গোধূলী আকাশ লাজুক লাজুক পর্ব-১১+১২+বোনাস পর্ব

0
522

#গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক (পর্ব-১১)
লেখনীতে–ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

ছয়টি মাস দেখতে দেখতে কেটে গেছে। এরই মাঝে হোস্টেলে মেহজার দুইটি খুবই ভালো বান্ধবী জুটেছে। অনা আর প্রথি। প্রথি মুজমদার আর অনা রহমান দুজনেই অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারীনি। মেহজা যেমন তাদের চোখে হারায় তারাও মেহজাকে চোখে হারায়। এই ছয়মাসে বদলেছে অনেক কিছু কিন্তু বদলায়নি মেহজার মনের অবস্থা। ইরফানের প্রতি একতরফা ভালোবাসা তাকে পুঁড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে। এই ছয়মাসে সে মাত্র দুইবার বাসায় যায়। দুদিনের বেশি থাকেই না। ইরফান নেই তাও সে কেন থাকতে চায়না তা নিয়ে মায়ের সাথে কয়েক দফা লেগেছে সে। প্রতিবারই রাগ করে হোস্টেলে ফিরে। বাবা মঈনুল কয়েকবার এসে নিয়ে যেতে চায় কিন্তু সে যায়না। রাদিফের সাথে আর রাফসানের সাথে প্রতি সপ্তাহে সে ঘুরতে বের হয়। কখনো রেস্টুরেন্ট, তো কখনো পার্ক, এই ফাঁকে তো তারা তিন ভাই বোন কক্সবাজার আর সিলেট ঘুরেও এসেছিল। এখন আর সেইসবের ছিঁটেফোঁটাও নেই কারণ ইয়ার চেন্জ পরীক্ষা সামনে। দম ফেলার সময়টুকুও নেই যেন! ইমা তো স্পষ্ট বলে দিয়েছে

“এবার যদি এক থেকে তিনের পজিশনে না আসতে পারো তাহলে আমার কাছে আর এসো না। আমি বুঝে নিব আমি ব্যার্থ শিক্ষিকা।”

এই একটি কথা মেহজাকে নাঁড়িয়ে দিয়ে গেল। নিজের ইচ্ছে তো ছিল তার সাথে তার প্রিয় গুরুরও তা চাওয়া। এই একটি মানুষের জন্য তার হৃদয়ে অনেক সম্মান জমা আছে। সে যখন ঘর ছেড়ে হোস্টেলে উঠেছিল সবাই তাকে বাধা দেয়, তার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মানতে চায়নি। ইমা একমাত্র মানুষ যে তাকে সঙ্গ দেয়। আরো উৎসাহিত করে এই বলে
“চিন্তা নেই। আমি সবসময় তোমার পাশে আছি। একদম সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছো। এইসব পারিবারিক ঝামেলায় থেকে তো হাতে ধরেই ক্যারিয়ার বরবাদ করতে যাচ্ছিলে। এবার যা সিদ্ধান্ত নিয়েছো একদম যথার্থ। আমি এখন থেকে দুঘন্টা সময় দিব তোমাকে কলেজ শেষে। মনে রাখবে কিন্তু! আমি পড়াশোনার ব্যাপারে গাফিলতি একদমই পছন্দ করিনা। বায়োলজি টিচার আর ম্যাথ টিচারও ঠিক করে দিব আমি। সব মনোযোগ শুধুই পড়াশোনায়। বুঝতে পেরেছো?” মেহজা তখন মাথা নাঁড়িয়ে শুধুই “হ্যাঁ” বলেছে আর তা বলাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, কাজেও করে দেখিয়েছে।

ইরফানকে সে এই কয়মাসে একটিবারও দেখেনি। এমনটা নয় সে দেখতে চায়নি, আসলে দেখা পায়নি সে। কাজের মধ্যে নাকি সে এতোটাই আটকা পড়েছে যে বাবা মায়ের সাথেও এসে দেখা করেনি। সবই শোনা কথা। ইকরাও রাগ করে তার সাথে আগের মতো কথা বলেনা। প্রথম প্রথম কষ্ট পেলেও এখন মানিয়ে নিচ্ছে। কারণ কিছুই তো করার নেই।

বাহিরের কোলাহলে মেহজার কান বোঁধ হয় ফেটে যাচ্ছে। বইয়ের মধ্যে এতক্ষণ মুখ গুজে ছিল সে কিন্তু এখন আর তা সম্ভব হচ্ছেনা। পড়াতে মনই বসছেনা। পাশে ফিরে দেখে প্রথি আর অনারও একই অবস্থা। কেমন একটা অখুশি চেহারা তাদের। মেহজার তাদের উপর বড্ড মায়া হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেই মেহজাকে দুজনে বনানীর একটি নতুন রেস্টুরেন্টে যেতে বলে। মেহজা জবাবে শুধুই শক্ত চাহনি নিক্ষেপ করে তাদের উপর। এখন তো তারও ভালো লাগছেনা আর ওদের চেহারাতেও মন খারাপ স্পষ্ট। মেহজা উঠে ড্রয়ার থেকে একটি কালো রঙের শাড়ি বের করে বলে

” শাড়ি পড়ে গেলে কেমন হয় গার্লস!”
দুজনেই চকিত নয়নে কিছুক্ষণ চেয়ে চিৎকার করে বলে উঠে

“সুপ্পার!”

মেহজা হেসে উঠে। তার বাচ্চামো স্বভাবটা নিস্তেজ হয়ে গেলেও প্রথি আর অনার বাচ্চামোতে তার আনন্দ হয়। তিন বান্ধবীই একসাথে শাড়ি মিলিয়ে পড়ে। সবই এক কিন্তু রং আলাদা। যেমন মেহজার শাড়ি কালো, প্রথির শাড়ি নীল, অনার শাড়ি গোলাপী। তিনজনেই একইরকম সাজ দেয়। তারপর একটি ক্যাব বুক করে বেরিয়ে পড়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

——————————————-

“কাঠফাটা রোদের মধ্যে না বেরিয়ে আসলেই হতো। তাই নারে অনু!”
মেহজার এমন কথায় ভ্রু কুঁচকে অনা বলে

“একদমই না। কাঠফাটা রোদ কোথায় দেখছিস? এখন বিকেল হয়ে গেছে। তাপমাত্রা কমে গেছে। সূর্য নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। তুইও না!”

“হু ঠিক বলেছিস। চল চল! ভেতরে গিয়ে দেখবি ভালো লাগছে। এসি আছে তো!”

লিফ্টে উঠে যায় সবাই। মেহজার একটু অস্বস্তি লাগছে এভাবে শাড়ি পড়ে বের হওয়াতে কিন্তু মানিয়ে নিচ্ছে। এখন থেকে সব অবস্থাতেই তাকে মানিয়ে নিতে হয়। সাত নম্বর ফ্লোরে গিয়ে মেহজার কিছুটা স্বস্তি লাগে। চারিদিকে ঠান্ডা পরিবেশ। যে যার মতো ব্যস্ত। প্রথি গিয়ে কর্ণারের একটি টেবিলে বসে পড়ে। তারপর অনা আর মেহজাকে হাত উঁচিয়ে ডাকতেই তারা গিয়ে বসে পড়ে। সফ্ট মিউজিকে সবকিছু আরো ভালো লাগছে। মেহজার হুট করে মনে পড়লো অনেকদিন সে গান শুনেনা! আবার এটাও খেয়াল করেছে এখন যেই গানটি বাজছে সেটি তার প্রিয় গান। একসময় এতো বেশিই শুনতো যে রাফসান বিরক্ত হয়ে বলতো,
“এই ফকিন্নি! আর গান নাই তোর ঝুলিতে! এই একটা গানই কেন শুনিস সারাক্ষণ!”
রাফসানের কথা মনে পড়তেই ফিক করে হেসে দেয় মেহজা। হুট করে হেসে ফেলায় অনা আর প্রথি কিছুটা বিস্মিত হয়। প্রথি জিজ্ঞেস করে,

“কীরে! কী হলো? হাসছিস কেন হুট করে! পেত্নী ধরেছে নাকি!”

“আরে কী বলছিস! রাফসানের জোক্স মনে পড়ে গেল তাই হেসে ফেলেছি।”

“হঠাৎ কীসের জোক্স মনে পড়লো তোর!”

মেহজা অনার কথার জবাব দিতে যাবে তখনিই একজন ওয়েটার এসে বলে

“কী নিবেন ম্যাম!”

অনা আর প্রথিও দেরী না করে অর্ডার দিয়ে দেয়। মেহজাকে জিজ্ঞেস করাতে বলে সে ক্রিম অব্ মাশরুম স্যুপ খাবে। ব্যাস! আর বাকিসব অর্ডার ওরা দুজনই দেয়। মেহজারও বাকি খাবার গুলোতে কোনো অসুবিধা নেই তাই।
খাবার ফাঁকে মেহজা আশপাশটা একবার চোখ বুলায়। আবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয় সে। কিছুক্ষণ পরেই একটি সুমিষ্ট পুরুষালী কন্ঠ মেহজাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“মেহজা যে? কেমন আছো?”
পাশে ফিরে সিনানকে দেখে মেহজা অবাক হয়ে বলল,

“সিনান ভাইয়া যে! আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তোমার কি খবর! আর এখানে কী করছো?”

“আমিও ভালো আছি। আর তুমি যা করতে এসেছো আমিও তা-ই করতে এসেছি। বন্ধুদের সাথে খেতে এসেছি।”

“ওহ তাই নাকি! কোথায় আপনার বন্ধুরা?”

“ঐ তো তোমাদের পাশের টেবিলের গ্যাংটাই।”

“ওহ্!”

“কী অর্ডার করলে? মাশরুম স্যুপ! তোমার প্রিয় এটা তাই না!”

“হ্যাঁ ভাইয়া। আচ্ছা তাহলে আমিও একটা নেই।”

সিনান ওয়েটারকে ডাক দিয়ে নিজেও একটি স্যুপ অর্ডার করে। তারপর মেহজাকে উদ্দেশ্য করে বলে

“ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড! আমি তোমাদের সাথে জয়েন করতে পারি?”

অনা তো না বলতেই নেয় প্রথি তাকে থামিয়ে বলে

“কেন নয়! বসুন না ভাইয়া!”

“থ্যাংকস্ সুইট গার্ল!”

প্রথি তো এমনিতেও ক্রাশ খেয়ে বসেই ছিল তার উপর এমন প্রশংসা শুনে সে রীতিমতো হাবুডুবু খাচ্ছে। মেহজারও ভালোই লাগছে। অনেকদিন পর সিনানের সাথে দেখা হয়েছে। এখন কথা বার্তা বললে খারাপ হয়না। অনার কাছে বিরক্ত লাগছে। একজন অচেনা, অজানা মানুষের সামনে খাওয়া যায় নাকি! তাছাড়া তাদের মেয়েলি আলাপ, হাসি – মজায় লোকটি কেন থাকবে? প্রথম দেখাতেই অনা তাকে ম্যানারলেস আখ্যায়িত করে নেয় মনে মনে।

সিনানকে পাশের টেবিল থেকে তার বন্ধুরা টিপ্পনি কেটে কথা বলছে। বদৌলতে তাদেরকে আবার মেহজা আর প্রথি কথা শুনাচ্ছে। দুই টেবিলেই হাসি মজা হই হুল্লোরে খাওয়া দাওয়া আরো জমে উঠছে। সিনানের বন্ধু তামিমের জোক্স শুনে মেহজার এতোটাই হাসি পায় যে চোখের কোণে পানি জমে যায়। পরে তো কাঁশিই উঠে গেল। সিনান পানি এগিয়ে দিয়ে তার মাথায় বারি দেয় আলতো করে। কাঁশি থেমে গেলে মেহজার মনে হয় একটা চেনাপরিচিত পারফিউমের গন্ধ পায় সে। তখনিই তাদের টেবিলের সামনে দিয়ে সশব্দে কেউ একজন হেটে যায়। মেহজা লোকটির চেহারা দেখতে তার মুখের দিকে তাঁকালে দেখে লোকটি তার স্বামী! ইরফান ইয়াজিদ! অনার কথায় মুহূর্তেই মেহজার রাগ উঠে যায়। অনা বলছে,

“ইশ! আমি যদি ইরফান ইয়াজিদের বউ হতাম!”

সিনান কিছুটা আক্ষেপের সুরে বলে

“আর আপনি যদি আমার বউ হতেন!”

কথাটি শুনে অনার বুকটা ধক করে উঠে। লোকটি এটা কেমন কথা বলল!

#চলবে।

#গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক (পর্ব-১২)
লেখনীতে–ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

মেহজার এখন আর বাকি কোনো কিছুতেই মনোযোগ নেয়। সে ব্যস্ত ইরফানকে দেখতে। মানুষ কতোটা স্বার্থপর হতে পারলে এমন বদলে যায়। ছয় মাস হয়েছে তাদের শেষ দেখার না হয়েছে তালাক না হয়েছে কোনো ঝগড়া। অদৃশ্য দেওয়ালের জন্যই তো কাছে থেকেও বহুদূর তারা। কোথায় মেহজা তো পাল্টায়নি! অবশ্য মেহজা ইরফানকে কতটুকুই বা চিনে! প্রথম দেখায় ভালোলাগা তারপর ভালোবাসা আর তারপর হুট করেই বিয়ে। ইরফানের ভালোবাসার কেউ আছে সেই সম্বন্ধে তো মেহজার আদৌ কোনো ধারণা নেই। ইরফানের সাথে এই মুহূর্তে একটি মেয়েকে দেখে তার ভঙ্গুর হৃদয় এবার ক্ষুদ্র থেকেও ক্ষুদ্র, অনু পরিমাণ হয়ে গেল যেন! মেয়েটির চাল চলন, ভাবভঙ্গি বলে দিচ্ছে সে যথেষ্ট মর্ডান আর ম্যাচিউড। এমন কাউকেই তো ইরফান ডিজার্ভ করে। নিজেকে নিয়ে তার অনুশোচনা হচ্ছে। তাচ্ছিল্যের হাসিটা সে নিজের জন্যেই হয়তো বরাদ্দ রেখেছিল যা এখন বেরিয়ে আসছে।

মেহজা ততক্ষণ তাঁকিয়ে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা দৃশ্যমান ছিল। হুট করেই এক আকাশ খারাপ লাগা শুরু হলো তার। প্রথি মেহজাকে জিজ্ঞেস করে,

“কি হয়েছে তোর? এমন করছিস কেন?”

তখন সিনান আর অনাও মেহজাকে দেখে আর দুজনেই চিন্তিত হয়ে পড়ে। সবাই এক নাগাড়ে প্রশ্ন করেই চলছে তাতে মেহজার অস্বস্তিও আরো বেড়ে চলেছে। হাতের পার্স থেকে তিনটে এক হাজার টাকার নোট বের করে প্রথির হাতে গুজে বলে, “বিল দিয়ে দিস।”
তারপরেই হনহন করে হাঁটা ধরে সোজা লিফ্টে উঠে পড়ে। আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব সকলেই। এটা কী হয়ে গেল? সবার মাথাতেই একই প্রশ্ন। প্রথি ওয়েটারকে ডেকে বিল আনতে বলে ওয়েটার তা নিয়ে আসলে সিনান বিল পে করতে নিলে অনা একপ্রকার ধমকে বলে,

“আমাদের কী আপনার ভিখিরি মনে হয়? টাকা নেই আমাদের কাছে! আপনি আমাদের খাবারের বিল দেবেন কেন?”

“এক্সকিউজ মি মিস! আমি কি একবারো বলেছি আপনারা ভিক্ষুক, টাকা নেই আপনাদের কাছে তাই আমি বিল দিচ্ছি। বলিনি তো! আর কোন আইনে আছে ভিখিরি বিল পে করতে পারেনা? আর একটা কথা! মেহজা আমার চেনাপরিচিত মানুষ। আমরা একসাথে বসে যেহেতু খেয়েছি তাই আমি বিল দিতেই পারি।”

“না পারেন না।”

কথাটা বলেই অনা নিজের পার্স থেকে টাকা বের করে টেবিলে রেখে চলে যায়। পেছনে প্রথিও দৌঁড়ে যায়। ওয়েটারও টাকা নিয়ে চলে গেল। শুধু থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে রয় সিনান। এতটুকু মেয়ে তারমতো একজন আর্মি অফিসারকে অপমান করে গেল! তাও পাব্লিক প্লেসে!

—————-

ইরফান হন্তদন্ত হয়ে নিজের বাসায় ঢুকে। তারপর সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে ঢুকে হাতের ফাইল গুলো বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে। রাগে তার শিরা উপশিরা কাঁপছে। শাওয়ার নিতে গিয়ে এক ঘন্টা বাথটাবে শুয়ে থাকে। আর সেটাই হয় কাল! জ্বর বাঁধিয়ে ফেলে। খাবারও খায়না একপ্রকার নিজের শরীরের সাথে অন্যায়, অবিচার শুরু করে দেয়। মেহজা আর সিনান এক সাথে এক টেবিলে পাশাপাশি বসে খাবার খাচ্ছিল! আর সিনানও মেহজার মতোই তার প্রিয় স্যুপ অর্ডার করেছে, ভাবা যায়! পেছনের টেবিলে থাকায় সে সবই শুনেছে ও দেখেছে। মেহজার আগেই সে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল। মেহজাদের পেছনের টেবিলে থাকায় আর বিপরীতে মুখ করে থাকায় সিনান এবং মেহজা কেউই তখন তাকে দেখেনি। মেহজা এসেছে থেকেও কতবার এদিক ওদিক চোখ বুলিয়েছে কিন্তু ইরফান তার নজরেই পড়ে নি। তবে সে যখন ইরফানের প্রিয় কালো রঙের জামদানি শাড়িটি পড়ে এসেছিল তখন ইরফান তাকে খুব করে দেখেছে। দু নয়ন জুড়িয়ে দেখেছে। আজ হুমায়রার সাথে যদি কফি খেতে না যেত হয়তো এতসব দেখতো না। একদিকে যেমন ভালো হয়েছে অন্যদিকে খুবই খারাপ হয়েছে।

ইরফান নিচে এসে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে পড়ে। শরীর অবস হয়ে যাচ্ছে। একটুও ভালো লাগছেনা। মায়ের সান্নিধ্য চাইছে মনে প্রাণে। আবার মন থেকে কেউ যেন বলে উঠছে, “আহ্ মা! কেন করলে এতসব! আজ এই বিরহের কষ্টটাও সেই তোমার ভুলের জন্যই হচ্ছে।” ল্যান্ড লাইনটা বেজে উঠেছে নিশ্চয়ই বোনেরা কেউ কল করেছে তার নম্বর বন্ধ পেয়ে। টেলিফোন কানে নিয়ে “হ্যালো” বলতেই ইমার ধমকে কানটা ফেটে যায় বোধ হয় ইরফানের। এই বোনটার রাগ মারাত্নক। ইমা ফোনেই ইরফানের কন্ঠ শুনে বুঝে নেয় তার ভাইয়ের শরীর ভালো নেই বোধ হয়!

সব রাগ নিয়ে গড়গড় করে এক নাগাড়ে পড়েই চলছে মেহজা। পড়ার পড়া কিছুই হচ্ছেনা উল্টো চিৎকার করে এনার্জী নষ্ট করছে। প্রথি তো কয়েকবার জিজ্ঞেস করে ছিল “কি হয়েছে!” মেহজারও একটাই জবাব ” কিছুই হয়নি, সামনে পরীক্ষা পড়তে হবে।” অনার কাছে বিকেলের পর থেকে কিছুটা খারাপ লাগছে তাই সে আরো আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। তবুও মেহজার করা শব্দে কিছুক্ষণ পর পর জেগে উঠছে। তবুও মুখ খুলে মেহজাকে কোনো কড়া কথা শুনায়নি। সে বুঝতে পারছে তার এই সখীটার মনটা খুবই খারাপ।

রাত ৯ টা বেজে ৬ মিনিট। এই মুহূর্তে ইমার কল পেয়ে মেহজা অবাক না হয়ে পারলো না। ইমা কখনও তো এই সময়ে কল করেনি। আজ হঠাৎ! হাবিজাবি ভাবতে ভাবতেই কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে ইমা বলে ওঠে,

“জরুরী জিনিসপত্র বই আর জামাকাপড় নিয়ে বেরিয়ে আসো। হোস্টেলের ম্যানেজারের সাথে আমি কথা বলেছি আটকাবে না। আর শোনো! ব্যাগ রেডী করা ছাড়া আর কিছু করতে হবেনা। নিজের সাজসজ্জা না করে যেই অবস্থায় আছো সেই অবস্থায় বের হয়ে এসো। কোথায় যাবে কেন যাবে এসব প্রশ্ন এখন করবেনা একদম। ইটস্ আর্জেন্ট এটাই ভালো করে শুনে নাও।”

মেহজা প্রতিউত্তর করার আগেই ঐ পাশ থেকে লাইন কেটে দেওয়া হয়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেহজা ব্যাগ গুছাতে থাকে। কারণটা কী সেটা নাহয় পরেই জানবে। ইমার কথা অমান্য করার সাধ্য তার নেই। প্রথি মেহজাকে ব্যাগ গুছাতে দেখে বলে,

“কীরে ব্যাগ গুছাচ্ছিস কেন? কোথায় যাবি! ইমা ম্যাম কী বলেছে?”

“বাসায় যাব আর্জেন্ট। নিশ্চয়ই মা বাবা কোনোভাবে নেওয়াচ্ছে।”

“এই সময় না গেলে হয়না!”

“হয়না বোধ হয়। আর্জেন্ট বলে দিয়েছে।”

“ম্যাম তোর উপর এতোটা খবরদারী কেন করে বুঝে পাইনা আমি। সামান্য প্রতিবেশিই তো!”

“প্রতিবেশি সামান্য হলেও শিক্ষিকা অসামান্য।”

মেহজা কথাটা মৃদু হেসে বলে। প্রথিও আর কিছু বলেনা। আসলে বলার মতো কিছু পাচ্ছেই না। মেহজা সচারচর যায়না বাসায়। হোস্টেলেই থাকে বেশি। মেহজাকে ছাড়া একা একা লাগবে বড্ড! অনা এবং মেহজার, দুজনের মধ্যে একজনেরও অনুপস্থিতি তার বরারবই অপছন্দ।
মেহজা অনাকে জাগিয়ে তোলে বাই বলে ব্যাগ কাধে বেরিয়ে পড়ে। অনা হ্যাবলাকান্তের মতো চেয়ে থাকে শুধু। সদ্য ঘুম থেকে ওঠায় কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। মেহজা কাউকেই বলেনি তার বিয়ে, সংসার, স্বামী এসবের ব্যাপারে। বলতে চায়না সে। ইরফান কি কাউকে বলেছে তার স্ত্রী আছে? তার স্ত্রী হচ্ছে একটি অবলা নারী। নাম তার মেহজা নাযাল। হুহ! বলেনি কখনও……

গেট দিয়ে বের হয়েই বড়সড় একটা ঝটকা খায় মেহজা। ইমা ড্রাইভিং সিটে বসে আছে। বাহ্! সে ড্রাইভও জানে? গাড়ির দরজা খুলে ইমার পাশেই সামনের সিটটায় বসে পেছনের সিটে ব্যাগটা রেখে বলে,

“আপু? তুমি ড্রাইভ করতে পারো?”

“ড্রাইভ করতে পারিনা মানে? আব্বা-আম্মা থেকে শুরু করে ইরফান পর্যন্ত আমরা সবাই ড্রাইভ করতে পারি।”

গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলে ইমা। মেহজা উৎসাহিত হয়ে বলে,

“কবে শিখেছো?”

“আমি নাইনে শিখেছি একটু আধটু। ভার্সিটি লাইফ থেকে রেগুলার চালাতাম। এখন দরকারে ড্রাইভার রাখি।”

“ওহ্। তা কোথায় যাচ্ছি আমরা? বাসায় নাতো!”

“আরে না! পাগল নাকি?”

বাসায় যাচ্ছেনা শিউর। তাহলে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ইমা তাকে! সে তো নাইট স্যুটে পড়ে আছে? ধুররর। ভালো লাগছেনা এতসব সাসপেন্স!
গাড়ি একটি হাউজিং এর মতো গলিতে ঢুকে পড়েছে। চারিদিকে উঁচু উঁচু দালান। এইসব বিলাসবহুল ফ্ল্যাট দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আশপাশটা দেখে বুঝলো এটা বসুন্ধরা এলাকা। মুহূর্তেই মেহজার বুকে কামড় বসে যেন। ইমা তাকে ইরফানের কাছে নিয়ে যাচ্ছে না তো! না তা অসম্ভব। ইমা কখনোই এমন করবেনা।
কিন্তু হায় কপাল! মেহজার বিশ্বাসে এক গ্লাস পানি ঢেলে একটি বিল্ডিং এর নবম তলার ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে সে যে বাসার কলিংবেল বাজায় সেই দরজার ডান পাশেই দেওয়ালের মধ্যে বড় বড় করে লেখা ইরফান ইয়াজিদ। নেমপ্লেটটি দেখেই মেহজা আতংকিত হয়ে পড়ে। এটা ইমা কী করলো?
অসুস্থ শরীরে দরজা খুলে ইরফান ইমার পাশে মেহজাকে দেখে উতলা হয়ে উঠে। চোখ সরিয়ে নেয় মেহজার থেকে। সরে গিয়ে তাদের ভেতরে ঢুকার জন্য রাস্তা করে দিয়ে এলোমেলো পায়ে ছোটে কিচেনের দিকে। মেহজা ইরফানের তাকে দেখে চোখ সরিয়ে নেওয়াটা ভালোই খেয়াল করে। ভেতরে আসতে চায়না একদমই, ইমা তার হাত টেনে ধরে ভেতরে নিয়ে যায়।

#চলবে

#গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক (বোনাস)
লেখনীতে— ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

মেহজাকে নিয়ে ইমা সোফায় গিয়ে বসলো। মেহজার শক্ত মুখ দেখে ইমা বিচলিত হয়না। সে জানতো এমনই হবে। ইমা চোখের চশমাটা খুলে মুছে নেয়। যখনিই কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সে কথা বলতে চায় প্রথমে কেন যেন চশমার গ্লাসটা পরিষ্কার করে নেয়। হয়তো সামনে থাকা ব্যক্তির অভিব্যক্তি বুঝার জন্য! ইমা গলা ঝেরে বলতে শুরু করে,

“রাগ করেছো তা আমি জানি। আমি তোমার রাগ যে ভাঙাবো না সেটাও তুমি জানো। তাই ঐ টপিক বাদ দিয়ে মেইন টপিকে আসি। তোমার মনে সবচেয়ে বড় এখন একটাই প্রশ্ন তোমাকে আমি এখানে কেন এনেছি তাই তো!”

মেহজার কোনো কথা নেই। সে নিশ্চুপ ভঙ্গিতে বসে আছে। তবে মুখের ভাব বলে দিচ্ছে “হ্যাঁ”। মেহজাকে উদ্দেশ্য করে ইমা আবার বলতেশুরু করে,

“ইরফানের জ্বর। ১০৩° জ্বর! বুঝেছো? নিশ্চয়ই তার হাবভাবে সেটা বোঝা যাচ্ছেনা। তার যদি একটি হাতও কেউ কেটে নেয় তারপরও বোধ হয় সে টু শব্দ করবেনা। এর কারণ সে তার দুর্বলতা প্রকাশ করাটাকে সবচেয়ে বড় পাপের কাজ মনে করে। সে যে কাউকে হৃদয় দিয়ে বসে আছে সে কিন্তু কখনও সেই হৃদয়হরণীকে বলবেনা। তাই আমি মনে করি তার হৃদয়হরণীর নিজে থেকে সবটা বুঝে নিতে হবে। সে যাই হোক! আসল কথায় আসি। তোমায় কেন আনলাম সেটাই বলি।”

মেহজার মনেই হঠাৎ একটা নোংরা প্রশ্ন চেপে উঠে। ইরফানের হৃদয়হরণী রেস্টরন্টে থাকা মেয়েটি নয়তো! তবে ইমার কথায় যা বুঝছে ইমা তাকেই(মেহজা) ইঙ্গিত করে বলেছে কথাটি। ইমা আর কিছু ঘোলাটে না রেখে বলা শুরু করে,

“ইরফানকে যখন আমি কল দেই তখন ওর গলা শুনেই বুঝেছি ও অসুস্থ। কিছু না বলেই আমি হুট করে চলে এলাম এখানে। এসে দেখি তার বেহাল দশা! তার হুশ জ্ঞান নেই। দরজাটাও আমি পাসওয়ার্ড দিয়ে খুলেছি। ভাগ্যিস পাসওয়ার্ড সিস্টেমটি আছে। আমি যে আরো আগেই এসেছি ওকে জিজ্ঞেস করে দেখো, ‘ও বলবে কোথায়? দেখিনি তো’ মানে ওর অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিল ও নিজে থেকে জানবেনা হয়তো ইকরা বলে গেছে যাওয়ার আগে। ইকরাও এসেছিল, আমিই কল করেছিলাম। ও এসে মেডিসিন দিল তারপর আমি মাথায় পানি দিলাম ওর তাপ কমলো না। পরে জ্বরের ঔষুধ খাওয়াতে এখন একটু কমেছে। ইকরা তো ভেবেছিল ওর জ্ঞান না ফিরলে হসপিটালাইজড করে দিবে। আব্বা-আম্মাকে বললে তারা টেনশন করবে খুব। আম্মা তো কেঁদে কুটে একসের করবে। আব্বার প্রেশার লো হবে যা প্রতিবারই ইরফানের কোনো অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার কথা শুনলে হয়। ইকরার ছোট বাচ্চা ফেলে থাকা অসম্ভব তার উপর কাল আবার জরুরী অপারেশন আছে। তাই ওকে চলে যেতে বললাম। আমাদের কাল পরীক্ষা সংক্রান্ত মিটিং হবে। আমি এখন থাকতে পারলেও কাল পারবোনা। এদিকে ও চাইছেনা কেউ থাকি। আমার ধমকে চুপ আছে। তোমার কথাই আমার মাথায় আসে এই সময়ে। আমি তোমাকে নিতে যখন যাচ্ছিলাম ইকরা ফোন দিয়ে বলে ওর জ্ঞান ফিরেছে।পরে ওর সাথে কথা বললাম। ওকে তোমার কথা বলাতে আপত্তি করলেও আমি ওকে ধমকে চুপ করিয়ে দেই। বউয়ের কর্তব্যটা তুমি পালন করবে ঠিক মতো আমি এটাই চাই। যাতে কেউ আঙুল না তুলে যে তুমি তো ক্যারিয়ারের পেছনেই ছুটেছো স্বামী সংসার কখনও দেখেছো বা করেছো? আমি চাই তুমি সব দিকেই পার্ফেক্ট হও। আগে থেকেই সব শিখে রাখো, স্বামীর মন বোঝো। আমিও চাকরী করি সব কিছুর পাশাপাশি আমার স্বামীকে দেখি, তার সন্তানদের দেখি। আমার কাছে আমার আগেও তাদের সুস্থতা বেশি জরুরী। ঠিক তেমনি তোমার ক্ষেত্রেও তা তুমি যতোই অস্বীকার কর না কেন! আশা করি তুমি সব বুঝতে পেরেছো! কেন এনেছি এবং তোমাকে কী করবে হবে?”

“জ্বি আপু।”

“দ্যাটস্ লাইক আ গুড গার্ল!”

মেহজা মুঁচকি হাসে। সব কিছু বাদ দিয়ে তার মাথায় একটা কথাই আসছে। তার দেখা সেরা শিক্ষক ইমা। মধু মিশিয়ে কথা বলেনা, রাগ নিয়েও কথা বলেনা। কথা বলে সৎ, সাহস নিয়ে। আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলবে সে। যাতে সবাইকে এক বারেই সব বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হয়। আর কারো মতো হউক বা না হউক! ইমার মতো অসাধারণ নারী হতে চায় সে।
ইরফানের গলার খাকারি আওয়াজে দুজনেই সামনে তাঁকায়। ইরফানের হাতে দুটি কফি মগ। মেহজা ভাবলো

“কি বজ্জাত লোক! নিজের জন্য আর নিজের বোনের জন্যই কফি করেছে। সাথে যে ছোট্ট বউটি আছে তার জন্য এক কাপ আনলে কী এমন ক্ষতি হয়ে যেত?”

এবারও মেহজাকে ভুল প্রমাণ করে ইরফান একটি মগ ইমাকে দেয় আরেকটি মেহজার দিকে বাড়ায়। মেহজা কফিটা নিয়ে নেয় খুশি হয়ে। মেহজার আনন্দিত মুখটি দেখে ইরফানের ঠোঁটের কোণায়ও হাসি জমে। কিচেন থেকে আরেকটি মগ এনে সে তাদের সামনের সোফাটিতে বসে পড়ে। মেহজার দিকে এবার ভালো করে চোখ বুলায়। চুলগুলো ঝুটি করে রেখেছে, পড়নে নাইট স্যুট। টি শার্ট আর প্যান্ট দুটোতেই সবুজের মধ্যে অনেক গুলো গাজর এর ছবি। গাজর ছাড়া আর কিছুই নেই। ইরফানের মনে হলো মেহজা বোধ হয় গাজর পছন্দ করে অনেক। খরগোশের মতোনই। ইরফান আবারো হাসে। ইরফানের এবারের হাসিটি মেহজার চোখে ধরা পড়ে। তাতে যেন সে প্রথম দিকের ইরফানের প্রেমে পড়ার কথা গুলো মনে করতে থাকে। ইরফান তো এভাবে হেসেই তাকে ঘায়েল করেছিল! ইমা কফিটা খাওয়ার মাঝেই বলল,

“বাবু! কফিটা দারুণ বানাস তো। আমাকে শিখিয়ে দিবি। আর তাছাড়া তুই এই অবস্থায় কেন এসব করতে গেলি?”

“আমি ঠিকই আছি আপু। তোমরা একটু বেশিই করছো।”

“বেশি তো তুই করছিস। আচ্ছা সে যাই হোক! কী ভাবলি?”

“কোনটা নিয়ে?”

“তোর জ্বর নিয়ে আর তোর বউ নিয়ে।”

“জ্বর নিয়ে ভাবার কিছু নেই। নিজে থেকে এসেছে নিজে থেকেই চলে যাবে। আর বউ তুমি এনেছো তুমিই ভাবো কী করবে?”

ইরফানের এমন অনুভূতিহীন কথায় মেহজার মনে কষ্ট হয়। হাতে থাকা কফি মগটি সশব্দে সেন্টার টেবিলে রেখে দেয়। যা কারোরই দৃষ্টিগোচর হয়না। ইমা মৃদু রাগ দেখিয়ে বলে,

“জ্বর নিজে থেকে আসেনি, তুমিই এনেছো কোনো না কোনোভাবে তা আমি জানি। আর বাকি থাকলো বউ? সে এখন থেকে তোমার কাছেই থাকবে। হোক সেটা দুদিন, সাতদিন, দশদিন! তোমার সুস্থতার আগ পর্যন্ত টুয়েন্টি ফোর আওয়ার্স/সেভেন সে তোমার সাথেই থাকবে না হয়।”

ইরফান মনে মনে বলল, “আমিও তো সেটাই চাই। কিন্তু আমার মাথামোটা বউটাই তো তা চায়না।” এদিকে মেহজা তব্দা খেয়ে যায়। এতগুলো দিন একা একসাথে কীভাবে থাকবে? অসম্ভব! সে ইমাকে বলল,

“আপু! এটা কী করে হয়? সামনে পরীক্ষা আছে আমার!”

“সেটা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবেনা। আমি আছি তো! আমি নোটস এনে দিব পারলে কলেজ যাবে। দিনের বেলায় প্রথি আর অনাকেও না হয় ডেকে দিও। ওহ্! তারা তো জানেনা তোমায় বিয়ে নিয়ে কিছু! আচ্ছা থাক। আমি আর ইকরা আছি তো। ইকরা আসবে আমি আসবো দিনে থেকে রাতে চলে যাব। মজা করবো কথা বলবো আর তোমাকে পড়াবোও।”

“আমি ঘুমোতে গেলাম।”

“এই না! আমি খাবার নিয়েই এসেছি। খেয়ে মেডিসিন খাবে তারপর ঘুমাবে। এর আগে নয়। ইটস্ মাই অর্ডার।”

“ওকে।”

“মেহজা চলো খাবার সার্ভ করতে হবে তো। তার আগে ইরফানের সাথে ওর রুমে যাও। ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে আসো।”

কথাটি শুনে মেহজার অন্তর আত্না কেঁপে উঠে। ইরফানের সাথে যখনিই এক রুমে সে ছিল তখনিই ইরফান উল্টাপাল্টা কাজ করে। এবারও কী করবে? পরমুহূর্তেই মনে হয় ইরফান অসুস্থ। এই অবস্থায় সে কিছুতেই ওমন কিছু করবেনা। মেহজা ভালো করে বাসাটি একবার দেখে নেয়। আজব! এখানেও শুধু আয়না আর আয়না। স্বচ্ছ কাঁচ আর আয়নায় ভরে আছে চারিদিক। অসম্ভব সুন্দর ডেকোরেশন। সিঁড়ি গুলোও কাঁচের ফটোফ্রেমের মধ্যেও আয়না চিকচিক করছে। যে সোফায় বসেছিল সেটিতেও সাইডের কাজে আয়না আছে। সাদা রঙটাই বেশি পরিলক্ষিত চারিদিকে। সিঁড়ির উপরে একটা বিশাল আঁকারের ঝারবাতি। আহ্ কি সুন্দর! লোকটার রুচি ভালো বলতে হয়!

ইরফানের রুমে ঢুকে সে যেন আরো অবাক হয়। এক্কেবার অত্যাধুনিক সরঞ্জামে ভরপুর চারিদিক। ইরফানের রুমেও আয়না খুবই চোখে লাগার মতো। একেকটার থেকে একেকটা অসাধারণ। বেডটাও বোধ হয় চকচক করছে। ফ্লোর গুলোতে লাইটের আলো পড়ায় আলোর ঝলকানি আরো বেড়ে যাচ্ছে। এতো সুন্দর রুমটিতে সে থাকবে ভাবতেই অবাক লাগছে। মেহজা সবচেয়ে বড় শক খেল তখন যখন সে ইরফানের ছবির পাশে তার নিজের একটি ছবি দেখতে পায়। ছবিটি সেদিনের পার্টিতে তোলা হয়েছে বোধ হয়। এই ছবি নিয়ে তার কোনো আইডিয়া নেই। ছবিটি কি ইরফান তুলেছে! কিন্তু কেন? তার রুমের দেওয়ালেই বা কেন! পেছনে ফিরে ইরফানকে কিছু বলবে তার আগেই ইরফান মেহজাকে জড়িয়ে ধরে। ইরফানের শরীরের তাপে সে যেন জ্বলসে যাচ্ছে। লোকটার এতো জ্বর! ইয়া আল্লাহ্! মুহূর্তেই ইরফান তাকে ছেড়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,

“ওয়াশরুম ডানদিকে।”

তারপরই বড়বড় পা ফেলে হাওয়া হয়ে গেল। আর মেহজা দাঁড়িয়ে আছে এখনও! সে চমকিত!

#চলবে!