গোধূলী আকাশ লাজুক লাজুক ২ পর্ব-৬+৭

0
320

#গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক (পর্ব-৬)
সিজন ২
লেখক– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

১২.
মেহজা চোখ মুখ কুঁচকে বসে আছে বড় জানালাটার ধারে। চমক আর ফুপি একদিন থাকবে যদিও বলেছিল এখন বলছে এক সপ্তাহ থাকবে। ফুপিরা থাকবে এটা বেশ আনন্দের কথা। তবে আসল কথা হলো চমকের নাকি ইরফানকে বেশ পছন্দ হয়েছে। লাভ এট ফার্স্ট সাইট। মেহজা কেন যে বলতে গেল লোকটা অবিবাহিত! এখন চমক তাকে গুরু দায়িত্ব দিয়েছে। ইরফানের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার নাকি তাকে এনে দিতে হবে। এইসব ধুর মার্কা কাজ কর্ম মেহজার পছন্দ নয়। একটুও নয়! রুটির সাথে যখন মুরগীর ঘন ঝাল ঝাল ঝোল মাখিয়ে খায়, তখন হঠাৎ করেই যে এলাচি মুখে পড়ে সেই এলাচিকে যেমন বিরক্ত লাগে তেমন বিরক্ত লাগে এইসব বিএফ/জিএফ এর ব্যবস্থা করে দেওয়ার কাজকর্ম। মেহজা বারবার নাকোচ করে দিয়েছে সে নাম্বার এনে দিবে না। নাম্বার চাওয়াটা অসভ্যর মতো হয়ে যাবে। তখন চমক ঘোষণা দিল সে নিজে নাকি নাম্বার জোগাড় করবে। সেই জন্য তার মা’কে নানা ভাবে বলে রাজি করিয়েছেন কিছু দিন আরো থাকতে। মেহজাকে স্পষ্ট বলে দিয়েছে নাম্বার না নিয়ে সে নাকি যাবেনা! মেহজার বাবা বললেন সামনেই রাফসানের জন্মদিন আছে। রাফসান নাকি বায়না ধরেছে একটা ছোট খাটো পার্টি দিতে। তো সেই উপলক্ষে তো আসবেই তাছাড়া পরে আসা আর এখন থেকে যাওয়া একই হলো। চমকের মা অর্থাৎ মেহজার ফুপি মানছিল না। মেয়ের হেয়ালি একটুও পছন্দ করেন না তিনি। মেয়েটির সামনেই পরীক্ষা। এখন এসব ফাঁকিবাজি করার মানে হয়? অবশেষে সবার জেদের কাছে হার মানলেন। চমক তো খুশিতে রীতিমত লাফাচ্ছে। মেহজা বুঝে পাচ্ছেনা এত খুশি হওয়ার কি আছে? অবশ্য সে এমন ক্রাশ টাশ খায়নি। সে খেয়েছে হলিউড নায়কদের উপরে ক্রাশ। আশেপাশের মানুষদের সে ঐভাবে দেখেই না ক্রাশ খাবে কী? তবে প্রসঙ্গ যখন ইরফানের তখন সে কেন যেন খুব মনোযোগ দিচ্ছে ব্যাপারটায়। আশ্চর্যজনক ভাবে তার চমককে বিরক্ত লাগছে। এমন তো হওয়ার কথা নয়!

বিকেলে চমক ঘুমিয়ে পড়েছিল তাই মেহজা শান্তিমত ইরফানদের বাসায় আসে। কারণ চমক বারবার বলছিল সে নাকি বিকেলে তার সাথে একবার যাবে। মেহজাও বলেছে যে প্রাইভেট পড়ার সময় তার পেছন পেছন যেন না যায়। তবুও চমক হুশিয়ার ছিল। বেশি হুশিয়ারির জন্যই এখন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। মেহজা মনে মনে ভাবে একদম ভালো হয়েছে। মেয়েটা একটু বেশিই করছিল। সে মনের সুখে পড়তে গেল। আজ আবার ইরফানদের বাসায় আরেকটু বেশি এলাহি কান্ড। ফুল টুল দিয়ে ডেকোরেট করা। কোনো স্পেশাল কিছু নাকি? মেহজাকে হাসনা দরজা খুলে দেয়। তবে রোজকার মতো আর দাঁড়িয়ে থেকে মিটিমিটি হাসলো না। চলে গেল কেমন তাড়াহুড়ো করে রান্নাঘরের দিকে। মেহজা যেন এতেও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। সে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছিল তখন শুনতে পায় কতগুলো মেয়ে কন্ঠের হাসির ঝংকার। ইমা ম্যামরা ছাড়া আর কে হবে! সে ওত একটা ভাবলো না। ইমার রুমে গিয়ে বসে রইল চুপচাপ। ইমা রুমে নেই। সেই নিয়ে মেহজার আহামরি কোনো মাথাব্যাথা নেই। না পড়ালেও তার চলবে। সে না হয় একটু সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে নিক। মেহজা একটু আরাম করে পেছনের দিকে হেলে মাথাটা নামিয়ে রেখে পেটে দুইহাত ভাজ করে চোখ বুজে নিল। তখনিই রুমে ধড়ফড় করে কেউ একজন ঢুকে পড়লো। মেহজা ভয় পেয়ে চোখ মেলে স্বাভাবিক হয়ে বসে। দেখে একজন নয় চারজন এসেছে। ইমা, ইকরা, ইনায়া এদের তিনজনকে তো চিনে গেল কিন্তু অন্যজন কে? তবে সেই অন্যজনটার চোখে ভালোই কৌতূহল দেখা যাচ্ছে। মেহজা বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সবাইকে উদ্দেশ্য করে সালাম দিল। একে একে সবাই সালামের জবাব দিল। ইমা বলল,
-‘বসো বসো। দাঁড়াতে হবে না।’
মেহজা বসলো। ইকরা এসে তার পাশেই বসে। সেই কৌতূহলী চেহারার শাড়ি পরিহিতা রমণীর দিকে আঙুল কাঁত করে বলল,
-‘মেহজা ইনি আমাদের বড় আপা। তোমাকে ওইদিন বলা হলো না! আমেরিকায় থাকেন!’
-‘জ্বি আপু মনে পড়েছে।’
ইরা সামনে এসে দাঁড়ালো। মেহজা আরেকবার পরখ করে নিল। টিয়া রঙের সিল্কের শাড়ি অত্যন্ত চমৎকার ভাবে পরিধান করেছে, চুলে বেণুনী করেছে। মেহজা ভারী অবাক হলো! চুল তো হাঁটু ছোঁয়া লম্বা তার! এই যে এখন সামনের ড্রেসিংটেবিল এর টুলটা নিয়ে এসে বসল তখন তার ঐ লম্বা,ঘন চুল নজর কেড়েছে খুব! মেহজা দেখল এই মহিলার চোখে মুখে দারুন খুশি খুশি ভাব রয়েছে। মেহজার মামাতো বোন যখন আমেরিকা গেল তখন সে তার লম্বা চুল কেটে ফেলেছে। পিঠ সমান করেছিল বলেছে আমেরিকায় এত বড় চুল নিয়ে চলা দুষ্কর। পরে যখন আমেরিকা থেকে এলো তখন ঘাড় ছুইছুই চুল। তখন বলল,
-‘একদম ঝামেলা বুঝলি! আমেরিকান টিনএজার গুলো তো ছোট চুল নিয়ে চলেই সাথে বড় বুড়ি গুলোও চুল ছেটে ফেলেছে। যা অবস্থা! তাদের ভীড়ে লম্বা চুল বেমানান। তাই কেটেই ফেলেছি।’
মেহজার খুব দুঃখ হলো সেদিন। তার ফিহা আপুর চুল গুলো খুব পছন্দ ছিল। সিল্কি, স্ট্রেইট! তাছাড়া কী ঘন ছিল। এই যে এই ইরা আপুর মতোই। ইরা বলল,
-‘তুমি মেহজা?’
-‘জ্বি আপু।’
-‘ভালো আছো তো?’
-‘আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আপনি?’
-‘আমিও আলহামদুলিল্লাহ্। বাসার সবাই ভালো আছে তো?’
-‘জ্বি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছে।’
-‘এবার তো ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার?’
-‘জ্বি।’
-‘প্রস্তুতি কেমন? সামনেই এইচএসসি না?’
-‘মোটামুটি ধরনের।’
-‘মোটামুটি হলে চলবে না। ভালো হতে হবে। আমাদের ইয়াজ অলওয়েজ ভালো প্রস্তুতি নিতো প্রত্যেকটা পরীক্ষায়।’
-‘আচ্ছা আপু।’

মেহজার এবার কিছুটা খারাপ লাগল। এরা সবগুলো বোন কেবল ইমা ম্যাম ছাড়া বাকি সবাই তাকে কেমন কেমন প্রশ্ন করে। পাত্রী দেখার মতোন। অসহ্যকর ব্যাপারটা। আর ঐ ইয়াজকে কেন টানলো? হতে পারে! সে ভালো হতেই পারে তাই বলে এভাবে মুখের উপর বলে লজ্জা দিবে? আর ইয়াজের কথা আসবেই বা কেন? ব্যাপারটা টিপিক্যাল পাশের বাসার আন্টিদের মতো হয়ে গেল। অবশ্য এ পাশের বাসার বা প্রতিবেশী আন্টি না হলেও প্রতিবেশী বাসার আপু ঠিকই। এতক্ষণে তা খেয়াল হলো! এমন স্বভাব প্রতিবেশীদের মধ্যে থাকা বোধ হয় বাধ্যতামূলক। যাই হোক! মন খারাপ হলেও বুঝতে দেওয়া যাবেনা। ইগো বলে একটা ব্যাপার আছে নাকি?

১৩.
ইমা আজ একটু বেশি সময় পড়িয়েছে। কালকে মেহজাদের ক্লাস টেস্ট আছে পদার্থবিজ্ঞান এর উপর। ইকরা বেশ কিছুক্ষণ ঝালাই ফালাই করে দিল তার মগজ। পরে ছুটি দিয়ে বলল,
-‘রাতে আর বেশিক্ষণ জাগবে না। আটটার মধ্যে খেয়ে নিবে দশটায় ঘুমাতে যাবে। ভোরে উঠবে। নামায পড়লে পড়বে আর সকালের আবহাওয়ায় একটু পড়াগুলো পড়বে। এতে পড়া মনে থাকে ভালো। বুঝলে?’
-‘জ্বি ম্যাম।’

মেহডা করিডোর পার করে যাচ্ছিল তখন তার ডাক পড়ে। ইরা ডাকছে। মেহজা মৃদু হেসে বলল,
-‘কিছু বলবেন আপু?’
-‘না বলব না। কিছু দেখানোর আছে। আসো।’
মেহজা দেখল তাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইমা ম্যামের পাশের রুমে। মানে তাদের আদরের ভাই ইরফানের রুমে। রুমে প্রবেশ করতেই এসির ঠান্ডা হাওয়া তার শরীর ছুঁয়ে দিল আলতো ভাবে। এসি তার সত্যিই অসহ্য লাগে। সে এই রুমে প্রবেশ করে লজ্জা পেল। কেন না তারা মা আর ভাই-বোন বসে আছে বিছানায় গোল হয়ে। অবশ্য ইরফান বিছানার ধারে বিন ব্যাগটায় পা ছড়িয়ে বসে আছে। মেহজাকে দেখে পা একটু গুটিয়ে নিল। মাহিমা বেগম বললেন,
-‘তখন চলে গেলে কেন? কিছু খেলেও না।’
ওহ মেহজার পেটের সমস্যা দুপুরেই ঠিক হয়েছে। ঔষুধ নেওয়ার পর তিনটার মধ্যেই সে সুস্থ।
-‘কাজ ছিল তো আন্টি। বাসায় মেহমান এসেছিল।’
-‘আছে এখনো?’
-‘জ্বি আমার ফুপি এসেছেন। থাকবেন কিছুদিন।’
-‘আমাদের বাসায় আসতে বলবে। আমিও ভাবছিলাম সময় করে একটু যাবো তোমাদের বাসায়।’
-‘আচ্ছা আন্টি। যাবেন কিন্তু।’
ইকরা বলল,
-‘এই মেহজা এদিকে এসো! আর ইমা আপা কোথায়?’
-‘ম্যাম রুমেই আছেন।’
-‘পিচ্চি জেগে আছে নাকি?’
-‘একটু আগেই ঘুম থেকে উঠেছে।’
-‘ওহ তাহলে এখন আর আসবে না। আচ্ছা যাই হোক! তুমি এদিকে আসো। দ্যাখো ইরা আপা তোমার জন্য কতকিছু এনেছে।’

কথাটা শুনে মেহজার চোখ কপালে। ইরা আপু তার জন্য আবার কী আনবে? কেনই বা আনবে? সে নড়ল না, ঠাঁই দাঁড়িয়েই রইল। ইনায়া ইকরাকে বলল,
-‘ব্যাগ খুলে দেখাবি তা না মুখে বলছিস শুধু।’
ইরা বলল,
-‘দেখি আমাকে ব্যাগটা দে। আমি দেখাচ্ছি সবকিছু।’

কালো রঙের ছোট খাটো একটা ট্রলি। মেহজা উৎসুক হয়ে চেয়ে আছে সেদিকে। ট্রলি থেকে কী বের হয় কে জানে! ইরা ট্রলি খুলল। দেখতে ছোট হলেও ভেতরে বেশ কিছু জিনিসে ঠাসা। মেহজা দেখল প্রথমেই চকোলেট এর বক্স। কিটক্যাট দেখে সে খুশি হলো। চকোলেট বলতে এই একটাই সে পছন্দ করে। চকোলেট গুলো নামিয়ে একটা শপিং ব্যাগ বের করা হলো। শপিং ব্যাগটা ইরা মেহজার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-‘তুমি খুলে দ্যাখো।’
মেহজা বই খাতা বিছানার একপাশে রেখে ব্যাগের ভেতর থেকে একটা জামা বের করল। গাউন! নেভি ব্লু রঙের, ঝিকমিক করছে এমন একটি গাউন। মেহজা শক খেল। এত দামি একটা গাউন! যদিও তার সামর্থ্য আছে এমন কিনে পড়ার তবে এটা তাকে গিফ্ট করা হয়েছে। তাও আবার এমন কেউ করেছে যার সাথে তার আগে থেকে পরিচয় নেই। মেহজা কিছুটা লজ্জিত হলো। বলল,
-‘এসবের কী দরকার আপু?’
-‘দরকার অদরকার এর কথা আসছে কেন? আমি কী তোমায় গিফ্ট দিতে পারিনা? তাছাড়া কেউ কিছু দিলে এমন মুখের উপর মানা করাও ঠিক নয় কিন্তু। ব্যাড ম্যানার্স!’
মেহজা চুপ করে গেল। ইকরা বলল,
-‘আরে বাকি জিনিস গুলো দেখবে না? দেখি দেখি!’
ইকরা নিজেই অন্যান্য প্যাকেট, বক্স বের করে নিল। একটা বক্সে ছিল হাই হিল! এত সুন্দর! একদম গাউনের সাথে ম্যাচিং করা। মেহজাকে ইনায়া বলল,
-‘দেখি পায়ে দিয়ে দেখাও তো! সাইজ ঠিক হয় কীনা?’
মেহজা পায়ে দিল। তাতে বেশ লম্বা হয়ে গেল। এমনিতেও সে খুব লম্বা। হিল পড়াতে তাকে আরো লম্বা লাগছে। ইনায়া বলল,
-‘বাহ দারুন তো। একদম পার্ফেক্ট!’
মেহজা মুঁচকি হাসে। ইকরা বলল,
-‘এই গাউনটা কিন্তু আমাকে পরে দেখাবে। ঠিক আছে?’
-‘আচ্ছা আপু।’
হঠাৎ করে মাহিমা বেগম ট্রলি থেকে ছোট একটি প্যাকেট হাতে নিয়ে বলল,
-‘এটা কী!’
বলেই তিনি প্যাকেট খুল ফেললেন। সবাই কৌতূহলী থাকলেও ইরা কিছুটা চমকে যায়। হাত বাড়িয়ে নিতে যাবে তবুও বিশেষ লাভ হলো না। তার আগেই মাহিমা বেগম ভেতরের জিনিসটা টেনে বের করে। মুখের সামনে মেলে ধরে নিজেই হতভম্ব হয়ে যায়। কালো রঙের ইনারের দিকে সবাই চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে। তারপর সতর্ক দৃষ্টিতে ইরফানের দিকেও তাকায়। মেহজারও বোধ হয় খেয়াল হলো এখন যে ইরফানও আছে। সেও ইরফানের দিকে তাকাতেই খেয়াল করল ইরফান স্তব্ধ হয়ে সেই জিনিসের দিকেই তাকিয়ে আছে। সবাই যখন তার দিকে দৃষ্টিপাত করল সে বেশ বিব্রত হয়ে পড়ে। এদিক ওদিক মুখ ঘোরাতে থাকে। ইকরাও তখন চট করে মায়ের হাত থেকে সেটা টেনে নিয়ে নিল। বেশ দ্রুতই ইরফান বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কোনো মতে বেড সাইড টেবিল থেকে মোবাইলটা নিয়ে রুম থেকে কে’টে পড়ে। এত কিছুতে মেহজার লজ্জায় কান থেকে ধোঁয়া বের হয়। ইরফান যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ইকরা আর ইনায়া হো হো করে হাসতে থাকে। এমন মজার ব্যাপার বোধ হয় তারা আর দেখেনি! ইরা সব আবার ট্রলিতে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল,
-‘ভেতরে আরো কিছু আছে। তুমি বাসায় গিয়ে দেখে নিও। ঠিক আছে!’
-‘আচ্ছা আপু।’
-‘ট্রলিটাও তোমাকে দিলাম। ফিরিয়ে দিতে হবে না কিন্তু।’
-‘ধন্যবাদ আপু। সবকিছু খুব সুন্দর।’
-‘তোমার পছন্দ হয়েছে?’
-‘অনেক।’

ট্রলিটা বেশ ভারি। এতক্ষণ টেনে আনতে অসুবিধা হয়নি। সিঁড়ি দিয়ে নামাতে বেশ বেগ পেতে হলো। ইরফান নিচেই লিভিং এর পাশে ছিল। মেহজাকে এই অসহায় অবস্থায় দেখে এগিয়ে এলো। মেহজার হাত থেকে ট্রলিটা নিয়ে সে ঝটফট নিচে নিয়ে এনে রাখে। মেহজা হা করে সেদিকেই তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ করেই মেহজার মনে পড়ে সে ওখান থেকে খাতা আর বই আনেনি। তাই সে আবার রুমে যায়। ইকরা তাকে দেখেই বলে,
-‘কি হলো মেহজা!’
-‘আপু বই খাতা নিতে ভুলে গিয়েছিলাম।’
-‘ওহ কোথায় রেখেছ!’
মেহজা সব গুছিয়ে হাতে নিয়ে বলল,
-‘এইতো এখানেই।’
সে আবারও বিদায় দিয়ে আসতেই পেছন থেকে ইরা বলে,
-‘এই ইনারের সাইজ ঠিক হয় কিনা জানাবে। ইয়াজের জন্য তো খোলাখুলি ডিসকাস করতে পারলাম না।’
কথায় আছে না! যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। ইরফান তখন আবারও কী মনে করে রুমের সামনে এসেছে! মেহজা রুম থেকে বের হতে দেখে সে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখ কেমন যেন লুকিয়ে রাখছে। মেহজার লজ্জা তো লাগেই তারই সাথে লোকটার জন্য মায়া হয়। সে কিছু না করেও বারবার বিব্রত হচ্ছে। ধুরর। মেহজার আজকের দিনটাই খারাপ কাটছে মনে হচ্ছে। সব কেমন গোলমালে ভরা।

#চলবে।

#গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক (পর্ব-৭)
সিজন ২
লেখক– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

১৪.
পরদিন সকাল বেলা একটা অদ্ভুত কান্ড ঘটে। মেহজার ফুপা কল করে তার ফুপিদের ফেরত যেতে বলেন। চমকের টিচার নাকি জানিয়েছেন চমকের ফেইল এসেছে এক সাবজেক্টে। এখন ফরম ফিল আপ করাবেন না তারা। ফুপি তো চিৎকার চেঁচামেচি করে এক কান্ড করলেন। চমককে বললেন,
-‘বদমাইশ! ফেইল করে এখন বেড়ানো হচ্ছে! বে’য়া’দ’ব মেয়ে! তোর পেছনে এত এত টাকা খরচ করলাম কী এই দিন দেখার জন্য!’
ফুপি সপাং সপাং দুই তিনটা চড় থাপ্পর দিল চমকের গালে, পিঠে। তারপর বেলা এগারোটার মধ্যেই চলে গেলেন। এখন আবার কী করবেন কে জানে! কার হাত পা ধরবেন! অবশ্য মেহজার মনে হয় হয়ে যাবে। কেননা সচিবের মেয়ে বলে কথা!

মেহজার দুঃখী হওয়ার কথা ছিল। সে হয়েওছে তবে তুলনামূলক কম! চমকের ওই গুরুদায়িত্ব থেকে বাঁচার খুশিতেই সে বাকবাকুম করছে।
আজ আর কলেজ যাওয়া হলো না তার! তাই সে মনের আনন্দে গুন গুনিয়ে ছাদে গেল। তাদের ছাদে আবার যেকোনো সময় যাওয়া যায়। তীব্র রোদের জন্য বসার জায়গায় ছাউনি ও আছে। সুইমিংপুলের পাশেই। সে হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘আমরা কেউ বাসায় নেই’ বইটি নিয়ে রওনা হলো ছাদে। বইটা বেশ ভালো লাগে তার। এই নিয়ে কয়েকবার পড়া হয়েছে! তবুও যেন পুরোনো হয়ে যায়না। টগর চরিত্রটা কেন যেন খুবই ভালো লাগে তার। টগর আর রহিমার মা এর আলাপচারিতা সে যতবার পড়ে ততবারই হু হা করে হাসে।

সুইমিংপুলের পাশেই সুন্দর ছাউনি আছে। ভেতরে ফুলের টব দিয়ে ডেকোরেট করা। বিল্ডিং এর মালিক করেছে মূলত। বাবার থেকে শুনেছে মালিকরাও এইখানেই থাকে। আহনাফ মজিদ তার নাম। কোন ফ্লোরে থাকেন সেটা মেহজা জানেনা। সে বেতের সোফায় আরাম করে বসে। আজকে বাতাস হচ্ছে খুব। হয়তো ঝড় আসবে। মেহজা বইয়ে মনোযোগ দিতেই ঝপাং করে পানির শব্দ শুনলো। কেউ পানিতে লাফ দিলে যেমন শব্দ হয়! কৌতূহল বশত মেহজা উঠে বসে। কে নামলো একটা দেখার জন্য সে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। সুইমিংপুলের কাছে আসতেই দেখে ইরফান সাঁতার কা’ট’ছে। মেহজা হা করে তাকিয়ে থাকে। ফর্সা শরীরটা পানিতে জ্বলজ্বল করছে। সেদিন দেখেছিল পিঠের অংশ আর আজ বুক পিঠ, হাঁটু পর্যন্ত সব। স্বচ্ছ পানিতে সব স্পষ্ট। মেহজা ঢোক গিলে। তার লজ্জা লাগছে। তবে একটুও নড়ে না। নড়তে হবে যে ভুলেই গেছে। ইরফান এতক্ষণ সামনের দিকে তাকিয়ে ছিল পেছনে ঘুরতেই মেহজাকে দেখে থতমত খেয়ে যায়। তার স্পষ্ট মনে আছে সে এপাশের গেইটটাতে লক করেছে ভেতর থেকে। তবে মেহজা এলো কীভাবে! সে কী তবে আগে থেকেই এখানে ছিল! ইশ! খেয়াল করেও তো দেখার দরকার ছিল? অবশ্য তার লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। সে পুরুষ মানুষ। এই অবস্থায় তারা রাস্তাঘাটেও হাঁটতে পারে। কিন্তু গতদিনের জন্য মেহজার সামনে পড়তে তার অস্বস্তি লাগছে। সে নিজেকে সামলে বলল,
-‘কী ব্যাপার! তুমি এইসময়ে এখানে?’
মেহজা আমতা আমতা করে বলল,
-‘আমি মাঝে মধ্যেই আসি ছাদে।’
-‘আচ্ছা।’
-‘আমি তাহলে চলে যাচ্ছি ভাইয়া।’
-‘কেন?’
-‘না মানে আপনি তো গোসল করছেন!’
-‘আমি গোসল করতে হলো নিজের ওয়াশরুমেই করব। আমি সুইম করতে এসেছি। তুমি চাইলে থাকতে পারো। তবে এতক্ষণ তো তোমাকে দেখিনি!’
-‘আমি ওদিকে ছিলাম।’
আঙুল দিয়ে ইশারা করে বলল। ইরফান বলল,
-‘ওহ্।’

দুজনেই কী বলবে বুঝে পাচ্ছেনা। ইরফান একটু সামনের দিকে কাঁচের গায়ে ঘেসে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। মেহজা এবার ইরফানের সেই প্রশস্ত বুক আর চওড়া কাঁধ লক্ষ্য করল। সে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়। ইরফান বলে,
-‘সুইম করতে জানো!’
মেহজা কী বলবে? সে কী বলে দিবে ‘না আমি ওতো ভালো সাঁতার কা’ট’তে জানিনা। মাঝে মাঝে আমার তো হাঁটু সমান পানিতে পা দিতেও ভয় হয়। কেন না আমি সাঁতার কা’ট’তে পারি তখন যখন টিউব থাকে সাথে।’ তবে ইরফান যদি তার মজা উড়ায়? যদি বলে, ‘এত বড় মেয়ে হয়েছ আর টিউব ছাড়া সাঁতার কা’ট’তে পারো না? সো স্যাড!’ না থাক। সে একটু মিথ্যা বলুক। একটু-ই!

-‘আমি পারি। খুব ভালো সাঁতার কা’ট’তে পারি।’
-‘বাহ্! ভালো তো। মাঝে মাঝে এসে সাঁতার কা’ট’তে পারো।’
-‘আপনার সাথে?’
মেহজা নিজেই নিজের কথাতে অপ্রস্তুত হয়ে যায়। কী বলতে কী বলে ফেলেছে! ইরফান এর ও সেই অবস্থা। সে একটু ইতস্তত হয়ে বলল,
-‘আমার সাথে নয়, আমি সেটা বোঝাই নি। মানে তুমি নিজে একা বা ফ্যামিলি মানে ফিমেইল কারো সাথে!’
-‘জ্বি ভাইয়া বুঝতে পেরেছি।’
দুদিকেই আবারও নিরবতা। মেহজা বারবার ইরফানের দিকে তাকাচ্ছে একটু একটু করে। তাকায় আবার চোখ সরায়! ইরফান কয়েকবার তার এই চোরা দৃষ্টি ধরেছে তবে কিছু বলেনি। সে নিজের মতো সাঁতার কা’ট’ছে। মেহজাকে চলে যেতে বলবে যে সেটাও ভদ্রতার খাতিরে বলতে পারছেনা। অবশেষে মেহজা নিজেই মুখ খুলে।
-‘আমার বাসায় যেতে হবে ভাইয়া। আমি তাহলে যাই!’
ইরফান পানিতে একটা ডুব দিয়ে বলল,
-‘আচ্ছা যাও।’
মেহজা চলে আসতেই টাইলসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে পানিতে পা পিছলে ধরাম করে পুলে পড়ে গেল। পড়তে পড়তেই বলল,
-‘ভাইয়া আমি টিউব ছাড়া ভালো সাঁতার কা’ট’তে পারিনা!’

১৫.
মেহজা ভিজে জামাকাপড় নিয়ে বসে আছে। তখন যখন সে পানিতে পড়ে গেছিল ইরফান বেশ চমকে গিয়েছিল। তবে দেরি করেনি দ্রুত মেহজাকে টেনে তুলে আনে। মেহজা কী গর্দভের মতোন ঝাপটে ধরেছিল লোকটাকে! ভাবতেই তো লজ্জা লাগছে। ইরফান দাঁড়িয়ে আছে গেইটের ওই পাশে। সুইমিংপুল এড়িয়া একটা লোহার গেইট এর দ্বারা বদ্ধ থাকে। মেহজা যতবার এসেছে ততবার খোলাই পেয়েছে। তবে এখন সেটা টেনে দেওয়া। ভেতর থেকে লক করা। ইরফানের তোয়ালে মেহজার গায়ে। সে মাথা নামিয়ে চুপচাপ বসে আছে। ইরফান কাউকে কল করেছিল সামনে গিয়ে। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে কারো জন্য অপেক্ষা করছে। মেহজার সর্দি লেগে গেছে। সেই কখন থেকে হাঁচি দিচ্ছে। চোখ মুখ কেমন লাল হয়ে আছে। ইরফান মেহজার মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে। যেহেতু অনেক বাতাস হচ্ছে সেই বাতাসের জোরে ঠান্ডাও বেশ লাগছে। মেহজা ঠকঠক করে কাঁপছে। ইরফান সেদিকেই তাকিয়ে আছে। ভালো লাগছে তাকিয়ে থাকতে। কেন? তা সে জানেনা। ঠাসঠাস শব্দ হলো গেইটের মধ্যে। ইরফান বুঝল কে এসেছে। সে লক খুলে দিল। ওমনি হুড়মুড় করে প্রবেশ করল ইরা আপু। তিনি ইরফানকে পাত্তা না দিয়েই মেহজার কাছে গেল। মেহজার অবস্থা দেখে তার খুব মায়া হলো। মেহজাকে বলল,
-‘এমন হলো কীভাবে!’
যদিও প্রশ্নটা মেহজাকে করা হয়েছিল তবে তাকিয়ে ছিল ইরফানের দিকে। বোনের চোখের ভাষা খুব একটা ভালো ছিল যে সেটাও না। সে বলে,
-‘ওর পা স্লিপ কেটে পড়ে গেছে।’
-‘সেটা আমি ওর থেকেই জানবো। তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না।’
-‘আপু আমি পা পিছলেই পড়েছি।’
-‘আচ্ছা। ঠিক আছে। তবে তোমার তো সর্দি লেগে গেছে।’
-‘হুম।’
-‘ইয়াজ তুই বাসায় যা। আমি আছি ওর কাছে।’
ইরফান দাঁড়ায় না। সে নিচে চলে গেল তার বাথরোব গায়ে দিয়েই। ইরা বলল,
-‘বাসায় চলো। আমি তোমাকে নিয়ে যাই।’
-‘আপু!’
মেহজা ইরার হাত চেপে ধরে। ইরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে মেহজা বলে,
-‘আম্মুকে বলবেন না উনি যে ছিল।’
-‘উনি?’
-‘আপনার ভাই।’
ইরার এত হাসি পেয়েছিল কথাটা শুনে! কী ভাবে বলছে উনি, আপনার ভাই। মনে হয় ভাইয়ের নতুন বউ ভাইয়ের কথা বলছে এমন করে। সে কোনোমতে হাসিটা চেপে রেখে বলল,
-‘না না বলব না।’
-‘আম্মু যদি বলে আমাকে কে তুলেছে তাহলে কী বলবেন!’
-‘বলব যে আমিই তোমার হাত ধরে টেনে উঠাইছি। তুমি ওয়াল ঘেসে পড়ে গিয়েছিলে সাইডে হওয়াতে আমি টেনেই তুলতে পেরেছি।’
-‘এটাই ভালো হয়।’
মেহজাকে ইরা বাসায় দিয়ে গেলে মেহজার মা মেয়ের অবস্থা দেখে আর কোনো কিছু ভাবল না, জিজ্ঞেসও করল না। মেয়ে যে তার বেঁচে ফিরেছে সেটাই অনেক! ইরাকে বসিয়ে চা খাওয়ায় গল্প করে। ইরাও তার সঙ্গ উপভোগ করেছে ভালো। ইরা যাওয়ার আগে তাকে বলে গেলেন,
-‘আমাদের বাসায় যাবেন আন্টি। আপনি নাকি একবারও যান নাই।’
-‘সময় হয়? বড়টা তো শান্ত। ছোট দুইটার জ্বালায় কী আর বাঁচি? এরা কোনো কাজ তো করেই না উল্টো কাজ কীভাবে বাড়াতে হয় সেই ধান্দায় থাকে।’
-‘সমস্যা নেই। বিয়ে হলে ঠিক হয়ে যাবে।’
-‘বিয়ে হবে কীনা সেই সন্দেহ আছে। এই মেয়ে যে উড়নচন্ডী!’
-‘হবে হবে। দেখা গেল আপনার মেয়ের অনেক ভালো জায়গায় বিয়ে হবে। তা আন্টি মেয়ের বিয়ে দেওয়ার প্ল্যান আছে!’
এই কথা শুনে মেহজার মা সাবিনা বেগম একটু নরম হলেন। বললেন,
-‘না। মেয়ে তো ছোট। আর তাছাড়া আমার এই একটাই মেয়ে। দূরে পাঠালে থাকব কীভাবে! বিয়ের কথা এখন আমরা ভাবিনা। তবে প্রস্তাব আসে। ওর বাবা মানা করে দেয়।’
-‘কাছে থেকে আসলেও মানা করবেন?’
এবারে সাবিনা বেগম সন্দেহি দৃষ্টিতে তাকায়। ইরা হেসে ফেলে।

———————-
রাতে খাবার খেতে যখন বসল ইরা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-‘আজকে ইয়াজের বিয়ের কথা পাঁকা করে এসেছি।’
ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকায়। বাকি সবাই আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকালেও ইরফানের আগ্রহ দেখা গেল না। মা-বোনদের মশকরায় সে অভ্যস্ত। ইরা বলল,
-‘কীরে! বিয়ে করবি না? কত বয়স হলো! আমার মা আর কয়দিন একা থাকবে?’
-‘ইকরা আপু আছে তো!’
-‘ইকরার তো আগামী দুই মাসের মধ্যেই বিয়ে। তখন তো ও চলে যাবে।’
-‘আসা যাওয়া তো থাকবেই সবার।’
-‘আসা যাওয়া থাকা আর থেকে যাওয়া এক হলো? বিয়েটা এবার করে নে!’
-‘আমার বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লাগছ কেন?’
-‘একমাত্র ভাই আমাদের! আবার কবে আসব কে জানে? বাঁচা মরার কথাও তো বলা যায় না। আমি চাই আমার দেশে থাকাকালীন যেন তোর বিয়ে হয়।’
-‘আই আম নট ইন্টারেস্টেড।’
-‘সেটা চার বছর আগে থেকেই বলে আসছিস। এই তোর কোনো সমস্যা আছে নাকি! আমাদের বলতে পারিস লজ্জা কীসের!’
ভাগ্যিস বাবা নেই খাবার টেবিলে। তিনি আটটায় খেয়ে দশটায় ঘুমিয়ে পড়েন। অপ্রীতিকর অবস্থা থেকে সে বেঁচে গেল। তবে খুব একটা লাভের লাভ হলো না। হাসনা হাসছে ইকরা আর ইনায়া হাসছে। কী একটা অবস্থা। ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-‘স্টপ ইট গাইজ! হাসছ কেন তোমরা?’
ইকরা বলল,
-‘কীরে! সমস্যা আছে? থাকলে বল। আমার একটা ভালো ডাক্তার ফ্রেন্ড আছে। এই টপিকে তার আইডিয়া ভালো। সলিউশন দিতে পারবে।’
-‘সে ডাক্তারটা কে? তোমার বয়ফ্রেন্ড নয় তো?’
ইকরা রেগে গেল। বলল,
-‘ও আমার ফিয়ন্সে। বয়ফ্রেন্ড বলিস কেন?’
-‘আগে তো সেটাই ছিল তাই বললাম।’
ইরফান খাওয়া শেষ করে উঠে গেল। এই তিন বোন তাকে ভীষণ জ্বালায়। ভীষণ!

১৬.
মেহজার সেদিনের পর সর্দির সাথে সাথে আরেকটা নতুন অসুখ হলো। সে ইরফানের প্রতি দুর্বলতা অনুভব করে। ইরফানকে দেখলে তার বুক কাঁপে। তাকে দেখলে তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছা করে। কতবার চোরা চোখে তাকিয়েছে! আসতে যেতে তাকে যতবারই দেখে বুকের ভেতর ধুম ধাম আন্দোলন চলে। ইমা ম্যাম তো চলে গেছেন আরো আগেই। মেহজা ও আর সে বাসায় যায়না। তবে ইরা আর মাহিমা বেগম একদিন এসেছিল। তার মায়ের সাথে গল্প গুজব করে আবার চলে গেছে। মেহজাকে বলেছে যেতে তবে প্রতিবারই ইরফানের কথা ভেবে লজ্জায় তার যাওয়া হয় না। ইদানীং বাসা থেকে বের হলে টুকটাক সাজ গোজ করে। বলা তো যায় না কখন দেখা হয়ে যায় ইরফানের সাথে! একদিন লিফটে দেখা হয়েছিল। ইরফানের পারফিউমের সেই মা’তা’ল করা ঘ্রাণে মেহজার জ্ঞান হারানোর মত অবস্থাও হয়। ইরফান যখন তাকে দেখে মৃদু হাসে সেই হাসি মেহজার বুকে কাঁমড় বসায়। কী সব উল্টো পাল্টা অনুভতি! মেহজার সারাক্ষণ ইরফানের কথা মনে পড়ে। শুধু ইরফানকে ভাবে। এরই মধ্যে পরীক্ষা শুরু হলো। খুব কষ্টে নিজের মনকে বুঝিয়ে সে পরীক্ষা দিল। এখন সে মুক্ত। তবে মুক্ত হলেও যে ইরফানকে সবসময় দেখতে পায় তা কিন্তু না। অনা আর প্রথিকে যখন এইসব জানায় তারা বলে,
-‘ইউ আর ম্যাডলি ইন লাভ উইদ হিম!’
কথাটা শুনে মেহজার মেরুদন্ড বেয়ে শীতল স্রোত বইতে থাকে। সত্যিই! কই সে তো জানেনা? হঠাৎ, কখন, কীভাবে হয়ে গেল?

#চলবে।