অপেক্ষারা পর্ব-৫৩+৫৪+৫৫

0
472

#অপেক্ষারা
৫৩
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

দিনের শুরুটাই হলো অঘটন দিয়ে। আজকাল আবার নাজের আদা চায়ের প্রতি নেশা জন্মেছে। দিনের মধ্যে বেশ কয়েক কাপই খাওয়া পড়ে। সাধারণত জরিনাই আদা কুচি করে ফ্রিজে রেখে যায়। তবে আজ তা শেষ হয়ে যাওয়ায় নাজ নিজেই আদা কাটতে গেছে। তখনি ঘটে গেল অঘটনটা। নিজের অজান্তেই খুঁচ করে ছুরির ধারে আঙুল কেটে গেল।

বেশ গভীরভাবেই কেটেছে, গলগল করে রক্ত বেয়ে পড়ছে আঙুল বেয়ে। নাজ আঙ্গুলটা বেসিনের জলের প্রবাহের নিচে ধরলো। ব্যথায় সারা শরীর কাঁপছে তবুও বেচারি চুপ করে আছে। সায়েম ঘুমাচ্ছে। কোনোভাবেই যদি জেনে যায়, তাহলে এতটুকু কাটার জন্যেও হাসপাতালে নিয়ে ছুটবে।

আঙুলে ওষুধ লাগিয়ে নিজেই ব্যান্ডেজ বেঁধে নিলো নাজ। আদা চা আজ আর খাওয়া হলো না। সকালগুলো আজকাল কেমন যেন বিষন্নতায় ঘেরা। নাজের দিন শুরু হয় ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ। আশেপাশের বাড়ির সকলে তখন ঘুমিয়ে। মোড়ের চায়ের দোকানটা তখনো খোলে না, পেপারওয়ালাও বিরক্ত মুখে পেপার বিলি করতে বের হয় না।

সায়েম ওঠার আগ পর্যন্ত সময়টা কাটিয়ে দিতে পারলেই বাঁচে বেচারি। কাটা হাতে কোনমতে নাস্তা করে বইয়ের সামনে এসে বসলো নাজ। চতুর্থ সেমিস্টার শুরু হয়েছে কয়েকদিন হলো। এর মাঝে খুব একটা ক্লাসে যাওয়া হয়নি। বাড়িতে বসে যে খুব লেখাপড়া হচ্ছে তাও নয়। প্রায়ই নাজের শরীরটা খারাপ থাকে, পড়তে বসার মতো শক্তি বা ধৈর্য কোনোটাই সহসা হয়ে ওঠে না।

আজ যদিও শরীরটা একটু ভালো লাগছে। তবুও বইয়ের দুই তিনটা পাতা ওল্টাতেই মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো। এমনটা প্রায়ই হয়। মনে হয় যেন তাকে কেন্দ্র করে আশেপাশের সকল কিছু প্রচন্ড গতিতে ঘুরছে।
নাজ বই ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। মাথা ঝিমঝিম ভাবটা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

নাজ পা বাড়ালো শোবার ঘরের উদ্দেশ্যে। গত রাতে সায়েম বারবার করে বলেছিল সকাল সকাল তাকে ডেকে দিতে। আজ জাপান থেকে তার একদল ক্লাইন্ট আসছে। তাদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের ডিল ফাইনাল করার মিটিং। এজন্যেই সায়েমসহ অফিসের সকলের গত এক সপ্তাহ ধরে ব্যস্ততার সীমা নেই।

সায়েমের গায়ে হাত রেখে নাজ আলতো ধাক্কা দিয়ে বলল, “এই! ওঠো!”

এতটুকু ডাকায় যদিও সায়েমের ঘুমে কোনো ব্যাঘাত ঘটলো না। ঘুমের মধ্যেই সামান্য কেঁপে উঠে আবারও পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।

নাজ আরেকটু উঁচু গলায় বলল, “উঠে পড়ো সায়েম! তোমার মিটিং আছে না?”

এবার সায়েমের ঘুম ভাঙলো। তবুও ঘুমজড়ানো কণ্ঠে বলল, “কয়টা বাজে?”

“সাতটা।”

সায়েম ধড়মড় করে উঠে বসতে বসতে বলল, “ল্যাপটপটা অন করে শেষ মেইলটা ওপেন করে দাও না প্লিজ!”

“দিচ্ছি, তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো।”

সায়েম হাতমুখ ধুতে চলে গেলে নাজ বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে সায়েমের ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। ল্যাপটপের খুঁটিনাটি কাজ সায়েম তাকে অনেক আগেই শিখিয়েছে। তার মতে, একটা মানুষকে কেবল লেখাপড়ায় ভালো হলেই চলে না। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকতার স্বাদও গ্রহণ করতে হয়।

সায়েমের পাওয়া শেষ মেইলটা হলো তার অফিসের ডিসাইন বিভাগের এক কর্মচারীর। আজ ক্লাইন্টদের সামনে যে প্রেজেন্টেশন দেওয়া হবে, তা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সেই কর্মচারীকে। গত রাতে অবশ্য সেটা তৈরির সমস্ত নির্দেশনা সায়েম নিজেই দিয়ে এসেছিল।

প্রেজেন্টেশনের এক ঝলক দেখতেই রাগের প্রবল এক স্রোত বয়ে গেল সায়েমের শিরদাঁড়া বেয়ে। এক মুহূর্তও অপচয় না করে ফোনটা হাতে নিয়ে ফোন করলো প্রেজেন্টেশন তৈরিকারী ব্যক্তিকে।

অপরপ্রান্ত থেকে বিনয়ী এক পুরুষকণ্ঠ বলে উঠলো, “প্রেজেন্টেশন ভালো লেগেছে স্যার?”

সায়েম রাগী কিন্তু শান্ত গলায় বলল, “আপনার মনে হয় তারা জাপান থেকে এতদূর আসছে এই প্রেজেন্টেশন দেখার জন্যে?”

“কোথাও সমস্যা হয়েছে স্যার?”

“কোথায় সমস্যা হয়নি? জায়গায় জায়গায় অসংখ্য টাইপো, কোনো স্লাইডে টেক্সটের সাইজ বড় আবার কোনোটায় ছোট। আর বাগ্রাউন্ডে এমন বিশ্রী একটা সবুজ রঙ দিয়েছেন কেন? ইউ থিঙ্ক উই আর গনা গেট দ্যা ডিল বাই শোয়িং দিস?”

“স্যার আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আপনি আধ ঘন্টার মধ্যে সব ঠিক করে আপনাকে পাঠাচ্ছি।”

“চিন্তা না করে তো পারছি না। বারোটায় মিটিং আর আপনাদের কাজের ধরন দেখে মনে হচ্ছে হাতে অফুরন্ত সময়।”

ফোনে সায়েমের কথা শেষ হলেই নাজ ক্লান্ত গলায় বলল, “অফিসের সবাই তোমাকে খুব ভয় পায় তাই না?”

“হুঁ।”

“পাবেই তো। যেভাবে ধমকের ওপরে রাখো সবাইকে।”

সায়েম মুচকি হেসে বলল, “তুমিও তো ভয় পাও, পাও না?”

“মাঝে মধ্যে, সবসময় না।”

“নাজ?”

“উঁ?”

“তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?”

“কেমন?”

“কেমন যেন, ক্লান্ত।”

“একে তো ঘুম হয়নি, তার ওপরে আবার সেই তখন থেকে মাথাটা ঘুরছে।”

সায়েম উদ্বিগ্ন গলায় বলল, “সে কী এতক্ষণ আমাকে বলোনি কেন?”

“তুমি তো ব্যস্ত ছিলে?”

“ঘুম থেকে উঠেই তো ব্যস্ত ছিলে না, তখন বলতে পারতে!”

নাজ অসহায় গলায় বলল, “উফ! তোমার সঙ্গে কোনোদিনই আমি তর্কে পেরে উঠবো না।”

“বেশি খারাপ লাগছে নাজ?”

“কিছুটা বেশি।”

“দাঁড়াও, ডক্টরকে ফোন করি।”

নাজ ব্যস্ত স্বরে বলল, “মোটেও না। ডক্টরকে ফোন করলেই বলবে হসপিটালে চলে আসুন। তারপর একগাদা টেস্ট। আমার ওসব ভালো লাগে না। একটু রেস্ট নিই, তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”

সায়েম চিন্তিত গলায় বলল, “শিওর তুমি?”

“হুঁ। এখন তুমি গিয়ে রেডি হও, অফিসে আগেভাগে পৌঁছে সবাইকে ধমকাতে হবে তো!”

সায়েম অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যাওয়ার পরপরই শরীরটা আরও খারাপ হতে শুরু করলো। ক্রমেই হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। এই সকাল সকাল করার মতো কোনো কাজই খুঁজে পেল না নাজ। আগেকার সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর টিউশনিতে সময়টা কীভাবে যেন পার হয়ে যেত, অথচ আজকাল একেকটা দিনের দৈর্ঘ্য যেন কয়েকশ ঘণ্টা। তাও ভাগ্যিস আগামীকাল তার শ্বশুর-শাশুড়ি আর কনা ঢাকায় আসছে। সময়টা হয়তো এবার তাদের সঙ্গে আনন্দে কাটবে।

ছোট ছোট পা ফেলে নাজ চলে গেল ছাদে। বিল্ডিংয়ের কয়েকটা ফ্ল্যাটের মহিলারা দায়িত্ব নিয়ে সুন্দর করে ছাদটা সাজিয়েছেন। এক কোণে বিভিন্ন দেশি ফুলের গাছ আরেক কোণে চৌবাচ্চায় মাছের চাষ। উত্তর থেকে বয়ে আসা দমকা হাওয়ায় নাজের চুলগুলো ওড়াউড়ি খেলে। সবমিলিয়ে অদ্ভুত এক স্নিগ্ধতা মিশে আছে জায়গাটায়। এখানে সময় কাটাতে নাজের বেশ লাগে।

তবে সমস্যা একটাই। বিল্ডিংয়ের লিফট সাততলা পর্যন্তই। আর ছাদটা নয় তলায়। দুই তলা সিড়ি বেয়ে উঠতে হয়। এই সময়ে একা একা ছাদে আসতে সায়েমের কঠিন নিষেধ রয়েছে। তবুও সেই নিষেধ অমান্য করে নাজ চলে এলো।

পাশের বাড়ির মেয়ে ছন্দা ছাদে কাপড় মেলছে আর গুনগুন করে গান গাইছে।

নাজকে দেখতেই আন্তরিক গলায় বলে উঠলো, “আপু কেমন আছেন?”

নাজ স্বভাবসুলভ হেসে বলল, “এইতো চলছে। তোমার কী অবস্থা?”

“আমার অবস্থা ভালোই। বাবু কেমন আছে?”

“বাবুও ভালো আছে।”

“সেদিন ভাইয়াকে দেখলাম বাবুর জন্যে একগাদা খেলনা নিয়ে আসছে। আমার দেখে কী যে ভালো লাগলো!”

“সে তো ওর রোজকার পাগলামি।”

“এটাই তো ভালো আপু! আমি তো চাই যার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে, সেও আমার জন্যে পাগল হয়ে থাকবে। বাবা-মা বলেও দিয়েছি, আমার জন্যে একটা পাগল ছেলে খুঁজতে।”

“আঙ্কেল-আন্টি তোমার জন্যে ছেলে খুঁজছেন না-কি?”

“ওই আরকি…”

ছন্দা কথাটা আর শেষ করতে পারলো না। তার আগেই কানে ভেসে এলো মেঘের গর্জন। কী ভয়ঙ্কর সেই গর্জন, নাজের অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠার উপক্রম হলো।

ছন্দা আকাশ পানে এক নজর তাকিয়ে বলল, “বৃষ্টি নামবে না-কি আপু?”

নাজ অনিশ্চিত গলায় বলল, “তাই তো মনে হচ্ছে। চলো ফিরে যাই। এক ফোঁটা বৃষ্টির পানিও যদি মাথায় পড়ে, তাহলে আমার খবর আছে।”

ঘরে ফিরে আসতেই আরেকদফা মাথাটা ঘুরে উঠলো নাজের। আজ সকাল থেকে তার সঙ্গে এসব কী হচ্ছে? ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে দরজাটা বন্ধ করলো। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। কিন্তু কষ্টটা কোথায় হচ্ছে তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।

খুব বড় ভুল হয়ে গেছে। সকালে সায়েম যখন ডাক্তারকে ফোন করতে চেয়েছিল, তখন নিষেধ করা উচিত হয়নি। উফ! নিজের ভুলগুলো কেন যে মানুষ এত দেরিতে ধরতে পারে? এখন কী করবে নাজ? সায়েমকে ফোন করবে? না-কি একা একা হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করবে? কিন্তু সেটা তো অসম্ভব! যে মানুষটার সামান্য কয়েক পা হাঁটতেই প্রাণপণ কষ্ট হচ্ছে, সে আবার একা একা হাসপাতালে যাবে কী করে?

নাজ বসার ঘর থেকে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো। অমনি কী জানি কী হলো, নাজ ধপাস করে বসে পড়লো মেঝে। বেশ অনেকটা সময় একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেঝের দিকেই। তার মস্তিষ্ক ওই কয়েক মুহূর্তের জন্যে কোনপ্রকার ভাবনা-চিন্তা করার মতো অবস্থায় রইল না।

জাপানিজদের মুখের আদলটা এমন – এক নজর দেখলে বোঝা যায় না কখন তারা খুশি হচ্ছে আর কখন অখুশি। এদের ভেতরে ভেতরে কী চলছে বুঝতে হলে প্রায় কয়েক মিনিট চেহারার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে হবে। কিন্তু এভাবে কারও মুখের দিকে তাকিয়ে থাকাটা নিতান্তই অভদ্রতা। তার ওপরে আবার যে জাপানিজ কোম্পানিতে এতগুলো টাকা ইনভেস্ট করবে, তাদের সঙ্গে তো একটু বেশিই অভদ্রতা।

জাপানিজ ক্লাইন্টদের সঙ্গে গত দু ঘন্টা ধরে মিটিং চলছে। সায়েমদের কোম্পানিতে তারা বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক কিনা বোঝা যাচ্ছে না। অন্তত চেহারা দেখে তো একেবারেই না। মাল্টিমিডিয়া স্ক্রিনে কয়েকটা প্রজেক্টের প্রেজেন্টেশনের ভেসে উঠতেই রাগে থরথর করে কাঁপতে শুরু করলো সায়েম। সকালে নিজের ল্যাপটপে যে প্রেজেন্টেশন সে দেখেছিল হুবহু সেটাই প্রদর্শিত হচ্ছে স্ক্রিনে। কোথাও করা হয়নি কোনো সংশোধন।

হঠাৎ করে চলন্ত মিটিংয়ে কোনপ্রকার অনুমতি না নিয়েই ব্যস্ত ভঙ্গিতে মিটিং রুমে প্রবেশ করলো সায়েমের সেক্রেটারি রিয়াজুল। আরেকদফা রাগের প্রবল স্রোত বয়ে গেল সায়েমের শিরদাঁড়া বয়ে। এসবের কোনো মানে হয়? একজন প্রেজেন্টেশনের নামে বাচ্চাদের ম্যাগাজিন তৈরি করেছে, আরেকজন বিনা অনুমতিতে ঘরে চলে আসছে। আর এই ডিলটা তারা পাক কিংবা না পাক, এদের একটা কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

রিয়াজুল সায়েমের কাছে এসে নিচু স্বরে বলল, “স্যার একটা ইমারজেন্সি আছে।”

সায়েম তার ভ্রুযুগল সামান্য কুঁচকে বলল, “কী?”

রিয়াজুল একেবারে ফিসফিস করে বলল, “ভাবি ফোন করেছিল। আপনাকে ফোনে পাচ্ছে না, ইমারজেন্সিটা তারই।”

সায়েম ব্যস্ত ভঙ্গিতে পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখলো গত দশ মিনিটে নাজের কাছ থেকে ষোলোটা মিসড কল। সায়েমের ফোনটা সাইলেন্ট থাকায় খেয়াল করে ওঠেনি। কী সাংঘাতিক! মেয়েটার আবার কী হলো?

সায়েম ভদ্রভাবে সকলের উদ্দেশ্যে বলল, “ইউ গাইজ কন্টিনিউ, আই উইল বি রাইট ব্যাক।”

মিটিং রুমের সঙ্গেই একটা বিশাল বারান্দা রয়েছে। সেখানে গিয়েই চিন্তিত ভঙ্গিতে নাজের নম্বর ডায়াল করলো সায়েম। একটা রিং বাজতেই অপরপ্রান্ত থেকে ফোনটা রিসিভ করলো নাজ।

সায়েম উদ্বিগ্ন গলায় বলল, “নাজ? ঠিক আছো তুমি?”

ওপরপ্রান্ত থেকে কোনো কথা শোনা গেল না। শোনা গেল কেবল টেনে টেনে নিঃশ্বাস নেওয়ার শব্দ।

সায়েম চিন্তিত গলায় বলল, “নাজ? তুমি কাঁদছো?”

এবার নাজের কণ্ঠস্বর শোনা গেল। মেয়েটা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “তুমি বাসায় এসো, এক্ষনি এসো।”

তার এই কণ্ঠস্বর যেন সায়েমের বুকে গিয়ে কাঁটার মত বিধলো। নাজকে এমন বিপর্যস্ত শোনাচ্ছে কেন? ঠিক আছে তো মেয়েটা?

“নাজ? কী হয়েছে?”

নাজ যন্ত্রের মতো বলল, “তুমি বাসায় এসো।”

“ঠিক আছে, কিন্তু কী হয়ে…”

সায়েমকে থামিয়ে দিয়ে নাজ অসহায় গলায় বলল, “প্লিজ!”

আরও একবার সায়েমের বুকটা ধক করে উঠলো। নাজকে যতদূর চেনে, সে তো ভেঙে পড়ার মতো মেয়ে নয়। যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি শক্ত হাতে সামাল দেওয়া মেয়ে নাজ। তবে আজ এমন কী হলো? এভাবে ভেঙে পড়েছে কেন নাজ?

কীসের মিটিং, কীসের ডিল আর কীসের ভদ্রতা রক্ষা? সায়েম বারান্দা থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গেল নিচতলায়, গ্যারেজে নিজের গাড়ির কাছে। অধিক স্পিডে গাড়ি চালালে এখান থেকে বাড়ি ফিরতে খুব একটা সময় লাগার কথা না। মাঝখানে কেবল জ্যামে না পড়লেই হলো।

আচ্ছা নাজের কী শরীর খারাপ করেছে? নির্ঘাত তাই। সকাল বেলায়ও সায়েম থেকে এসেছিল মেয়েটা কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। বিরাট ভুল হয়ে গেছে, নাজকে ওই অবস্থায় একা ফেলে আসা উচিত হয়নি। এসব সাত-পাঁচ ভাবনার মাঝে গাড়ি কখন যে একটা দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খেল, সায়েম নিজেই বুঝতে পারলো না। গাড়ির সামনের দিকটা নিশ্চয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হোক গিয়ে! দ্রুত বেগে বাড়ি পৌঁছাতে পারলেই আপাতত সায়েম বাঁচে।

অল্প সময়ের মধ্যেই বাড়িতে পৌঁছে গেল সায়েম। কয়েকবার কলিংবেল চাপলো, অথচ ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। নাজ কোথায়? বাড়ির বাইরে গেছে না-কি ভেতরেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। একসঙ্গে কতগুলো চিন্তা যে তার মাথায় আসছে তার কোনোই হিসাব নেই। ভেতর থেকে দরজা খোলার অপেক্ষায় থাকলে দেরি হয়ে যাবে। সায়েমের কাছেও দরজার একটা চাবি আছে। সেটা দিয়েই দ্রুততার সঙ্গে দরজাটা খুলে ফেলল।

ওই তো! নাজকে দেখা যাচ্ছে। বসার ঘর আর ডাইনিং টেবিলের মাঝামাঝি মেঝেতে বসে আছে। কী আশ্চর্য! মেয়েটার কী কমন সেন্স নেই? এভাবে মেঝেতে বসে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে তো!

সায়েম ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে গেল নাজের দিকে। হঠাৎই, তার ব্যস্ত পা দুটো কিছুক্ষণের জন্যে থমকে দাঁড়িয়ে গেল। একটু আগ পর্যন্তও যে মস্তিকে চলছিল হাজার চিন্তার আনাগোনা, সেই মস্তিষ্ক আর কিছু ভাববার পর্যায়ে রইল না। সায়েম বারবার কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে, কিন্তু পেরে উঠছে না। নির্বাক ভঙ্গিতে চোখে প্রবল বিস্ময় আর অবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে রইল নাজের দিকে।

অবশেষে এক পা দু পা করে এগিয়ে গেল তার দিকে। এক স্রোত রক্তের মধ্যে বসে আছে নাজ। রক্তে চুপসে গিয়ে তার হলুদ রঙের কামিজটাও লাল বর্ণ ধারণ করেছে। নাজের চোখদুটো বয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রুর সঙ্গে মিশে কাজল লেপ্টে গেছে চোখের আশপাশটায়।

সায়েম হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়লো নাজের সামনে। বারবার বিশ্বাস করতে চাইছে, এসব কিছুই তার চোখের সামনে ঘটছে না। সবকিছুই তার কল্পনা, একটু পরেই এই দুঃসহ কল্পনার জগৎ থেকে বেরিয়ে যাবে তারা।

সায়েমের চোখদুটো সরাসরি গিয়ে পড়লো নাজের চোখের ওপরে। চোখদুটোর মধ্যে যে কী তীব্র এক ব্যাথা খেলে বেড়াচ্ছে, তা হয়তো কেবল সায়েমই বুঝতে পারবে।

নাজ থেমে থেমে প্রায় ফিসফিস করে বলল, “সব শেষ হয়ে গেল সায়েম।”

সায়েম আর দেরি না করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নাজকে। তার চোখভর্তি জল চলে এসেছে। যে করেই হোক সেই জল নাজকে দেখানো যাবে না। মেয়েটা আরও কয়েক হাজারগুণ বেশি ভেঙে পড়বে।

(চলবে)

#অপেক্ষারা
৫৪+৫৫
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

আচ্ছা, একটা মানুষ ঘুমের ঘোরে কী কী টের পায়? খুব উচ্চস্বরে আওয়াজ হলে হয়তো শুনতে পারে, তীব্র কোনো আলোর রশ্মি চোখের ওপর পড়লে দেখতে পারে। কোনপ্রকার গন্ধ কী পায়? পাওয়ার তো কথা নয়, তবে নাজ পাচ্ছে। কড়া ফিনাইলের গন্ধে ঘুমের জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো নাজ। অবশ্য ঘুমের জগৎ বলাটা ঠিক হচ্ছে না। মেয়েটার জ্ঞান হারিয়ে গেছিলো।

কখন জ্ঞান হারালো, কীভাবে হারালো নাজের মনে নেই। শুধু মনে আছে মেঝেতে প্রচুর রক্ত, রক্তে ভেজা হলুদ রঙের একটা কামিজ, চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া অবিরাম অশ্রুধারা আর সায়েমের ওই উদ্বিগ্ন মুখটা। ধীরে ধীরে চোখদুটো মেলে তাকালো নাজ। জ্ঞান হারানোর আগ অবদি পেটে তীব্র একটা সূচালো ধরনের যন্ত্রণা অনুভূত হচ্ছিল, এখন সেসব কিছুই হচ্ছে না।

নাজ নিজেকে আবিষ্কার করলো অচেনা এক জায়গায়। জায়গাটা অচেনা হলেও যে কেউ এক দেখায় বলে দিতে পারে, এটা হাসপাতাল। হাসপাতালের সেই চিরচেনা বেড, ঝকঝকে মেঝে, সাইড টেবিলে ফুলদানি, আকাশি রঙের পর্দা আর ওই ফিনাইলের গন্ধটা।

নাজের ডান হাতটায় স্লাইনের ক্যানোল। সেই হাতটা আলতো স্পর্শে ধরে রেখেছে সায়েম। ছেলেটার চোখদুটো বন্ধ, চেহারায় বিচিত্র এক ক্লান্তির ছায়া। নাজ একদৃষ্টিতে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইল তার দিকে। সায়েমকে তো আজ প্রথম দেখছে না। এর আগে অসংখ্যবার দেখছে, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেছে। তবে আজও যতবারই তাকে দেখে, অদ্ভুত এক মায়ায় পড়ে যায়। বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো। আচ্ছা, আজ মানুষটা খুব বেশি কষ্ট পেয়েছে? নির্ঘাত পেয়েছে। এটা কী করে পারলো নাজ? যে মানুষটা তাকে এত ভালোবাসলো, তাকে এমন করে কষ্ট দিলো নাজ?

নাজের মৃদু নড়াচড়ায় ঘুম ভেঙে সংবিৎ ফিরে পেল সায়েম। তড়িঘড়ি নাজের আরেকটু কাছে এগিয়ে গিয়ে দেখলো মেয়েটার ফ্যাকাশে দৃষ্টি।

সায়েম নাজের কপালে হাত রেখে কোমল স্বরে বলল, “নাজ? তুমি এখন উঠে গেলে কেন? কত রাত হয়েছে জানো?”

নাজ অস্পষ্ট স্বরে বলল, “শোনো…”

নাজকে থামিয়ে দিয়ে সায়েম বলল, “সব কথা কাল সকালে শুনবো। এখন ঘুমিয়ে পড়ো তো চুপ করে।”

নাজ মিনতির স্বরে বলল, “একটা কথা শুধু, আর কিচ্ছু জানতে চাইবো না। প্রমিজ।”

সায়েম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “কী?”

“ও কী সত্যিই আমাদের ছেড়ে চলে গেছে?”

কথাটার জবাব দিতে পারলো না সায়েম। কী জবাব দেবে? “আমাদের সন্তান তার মুখটা না দেখিয়েই আমাদের ওপর অভিমান করে চলে গেছে?” কোনো মেয়ে কী সহ্য করতে পারে নিজের সন্তানকে হারাবার যন্ত্রণা? যদিও তার জন্ম হয়নি, পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হওয়ার সুযোগ সে পায়নি। তাতে কী? সন্তানটা তো তাদেরই ছিল। অনাগত সন্তানের ওপর তীব্র মায়া তো ঠিকই জন্মেছিল।

সায়েমের কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে নাজ অসহায় গলায় বলল, “বলো না! চুপ করে থাকবে না।”

সায়েম কিছু ভেবে না পেয়ে বলল, “তোমার এখন রেস্ট দরকার নাজ।”

নাজের চোখভর্তি হয়ে গেল অবাধ্য অশ্রুগুলো দ্বারা। অশ্রুগুলো অবাধ্যই বটে। তাকে হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও আটকে রাখা যায় না। একদৃষ্টিতে অবিশ্বাসে তাকিয়ে রইল সায়েমের দিকে। কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইছে না বাস্তবটা।

প্রবল এক ঘোরে হারিয়ে গিয়ে নাজ অন্যরকম গলায় বলল, “সত্যিই চলে গেছে তাই না?”

সায়েম আর সহ্য করতে পারছে না। নিজেই এতটা ভেঙ্গে পড়েছে যে নাজকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা তার হারিয়ে গেছে। একে তো নিজের ভেতরকার প্রবল যন্ত্রণা তার ওপরে আবার নাজের অবাধ্য সেই অশ্রুগুলো – তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে সায়েমকে। সে ভেবে পায় না, যে পৃথিবীতে এত সুখের ছড়াছড়ি সেই পৃথিবীতে দুঃখ-যন্ত্রণার মতো অনুভূতির অস্তিত্বের প্রয়োজনীয়তা কী?

দুঃস্বপ্নের মতো রাতটা বহু কষ্টে কেটে গেল। নতুন করে সেই পুরাতন সূর্যটা আবারও ফিরে এলো আকাশের বুকে। সবকিছু তো আগের মতোই আছে। শুধু নাজ আগের মতো নেই।গতকাল ঠিক এই সময়েও তার মাঝে একটা প্রাণের অস্তিত্ব ছিল, একটু একটু করে বেড়ে উঠছিল। অথচ আজ?

আজ থেকে তার মাঝে কেউ বেড়ে উঠবে না, কারও জন্যে নাজ হাসিমুখে সকল কষ্ট সহ্য করবে না, কারও পৃথিবীতে আসার প্রতীক্ষায় থাকবে না। কী করে পারলো ও? কী করে পারলো নাজকে এতটা একা করে দিয়ে চলে যেতে?

সকাল সকালই ডাক্তার রেহানা এলেন নাজের চেকআপ করতে। যদিও চেকআপ করার মতো তেমন কিছুই নেই। যার জন্যে চেকআপ করা হতো, সেই তো নেই।

নাজের বিষাদমাখা মুখটা দেখে ডাক্তার রেহানা বললেন, “আপনি একদমই ভেঙে পড়বেন না মিসেস নাজনীন। মিসক্যারেজ খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়।”

নাজ ক্লান্ত গলায় বলল, “আমার সঙ্গেই কেন এমনটা হলো বলতে পারেন?”

ডাক্তার রেহানা কিছুটা হকচকিয়ে গিয়ে বললেন, “জি?”

“প্রায়ই শুনতে পাই পরিচিতজনদের সন্তান হচ্ছে। তার ঘর আলোয় ভরে যাচ্ছে। বাচ্চাটা আবার একটু বড় হয়ে ভাঙা ভাঙা শব্দে বাবা ডাকছে, মা ডাকছে। আমার সঙ্গে এরকম হলেই তো পারতো? আমি কী এমন দোষ করেছিলাম?”

কথা বলতে বলতেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো নাজ। এই যন্ত্রণা কী করে ভুলবে সে? বারবার মনে ভেসে উঠছে বাবুকে নিয়ে সাজানো হাজারটা স্বপ্ন। সেই স্বপ্নগুলো তো অপূর্ণই থেকে যাবে। আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে সায়েমের কথা চিন্তা করে। ছেলেটা তো বাবুর জন্যে সবথেকে বেশি খুশি ছিল, কে জানে হয়তো নাজের থেকেও একটু বেশি। তার স্বপ্নগুলো তো নিমিষেই ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। ভেতরে ভেতরে এত যন্ত্রণা সহ্য করে কেবল নাজের জন্যেই নিজেকে সামলে রেখেছে সায়েম?

ডাক্তার রেহানা উদ্বিগ্ন গলায় বললেন, “মিসেস নাজনীন, আপনি অনেক ভেঙে পড়ছেন। এভাবে ভেঙে পড়লে তো চলবে না। জীবন তো আর কারও জন্যে থেমে থাকে না। জীবনে হয়তো এর থেকেও বেশি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে আপনাকে। নিজেকে সামলে না রাখতে কঠিন পরিস্থিতিগুলো সামাল দেবেন কী করে?”

সত্যিই কি তাই? এর থেকে কঠিন পরিস্থিতি আর কী-ই বা হতে পারে? এর থেকেও ঘন কালো দুর্যোগের মেঘে জীবন নামের আকাশ কি ঢেকে যেতে পারে?

বিকেলের দিকে নাজকে রিলিজ করে দেওয়া হলো। ড্রাইভিং সিটের পাশে বসে আনমনে জানালার বাইরের দৃশ্য দেখছে নাজ। খোলা জানালা থাকে শো শো এক বাতাস এসে উড়িয়ে দিচ্ছে তার রুক্ষ চুলগুলো। চুল সরাবার কোনো প্রচেষ্টা অবশ্য তার মধ্যে দেখা গেল না।

ড্রাইভ করতে করতে আড়চোখে তার দিকে তাকালো সায়েম। প্রচন্ড বিপর্যস্ত বলে মনে হচ্ছে মেয়েটাকে। কিছু একটা বলে তাকে সান্ত্বনা দেওয়া উচিত। কিন্তু কী বলবে কিছুতেই মাথায় আসছে না সায়েমের। যে মানুষটা নিজেই ভীষণভাবে ভেঙে পড়ে, সে আবার অন্যকে সান্ত্বনা দেয় কী করে?

কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে দিলো কনা। তারা আজ সকলেই ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। হাসনা বেগম একরাশ স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন। বৌমার সেবা-যত্ন করবেন, এটা ওটা রেঁধে খাওয়াবেন। নাতির জন্ম হলে একেবারে তার মুখটা দেখে তবেই বাড়ি ফিরবেন। সেসব স্বপ্ন যে আর পূরণ হবার নয়, আজ সকাল সকালই জানতে পেরেছেন। সেই থেকে যে তার চোখদুটো বেয়ে অনর্গল অশ্রুধারা বেয়ে চলছে, এখনো থামবার ভাবলক্ষণ নেই।

দরজা খুলে কয়েক মুহূর্ত বিস্মিত দৃষ্টিতে নিজের ভাইয়া আর প্রিয় বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে রইল কনা। দুজনকে এমন দেখাচ্ছে কেন? মনে হচ্ছে যেন বেশ অনেকটা সময় ধরে তাদের হৃদস্পন্দন বন্ধ রয়েছে। প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।

হাসনা বেগম ডায়নিং টেবিলে বসে আর্তনাদ করছিলেন, তার পাশে বসে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন শওকত সাহেব। কলিংবেলের আওয়াজে দুজনেই উঠে এলেন দরজার কাছে।

হাসনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে হাহাকারের সুরে বললেন, “বৌমা! কী করে পারলে তুমি? কী করে পারলে আমাদের এত বড় ক্ষতি করতে?”

শাশুড়ির কাছ থেকে এমন তীক্ষ্ণ কথা শুনে ভয়ঙ্করভাবে হকচকিয়ে গেল নাজ। কী বলবে বুঝে উঠতে না পেরে কয়েক মুহূর্ত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল তার দিকে।

সায়েম ভ্রুযুগল সামান্য কুঁচকে বলল, “আহ্ মা! কী হচ্ছে এসব? দেখতে পাচ্ছো না, মেয়েটা অসুস্থ!”

“তুই চুপ কর। খবরদার আমাকে থামতে বলবি না। বৌমা? তুমি কি বুঝতে পারছো না? শুধুমাত্র তোমার জন্যে এত বড় একটা ক্ষতি হয়ে গেল।”

মায়ের কথাগুলোকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সায়েম নাজের উদ্দেশ্যে বলল, “নাজ ঘরে যাও। তোমার রেস্ট দরকার।”

নাজ ঘরে গেল না, তার পা দুটো যেন মাটির সঙ্গে পাথরের মতো জমে গেছে। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল হাসনা বেগমের দিকে।

হাসনা বেগম আবারও বিলাপ করতে করতে বললেন, “আল্লাহ! কী পাপ করেছিলাম আমরা? কেন আমাদের এমন কঠিন শাস্তি দিলে? বৌমা, তোমাকে কতবার বলেছিলাম নিজের যত্ন নাও। অন্তত এই কটা মাস বাড়ির বাইরে টো টো করবে না। শুনলে আমার কোনো কথা? তোমার জন্যেই আমার নাতিকে হারাতে হলো।”

সায়েম রেগেমেগে প্রচন্ড এক হুংকার দিয়ে বলল, “নাজ! তোমাকে বললাম না ঘরে যেতে, কথা কানে যাচ্ছে না?”

সায়েমের হুংকারে আঁতকে উঠে সংবিৎ ফিরে পেল নাজ। তার গলা পর্যন্ত কান্না এসে গেছে। এতগুলো মানুষকে চোখে জল দেখানো অর্থহীন। অশ্রু গোপন করার তাগিদে কিংবা সায়েমের ভয়ে নাজ চলে গেল নিজেদের শোবার ঘরে।

সায়েম মায়ের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলল, “এসবের মানে কী মা? কেন বললে এসব কথা? ওর মানসিক অবস্থার কথা একবারও চিন্তা করলে না?”

হাসনা বেগম আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন, “কেবল তোর বউয়ের মানসিক অবস্থার কথাই চিন্তা করছিস? আর আমরা? একবারও ভেবে দেখেছিস আমাদের মনের ওপর দিয়ে কী যাচ্ছে? তোর বাবা আর আমি কত স্বপ্ন দেখছিলাম! এতগুলো বছর পর অবশেষে দাদা-দাদী হচ্ছি। মরার আগে অন্তত নাতির মুখটা দেখে যেতে পারবো। আমরা যখন সন্তান পেটে ধরেছিলাম, তখন তো একবারও নিজেদের কথা ভাবিনি। ধ্যান-জ্ঞান সবই ছিল সন্তান। কিন্তু বৌমা? তাকে ওই অবস্থাতেও ভার্সিটিতে যেতে হবে, টিউশনি করাতে হবে, বান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে হবে।”

শওকত সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “থামো তো তুমি। হায়াত-মউত সব আল্লাহপাকের হাতে। তার হুকুম ছাড়া এই পৃথিবীতে কেউ আসতে পারে না, পৃথিবী ছেড়ে কেউ যেতেও পারে না।”

“বৌমা কি পারতো না আরেকটু সচেতন থাকতে? এভাবে মেরে ফেলল আমার নাতিকে?”

কথাটা শুনে সায়েমের ধৈর্যের বাঁধ নিমিষেই ভেঙ্গে গেল। রাগে থরথর করে কেঁপে উঠলো তার সমস্ত শরীর, চোখদুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো।

রাগে দাঁতে দাঁত চেপে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “মেরে ফেলল মানে?”

কনা ভীত গলায় বলল, “ভাইয়া তুমি শান্ত হও না।”

“না, আমি জানতে চাচ্ছি। মেরে ফেলল মানে? তোমার কি মনে হয় নাজ ইচ্ছা করেই…”

সায়েম কথাটা শেষ করার আগেই হাসনা বেগম কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “আমি তা বলতে চাইনি বাবা। তুই জানিস বৌমাকে কখনো আমি ছেলের বউ মনে করিনি, নিজের মেয়ের মতোই আদর-যত্নে রেখেছি। তাই বলে কি শাসন করার অধিকার আমার নেই? একটা গর্ভবতী মেয়ে নিজের খেয়াল রাখবে না, ঢ্যাং ঢ্যাং করে ঘুরে বেড়াবে এটা কেমন কথা? তুই জানিস, দুপুর বেলা তোদের পাশের বাড়ির মেয়েটা এসেছিল। বলল, কাল সকালেও বৌমার সঙ্গে ছাদে দেখা হয়েছিল, এর মধ্যে কী যে হয়ে গেল! তুই একবার ভেবে দেখ, অতগুলো সিড়ি বেয়ে ছাদে ওঠা একটা গর্ভবতী মেয়ের জন্যে কতোটা ক্ষতিকর।”

ডান হাতের দুই আঙ্গুলে নিজের কপালে হাত বোলাতে লাগলো সায়েম। মাথার পেছনের দিকটায় ভোঁতা এক ধরনের যন্ত্রণা সেই গতকাল থেকে অনুভূত হচ্ছে। বিজ্ঞরা ঠিকই বলেন, মনের সঙ্গে শরীরের একট গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মন ভালো না থাকলে তার সুগভীর ছায়া শরীরের ওপরেও পড়ে। গতকাল থেকেই মনটা ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। সেই ক্ষত সরাবার কোনো প্রয়াসও নেই সায়েমের মধ্যে। থাকবে কী করে? একদিকে অনাগত সন্তানকে হারানোর যন্ত্রণা অপরদিকে নাজের ভেঙে পড়া। ওই বাচ্চা মেয়েটা খুব সহজে ভেঙে পড়ে না, তবে যখন পড়ে সামলানো একেবারে দুষসহ হয়ে পড়ে।

মায়ের সঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে যেতে আর ভালো লাগছে না। সায়েম তার ক্লান্ত পা দুটো বাড়ালো শোবার ঘরের উদ্দেশ্যে। পুরো ঘরটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। বারান্দার দরজাটা খোলা বলে রাস্তার ল্যামপোস্টের অতি ক্ষীণ এক চিলতে আলো এসে পড়েছে ঘরে। সেই আলোতেই সায়েম খুঁজে বেড়াচ্ছে তার সবথেকে প্রিয় মানুষটাকে।

কারও টেনে টেনে নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ শোনা যাচ্ছে। কোথাও নাজকে খুঁজে না পেয়ে সায়েম লক্ষ করলো ঘরের একেবারে কোণে মেঝেতে বসে নিঃশব্দে কাঁদছে মেয়েটা। নিঃশব্দ কান্নারও আলাদা একটা সুর আছে। আলাদা একটা ব্যথা ঝনঝন করে বেজে ওঠে সেই কান্নায়। সায়েম একটা জায়গাতেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বুঝতে পারছে না কী করবে, নাজকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামাতে উদ্যত হবে না-কি কাঁদতে দেবে এভাবেই। কান্না না-কি মানুষের কষ্টগুলো কমিয়ে দেয়। বুকের বা পাশটা চিনচিনে এক ব্যাথা অনুভব করছে সায়েম। এক সময়ে যে মেয়েটা অন্ধকারের ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকতো, সেই মেয়েটাই আজ অন্ধকারের কাছে মেলে ধরেছে নিজের সমস্ত দুঃখগুলো।

সায়েম ধীর পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। এ বাড়ির সবথেকে বড় বারান্দাটা বসার ঘরের সঙ্গে। পুরনো আমলের রাজা-বাদশাদের প্রাসাদে যেমন প্রকান্ড দোলনা থাকতো, ঠিক তেমনই এক দোলনা ঝুলছে এখানে। সায়েম চিন্তিত ভঙ্গিতে গিয়ে বসে পড়লো দোলনার ওপরে।

বারান্দাটা জুড়ে অসংখ্য দেশি ফুল আর পাতাবাহার গাছ, মেঝেতে টবে আর রেলিং থেকে ঝুলন্ত টবে। সবই নাজের নিজের হাতে করা। মেয়েটা চাওয়া খুব বেশি কিছু নয়। আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতোই তার চাওয়া সুন্দর একটা সংসার, ভালোবাসার মানুষটার ছায়া, আর একটা সন্তান। নাজ মুখ ফুটে কখনো বলেনি, তবে সায়েম ঠিকই বুঝতে পারে বাচ্চাদের প্রতি তার টান কতোটা গভীর। বাচ্চাদের মধ্যে গেলেই সকল বাঁধন ছেড়ে নিজেও ফিরে যায় শৈশবে। অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্কদের মতো গুরুগম্ভীরতা ভুলে মেতে ওঠে খেলনা-বাতি আর ধরাধরি খেলায়। অথচ এই মানুষটার সন্তানই চলে গেল?

সায়েম পকেট থেকে বের করলো সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটার। নাজের বকাবকিতে এই বস্তু আজকাল খুব একটা ছোঁয়া হয় না। দিনে বড়জোর একটা। তবে টেনশনের সময়ে মানুষের জীবন স্বাভাবিক নিয়মে চলতে পারে না। সায়েম অত্যন্ত ঠান্ডা মাথার একটি ছেলে। যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতেও তার নার্ভ বিগড়ে যায় না। তবে আজ যাচ্ছে। অনবরত একটার পর একটা সিগারেট খেয়েই যাচ্ছে। ধুম্রজালে চারপাশ ঘোলাটে হয়ে এলেও তার মাথায় আসছে না কোনো সমাধান। কী করে সামাল দেবে সে এই কঠিন পরিস্থিতি?

অবশ্য সামাল দেওয়ারও কিছু নেই। যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। যে চলে গেছে তাক কি আর কোনোদিন ফিরিয়ে আনা যাবে? মুহূর্তেই সায়েমের চোখের সামনে ভেসে উঠলো অনাগত সন্তানকে নিয়ে দেখা ওই রঙিন স্বপ্নগুলো। সে স্বপ্নে রহস্যময় এক বিকেলে সায়েম আর নাজের হাত ধরে অচেনা কোনো প্রান্তরে হেঁটে বেড়াচ্ছে ছোট্ট এক দেবশিশু। এই স্বপ্নটা সম্ভব হওয়া এতটাই বেশি কঠিন ছিল?

মাথার যন্ত্রণাটা আরও বেড়ে উঠলো সায়েমের। ওই স্বপ্নগুলোর কথা আপাতত মনে করতে চায় না সে। আগে নিজেকে সামলাতে হবে। সায়েম যদি নিজেই ভেঙে পড়ে তাহলে নাজের চোখের জল মুছে দেবে কে? আচ্ছা মেয়েটা কি এখনও কাঁদছে সেই আগের ভঙ্গিতে?

সায়েম তড়িঘড়ি শোবার ঘরে ফিরে বাতি জ্বালিয়ে দিলো। তার ধারণাই ঠিক। নাজ ঠিক একই ভাবে বসে আছে মেঝেতে, একইভাবে অবিরাম ওই অশ্রুধারাগুলো ঝরে পড়ছে তার চোখদুটো বেয়ে।

সায়েম বসে পড়লো নাজের মুখোমুখি। হঠাৎ কারও উপস্থিতি টের পেয়ে হাঁটু থেকে মুখ তুলে তাকালো নাজ। সায়েমের উদ্বিগ্ন মুখটা দেখে তার কান্না যেন কয়েকগুণ বেড়ে গেল। মেয়েটা এবার আর নিঃশব্দে কাঁদছে না, কাঁদছে ব্যাথামিশ্রিত করুণ এক সুরে।

নাজের এই কান্না যেন আরও একবার চুরমার করে দিলো সায়েমের ভেতরটা। তবুও শক্ত হাতে নিজেকে সামলে নিলো। অতি যত্নে নাজকে আগলে ধরলো বহুডোরে।

সায়েম কোমল স্বরে বলল, “নাজ? এভাবে কাঁদে কেউ?”

নাজ প্রতিউত্তরে কিছুই বলল না। সায়েমের বুকে মাথা রেখে শুনলো তার অস্থির হৃদয়ের ধুকপুক আর অনবরত গড়ালো অশ্রু।

সায়েম নাজের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “সব ঠিক হয়ে যাবে নাজ, সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি কেঁদো না তো।”

নাজ এবার মাথা তুলল সায়েমের বুক থেকে। কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে, তবে পারছে না। অবাধ্য অশ্রুগুলো বড্ড ব্যস্ত রাখছে তাকে।

সায়েম নাজের ডান গালে কোমল স্পর্শে একটা হাত রেখে বলল, “এভাবে কাঁদে না নাজ। তুমি না সাহসী একটা মেয়ে। সাহসী মেয়েটা এভাবে কাঁদে?”

সুতীব্র অনুরাগে নাজের চোখের জলগুলো মুছিয়ে দিয়ে সায়েম বলল, “সারাটাদিন কিছু খাওনি। হসপিটাল থেকে এসে ড্রেসটাও চেঞ্জ করনি। যাও, ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”

নাজ কোনপ্রকার প্রতিবাদ না করে বাধ্য মেয়ের মতো উঠে চলে গেল। বাধ্য মেয়ের মতো খেয়েও নিলো। নাজকে এই মুহূর্তে যেই দেখবে, তার মনে হবে যেন মেয়েটার মধ্যে কোনো অনুভূতি নেই। অনুভূতিহীন কোনো যন্ত্রমানবী সে।

খাওয়া শেষে নাজ চুপচাপ গিয়ে বসে রইলো ওই ঘরটায়। তার বাবুর ঘরটায়। এই ঘরটা যার জন্যে সাজানো হলো, তারই থাকা হলো না! একবারের জন্যে দেখাও হলো না? কী হবে এখন এই ছোট্ট বিছানা আর দোলনা দিয়ে? কে খেলবে এই অসংখ্য খেলনাগুলো দিয়ে?

সারাবাড়ির কোথাও নাজকে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে সায়েম চলে এলো এ ঘরটায়। নাজের মুখটার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। পৃথিবীর সমস্ত দুঃখগুলো যেন আজ এসে ভর করেছে তার চোখেমুখে। সন্তান হারানোর যন্ত্রণা এমন কেন?

সায়েম এসে নাজের পাশে বসতে বসতে বলল, “সেই তখন থেকে লক্ষ করছি, কেমন চুপচাপ হয়ে আছো। কথা বলছো না কেন আমার সাথে?”

নীরবতা ভঙ্গ করে নাজ ব্যথিত কণ্ঠে বলল, “কোন মুখে কথা বলবো?”

সায়েম সঙ্গে সঙ্গে বলল, “নিজের মুখে বলবে।”

কী যে মনে করে আবারও হুহু করে কেঁদে উঠলো নাজ। বাঁধভাঙা অশ্রু কিছুতেই তাকে রেহাই দিচ্ছে না আজ।

সায়েম পরম মমতায় এক হাতে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “নাজ! কাঁদে না নাজ, প্লিজ! তুমি তো জানোই, তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারি না। প্লিজ নাজ, কাঁদে না।”

কান্না থামাবার কোনো প্রচেষ্টা না করেই নাজ বলল, “আমি পারলাম না। পারলাম না আমার বাবুকে পৃথিবীতে আনতে। ও চলে গেল কেন বলতে পারো? আমাকে কি ও এতটাই খারাপ মা ভেবেছিল?”

“তোমার এখানে কোনো দোষ নেই নাজ…”

সায়েমের কথা শেষ হবার আগেই নাজ দৃঢ় গলায় বলে উঠলো, “সব দোষ আমার। ও বুঝতে পেরেছিল আমি খুব খারাপ মা হবো। এরজন্যেই আগেভাগে চলে গেছে। তাই না?”

“তুমি নিজেকে দোষ দিচ্ছ কেন নাজ? তোমার কোনো দোষ নেই। জন্ম-মৃত্যু সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহ চাননি, তাই আমাদের বাবু আসেনি। আল্লাহ যেদিন চাইবেন, সেদিনই আমাদের ঘর আলো করে ফুটফুটে একটা বাবু আসবে। দেখে নিও তুমি।”

“জানো, আমার আশেপাশের সবাই বলে আমি না-কি খুব ভাগ্যবতী। দেশের সেরা ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করার সুযোগ, উজ্জ্বল একটা ভবিষ্যত, তার থেকেও ওপরে তোমার মতো একটা মানুষকে হাসবেন্ড হিসেবে পাওয়া। যে মানুষটা প্রতি মুহুর্তে আমাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখে। জীবনযুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন বলে মনে হতো নিজেকে। কিন্তু আজ আমি হেরে গেলাম সায়েম।”

“জীবনযুদ্ধে কেউ চ্যাম্পিয়ন হতে পারে না। পরাজয় থেকেই তো জয়ের শুরু।”

নাজ অবাক গলায় বলল, “তুমি এতকিছুর পরেও আমার পক্ষে কথা বলছো? কেন সায়েম? একবারের জন্যেও ইচ্ছা করছে না প্রচন্ড এক ধমক দিয়ে বলতে, সব তোমার দোষ। তুমি আরেকটু কেয়ারফুল থাকলে এসব কিছুই হতো না।”

সায়েম না-সূচক মাথা নাড়ালো।

“এই যে এই ঘরটা! কত স্বপ্ন নিয়ে সাজিয়েছিলে এই ঘরটা। আমাদের বাবুর ঘর! আর আমি কী করলাম? তোমার সেই সব স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে দিলাম। আমার ওপরে বিন্দুমাত্র রাগ হচ্ছে না তোমার?”

“তুমি আমার স্বপ্নগুলো ভাঙ্গনি, প্রকৃতি ভেঙেছে। ভাঙুক, একবার ভেঙে গেলে যে আর জোড়া লাগানো যাবে না তা তো নয়। এই ঘরটা এভাবেই থাকবে। একদিন ঠিকই আমাদের বাবু এখানে থাকবে। আর প্লিজ, নিজেকে দোষ দেওয়াটা এবার বন্ধ করো।”

ভালোবাসার মানুষটা পাশে থাকলে কঠিন পরিস্থিতিগুলোও কত সহজে পাড় করে দেওয়া যায় তাই না?

(চলবে)