তোমার আসক্তিতে আমি আসক্ত পর্ব-১০

0
286

#তোমার_আসক্তিতে_আমি_আসক্ত
#নুশা_আহমেদ
#পর্ব_১০

ভালোবাসার মানুষ কে নিজের করে পাওয়া কতটা যে মনের মাঝে আনন্দ হয় সেটা শুধু তারাই বুঝে যারা ভালোবাসার মানুষ কে পায়, যাদের চাওয়া,পাওয়া,ইচ্ছে পূরণ হয়। পছন্দের মানুষের সাথে সারাজীবন থাকার জন্য পরিবারের সবাই যখন রাজী থাকে তখন তাদের কাছ লাগে যেন সকল সুখ তাদের দরজায় কাছে এসে পরেছে।

সকাল নয়’টার দিকে পড়ার টেবিল থেকে উঠে একেবারে খারার রুমে চলে যায় নুশা। আজ অনেক দিন পর বইটা ধরেছে, সকাল ফজরের আজান শুনে হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে যাওয়াতে আর ঘুমিয়ে না থেকে উঠে নামাজ পরে ছাদের উপর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে রুমে এসে বই নিয়ে পড়তে বসে যায়। পরিক্ষার তারিখ ঠিক হয়ে গেছে কলেজে না গেলেও খবরটা তার কানে চলে এসেছে, গতকাল সন্ধ্যা সময় ইমা বাড়িতে এসে বলে দিয়ে গেছে মোবাইল বন্ধ পেয়ে বাধ্য হয়ে ইশার নুশার বাড়িতে আসতে হয়েছে । খাবার টেবিলে বসে আছে খাবারের জন্য হাত দিয়ে টেবিলে শব্দ করছে। চারদিকে কি হচ্ছে সেই দিকে কোনো খেয়াল নাই তার তো সব মনোযোগ টেবিলে শব্দ করা, অনেকক্ষন যাবৎ খাবারের কোনো সন্ধ্যান না পেয়ে মুখ উপরে তুলে ডানে বামে তাকিয়ে দেখে সবাই কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে । যেনো তারা কোনো বিষয় নিয়ে খুবই আশ্চর্য হয়েছে , নুশা তাদের দিকে তাকিয়ে বললো,

-কি ব্যাপার তোমরা আমার দিকে এবাবে তাকিয়ে আছো কেনো, যেনো আমি অন্য গ্রহ থেকে ভ্রমন করতে এসেছি ।

নিশাত নুশার দিকে বড় বড় চোখ দিয়ে তাকিয়ে বললো,
-বুড়ি, তুই এমনে বদলে গেলি কেমনে,,,?
-মানে,,,?
অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,
-মানে তুই আজ কারো ডাক ছাড়া কোনো শব্দ ছাড়া এতো সকালে কেমনে উঠলি, নামাজও পরলি আবার বই নিয়ে পড়তেও দেখছি।
-এখানে এমন ভাবে তাকানোর কি আছে, মানুষ বলতেই তো পরিবর্তনশীল তাই আমিও আমাকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে ফেলবো।
-অহ আচ্ছা তা এই পরিবর্তনের কারন কি জানতে পারি।
নুশা কিছু বলতে যাবে তখনই নুশার আব্বু বলে উঠলো,

-আহ! নিশাত চুপ করো তো। আমার নুশা মার যেমন ইচ্ছে তেমন ভাবে চলবে তুমি এতো কথা বলো কেনো।

নিশাত বাবার কথা শুনে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নুশার আব্বুর মোবাইল বাজতে শুরু করলো শার্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে সায়ানের ফোন তাই সাথে সাথে রিসিভ করে কানের কাছে নিয়ে যায় আর অপর পাশের সালাম শুনে উনিও সালামের জবাব দেয়। সায়ান জানায় আগামীকালকে নিশি কে দেখতে আসবে রিফাতের ফেমেলী মেম্বাররা তাই নিশিকে যেনো হোস্টেল থেকে নিয়ে আসা হয়।

________

শুক্রবার, আজ নিশিকে দেখতে আসবে। গতকালই বিকেল বেলা বাবার আসার অনুমতি পেয়ে চলে এসেছে নিশি । জুম্মার নামাজের পর রিফাতের বাড়ি থেকে নিশি দের বাড়িতে আসবে তাই সেই কথা অনুযায়ী তারা দুপুর তিনটার দিকে এবাড়িতে এসে পৌঁছায় সায়ান রিফাতদের সাথে আসে আর সায়ানের আম্মু সকাল বেলাই চলে আসে নুশাদের বাড়িতে সায়ানের আব্বু ব্যবসার কাজে চট্টগ্রাম গেছে তাই আসতে পারে নাই।
নিশিকে আজ খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে সায়ানের আম্মু আর নুশা মিলে গোলাপি রঙের শাড়ী পরে নিশিকে যেনো একটা রাজকন্যার মতো লাগছে । নিশিকে রুম থেকে বের করে নিয়ে আসছে নুশা, নুশা আজ কালো কালারের থ্রী- পিছ পরেছে । বড় সোফায় রিফাত রিফাতের আম্মু আব্বুর মাঝ খানে বসেছে আরেক সোফায় নুশার আব্বু আরেক সোফায় সায়ান । সায়ান নিচের দিকে তাকিয়ে মোবাইলে মেসেনজারে কথা বলছে নিশাত সায়ানের সোফার সাইটে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নুশাকে আর নিশিকে এদিকে আসতে দেখে নিশাত সায়ানের টিঠে হাত দিয়ে উপরে তাকাতে বলছে কিন্তু সায়ান এক হাত দিয়ে হাত টা সরিয়ে আবার টাইপ করতে লাগলো অবশেষে বড় একটা মেসেজ লিখে উপরের দিকে তাকিয়ে তার চোখ যেনো আটকে গেছে নুশার দিকে এই কালো জামাতেই তো কোনো এক সময় সায়ান তার ব্লাক ড্রাইমন্ডের প্রেমে পরেছে ।
একদিন রিফাত তার ভালোবাসা নিশির দিকে ভালোবাসার নজরে তাকিয়ে আছে , আরেকদিকে সায়ান নুশার দিকে নুশাকে নিজের করে পাওয়ার আশায় তাকিয়ে আছে ।

নিশিকে চেয়ারে বসানো হয়েছে নুশা প্রথমে সবার সামনে এসে সালাম দেয় রিফাত মা সালামের জবাব দিয়ে নিশিকে জিজ্ঞেস করে ,
-কেমন আছো,,,?
-জী আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনারা কেমন আছেন।
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কি আর বলবো নিশি মার সম্পর্কে তো সবই জানি আমরা তো না আসলেও রাজী ছিলাম সায়ান বাবা জোর করেই আসতে বললো।

রিফাতের বাবা নুশার বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন,

-বেয়াই আপনারা কি একবার আমাদের বাড়িতে যাবেন নাকি বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেলবেন।
নুশার বাবা আসতে আসতে বললো,
-আমার মেয়ের শ্বশুর বাড়ি যেহেতু যেতে তো আমাকে হবেই। মেয়েকে দেখতে হলে কতোবার যাবো তখন আর আপনাদের থেকে অনুমতি নিয়ে যাবো কেনো কি বলেন বেয়াইন বল৷ হাসতে লাগলো । উনার কথা শুনে এখানে সবাই অল্প অল্প হাসতে লাগলো কিন্তু একজন হাসতে পারছে না সেতো এখনও একটা ঘোরের মাঝে আছে সে কি স্বপ্ন দেখছে নাকি মিথ্যা দেখছে তার কাছে সব কিছু যেনো কল্পনার মতো লাগছে সেটা আর কেউ না সেটা হলো নিশি সে তো জানতোই না আজকে যে পাএ পক্ষ আসবে সেটা রিফাতের পরিবার ।
সবার কথার মাঝেই সায়ান বলে উঠলো ,
– কিছু না মনে করলে একটা কথা বলতাম।
নুশার আব্বু সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
-কি মনে করবো, যা বলার বলে ফেলো।
-রিফাত নিশি পরিচিত তো কি হইছে বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে তাদের দুইজন কে আলাদা কথা বলার সুযোগ তো দেওয়াই যায় তাই না।
রিফাতের আব্বু আর নুশার আব্বু দুইজন এক সাথে বলে উঠলো,
-হ্যাঁ অব্যশই । নিশির বাবা নিশিকে বললো রিফাতকে নিয়ে যেতে আর রিফাতের আব্বু রিফাতকে বললো নিশির সাথে যেতে ।

নিশি সামনে হাঁটছে আর পিছন পিছন রিফাত হাঁটছে। আর তাদের পিছনে নুশা আর নিশাত বড় বোন জিজু মশাইয়ের সাথে কি কথা বলে শুনতে তাদের পিছু পিছু আসছে। নিশি রুমে গিয়ে বিছানায় বসে মুখ ফুলিয়ে বসে পরে আর নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,
-তার মানে তুমি সব জানতে ।
রিফাত রুমে ডুকে দরজা হালকা লাগিয়ে নিশির সাথে বিছানায় গিয়ে বসে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
-কোন সব ?
নিশি এবার রাগী চোখে রিফাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
-তুমি আমার সাথে একদম নাটক করবা না। তুমি সব জানতে আব্বু যে রাজি হয়েছে এটাও জানতে কিন্তু তুমি আমায় একবারও বলোনি । ঐদিন ফোন দিয়েও ভালো করে বুঝিয়ে বললে না ।
নিশি বলতে বলতে এবার কেঁদেই দিছে । রিফাত এবার তার দুই হাত দিয়ে নুশার দুই গালে দরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো,
– এই জান তুমি কান্না করছো কেনো আমি তো তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য বলিনাই ।
নিশি কান্না করতে করতে বললো,
-তুমি জানো আমি কতোটা ভয় পেয়ে গেছিলাম ভাই যখন কল দিয়ে বললো আপু তুমি আজকে বিকালের দিকে বাসায় চলে এসো কালকে তোমাকে দেখতে আসবে। আমি তো ভেবেছিলাম আব্বুর বন্ধুর ছেলের সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হবে আর তারাই বুঝি দেখতে আসবে।

-ধুর পাগলী মে,,

বাহির থেকে আর শুনতে পেলো না নুশা কারন তার আগেই পিছন থেকে কেউ তাকে টেনে ধরেছে । নুশা মনে করেছে নিশাত হবে কারন নুশার কারনে নিশাত শুনতে পারছে না। তাই পিছন থেকে হাত দিয়ে সরাতে সরাতে বললো,
-নিশাইত্তা ছাড় আমারে , শুনতে দে কি বলছে তারা ।
পিছন থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,

-,কারো পারসোনাল রোমান্টিক কথা শুনতে তোমার শরম করছে না।

হটাৎ নিশাতের বদলে অন্য কারো কথা শোনো মুখের ভঙ্গি বদলে গেলো ঘার ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে সায়ান তাই নুশা সায়ন কে বললো,
-না শরম করবে কেনো আমি কি অন্য কারো কথা শুনছি নাকি আমি আমার আপুর আর হবু দোলাভাইের কথা শুনছি ।
-এতই শখ রোমান্টিক কথা শোনার তাহলে তোমার আব্বুকে বলে দেও আমার আর তোমার বিয়ে টা যেনো নিশি আর রিফাতের সাথে ঠিক করে ফেলে।

-জীবনেও না।
-জীবনেও না কেনো।
-আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।
-তাহলে কাকে করবে…?
-সেটা আপনাকে বলবো কেনো কাকে করবো । এখন হাত ছাড়েন ।
সায়ান হাতটা আরেকটু শক্ত করে ধরে কিছু বলবে তার আগেই রিফাত আর নিশি রুমের দরজা খোলে বের হয়। দরজা খোলে সায়ান আর নুশাকে এক সাথে দেখে অনেকটাই অবাক হয় নিশি আর রিফাত। রিফাত একবার সায়ানের দিকে আরেকবার নুশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-তোমরা এখানে,,!
নুশা কি বলবে বুঝতে পারছে না , সব কিছু এই সায়ান্নার জন্য হইছে এভাবে হাত না ধরলে সেই কখন চলে যেতো তাদের কথা শুনে । এখন কি হবে বোন আর বোনের হবু জামাইের সামনে ছি ছি কি লজ্জা, ভাবতেও লজ্জা লাগছে আপু আর রিফাত ভাই হযতো বুঝতে পেরেছে তাদের কথা শুনতে এসেছি । এসব ভাবনার মাঝেই সায়ান ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলো,
-সালা তুই আবার তুমি করে বলা কবে থেকে শুরু করলি।
সায়ান নুশার হাত ছাড়তেই নুশা কোনোরকম তাড়াতাড়ি হেঁটে চলে গেলো । সায়ানের এমন কথা শুনে রিফাত বলে উঠলো,
-তুই আমার কোন বোনের জামাইরে যে আমারে তুই শালা বললি। আর আমি কোন দুঃখে তরে তুমি কইরা বলতে যাবো আমি তো নুশাকে বলছিলাম।
-আমি তোর একমাত্র শালিকার হবু জামাই বুঝলি এখন নিচে ড্রইং রুমে চল বলে হাঁটতে লাগলো সায়ান। পিছন থেকে নিশি বলে উঠলো,
-সায়ান ভাইয়া,,, ।
নুশার ডাক শুনে পিছনে ফিরে ইশারায় বুঝালো কি….।
নিশি সায়ানের সামনে এসে বললো,
– সরি আর ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার জন্যই বাবা রাজি হয়েছে এই বিয়েতে আর মেনে নিয়েছে।
সায়ান নিশির কথা শুনে মুচকে একটা হাসি দিয়ে নিশির মাথায় হাত রেখে বলে উঠলো ভাইকে সরিও বলতে হয়না ধন্যবাদও বলতে হয়না কারন আমার বোন তো তুই আর ভাইতো বোনের জন্য সব কিছুই করতে পারে তাই না।

-আচ্ছা ভাইয়া একটা কথা বলবো,
-,হুম।
– নুশাকে তুমি করে আর আমাকে তুই করে বলার কারন কি..?
-তুই আমার বোন আর নুশা তো আমার বোন না আমি নুশারে কখনো বোনের নজরে দেখিনি। কেনো যেনো আমার নুশাকে বোনের দৃষ্টিতে দেখতে ভালো লাগে না। আচ্ছা এখন এসব বাদ দে এখন আয় দেখি তোর বাবা আর রিফাতের বাবা কবে বিয়ের তারিখ ঠিক করছে বলে চলে আসলো আর পিছনে রিফাত আর নিশিও আসলো । এখানে আসার পর নিশাত বলে উঠলো ফাইনালি আগামী বিশ তারিখে বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে । আহ কতোদিন কোনো বিয়ের দাওয়াত খাইনা । নিশাতের বলতে দেরি সায়ানের আম্মুর নিশাতের কানে ধরতে দেরি না । কানটা ধরে সায়ানের আম্মু বলে উঠলো,
-কিহ এতো বড় মিথ্যা কথা কয়দিন আগে না মাএ কোন বন্ধুর বোনের বিয়েতে যাওয়ার জন্য আমাকে বললি, মামি তুমি মাকে রাজি করিয়ে দশ হাজার টাকা তোর হাতে দিতে ।
নিশাত কান থেকে হাত সরিয়ে নিতে নিতে বললো,
-আরে মামি নিজের বোনের বিয়ে আর বন্ধুর বোনের বিয়ে কি এক নাকি।
– তাহলে বললি কেনো কতোদিন ধরে বিয়ের দাওয়াত খাইনা ।
-বন্ধুর বোনের বিয়ে তো তাই ভুলে গেছিলাম এখন তো কানটা ছাড়ো যেভাবে ধরছো কানতো খুলে তোমার হাতে চলে আসবে তখন তো আমার আর বিয়ে হবে না।

চলবে,,