তোমার আসক্তিতে আমি আসক্ত পর্ব-১৮

0
299

#তোমার_আসক্তিতে_আমি_আসক্ত
#নুশা_আহমেদ
#পর্ব_১৮

কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে সকালটা, অন্যদিনের তুলনায় আজকের কুয়াশাটা যেনো একটু বেশিই পরেছে ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে এমন কুয়াশা থাকা অস্বাভাবিকের কিছু নাই স্বাভাবিক । পৃথিবীর বুকে যেমন কুয়াশার জন্য আগে পিছে কিছুই দেখা যাচ্ছে না ঠিক তেমনি সায়ানের চোখেও নুশার হঠাৎ কিডন্যাপ হওয়ার ব্যাপারটাতে সব কিছু ধোঁয়াশা লাগছে । কোনো দিক দিয়েই মেলাতে পারছে না তার হিসেব কে হতে পারে সেই ব্যক্তিটি যে নুশাকে তার কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য কিডন্যাপ করেছে। সারা রাত পেরিয়ে এখন ভোর পাঁচটা বাজে ‘ সায়ান , সায়ানের আব্বু সাজ্জাত চৌধুরী কারো চোখেই ঘুম নেই । সায়ান তো নুশাকে যখন সারা বাড়ি খুঁজে পাচ্ছে না তখনই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু সাজ্জাত চৌধুরীর আটকানোর জন্য বের হতে পারেনি। সাজ্জাত চৌধুরী সায়ানকে সকাল হওয়ার অপেক্ষা করতে বলে সায়ানকে নিজের রুমে পাঠিয়ে দেন আর উনিও নিজের রুমে চলে আসেন । কিন্তু দুই জন একজনের চোখেও ঘুম নাই । দুইজন ভিন্ন চিন্তায় বিভোর একজন তাকে ছাড়া বাঁচবে কি করে আরেকজন তার ফেমেলীতে কি জবাব দিবে।
সায়ান যখন বাবার কথা মতো রুমে এসে বিছানায় বসে তখন বিছানার উপর একটা কাগজ দেখতে পায়। সাদা কাগজটা খুব সুন্দর করেই ভাজ করা । সায়ান বিছানা থেকে কাগজটা হাতে নিয়ে পরতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ লাগিয়ে দুই তিনবার পরলো লেখা গুলো , লেখা গুলো কেনো জানি সায়ানের খুব চেনা চেনা লাগছে কোথাও একটা এই লেখা গুলো দেখেছে কিন্তু খেয়াল করতে পারছে না কোথায় দেখেছে। কাগজে লেখা গুলো ছিলো সায়ানকে নুশার থেকে দূরে থাকার হুমকি পএ। ফজরের আজান পড়তেই ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে ওজু করে পকেটে মোবাইল মানি বেগ নিয়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে সায়ান উদ্দেশ্য তার এখন মসজিদে গিয়ে নামাজটা আদায় করে বের হয়ে যাবে তার অনুমান করা ঠিকানায় যেটাকে সায়ান সন্দেহ করছে।

________

চোখ কচলিয়ে চোখের ঘুমটা কমাতে চাচ্ছে কিন্তু কোনোভাবেই যেনো চোখটা ভালো করে খুলতে পারছে না । চোখ গুলো এতো ভারি হয়ে আছে যেনো চোখের পাপড়ি গুলোতে পাথর দিয়ে রাখা আছে । বহু কষ্টে চোখ টা খোলে আশ পাশটা ভালো করে দেখতে লাগলো, জায়গাটা বেশ পরিচিত পরিচিত লাগছে । আগে যতোবার কিডন্যাপ হয়েছে ততবার চোখ মেলে অপরিচিত আলিশান রুম মাথার উপর সিলিং পাখা নিজেকে ব্ল্যাংকেট দিয়ে ডাকা দেখেছে । কিন্তু এবার কিডন্যাপের পর সব কিছু অন্য রকম আগের বারের থেকে সম্পূর্ণভাবে উল্টোটা মাথার উপরে টিনের চাল আর লাকড়ি কোনো সিলিং পাখা টাখা কিছুই নেই, গরম হলে হয়তো এতোক্ষণে নুশা সিন্ধ হয়ে যেতো । আগেরবার নরম তুলতুলে বিছানা হলেও এবার অনুভব করে শক্ত কোনো কিছুর উপর শুয়ে আছে , তাই ঘাড়টা ঘুরিয়ে নিজের শুয়ে থাকা জায়গাটা দেখতে গেলে অনেকটাই আশ্চর্য হয়ে যায়। কারন এটা তো নিশি আপুর ছেড়া কাঁথা যেটা আরো একবছর আগে বাড়ির পিছনে পুরান ঘরে রাখা হয়েছে । নুশার আর বুঝতে বাকি নেই সে কোথায় আছে। প্রথমে সে কোথায় আছে সেটা বুঝতে না পারলেও এখন ঠিকই বুঝতে পারছে। এই ঘরটাতে নুশা তেমন একটা আসে না , নিশাত আর তার মা তারিন বেগমই বেশির ভাগ এই ঘরটায় আসে তাই তো নুশা প্রথমে চিনতে পারেনি ।
নুশা আস্তে আস্তে উঠে বসে আর এই ঘর থেকে বের হতে দরজা ধাক্কা দিতে থাকে কিন্তু বাহির থেকে দরজা বন্ধ করা আর দরজার ঠিক পাশেই একটা বাটন মোবাইল রাখা আছে । তাই নিচের দিকে ঝুকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে বাটনে চাপ দিতেই মোবাইলের স্কিনে একটা মেসেজ ঝলঝল করতে লাগলো, মেসেজটা এমন ছিলো,,,

“সায়ানের নুশা রানী নও তুমি, তুমি তো শুধু আমার নুশাপরী”

নুশা মেসেজটা পরে মুখ দিয়ে সাথে সাথে উচ্চারণ করে উঠলো,

এই আবালটার আবার কোথা থেকে আমদানী হলো নতুন করে , আরে ভাই একটা নামেরে যদি একেকজন একেক সময় একেক নামে ডাকে তাহলে তো একজনেরই সব নাম হয়ে যাবে। আর এক জনের এতো গুলো নাম থাকলে বাকী মানুষ গুলো কি নাম ছাড়া থাকবে। আমার ভাই বলে নুশা বুড়ি আমার সায়ান ভাই বলে নুশা রানী এখন আবার এই আবাল বলে সায়ানের নুশা রানী নও তুমি, তুমি তো আমার নুশা পরী । আরে শোন ভাই আমার আর কোনো পরী টরী নামের প্রয়োজন নাই নুশা বুড়ি আর নুশা রানীই যথেষ্ট ।

নুশা দরজা হাজার বার ধাক্কা দিলেও কেউ জানতে পারবে না নুশা এদিকটায় আছে । কারন এই ঘরটা একদম ব্যকসাইটে এদিকে ধরকার না পরলে তেমন কেউ আসে না। তাই গলা ফাটিয়ে ডাকলেও কেউ শুনবে না। নুশা ভাবতে থাকে ‘আবালটা আর যাই করুক মোবাইলটা দিয়ে ভালোই করেছে এখন তাড়াতাড়ি কাউকে ফোন দেই প্রথমে নিশাত ভাইয়ের নাম্বার ট্ মোবাইলে উঠিয়ে ডায়ালে দিতেই একটা মিষ্টি মধুর কন্ঠে একটা মহিলা ইংরেজিতে কিছুক্ষণ বকবক করে ফোনটা কেটে দিলো। নুশা এবার বিরবির করে বলে উঠলো,
-আবাল কি আর শুধু শুধু বলি কিডন্যাপারকে মোবাইল দিছোত ভালো কথা মোবাইলে যে টাকা নাই সেটা খেয়াল করবি না৷ অযথাই মোবাইল টা দিয়ে গেলি । এখন আমি কিভাবে এখান থেকে বের হবো, প্রচুর খিদে পেয়েছে গতকাল দুপুরে আমার পেটে খাবার গেছে আর যাই নি।
সেখানে শুয়ে ছিলো ছিড়া কাঁথায় সেই জায়গাতেই আবার বসে পরলো নুশা, কি করে বের হবে এখান থেকে ভাবতে লাগলো, হঠাৎ করেই তার মাথায় একটা কথা মনে পড়ে যায় স্কুলের ইমা আর নুশার ক্লাস এইটে একটা বান্ধবী ছিলো নাম ছিলো তানিশা , এদিকে নুশা আর ইমার কোনো বয়ফেন্ড না থাকলেও তানিশার বয়ফেন্ড ছিলো ঐস্কুলেরই দশম শ্রেণির তখন তানিশা মাঝে মাঝে সেই ছেলেটিকে রিকোয়েস্ট কল দিতো। নুশা একদিন লিখে এনেছিলো কিভাবে রিকোয়েস্ট কল দিতে হয় সেটাই এখন টাই করতে হবে কারন এছাড়া আর কোনো উপায়ও নাই এখান থেকে বের হওয়ার । মোবাইলে কিভাবে ইমারজেন্সি বেলেন্স আনতে হয় সেটাও জানা নাই, তাই একে একে সবার মোবাইলে রিকোয়েস্ট কল দিলো যাদের নাম্বার মুখস্থ। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আর কি একজনও ফোনটা বেক করলো না। অবশেষে বাধ্য হয়ে সবার শেষে সায়ানের মোবাইলে ফোন দিলো, সায়ানের মোবাইল নাম্বারটা নিশি আপুর বাসা থেকে আসার পর অনেকবার ফোন দিতে দিতে মুখস্ত হয়ে গেছে।

এইদিকে সায়ান এখন একজনের বাড়ির সামনে এসে গাড়িটা থামিয়ে যেই গেট দিয়ে বের হবে ওমনি পকেটে মোবাইল টা বাজতে লাগলো তাই তাড়াতাড়ি পকেট থেকে বের করে অবাক হয়ে যায় নাম্বার টা দেখে আর ভাবতে থাকে এটা কিভাবে সম্ভব । ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে গেলো সাথে সাথে সায়ান পয়েন্টে আরেক পকেট থেকে নুশার মোবাইলটা বের করে দেখে নুশার মোবাইলটা ঠিক জায়গাতে আছে কিন্তু মোবাইলে সিম নেই তাই আবার সাথে সাথে ঐ নাম্বারে ফোন দিলো,,,

সায়ানেরও কোনো রেসপন্স না পেয়ে আশাহত হয়ে বসে রইলো । এখন খুব কান্না পাচ্ছে তার সাথে ভয়ও হচ্ছে কিভাবে এখান থেকে বের হবে সে। হাত দিয়ে দুই হাটু ধরে মাথাটা হাঁটুর কাছে রেখে কাঁদতে লাগলো তখনই অন্ধকারে আশার আলো হয়ে হাতে থাকা মোবাইলটা কাঁপতে লাগলো। সাথে সাথে মাথাটা উচু করে মোবাইলে তাকিয়ে দেখলো সায়ানের নাম্বার থেকে ফোন আসছে । নাম্বারটা দেখে ডান হাতের পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে মুচকি একটা হাসি দিয়ে ফোন টা রিসিভ করে আবার কান্না কন্ঠে বলে উঠলো ,

-সায়ান ভাইয়া।

নুশার এমন কন্ঠ শুনে সায়ানেরর তো যায় যায় অবস্থা, নুশার কোনো বিপদ হলো না তো এটাই ভেবে পাচ্ছে না সায়ান । নুশার কথা শেষ হতেই সায়ন বলে উঠলো,

-নুশা রাণী, তুমি কোথায় কান্না না করে বলো।
-ভাইয়া আমি নিজের বাড়িতেই আছি।
-মানেহ, তাহলে কান্না করছো কেনো ..! কোনো সমস্যা বাড়ির সবাই ঠিক আছে তো! আমি এখনি আসতেছি । কথা বলতে বলতে সায়ান গাড়ি তে উঠে বসলো আর গাড়িটা ঘুড়িয়ে নুশাদের বাড়ির দবকে রওনা দিলে কানের কাছে এখনোও ফোনটা রাখা আছে । সায়ানের কথা শুনে ঐদিক থেকে নুশা বলে উঠলো ,

– না না আমি বাড়িতে আছি ঠিকই কিন্তু আমি আমাদের ঘরের পিছনে যে পুকুরের পাশে টিনের একটা ঘর সেই ঘরে আছি বাহির থেকে বন্ধ করা তাই বের হতে পারছি না। আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি আসেন ভাইয়া আমার খুব ভয় করছে আর প্রচুর ক্ষুধাও লাগছে। আমি খুবই ক্ষুধার্ত আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে আমি জ্ঞান হারাবো।

নুশার শেষের কথাটা শুনে সায়ানের এই সিরিয়াস মুডেও হাসি পাচ্ছে । তাই সায়ান হাজারো চিন্তা বাদ দিয়ে মুখের মধ্যে মুচকি হাসি তুলে বিরবির করে বলে উঠলো,

“কবে যে আমার এই পিচ্চি রাণীটা বড় হবে, আর আমার ঘরে সারাজীবনের জন্য আনবো ”

-কিছু বলছেন ভাইয়া ,,,?

ধ্যান থেকে বের হয়ে ধরফরিয়ে বলে উঠলো,

-হুম না না কিছু বলছিলাম না। তুমি আর কান্না কইরো না আমি এখনি আসতেছি ।
-হুম তাড়াতাড়ি আসেন আমার অনেক ক্ষুধা পেয়েছে ।

সায়ান মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো হুম আসছি আর দশ মিনিট।

#চলবে,,