#তোমার_আসক্তিতে_আমি_আসক্ত
#নুশা_আহমেদ
#পর্ব_১৫
রিফাতদের বাড়ি থেকে আসার পর আর দেখা হয়নি সায়ান আর নুশার । নুশা সায়ানের সাথে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে চাইলেও পারছিলো না কারন মোবাইলটা বারবার বন্ধ বলেছে । ঐদিন ইমা গিয়ে ছাদ থেকে নিচে নামিয়ে আনে নুশাকে , নুশা নিচে এসে আর সায়ান কে দেখতে পাইনি ইমাকে জিজ্ঞেস করায় ইমা বলে কোথা থেকে তাড়াহুড়ো করে হেটে ইমার সামনে দাড়িয়ে শুধু বলেছিলো নুশা ছাদে আছে তার কাছে যাও আর নুশাকে নিচে নিয়ে আসো। ইমা আচ্ছা বলে সায়ান কে বলে উঠলো আপনি কি কোথাও যাচ্ছেন ভাইয়া । কিন্তু সায়ান ইমার কোনো কথার উওর না দিয়েই সামনের দিকে হেটে চলে গেলো আর ইমা আবালের মতো তাকিয়ে রইলো তার সাথে দাঁড়িয়ে থাকা নিশাত এতোক্ষণে সায়ানের পিছু পিছু ছুটতে লাগলো কিন্তু সায়ান রাস্তায় কাছে এসেই গাড়িতে উঠে গেলো পিছন পিছন নিশাত অনেক ডাকাডাকি করেও সায়ান কে তার দিকে ফেরাতে পারে নি। তারপর সন্ধ্যা সময় সবাই বাড়িতে চলে আসলে নিশি সকলকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো ,
-সায়ান ভাইয়া কই তাকে তো দেখছি না।
তখন সায়ানের মা সবাই কে জানায় সায়ান এখন গাজীপুর আছে। কি যেনো আর্জেন্ট কাজ পরেছে হটাৎ করে তাই কাউকে না জানিয়েই চলে গেছে ঐখানে গিয়ে ফোন করে তাকে জানিয়ে দিয়েছে যাতে চিন্তা না করে।
সায়ানের এমন হটাৎ করে যাওয়ার কারন কেউ বুঝতে না পারলেও নুশা ঠিকই বুঝতে পারছে। তার জন্যই সায়ান চলে গেছে আসলেই নুশা একটা বোকা মেয়ে জ্ঞান বুদ্ধি কম তার তাই তো এতো কাছে থেকেও বুঝতে পারলো না তার সায়ান ভাইয়া যে তাকে এতো ভালো বাসে।
আজ সবার দাওয়াত সায়ানদের বাড়িতে । রিফাত নতুন জামাই সেই সুবাদে সবার দাওয়াত । নুশা অনেকদিন পর যাচ্ছে সায়ানদের বাড়িতে । সায়ানদের বাড়িতে তেমন মানুষ না থাকায় নুশা তেমন একটা যায় না। দাওয়াত দিলেও যায়না মা বাবা নিশি নিশাত গেলেও নুশা যেতো না৷ তার একটা কারন সায়ান ভাই তখন তো সায়ান ভাইকে নুশা দেখতেই পারতো না । তাই এবারের দাওয়াতেও কেউ নুশাকে যাওয়ার জন্য কেউ একবারও বললো না তারা নিজেরা নিজেদের মতো করে রেডি হতে লাগলো আর নুশা ছোফায় বসে তাদের কার্যকলাপ দেখতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো প্রত্যেকবার যায়না বলে কি সে এবারও যাবে না
একটা বার বললে কি হয় মুখ কি ক্ষয় হয়ে যাবে। নুশার ভাবনার মাঝেই রিফাত তার পাশে এসে বললো,
-আরে নুশা তুমি চুপচাপ বসে আছো যে৷ রেডি হওনা যাবে না নাকি।
-আসলে ভাইয়,,,,
আর কিছু বলার আগেই নিশাত বলে উঠলো,
-একে বলে কোনো লাভ নাই রিফাত ব্রো।
রিফাত নুশার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-কেনো,,,?
– নুশাকে বলে লাভ নাই কারন নুশা যায় না ।
-এমা কেনো..!
নুশা এবার নিশাতের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো,
– আগে যাইনি বলে যে আর কখনো যাবো না এমন তো কথা কোনো দিনই বলিনি। তোমরা আমাকে একটা বার বলছো রেডি হতে যে বলো আমি যাবো না৷। একবার বলেই দেখতে যাই নাকি না যাই।
“শুধু শুধু মুখ নষ্ট করে কি লাভ আমরা সকলেই জানা আছে তুই যে যাবি না ।
নিশি তাদের কাছে আসতে আসতে বলে উঠলো কথাটা আর নুশা নিমির দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো আমি যাবো এটা বলে সোফা ছেড়ে রুমের দিকে চলে গেলো আর নিশি রিফাতের পাশে বসে মুখ হা করে বলে উঠলো,
-কিরে ভাই ! ভুতের মুখে দি রাম রাম । বলে কি এসব যে ব্যাক্তি সায়ান ভাইয়ার এসএসসি পরিক্ষার ভালো রেজাল্ট পাওয়ার পর সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে তখন যে গেছে তার পর আর কোনো দিন জোর করেও কেউ নিতে পারে নাই আর আজ নিজ ইচ্ছেয় বলছে সে যাবে
নিশাত ও নুশার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো ,
-আমি অতো তাই দেখছি আপু।
দুই ভাই বোনের এমন কান্ড দেখে রিফাত হাসতে বলে উঠলো ,
-এখনই এতোটা অবাক হলে চলবে না। সামনে আরো অবাক হওয়ার জিনিস আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
রিফাতের কথা শুনে দুই ভাই বোন এবার অবাক হয়ে রিফাতের দিকে তাকিয়ে এক সাথে বলে উঠলো ,
-মানেহ,,,!!
রিফাত মুখে হালকা হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
– বলা বারণ। আর এখন বললে পরে মজা পাবা না শুধু দেখতে থাকো দুই চোখ দিয়ে আমি আছি তোমাদের সাথে আছি কিছু কিছু আপডেট দেওয়ার জন্য ।
নুশা আজ তার খুব পছন্দের থ্রী-পিছ পরেছে রংটা নেবি ব্লু ফর্সা শরীরে এই রংটা বেশ মানায়। আর নুশার পছন্দ রং হলো ব্লাক হোয়াইট আর নেবি ব্লু। নুশাকে দেখে তারিন বেগম নুশার আব্বুও অবাক । নুশা যে যাবে সেটা কেউ কল্পনাই করেনি ।
অবশেষে দুপুরের দিকে সবাই সায়ান দের বাড়িতে পৌছায়। সেখানেও নুশাকে দেখে সায়ানের আব্বুতো তারিন বেগমকে বলেই উঠলো,
– তারিন নুশা মামুনি কি ভুল করে এই বাড়িতে চলে আসছে নাকি ।
নিজের মামার এমন কথা শুনে নুশা বলে উঠলো,
-কেনো মামা তুমি কি খুশি হওনি আমার আসাতে । যদি খুশি না হও তাহলে চলে যাই কি বলো।
সায়ানের আব্বু এবার কিছুটা এগিয়ে নুশার কাছে গিয়ে নুশার মাথায় হাত রেখে বলে উঠলো,
-দেখো বোকা মেয়ে কি বলে। আমার নুশা মামুনি কতোদিন পর আমাদের বাড়িতে আসছে আর আমি খুশি হবো না তা কি কখনো হয় নাকি। তুমি তো আমাদের বাড়িতে আসাই ভুলে গেছো। আমরা যখন তোমাদের বাড়িতে গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসতে চাইতাম আর তুমি পড়াশোনা বান্ধবী স্কুল কতই না বাহানা দিতে সব ভুলে গেছো নাকি । আর এখন হটাৎ করে আসলে তাই তো এভাবে বলেছি রাগ করো না ।
সায়ানের কোনো বোন নাই না আছে খালাতো বোন না আছে নিজের বোন শুধু ফুফাতো বোন আছে দুইটা । তাই সায়ানের আব্বু আম্মু সবসময় চাইতো নুশাকে নিজের মেয়ে করে নেওয়ার কিন্তু সায়ান সব সময় বলতো সায়ানের বোন করতে হলে নিশিকে বোন বানাতে নুশাকে না। আর নুশার আব্বু আম্মুও নিজের মেয়েদের কে অন্য দের হাতে দিতে তেমন একটা রাজি ছিলো না কারন তাদের সামর্থ ছিলো সবাইকে লালন পালন করার । তখন থেকে সায়ানের আব্বু আম্মু নিশি আর নুশাকে নিজের মেয়ের মতোই আদর স্নেহ করেন। সায়ানের আম্মু এসে তো নুশাকে জরিয়ে ধরে বলে উঠলো ,,
-অবশেষে আমার মা টা আমার বাড়িতে আসছে।
“বাহ আমাকে তো কারোই চোখে পরে না সবাই শুধু নুশা মামুনি আর নুশা মা সেই কখন থেকেই শুরু করেছে তাদের যে নুশা ছাড়া আরেকটা মেয়ে আছে সেটা ভুলেই গেছে৷ বলিকি বিয়ে হওয়ার পর কি আমি এতোটাই পর হয়ে গেছি তোমাদের কাছে ।
সবাই কে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে উঠলো নিশি । নিশির কথা শেষ হতেই নিশাত বলে উঠলো ,,
” আমি তো বানের জলে ভেসে ভেসে আইছি । তাই আমার কোনো দামই নাই এখানে । কপালে হাত দিয়ে দুইটা বারি দিয়ে বলে উঠলো সবই কপাল আজ যদি ছেলে না হয়ে মেয়ে হতাম তাহলে কতোই না ভালো হতো অন্তত সবার মামুনি মা আরো কতো কিছুই শুনতে পারতাম ।
ভাই বোনের কথা শুনে মামা আর মামির কাছে অভিযোগ সূরে বলে উঠলো নুশা,,
-দেখছো মামা দেখছো মামি,, আমার ভাইটা আর বোনটা কি হিংসুটে । আমার সাথে নিজের ছোট বোনের সাথে হিংসে করে৷। বলিকি আপু আর ভাই তোমরা তো পৃথিবীতে আগে আগে আইছো আর ভালোবাসা তো তখন আমার থেকে বেশিই পাইছো ।
তিন ভাই বোনের এমন মিষ্টি ঝগড়াঝাটি দেখে সবাই হাসতে হাসতে শেষ । তারিন বেগম হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
-ভাবি সায়ান কি আর বাড়িতে আসে নাই নাকি এখনো গাজীপুরেই আছে ছেলেটাকে গতকাল ফোন দিয়েছিলাম মোবাইল বন্ধ বলেছে।
-না সায়ান বাড়িতে গতকাল রাএেই চলে আইছে শরীর টা বেশি একটা ভালো না জ্বর ঠান্ডা সব এক সাথে আক্রমণ করছে। সায়ানকে তো সহজে কোনো জ্বর ঠান্ডা কাবু করতে পারে না এবার ঠিকই করেছে কথা বার্তা কম বলছে আর খাওয়া দাওয়াও কম করছে ।
“সায়ান ভাইয়ের সাথে আসো করে আসি৷ চলো রিফাত ভাইয়া ”
কথাটি বলে নিশাত রিফাতের হাত ধরে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো আর তাদের পিছু পিছু নিশিও যেতে লাগলো । নুশাও তাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,
-সায়ান ভাইয়ের সাথে আমিও দেখা করে আসি সবাই যেহেতু গিয়েছে ।
___________
একে একে সবাই সায়ানের রুমে ঢুকলো। রুমের দরজাটা হালকা করে ভিড়ানো ছিলো তাই ঢুকতে কোনো সমস্যা হয়নি৷ খুব সহজেই রুমে চলে এসেছে সবাই। রুমে এসে দেখে রুমে কোনো সায়ানের দেখাই নাই৷ তাই রিফাত আর নিশাতের পিছন থেকে নিশি বলে উঠলো,
-সায়ান ভাই কই রুমে তো কেউ নাই।
তখনই ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ সবার কানেই শ্রবন হয়েছে তাই সবাই নিশাত রিফাত আর নিশি একে একে রুম থেকে বাহির হয়ে ছাঁদের দিকে চলে গেলো ।
নুশা রুমের বাহিরে দাড়িয়ে আছে। প্রায় অনেক বছর পর এই রুমটাতে সে আসছে । একটু দেরি করে আসাতে নুশা নিশিদের খেয়াল করেনি তাই নুশা ভাবছে নিশিরা হয়তো রুমের ভেতরই আছে তাই দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে তো হা,,, একি দেখছে সে চোখ দুটি বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ।
অন্য দিকে সায়ান মাএ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসেছে৷ পরনে শুধু একটা টাওয়াল পেঁচানো তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতেছে হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে পিছন ফিরে তাকিয়ে নুশাকে দেখে তো সে অবাক। নুশাদের বাড়ির সবাই যে আজ আমন্ত্রিত তাই সবাই আসতেই পারে কিন্তু নুশা তার সামনে তার দরজার সামনে দেখে সায়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না সে অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে নুশাকে তো কতো জোর করেও কেউ আনতে পারেনি কিন্তু সেই নুশা আজ হঠাৎ করে আসলে যে কেউই আশ্চর্য হবে ।
সায়ানকে পিছন ফিরে তাকাতে দেখে তাড়াতাড়ি ঘুরে যেই এক পা সামনে বাড়ালো তখনই পিছন থেকে সায়ান বলে উঠলো ,
-এক মিনিট জ্বরের ঘোরে কি আমি তোমাকে ভুল দেখতেছি ব্লাক ডায়মন্ড ।
নুশা সায়ানের কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছে না৷ দাঁড়িয়ে থেকেই মাথা দুলিয়ে সায়ানকে বুঝালো যে না সে কোনো গোর টোর দেখছে না যা দেখছে তা সত্য।
নুশার ইশারা বুঝতে পেরে সায়ান বলে উঠলো ,
– তাহলে বাহিরে কেনো ভেতরে এসো।
নুশা এবার সায়ানের উল্টো হয়েই বলে উঠলো,
-আগে ড্রেস চেঞ্জ করেন।
-পিছনে তো তাকাও আগে।
-না আপনি আগে ড্রেস চেন্জ করেন।
-যা দেখার তা তো দেখেই ফেলছো আর চেঞ্জ করে কি লাভ ।
-তাহলে আপনি থাকেন আমি গেলাম। বলে একপা যেই বাড়াবে সাথে সাথে সায়ান নুশার হাত ধরে টেনে রুমে এনে দরজা আটকিয়ে দিলো আর নুশাকে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে উঠলো ,,,,
#চলবে,,,