ভিডিও পাই ঐ ভিডিওটায় ছিল নেহমাত শেখ আর নওশাদ শিকদার এর সেই ফুটেজ যেটার মাধ্যমে আমরা নেহমাত শেখ কে ধরলাম। সেই ভিডিওর আগে আমাদের মা আমাদের কিছু উপদেশ দিয়ে গেছেন আর কে বা কারা এই কাজ টা করছে সেটাও বলে দিয়েগেছেন। সেদিনকার ভিডিওতে আমরা আমাদের মায়ের কথাটুকু স্কিপ করে দিয়েছিলাম। আমার মা বলে গিয়েছিলেন আমরা দু ভাই-বোন যেনো তাদের হত্যাকারীদের না ছাড়ি আর যা করবো তা যেনো আইনি ভাবে করি।বেআইনি ভাবে যেনো কোনো কাজ না করি দরকার পরলে যেনো আইনের লোক হয়ে যাই। আমরা পুলিশ হইনি কারণ আমরা চাইনি সে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের খবর পাক। আমি আর আরুহি নিজেদের প্রস্তুত করতে থাকি কিভাবে সি আই ডি বা আইনের লোক হওয়া যায়। আর আমাদের ট্রেইনার হচ্ছে ভালোবাবা তিনি ও একসময় সি আই ডি অফিসার ছিলেন। তাই আমরা তার রেফারেন্স এ দুজনেই সি আই ডি অফিসার হয়েছি। আমি আরো চার বছর আগে হয়েছি আর আরুহির প্রায় দু বছর হতে চললো।আমি সবার সম্মুখে আসলেও আরুহি ছিল সিক্রেকলি। ওর সব কাজ সিক্রেট ভাবে করা হতো এই জন্যই আজও কেউ ওকে চেনে না।। আরুহিই হচ্ছে সিক্রেট সি আই ডি অফিসার A.K ……
এর আগেরবার তো আফরিন একা চিল্লিয়ে ছিল কিন্তু এখন আবরার ও সাথে যুক্ত হলো। দুভাইবোন এর “কি!!” শুনে আরহাম রা দুই ভাই-বোন কানে হাত দিলো। আরুহির তো একহাত উঠাতে পারছে না তাই এক হাত দিয়েই এক কান চেপে ধরলো।আবরার বলল,,
“আমি তো A.K এর সাথে কথা বলছি তার কন্ঠ আর আরুহির কন্ঠ তো আলাদা তবে?”
“আরুহি কন্ঠ চেন্জ করতে পারে। এই জন্য অসুবিধা হয় না।”
তখন আফরিন বলল,,,
“তাই তো বলি সেদিন A.K কে নিয়ে কথা বলছিলাম তখন অবশ্য আরুহি বলেছিল তাদের ভাইবোনের সম্পর্ক তবে আমি তখন পাত্তা দেয় নি এখন বুঝতে পারলাম মেন কাহিনী। আমার শুশুরবাড়ির লোক দেখি সব আইনের লোক তাও আবার সি আই ডি অফিসার।”
তখন আরুহি বলল,,,
“এই কাজ টা শুধু মা বাবার খুনী কে ধরতে নিয়েছি। তাদের ধরা হয়ে গেলে আর শাস্তি দেওয়া হয়ে গেলে এই কাজ ছেড়ে দেব। তখন শুধু নিজের ডাক্তার হওয়ার জন্য তৈরি হবো।”
তখন আবরার বলল,,
“ছাড়বেন কেন আপনি তো অনেক ভালো অফিসার আপনার মতো অফিসার একটাও নেই তাহলে!”
“মিস্টার নিশান আমি কখনোই এই প্রফেশন টা চাইনি। আমি ভালো কারন আমি আমার বেস্ট টা দিয়েছি যাতে সবকিছুই সহজ ভাবে করতে পারি। সবাই যদি নিজের বেস্ট টা দিয়ে কাজ করে তাহলে তারাও আমার থেকে এগিয়ে যাবে। আমি তো শুধু পরিস্থিতির চাপে পড়ে হয়েছি যাতে বেআইনি ভাবে কোন কিছু না করতে হয়।তবে ভাইয়া ছোটবেলা থেকেই এরকম কিছু হতে চেয়েছিলো। হয়েছে আর এই প্রফেশনটাকেই আগলে থাকবে সারাজীবন। আমার তো ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল আমি ডাক্তার হবো। তাই আমি জীবনে ডাক্তার প্রফেশন নিয়েই এগোতে চাই। আমি চাইনা কেউ জানুক আমি একজন সি আই ডি অফিসার। আশাকরি আপনারা তিন জন ছাড়া A.K কে কেউ দেখবে না চিনবে না। কারন NS এর পতনের মাধ্যমে A.K বিলীন হয়ে যাবে। তার কোন অস্তিত্ব থাকবে না। যার অস্তিত্ব থাকবে সে হলো ডক্টর আরুহি মাহমুদ খান।”
আবরার মুচকি হেসে বলল,,
“আপনার যেমন ইচ্ছে। তবে যাই বলুন না কেনA.K এর অ্যাটিটিউড এর কাছে আরুহি কিছুই না। A.K আমাকে বলেছিল তার সাথে আর দেখা নাও হতে পারে। কিন্তু তার সাথে রোজ দেখা হয়েছে অথচ আমি বুঝতে পারি নি। তবে আমি কিছুটা আন্দাজ করেছিলাম আপনার বিষয়ে আপনি A.k হতে পারেন। আপনার কিছু কাজে আমি আরুহির ভাবটা লক্ষ করেছিলাম তবে আপনি যে A.k এটা সিওর ছিলাম না।”
“আপনি তাতে আমাকে চিনতে না পারেন তাই এই ব্যবস্থা নেওয়া। তবে আপনি ঠিক বলেছেন A.K এর কাছে আরুহি কিছুই না।”
তখন আফরিন বলল,,
“হুম অনেক হয়েছে সব বুঝতে পেরেছি। এখন আমার মাথা ভোঁ ভোঁ করছে এসব বাদ। কথার জন্য আরুর খাবারটাই ঠান্ডা হয়ে গেছে দিন আমি গরম করে আনছি।”
তখন আরুহি বলল,,,
” লাগবে না ভাবি। আর ভাইয়া তুমি খাবার টা রেখে এসো আমি আর খাবো না।”
“আরেকটু খা !”
“আর খাবো না। এমনিতে হাত একটু ব্যথা করছে বসে থাকে পারছি না একটু শুয়িয়ে দাও।”
এ কথা শুনে আফরিন আবরার আর আরহাম ব্যস্ত হয়ে পরলো। আরহাম বলল,,
“খুব বেশি ব্যথা করছে।”
তখন আবরার বলল,,
“বেশি ব্যাথা লাগলে বলুন আমি ব্যাথার ট্যাবলেট দিচ্ছি।”
“না মিস্টার নিশান একটু ব্যাথা করছে আপনারা ব্যস্ত হবেন না।”
তখন আফরিন বলল,,,
“তখন বললাম একটু শুয়ে থাক। খাবার আনতে আনতে কিন্তু কে শোনে কার কথা তেজ দেখিয়ে বসেই রইলো।”
“আহ ভাবিসাহেবা এত রাগ করছেন কেন আমি ঠিক আছি। তবে এখন একটু বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। ”
“আচ্ছা ঠিক আছে আমি শুয়িয়ে দিচ্ছি।”
আরুহিকে আফরিন শুয়িয়ে দিল। তখন আরুহি বলল,,
“ভাইয়া NS এর কাছে খবর পৌঁছেছে যে আরুহি মাহমুদ খানের হাতে গুলি লেগেছে?”
“হুম তোর কথা মতো ছেলেটার ফোন থেকে মেসেজ করে দিয়েছি। আর ছেলেটার বুদ্ধি আছে বলতে হবে। তোকে গুলি করেই ছবি তুলে নিয়েছিল আর সেটা তৎক্ষণাৎ পাঠিয়েও দিয়েছিল।’
তখন আবরার বলল,,
“এত বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাও কি করে?”
তখন আরুহি মুচকি হেসে বলল,,
“আপনার প্রতিপক্ষ কে মাঝে মাঝে জিতিয়ে দিন।তাতে প্রতিপক্ষ খুশি হয় তাহলে আপনি তাদের দেখে একটু আপনি একটু হাসুন। সে যদি আমাকে জখম দেখে খুশি হয় তো হোক। তবে সে লোক পাঠিয়েছে আজ, ভাইয়াকে ভয় দেখাতে। তাই তাকে একটু না হয় খুশি করি। এতকিছু করলো একটু তো খুশী করতেই পারি তাই না। আল কোরআন এ একটা আয়াত আছে। আমিও এখন সেটাই ভাবছি।
“তারা সামান্য হেসে নিক।
শীঘ্রই তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য প্রচুর কাঁদবে।”
[আত-তওবাঃ ৮২]
তবে কি জানেন তো মিস্টার আল্লাহ তায়ালা আল কোরআন এ এটাও বলেছেন,,
-আল্লাহ যদি আপনার কল্যাণ চান, তবে তাঁর অনুগ্রহ রদ করার মতো কেউ নেই।
[সূরা ইউনুস : ১০৭]
এই জন্যই বোধহয় আজ আমি বেঁচে গেছি। আল্লাহর লাখ লাখ শুকরিয়া।”
তখন আরহাম বলল,,
“আলহামদুলিল্লাহ। এখন অনেক হয়েছে একটু ঘুমা ভালো লাগবে। অনেক হয়েছে আর কথা বলতে হবে না। আমি এখন গিয়ে ওষুধ নিয়ে আসছি।”
“হুম আমারও আর ভালো লাগছে না। রাতে বোধহয় আগের বারের মতো জ্বর আসবে।”
তখন আফরিন অবাক হয়ে বলল,,
“আগের বারের মতো তার মানে এর আগেও আরু জখম হয়েছিল।”
তখন আরহাম বলল,,,
“হ্যা এর আগেও একটা গুলি লেগেছিল তবে সেটা অন্য হাতে। আচ্ছা যাই হোক আমরা এবার এই রুম থেকে যাই নাহলে আরুহি আর ঘুমাবে না।”
“ঠিক আছে।”
আরহাম আরুহি কে একটা ব্যথার ওষুধ খায়িয়ে দিল। তারপর কপালে চুমু দিয়ে লাইট অফ করে দরজা ভিরিয়ে দিয়ে গেল।
_________________
অন্যদিকে
আরুহির জখম হওয়া দেখে NS খুব খুশি। সে খুব খুশি আজ একটু হলেও আজ একটু ক্ষতি তো করতে পেরেছে। NS বলল,,
“খুব তো আমার সাথে তেজ দেখিয়ে কথা বলেছিলি। এখন তোর তেজ কোথায়। তোর ভাই তো তোকে এ অবস্থায় দেখে পাগল হয়ে যাবে। আর A.K কে আমি খুঁজে বের করবো তার পর তোদের তিনটাকেই একেবারে মেরে দেব। আজকের কাজটা তো শুধু ভয় দেখানোর জন্য করেছি।”
খুশিতে সেটা পরলো সে।কিন্তু এই খুশি কি বেশিদিন থাকবে নাকি খুব তাড়াতাড়ি কাঁদবে।কে জানে!
___________________
আরহাম আবরার আর আফরিন নিচে এসে খেয়ে নিল। তারপর আবরার বলল,,,
“আজ তাহলে আমি আসি। আর নিশু আজ তুই যা জানিস সেটা যেনো কেউ না জানতে পারে।”
“ঠিক আছে ভাইয়া। তবে আমি ভাবছি আমাকেও কিছু শিখতে হবে। নাহলে তোমাদের সবার মান ইজ্জত কিছুই থাকবেনা। তারওপর আমার জামাই আর ননদ ও সি আই ডি অফিসার।”
তখন আরহাম বলল,,,
“সেটা পরে দেখা যাবে। তুমি আপাতত নিজের ডাক্তারি তে মনোযোগ দাও। ”
তখন আবরার উঠে বলল,,,
“আমি একবার মিস আরুহি কে দেখে আসি। ওনার জ্বর এসেছে কিনা তারপর বাড়ি যাই।”
“আচ্ছা ঠিক আছে চলো।’
আবরার আরুহির রুমে গেল সাথে আরহাম আর আফরিন ও। আবরার দেখল আরুহি ঘুমিয়ে আছে। চোখ মুখ শুকনো লাগছে । আরুহি কে এভাবে দেখতে আবরার এর একদম ভালো লাগছে না। আবরার আরুহির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,,
“প্রাণের মানুষকে এটা বুঝানো কষ্ট হয় যে, কতখানি ভালোবাসা যায় তাকে, কতখানি সে নেয় হৃদয়ের দখল। এই সংশয়ে থাকতেও যেন ভীষণ ভালোলাগার অনুভূতি। সেই অনুভূতি নিয়ে দূরে দূরে থাকলেও, তাকে মনে রাখতেই যেন সার্থক লাগে খুব।”
এভাবে তোমাকে দেখতে হচ্ছে এটা যে কতটা পীড়াদায়ক সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তবে কথা দিচ্ছি এরপর থেকে তোমার আর কিছু হতে দেব না। খুব আগলে রাখবো।”
আবরার সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি চলে গেল। সত্যি সত্যি আরুহির রাতে জ্বর এলো। আরহাম আর আফরিন আরুহির রুমেই ছিল। আরুহি রাতে ওর মা বাবাকে খুঁজছিল মা বাবা বলে ডাকছিল। সবথেকে বেশি মাকে। আরুহির অবস্থা দেখে আরহাম কেঁদে দিয়েছিল। আফরিন কি বলবে কাকে সামলাবে বুঝতে পারছিল না। ও নিজেও কাঁদছিল তবুও শক্ত হাতে দুজনের হাত ধরে ছিল। হুট করেই আফরিন যেনো বড় হয়ে গেল। আরুহির কপালে জলপট্টি দিয়েছে আরহাম এর হাত ধরে সারারাত বসে ছিল। এই জন্যই বোধহয় বলে সময় মানুষ কে দায়িত্ববোধ শিখিয়ে দেয়। সকালের দিকে আরুহির জ্বর কমে আসে। আরহাম আর আফরিন ফজরের সালাত আদায় করে আরুহির জন্য দোয়া করলো। আরুহি আটটার দিকে চোখ খুললো আরহাম কে পাশে দেখতে পেল তা দেখে মুচকি হাসলো। কিছুক্ষণ পর আফরিন খাবার নিয়ে রুমে আসলো। হাতটা অনেক ভার হয়ে আছে আফরিন ওকে নিয়ে ফ্রেশ করিয়ে দিল। আরহাম আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে। আফরিন ও কলেজ যাবে না । আরুহি বলল,,
“তোমরা খেয়েছো?”
ওরা কিছু কিছু বললো না। আরুহি ওদের চোখ দেখে বুঝতে পারল ওরা সারারাত ঘুমায় নি। ওরা কিছু বলছে না দেখে আরুহি বলল,,,
“নিশ্চয়ই খাও নি! যাও খাবার নিয়ে এসো আমরা একসাথে খাবো।”
তখন আরহাম বলল,,
“আমরা পরে খেয়ে নেব। আগে তুই খেয়ে নে।”
“ভাইয়া আমি কোন কথা শুনছি না। এমনিতেও তো সারারাত ঘুমাও নি আমার দেখাশোনা করেছো। এখন খেয়েদেয়ে দুজনে একটা ঘুম দেবে। আমি এখন অনেক সুস্থ আছি। হাতের ব্যাথাও কম।”
তখন আফরিন বলল,,
“একটু পরে গেলে কিছুই হবে না। তুই আগে খেয়ে নে।”
“আফরিন রাগ উঠাবি না এখন যা খাবার নিয়ে আয়। তিনজনে একসাথে খাবো।”
অগত্যা আফরিন খাবার নিয়ে এলো। আরহাম আরুহি খায়িয়ে দিল আর নিজে খেলো। ওরা তিনজন একসাথে খেল।আরুহি বলে কয়ে ওদের রেস্ট করতে পাঠালো। তখন আরুহির ফোনে আবরারের ফোন এলো। আরুহি মুচকি হেসে ফোনটা ধরলো আর সালাম দিল,,
“আসসালামু আলাইকুম!”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছেন আপনি? আপনার হাত ঠিক আছে?”
“জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি! হাত ও অনেক টা বেটার! আপনি কেমন আছেন?”
“জি আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তো এখন কি করছেন খেয়েছেন?”
“আপাতত বসে আছি। আর একটু আগেই খেয়েছি।”
“রাতে জ্বর এসেছিল।”
“হুম এসেছিল এখন নেই।”
“আপনার জন্য একটা খবর আছে!”
“কি?”
“আপাতত NS দেশের বাইরে আছে। তবে আশংকা করছি খুব তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে আপনাদের ওপর আবার অ্যাটাক করবে। হয়তো আপনাদের শেষ ও করতে পারে।”
“তা NS কার ওপর অ্যাটাক করবে A.K এর ওপর নাকি আরুহির ওপর।”
‘সে A.K কে খোঁজার সব রকম চেষ্টা করছে। অনেকগুলো সোর্স লাগিয়ে দিয়েছে।”
“আদও কি কিছু তারা পাবে?”
“হয়তো হ্যা নয়তো না।”
“ওকে ধন্যবাদ খবরটা দেওয়ার জন্য।”
“এটা আমার কাজ ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার নেই।”
“আচ্ছা ও বাড়ির সকলে কেমন আছে?”
“জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। আপনাকে একটা কথা বলি?”
“হুম বলুন না।”
“আমি বুঝতে পেরেছিলাম আপনি A.K তবে সেটা প্রথম দিন না। দ্বিতীয় দিন যেদিন আপনি নাদিম এর সাথে দেখা করতে এলেন। আপনার হাতের সেই ঘড়িটা যেটা আমি আমার কাছে রেখেছিলাম ওটা আপনার হাতে দেখেছিলাম। তবুও আমি দ্বিধায় ছিলাম। কিন্তু যেদিন আরহাম ভাইয়ার কিডন্যাপ হলো সেদিন সিওর হলাম আপনিই A.K. কারন আরুহি আর A.K সবসময় একসাথে দেখা যায় না। আপনি অফিস থেকে চলে যাওয়ার দশ মিনিট পরেই A.K কে দেখা গেল এত তাড়াতাড়ি অফিসে পৌঁছে গেল আর সব বুঝেও ফেললো। তারওপর আপনি সবাই কে ছেড়ে আগেই এলেন। আমরা যাওয়ার দশ মিনিট আগে আবার অফিসে পৌঁছে গেলেন। সব থেকে বেশি ইন্টারেস্টিং লেগেছে আপনি হোটেল থেকে বিড়িয়ানি কিনে নিয়ে গেছিলেন। কারন আমি ঐ হোটেলের বিড়িয়ানির টেস্ট ভালো করেই চিনি। ”
“বাব্বাহ এত কিছু বুঝে ফেলেছিলেন। তা আমাকে বললেন না কেন?”
“আপনি যেহেতু জানাতে চান নি। তাই আমিও কিছু বলিনি। সঠিক সময় এলে অবশ্যই জানতে পারবো এই জন্যই ধৈর্য্য ধরে ছিলাম।”
“হুম বুঝতে পারলাম।”
“তা মিস আমার মনে হয় আমার অপেক্ষার দিন শেষ হতে চলেছে।”
“মানে?”
“সেদিন রাতের কথা ভুলে গেলেন নাকি?”
“ভুলিনি সব মনে আছে আমার।”
“আমার প্রতি আপনার অনুভূতি কি রকম মিস। আমি তো জানিয়ে দিলাম কিন্তু আপনি তো সেরকম কিছুই বললেন না।”
‘অনুভূতি বা ভালোলাগা আমি সুন্দর ভাবে প্রকাশ করতে পারি না। নির্লিপ্ত থেকে অনুভব করতেই ভালোবাসি।”
“এটা কিন্তু আমার কথা ছিল।”
“কিন্তু আপনি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আমি এখন করবো না। সঠিক সময় আসুক তারপর সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন।”
“আপনি এতো রহস্যময়ী কেন বলুন তো।”
“কারন আমি রহস্য রাখতে ভালোবাসি।”
“দিলেন তো অবুঝ বালকের মনটা ভেঙে।”
“ভালোবাসার সাথে প্রত্যাশার কোন সম্পর্ক নেই।”
“এটা অবশ্য ঠিক !”
“আচ্ছা রাখছি এমনিতেও অনেক অনর্থক কথা হয়ে গেছে। আল্লাহ হাফেজ।”
“ওকে আল্লাহ হাফেজ।”
আরুহি ফোন কেটে দিল। আরহাম মুচকি হেসে বলল,,
“প্রিয়সী তুমিও আমার মতো প্রকাশের চেয়ে চুপিচুপি অনুভব করতেই ভালোবাসো। তবে সেই দিন টা খুব তাড়াতাড়ি আসবে যেদিন তুমি প্রকাশ করবে নিজের অনুভূতি । আমিও সেদিনের অপেক্ষায় থাকবো।”
_________________
দেখতে দেখতে কেটে গেল আরো কয়েকটা দিন। আরুহি এখন পুরোপুরি সুস্থ। তিন চার দিন আরুহি কলেজ আসে নি। তবে আফরিন কে পাঠিয়েছে আফরিন বাড়ি গিয়ে আরুহি কে বুঝিয়ে দিয়েছে। আরুহি ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে একটা পরিচিত মুখ দেখতে পেল। রুহানি দাঁড়িয়ে আছে! সেটা দেখে আরুহি রুহানির দিকে এগিয়ে গেল। আর বলল,,
“আসসালামু আলাইকুম রুহানি আপু!”
রুহানি আরুহি আর আফরিন কে দেখে চমকে বলল,,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আরে আরুহি তোমরা এখানে কেমন আছো তোমরা?”
“জি আলহামদুলিল্লাহ আমরা ভালো আছি। আমি আর আফরিন তো এই কলেজেই পড়ি।আপনি কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”
“তা এখানে কি মনে করে কেও অসুস্থ নাকি?”
“না তেমন কোন ব্যাপার না। আসলে আমার একটা রিপোর্ট দেওয়ার কথা সেটা নিতে এসেছিলাম।”
“কেন কি হয়েছে আপনার?”
“আমার না মায়ের!”
“কি হয়েছে তার?”
” কাল হঠাৎ করে প্রেসার বেড়ে গেছিল। তাই হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম। ডাক্তার দেখাতেই উনি কিছু টেস্ট করতে দিল। আজ তাই রিপোর্ট নিতে এলাম।”
“রিপোর্ট পেয়েছেন?”
‘হুম ডাক্তার বলেছে অন্য কোন প্রব্লেম নেই। একটু ডায়ববেটিস বেড়ে গেছে । অতিরিক্ত চিন্তার জন্য এরকম হয়েছে মাকে একটু দেখে রাখতে বলেছে।”
“ওহ আচ্ছা এখন সে কোথায় বাড়িতে এখন কেমন আছে?”
“এখন ভালোই আছে আর বাড়িতেই আছে!”
“ওহ আচ্ছা!”
“চলো কফি খাই!”
রুহানি আরুহির কথা শুনে অবাক হলো। সেদিনের পর থেকে আরুহির সাথে আর কথা হয় নি। বলারও সাহস পায় নি। রুহানি বলল,,
“আরুহি তোমার সাথে আমার বাবা মা করেছে তারপরও তুমি আমার সাথে এতো ভালো ব্যবহার করছো?”
“নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।” (মুসলিম, হাদিস : ২৬১৩)।
দোষটা সে করেছে তুমি করো নি। সে তার অপরাধের শাস্তি পাচ্ছে। এখানে তোমার কোন দোষ নেই। তাহলে তার শাস্তি তোমাকে দিতে যাবো কেন শুনি। এমনিতেও রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন তোমরা একজনের শাস্তি অপরজন কে দিও না।”
“আমি বাবার কাছে একদিন গিয়েছিলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন সে এরকম করেছে কিন্তু তিনি কিছুই বলেন নি আমার দিকে তাকিয়ে শুধু কাঁদছিলেন।”
“আচ্ছা সেসব কথা বাদ দাও।চলো কফি খাই।”
“না আজ আর না অন্য একদিন। মা বাসায় একা আছে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
“আসি আল্লাহ হাফেজ!”
“ওকে আল্লাহ হাফেজ।”
রুহানি ওখান থেকে চলে গেল। তখন আফরিন বলল,,
“ঐ পরিবারের এই একজন মানুষ -ই বোধহয় ভালো মানুষ। তোর ফুপিটা সবসময় তোকে কথা শোনাতো। আর তার মেয়ে হয়ে রুহানি কি সুন্দর আমাদের সাথে কথা বলে।”
“হুম এই একজন -ই ভালো মানুষ তবে এই ভালোমানুষের চারপাশে যে খারাপ মানুষ গুলো ছিল।তারা সবাই একদিন এই মেয়েটাকে একা করে চলে যাবে। হয়তো গেছেও মাঝে মাঝে মনে হয় যদি এর জন্য কিছু করতে পারতাম।”
“আচ্ছা চল এখন বাড়ি যাই।আজ তো আমাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা মিস্টি যেতে বলেছে।”
“হুম তুই তো থাকবি মনে হয় কয়েকদিন।”
“আরে না থাকবো না তোর সাথে রাতে আর উনার সাথে বাড়ি আসবো।”
“কেন?”
“আমার সংসার ছাড়া আমার আর এখন ভালো লাগে না।”
“বাহ ভালো গৃহিণী হয়েগেছিস তো দেখছি।”
“এখন কথা বাদ দিয়ে চল।”
“আচ্ছা যাচ্ছি এই দারা চল ফুচকা খাবো তো।”
“ওহ হো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম ফুচকা খাওয়ার কথা!”
“হুম চল” ওরা ফুচকার দোকানে গেল। আর ফুচকার অর্ডার করলো।আবরার দুরে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছিল। ওদের ফুচকার দোকানে যেতে দেখে ও ও গেল। আবরার ওদের পাশে গিয়ে বলল,,
“মামা একটা ফুচকা দিয়েন তো?”
তখন আরুহি বলল,,,
“আপনি ফুচকা খান?”
“কেন আমার ফুচকা খাওয়া বারন নাকি?”
“বারন না তবে আপনাকে এর আগে ফুচকা খেতে দেখেনি তাই বললাম ।”
“আসলে কি বলুন তো সাধারণ তো ছেলেরা ফুচকাটা খায় না। তবে আমার ফুচকা খেতে ভালোই লাগে তাই খেতে আসলাম। আর আমার মতো অনেক ছেলে আছে ফুচকা খেতে পছন্দ করে। কিন্তু অনেকে লজ্জায় খায় না। আর কিছু কিছু ছেলে তো ভাবে এগুলো মেয়েদের খাবার তাই তারা ভাবে দেখিয়ে খায় না। নিঃসন্দেহে ফুচকা একটা টেস্টি খাবার।”
“আপনি ঠিক বলেছেন এটা প্রায়-ই লক্ষ করা যায়। লজ্জায় -ই কতোজন খায় না আর কতোজন নিজের পুরুষ বলে দাবি করে খায় না। খাবার তো খাবারই!”
“হুম!”
কথা বলতে বলতে ওদের ফুচকা এসে পরলো ওরা তিনজন এ ফুচকা খেল। সব বিল আবরার দিল। তখন আরুহি বলল,,,
“আপনি আমাদের বিল দিলেন কেন?”
“আপনাদের ট্রিট দিলাম মনে করেন!”
তখন আফরিন বলল,,,
“ভালোই হয়েছে আমার জামাইয়ের টাকা বেঁচে গেল!”
আরুহি কিছু বললো না মুচকি হাসলো। তখন আবরার বলল,,,
“আপনারা এখন আমাদের বাড়িতে যাবেন তো?”
‘হুম”
“ওহ আচ্ছা!আমার একটু দেরি হবে নাহলে আপনাদের সাথেই যেতে পারতাম।”
তখন আফরিন বলল,,,
“আমাদের স্কুটি টা ছোট তোমাকে নিতাম কোথায়!”
“আরে গাধা আমি সেটা বলিনি। আমি তো আমার বাইকে যেতাম তোদের সাথে যাওয়া বলতে বাড়িতে একসাথে পৌঁছানো।”
“ওহ আচ্ছা।”
আরুহিরা চলে গেল খান বাড়ির উদ্দেশ্যে। আর আবরার ওর কাজে। খান বাড়িতে ঢুকবে এমন সময় মিস্টিকে দেখা গেল দুটো মেয়ের সাথে ঝগড়া করতে। আরুহি ওকে দেখে স্কুটি থামালো ওরা মিস্টির কাছে গিয়ে বলল,,,
“কি হয়েছে মিস্টি তুমি ওদের সাথে ঝগড়া করছো কেন?”
“দেখো না আন্টি ওরা আমার সাথে ঝগড়া করছে।”
“সে তো দেখতেই পাচ্ছি কিন্তু কেন ঝগড়া করছো?”
“আমি তোমাদের জন্য এখানে অপেক্ষা করছিলাম। ওরা আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। হুট করে এখানে দাঁড়িয়ে আমাকে বলে ,,
এই পিচ্চি তোমার নাম কি? আমি বললাম মিষ্টি। তারপর বললো এটা আমার বাড়ি কিনা আমি এ বাড়িতে থাকি কিনা। আমি বললাম থাকি। তখন বলল,, আমাকে বাগান থেকে দুটো ফুল দেবে। আমি বললাম না। কিন্তু মেয়ে দুটো আমার সাথে ঝগড়া করেই যাচ্ছে আমি কেন দেব না দিতে হবে। আরে চাচ্চু যত্ন করে ফুল গাছ লাগিয়েছি আমাকে ফুল ছিঁড়তে মানাও করেছে। আমি ফুল কেন দেব। এই নিয়েই ঝগড়া হচ্ছে।”
আরুহি মেয়ে দুটোর দিকে তাকিয়ে দেখলো বয়স দশবছর হবে। দুজনের গায়ে দুটো ফ্রক দেখে তো ভালো ঘরের -ই মনে হচ্ছে।কিন্তু এত বড় মেয়ে হয়েও ওর মতো পিচ্চির সাথে ঝগড়া করাটা ওদের উচিত হয় নি। তখন আরুহি মেয়ে দুটোকে বলল,,
“তোমরা ওর সাথে ঝগড়া করছিলে কেন? সামান্য ফুল দেয় নি বলে।”
“আন্টি আমরা তো ভালোমতোই ওর কাছে চাইলাম কিন্তু ও দিলো না তাই তো একটু জোর করছিলাম যাতে দিয়ে দেয়।”
“তোমরা ফুল দিয়ে কি করবে?”
“আসলে আমাদের এক বড় আপু আজ একটা অনুষ্ঠানে যাবে। তাই আমাদের বলেছে দুটো ফুল আনতে মাথায় গুজবে। আমাদের বলেছে চুরি করে নিতে কিন্তু এখানে এই মেয়েটা দাড়িয়ে ছিল তাই ওকে দেখে ওর কাছেই চাইলাম। ও না থাকলে আমরা এমনিতেই নিয়ে নিতাম।”
তখন আফরিন বলল,,,
“এই তোমরা সামনের বাড়ি রফিক আংকেল এর মেয়ে না।”
“তুমি চেনো আমাদের বাবাকে প্লিজ বলো না। কিন্তু তাহলে খুব বকবে আমাদের। বাবা বলেছে অন্যের জিনিসে না বলে হাত দিতে। আমরা আপুকে বলেছিলাম কিন্তু আপু জোর করে আমাদের পাঠিয়েছে। এখানে নাকি আমাদের ফুলের চেয়ে বেশি সুন্দর ফুল আছে।”
তখন আরুহি বলল,,
“আচ্ছা বলবে না তোমরা যদি তোমাদের আপুকে ডেকে নিয়ে আসো এখানে আমি তার সাথে কথা বলবো।’
“আচ্ছা ঠিক আছে” বলেই মেয়ে দুটো দৌড় দিল। আরুহি মিষ্টি কে কোলে নিয়ে বলল,,
“মিষ্টি ঝগড়া করা ব্যড ম্যানার। এরপর থেকে একদম ঝগড়া করবে না।”
“আন্টি আমি ঝগড়া করি নি। যাই হোক কেমন আছো তোমরা?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি তুমি?”
“ভালো আছি!”
তখন আফরিন বলল,,
“মেয়ে দুটো কে তো বললি ওরা কি আর ফেরত আসবে?”
“আসবে ঐ তো এসে গেছে।”
মেয়েদুটোর সাথে একটা ষোলো বছরের মেয়ে এলো পরনে দামী থ্রিপিস চুল গুলো ছাড়া। মেয়েটার মুখ দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটার ভয় পেয়ে আছে। সামান্য দুটো ফুলের জন্য এতকিছু হবে মেয়েটা হয়তো ভাবেনি। মেয়েটা ওদের কাছে এসে ভয়ে ভয়ে বলল,,,
“সরি আপু আমি বুঝতে পারি নি সামান্য দুটো ফুলের জন্য এতকিছু হবে। আপু সরি আমি আর কখনো কারো গাছের ফুল নেব না।”
তখন আরুহি বলল,,,
“তোমাকে এখানে ফুলের জন্য আসতে বলা হয় নি। তোমাকে এখানে ডাকা হয়েছে বাচ্চাদের ভুল ভাল শেখানোর জন্য। তুমি যে বাচ্চা দুটোকে ফুল নিতে বলেছো তাও আবার না বলে। মিষ্টি এখানে না থাকলে ওরা এমনিতেই নিয়ে যেতো সেটা কি জানো তো বাংলা কথায় এটাকে চুরি বলে। তোমার এতো ফুল নেওয়ার শখ তো নিজে এসে কাউকে বলে নিয়ে যাও বাচ্চা দুটো কে পাঠিয়েছো কেন। এখান থেকে ওরা কি শিক্ষা পাবে তোমাকে দেখেই তো ওরা শিখবে। ভবিষ্যতে গিয়ে ওদের ও অন্যের কিছু প্রয়োজন হলে না বলেই নিয়ে নেবে। কারো জিনিস এ না বলে হাত দেওয়া বা নেওয়া উচিৎ নয় এইটুকু জিনিস তো মাথায় আছে তাই না। হ্যা তোমার অন্যের জিনিস প্রয়োজন হতেই পারে সেটা কাউকে জিজ্ঞেস করে নেওয়া উচিত তুমি তাদের কি বলে পাঠিয়েছো চুরি করে আনতে। ওদের কথা দেখে মনে হলো ওদের বাড়িতেও ফুল আছে। কিন্তু এটা বেশি সুন্দর বলে এখানে পাঠিয়েছো।
মেয়েটা কাঁদো কাঁদো মুখে বলল,
“সরি আপু আমি বুঝতে পারি নি। এরপর থেকে আমি খেয়াল রাখবো আপনার সব কথা মনে রাখবো।”
“তোমাকে একটা কথা বলি সবসময় মনে রাখবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
সম্পদের প্রাচুর্য (প্রকৃত) সচ্ছলতা নয়; (প্রকৃত) সচ্ছলতা হলো, (অন্যের সম্পদের প্রতি) হৃদয় নির্মোহ থাকা।
[সহিহ বুখারি: ৬৪৪৬, সহিহ মুসলিম: ১২০]
তিনি আরো বলেন,
যে ব্যক্তি (কাউকে) সৎপথের দিকে আহ্বান করবে, সে তার প্রতি আমলকারীদের সমান নেকী পাবে । এটা তাদের নেকীসমূহ থেকে কিছুই কম করবে না । আর যে ব্যক্তি (কাউকে) ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করবে, তার উপর তার সমস্ত অনুসারীদের গোনাহ চাপবে । এটা তাদের গোনাহ থেকে কিছুই কম করবে না ।
[মুসলিমঃ ২৬৭৪; আবু দাউদঃ ৪৬১৯]
আশা করি আমি কি বোঝাতে চেয়েছি বুঝতে পেরেছো। আর হ্যা বাচ্চাদের কে উত্তম শিক্ষা দিও। তুমি আজ তাদের সুপথে আহ্বান না করে ভ্রষ্টাতার দিকে তাদের ঠেলে দিলে এরুপ কখনোই করো না। যাতে ভবিষ্যতে তারা কোন অনৈতিক কাজ না করে।”
“জি আপু বুঝতে পেরেছি আপনি কি বলছেন। ধন্যবাদ আমাকে এত সুন্দর করে বোঝানোর জন্য। যা হয়েছে তার জন্য আমি দুঃখিত পারলে আমাদের মাফ করে দিবেন।”
“হুম তোমরা এখন যেতে পারো।”
মেয়েগুলো চলে গেল। আফরিন বলল,,
“কি স্পিসটাই না দিলি। একদম ফাটিয়ে দিয়েছিস।”
তখন মিষ্টি বলল,,,
“কিন্তু আমরা মাথায় কিছুই ঢুকে নি।”
তখন আরুহি মুচকি হেসে বলল,,,
“আরেকটু বড় নাও ভালো করেই বুঝতে পারবে।
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
“চলো এখন আমরা বাড়ি যাই আমার খুব ক্ষুদা লেগেছে।”
আফরিন এর ক্ষুদার কথা শুনে আরুহি বলল,,
“তোর ক্ষুদা লাগছে একটু আগেই না ফুচকা খেয়ে এলি।”
“আরে তুই দেখতে পেলি না বেশি খেতে পারি নি কেমন যেনো লাগলো তাই না তোকে দিয়ে দিলাম।”
“আচ্ছা ঠিক আছে চল ভেতরে যাই।”
আরুহি আফরিন মিষ্টি কে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। ওপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। তারপর খেতে বসলো। কিন্তু আফরিন এর ক্ষুদা থাকা সত্ত্বেও কিছু খেতে পারছে না। বমি বমি ভাব হচ্ছে এমনটাই ফুচকা খাওয়ার সময় হয়ে ছিল। একসময় না পেরে আফরিন মুখ আটকিয়ে বেসিনের দিকে দৌড় দিল। বাকি সবাই কিছুই বুঝতে পারলো না। আফরিন কোন রকমে ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসলো। সবাই ওকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো। রাতে আরহাম এলো আরুহিকে নিতে তখন আফরিন জানালো ও ও যাবে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে আসতে যাবে তখনি আফরিন অজ্ঞান হয়ে আরুহির ওপর পড়ে গেল।আরুহি আফরিন কে আগলে নিল। সবাই ভয় পেয়ে গেল আফরিন এর অবস্থা দেখে। অতঃপর,,,
~চলবে,